Thread Rating:
  • 100 Vote(s) - 3.34 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance সুপ্তির সন্ধানে
পর্ব তিন (#1-#11)

 
কালী পুজো শেষ। আবহাওয়া বেশ মনোরম। বাতাসে একটু ঠান্ডার আমেজ। আকাশের রঙ ঘন নীল। মাঝে মাঝে ছোট ছোট সাদা মেঘের ভেলা দেখা যায়। গতকাল ছিল শুক্রবার, অফিস থেকে মামাবাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শনিবার নতুন ব্যাচ শুরু হবে তাই আর মামাবাড়ি যাইনি। মামিকে বলে দিয়েছিলাম যে ক্লাস শেষের পরে সোজা মধ্যমগ্রাম চলে যাবো। ঠান্ডার আমেজের জন্য সকালে উঠতে একদম ভালো লাগছিল না, মনে হচ্ছিল আরো একটু ঘুমাই। বাধ সাধে আমার কাজের মেয়েটা। রোজ সকালে এসে ঘর ঝাড়ু পোছা করে যায়। কাজের মেয়ে কাজ সেরে যাওয়ার পরে এক কাপ চা আর খবরের কাগজ নিয়ে বসেছিলাম সোফার ওপরে। এমন সময়ে ফোন বেজে উঠল।
 
অন্যপাশে অনির্বাণ, “হ্যালো, কি রে বাল, এখন ঘুমাচ্ছিস নাকি?”

আমি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে রিসিভার কানে চেপে উত্তর দিলাম, “না রে বাঞ্চোত, চা খাচ্ছি।”

হাসিতে ফেটে পড়ল অনির্বাণ, “শালা তুই কি না দিশি দিয়ে কুলকুচি করিস। হটাত আজকে চা গিলছিস? ব্যাপার কি? শরীর ঠিক আছে তো?”

আমি হেসে ফেললাম ওর কথা শুনে, “বোকাচোদা, আমি তোর মতন রোজ রাতে পাড়ার ঠেকে বসে চুল্লু গিলি না। বল এত সকালে কেন ফোন করেছিস।”

অনির্বাণ আমাকে জিজ্ঞেস করল, “ক্লাসে যাবি তো?”

মাথা দোলালাম আমি, “হ্যাঁ, এই একটু পরেই বের হব।”

অনির্বাণ আমাকে বলল, “হ্যাঁ রে তোর বাইকটা একটু দিবি?”

আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “কেন বে?”

অনির্বাণ একটু লজ্জা পেয়েই উত্তর দিল, “না রে আজকে ভাবছি একটু ঘুরতে যাবো।”

আমিও হেসে ওকে উত্তর দিলাম, “উফফফ, কাবেরিকে নিয়ে কোথায় যাওয়া হচ্ছে?”

অনির্বাণ লজ্জা পেয়েই উত্তর দিল, “মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত। ওই ভিক্টোরিয়া না হলে আউট্রাম আর কি। বাবার হোটেলে খাওয়া ছেলে পুলেদের ওই একটাই জায়গা।”

আমি হেসে ফেললাম ওর কথা শুনে। আমার কপালে এখন সেটা জোটেনি। আমি ওকে বললাম, “চলে আয় তাহলে। তারপরে ক্লাস শেষের পরে বাইক নিয়ে চলে যাস। তবে বোকাচোদা, বাইক যেন আস্ত পাই, না হলে তোর বাঁড়া কেটে হাতে ধরিয়ে দেব। কাবেরিকে চুদতেও পারবি না।”

হেসে ফেলল অনির্বাণ, “হ্যাঁ রে বোকাচোদা হারামি গান্ডু। একদম দিয়ে দেব।”

আমি ওকে উত্যক্ত করার জন্য বললাম, “বাঁড়া না কাবেরি?”

হেসে ফেলল অনির্বাণ, “বাঞ্চোত, তোর কালো পুটকি মেরে লাল করে দেব আজকে।”

আমি ফোন রাখার আগে ওকে বললাম, “বাড়ি চলে আয় তাহলে। একসাথেই ইন্সটিটিউটে যাওয়া যাবে।”
 
এক ঘন্টার মধ্যে অনির্বাণ আমার বাড়িতে পৌঁছে গেল। অনির্বাণ পৌঁছাতেই আমরা বাইকে করে বেড়িয়ে পড়লাম। সারাটা রাস্তা কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর করল। বুঝতেই পারলাম, প্রথম প্রেম। আমার মতন অবস্থা বেচারার। আমাদের কপালে কলেজে পড়ার সময়ে কেউ জোটেনি। কাবেরি কে নিয়ে বেড়াতে যাবে তাই ভীষণ উত্তেজিত অনির্বাণ। এই উত্তেজনা আমার মধ্যেও ছিল, যেদিন আমি তিতলির সাথে দেখা করতে প্রথমবার ওর কলেজে গেছিলাম। পুরানো কথা যদিও তবুও মনের আঙ্গিনায় সেই ছবি বারবার ভেসে ওঠে। আদি ফুচকা খাবো বলে বায়না ধরল। আর হয়ত দেখা হবেনা সুন্দরী ললনার সাথে। হয়ত অন্য ব্যাচে এডমিশান নিয়েছে। বুকের ভেতরটা হটাত করেই ফাঁকা হয়ে গেল। ইন্সটিটিউটে ঢোকার আগে, দুই বন্ধু বাইরে দাঁড়িয়ে একটা করে সিগারেট খেলাম। অনির্বাণের চোখে তখন শুধু কাবেরি আর আমার চোখ তখন কাউকে যেন খুঁজছিল। শুধু মনে হচ্ছিল, যদি সামনে চলে আসে তাহলে কি হবে।
 
ক্লাসে ঢুকতে যাবো, একটা হাল্কা গোলাপি রঙের বহু পরিচিত সালোয়ার কামিজের দর্শন পেয়েই থমকে গেলাম। আমার দিকে পেছন করে দাঁড়িয়ে একটা মেয়ের সাথে গল্প করছে। সেই এক দেহের ঘঠন, যেন একটা বালির ঘড়ি। চওড়া পিঠের ওপরে মেঘের মতন ঢালাও কালো এলো চুল। মাথার পেছনে একটা ছোট সাদা ক্লিপে বাঁধা। মরালী গর্দানে পাতলা একটা চেন। পরনের পোশাক নধর দেহপল্লবের সাথে এঁটে বসে সুন্দরীর দেহ বল্লরীর সৌন্দর্য ভীষণ ভাবেই আমার চোখের সামনে ফুটিয়ে তুলেছে। অনেকদিন পরে রূপসী ললনার কন্ঠস্বর শুনে ভালো লাগলো, সেই সাথে বুকের মধ্যে বেজে ওঠে করুন সুর। এখুনি যদি পেছন ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে দেখে তাহলে আবার ওর সুন্দর চেহারায় কালো মেঘের আস্তরন ঢেকে দেবে। অনির্বাণ আমার কাঁধে আলতো ধাক্কা মেরে তিতলির দিকে ইশারা করল। আমি মাথা নাড়লাম অনির্বাণের দিকে দেখে।
 
অনির্বাণ ম্লান হেসে আমাকে বলল, “মনে হচ্ছে এক সুতোয় বাঁধা। গিঁট পরে গেছে, ছাড়ানো অসম্ভব।”

আমি ওকে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলাম, “কিন্তু এক ব্যাচে? সেটা কি করে সম্ভব?”

অনির্বাণ উত্তর দিল, “আমার মনে হয় যেহেতু এটা লাস্ট সেমেস্টার তাই মনে হয় একটাই ব্যাচ।”
 
ইতি বাচকে মাথা দোলালাম আমি। তিতলির নজর বাঁচিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু রূপসীর কাজল কালো নয়নের তীক্ষ্ণ নজর এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। যেন আমার অপেক্ষায় ছিল তিতলি। মরালী গর্দান ঘুরে গেল আমার দিকে। চোখের কোনায় কাজল রেখা। আমাকে দেখতে পেয়ে চোয়াল ঈষৎ কঠিন হয়ে গেল। ভ্রূকুটি করে আমার দিকে তাকিয়ে রইল সুন্দরী ললনা। আমার বুকে বিঁধে গেল শক্তিশেল। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম আমি। ওর হাতে একটা প্লাস্টিকের ফোল্ডার ছিল, বুকের কাছে দুই হাতে ধরে চেপে ধরা। আমার চোখের দিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে যেন প্রশ্ন বানে আমাকে জর্জরিত করে তুলল, কেন আমার সাথে এটা করলে। নিরুত্তর আমি। অনির্বাণের হাত কাঁধে পড়তেই সম্বিত ফিরে পেলাম। অনির্বাণ ইশারায় আমাকে পেছনের চেয়ারে ডেকে নিয়ে গেল। তিতলি চুপচাপ সামনের চেয়ারে বসে পড়ল। সারাটা ক্লাস, মাঝে মাঝেই চোখের কোনা আমার দিকে তিরস্কারের দৃষ্টি নিয়ে বিদ্ধ করে চলেছে। বিষিয়ে গেলাম আমি। ভাবলাম এই ব্যাচ ছেড়ে দেব, পরের কোন ব্যাচে আবার জয়েন করে নেব। কি আছে, দুই মাস পরেই না হয় শুরু হবে।
 
ক্লাসের শেষে আমি আর অনির্বাণ উঠে দাঁড়ালাম। বেড়িয়ে পড়তে হবে। তিতলি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল, ওকেও নিশ্চয় বেড়িয়ে পড়তে হবে। বাঁকা হাসলাম মনে মনে, বড়লোকের মেয়ে ট্যাক্সিতেই যাবে, আমাকে মামাবাড়ি ফিরতে হবে বাসে করে। সিঁড়ি দিয়ে আমাদের আগেই নেমে গেল তিতলি। রাস্তার এইপাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি আর অনির্বাণ। তিতলি রাস্তা পার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল আমাদের সামনেই দাঁড়িয়ে। মাঝে মাঝে চোখের কোনা দিয়ে আমার দিকে কটাক্ষ চাহনি দিয়ে আমার বুক ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছিল। বুক ভরে একরাশ ধোঁয়া টেনে ছাড়লাম, ধোঁয়ার মধ্যে থেকে সুন্দরীর লালচে রাঙ্গা চেহারা মেঘের রাজ্যের পরীদেশের এক অপ্সরার মতন দেখতে লাগলো তিতলিকে। আমার দিকে তাকাতে তাকাতেই রাস্তা পার করতে গিয়ে হটাত করে একটা বাইক চলে আসে ওর সামনে। টাল সামলাতে না পেরে পা মচকে পরে যায় তিতলি। আচমকা আমার পেছনে অদৃশ্য দুটো হাত আমাকে ধাক্কা মারল।
 
কানের কাছে কেউ ফিসফিস করে আমাকে বলল, “আদি, এইকানে দাঁড়ায়ে কি কচ্ছিস? পরি গেছে আর তুই দেকবি? যাবি না ওর কাছে? এই নাকি তোর ভালোবাসা আদি?” পরিস্কার আমার দিম্মার কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম।
 
কাল চক্র আমাদের ভাগ্য এক সুতোয় জুড়ে দিয়েছে। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে ঝাঁপ দিলাম আগুনে। এতদিন নিজের সাথে যে যুদ্ধ করছিলাম, হেরে গেলাম সেই যুদ্ধে। একবার চোখের জল ফেলতে দেখেছি, দ্বিতীয় বার সেই চোখে জল দেখতে চাই না। দৌড়ে গেলাম তিতলির দিকে। মাটিতে পরার আগেই ওর বাজু ধরে ফেললাম আমি। আমার দিকে কাজল কালো নয়নে বুক ভাঙা ব্যাথা নিয়ে তাকাল তিতলি। বাইকের চালককে ধরে ফেলে অনির্বাণ এই মারে কি সেই মারে। আমাদের ব্যাচের বেশ কয়েকজন ছেলে মিলে বাইকের চালককে বেশ বকাবকি শুরু করে দিল। আমি ওর কোমরে হাত রেখে সোজা হয়ে দাঁড় করাতে চেষ্টা করাতেই আমাকে এক ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করল তিতলি। চোখ ফেটে জল বেড়িয়ে আসার যোগার, কিছুটা পায়ের ব্যাথায় তবে বেশির ভাগ বুকের ব্যাথায়। তিরতির করে কেঁপে উঠল মিষ্টি গোলাপি পাতলা ঠোঁট জোড়া। আমি কোন কথা না বলে একটু ঝুঁকে ওর বাঁ পায়ের গোড়ালিতে হাত বুলাতে গেলাম।
 
আমার দিকে আঙ্গুল তুলে চাপা গর্জে ওঠে রূপসী ললনা, “একদম আমাকে ছোঁবে না। আমি তোমার সাহায্য ছাড়াই যেতে পারব।”
 
আমার হাত থেকে কোন মতে পা ছাড়িয়ে একটু হাঁটতে চেষ্টা করল তিতলি। পা মচকে যাওয়াতে ঠিক ভাবে মাটিতে পা ফেলতে পারল না। টাল সামলাতে না পেরে আবার পরে যাচ্ছিল। আমি ওর পিঠে হাত রেখে সামলে নিলাম। ওর উপচে পরা কাজল কালো নয়নের বেদনা আমাকে ছারখার করে দিয়েছিল।
 
আমি ওর কোমর ধরে ওকে বললাম, “তোমার পা বেশ ভালোই মচকে গেছে।”

আমি অনির্বাণকে চেঁচিয়ে বললাম, “হাঁ করে কি দেখছিস। একটা ট্যাক্সি দাঁড় করা তাড়াতাড়ি।”

অনির্বাণ আমার দিকে দেখে মৃদু হেসে দিল, “আচ্ছা।”

আমি ওকে বললাম, “বাইক নিজের কাছেই রাখিস। সোমবার নিয়ে আসিস।”
 
অনির্বাণ ট্যাক্সি দাঁড় করাতেই, তিতলিকে নিয়ে ট্যাক্সিতে উঠে পড়লাম আমি। ট্যাক্সির সিটে বসে আমার দিকে অশ্রুভরা ঝাপসা নয়নে তাকিয়ে রইল তিতলি। আমি ওর বাঁ পা কোলের ওপরে উঠিয়ে ফর্সা গোল নরম মসৃণ গোড়ালিতে হাত বুলিয়ে ব্যাথার লাঘবের চেষ্টা করলাম।
 
ওর গোড়ালিতে হাত বুলিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “খুব ব্যাথা করছে?”

ফর্সা গন্ড বেয়ে এক ফোঁটা অশ্রুকণা লালচে গালের ওপরে সরু রেখা তৈরি করে দেয়। আচমকা ঠাস করে আমার গালে সপাটে একটা চড় কষিয়ে দিল তিতলি। চেঁচিয়ে উঠল আমার দিকে, “একদম আমার সাথে কথা বলবে না। আমি তোমার কে যে আমি তোমার সাথে কথা বলব?” মুখ ভেংচে আমার কথাটাই আওড়ে দিল, “ব্যাথা করছে... ন্যাকা।”

গাল জ্বলছে, জ্বলুক, এটাই আমার দরকার ছিল। কাপুরুষ ছিলাম আমি। আমি ওর পা কোলের ওপরে চেপে ধরে বললাম, “সরি তিতলি।”

অনেকদিন পরে আমার মুখে নিজের নাম শুনে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলনা সুন্দরী। আমার কলার ধরে চেঁচিয়ে উঠল, “কেন তুমি আমার চোখের সামনে থেকে চলে যেতে পারো না। কেন, একবার বলতে পারো। আমি ঘুমাতে পারি না জানো। তোমার জন্য আমি আর ঘুমাতে পারি না।”

আমার চোখ জোড়া জ্বালা করে উঠল। রাগে নয়, দুঃখে নয়, ভালোবাসার বেদনায় ঝাপসা হয়ে এলো। আমি মাথা নিচু করে বললাম, “আমাকে ক্ষমা করে দাও তিতলি। আমি জানি না আমার কি হয়েছিল।”

আরো একটা চড় আমার গালে। নরম আঙ্গুলের ছোঁয়া, তবে আগের চড়ের চেয়ে অনেক ধিরে। “না ক্ষমা তুমি পাবে না। কিসের ক্ষমা? আমার সব কিছু ছিন্নভিন্ন করে এখন ক্ষমা চাওয়া হচ্ছে?”

আমি ওর হাত গালের ওপরে চেপে ধরে বললাম, “মারো যত ইচ্ছে মারো। তবে প্লিজ আর কেঁদো না।”

আমার কলার ধরে বুকের ওপরে আছড়ে পড়েছিল তিতলি, “মরে যেতে ইচ্ছে করে আদি। তোমার জন্য... জানি না কি হবে আদি।” আমি ওর মাথা বুকের ওপরে চেপে ধরেছিলাম। আমার বুকের ওপরে মাথা রেখে বলে, “ক্ষমা তুমি পাবে না।”

অনেক দিন পরে রূপসী প্রেয়সীর ঠোঁটে নিজের সেই হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার নাম শুনে আবেগে আমার কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে এলো। কালো মেঘের মতন ঘন কালো রেশমি চুলের মধ্যে নাক ডুবিয়ে মাথায় ঠোঁট চেপে ধরে ওকে বললাম, “আচ্ছা বাবা ক্ষমা করতে হবে না।”

শেষ পর্যন্ত হেসে ফেলল তিতলি। চোখে জল, পাতলা গোলাপি ঠোঁটে মৃদু হাসি। কম্পিত কন্ঠে আমাকে বলেছিল, “বাবা এবারে মেরে ফেলবে।”

আমি ওর গোড়ালিতে হাত বুলিয়ে দিয়ে হেসে ফেললাম, “মুফাসা এবারে মেরেই ফেলবে বল।”
 
ধিরে ধিরে আমার হাত ওর বাম পায়ের গুলির ওপরে চলে গেল। সালোয়ারের ওপর দিয়েই ওর পায়ের গুলির ওপরে আদর করে দিতেই ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেল সুন্দরী ললনা।
 
দুম করে আমার হাতের একটা আলতো ওপরে চাঁটি মেরে বলে, “এই কি করছ? প্লিজ ওই ভাবে পায়ে হাত দেয় না।”

আমি ওর পা ছাড়তে পারলাম না। পায়ের গুলি থেকে গোড়ালিতে হাত নিয়ে গেলাম। “আচ্ছা বাবা।”

আমার গালে চাঁপার কলি আঙ্গুল বুলিয়ে আদর করে জিজ্ঞেস করল, “খুব জোরে মেরেছি তাই না।”

ওর নরম হাত গালের ওপরে থেকে সরিয়ে বুকের ওপরে টেনে এনে বললাম, “এখানে ব্যাথা করছে।” বলেই হেসে ফেললাম।

বুকের ওপরে একটা চিমটি কেটে চিবিয়ে চিবিয়ে আমাকে একটু খেপিয়ে তোলার জন্য বলল তিতলি, “বেশ হয়েছে। ব্যাথা করুক, আরো করুক।”

তিতলির ওই ভাবে চিবিয়ে বলার ধরন দেখে আমার ভীষণ হাসি পেয়ে গেল। আমি ওকে বললাম, “দেখে রাস্তা পার হতে পারো না?”

ঠোঁট উলটে অদ্ভুত ভঙ্গিমা করে আমাকে বলল, “দেখেই তো পার হচ্ছিলাম। তুমি চলে এলে সামনে।” আবার একটা আদরের কোমল চপেটা ঘাত আমার বাজুতে। “শয়তান ছেলে সব তোমার জন্য হয়েছে।” আমি শুধু ওর মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে ছিলাম। কতদিন দেখিনি, কতদিন এইভাবে পাশে বসেনি, কতদিন ওর গলা শুনতে পাইনি। গোলাপি ঠোঁট জোড়া নড়ছে, “জানো পারমিতার কত প্রশ্ন। আমি কেন খাই না, আমার কেন কিছুতেই মন বসে না, আমি কেন আনমনা। এই এক দেড় মাস কি যে গেছে আমার ওপর দিয়ে তুমি জানো? তুমি কিছুই জানো না। দুম করে ওইভাবে ট্যাক্সিতে উঠিয়ে দিয়ে চলে গেলে। কেন?” গলা ধরে আসে তিতলির, “আমি কি দোষ করেছিলাম, আদি?”
 
কি করে ওকে বলি, তোমার কোন দোষ নেই তিতলি। তুমি নিষ্পাপ ফুলের মতন নির্মল, প্রজাপতির মতন সুন্দরী, ভোরের সদ্য ফোটা শিউলির মতন তোমার লাবন্য। সব দোষ আমার। সেই সময়ে যদি একটু সাহস দেখাতে পারতাম তাহলে তোমাকে এইভাবে পা মচকাতে হত না, এইভাবে তোমাকে আর আমাকে বিনিদ্র রজনী যাপন করতে হত না।
 
একটু থেমে আমাকে প্রশ্ন করল, “তুমি আমার কাকার নাম কি করে জানলে?”

উত্তর দিলাম, “অনির্বাণ আমাকে বলেছে।”

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে মাথা দুলিয়ে বলল, “আদি জানি না কি হবে।”

আমি ওর কোমল ফর্সা ডান হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে মৃদু হেসে বললাম, “হয়ত সেই বুধাদিত্য কাপুরুষ ছিল, তিতলি। তোমার আদি কাপুরুষ নয়। যখন এক সুতোয় বাঁধা পড়েছি তখন না হয় শেষ দেখা দেখেই যাবো।”
 
জানিনা আমার চোখে কি দেখেছিল তিতলি। আমার কাঁধে মাথা রেখে, আমার ডান হাত নিজের কোমল মুঠোর মধ্যে চেপে ধরে বাকিটা রাস্তা চুপ করে ছিল।
 
ট্যাক্সি কাজিপাড়ার মোড়ে আসতেই আমি তিতলিকে জিজ্ঞেস করলাম, “আমি এখানে নেমে যাই।”

আমার বাজু শক্ত করে ধরে বলে, “হ্যাঁ, ছেলের আদিখ্যেতা দেখো। আমি এখানে নেমে যাই। ইসস, কোলে তুলে ট্যাক্সিতে করে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে যাবে নাকি? বাড়ি চল না হলে আমি হাঁটব কি করে?” শেষের দিকে নিজেই হেসে ফেলে তিতলি।

আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “মুফাসা ক্ষেপে গেলে?”

ওর বাবা কে “মুফাসা” বলে সম্বোধন করতেই ঠোঁট চেপে হাসি চেপে নেয় তিতলি, “বাবা বাড়ি নেই। মুম্বাই গেছে কোন অফিসের কাজে, আসবে চারদিন পরে। ভাই নিজের বন্ধুদের সাথে কোথাও গেছে। বাড়িতে মা আর কাকিমা। তবে কাকিমা নিচের তলায় থাকে।”

ট্যাক্সি থেকে নামার আগে আমি ওর কাজল কালো চোখের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে বললাম, “তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।”

ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেল তিতলি। পদ্মকুড়ির মতন চোখের পাতা নেমে এলো বুকের ওপরে। আমার গালে হাত রেখে সরিয়ে দিল আমার নজর, “ধ্যাত, একদম ওইভাবে আমার দিকে দেখবে না।”
[Image: 20210115-150253.jpg]
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 14-01-2021, 11:07 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by pinuram - 15-01-2021, 12:05 AM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 07-02-2021, 12:55 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 07-02-2021, 01:06 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 08-02-2021, 02:00 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 08-02-2021, 08:42 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 08-02-2021, 08:45 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 09-02-2021, 12:15 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 09-02-2021, 08:38 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 10-02-2021, 01:32 AM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 12-02-2021, 12:03 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 14-02-2021, 02:45 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 18-02-2021, 05:02 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 24-02-2021, 05:46 PM



Users browsing this thread: 52 Guest(s)