23-03-2019, 12:55 PM
রাহুল সোনিয়াকে আরও একবার সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে পড়ে। সোনিয়া একটা অদ্ভুত হাঁসি দিয়ে রাহুলের পিছনে পিছনে এগিয়ে যায়। রাহুল মাঠের দিকে যেতে যেতে দেখে কোমল আর ইশিকা দাঁড়িয়ে রয়েছে। ইশিকা ওর দিকে পিছন করে দাঁড়িয়ে আছে। রাহুল চলতে চলতে ওদের কাছে পৌঁছে যায়। রাহুলের হৃতপিন্ড অজানা এক আশঙ্কায় ধুকপুক করছিল।
"ইশি" খুব আস্তে করে ডেকে রাহুল পিছন থেকে ইশিকার হাতের উপর হাত রাখে। কিন্তু ইশিকা কোনো উত্তর দেয় না। রাহুলের মন শঙ্কায় ভরে ওঠে। কিন্তু ও ভাবে হয়তো ইশিকাও ওর মতো ঘাবড়ে রয়েছে। তাই রাহুল ইশিকার হাত ধরে ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। তারপর যেই ইশিকার দিকে তাকায়, রাহুল মুখে লেগে থাকা হাঁসি এক মুহুর্তে মিলিয়ে যায়।
ইশিকার চোখ লাল হয়ে গিয়েছিল আর চোখ থেকে টপ টপ করে গড়িয়ে পড়ছিল ফোঁটা ফোঁটা অশ্রুকণা।
"কী হয়েছে ইশি? তুমি কাঁদছো কেন?" রাহুল একটু ভয় পেয়ে গিয়ে বলে। কিন্তু ইশিকা কোনো উত্তর দেয় না।
রাহুল আবার জিজ্ঞেস করে। কিন্তু আবারও চুপ করে থাকে ইশিকা, শুধু রাহুলের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা দেখতে থাকে।
এবার রাহুল কোমলকে জিজ্ঞেস করে। কোমলও কোনো কথা বলে না। ওর চোখ দিয়েও জল গড়াচ্ছিল।
রাহুল বুঝতে পারে না কেন এরকম করছে। হাতে দিয়ে ইশিকার কাঁধ চেপে ধরে জোরে জোরে নাড়াতে নাড়াতে বলে,"প্লিজ ইশি বলো আমাকে, তোমরা কাঁধছো কেন?"
"ছাড়ো আমাকে.." ইশিকা রেগে গিয়ে তেড়ে আসে। রাহুলের কিছু মাথায় ঢোকে না। ইশিকা এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় রাহুলের কাছ থেকে।
"কী হল ইশিকা?"
ইশিকা কোনো জবাব দেয় না। চুপচাপ ওখান থেকে চলে যেতে যায়। কিন্তু রাহুল ওর হাত ধরে নেয়।
"তোমার কী হয়েছে আমাকে বলো ইশিকা। তুমি এরকম করছো কেন?" রাহুল আবার শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে।
ইশিকা এবার রেগে বলে,"তুমি জান না? জানবে কীকরে, ভালোবাসায় ডুবে গিয়েছিলে যে..."ভালোবাসায় ডুবে গিয়েছিলাম! এসব কী বলছো ইশি? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।" রাহুল অবাক হয়ে বলে।
"বুঝতে পারছো না! যেন কতো অবুঝ, কিচ্ছূটি জানে না, দেখেছো কোমল....এতক্ষন ক্লাসের মধ্যে
"বুঝতে পারছো না! যেন কতো অবুঝ, কিচ্ছূটি জানে না, দেখেছো কোমল....এতক্ষন ক্লাসের মধ্যে সোনিয়ার সাথে যখন ওইসব করছিলে, তখন অবুঝ হওনি.."ইশিকা আবার চেঁচিয়ে ওঠে।
"সোনিয়ার সাথে? ওহ.." রাহুল হো হো করে হেঁসে ফেলে।"তো এই কথা, আমি ওকে একটা কাজ করতে দিয়েছিলাম আর ও করবে বলেছিল। তাই আমি ওরকম করেছিলাম, বন্ধুর মতো।"
ইশিকা কিছুটা অবাক হয়। রাহুলের চোখের দিকে তাকিয়ে বোঝবার চেষ্টা করে রাহুল ঠিক বলছে কিনা।
"তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না? আচ্ছা দাঁড়াও, সোনিয়ার মুখ থেকেই শোনো তাহলে..." বলে রাহুল পিছন ঘুরে দেখে সোনিয়া ওর পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। "দেখো সোনিয়া এখুনি সোনিয়া এখুনি তোমার ভুল ভেঙে দেবে.." সোনিয়ার দিকে তাকিয়ে "সোনিয়া তুমি ওকে বলে দাও তো যে আমি তোমার গলা কেন জড়িয়ে ধরেছিলাম। ও শুধু শুধু আমাদের সন্দেহ করছে।"
"ইশিকা ও আমাকে জড়িয়ে ধরেছে কারন.... ও আমাকে খুব ভালোবাসে, আর আমিও ওকে খুব ভালোবাসি।" রাহুল চমকে ওঠে সোনিয়ার কথায়। মুখের হাঁসি উধাও হয়ে যায়। মাথা শুন্য হয়ে যায়। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারে না রাহুল।
"সোনিয়া এই সময় দয়া করে মজা কোরো না প্লিস.." রাহুল রেগে গিয়ে বলে।
"মজা! কেন রাহুল? তুমি ইশিকাকে বলতে ভয় কেন পাচ্ছ যে আমরা একে অপর ভালোবাসি আর খুব সুখে আছি।" সোনিয়া জোর দিয়ে বলে।
রাহুল ইশিকার দিকে তাকায়। ওর চোখ থেকে অশ্রুধারা গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে নিচে।
রাহুল ইশিকার দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে বলে,"ইশি বিশ্বাস করো আমাকে, আমি তোমাকেই ভালোবাসি, I LOVE YOU , আর শুধু আজকে থেকে নয়, যেদিন তোমার সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল, সেদিনই আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম।
ইশিকা,"ব্যাস রাহুল, আর কত মিথ্যে কথা বলবে?" অশ্রুসিক্ত গলায় বলে।
"বিশ্বাস করো ইশি। আমি তোমাকে মিথ্যে বলছি না। আমি তোমার জন্য একটা চিঠিও লিখেছিলাম। যাতে সব সত্যি লেখা ছিল। এই দ্যাখো..." বলে রাহুল পকেটের ভিতর হাত ঢোকায়। কিন্তু চিঠিটা পায় না। তখন ওর মনে পড়ে যে ক্লাসে ও চিঠিটা সোনিয়াকে দিয়েছিল। "সোনিয়া আমার চিঠিটা আমাকে ফেরত দাও।" রাহুল ধমকিয়ে বলে সোনিয়াকে।
"কোন চিঠিটা রাহুল? তুমি তো আমাকে অনেক দিন হলো কোনো লাভ লেটার দাওনি।" বলে বাঁকা হাঁসি হাঁসে।
রাহুল প্রচন্ড রেগে যায় সোনিয়ার উপর। মনে হয় যেন গলা টিপে শেষ করে দেয় সোনিয়াকে। কিন্তু এখন মাথা গরম করার সময় নয়। ইশিকাকে যেকরে হোক বোঝাতে হবে।
রাহুল,"আমার কথা শোনো ইশি..."
সোনিয়া,"না ইশিকা, আমি সব সত্যি বলে দেব তোমাকে। যেদিন রাহুল আমাকে পড়া বোঝাতে আমাদের বাড়ি গিয়েছিল, সেদিন আমরা দুজনে খুব মজা করেছিলাম। ওহ্ সেদিনের কথা মনে করে আমার..." বলতে বলতে নির্লজ্জের মতো হাঁসতে থাকে।
সোনিয়ার কথা শুনে ইশিকার মুখের উপর হাত চলে যায়। ঘৃণা ধরে যায় রাহুলের ওপর। চোখ দিয়ে অবিরাম গড়িয়ে চলেছে অশ্রুধারা। চোখ ফুলে লাল টকটকে হয়ে গিয়েছিল। একই অবস্থা কোমলেরও।
ওফ গড সোনিয়া, হোয়াই সি ডিড দ্যাট?" মেয়েটি এবার আবেগের বসে নিজের মাতৃভাষাতেই চেঁচিয়ে উঠল।
"জানি না, কেন ও আমার সাথে এরকম করেছিল।" রাহুলের চোখের পাতা ভিজে গিয়েছিল। ও এখনও জানালা দিয়ে বাইরের দিকেই তাকিয়ে ছিল।
"তারপর কী হল?" মেয়েটি সেই অদ্ভুত বাংলাতেই বললো।
"তারপর যা হল, তাতে আমার জীবনটা তছনছ হয়ে গেল।" রাহুল একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবার বলতে শুরু করল।
তারপর রাহুল ইশিকার কাঁধ চেপে ধরে বলে,"ইশি আমার কথা শোনো, এরকম কিছুই হয়নি। সোনিয়া..."
ইশিকা রাহুলের কথা শেষ করতে দেয় না। ঝটকা মেরে কাঁধ থেকে রাহুলের হাত সরিয়ে দিয়ে বলে,"সাট আপ রাহুল, যাস্ট সাটাপ.."
কোমলের দিকে তাকিয়ে ওর কাঁধ ধরে জোরে জোরে নাড়াতে নাড়াতে বলে,"নে দেখে নে কোমল, দেখে নে, কী বলেছিলিস তুই যে তোরা মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকেরা গরীব হতে পারিস, কিন্তু তোদের ভালোবাসায় কোনো খাদ নেই। এটাই বলেছিলিস না তুই? দেখে নে, তোরা কীরকম ভালোবাসতে পারিস দেখে নে নিজের চোখে.." বলে আবার কোমলের কাঁধ ধরে জোরে জোরে ঝাঁকাতে থাকে।
পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা রাহুলের মাথা নত হয়ে ছিল। কিন্তু যেভাবে হোক ওর ভালোবাসাকে আবার ফিরিয়ে আনতেই হবে। এই ভেবে রাহুল আবার ইশিকার কাঁধ ধরে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নিয়ে বলে,"ইশিকা আমার কথা তো শোনো, একবার অন্তত..."
ইশিকা,"রাহুল আমার হাত ছাড়ো।" চেঁচিয়ে বলে আর নিজের হাতটাকে ঝটকাতে থাকে রাহুলের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু রাহুল এবারে জোরে চেপে ধরে থাকে ইশিকার হাত।
ইশিকা জোরে জোরে চেঁচাতে চেঁচাতে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু রাহুলের বলিষ্ঠ হাতের সাথে পেরে ওঠে না। রাহুল বারবার শান্ত করার চেষ্টা করে ইশিকাকে। কিন্তু তারপরেও ইশিকা শান্ত হয় না।
"ইশিকা.." রাহুল এবার জোরে চেঁচিয়ে উঠে ইশিকাকে নিজের আরও কাছে টেনে নেয়। এবারে ইশিকা একটু শান্ত হয় আর রাহুলের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
রাহুল,"আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি ইশিকা, আই লাভ ইউ ওনলি.." খুব শান্ত গলায় বলে,"আমি তোমাকে... শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখ, কী দেখতে পাও? আমি তোমাকে সব বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এভাবে নয়। সোনিয়া সত্যি বলেছে। কিন্তু ওর সব কথা সত্যি নয়। প্লিজ আমার কথা শোনো.."
ইশিকা,"আমি যদি কোনো ছেলের সাথে এরকম করে আসতাম, আর তোমাকে বোঝাতাম যে আমি কিছু করিনি, তুমি মেনে নিতে? দুঃখ হতো না তোমার? তুমি আমাকে ঠকিয়েছে রাহুল, তুমি আমাকে ঠকিয়েছ.." শেষের কথা গুলো কান্নার রেসে জড়িয়ে যায়।
রাহুল কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না। চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। প্রতিবাদ করার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে রাহুল।
ইশিকা,"তোমরা সব ছেলেরাই সমান... ইউ অল মেন আর সেম.."বলতে বলতে বলতে ফুঁপিয়ে কাঁদে ওঠে।
রাহুল চাইলেও কিছু করতে পারছিল না। আবার প্রেয়সিকে নিজের চোখের সামনে কাঁদতেও দেখতে পারছিল না। রাহুল ইশিকা নিজের কাছে টেনে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এসে হাত দিয়ে ইশিকার চোখের জল মুছিয়ে দেয়।
রাহুল,"তুমি কেঁদো না ইশি, প্লিজ। আমি সরি, আমাকে ক্ষমা করে দাও। তুমি যা খুশি শাস্তি দাও আমাকে, আমি মাথা পেতে নেব। কিন্তু দয়া করে আর কেঁদো না। আমি তোমার কান্না সহ্য করতে পারবো না। আই লাভ ইউ ইশি। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না। প্লিজ একবার আমাকে বিশ্বাস করো, প্লিজ..." রাহুল শুধু এটুকুই বলতে পারে।
"ঠাসস্" ইশিকা ঠাস করে একটা চড় মারে রাহুলের গালে। "বিশ্বাস! মানে বোঝো তুমি কথাটার?"
রাহুল,"আরও মারো ইশিকা, যতখুশি মারো। কিন্তু আমাকে ভুল বুঝো না, আমি সত্যি বলছি...
দেখো আজ তোমাকে পড়াবার জন্য এই রিংটাও এনেছিলাম।" বলে রাহুল জ্যাকেটের পকেট থেকে একটা ছোট্টো রিং বের করে।
ইশিকা রিংটার দিকে তাকায়। তারপর রাহুলের মুখের দিকে। রাহুলের জলভরা চোখের দিকে তাকিয়ে যেন দেখবার চেষ্টা করে রাহুল কি ঠিক বলছে? ইশিকা পরিষ্কার দেখতে পায় রাহুলের চোখ বলছে... একবার ক্ষমা করে দাও ইশিকা। সত্যি আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।
ইশিকার চোখেও অশ্রুকণা ভরে উঠেছিল। ওর বিশ্বাস যে ভেঙে গিয়েছিল। রাহুলের চোখের দিকে তাকিয়ে ইশিকার মনে হয় রাহুল হয়তো ভুল করে করে ফেলেছে, ওকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত। কিন্তু ইশিকা জোরে জোরে মাথা নাড়াতে থাকে। যেন বলতে চাইছে,"করতে পারছিনা বিশ্বাস রাহুল। আমাকে ক্ষমা করে দিও"
"ইশি" খুব আস্তে করে ডেকে রাহুল পিছন থেকে ইশিকার হাতের উপর হাত রাখে। কিন্তু ইশিকা কোনো উত্তর দেয় না। রাহুলের মন শঙ্কায় ভরে ওঠে। কিন্তু ও ভাবে হয়তো ইশিকাও ওর মতো ঘাবড়ে রয়েছে। তাই রাহুল ইশিকার হাত ধরে ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। তারপর যেই ইশিকার দিকে তাকায়, রাহুল মুখে লেগে থাকা হাঁসি এক মুহুর্তে মিলিয়ে যায়।
ইশিকার চোখ লাল হয়ে গিয়েছিল আর চোখ থেকে টপ টপ করে গড়িয়ে পড়ছিল ফোঁটা ফোঁটা অশ্রুকণা।
"কী হয়েছে ইশি? তুমি কাঁদছো কেন?" রাহুল একটু ভয় পেয়ে গিয়ে বলে। কিন্তু ইশিকা কোনো উত্তর দেয় না।
রাহুল আবার জিজ্ঞেস করে। কিন্তু আবারও চুপ করে থাকে ইশিকা, শুধু রাহুলের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা দেখতে থাকে।
এবার রাহুল কোমলকে জিজ্ঞেস করে। কোমলও কোনো কথা বলে না। ওর চোখ দিয়েও জল গড়াচ্ছিল।
রাহুল বুঝতে পারে না কেন এরকম করছে। হাতে দিয়ে ইশিকার কাঁধ চেপে ধরে জোরে জোরে নাড়াতে নাড়াতে বলে,"প্লিজ ইশি বলো আমাকে, তোমরা কাঁধছো কেন?"
"ছাড়ো আমাকে.." ইশিকা রেগে গিয়ে তেড়ে আসে। রাহুলের কিছু মাথায় ঢোকে না। ইশিকা এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় রাহুলের কাছ থেকে।
"কী হল ইশিকা?"
ইশিকা কোনো জবাব দেয় না। চুপচাপ ওখান থেকে চলে যেতে যায়। কিন্তু রাহুল ওর হাত ধরে নেয়।
"তোমার কী হয়েছে আমাকে বলো ইশিকা। তুমি এরকম করছো কেন?" রাহুল আবার শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে।
ইশিকা এবার রেগে বলে,"তুমি জান না? জানবে কীকরে, ভালোবাসায় ডুবে গিয়েছিলে যে..."ভালোবাসায় ডুবে গিয়েছিলাম! এসব কী বলছো ইশি? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।" রাহুল অবাক হয়ে বলে।
"বুঝতে পারছো না! যেন কতো অবুঝ, কিচ্ছূটি জানে না, দেখেছো কোমল....এতক্ষন ক্লাসের মধ্যে
"বুঝতে পারছো না! যেন কতো অবুঝ, কিচ্ছূটি জানে না, দেখেছো কোমল....এতক্ষন ক্লাসের মধ্যে সোনিয়ার সাথে যখন ওইসব করছিলে, তখন অবুঝ হওনি.."ইশিকা আবার চেঁচিয়ে ওঠে।
"সোনিয়ার সাথে? ওহ.." রাহুল হো হো করে হেঁসে ফেলে।"তো এই কথা, আমি ওকে একটা কাজ করতে দিয়েছিলাম আর ও করবে বলেছিল। তাই আমি ওরকম করেছিলাম, বন্ধুর মতো।"
ইশিকা কিছুটা অবাক হয়। রাহুলের চোখের দিকে তাকিয়ে বোঝবার চেষ্টা করে রাহুল ঠিক বলছে কিনা।
"তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না? আচ্ছা দাঁড়াও, সোনিয়ার মুখ থেকেই শোনো তাহলে..." বলে রাহুল পিছন ঘুরে দেখে সোনিয়া ওর পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। "দেখো সোনিয়া এখুনি সোনিয়া এখুনি তোমার ভুল ভেঙে দেবে.." সোনিয়ার দিকে তাকিয়ে "সোনিয়া তুমি ওকে বলে দাও তো যে আমি তোমার গলা কেন জড়িয়ে ধরেছিলাম। ও শুধু শুধু আমাদের সন্দেহ করছে।"
"ইশিকা ও আমাকে জড়িয়ে ধরেছে কারন.... ও আমাকে খুব ভালোবাসে, আর আমিও ওকে খুব ভালোবাসি।" রাহুল চমকে ওঠে সোনিয়ার কথায়। মুখের হাঁসি উধাও হয়ে যায়। মাথা শুন্য হয়ে যায়। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারে না রাহুল।
"সোনিয়া এই সময় দয়া করে মজা কোরো না প্লিস.." রাহুল রেগে গিয়ে বলে।
"মজা! কেন রাহুল? তুমি ইশিকাকে বলতে ভয় কেন পাচ্ছ যে আমরা একে অপর ভালোবাসি আর খুব সুখে আছি।" সোনিয়া জোর দিয়ে বলে।
রাহুল ইশিকার দিকে তাকায়। ওর চোখ থেকে অশ্রুধারা গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে নিচে।
রাহুল ইশিকার দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে বলে,"ইশি বিশ্বাস করো আমাকে, আমি তোমাকেই ভালোবাসি, I LOVE YOU , আর শুধু আজকে থেকে নয়, যেদিন তোমার সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল, সেদিনই আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম।
ইশিকা,"ব্যাস রাহুল, আর কত মিথ্যে কথা বলবে?" অশ্রুসিক্ত গলায় বলে।
"বিশ্বাস করো ইশি। আমি তোমাকে মিথ্যে বলছি না। আমি তোমার জন্য একটা চিঠিও লিখেছিলাম। যাতে সব সত্যি লেখা ছিল। এই দ্যাখো..." বলে রাহুল পকেটের ভিতর হাত ঢোকায়। কিন্তু চিঠিটা পায় না। তখন ওর মনে পড়ে যে ক্লাসে ও চিঠিটা সোনিয়াকে দিয়েছিল। "সোনিয়া আমার চিঠিটা আমাকে ফেরত দাও।" রাহুল ধমকিয়ে বলে সোনিয়াকে।
"কোন চিঠিটা রাহুল? তুমি তো আমাকে অনেক দিন হলো কোনো লাভ লেটার দাওনি।" বলে বাঁকা হাঁসি হাঁসে।
রাহুল প্রচন্ড রেগে যায় সোনিয়ার উপর। মনে হয় যেন গলা টিপে শেষ করে দেয় সোনিয়াকে। কিন্তু এখন মাথা গরম করার সময় নয়। ইশিকাকে যেকরে হোক বোঝাতে হবে।
রাহুল,"আমার কথা শোনো ইশি..."
সোনিয়া,"না ইশিকা, আমি সব সত্যি বলে দেব তোমাকে। যেদিন রাহুল আমাকে পড়া বোঝাতে আমাদের বাড়ি গিয়েছিল, সেদিন আমরা দুজনে খুব মজা করেছিলাম। ওহ্ সেদিনের কথা মনে করে আমার..." বলতে বলতে নির্লজ্জের মতো হাঁসতে থাকে।
সোনিয়ার কথা শুনে ইশিকার মুখের উপর হাত চলে যায়। ঘৃণা ধরে যায় রাহুলের ওপর। চোখ দিয়ে অবিরাম গড়িয়ে চলেছে অশ্রুধারা। চোখ ফুলে লাল টকটকে হয়ে গিয়েছিল। একই অবস্থা কোমলেরও।
ওফ গড সোনিয়া, হোয়াই সি ডিড দ্যাট?" মেয়েটি এবার আবেগের বসে নিজের মাতৃভাষাতেই চেঁচিয়ে উঠল।
"জানি না, কেন ও আমার সাথে এরকম করেছিল।" রাহুলের চোখের পাতা ভিজে গিয়েছিল। ও এখনও জানালা দিয়ে বাইরের দিকেই তাকিয়ে ছিল।
"তারপর কী হল?" মেয়েটি সেই অদ্ভুত বাংলাতেই বললো।
"তারপর যা হল, তাতে আমার জীবনটা তছনছ হয়ে গেল।" রাহুল একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবার বলতে শুরু করল।
তারপর রাহুল ইশিকার কাঁধ চেপে ধরে বলে,"ইশি আমার কথা শোনো, এরকম কিছুই হয়নি। সোনিয়া..."
ইশিকা রাহুলের কথা শেষ করতে দেয় না। ঝটকা মেরে কাঁধ থেকে রাহুলের হাত সরিয়ে দিয়ে বলে,"সাট আপ রাহুল, যাস্ট সাটাপ.."
কোমলের দিকে তাকিয়ে ওর কাঁধ ধরে জোরে জোরে নাড়াতে নাড়াতে বলে,"নে দেখে নে কোমল, দেখে নে, কী বলেছিলিস তুই যে তোরা মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকেরা গরীব হতে পারিস, কিন্তু তোদের ভালোবাসায় কোনো খাদ নেই। এটাই বলেছিলিস না তুই? দেখে নে, তোরা কীরকম ভালোবাসতে পারিস দেখে নে নিজের চোখে.." বলে আবার কোমলের কাঁধ ধরে জোরে জোরে ঝাঁকাতে থাকে।
পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা রাহুলের মাথা নত হয়ে ছিল। কিন্তু যেভাবে হোক ওর ভালোবাসাকে আবার ফিরিয়ে আনতেই হবে। এই ভেবে রাহুল আবার ইশিকার কাঁধ ধরে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নিয়ে বলে,"ইশিকা আমার কথা তো শোনো, একবার অন্তত..."
ইশিকা,"রাহুল আমার হাত ছাড়ো।" চেঁচিয়ে বলে আর নিজের হাতটাকে ঝটকাতে থাকে রাহুলের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু রাহুল এবারে জোরে চেপে ধরে থাকে ইশিকার হাত।
ইশিকা জোরে জোরে চেঁচাতে চেঁচাতে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু রাহুলের বলিষ্ঠ হাতের সাথে পেরে ওঠে না। রাহুল বারবার শান্ত করার চেষ্টা করে ইশিকাকে। কিন্তু তারপরেও ইশিকা শান্ত হয় না।
"ইশিকা.." রাহুল এবার জোরে চেঁচিয়ে উঠে ইশিকাকে নিজের আরও কাছে টেনে নেয়। এবারে ইশিকা একটু শান্ত হয় আর রাহুলের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
রাহুল,"আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি ইশিকা, আই লাভ ইউ ওনলি.." খুব শান্ত গলায় বলে,"আমি তোমাকে... শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখ, কী দেখতে পাও? আমি তোমাকে সব বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এভাবে নয়। সোনিয়া সত্যি বলেছে। কিন্তু ওর সব কথা সত্যি নয়। প্লিজ আমার কথা শোনো.."
ইশিকা,"আমি যদি কোনো ছেলের সাথে এরকম করে আসতাম, আর তোমাকে বোঝাতাম যে আমি কিছু করিনি, তুমি মেনে নিতে? দুঃখ হতো না তোমার? তুমি আমাকে ঠকিয়েছে রাহুল, তুমি আমাকে ঠকিয়েছ.." শেষের কথা গুলো কান্নার রেসে জড়িয়ে যায়।
রাহুল কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না। চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। প্রতিবাদ করার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে রাহুল।
ইশিকা,"তোমরা সব ছেলেরাই সমান... ইউ অল মেন আর সেম.."বলতে বলতে বলতে ফুঁপিয়ে কাঁদে ওঠে।
রাহুল চাইলেও কিছু করতে পারছিল না। আবার প্রেয়সিকে নিজের চোখের সামনে কাঁদতেও দেখতে পারছিল না। রাহুল ইশিকা নিজের কাছে টেনে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এসে হাত দিয়ে ইশিকার চোখের জল মুছিয়ে দেয়।
রাহুল,"তুমি কেঁদো না ইশি, প্লিজ। আমি সরি, আমাকে ক্ষমা করে দাও। তুমি যা খুশি শাস্তি দাও আমাকে, আমি মাথা পেতে নেব। কিন্তু দয়া করে আর কেঁদো না। আমি তোমার কান্না সহ্য করতে পারবো না। আই লাভ ইউ ইশি। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না। প্লিজ একবার আমাকে বিশ্বাস করো, প্লিজ..." রাহুল শুধু এটুকুই বলতে পারে।
"ঠাসস্" ইশিকা ঠাস করে একটা চড় মারে রাহুলের গালে। "বিশ্বাস! মানে বোঝো তুমি কথাটার?"
রাহুল,"আরও মারো ইশিকা, যতখুশি মারো। কিন্তু আমাকে ভুল বুঝো না, আমি সত্যি বলছি...
দেখো আজ তোমাকে পড়াবার জন্য এই রিংটাও এনেছিলাম।" বলে রাহুল জ্যাকেটের পকেট থেকে একটা ছোট্টো রিং বের করে।
ইশিকা রিংটার দিকে তাকায়। তারপর রাহুলের মুখের দিকে। রাহুলের জলভরা চোখের দিকে তাকিয়ে যেন দেখবার চেষ্টা করে রাহুল কি ঠিক বলছে? ইশিকা পরিষ্কার দেখতে পায় রাহুলের চোখ বলছে... একবার ক্ষমা করে দাও ইশিকা। সত্যি আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।
ইশিকার চোখেও অশ্রুকণা ভরে উঠেছিল। ওর বিশ্বাস যে ভেঙে গিয়েছিল। রাহুলের চোখের দিকে তাকিয়ে ইশিকার মনে হয় রাহুল হয়তো ভুল করে করে ফেলেছে, ওকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত। কিন্তু ইশিকা জোরে জোরে মাথা নাড়াতে থাকে। যেন বলতে চাইছে,"করতে পারছিনা বিশ্বাস রাহুল। আমাকে ক্ষমা করে দিও"