18-01-2021, 08:21 PM
(This post was last modified: 18-01-2021, 09:13 PM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
জীবন নিজের গতিতে এগিয়ে চলে ! সমুদ্রের নোনা জল প্রতিরাতে খারির জলকে নোনা করে তোলে ! হোগলা বনের পাতায় হলুদের ছোঁয়া ! সারা সুন্দরবন হলুদ হয়ে আছে ! পর্ণমোচী বৃক্ষের পাতা ঝরে পড়ছে অনেক অনেক জিজ্ঞাসা নিয়ে " কি অপরাধ তাদের ! কেন তাদের ঝরে যেতে হোল ! তারাও তো আরও একটা বসন্তের ছোঁয়া পেতে পারতো !" কিন্তু তাদের প্রশ্নের উত্তর কোনোদিনই আসবে না যেমন আসবে না আমার জীবনে উত্তর ! সময় নিজের গতিতেই বয়ে যায় ! জানুয়ারি মাস এখন ! লক্ষির পেট খুব বেড়ে গেছে ! আর সাতদিন পরেই লক্ষিকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করার কথা ! কমলিই এখন লক্ষির দেখা শোনা করে ! আমার খাবার বাবুলালের ঘর থেকে আসে ! না ! আমার কোন দুঃখ নেই ! কারন লক্ষির শরীরে যে প্রান অঙ্কুরিত হচ্ছে সেটা আমারই ! এই আনন্দেই আমি মশগুল ! পৃথিবীর কোথাও তো আমি নিজের ছাপ রেখে যেতে পারবো ! মাঝে মাঝে কমলিকে দেখি শুভঙ্করের সাথে খুবই অন্তরঙ্গ অবস্থায় ! বুকের ভিতর একটু জ্বালা হলেও নিজেকে সামলে নিই ! কারন আমারও তো বয়স হচ্ছে ! সারা জীবন তো আমি আর কমলিকে ধরে রাখতে পারবো না ! ওরও একটা সংসারের প্রয়োজন ! সারাজীবন ওকে সুখে রাখার ক্ষমতা আমার নেই আর এখন যে টুকু আছে সেটাও আগামি দিনে থাকবে না ! নিজের মনে ঠিক করে নিলাম যে কমলির আর শুভঙ্করের বিয়ে দিয়ে তবে যাবো এখান থেকে !
এখন আমার রাত একা একাই কাটে ! প্রজেক্টের কাজ আরও দু তিনমাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে বলে মনে হয় ! খুব দ্রুত গতিতে কাজ চলছে ! আমাদের কোম্পানির মালিক আমার কাজে খুব খুশি ! একটু আগেই এমডির সাথে কথা হোল ! প্রজেক্টের ব্যাপারে ! উনি আমাকে জানালেন আরও দুটো প্রজেক্ত পাইপলাইনে আছে ! খুব শিঘ্রিই ওগুলো ফাইনাল হয়ে যাবে ! ! কথায় কথায় আমাকে আম্র এমডী বললেন যে এই প্রজেক্ট টা শেষ হয়ে গেলে আমি যেন একবার বাড়ি হয়ে আসি !
আমি ওনাকে প্রশ্ন করলাম হটাত আমার বাড়ির ব্যাপারে কেন বলছেন ? উনি কিছুতেই বলতে চান না ! শেষে বলে ফেললেন যে আমার স্ত্রী না জানি কোথা থেকে জানতে পেরে গেছে যে আমি ওই কোম্পানিতে কাজ করি ! নাম্বার জোগাড় করে ফোন করেছিল ! বেশ কয়েকবার ফোন করার পর রিসেপ্সনিস্ট মহিলা এমডি কে ফোন ট্রান্সফার করেন ! আমার সমন্ধে অনেক খবর নেবার চেষ্টা করেছে ! আমি কতো মাইনে পাই ! কোথায় কি খরচ করি সব কিছুই জানতে চেষ্টা করেছে ! যদিও এমডি আমাকে আশ্বস্ত করে বললেন যে উনি সেই সব ব্যাপারে কিছুই বলেন নি ! তবুও নাকি আমার বউ ওনার কাছে ইনিয়ে বিনিয়ে কান্না কাটি করে আমার নামে অনেক কমপ্লেইন করেছেন ! আমি নাকি ওদের দেখিনা ! ওদের কোন খরচ দিই না ! আরও অনেক কথা !
রাগে আমার শরীর রি রি করতে শুরু করে দিলো ! আমিই যে এখানে আছি সেটা একমাত্র চন্দনা জানে ! ওকে আমি সব জানিয়েছিলাম ! ওকে বলেছিলাম যে আমি কোন কোম্পানিতে কাজ করি ! কি কাজ সব ! শুধু আমার মেয়ে জানত যে আমি বাংলায় আছি ! তার মানে চন্দনার কাছ থেকে আমার বউ জেনেছে ! রাগে দুক্ষে ফোনের রিসিভার উঠিয়ে চন্দনাকে ফোন করতে গেলাম ! কিন্তু থেমে গেলাম ! কারন ফোন করতে হলে আমাকে চন্দনার মোবাইলে ফোন করতে হবে ! আমার এখানকার নাম্বার চন্দনা পেয়ে যাবে !
রেখে দিলাম ফোন ! মাথা পুরো গরম হয়ে গেছে ! কিছুই করার নেই ! মদে নিজেকে ডুবিয়ে দিলাম !
রাত তখন প্রায় দুটো ! হটাত দরজায় করাঘাত ! খুব জোরে জোরে ! ঘুম ভেঙ্গে গেলো !
দেখি হারু আর শুভঙ্কর ভয়ার্ত দৃষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়ে !
- কি হয়েছে হারু ?
- লক্ষ্মী কথা বলছে না ! ওর চোখ মুখ সব উল্টে গেছে ! শারি কাপর সব জলে ভেসে যাচ্ছে !
ভয় পেয়ে গেলাম ! "কখন থেকে হয়েছে ? হাসপাতালে নিয়ে গেছিলে ?"
- ডাক্তারকে ধরে নিয়ে এসেছিলাম ! ডাক্তার ইনজেকশন দিয়ে বলেছে বড় হাসপাতালে নিয়ে যেতে !
- তোমরা পাগল নাকি ? বড় হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে আমাকে জানাতে এসেছ?
- বড় হাসপাতাল নামখানাতে বাবু ! কি হবে লক্ষির ......। বলেই ডুকরে কেঁদে উঠল হারু ! আমি শুভঙ্করকে বললাম তারাতারি লক্ষিকে লঞ্চ ঘাটে নিয়ে এসো ! আমি দেখছি কি করা যায় ! বাঘের ভয় কে উপেখ্যা করে লঞ্চ ঘাটে ছুটলাম ! কোন লঞ্চ নেই ! একটাই ভট ভটি আছে তাতেও কোন লোক দেখতে পাচ্ছি না !
ইতিমধ্যেই হারু লক্ষিকে নিয়ে হাজির হয়েছে ! সাথে আছে শুভঙ্কর বাবুলাল আর একটা জেলের ছেলে নিতাই ! আমি বাবুলাল কে বললাম " ভট ভটি কেউ চালাতে জানে?
- নিতাই বলল আমি জানি !
আগে দেখো ভটভটিতে তেল আছে কি না ?
তরছ জ্বালিয়ে দেখে নিতাই বলল " এখন জোয়ারের সময় ! যা তেল আছে তাতে নামখানা পৌঁছে যাবে ! তারাতারি লক্ষিকে পাটাতনে শুইয়ে দিলাম ! নিতাই ভট ভটি চালু করে দিলো ! হারু পাটাতনে লক্ষির মাথার গোরায় বসে দুই হাত জোর করে প্রার্থনা করতে শুরু করে দিলো ! বাবুলাল আর শুভঙ্কর শেষ প্রান্তে বসে কথা বলছিল ! একদম সামনের দিকে এসে বসে আমি একটা সিগারেট জালালাম ! ভগবানের কাছে প্রার্থনা করলাম " হে ভগবান ! তুমি সব নিয়ে নিয়েছ ! লক্ষির জীবন থেকে যেন মা হবার সুখ কেরে নিওনা !
নামখানাতে পৌঁছতেই ডাক্তার লক্ষ্মী কে নিয়ে ওটি তে ঢুকে গেলো ! একজঞ্জ নার্স এসে হারুর থেকে টিপ ছাপ নিয়ে চলে গেলো ! আমি নার্সের হাতে লক্ষির সমস্ত রিপোর্ট দিয়ে দিলাম ! নার্স রিপোর্ট নিয়ে ওটি তে ঢুকে গেলো !
সময় কিছুতেই কাটতে চায় না ! হারু কাঁদছে ওর বউয়ের জন্য ! আর আমি চিন্তাগ্রস্ত লক্ষির পেটের বাচ্চার জন্য ! ভোর হয়ে গেছে ! সময় কিছুতেই কাটতে চাইছে না ! সিগারেটের প্যাকেটে মাত্র দুটো সিগারেট বেঁচে আছে ! বাবুলাল দৌড়তে দৌড়তে এলো ! স্যার ! লক্ষির ছেলে হয়েছে ওর পেট কেটে ছেলে বের করা হয়েছে ! লক্ষির এখনও জ্ঞ্যান ফেরে নি !
ওর কথা শুনে তারাতারি আমি হাসপাতালে ফিরে এলাম ! ডাক্তারকে দেখেই বুঝে গেলাম যে উনি কতটা ক্লান্ত ! আমাকে ধন্যবাদ জানালেন ডাক্তার ! বললেন যদি রিপোর্ট গুলো না পেতাম তাহলে মা বাচ্চা কাউকে বাঁচাতে পারতাম না ! বাচ্চা পুরো উল্টে পড়ে ছিল ! এখন বাচ্চা ঠিক আছে ! মায়ের জ্ঞ্যান ফিরে আসতে কিছু সময় লাগবে ! ভয়ের কিছু নেই !
উপরের দিকে মুখ তুলে নতুন সূর্য কে প্রনাম জানালাম ! সকাল আটটা নাগাদ লক্ষির জ্ঞ্যান ফিরল ! আরও কিছুক্ষণ পড়ে লক্ষির পাশে বাছছাকে দেওয়া হোল ! কি সুন্দর বাচ্চা ! ঠিক যেন মনে হচ্ছে দেবশিশু ! আমি হারুকে আর বাবুলাল কে বললাম যেন এখানেই থেকে যায় ! নিতাইকে আর শুভঙ্করকে নিয়ে আবার ভটভটি চালু করা হোল ! শুভঙ্করকে ডেকে আমার পাশে বসালাম ! সরাসরি ওকে প্রশ্ন করলাম " তুমি কি কমলিকে ভালোবাসো ? ওকে বিয়ে করতে চাও ?"
মাথা নিচু করে শুভঙ্কর হ্যাঁ বলল ! আমি ওকে বললাম তাহলে তোমার দাদা আর মাকে ডেকে নাও কাল বা পরশুর মধ্যে ! আমি থাকতে থাকতে তোমাদের বিয়েটা দিয়ে যেতে চাই !
- আপনি কি কোথাও যাচ্ছেন স্যার?
- হ্যাঁ ! আমার কাজ মোটামুটি শেষ ! আরও দশ বারদিন আমি এখানে আছি ! তারপর জানিনা .........।
লঞ্চ ঘাটে পৌঁছানোর আগেই দূর থেকে লঞ্চ ঘাটে বেশ ভিড় দেখতে পেলাম ! বুঝলাম ভটভটি চুরির খবর হয়ে গেছে ! ধীরে ধীরে ভটভটি পারে লাগতেই সবাই একসাথে দৌড়ে এলো ! কিন্তু সামনে আমাকে দেখেই সবাই থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো ! একজন পুলিশের লোক আমাকে দেখে নমস্কার জানালে আমি ওকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম ! সবাইকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে আমি চলে এলাম আমার কোয়ার্টারে !
দেখতে দেখতে তিন দিন কেটে গেলো ! শুভঙ্কর নিজের মা আর দাদাকে ডেকে এনেছে ! ওরা কমলিকে দেখে পছন্দ করে ফেলেছে ! সামনের সপ্তাহে আমি কমলির বিয়ের ঠিক করে ফেললাম ! কারন আমার যাবার সময় ঘনিয়ে এসেছে ! মাত্র দশদিন আয়ু এখানে আমার ! লক্ষ্মী এখন আর আমার কথা জিজ্ঞাসা করে না ! এখন ও নিজের পুতুল নিয়েই ব্যাস্ত ! ঠিক সময়েই আমি কমলি আর শুভঙ্করের বিয়ে দিয়ে দিলাম ! সাইটের সমস্ত মজুর মিস্ত্রিদের খাবারের ব্যবস্থা করলাম ! সবাই কমলি আর শুভঙ্করের বিয়েতে পেট পুড়ে খেল ! আমার রুম আমি শুভঙ্করকে ছেরে দিলাম ! ওরা আজ ওই রুমেতেই ফুলস্যজ্যা করুক ! একা বাগানে বসে আছি আমি ! পূর্ণিমার চাঁদ আকাশে ছরিয়ে আছে ! এক নতুন দিনের আগমনির সুর ছড়িয়ে পড়ছে ! এখানে আমার আর কোন প্রয়োজন নেই ! নেই আর কোন ভালোবাসা ! ভালোবাসা আমার আবার ফেরারি হয়ে গেছে ! আমি আবার একা !
একটা জীবনের সমাপ্তি এখানেই ! জানিনা পরের জীবনে কি নিজেকেই ফেরারি হয়ে ঘুরতে হবে ?
এখন আমার রাত একা একাই কাটে ! প্রজেক্টের কাজ আরও দু তিনমাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে বলে মনে হয় ! খুব দ্রুত গতিতে কাজ চলছে ! আমাদের কোম্পানির মালিক আমার কাজে খুব খুশি ! একটু আগেই এমডির সাথে কথা হোল ! প্রজেক্টের ব্যাপারে ! উনি আমাকে জানালেন আরও দুটো প্রজেক্ত পাইপলাইনে আছে ! খুব শিঘ্রিই ওগুলো ফাইনাল হয়ে যাবে ! ! কথায় কথায় আমাকে আম্র এমডী বললেন যে এই প্রজেক্ট টা শেষ হয়ে গেলে আমি যেন একবার বাড়ি হয়ে আসি !
আমি ওনাকে প্রশ্ন করলাম হটাত আমার বাড়ির ব্যাপারে কেন বলছেন ? উনি কিছুতেই বলতে চান না ! শেষে বলে ফেললেন যে আমার স্ত্রী না জানি কোথা থেকে জানতে পেরে গেছে যে আমি ওই কোম্পানিতে কাজ করি ! নাম্বার জোগাড় করে ফোন করেছিল ! বেশ কয়েকবার ফোন করার পর রিসেপ্সনিস্ট মহিলা এমডি কে ফোন ট্রান্সফার করেন ! আমার সমন্ধে অনেক খবর নেবার চেষ্টা করেছে ! আমি কতো মাইনে পাই ! কোথায় কি খরচ করি সব কিছুই জানতে চেষ্টা করেছে ! যদিও এমডি আমাকে আশ্বস্ত করে বললেন যে উনি সেই সব ব্যাপারে কিছুই বলেন নি ! তবুও নাকি আমার বউ ওনার কাছে ইনিয়ে বিনিয়ে কান্না কাটি করে আমার নামে অনেক কমপ্লেইন করেছেন ! আমি নাকি ওদের দেখিনা ! ওদের কোন খরচ দিই না ! আরও অনেক কথা !
রাগে আমার শরীর রি রি করতে শুরু করে দিলো ! আমিই যে এখানে আছি সেটা একমাত্র চন্দনা জানে ! ওকে আমি সব জানিয়েছিলাম ! ওকে বলেছিলাম যে আমি কোন কোম্পানিতে কাজ করি ! কি কাজ সব ! শুধু আমার মেয়ে জানত যে আমি বাংলায় আছি ! তার মানে চন্দনার কাছ থেকে আমার বউ জেনেছে ! রাগে দুক্ষে ফোনের রিসিভার উঠিয়ে চন্দনাকে ফোন করতে গেলাম ! কিন্তু থেমে গেলাম ! কারন ফোন করতে হলে আমাকে চন্দনার মোবাইলে ফোন করতে হবে ! আমার এখানকার নাম্বার চন্দনা পেয়ে যাবে !
রেখে দিলাম ফোন ! মাথা পুরো গরম হয়ে গেছে ! কিছুই করার নেই ! মদে নিজেকে ডুবিয়ে দিলাম !
রাত তখন প্রায় দুটো ! হটাত দরজায় করাঘাত ! খুব জোরে জোরে ! ঘুম ভেঙ্গে গেলো !
দেখি হারু আর শুভঙ্কর ভয়ার্ত দৃষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়ে !
- কি হয়েছে হারু ?
- লক্ষ্মী কথা বলছে না ! ওর চোখ মুখ সব উল্টে গেছে ! শারি কাপর সব জলে ভেসে যাচ্ছে !
ভয় পেয়ে গেলাম ! "কখন থেকে হয়েছে ? হাসপাতালে নিয়ে গেছিলে ?"
- ডাক্তারকে ধরে নিয়ে এসেছিলাম ! ডাক্তার ইনজেকশন দিয়ে বলেছে বড় হাসপাতালে নিয়ে যেতে !
- তোমরা পাগল নাকি ? বড় হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে আমাকে জানাতে এসেছ?
- বড় হাসপাতাল নামখানাতে বাবু ! কি হবে লক্ষির ......। বলেই ডুকরে কেঁদে উঠল হারু ! আমি শুভঙ্করকে বললাম তারাতারি লক্ষিকে লঞ্চ ঘাটে নিয়ে এসো ! আমি দেখছি কি করা যায় ! বাঘের ভয় কে উপেখ্যা করে লঞ্চ ঘাটে ছুটলাম ! কোন লঞ্চ নেই ! একটাই ভট ভটি আছে তাতেও কোন লোক দেখতে পাচ্ছি না !
ইতিমধ্যেই হারু লক্ষিকে নিয়ে হাজির হয়েছে ! সাথে আছে শুভঙ্কর বাবুলাল আর একটা জেলের ছেলে নিতাই ! আমি বাবুলাল কে বললাম " ভট ভটি কেউ চালাতে জানে?
- নিতাই বলল আমি জানি !
আগে দেখো ভটভটিতে তেল আছে কি না ?
তরছ জ্বালিয়ে দেখে নিতাই বলল " এখন জোয়ারের সময় ! যা তেল আছে তাতে নামখানা পৌঁছে যাবে ! তারাতারি লক্ষিকে পাটাতনে শুইয়ে দিলাম ! নিতাই ভট ভটি চালু করে দিলো ! হারু পাটাতনে লক্ষির মাথার গোরায় বসে দুই হাত জোর করে প্রার্থনা করতে শুরু করে দিলো ! বাবুলাল আর শুভঙ্কর শেষ প্রান্তে বসে কথা বলছিল ! একদম সামনের দিকে এসে বসে আমি একটা সিগারেট জালালাম ! ভগবানের কাছে প্রার্থনা করলাম " হে ভগবান ! তুমি সব নিয়ে নিয়েছ ! লক্ষির জীবন থেকে যেন মা হবার সুখ কেরে নিওনা !
নামখানাতে পৌঁছতেই ডাক্তার লক্ষ্মী কে নিয়ে ওটি তে ঢুকে গেলো ! একজঞ্জ নার্স এসে হারুর থেকে টিপ ছাপ নিয়ে চলে গেলো ! আমি নার্সের হাতে লক্ষির সমস্ত রিপোর্ট দিয়ে দিলাম ! নার্স রিপোর্ট নিয়ে ওটি তে ঢুকে গেলো !
সময় কিছুতেই কাটতে চায় না ! হারু কাঁদছে ওর বউয়ের জন্য ! আর আমি চিন্তাগ্রস্ত লক্ষির পেটের বাচ্চার জন্য ! ভোর হয়ে গেছে ! সময় কিছুতেই কাটতে চাইছে না ! সিগারেটের প্যাকেটে মাত্র দুটো সিগারেট বেঁচে আছে ! বাবুলাল দৌড়তে দৌড়তে এলো ! স্যার ! লক্ষির ছেলে হয়েছে ওর পেট কেটে ছেলে বের করা হয়েছে ! লক্ষির এখনও জ্ঞ্যান ফেরে নি !
ওর কথা শুনে তারাতারি আমি হাসপাতালে ফিরে এলাম ! ডাক্তারকে দেখেই বুঝে গেলাম যে উনি কতটা ক্লান্ত ! আমাকে ধন্যবাদ জানালেন ডাক্তার ! বললেন যদি রিপোর্ট গুলো না পেতাম তাহলে মা বাচ্চা কাউকে বাঁচাতে পারতাম না ! বাচ্চা পুরো উল্টে পড়ে ছিল ! এখন বাচ্চা ঠিক আছে ! মায়ের জ্ঞ্যান ফিরে আসতে কিছু সময় লাগবে ! ভয়ের কিছু নেই !
উপরের দিকে মুখ তুলে নতুন সূর্য কে প্রনাম জানালাম ! সকাল আটটা নাগাদ লক্ষির জ্ঞ্যান ফিরল ! আরও কিছুক্ষণ পড়ে লক্ষির পাশে বাছছাকে দেওয়া হোল ! কি সুন্দর বাচ্চা ! ঠিক যেন মনে হচ্ছে দেবশিশু ! আমি হারুকে আর বাবুলাল কে বললাম যেন এখানেই থেকে যায় ! নিতাইকে আর শুভঙ্করকে নিয়ে আবার ভটভটি চালু করা হোল ! শুভঙ্করকে ডেকে আমার পাশে বসালাম ! সরাসরি ওকে প্রশ্ন করলাম " তুমি কি কমলিকে ভালোবাসো ? ওকে বিয়ে করতে চাও ?"
মাথা নিচু করে শুভঙ্কর হ্যাঁ বলল ! আমি ওকে বললাম তাহলে তোমার দাদা আর মাকে ডেকে নাও কাল বা পরশুর মধ্যে ! আমি থাকতে থাকতে তোমাদের বিয়েটা দিয়ে যেতে চাই !
- আপনি কি কোথাও যাচ্ছেন স্যার?
- হ্যাঁ ! আমার কাজ মোটামুটি শেষ ! আরও দশ বারদিন আমি এখানে আছি ! তারপর জানিনা .........।
লঞ্চ ঘাটে পৌঁছানোর আগেই দূর থেকে লঞ্চ ঘাটে বেশ ভিড় দেখতে পেলাম ! বুঝলাম ভটভটি চুরির খবর হয়ে গেছে ! ধীরে ধীরে ভটভটি পারে লাগতেই সবাই একসাথে দৌড়ে এলো ! কিন্তু সামনে আমাকে দেখেই সবাই থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো ! একজন পুলিশের লোক আমাকে দেখে নমস্কার জানালে আমি ওকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম ! সবাইকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে আমি চলে এলাম আমার কোয়ার্টারে !
দেখতে দেখতে তিন দিন কেটে গেলো ! শুভঙ্কর নিজের মা আর দাদাকে ডেকে এনেছে ! ওরা কমলিকে দেখে পছন্দ করে ফেলেছে ! সামনের সপ্তাহে আমি কমলির বিয়ের ঠিক করে ফেললাম ! কারন আমার যাবার সময় ঘনিয়ে এসেছে ! মাত্র দশদিন আয়ু এখানে আমার ! লক্ষ্মী এখন আর আমার কথা জিজ্ঞাসা করে না ! এখন ও নিজের পুতুল নিয়েই ব্যাস্ত ! ঠিক সময়েই আমি কমলি আর শুভঙ্করের বিয়ে দিয়ে দিলাম ! সাইটের সমস্ত মজুর মিস্ত্রিদের খাবারের ব্যবস্থা করলাম ! সবাই কমলি আর শুভঙ্করের বিয়েতে পেট পুড়ে খেল ! আমার রুম আমি শুভঙ্করকে ছেরে দিলাম ! ওরা আজ ওই রুমেতেই ফুলস্যজ্যা করুক ! একা বাগানে বসে আছি আমি ! পূর্ণিমার চাঁদ আকাশে ছরিয়ে আছে ! এক নতুন দিনের আগমনির সুর ছড়িয়ে পড়ছে ! এখানে আমার আর কোন প্রয়োজন নেই ! নেই আর কোন ভালোবাসা ! ভালোবাসা আমার আবার ফেরারি হয়ে গেছে ! আমি আবার একা !
একটা জীবনের সমাপ্তি এখানেই ! জানিনা পরের জীবনে কি নিজেকেই ফেরারি হয়ে ঘুরতে হবে ?