14-01-2021, 11:11 PM
(This post was last modified: 14-01-2021, 11:15 PM by cuck son. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
আশ্চর্যের ব্যাপার , একটা ভাত ঘুম দিয়েই ফেললাম আমি । দুপুরে খাওয়ার পর আজমল চাচা আর ঝুমাকে নিয়ে আজেবাজে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরেছিলাম কখন বুঝতে পারিনি । ত্রিশ বছরের মাঝে এটাই প্রথম দুপুরের ঘুম আমার , বুঝলাম গ্রাম্য অলস দুপুর আমার উপর প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে । তবে শরীর টা বেশ ফুরফুরে লাগছে, মাঝে মাঝে এমন ঘুম হলে মন্দ হয় না । আমি বিছানা থেকে উঠে বেশ করে একবার আড়মোড়া ভাংলাম। উফ দারুন , সিদ্ধান্ত নিলাম যেখানেই থাকি মাঝে মাঝে ভাত খেয়ে দুপুরে একটা ঘুম দেবো।
আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে জানালার পাশে এসে দারালাম আমি । বাইরের রোদ অনেক কমে এসেছে , বড় বড় সব গাছ পালা সেই স্তিমিত সূর্যের আলকে বাধা দিচ্ছে পুরনো মিয়াঁ বাড়ির বুকে পৌছুতে । এই আলো ছায়ার সমন্বয়, এক অদ্ভুত পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে বাড়িটা জুড়ে । কোন কর্ম চাঞ্চল্য নেই , নেই কোন জিবনের ছোঁয়া । মাঝে মাঝে দুই একটা পাখি ডেকেউঠে প্রানের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে সুধু । দম বন্ধ করা এই নিস্তব্দতা কর্ম হীনতা আমার কাছে একেবারেই নতুন ঠেকছে , অথচ এই পরিবেসেই আমার জন্ম আর বেড়ে ওঠা। ছোট বেলায় খাইয়ে দাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হতো আমাকে । কি আশ্চর্য মনে মনে ভাবছি আমি , পরিচিত এই পরিবেশ কে কত অচেনা মনে হচ্ছে আমার কাছে ।
আলো ছায়ার খেলা দেখতে দেখতে নিচের দিকে তাকাতেই চোখ পরলো ঝুমার উপর । বৈঠক খানার বারান্দার থামে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে মেয়েটা । সামনে বিছানো একটা লাল কাপড় , এটাই নিশ্চয়ই সেই কাথা যেটা এই মুহূর্তে সেলাই করছে মেয়েটা । মনটা একটু ভার হয়ে গেলো , এই কঠোর পরিশ্রমী মেয়েটা সম্পর্কে কত আজেবাজে চিন্তা করেছি আজ । যে রুপ ওর আছে তাতে কাথা সেলাই আর নানার উপর ভরসা করতে দরিদ্র জীবন জাপনের কোন দরকার নেই ওর । চাইলে রানির হালে থাকতে পারে । অথচ মেয়েটা কত পরিশ্রম করে জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে । এই মেয়ের পক্ষে কাউকে বিপদে ফেলার মতো কোন কিছু করা সম্ভব নয় এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত । তবে মেয়ের নানার ব্যাপারে নিশ্চিত নই । কেমন জানি একটা দৃষ্টি আজমল চাচার চোখ দুটোয় , দেখলে মনে হয় সব সময় কোন না কোন পলিটিক্স করে যাচ্ছে ।
মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম ঝুমার জন্য কিছু একটা করবো আমি । অবশ্যই করবো । আমি জানি এমনি এমনি ঝুমা কিছু নেবে না , আত্মসম্মান বোধ প্রবল মেয়টার । কি ভাবে মেয়েটার ভাগ্য উন্নত করা যায় সেই নিয়ে ভাবতে লাগলাম । একে একে নানা চিন্তা মাথায় আসছে আবার সেগুলি একে একে ঝেড়ে ফেলেও দিচ্ছি । কোনটাই মন পুত হচ্ছে না । এমন সময় হঠাত ঝুমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো , কয়েকবার ডানে বায়ে তাকিয়ে উপরের দিকে তাকালো । সাথে সাথে আমার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো । ভীষণ বিব্রত বোধ করলাম আমি যখন ঝুমা আমার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিজের বুকের কাপড় ঠিক করতে শুরু করলো ।
হ্যাঁ এর আগে ঝুমার শরীর আমার শরীর কে জাগ্রত করেছে , কিন্তু এখন আমি ঝুমার শরীর নয় বরং ওকে দেখছিলা । আর এই দেখায় আমার শরীর নয় মন আপ্লূত হচ্ছিলো এই কর্মঠ আর ভাজ্ঞবিরম্বিত মেয়েটির প্রতি । কিন্তু সেটা হয়ত ঝুমা বুঝবে না , ও হয়ত মনে করবে আমি ওর ঘুমন্ত অবস্থায় অসচেতন আভরনের শরীর দেখছিলাম । দ্রুত আমি জানলা থেকে দূরে চলে গেলাম । মনটা একটু তিক্ত হয়ে গেলো , যখন আমি চিন্তা করছি কি করে মেয়েটিকে সাহায্য করা যায় ঠিক তখন যদি মেয়েটির মনে আমার প্রতি ভুল কোন ধারনা জন্ম নেয়ে তাহলে আমার কাজটি অনেক কঠিন হয়ে যাবে ।
অবশেষে আমি মিয়াঁ বাড়ি থেকে বেরহয়েছি , হ্যাঁ সেই যে এসেছিলাম এর পর আর বেরুনো হয় নি । আজ পুরনো বন্ধুদের খোঁজে বেড়িয়ে পড়লাম , সঙ্গি কৃমি কুমার জালাল । ঝুমা ওকে আমার সঙ্গে দিয়ে দিয়েছে , খালি গায়ে হলুদ রং এর একটি হাপ প্যান্ট পড়া জালাল নিজের কৃমি ভর্তি পেট আর লিক লিকে হাত পা নিয়ে আমার সামনে সামনে হাঁটছে আর আমি পেছন পেছন । নিজেকে এখন সত্যি কারের মিয়াঁ মিয়াঁ লাগছে , যদিও আমার আগের মিয়াঁদের সঙ্গি সাথীরা জালালের মতো ছিলো না , তবুও তো একজন এস্করট সাথে নিয়ে হাঁটা চাট্টিখানি কথা তো নয় । আপন মনেই হেঁসে ফেললাম আমি ।
“ ঐ যে নানা হুজুর , ওইটা ইউনিওন পরিষদ “
দূর থেকে একটা পাচিল ঘেরা একতলা দালান ঘর দিখিয়ে দিয়ে বলল আমার পেয়াদা জালাল । এবং সাথে সাথে এও জানালো সে এর চেয়ে বেশি আগে যাবে না । এর পর রাস্তাটুকু আমাকে একাই সফর করতে হবে । কারন তার মা বলে দিয়েছে দেখিয়ে দিয়ে যেন চলে আসে । সন্ধার পর শরীরে ওষ ( শিশির) লাগলে শরীর খারাপ করবে । পেয়াদা জালাল কে বিদায় জানিয়ে আমি চললাম চেয়ারম্যান অফিসের দিকে।
গেটে কোন দারয়ান নেই , তাই ঢুকতে তেমন অসুবিধা হলো না । তবে চেয়ারম্যান এর অফিসের সামনে কিছু লোকের জটলা । একজন মহিলা নিজের বুকে থাবা মেড়ে বিলাপ করে যাচ্ছে । বুঝলাম ভেতরে বিচার চলছে । এই বিচার ডিঙিয়ে কি করে অফিসে ঢুকবো বুঝতে না পেরে দাড়িয়ে রইলাম । কোথায় যে বসবো সেই জায়গা ও নেই একবার চিন্তা করলাম বলি আমি মিয়াঁ বাড়ি থেকে এসেছি , অথবা চেয়ারম্যান আমার বন্ধু । কিন্তু সাথে সাথে সেই চিন্তা বাদ দিলাম , কারন দুটো , এক যদি মিয়াঁ বাড়ির কথা শুনে চেয়ারম্যান সাহেব দেখা না করে , আর দ্বিতীয় কারন চেয়ারমেনের বন্ধু এটা যদি কেউ বিশ্বাস না করে ।
যাই হোক আধ ঘণ্টা পর একটি ১৫-১৬ বছরের রক্তে ভেজা মাথা চেপে ধরে এক যুবক আর তার পেছন পেছন জটলার সিংহ ভাগ লোক বেড়িয়ে যেতেই আমি একটা চান্স নিলাম । কিন্তু বেশিদূর এগুতে পারলাম না একজন পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি পড়া বুড়ো লোক আমাকে থামিয়ে দিলো জিজ্ঞাস কলো
“ কই জাইবেন “
“ করিমের সাথে দেখা করবো “ আমি উত্তর দিলাম , আমার উত্তর শুনে লোকটার চোখ দুটো একটু সরু হয়ে এলো ।
“ চেরমেন সাব এহন কাম করতাসে , আপনের কি কাম “ চোয়াল শক্ত করে বল্লো বুড়ো , বয়সের কারনে এমনিতেই গাল দুটো তোবারানো তার উপর চোয়াল শক্ত করে রাখায় ভীষণ মারমুখো মনে হলো বুড়ো কে । ঠিক ভয়ে নয় তবে আমার নেক্সট স্টেপ ডিফেন্সিভ হয়ে গেলো। একটু নরম সুরে বললাম
“ না কোন কাজ নেই , এমনি দেখা করতে এসেছে “ লোকটা জেনো ভীষণ অবাক হয়ে গেলো ,
“ কাম ছাড়া ক্যান আহেন আপনেরা , চেরমেন সাবের কি কামা কাইজ নাই “ প্রায় ধমকে উঠলো লোকটি তারপর আমাকে লম্বা একটি বেঞ্চি দেখিয়ে দিয়ে বলল “ ঐখানে গিয়া বসেন , সময় হইলে ডাক দিমু “
অগত্যা আমি দেখিয়ে দেয়া বেঞ্চিতে গিয়ে বসে পড়লাম , আমার পাশে আর এক দাঁড়ি ওয়ালা লোক । লোকটি আগ বাড়িয়ে এসে বলল “ ভাই সাব কি নতুন নাকি এই এলাকায় আগে তো দেখি নাই আপনেরে “ কড়া ঝাঁঝালো জর্দার গন্ধে মাথা ধরে গেলো আমার । লোকটির দিকে তাকালাম আমি , দৃষ্টিতে আক্তা চালিয়াতি ভাব অনেকটা আজমল চাচার মতো । আমি মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিলাম আমি এই এলাকায় নতুন । তখন লোকটি আমাকে বলল “ ঐ রতইন্নারে ২০ টা টেকা দেন তাইলে আপনেরে আগে ঢুকতে দিবো “
যা ভেবেছিলাম তাই , মনে মনে ভাবলাম এতো যদি জানো তবে নিজে বসে আছো কেনো বাছা । তবে মুখে কিছু বললাম না । এমন সময় দেখলাম গেট দিয়ে একটা লোক ঢুকল মাথায় পুরো টাক , একেবারে চক চকে টাঁক , একটি চুল ও অবশিষ্ট নেই , মনে হচ্ছে এই মাত্র তেল মেখে এসেছে । টুকটুকে ফর্সা তার উপর পান খেয়ে ঠোট জোড়া লাল করে এসেছে । পরনে সাদা ফতুয়া আর সাদা লুঙ্গি , ফুতুয়ার বুক পকেট থেকে একটা কালো লম্বা কিছু বেড়িয়ে আছে , মনে হচ্ছে চশমার বাক্স । আমি যেমন লোকটিকে খুঁটিয়ে দেখছি ঠিক তেমনি লোকটি আমাকে খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে সোজা চেয়ারমেনের ঘরে ঢুকে গেলো। আমার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ভুর ভুর করে কড়া সুগন্ধির ঘ্রান পেলাম আমি । আমাদের কঠোর দারোয়ান রতন সাহেব তাকে কিচ্ছু জিজ্ঞাস করা দুররের কথা । তাকে দেখেই দাড়িয়ে সালাম ঠুকে দিলো একটা । মনে হয় চেয়ারম্যানের খাতিরের লোক হবে ।
“ আমাগো নকিব আলি ফজর আলির পোলা , হেই তো চেয়ারম্যান রে টেকা দিসে ভোটের সময় “ আবার সেই জর্দার কৌটা আমার নাকের সামনে খুলে গেলো । সাথে সাথে আমি নাক মুখ খিচে শ্বাস নেয়া বন্ধ করে দিলাম । কিন্তু হঠাত করে নাম গুলো আমার মস্তিস্কে বাড়ি খেলো নকিব আলি ফজর আলি , মানে আমাদের নাল্টু । হ্যাঁ দারুন ফর্সা ছিলো বলেই ওকে নাল্টু নামে দাকা হতো । কেমন শুকনা ছিলো আর মাথা ভর্তি চুল এখন তো চেনাই যায় না । আমাকে কি চিনতে পেরেছে ? মনে হয় না । চিনলে নিশ্চয়ই কথা অন্তত বলতো । এরি মাঝে রতন দারয়ান এর ডাক পরলো ভেতরে ।
“ নাস্তা পানি আইবো এহন গঞ্জ থেইকা , চেয়ারম্যান সাবের সবচেয়ে খাতিরের লোক আইসে “ জর্দার ডিব্বা আবার শুরু হলো “ বুঝলেন ভাই সাব এই দুইজন মিল্লা ই তো মিয়াঁ বাড়ির কোমর ভাইঙ্গা দিসে “ জর্দার ডিব্বার মুখে একটা সব জান্তার হাঁসি ।
“ আপনেরে ভিতরে ডাকে “ দায়িত্ববান দারোয়ান রতন সাহেব এসে আমার সামনে দণ্ডায়মান , চোখে মুখে একটা ভয়ের ছাপ । নিশ্চয়ই নাল্টু আমাকে চিনতে পেরেছে । শেষবারের জন্য জর্দার ডিব্বার দিকে তাকালাম । মুখ পাংশু করে বসে আছে , হয়ত কথা বলার লোক হাড়িয়ে বিমর্ষ ।
“ মিয়াঁ মোহাম্মদ জামিল হায়দার , ওরফে ছোট মিয়াঁ , কি মনে কইরা আজকা হঠাত এই গরিবের আস্তানায় পারা পরলো আপনের , মিয়াঁ রা তো কোনদিন এইখানে আসে না , কোন দরকার পড়লে চেয়ারম্যান নিজে যায় , হুজুরের কাছে কি কোন অন্যায় কইরা ফালাইসি “
আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে জানালার পাশে এসে দারালাম আমি । বাইরের রোদ অনেক কমে এসেছে , বড় বড় সব গাছ পালা সেই স্তিমিত সূর্যের আলকে বাধা দিচ্ছে পুরনো মিয়াঁ বাড়ির বুকে পৌছুতে । এই আলো ছায়ার সমন্বয়, এক অদ্ভুত পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে বাড়িটা জুড়ে । কোন কর্ম চাঞ্চল্য নেই , নেই কোন জিবনের ছোঁয়া । মাঝে মাঝে দুই একটা পাখি ডেকেউঠে প্রানের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে সুধু । দম বন্ধ করা এই নিস্তব্দতা কর্ম হীনতা আমার কাছে একেবারেই নতুন ঠেকছে , অথচ এই পরিবেসেই আমার জন্ম আর বেড়ে ওঠা। ছোট বেলায় খাইয়ে দাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হতো আমাকে । কি আশ্চর্য মনে মনে ভাবছি আমি , পরিচিত এই পরিবেশ কে কত অচেনা মনে হচ্ছে আমার কাছে ।
আলো ছায়ার খেলা দেখতে দেখতে নিচের দিকে তাকাতেই চোখ পরলো ঝুমার উপর । বৈঠক খানার বারান্দার থামে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে মেয়েটা । সামনে বিছানো একটা লাল কাপড় , এটাই নিশ্চয়ই সেই কাথা যেটা এই মুহূর্তে সেলাই করছে মেয়েটা । মনটা একটু ভার হয়ে গেলো , এই কঠোর পরিশ্রমী মেয়েটা সম্পর্কে কত আজেবাজে চিন্তা করেছি আজ । যে রুপ ওর আছে তাতে কাথা সেলাই আর নানার উপর ভরসা করতে দরিদ্র জীবন জাপনের কোন দরকার নেই ওর । চাইলে রানির হালে থাকতে পারে । অথচ মেয়েটা কত পরিশ্রম করে জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে । এই মেয়ের পক্ষে কাউকে বিপদে ফেলার মতো কোন কিছু করা সম্ভব নয় এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত । তবে মেয়ের নানার ব্যাপারে নিশ্চিত নই । কেমন জানি একটা দৃষ্টি আজমল চাচার চোখ দুটোয় , দেখলে মনে হয় সব সময় কোন না কোন পলিটিক্স করে যাচ্ছে ।
মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম ঝুমার জন্য কিছু একটা করবো আমি । অবশ্যই করবো । আমি জানি এমনি এমনি ঝুমা কিছু নেবে না , আত্মসম্মান বোধ প্রবল মেয়টার । কি ভাবে মেয়েটার ভাগ্য উন্নত করা যায় সেই নিয়ে ভাবতে লাগলাম । একে একে নানা চিন্তা মাথায় আসছে আবার সেগুলি একে একে ঝেড়ে ফেলেও দিচ্ছি । কোনটাই মন পুত হচ্ছে না । এমন সময় হঠাত ঝুমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো , কয়েকবার ডানে বায়ে তাকিয়ে উপরের দিকে তাকালো । সাথে সাথে আমার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো । ভীষণ বিব্রত বোধ করলাম আমি যখন ঝুমা আমার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিজের বুকের কাপড় ঠিক করতে শুরু করলো ।
হ্যাঁ এর আগে ঝুমার শরীর আমার শরীর কে জাগ্রত করেছে , কিন্তু এখন আমি ঝুমার শরীর নয় বরং ওকে দেখছিলা । আর এই দেখায় আমার শরীর নয় মন আপ্লূত হচ্ছিলো এই কর্মঠ আর ভাজ্ঞবিরম্বিত মেয়েটির প্রতি । কিন্তু সেটা হয়ত ঝুমা বুঝবে না , ও হয়ত মনে করবে আমি ওর ঘুমন্ত অবস্থায় অসচেতন আভরনের শরীর দেখছিলাম । দ্রুত আমি জানলা থেকে দূরে চলে গেলাম । মনটা একটু তিক্ত হয়ে গেলো , যখন আমি চিন্তা করছি কি করে মেয়েটিকে সাহায্য করা যায় ঠিক তখন যদি মেয়েটির মনে আমার প্রতি ভুল কোন ধারনা জন্ম নেয়ে তাহলে আমার কাজটি অনেক কঠিন হয়ে যাবে ।
অবশেষে আমি মিয়াঁ বাড়ি থেকে বেরহয়েছি , হ্যাঁ সেই যে এসেছিলাম এর পর আর বেরুনো হয় নি । আজ পুরনো বন্ধুদের খোঁজে বেড়িয়ে পড়লাম , সঙ্গি কৃমি কুমার জালাল । ঝুমা ওকে আমার সঙ্গে দিয়ে দিয়েছে , খালি গায়ে হলুদ রং এর একটি হাপ প্যান্ট পড়া জালাল নিজের কৃমি ভর্তি পেট আর লিক লিকে হাত পা নিয়ে আমার সামনে সামনে হাঁটছে আর আমি পেছন পেছন । নিজেকে এখন সত্যি কারের মিয়াঁ মিয়াঁ লাগছে , যদিও আমার আগের মিয়াঁদের সঙ্গি সাথীরা জালালের মতো ছিলো না , তবুও তো একজন এস্করট সাথে নিয়ে হাঁটা চাট্টিখানি কথা তো নয় । আপন মনেই হেঁসে ফেললাম আমি ।
“ ঐ যে নানা হুজুর , ওইটা ইউনিওন পরিষদ “
দূর থেকে একটা পাচিল ঘেরা একতলা দালান ঘর দিখিয়ে দিয়ে বলল আমার পেয়াদা জালাল । এবং সাথে সাথে এও জানালো সে এর চেয়ে বেশি আগে যাবে না । এর পর রাস্তাটুকু আমাকে একাই সফর করতে হবে । কারন তার মা বলে দিয়েছে দেখিয়ে দিয়ে যেন চলে আসে । সন্ধার পর শরীরে ওষ ( শিশির) লাগলে শরীর খারাপ করবে । পেয়াদা জালাল কে বিদায় জানিয়ে আমি চললাম চেয়ারম্যান অফিসের দিকে।
গেটে কোন দারয়ান নেই , তাই ঢুকতে তেমন অসুবিধা হলো না । তবে চেয়ারম্যান এর অফিসের সামনে কিছু লোকের জটলা । একজন মহিলা নিজের বুকে থাবা মেড়ে বিলাপ করে যাচ্ছে । বুঝলাম ভেতরে বিচার চলছে । এই বিচার ডিঙিয়ে কি করে অফিসে ঢুকবো বুঝতে না পেরে দাড়িয়ে রইলাম । কোথায় যে বসবো সেই জায়গা ও নেই একবার চিন্তা করলাম বলি আমি মিয়াঁ বাড়ি থেকে এসেছি , অথবা চেয়ারম্যান আমার বন্ধু । কিন্তু সাথে সাথে সেই চিন্তা বাদ দিলাম , কারন দুটো , এক যদি মিয়াঁ বাড়ির কথা শুনে চেয়ারম্যান সাহেব দেখা না করে , আর দ্বিতীয় কারন চেয়ারমেনের বন্ধু এটা যদি কেউ বিশ্বাস না করে ।
যাই হোক আধ ঘণ্টা পর একটি ১৫-১৬ বছরের রক্তে ভেজা মাথা চেপে ধরে এক যুবক আর তার পেছন পেছন জটলার সিংহ ভাগ লোক বেড়িয়ে যেতেই আমি একটা চান্স নিলাম । কিন্তু বেশিদূর এগুতে পারলাম না একজন পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি পড়া বুড়ো লোক আমাকে থামিয়ে দিলো জিজ্ঞাস কলো
“ কই জাইবেন “
“ করিমের সাথে দেখা করবো “ আমি উত্তর দিলাম , আমার উত্তর শুনে লোকটার চোখ দুটো একটু সরু হয়ে এলো ।
“ চেরমেন সাব এহন কাম করতাসে , আপনের কি কাম “ চোয়াল শক্ত করে বল্লো বুড়ো , বয়সের কারনে এমনিতেই গাল দুটো তোবারানো তার উপর চোয়াল শক্ত করে রাখায় ভীষণ মারমুখো মনে হলো বুড়ো কে । ঠিক ভয়ে নয় তবে আমার নেক্সট স্টেপ ডিফেন্সিভ হয়ে গেলো। একটু নরম সুরে বললাম
“ না কোন কাজ নেই , এমনি দেখা করতে এসেছে “ লোকটা জেনো ভীষণ অবাক হয়ে গেলো ,
“ কাম ছাড়া ক্যান আহেন আপনেরা , চেরমেন সাবের কি কামা কাইজ নাই “ প্রায় ধমকে উঠলো লোকটি তারপর আমাকে লম্বা একটি বেঞ্চি দেখিয়ে দিয়ে বলল “ ঐখানে গিয়া বসেন , সময় হইলে ডাক দিমু “
অগত্যা আমি দেখিয়ে দেয়া বেঞ্চিতে গিয়ে বসে পড়লাম , আমার পাশে আর এক দাঁড়ি ওয়ালা লোক । লোকটি আগ বাড়িয়ে এসে বলল “ ভাই সাব কি নতুন নাকি এই এলাকায় আগে তো দেখি নাই আপনেরে “ কড়া ঝাঁঝালো জর্দার গন্ধে মাথা ধরে গেলো আমার । লোকটির দিকে তাকালাম আমি , দৃষ্টিতে আক্তা চালিয়াতি ভাব অনেকটা আজমল চাচার মতো । আমি মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিলাম আমি এই এলাকায় নতুন । তখন লোকটি আমাকে বলল “ ঐ রতইন্নারে ২০ টা টেকা দেন তাইলে আপনেরে আগে ঢুকতে দিবো “
যা ভেবেছিলাম তাই , মনে মনে ভাবলাম এতো যদি জানো তবে নিজে বসে আছো কেনো বাছা । তবে মুখে কিছু বললাম না । এমন সময় দেখলাম গেট দিয়ে একটা লোক ঢুকল মাথায় পুরো টাক , একেবারে চক চকে টাঁক , একটি চুল ও অবশিষ্ট নেই , মনে হচ্ছে এই মাত্র তেল মেখে এসেছে । টুকটুকে ফর্সা তার উপর পান খেয়ে ঠোট জোড়া লাল করে এসেছে । পরনে সাদা ফতুয়া আর সাদা লুঙ্গি , ফুতুয়ার বুক পকেট থেকে একটা কালো লম্বা কিছু বেড়িয়ে আছে , মনে হচ্ছে চশমার বাক্স । আমি যেমন লোকটিকে খুঁটিয়ে দেখছি ঠিক তেমনি লোকটি আমাকে খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে সোজা চেয়ারমেনের ঘরে ঢুকে গেলো। আমার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ভুর ভুর করে কড়া সুগন্ধির ঘ্রান পেলাম আমি । আমাদের কঠোর দারোয়ান রতন সাহেব তাকে কিচ্ছু জিজ্ঞাস করা দুররের কথা । তাকে দেখেই দাড়িয়ে সালাম ঠুকে দিলো একটা । মনে হয় চেয়ারম্যানের খাতিরের লোক হবে ।
“ আমাগো নকিব আলি ফজর আলির পোলা , হেই তো চেয়ারম্যান রে টেকা দিসে ভোটের সময় “ আবার সেই জর্দার কৌটা আমার নাকের সামনে খুলে গেলো । সাথে সাথে আমি নাক মুখ খিচে শ্বাস নেয়া বন্ধ করে দিলাম । কিন্তু হঠাত করে নাম গুলো আমার মস্তিস্কে বাড়ি খেলো নকিব আলি ফজর আলি , মানে আমাদের নাল্টু । হ্যাঁ দারুন ফর্সা ছিলো বলেই ওকে নাল্টু নামে দাকা হতো । কেমন শুকনা ছিলো আর মাথা ভর্তি চুল এখন তো চেনাই যায় না । আমাকে কি চিনতে পেরেছে ? মনে হয় না । চিনলে নিশ্চয়ই কথা অন্তত বলতো । এরি মাঝে রতন দারয়ান এর ডাক পরলো ভেতরে ।
“ নাস্তা পানি আইবো এহন গঞ্জ থেইকা , চেয়ারম্যান সাবের সবচেয়ে খাতিরের লোক আইসে “ জর্দার ডিব্বা আবার শুরু হলো “ বুঝলেন ভাই সাব এই দুইজন মিল্লা ই তো মিয়াঁ বাড়ির কোমর ভাইঙ্গা দিসে “ জর্দার ডিব্বার মুখে একটা সব জান্তার হাঁসি ।
“ আপনেরে ভিতরে ডাকে “ দায়িত্ববান দারোয়ান রতন সাহেব এসে আমার সামনে দণ্ডায়মান , চোখে মুখে একটা ভয়ের ছাপ । নিশ্চয়ই নাল্টু আমাকে চিনতে পেরেছে । শেষবারের জন্য জর্দার ডিব্বার দিকে তাকালাম । মুখ পাংশু করে বসে আছে , হয়ত কথা বলার লোক হাড়িয়ে বিমর্ষ ।
“ মিয়াঁ মোহাম্মদ জামিল হায়দার , ওরফে ছোট মিয়াঁ , কি মনে কইরা আজকা হঠাত এই গরিবের আস্তানায় পারা পরলো আপনের , মিয়াঁ রা তো কোনদিন এইখানে আসে না , কোন দরকার পড়লে চেয়ারম্যান নিজে যায় , হুজুরের কাছে কি কোন অন্যায় কইরা ফালাইসি “