Thread Rating:
  • 21 Vote(s) - 3.48 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
ভিন্ন স্বাদের কিছু গল্পের ঠিকানা
#2
                 
                 সুজন ও দীপালির কথা


                

একটি ছেলে আর একটি মেয়ে। ছেলেটির নাম ধরা যাক সুজন আর মেয়েটির নাম ধরা যাক দীপালি। কার কত বয়স, কে কি করে, এসব জেনে আমাদের দরকার নেই।
 একদিন দীপালি চোখ সজল আর বিস্ফারিত করে বলল, ছিঃ !
 শুনে সুজন ভয়ানক ভড়কে গেল। একবার ভাবলো হাত বাড়িয়ে দীপালির একখানা হাত ধরে। ভেবেচিন্তে সে ইচ্ছা ত্যাগ করে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো, কেন, ছি কেন? কিসের ছি?
-- মাকে তুমি এমন করে অবহেলা করো !
বাস্তবিকই দীপালির চোখ দিয়ে টপটপ করে কয়েক ফোঁটা জল মাটিতে ঝরে পড়ল। কোমল মন কিনা, কারও দুঃখকষ্টের কথা কানে এলেই মনটা উত্তপ্ত বালিতে রাখা একখন্ড বরফের মতো গলে যায়। অবশ্য সবচেয়ে বেশি গলে নিজের মন খারাপে। ঠিক গরম তাওয়ায় বরফ দেওয়ার মতো, কিন্তু জীবনে এখনও দুঃখকষ্টের সেরকম আবির্ভাব না ঘটায় পরের জন্য মনটাকে একটু গলাতে না পারলে দীপালির দিন যেন কাটতে চায় না।

দীপালির অভিযোগ সুজনকে আকস্মিক লজ্জায় প্রায় উদ্ভ্রান্ত করে দিল। কেমন যেন বদলে গেল ছেলেটা। সত্যিই তো সে তার বিধবা মাকে অবহেলাই করে। একটা আলগা ছাড়া ছাড়া ভাব। দিনে দিনে ছেলেটার পোশাকের চাকচিক্য উঠে গেল, খরচের বাহুল্য কমে গেল। চুল অবিন্যস্ত, অতিরিক্ত আলস্যটা দরকারি বিশ্রামের চার ভাগের একভাগে এসে ঠেকলো। না খায় সে আর সিগারেট, না যায় দীপালিকে নিয়ে সপ্তাহে দুদিন সিনেমা-রেস্তোরাঁয়।
   অনেক দোনামোনা করে মাকে সে বলে, মা, তোমায় আমি বড়ো বেশি অবহেলা করেছি, এই অধমকে মাপ করো। বাকি জীবনটা আমি তোমার সেবা করে কাটিয়ে দেব।

-- বাকি জীবনটা আমি মার সেবা করে কাটিয়ে দেবো দীপালি !
 দীপালি তা ভালো করেই টের পেতে আরম্ভ করেছিল। তার মনে হল কি যেন একটা ঘূর্ণিপাকে পড়ে আজকাল তার মাথা ধরার আর শেষ থাকছে না। মুখটা পাংশু দেখাচ্ছে, শরীরটা দেখাচ্ছে রোগাটে, কথাবার্তা হয়ে গেছে অসংলগ্ন। এমন একটা সাংঘাতিক ভুল সে কিভাবে করে ফেলল যার ফাঁদে পড়ে সারাজীবন ছটফট করতে হবে, এই কথাটা সব স্ত্রীলোকই জীবনের কোনো একটা পর্যায়ে অনেকবার ভাবে আর উতলা হয়। দীপালি ঠিক সেইরকম ভাবেই উতলা হতে আরম্ভ করলো। একদিন তাই সুজনের সঙ্গে অতি সাধারণ বিষয়ে কথা বলতে বলতে আবার তার চোখ দিয়ে জল পড়তে শুরু করল।
-- একি কাঁদছো কেন?
হাতের ভাঁজে মুখ লুকিয়ে দীপালি এবার রীতিমতো ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল।
  সুজন ভারী বিচলিত হয়ে গেল। দীপালির একটি হাত নিজের করতলে ধরে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে দীপালি, কাঁদছো কেন?
  দীপালি অশ্রুচোখে বলল, তুমি কেবল মাকে নিয়ে মেতে আছো, আমার দিকে ফিরেও তাকাও না আর। আমি কি তোমার কেউ নই?
   কি সর্বনাশ, দীপালির মুখে এই অভিযোগ -     অবহেলার !
  সুজনের হৃৎপিণ্ড কি যেন এক অজানা বাষ্পে ফুলে ফেঁপে উঠলো। সত্যি, জীবনের কি শোচনীয় অপচয় ঘটছে। অন্ধের মতো সোনার খনি থেকে সে কি ভাবেই না বিদায় গ্রহণ করেছে !
  সুজনের ভোল আবার পাল্টে গেল। পরনে কেতাদুরস্ত পোশাক, খরচের বাহুল্য বেড়ে গেল। বিলাসিতার অতুলনীয় আনন্দে দিনরাত্রি পরিপূর্ণ হয়ে উঠলো। দীপালিকে নিয়ে হপ্তায় দু-তিনদিন সিনেমা-শপিং মলে যেতে আরম্ভ করল। অবশ্য সেজন্য মাকে জরাজীর্ণ অবস্থায় অবহেলায় দিন কাটাতে হয়, কিন্তু তার তো প্রতিকার নেই, তাই তা স্বাভাবিক।
   দীপালির মন খুঁতখুঁত করে। মাঝে মাঝে চোখে জলও আসে, সুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে গালে হাত দিয়ে সে আকাশপাতাল ভাবে। ভাবে, সুজনেরা কি -- হয় আকাশে ওঠে নয়তো পাতালে নামে। পৃথিবীতে থাকতে পারে না? এই মাটির পৃথিবীতে?


                                ( সমাপ্ত )
[+] 7 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ভিন্ন স্বাদের কিছু গল্পের ঠিকানা - by Mr Fantastic - 09-01-2021, 03:33 PM



Users browsing this thread: 26 Guest(s)