11-01-2021, 07:10 PM
** কে বন্ধু কে শত্রু **
আজকাল বাসে জানলার ধারে সিট পাওয়া একটা ভাগ্যের ব্যাপার। অনেকটা দূর যেতে হবে। বাসের অল্প আলোয় একটা বই খুলে পড়ছিলাম। কতটা সময় কেটে গেছে খেয়াল করিনি, সম্বিৎ ফিরতেই বাইরে তাকিয়ে দেখি গন্তব্য পেরিয়ে গেছি। তড়িঘড়ি করে বই মুড়ে দাঁড়ালাম। বাসে তখনো বেশ ভিড়, সবে সিট ছেড়ে বাইরে এসেছি হঠাৎ চোখে অন্ধকার দেখলাম, আমি হুমড়ি খেয়ে বসে পড়লাম।
উহঃ করে একটা আওয়াজ করেছিলাম শুধু। হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলেছিলাম, কয়েকটা মুহূর্ত কিছু দেখতে পারিনি শুনতেও পাইনি। একটু পর আচ্ছন্ন ভাবটা কেটে গেলে শুনলাম দু’তিনজন লোক জিজ্ঞেস করছে, কি হল মশাই? ও ভাই কি হল? আমি হাত দুটো চোখের সামনে ধরে দেখি আমার দু’হাত ভরা রক্ত। ঠিক কি হয়েছে আমি নিজেই বুঝতে পারছিলাম না। হাতে রক্ত লেগে, মুখ দিয়ে গলগল করে বের হওয়া রক্তের উষ্ণতা টের পেলাম। লোকজন ধরাধরি করে দাঁড় করালো আমাকে। একজন লোক জিজ্ঞেস করলো, আপনার নাকে কে এভাবে ঘুষি মারলো?
ঘটনার আকস্মিকতায় কিছুটা অবাক আমি। ঘোর লাগা গলায় জিজ্ঞেস করলাম, কে মারলো?
অনেকগুলি কণ্ঠ জিজ্ঞাসা করলো, কে ? কে?
উত্তর নেই। কে মেরেছে কেউই ঠিক করে বলতে পারলো না। একজন শুধু বলল সে নাকি একটা হাত বিদ্যুৎগতিতে আমার মুখের দিকে এগিয়ে আসতে দেখেছে। সেই হাতে নিশ্চয়ই কোনো ধাতব বস্তু পড়ানো ছিল, নইলে খালি হাতে এতটা ক্ষত তৈরি হওয়ার কথা নয়। দুর্ঘটনা নয়, কেউ ইচ্ছে করেই আমাকে মেরেছে বুঝে একটা চাপা অস্বস্তি হতে লাগল।
-- আপনি কোথায় নামবেন?
-- আমি এখানেই নামবো।
-- নিজে নামতে পারবেন?
আমি সোজা হয়ে চারদিক তাকিয়ে দেখলাম। অনেকেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে, সবারই মুখ বন্ধুর মতো, কাউকেই শত্রু মনে হল না দেখে। অবশ্য যে মেরেছে সে নিশ্চয়ই বাস থেকে নেমে গেছে এতক্ষণে।
নামবার জন্য বাসের দরজার দিকে পা বাড়িয়েছি, একজন লোক বলল, দাঁড়ান আমি ধরছি আপনাকে।
কারোর সাহায্য নিতে আমার লজ্জা করে, আবার উপকারী মানুষকে ফিরিয়ে দেওয়াও ঠিক না। কোনো রকমে বললাম, না না ঠিক আছে, আমি পারবো ---
তবু তিনি আমার হাত ধরলেন নামিয়ে দেবার জন্য। তখন একটি রিনরিনে কণ্ঠস্বর বলে উঠলো, আপনার বইটা? বইটা রয়ে গেল যে।
ময়ূরকন্ঠী শাড়ি পরা একটি একুশ-বাইশের মেয়ে, বেশ সুশ্রী এবং সপ্রতিভ। বইটা বাড়িয়ে ধরেছে আমার দিকে।
আমি ধন্যবাদ জানিয়ে বইটা নিলাম। ওটা হারালে মুশকিল হতো, লাইব্রেরি থেকে আনা।
মেয়েটি জিজ্ঞেস করলো, আপনাকে কে মারলো?
এমনিতে এরকম এক অচেনা সুবেশা যুবতী যেচে কথা বলবে না আমার সঙ্গে, হয়তো আমার অবস্থা দেখে ওর মায়া হয়েছে। আমি বললাম, পৃথিবীতে আমার কোনো শত্রু নেই।
মেয়েটি বোধহয় এরকম উত্তর আশা করেনি, তাই আমার কথা শুনে হেসে ফেললো হঠাৎ।
যে ভদ্রলোক আমার হাত ধরে নামাচ্ছিলেন তিনি জোর গলায় কন্ডাক্টরকে বাস থামাতে বললেন। বিনা স্টপেজে বাস থামাতে হল বলে কন্ডাক্টর কিছুটা বিরক্ত। বাস থামতেই নেমে গেলাম। যন্ত্রনায় তখনও মাথাটা ঝিমঝিম করছে, নাকে লেগেছে বলেই বোধহয় ব্যাথাটা বেশি অনুভূত হচ্ছে। তখন বেশ রাত, অধিকাংশ দোকানই বন্ধ, কাছেপিঠে কোনো ওষুধের দোকান বা ডাক্তারখানাও নেই। এদিক ওদিক তাকিয়ে রাস্তার ধারে একটা টিউবয়েল দেখে বললাম, আগে রক্তটা ধুয়ে নিই। জামার কলারে, বুকের কাছে রক্ত ; প্যান্টে এমনকি জুতোতেও রক্তের ছিটে পড়েছে। এই অবস্থায় হাঁটা যায় না। লোকটা পাম্প করতে লাগলেন, আমি মুখে জলের ঝাপ্টা দিতে থাকলাম। ঠান্ডা জলের স্পর্শে আরাম লাগল খানিকটা, মনে হল কারোর স্নেহের মতন। সেই অবস্থায় ওই ময়ূরকন্ঠী শাড়ি পরা মেয়েটির করা প্রশ্ন মাথায় উঁকি দিল। কে আমাকে মারলো? কার ক্ষতি করেছি আমি যে এভাবে আচমকা মেরে বসবে? সামনাসামনি কোনো অভিযোগ জানালে তাও হয়তো বুঝতাম, কিন্তু কাপুরুষের মতন নিজেকে আত্মগোপন করে মারলো কেন? আর যাই হোক কোনো কাপুরুষের সঙ্গে আমার শত্রুতা থাকার প্রশ্নই ওঠে না।
ভদ্রলোক বললেন, রক্ত পড়া কমেছে?
-- প্রায়, কিন্তু আমার জন্য আপনাকে মাঝপথে নামতে হল…
-- না, আমারও এখানেই নামবার কথা, কাছেই বাড়ি। আপনি কোথায় যাবেন?
-- উল্টো দিক থেকে বাস ধরবো।
-- এক্ষুনি বাসে উঠতে পারবেন? শরীর দুর্বল লাগবে না?
-- না চলে যাবো ঠিক, অসুবিধা নেই।
-- আপনার যদি খুব তাড়া না থাকে তাহলে আমার বাড়ি চলুন, একটু বসে জিরিয়ে নিয়ে তারপর চলে যেতেন। খুব কাছেই আমার বাসা।
-- না না, শুধু শুধু আপনাকে বিব্রত করতে চাইনা। এমনিতেই যা করলেন আমার জন্য…
-- আরে মশাই চলুন, অত ভদ্রতা করছেন কেন? আসুন, একটু কফি খেয়ে যাবেন।
বড়ো রাস্তার অদূরে একটা গলির ভিতর ভদ্রলোকের বাড়ি। নাম জেনে নিয়েছি ইতিমধ্যে, অতনু হালদার, এক বেসরকারি অফিসের কেরানি। সদর দরজা খোলাই ছিল, ভিতরে অন্ধকার। সরু সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে অতনুবাবু বললেন, একটু সাবধানে উঠবেন, আবার যেন ধাক্কাটাক্কা না লাগে। শুনেই নাকে হাত চাপা দিয়ে দিলাম, এরপর আবার নাকে ধাক্কা লাগলে আমি অজ্ঞান হয়ে যাবো ঠিক। নিস্তব্ধ বাড়ি, সিঁড়ি দিয়ে তিনতলা পার হয়ে গেলেও অতনুবাবু থামলেন না। আমার একটু অস্বস্তি হতে লাগল, কোথায় চলেছি? এতো রাতে সম্পূর্ণ অচেনা একজন লোকের সাথে এভাবে আসা উচিত হয়নি আমার। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ক’তলায়?
উনি আমার হাত চেপে ধরে বললেন, আসুন না, এইতো এসে গেছি প্রায়।
এবার আমি অন্য কথা ভাবলাম। এই লোকটার মতলব কি? এই-ই আসলে মারেনি তো? এখন ভুলিয়ে ভালিয়ে নিজের ডেরায় নিয়ে আসছে আরও কঠিন শাস্তি দেবার জন্য? যদিও লোকটার সঙ্গে শত্রুতা থাকা দূর, কোনদিনও দেখিনি আগে। তবুও, পৃথিবীতে অসম্ভব ব্যাপার তো ঘটেই থাকে !
আমি থমকে দাঁড়ালাম। ভদ্রলোক আবারো আমার হাত চেপে বলল, আরে মশাই লজ্জা পাচ্ছেন কেন? আসুন এদিকে।
গলার আওয়াজ পেয়েই বোধহয় সামনের দরজা খুলে গেল। অন্ধকারের মধ্যে দেখলাম দরজার সামনে এক ভদ্রমহিলা দাঁড়িয়ে। উনি প্রথমে আমাকে দেখতে পান নি, পরে খেয়াল করতেই মুখ দিয়ে চাপা একটা আর্ত শব্দ করে ঘরের ভেতর ছুটে কোথায় চলে গেলেন।
অতনুবাবু হেসে আমাকে বললেন, আসুন।
আমার পক্ষে অত্যন্ত বিব্রতকর পরিস্থিতি। কিন্তু এখন ঘরের ভেতর না গিয়েও উপায় নেই। বিরাট খাটের উপর দুটি পাঁচ-ছয় বছরের বাচ্চা ঘুমোচ্ছে। ঘরে আসবাবপত্র সাদামাটা। অতনুবাবু একটি চেয়ার টেনে এনে আমাকে বললেন, এখানে বসুন। দাঁড়িয়ে রইলেন কেন?
অগত্যা বসলাম। উল্টো মুখে রাখা ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নিজের চেহারা দেখতে পেলাম। এমন বিসদৃশ আর বোকা ভঙ্গিতে বসে থাকতে কোনো মানুষকে আমি আগে দেখিনি। একটু বাদেই মহিলা ফিরে এলেন এ ঘরে, শ্যামলা গাত্রের নাতিদীর্ঘ চেহারা, মুখখানি ভারী স্নিগ্ধ, এক মাথা ঘন চুল। এসেই নিজের স্বামীর সঙ্গে কোনো কথা বলার আগেই জিজ্ঞেস করলেন, কি হয়েছে?
আমার বলার আগে ওঁর স্বামীই বললেন, ভদ্রলোক আমার সাথেই বাসে আসছিলেন। হঠাৎ কি যে হল, অদ্ভুত ব্যাপার ---
আমি বাঁধা দিয়ে বললাম, হঠাৎ লেগে গেছে একটু।
অতনুবাবু বললেন, না কেউ মেরেছে ওঁকে।
-- কে মেরেছে?
-- তা তো জানি না।
ভদ্রমহিলা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন, ছিঃ মারামারি করতে নেই জানেন না? মানুষের সঙ্গে মারামারি করে কি লাভ?
এতক্ষণ বাদে আমার হাসি পেল। উনি ধরেই নিয়েছেন আমি বোধহয় মারামারি করেছি। এরকম ভাবাই স্বাভাবিক, এক হাতে কি তালি বাজে?
আমি বললাম, না, মারামারির ব্যাপারই নয়। হয়তো নিজের অজান্তেই ধাক্কা টাক্কা লেগেছে কোথাও। এত রাতে আপনাদের বিব্রত করলাম, এবার তাহলে চলি?
অতনুবাবু বললেন, ওঁকে কি এই অবস্থায় যেতে দেওয়া যায়? এখনও রক্তপাত বন্ধ হয়নি
মহিলা বললেন, না আজ আর যাবার দরকার নেই। আপনি আজ এখানেই থেকে যান না, কোনোরকমে জায়গা হয়ে যাবে।
আমি তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, না না, তার কোনো দরকার নেই। আমাকে বাড়ি ফিরতেই হবে।
মহিলা বললেন, ঠিক আছে, একটু পরে যাবেন। এক্ষুনি ওঠবার দরকার নেই, বসুন আপনি।
অতনুবাবু হেসে বললেন, মৌমিতা তুমি প্রথমেই ওঁকে দেখে পালিয়ে গেলে কেন? ভয় পেয়েছিলে?
এবার জানলাম অতনুর স্ত্রীর নাম মৌমিতা। কথাটায় লজ্জা পেয়ে মুখ নামিয়ে নিচু স্বরে বললেন, না ভয় পাইনি, আসলে…।
এবার বুঝলাম, ভদ্রমহিলা রাতপোশাকে ছিলেন, শোওয়ার জন্য তৈরী হয়েছিলেন। অচেনা পুরুষ দেখে তাই তাড়াতাড়ি শাড়ি জড়িয়ে নিতে গিয়েছিলেন।
মৌমিতার বয়স সাতাশ-আটাশ হবে। আরেকবার ওঁর দিকে তাকিয়ে মনে হল, এ রকম সুন্দরী নারী আমি খুব কমই দেখেছি। মুখের মধ্যে একটা কমনীয় ভাব, শান্ত দৃষ্টি, এই নারী বোধহয় পৃথিবীতে কোনো পাপের কথা জানে না।
পুরো ব্যাপারটাই রহস্যময় লাগছিল গোড়া থেকে। ভদ্রলোক আমাকে ডেকে আনলেন কেন আর থেকে যাবার জন্য পীড়াপিড়িই বা করছেন কেন? ঘর দোরের চেহারা দেখেই বোঝা যায় এঁদের অবস্থা সচ্ছল নয়।
মৌমিতা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, নাকের ওপর দুটো ক্ষতের দাগ বসে গেছে, কেউ খুব জোরে মেরেছে মনে হয়। ভীষণ লেগেছিল তাই না? উফঃ খুব লেগেছিল?
আমি দেখলাম মৌমিতার চোখের কোনায় জল। বিস্ময় আমার বুকের মধ্যে আরও লাফিয়ে উঠলো ! উনি কাঁদছেন আমার কষ্টের কথা ভেবে, এমনও আবার হয় নাকি?
আমি বললাম, না ততটা লাগেনি।
মৌমিতা চোখ মুছলেন। আবার লজ্জিত মুখে বললেন, আপনি একটু বসুন, আমি এক্ষুণি আসছি।
আমি অসহায় ভাবে অতনুবাবুকে বললাম, এবার আমাকে সত্যিই উঠতে হবে। আপনাদের নিশ্চয়ই খাওয়া-দাওয়া হয়নি এখনও।
-- দাঁড়ান, মৌমিতাকে না বলে তো যেতে পারবেন না। ওকে এখনও চেনেন নি আপনি।
প্রতি মুহূর্তেই আমার সন্দেহ হচ্ছিল, এদের বুঝি কিছু একটা বদ মতলব আছে। যদিও মৌমিতার চোখের জলের সাথে মেলাতে পারছিলাম না।
মৌমিতা ফিরে এলেন এক গ্লাস দুধ আর একবাটি গরমজল নিয়ে। দুধটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, এটা খেয়ে নিন, অনেকটা রক্ত বেরিয়েছে তো !
আমি লাফিয়ে উঠলাম। অসম্ভব। এদের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। বাড়িতে দুটো বাচ্চা রয়েছে -- এঁদের দুধ আমি খাবো কেন? উত্তর কলকাতার এই সব পরিবারে যে অঢেল দুধ থাকে না, তা আমি ভালো করেই জানি।
আমি কিছুতেই খাবো না। ওরাও দুজনে মিলে আমাকে দারুন পিড়াপীড়ি করতে লাগলেন। মৌমিতার গলায় হুকুমের সুর। এই দুধের মধ্যে বিষ নেই তো? কিংবা ঘুমের ওষুধ?
শেষ পর্যন্ত ওদের জোরাজুরিতে অতিষ্ঠ হয়ে আমি রীতিমতো বিরক্ত মুখে একচুমুকে খেয়ে নিলাম সবটা দুধ। কোনো প্রতিক্রিয়া হল না।
মৌমিতা বলল, এবার চুপটি করে বসুন। আমি জায়গাটা মুছে দিচ্ছি গরমজল দিয়ে।
আমার আর প্রতিবাদ করবার ক্ষমতা নেই, যা হয় হোক। হাত-পা ছড়িয়ে বসে থাকলাম বোকার মতো। উনি গরমজলে তুলো ভিজিয়ে খুব যত্ন সহকারে মুছে দিতে লাগলেন আমার ক্ষত। সস্নেহে বার বার জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, ব্যাথা লাগছে না তো? এবার একটু ডেটল লাগিয়ে দিই? তাহলে আর ভয় থাকবে না।
আমার মুখের খুব কাছেই মৌমিতার মুখ। কি বড় বড় দুটি চোখ, আঙুলগুলো যেন মমতা মাখা। আমার চোখ বুজে আসছিলো বার বার। আমি কি স্বপ্ন দেখছি? এসব সত্যিই হচ্ছে কি? যাদের বিন্দুমাত্র চিনি না, তারা আমাকে এরকম যত্ন করছে কেন?
মৌমিতার অনুরোধে আমাকে জামাটাও খুলে ফেলতে হল। মেয়েদের সামনে আমি কোনওদিন জামা খুলি না --কিন্তু আমার কোনো ওজরই টিকলো না। মৌমিতা সেই জামাটা বাথরুমে নিয়ে বালতিতে ভিজিয়ে দিয়ে ওঁর স্বামীর একটা শার্ট পরতে দিলেন। বললেন, বাড়িতে ওরকম রক্তমাখা জামা পরে গেলে বাড়ির লোক ভয় পেয়ে যাবে না?
প্রায় এক ঘন্টা ধরে মৌমিতার সেবা নেবার পর আমি সত্যিই একসময় বিদায় নিলাম। মৌমিতা তাঁর স্বামীকে হুকুম করলেন, আমাকে সঙ্গে নিয়ে বাসে তুলে দিয়ে আসবার জন্য।
অতনুবাবু আমার শেষ আপত্তি সত্ত্বেও বেরিয়ে এলেন রাস্তায়। গোড়া থেকে আমি সন্দেহ করছিলাম, কিন্তু খারাপ কিছুই ঘটলো না তো।
শুধু সেবা আর যত্ন। রাস্তায় বেরিয়ে কিছুটা আসার পর মনে হল, মৌমিতাকে সেরকমভাবে কোনো কৃতজ্ঞতা জানানো হল না তো।
অতনুবাবুকে বললাম, আপনার স্ত্রী যা করলেন।
অতনুবাবু বললেন, মৌমিতা বড্ড ভালো, জানেন। ওর মতো মেয়ে হয় না। নিজের স্ত্রী বলে বলছি না।
-- সে তো নিশ্চয়ই।
-- আর একটু মিশলে দেখবেন, পৃথিবীতে এ যুগে এরকম মেয়ে হয়না। যে-কোনও মানুষ দুঃখ কষ্ট যন্ত্রনা পেলে ও এত দুঃখ পায় --
-- সত্যি এ যুগে এরকম মেয়ে ভাবাই যায় না।
-- আমার মতো একজন সামান্য কেরানির সঙ্গে বিয়ে হয়েছে, সারাদিন খাটাখাটনি করে, বাইরে বেরোতে পারে না -- তবু আমার ইচ্ছে হয় কি জানেন, বাইরের দুনিয়াকে ডেকে ডেকে দেখাই, সবাইকে বলি দেখো, এ যুগেও এরকম মেয়ে আছে। তাই আপনাকে আজ নিয়ে এলাম।
আজ রাতের সমস্ত ঘটনায় রহস্যময়। কেন বাসে একজন মারলো? তারপর কি দৈবযোগে এরকম একটি পরিবারের সঙ্গে আলাপ হল, যাদের কাজ হচ্ছে বিনা কারণে নিঃস্বার্থ ভাবে উপকার করা। সম্পূর্ণ বিপরীত এই অভিজ্ঞতা !
পরক্ষনেই আবার মনে পড়ল আমার আততায়ী তো আমার কোনও ক্ষতি করতে পারে নি। তার জন্যই অতনু আর মৌমিতার সঙ্গে আমার পরিচয় হল। আমার লাভের পরিমাণটা অনেক বেশি। আততায়ীকে একথাটা জানানো দরকার।
( সমাপ্ত )