23-03-2019, 12:53 PM
আর তারপর সেই দিন এসে যায়, যে দিনটাকে প্রায় সকল ছাত্রছাত্রীই ভয় পায়, মানে পরীক্ষার দিন। বন্ধুদের মধ্যে কথা বার্তা হয় তবে খুব কম। সবাই পরীক্ষা নিয়ে চিন্তায় মেতে ওঠে। একের পর এক পরীক্ষা হতে থাকে। সবাই মোটামুটি ভালোভাবেই পরীক্ষা দেয়।
"ইয়া..হু.." কুবের রেডবুলের ক্যান খুলতে খুলতে চেঁচিয়ে ওঠে। তারপর পুরো ক্যানের পানীয় একবার গলার মধ্যে ঢেলে দেয় আর ক্যানটাকে মাটিতে ফেলে ফুটবলের মতো সট মারে।
"ইয়েস্" সোনিয়া চেঁচিয়ে উঠে বলে,"এখন আমি ফ্রি, পরীক্ষাগুলো দম বের করে দিয়েছিল।"
"ঠিকই বলেছ।" দিক্ষা সোনিয়াকে সায় দেয়।
"শালা আমি যদি শিক্ষামন্ত্রী হতাম, তাহলে এই পরীক্ষাই পুরো বন্ধ করে দিতাম।" অজিত বেশ জোশ নিয়ে বলে।
"হ্যাঁরে শালা তুইতো খালি টুকতে জানিস, মন্ত্রী হতে গেলেও পড়তে হয়।" রক্তিম অজিতের পিছনে লাগে। অজিত কিছু জবাব দিতে যাবে তার আগে ইশিকা চেঁচিয়ে ওঠে,"তোমরা মারামারি বন্ধ করবে? এতোদিন পরে সবাইয়ের সাথে দেখা হল আর তোমরা দুজনে শুরু হয়ে গেল।"
সবাই কে এফ সি তে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। গতকাল ওদের পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। তাই সবাই একসাথে এসে মিলিত হয়েছে।
"আমাদের রাহুল বাবু কী করছে? এখনও কি পড়াশোনা করছে নাকি?" কুবের কথায় সবাই হেঁসে ওঠে। কিন্তু ইশিকার চোখ গেটের ওপরে স্থির হয়ে কারও আসার অপেক্ষা করছিল।
সোনিয়া,"আমি ওকে ফোন করেছিলাম। ও বলেছিল ওর আসতে একটু দেরী হবে।"
সোনিয়ার কথায় ইশিকার কান খাড়া হয়ে যায়।"কখন ফোন করেছিল?"
"সকালে.."
ইশিকার মাথা এবার গরম হতে শুরু করে। ঠিক তখনই, ইশিকার চোখের উপর কেউ হাত চেপে ধরে।
"রাহুল?" ইশিকা হাঁসতে হাঁসতে বলে।
"শিটৃ চিনে ফেললে।" বলে রাহুল ইশিকার পাশেই বসে পড়ে। তারপর আবার শুরু হয়ে যায় হইচই, চিংকার। রাহুল সবার সাথে কুশল বিনিময় করে।
কিছুক্ষন পরে সোনিয়া বলে ওঠে,"গাইস্, আমাদের হাতে এখন দু সপ্তাহ ছুটি রয়েছে। চলো কোথাও থেকে ঘুরে আসে।"
রক্তিম,"হ্যাঁ সোনিয়া ঠিক বলেছে। চলো সবাই মিলে কোথাও থেকে ঘুরে আসা যাক।"
অজিত,"আমি বলি কি, চলো কোথাও নির্জন জায়গায় যাওয়া যাক যেখানে লোকজন বেশি না থাকে।"
রক্তিম আবার অজিতের পিছনে লাগে,"হ্যাঁ হ্যাঁ, তোর তো নির্জন জায়গাই দরকার। তবে তো দিক্ষার সাথে..."
"দেখ রক্তিম.."
ইশিকা বলে,"চলো কোনো পাহাড়ি অঞ্চলে যাওয়া যাক। কী বলো?"
"না, আমি কোনো খোলা জায়গায় যেতে চাই। পাহাড় আমার ভালো লাগে না।" রাহুল বলে ওঠে।
ইশিকা রাহুলের কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে।
"ইউরেকা!" হঠাং সোনিয়ার চেঁচানিতে সবাই ওর দিকে তাকায়।"রাহুলের কথায় মনে পড়ল, আমাদের একটা ফার্ম হাউস আছে। গত বছর বাপি ওটা বানিয়েছিল। চলো তবে ওখানেই যাওয়া যাক। বেশ সুন্দর জায়গা।"
রাহুল জিজ্ঞেস করে,"কোথায় সেটা?"
"বলমগড়"
"বলমগড়!" সোনিয়ার উত্তরে সবাই নিজেদের মস্তিষ্কের অভিধান হাতরাতে থাকে।
কোমল,"হুঁ, বলমগড় খুব সুন্দর জায়গা।" সবাই কোমলের দিকে তাকায়,"কিছুদিন আগে ওই জায়গাটার সংস্কার করা হয়েছে। শুনেছি জায়গাটা অতি সুন্দর।"
"তুমি ঠিকই বলেছ কোমল।" সোনিয়া কোমলের কথায় সায় দেয়। "চলো তবে ওখানেই যাওয়া যাক। আমি বাপিকে বলে সব ব্যবস্থা করবো।"
রাহুল,"তাহলে একটা দিন ঠিক করা যাক, কী বলো?" সবাই মিলে আলোচনা করে ঠিক করে কুড়ি তারিখ রওনা দেবে।
সোনিয়া,"তাহলে আমি বাপিকে বলে প্লেনের টিকিটের ব্যবস্থা করছি।"
"না" রাহুল বলে ওঠে,"আমরা ট্রেনে যাব। ট্রেনে যাওয়ার মজাই আলাদা।"
সবাই রাহুলের কথায় সায় দেয়। ঠিক হয়ে যায় কুড়ি তারিখ সকালে সবাই স্টেশন উপস্থিত থাকবে।
"আমি যাব না।" ইশিকা মাঝপথে বাধ সাধে।
"কেন?" সবাই একসাথে বলে ওঠে।
"এমনি" বলে ইশিকা গটগট করে ওদের পাশ কাটিয়ে ওখান থেকে বেড়িয়ে যায়।
রাহুল বুঝতে পারে পাহাড়ি অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয়নি বলে অভিমানিনীর অভিমান হয়েছে। আর এই অভিমান ওকেই ঘোঁচাতে হবে।
"তোমরা সব প্যাকিং ট্যাকিং করে রেডি হও। আমি দেখছি ইশিকাকে।" বলে রাহুল বেড়িয়ে যায়।
বিশে অক্টোবর, সবাই স্টেশন দাঁড়িয়ে রয়েছে। শুধু দুজনের পাত্তা নেই। রাহুল আর ইশিকা।
কুবের,"এরা দুজন আবার কোথায় রয়ে গেল?"
"আমি ফোন করেছিলাম। ওরা রাস্তায় আছে।" সোনিয়া বলতে বলতে ইশিকা আর রাহুলকে স্টেশনের ভিতরে ঢুকতে দেখা যায়। রাহুলের হাতে একটা ব্যাগ আর কাঁধে একটা। ইশিকা খালি হাতে, না মানে ইশিকার ব্যাগ রাহুলের ক্যাঁধে। বাকি সবাইকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দুজনে এদিকে এগিয়ে আসে।
রাহুল ওদের কাছে পোঁছে বলে,"সবাই এসে গেছে? চলো তাহলে.."
"একটু দাঁড়াও আরও দুজন আসবে।" সোনিয়া বলে।
"আবার কারা?" সবাই সোনিয়ার দিকে জিজ্ঞাস্য দৃষ্টিতে তাকায়।
"ওই তো ওরা এসে গেছে।" সোনিয়ার কথায় সবাই সামনের দিকে তাকায়।
সামনেই দিকে তাকাতেই সবাই থ হয়ে যায়। দুটি মেয়ে ওদের দিকে এগিয়ে আসছে। এরা আবার সোনিয়ার থেকে এককাঠি বাড়া। ওপরে শুধু একটা ফিনফিনে টপ আর নিতে মিনিস্কার্ট। চোখেতে কালো চশমা। সবাই হাঁ করে গিলতে থাকে মেয়েদুটিকে। শুধু রাহুল স্বাভাবিক ছিল। কারন রাহুল ওদের আগে থেকেই চেনে।
"আমরা সবাই খুব খুশি ছিলাম বেড়াতে যাবো বলে। কিন্তু তখন কী জানতাম ওই ট্রিপটা আমার জীবনটাকেই পালটে দেবে, তছনছ করে দেবে আমার জীবনটাকে।" বলতে বলতে একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রাহুল থামলো। চোখের কোনায় ফুটে উঠেছিল একফোঁটা জলের কণা। বুকের মধ্যে দলা পাকিয়ে থাকা দুঃখগুলো আজ যেন ফেটে বেড়িয়ে আসতে চাইছে। এত বছর ধরে জমে থাকা সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতিগুলো আজ মন চিরে বেরিয়ে আসতে চাইছে।
কথা বলতে বলতে রাহুল নিজের মনেই একটু হাঁসলো। কিন্তু এই হাঁসিতে কোনো প্রান নেই। প্রান খুলে হাঁসতে যে কবেই ভুলে গেছে সেটা রাহুল নিজেই জানে না। রাহুল জানালার সামনে দাঁড়িয়ে ওর অতীত জীবনের কথা বলছিল।
"কিন্তু কী হয়েছিল ওই ট্রিপে?" মেয়েটি একটা অদ্ভুত বাংলায় রাহুলকে জিজ্ঞেস করল।
মেয়েটির নাম সারা। মাতৃভূমি জার্মানি। কর্মসূত্রে লন্ডনে আসে। আর তারপরেই দেখ হয় রাহুলের সাথে। দুজনেই চাকরির ইন্টারভিউ দিতে এসেছিল এবং দুজনেই সিলেক্ট হয়ে যায়। প্রথম সাক্ষাতের দিন থেকেই রাহুলের মেয়েটিকে মনে ধরে। মেয়েটির বন্ধুসুলভ আচরণে রাহুল মেয়েটির সাথে ফ্রি হয়ে যায়। আর তারপর থেকেই দুজনে মিলে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করে একসাথে থাকে। রাহুলের সাথে থাকতে থাকতে বাংলা ভাষাটাকে কিছুটা রপ্ত করেছে। মেয়েটি আর পাঁচটা ইউরোপীয়দের থেকে আলাদা। ভদ্র মার্জিত স্বভাব। সুন্দর গোলগাল ধবধবে ফর্সা মুখখানায় সর্বদা বিচরণ করে একটা মিষ্টি হাঁসি। কিন্তু আজ রাহুলের মুখ থেকে ওর অতীত জীবনের কথা শুনে সেই হাঁসিটা উড়ে গেছে। বরং তার বদলে মুখের উপর ফুটে উঠেছে অজানাকে জানার এক অফুরন্ত কৌতুহল। উত্*সুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রাহুলকে পর্যবেক্ষন করছে।
"এরপর আমি আর মুখে বলতে পারবো না সারা।" রাহুল সারার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল।
সারা বুঝতে রাহুলের অবস্থা। কিন্তু ওর কৌতুহলী মন নিজেকে আটকে রাখতে অক্ষম হয়। আবার সেই অদ্ভুত বাংলায় বলে,"আচ্ছা অন্তত ইশিকার কথা বলো। ইশিকার কী হল আমি জানতে চাই।"
রাহুল জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিল। আজ আকাশে রোদ ঝলমল করছে। মেঘের চিহ্নমাত্র নেই। শীতপ্রধান গাছগুলো নিজেদের জড়তা কাটিয়ে বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সামনের বাগানে ফুটে রয়েছে বিভিন্ন রঙের ফুল। নাম না জানা পাখিগুলো কিচিরমিচির করে চলেছে। আজ যেন ওদের সবচেয়ে খুশির দিন। সত্যি এতসুন্দর আবহাওয়া লন্ডনের মতো জায়গায় পাওয়া খুবই ভাগ্যের বিষয়। ঝড়, বৃষ্টি, মেঘলা আকাশ আর তুষারপাত দমিয়ে রাখে প্রকৃতির এই সৌন্দর্যকে। আজ প্রকৃতি মেলে ধরেছে নিজেকে পৃথিবীর বুকে। দূরে রাস্তার উপর একটি ছেলে স্কেটবোর্ড চালাচ্ছে। নিচে রাস্তার দুধারে সারি সারি দোকানগুলোতে তৈরি হচ্ছে ওখানকার নিত্য খাবার হট ডগ।
"ইয়া..হু.." কুবের রেডবুলের ক্যান খুলতে খুলতে চেঁচিয়ে ওঠে। তারপর পুরো ক্যানের পানীয় একবার গলার মধ্যে ঢেলে দেয় আর ক্যানটাকে মাটিতে ফেলে ফুটবলের মতো সট মারে।
"ইয়েস্" সোনিয়া চেঁচিয়ে উঠে বলে,"এখন আমি ফ্রি, পরীক্ষাগুলো দম বের করে দিয়েছিল।"
"ঠিকই বলেছ।" দিক্ষা সোনিয়াকে সায় দেয়।
"শালা আমি যদি শিক্ষামন্ত্রী হতাম, তাহলে এই পরীক্ষাই পুরো বন্ধ করে দিতাম।" অজিত বেশ জোশ নিয়ে বলে।
"হ্যাঁরে শালা তুইতো খালি টুকতে জানিস, মন্ত্রী হতে গেলেও পড়তে হয়।" রক্তিম অজিতের পিছনে লাগে। অজিত কিছু জবাব দিতে যাবে তার আগে ইশিকা চেঁচিয়ে ওঠে,"তোমরা মারামারি বন্ধ করবে? এতোদিন পরে সবাইয়ের সাথে দেখা হল আর তোমরা দুজনে শুরু হয়ে গেল।"
সবাই কে এফ সি তে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। গতকাল ওদের পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। তাই সবাই একসাথে এসে মিলিত হয়েছে।
"আমাদের রাহুল বাবু কী করছে? এখনও কি পড়াশোনা করছে নাকি?" কুবের কথায় সবাই হেঁসে ওঠে। কিন্তু ইশিকার চোখ গেটের ওপরে স্থির হয়ে কারও আসার অপেক্ষা করছিল।
সোনিয়া,"আমি ওকে ফোন করেছিলাম। ও বলেছিল ওর আসতে একটু দেরী হবে।"
সোনিয়ার কথায় ইশিকার কান খাড়া হয়ে যায়।"কখন ফোন করেছিল?"
"সকালে.."
ইশিকার মাথা এবার গরম হতে শুরু করে। ঠিক তখনই, ইশিকার চোখের উপর কেউ হাত চেপে ধরে।
"রাহুল?" ইশিকা হাঁসতে হাঁসতে বলে।
"শিটৃ চিনে ফেললে।" বলে রাহুল ইশিকার পাশেই বসে পড়ে। তারপর আবার শুরু হয়ে যায় হইচই, চিংকার। রাহুল সবার সাথে কুশল বিনিময় করে।
কিছুক্ষন পরে সোনিয়া বলে ওঠে,"গাইস্, আমাদের হাতে এখন দু সপ্তাহ ছুটি রয়েছে। চলো কোথাও থেকে ঘুরে আসে।"
রক্তিম,"হ্যাঁ সোনিয়া ঠিক বলেছে। চলো সবাই মিলে কোথাও থেকে ঘুরে আসা যাক।"
অজিত,"আমি বলি কি, চলো কোথাও নির্জন জায়গায় যাওয়া যাক যেখানে লোকজন বেশি না থাকে।"
রক্তিম আবার অজিতের পিছনে লাগে,"হ্যাঁ হ্যাঁ, তোর তো নির্জন জায়গাই দরকার। তবে তো দিক্ষার সাথে..."
"দেখ রক্তিম.."
ইশিকা বলে,"চলো কোনো পাহাড়ি অঞ্চলে যাওয়া যাক। কী বলো?"
"না, আমি কোনো খোলা জায়গায় যেতে চাই। পাহাড় আমার ভালো লাগে না।" রাহুল বলে ওঠে।
ইশিকা রাহুলের কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে।
"ইউরেকা!" হঠাং সোনিয়ার চেঁচানিতে সবাই ওর দিকে তাকায়।"রাহুলের কথায় মনে পড়ল, আমাদের একটা ফার্ম হাউস আছে। গত বছর বাপি ওটা বানিয়েছিল। চলো তবে ওখানেই যাওয়া যাক। বেশ সুন্দর জায়গা।"
রাহুল জিজ্ঞেস করে,"কোথায় সেটা?"
"বলমগড়"
"বলমগড়!" সোনিয়ার উত্তরে সবাই নিজেদের মস্তিষ্কের অভিধান হাতরাতে থাকে।
কোমল,"হুঁ, বলমগড় খুব সুন্দর জায়গা।" সবাই কোমলের দিকে তাকায়,"কিছুদিন আগে ওই জায়গাটার সংস্কার করা হয়েছে। শুনেছি জায়গাটা অতি সুন্দর।"
"তুমি ঠিকই বলেছ কোমল।" সোনিয়া কোমলের কথায় সায় দেয়। "চলো তবে ওখানেই যাওয়া যাক। আমি বাপিকে বলে সব ব্যবস্থা করবো।"
রাহুল,"তাহলে একটা দিন ঠিক করা যাক, কী বলো?" সবাই মিলে আলোচনা করে ঠিক করে কুড়ি তারিখ রওনা দেবে।
সোনিয়া,"তাহলে আমি বাপিকে বলে প্লেনের টিকিটের ব্যবস্থা করছি।"
"না" রাহুল বলে ওঠে,"আমরা ট্রেনে যাব। ট্রেনে যাওয়ার মজাই আলাদা।"
সবাই রাহুলের কথায় সায় দেয়। ঠিক হয়ে যায় কুড়ি তারিখ সকালে সবাই স্টেশন উপস্থিত থাকবে।
"আমি যাব না।" ইশিকা মাঝপথে বাধ সাধে।
"কেন?" সবাই একসাথে বলে ওঠে।
"এমনি" বলে ইশিকা গটগট করে ওদের পাশ কাটিয়ে ওখান থেকে বেড়িয়ে যায়।
রাহুল বুঝতে পারে পাহাড়ি অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয়নি বলে অভিমানিনীর অভিমান হয়েছে। আর এই অভিমান ওকেই ঘোঁচাতে হবে।
"তোমরা সব প্যাকিং ট্যাকিং করে রেডি হও। আমি দেখছি ইশিকাকে।" বলে রাহুল বেড়িয়ে যায়।
বিশে অক্টোবর, সবাই স্টেশন দাঁড়িয়ে রয়েছে। শুধু দুজনের পাত্তা নেই। রাহুল আর ইশিকা।
কুবের,"এরা দুজন আবার কোথায় রয়ে গেল?"
"আমি ফোন করেছিলাম। ওরা রাস্তায় আছে।" সোনিয়া বলতে বলতে ইশিকা আর রাহুলকে স্টেশনের ভিতরে ঢুকতে দেখা যায়। রাহুলের হাতে একটা ব্যাগ আর কাঁধে একটা। ইশিকা খালি হাতে, না মানে ইশিকার ব্যাগ রাহুলের ক্যাঁধে। বাকি সবাইকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দুজনে এদিকে এগিয়ে আসে।
রাহুল ওদের কাছে পোঁছে বলে,"সবাই এসে গেছে? চলো তাহলে.."
"একটু দাঁড়াও আরও দুজন আসবে।" সোনিয়া বলে।
"আবার কারা?" সবাই সোনিয়ার দিকে জিজ্ঞাস্য দৃষ্টিতে তাকায়।
"ওই তো ওরা এসে গেছে।" সোনিয়ার কথায় সবাই সামনের দিকে তাকায়।
সামনেই দিকে তাকাতেই সবাই থ হয়ে যায়। দুটি মেয়ে ওদের দিকে এগিয়ে আসছে। এরা আবার সোনিয়ার থেকে এককাঠি বাড়া। ওপরে শুধু একটা ফিনফিনে টপ আর নিতে মিনিস্কার্ট। চোখেতে কালো চশমা। সবাই হাঁ করে গিলতে থাকে মেয়েদুটিকে। শুধু রাহুল স্বাভাবিক ছিল। কারন রাহুল ওদের আগে থেকেই চেনে।
"আমরা সবাই খুব খুশি ছিলাম বেড়াতে যাবো বলে। কিন্তু তখন কী জানতাম ওই ট্রিপটা আমার জীবনটাকেই পালটে দেবে, তছনছ করে দেবে আমার জীবনটাকে।" বলতে বলতে একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রাহুল থামলো। চোখের কোনায় ফুটে উঠেছিল একফোঁটা জলের কণা। বুকের মধ্যে দলা পাকিয়ে থাকা দুঃখগুলো আজ যেন ফেটে বেড়িয়ে আসতে চাইছে। এত বছর ধরে জমে থাকা সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতিগুলো আজ মন চিরে বেরিয়ে আসতে চাইছে।
কথা বলতে বলতে রাহুল নিজের মনেই একটু হাঁসলো। কিন্তু এই হাঁসিতে কোনো প্রান নেই। প্রান খুলে হাঁসতে যে কবেই ভুলে গেছে সেটা রাহুল নিজেই জানে না। রাহুল জানালার সামনে দাঁড়িয়ে ওর অতীত জীবনের কথা বলছিল।
"কিন্তু কী হয়েছিল ওই ট্রিপে?" মেয়েটি একটা অদ্ভুত বাংলায় রাহুলকে জিজ্ঞেস করল।
মেয়েটির নাম সারা। মাতৃভূমি জার্মানি। কর্মসূত্রে লন্ডনে আসে। আর তারপরেই দেখ হয় রাহুলের সাথে। দুজনেই চাকরির ইন্টারভিউ দিতে এসেছিল এবং দুজনেই সিলেক্ট হয়ে যায়। প্রথম সাক্ষাতের দিন থেকেই রাহুলের মেয়েটিকে মনে ধরে। মেয়েটির বন্ধুসুলভ আচরণে রাহুল মেয়েটির সাথে ফ্রি হয়ে যায়। আর তারপর থেকেই দুজনে মিলে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করে একসাথে থাকে। রাহুলের সাথে থাকতে থাকতে বাংলা ভাষাটাকে কিছুটা রপ্ত করেছে। মেয়েটি আর পাঁচটা ইউরোপীয়দের থেকে আলাদা। ভদ্র মার্জিত স্বভাব। সুন্দর গোলগাল ধবধবে ফর্সা মুখখানায় সর্বদা বিচরণ করে একটা মিষ্টি হাঁসি। কিন্তু আজ রাহুলের মুখ থেকে ওর অতীত জীবনের কথা শুনে সেই হাঁসিটা উড়ে গেছে। বরং তার বদলে মুখের উপর ফুটে উঠেছে অজানাকে জানার এক অফুরন্ত কৌতুহল। উত্*সুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রাহুলকে পর্যবেক্ষন করছে।
"এরপর আমি আর মুখে বলতে পারবো না সারা।" রাহুল সারার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল।
সারা বুঝতে রাহুলের অবস্থা। কিন্তু ওর কৌতুহলী মন নিজেকে আটকে রাখতে অক্ষম হয়। আবার সেই অদ্ভুত বাংলায় বলে,"আচ্ছা অন্তত ইশিকার কথা বলো। ইশিকার কী হল আমি জানতে চাই।"
রাহুল জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিল। আজ আকাশে রোদ ঝলমল করছে। মেঘের চিহ্নমাত্র নেই। শীতপ্রধান গাছগুলো নিজেদের জড়তা কাটিয়ে বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সামনের বাগানে ফুটে রয়েছে বিভিন্ন রঙের ফুল। নাম না জানা পাখিগুলো কিচিরমিচির করে চলেছে। আজ যেন ওদের সবচেয়ে খুশির দিন। সত্যি এতসুন্দর আবহাওয়া লন্ডনের মতো জায়গায় পাওয়া খুবই ভাগ্যের বিষয়। ঝড়, বৃষ্টি, মেঘলা আকাশ আর তুষারপাত দমিয়ে রাখে প্রকৃতির এই সৌন্দর্যকে। আজ প্রকৃতি মেলে ধরেছে নিজেকে পৃথিবীর বুকে। দূরে রাস্তার উপর একটি ছেলে স্কেটবোর্ড চালাচ্ছে। নিচে রাস্তার দুধারে সারি সারি দোকানগুলোতে তৈরি হচ্ছে ওখানকার নিত্য খাবার হট ডগ।