23-03-2019, 12:50 PM
রক্তিম,"চলো সবাই, মিউজিক চালু হোক.." বলে সোনিয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে ফ্লোরে নাচতে থাকে। অজিত আর দিক্ষাও যোগ দেয় ওদের সাথে। রাহুল পাশে সরে দাঁড়ায় আর ইশিকার দিকে দেখতে থাকে।
কিছুক্ষন পরে কোমল ফিরে আসে ইশিকার কাছ থেকে। এসে সবাইকে নাচতে দেখে কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায়। আর পাশে সরে দাঁড়িয়ে ওদের নাচ দেখতে থাকে। রাহুল দুটো সফ্ট ড্রিঙ্কসের গ্লাস নিয়ে কোমলের পাশে এসে দাঁড়ায়। কোমল রাহুলকে দেখে মুচকি হেঁসে রাহুলের হাত থেকে একটা গ্লাস নিয়ে নেয়। কিছুক্ষন দুজনের মধ্যে কোনো কথা হয় না। চুপচাপ রক্তিমদের নাচ দেখতে থাকে। কিছুক্ষন পর রাহুল যে কারনে কোমলের কাছে এসেছিল সেটা জিজ্ঞেস করে,"আচ্ছা কোমল, তুমি ইশিকার সবচেয়ে ভালো বন্ধু, তাই তো?"
কোমল রাহুলের উদ্দেশ্য বুঝতে না পেরে জবাব দেয়,"হুঁ"
রাহুল,"তাহলে তোমার তো ইশিকার সম্বন্ধে অনেক কিছু জানার কথা, তাই তো?"
কোমল আবারও মাথা নাড়ায়,"হুঁ"
রাহুল,"কিন্তু ওর বন্ধুত্ব করলে কীকরে? সবসময় তো রাগে মুখ গোমড়া করে থাকে।"
কোমল এবার মুখ খোলে,"নারকেল বাইরে থাকে শক্ত লাগে, কিন্তু ভিতরটা নরম। ইশিকারও ভিতরটা খুব নরম।"
কোমলের কথা রাহুলের শুনতে খুব ভালো লাগে। মুখে হাঁসি ফুটিয়ে বলে,"হুঁ কিন্তু আমি তো ওকে এখনও বুঝতে পারলাম না। মানে ও..."
রাহুলের কথা শেষ করতে না দিয়েই কোমল বলে,"মানে ও যেরকম, ওকে দেখলে সেরকম মনে হয় না। তাই তো.."
রাহুল ঘাড় নাড়ায়।
"তোমার কী মনে হয় ইশিকা আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে? না, ও হল নামকরা ব্যবসায়ী মিস্টার গুপ্তর একমাত্র মেয়ে। ওরা ভীষন বড়োলোক। কিন্তু ইশিকাকে দেখলে বোঝা যায় না।"
রাহুল কোনো কথা বলে না। কোমলের কথা শুনতে শুনতে ইশিকার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
কোমল আবার বলতে শুরু করে,"কিন্তু বলে না, টাকা দিয়ে সবকিছু হয় না। ইশিকার সাথে ওটাই হয়েছিল। ওর বাবা মার মধ্যে রোজ ঝগড়া লেগেই থাকতো। কিছুদিন পর ডিভোর্স। বাবা মার ভালোবাসা বলে জিনিসটা ও কোনোদিন পায়নি। ভালোবাসার জন্য বাবা কাছে সময় থাকতো না। এত টাকা পয়সা থাকতেও ও ছিল একা।"
রাহুলের চোখের মধ্যে ইশিকার প্রতি ভালোবাসা কোমলের নজর এড়ায় না। রাহুলের চোখ ইশিকার উপরেই স্থির ছিল।
"তাই ইশিকা বেছে নেয় সাধারন মানুষের জীবন। বাইরে থেকে যতই রাগ করুক ওর মনটা ভারী সুন্দর। ওযে সোনিয়াকে দেখতে পারে না। এটা সোনিয়ার টাকা পয়সা দেখে নয়। ও শুধু সোনিয়ার অশ্লিলতাকে ঘৃনা করে। কারন ওই একই ওর সংসার ভেঙেছিল।"
এটুকু বলে কোমল থামে। কোমলে কথা শেষ হতে রাহুলের পা নিজে থাকেই এগিয়ে যায় ইশিকার কাছে। ইশিকার কাছে পৌঁছে রাহুল ইশিকার কাঁধে হাত রাখে। ইশিকা একবার ঘুরে রাহুলের দিকে তাকিয়ে আবায় মুখ ঘুড়িয়ে নেয় সামনের দিকে।
এবার রাহুল ইশিকার দুই কাঁধের উপর হাত রেখে ইশিকাকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নেয়। দুজনের চোখ পরস্পরের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। রাহুলের ঠোঁট আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে ছুঁয়ে যায় ইশিকার কপালে।
রাহুলের ঠোঁটের স্পর্শে কেঁপে কেঁপে ওঠে ইশিকার শরীর। এরকম অবস্থার জন্য মোটেই তৈরি ছিল না ইশিকা। প্রচন্ড রেগে যায় রাহুলের উপর।
"এটা..." ইশিকা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, রাহুল থামিয়ে দিয়ে বলে,"বন্ধুত্বের খাতিয়ে" বলে মুখে হাঁসি টেনে এগিয়ে যায় হল ঘরের দিকে।
সবাইয়ের নজরে পড়ে এই দৃশ্য। কেউই এর জন্য তৈরি ছিল না। ইশিকা রাহুলের চলে যাওয়ার দিকে নিস্পলক তাকিয়ে থাকে। আজ পর্যন্ত কোনো ছেলে ওর গায়ে হাত দেওয়ার সাহস পায়নি। আর রাহুল সবার সামনে ওয় সাথে...
ইশিকা নিজেই ধন্দে পড়ে যায় কী করা উচিত। শুনতে পায় নিজের হৃদস্পন্দন। কিন্তু এবার রাহুলের উপর যে রাগ ছিল সেটা চলে গিয়ে এক অজানা শিহরনে হাঁসি ফুটে ওঠে ইশিকার ঠোঁটের কোনায়।
পার্টি জোরদার চলছিল। সবাই হই হুল্লোড় মজা মস্তি সব করছিল। প্রায় এক ঘন্টা নাচন কুদন করার পরে সবার পেটের নিচে টান পড়ে। সবাই গোল করে বসে পড়ে খাবার টেবিলে। খাবার তৈরিই ছিল। মেয়েরা হাতাহাতি করে পরিবেশন করে। নীল আলোটা তখনও জ্বলছিল। নীল আলোর রং ঘরটা যেন রহস্যময় হয়ে পড়ে। সবাই খেতে খেতে নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল। রাহুল ইশিকার ঠিক উল্টো দিকে বসে ইশিকাকে দেখছিল আর খাবার খাচ্ছিল। খেতে খেতে তৃষ্না পাওয়ায় রাহুল সামনে রাখা গ্লাসের উপর হাত রাখে। হঠাং রাহুলের চোখ ইশিকার পিছনে দেওয়ালের উপরে পড়ে। মসৃন দেওয়ালের উপর চলচিত্রের মতো ভেসে ওঠে একটা দৃশ্য।
একটি লোক আর আর একজন মহিলা, দুজনেরই বয়স কিছুটা বেশি বলেই মনে হয়। দুজনে চলতে চলতে একটি ফ্ল্যাটের সামনে এসে দাঁড়ায়। দরজায় একটা নাম্বার লেখা ছিল। কিন্তু সেটা পরিস্কার ভাবে দেখা যাচ্ছিল না। চাবি ঘুড়িয়ে দরজা খুলে দুজনে ফ্ল্যাটের ভিতরে প্রবেশ করে। দুজনকেই বেশ হাঁসি খুশি দেখাচ্ছিল। সোফার উপরে বসে নিজের মধ্যে কিছু কথা বলছিল। তারপর বুড়ি মহিলা সোফা ছেড়ে উঠে রান্না ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে। ফ্রিজ খুলে একটা জলের বোতল বের করে। স্ল্যাপের উপর একটা গ্লাস রেখে তাতে জল ঢালতে থাকে। জল ঢালতে ঢালতে বুড়ির হাত একটু কেঁপে যায়। যার ফলে জল গ্লাসের ভিতর না পড়ে কিছুটা স্ল্যাপের উপর পড়ে যায়। যতক্ষনে বোতল সোজা করে ততক্ষনে কিছুটা জল স্ল্যাপের উপরে পড়ে যায়। জলের বোতলে ছিপি আটকে স্ল্যাপের উপর রাখা গ্যাস ষ্টোভের পাশে রেখে দেয়।
ওদিকে স্লাপের উপরে পড়া জল গড়িয়ে গড়িয়ে স্ল্যাপের গা বেয়ে নিচে পড়তে থাকে। বুড়ি রান্নাঘরের মেঝেতে পড়ে থাকা একটা কাপড় তুলে নেয় যাতে না ভিজে যায়। কাপড়টা তুলে স্ল্যাপের উপর গ্যাস স্টোভের পাশেই রেখে দেয়।জলের গ্লাসটা হাতে নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।
এদিকে স্ল্যাপের উপর থেকে চুঁইয়ে পড়া জল গড়াতে গড়াতে রান্নাঘরের মেঝে বেয়ে দরজার কাছে এসে গিয়েছিল।
ওদিকে ঘরের মধ্যে গিয়ে বুড়ি মহিলা বুড়োর হাতে জলের গ্লাস ধরিয়ে দেয়। বুড়ো গ্লাসের জল পান করে টেবিলের উপর গ্লাসটা রেখে দেয়। কিছুক্ষন বুড়ো বুড়ি নিজেদের মধ্যে কথা বলে। তারপর বুড়ো সোফার উপর হেলান দিয়ে খবরে কাগজ হাতে নিয়ে বসে পড়ে আর বুড়ি রান্নাঘরে প্রবেশ করে।
রান্নাঘরে গিয়ে একটা আলমারি খুলে তা থেকে একটা কড়াই বের করে আর তার মধ্যে কিছুটা তেল ঢালে। তারপর যেদিকে জলের বোতলটা রাখা ছিল সেদিকের বার্নারের উপর কড়াইটা রেখে গ্যাস চালু করে দেয়।
গ্যাস জোর আঁচে জ্বলছিল। তেল খুব তাড়াতাড়ি গরম হয়ে ওঠে। বুড়ি মিটসেফ থেকে আলু বেড় করে প্যানের উপর রেখে আলুগুলো ভালো করে ধোয়। তারপর আলুর খোসা ছাড়িয়ে একটি পাত্রে রেখে দেয়। তারপর পাশের বার্নারে গ্যাস চালু করে দেয়। তারপর লাইটার বার্নারে ঠেকিয়ে প্ল্যাগ করে।
একবার, দুবার, তিনবার, গ্যাস চালু ছিল, কিন্তু লাইটার জ্বলছিল না। বুড়ি মহিলা কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে আবার প্ল্যাগ করে। কিন্তু এবার জ্বলে না। গ্যাস তখনও চালু ছিল। বুড়ি এবার বার্নারের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে দেখবার চেষ্টা করে কী হয়েছে। কিন্তু কিছু বুঝতে পারে না। শুধু বার্নারের গা থেকে গ্যাস বেড়োনোর সোঁ সোঁ আওয়াজ কানে আসে।
তারপর বুড়ি মুখ সরিয়ে নেয় পাশে। যার ফলে বুড়ির চুল ঢুকে যায় চুলির নিচে। এবার পাশ থেকে বার্নারটিকে বার্নারটিকে দেখতে লাগে। অপর হাতে লাইটার ছিল। আবার বানারের কাছে নিয়ে গিয়ে প্লাগ করতে থাকে।
একবার, দুবার, তাও জ্বলে না। আরও একবার। হঠাং দপ করে আগুন জ্বলে ওঠে। বুড়ির মুখে ফুটে ওঠে। মুখে আগুনের তাপ লাগায় বুড়ি নিজের মুখ সরিয়ে নিতে যায় চুলির কাছ থেকে। কিন্তু তখন বুঝতে পারে যে ওর চুল চুলির নিচে কিছুতে আটকে গেছে। জোরে টান দেয় চুল ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু না, চুল ছাড়ায় না। বরং একটু টাল খেয়ে রেগুলেটরের উপর হাত পরে যায় আর রেগুলেটর ঘুরে গিয়ে সর্ব্বোচ্চ আঁচে চলে আসে। এবার বার্নাল থেকে আগুনের প্রচন্ড তাপ এসে লাগে বুড়ি মুখে। বুড়ি ভয় পেয়ে জোরে চেঁচিয়ে ওঠে।
কিছুক্ষন পরে কোমল ফিরে আসে ইশিকার কাছ থেকে। এসে সবাইকে নাচতে দেখে কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায়। আর পাশে সরে দাঁড়িয়ে ওদের নাচ দেখতে থাকে। রাহুল দুটো সফ্ট ড্রিঙ্কসের গ্লাস নিয়ে কোমলের পাশে এসে দাঁড়ায়। কোমল রাহুলকে দেখে মুচকি হেঁসে রাহুলের হাত থেকে একটা গ্লাস নিয়ে নেয়। কিছুক্ষন দুজনের মধ্যে কোনো কথা হয় না। চুপচাপ রক্তিমদের নাচ দেখতে থাকে। কিছুক্ষন পর রাহুল যে কারনে কোমলের কাছে এসেছিল সেটা জিজ্ঞেস করে,"আচ্ছা কোমল, তুমি ইশিকার সবচেয়ে ভালো বন্ধু, তাই তো?"
কোমল রাহুলের উদ্দেশ্য বুঝতে না পেরে জবাব দেয়,"হুঁ"
রাহুল,"তাহলে তোমার তো ইশিকার সম্বন্ধে অনেক কিছু জানার কথা, তাই তো?"
কোমল আবারও মাথা নাড়ায়,"হুঁ"
রাহুল,"কিন্তু ওর বন্ধুত্ব করলে কীকরে? সবসময় তো রাগে মুখ গোমড়া করে থাকে।"
কোমল এবার মুখ খোলে,"নারকেল বাইরে থাকে শক্ত লাগে, কিন্তু ভিতরটা নরম। ইশিকারও ভিতরটা খুব নরম।"
কোমলের কথা রাহুলের শুনতে খুব ভালো লাগে। মুখে হাঁসি ফুটিয়ে বলে,"হুঁ কিন্তু আমি তো ওকে এখনও বুঝতে পারলাম না। মানে ও..."
রাহুলের কথা শেষ করতে না দিয়েই কোমল বলে,"মানে ও যেরকম, ওকে দেখলে সেরকম মনে হয় না। তাই তো.."
রাহুল ঘাড় নাড়ায়।
"তোমার কী মনে হয় ইশিকা আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে? না, ও হল নামকরা ব্যবসায়ী মিস্টার গুপ্তর একমাত্র মেয়ে। ওরা ভীষন বড়োলোক। কিন্তু ইশিকাকে দেখলে বোঝা যায় না।"
রাহুল কোনো কথা বলে না। কোমলের কথা শুনতে শুনতে ইশিকার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
কোমল আবার বলতে শুরু করে,"কিন্তু বলে না, টাকা দিয়ে সবকিছু হয় না। ইশিকার সাথে ওটাই হয়েছিল। ওর বাবা মার মধ্যে রোজ ঝগড়া লেগেই থাকতো। কিছুদিন পর ডিভোর্স। বাবা মার ভালোবাসা বলে জিনিসটা ও কোনোদিন পায়নি। ভালোবাসার জন্য বাবা কাছে সময় থাকতো না। এত টাকা পয়সা থাকতেও ও ছিল একা।"
রাহুলের চোখের মধ্যে ইশিকার প্রতি ভালোবাসা কোমলের নজর এড়ায় না। রাহুলের চোখ ইশিকার উপরেই স্থির ছিল।
"তাই ইশিকা বেছে নেয় সাধারন মানুষের জীবন। বাইরে থেকে যতই রাগ করুক ওর মনটা ভারী সুন্দর। ওযে সোনিয়াকে দেখতে পারে না। এটা সোনিয়ার টাকা পয়সা দেখে নয়। ও শুধু সোনিয়ার অশ্লিলতাকে ঘৃনা করে। কারন ওই একই ওর সংসার ভেঙেছিল।"
এটুকু বলে কোমল থামে। কোমলে কথা শেষ হতে রাহুলের পা নিজে থাকেই এগিয়ে যায় ইশিকার কাছে। ইশিকার কাছে পৌঁছে রাহুল ইশিকার কাঁধে হাত রাখে। ইশিকা একবার ঘুরে রাহুলের দিকে তাকিয়ে আবায় মুখ ঘুড়িয়ে নেয় সামনের দিকে।
এবার রাহুল ইশিকার দুই কাঁধের উপর হাত রেখে ইশিকাকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নেয়। দুজনের চোখ পরস্পরের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। রাহুলের ঠোঁট আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে ছুঁয়ে যায় ইশিকার কপালে।
রাহুলের ঠোঁটের স্পর্শে কেঁপে কেঁপে ওঠে ইশিকার শরীর। এরকম অবস্থার জন্য মোটেই তৈরি ছিল না ইশিকা। প্রচন্ড রেগে যায় রাহুলের উপর।
"এটা..." ইশিকা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, রাহুল থামিয়ে দিয়ে বলে,"বন্ধুত্বের খাতিয়ে" বলে মুখে হাঁসি টেনে এগিয়ে যায় হল ঘরের দিকে।
সবাইয়ের নজরে পড়ে এই দৃশ্য। কেউই এর জন্য তৈরি ছিল না। ইশিকা রাহুলের চলে যাওয়ার দিকে নিস্পলক তাকিয়ে থাকে। আজ পর্যন্ত কোনো ছেলে ওর গায়ে হাত দেওয়ার সাহস পায়নি। আর রাহুল সবার সামনে ওয় সাথে...
ইশিকা নিজেই ধন্দে পড়ে যায় কী করা উচিত। শুনতে পায় নিজের হৃদস্পন্দন। কিন্তু এবার রাহুলের উপর যে রাগ ছিল সেটা চলে গিয়ে এক অজানা শিহরনে হাঁসি ফুটে ওঠে ইশিকার ঠোঁটের কোনায়।
পার্টি জোরদার চলছিল। সবাই হই হুল্লোড় মজা মস্তি সব করছিল। প্রায় এক ঘন্টা নাচন কুদন করার পরে সবার পেটের নিচে টান পড়ে। সবাই গোল করে বসে পড়ে খাবার টেবিলে। খাবার তৈরিই ছিল। মেয়েরা হাতাহাতি করে পরিবেশন করে। নীল আলোটা তখনও জ্বলছিল। নীল আলোর রং ঘরটা যেন রহস্যময় হয়ে পড়ে। সবাই খেতে খেতে নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল। রাহুল ইশিকার ঠিক উল্টো দিকে বসে ইশিকাকে দেখছিল আর খাবার খাচ্ছিল। খেতে খেতে তৃষ্না পাওয়ায় রাহুল সামনে রাখা গ্লাসের উপর হাত রাখে। হঠাং রাহুলের চোখ ইশিকার পিছনে দেওয়ালের উপরে পড়ে। মসৃন দেওয়ালের উপর চলচিত্রের মতো ভেসে ওঠে একটা দৃশ্য।
একটি লোক আর আর একজন মহিলা, দুজনেরই বয়স কিছুটা বেশি বলেই মনে হয়। দুজনে চলতে চলতে একটি ফ্ল্যাটের সামনে এসে দাঁড়ায়। দরজায় একটা নাম্বার লেখা ছিল। কিন্তু সেটা পরিস্কার ভাবে দেখা যাচ্ছিল না। চাবি ঘুড়িয়ে দরজা খুলে দুজনে ফ্ল্যাটের ভিতরে প্রবেশ করে। দুজনকেই বেশ হাঁসি খুশি দেখাচ্ছিল। সোফার উপরে বসে নিজের মধ্যে কিছু কথা বলছিল। তারপর বুড়ি মহিলা সোফা ছেড়ে উঠে রান্না ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে। ফ্রিজ খুলে একটা জলের বোতল বের করে। স্ল্যাপের উপর একটা গ্লাস রেখে তাতে জল ঢালতে থাকে। জল ঢালতে ঢালতে বুড়ির হাত একটু কেঁপে যায়। যার ফলে জল গ্লাসের ভিতর না পড়ে কিছুটা স্ল্যাপের উপর পড়ে যায়। যতক্ষনে বোতল সোজা করে ততক্ষনে কিছুটা জল স্ল্যাপের উপরে পড়ে যায়। জলের বোতলে ছিপি আটকে স্ল্যাপের উপর রাখা গ্যাস ষ্টোভের পাশে রেখে দেয়।
ওদিকে স্লাপের উপরে পড়া জল গড়িয়ে গড়িয়ে স্ল্যাপের গা বেয়ে নিচে পড়তে থাকে। বুড়ি রান্নাঘরের মেঝেতে পড়ে থাকা একটা কাপড় তুলে নেয় যাতে না ভিজে যায়। কাপড়টা তুলে স্ল্যাপের উপর গ্যাস স্টোভের পাশেই রেখে দেয়।জলের গ্লাসটা হাতে নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।
এদিকে স্ল্যাপের উপর থেকে চুঁইয়ে পড়া জল গড়াতে গড়াতে রান্নাঘরের মেঝে বেয়ে দরজার কাছে এসে গিয়েছিল।
ওদিকে ঘরের মধ্যে গিয়ে বুড়ি মহিলা বুড়োর হাতে জলের গ্লাস ধরিয়ে দেয়। বুড়ো গ্লাসের জল পান করে টেবিলের উপর গ্লাসটা রেখে দেয়। কিছুক্ষন বুড়ো বুড়ি নিজেদের মধ্যে কথা বলে। তারপর বুড়ো সোফার উপর হেলান দিয়ে খবরে কাগজ হাতে নিয়ে বসে পড়ে আর বুড়ি রান্নাঘরে প্রবেশ করে।
রান্নাঘরে গিয়ে একটা আলমারি খুলে তা থেকে একটা কড়াই বের করে আর তার মধ্যে কিছুটা তেল ঢালে। তারপর যেদিকে জলের বোতলটা রাখা ছিল সেদিকের বার্নারের উপর কড়াইটা রেখে গ্যাস চালু করে দেয়।
গ্যাস জোর আঁচে জ্বলছিল। তেল খুব তাড়াতাড়ি গরম হয়ে ওঠে। বুড়ি মিটসেফ থেকে আলু বেড় করে প্যানের উপর রেখে আলুগুলো ভালো করে ধোয়। তারপর আলুর খোসা ছাড়িয়ে একটি পাত্রে রেখে দেয়। তারপর পাশের বার্নারে গ্যাস চালু করে দেয়। তারপর লাইটার বার্নারে ঠেকিয়ে প্ল্যাগ করে।
একবার, দুবার, তিনবার, গ্যাস চালু ছিল, কিন্তু লাইটার জ্বলছিল না। বুড়ি মহিলা কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে আবার প্ল্যাগ করে। কিন্তু এবার জ্বলে না। গ্যাস তখনও চালু ছিল। বুড়ি এবার বার্নারের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে দেখবার চেষ্টা করে কী হয়েছে। কিন্তু কিছু বুঝতে পারে না। শুধু বার্নারের গা থেকে গ্যাস বেড়োনোর সোঁ সোঁ আওয়াজ কানে আসে।
তারপর বুড়ি মুখ সরিয়ে নেয় পাশে। যার ফলে বুড়ির চুল ঢুকে যায় চুলির নিচে। এবার পাশ থেকে বার্নারটিকে বার্নারটিকে দেখতে লাগে। অপর হাতে লাইটার ছিল। আবার বানারের কাছে নিয়ে গিয়ে প্লাগ করতে থাকে।
একবার, দুবার, তাও জ্বলে না। আরও একবার। হঠাং দপ করে আগুন জ্বলে ওঠে। বুড়ির মুখে ফুটে ওঠে। মুখে আগুনের তাপ লাগায় বুড়ি নিজের মুখ সরিয়ে নিতে যায় চুলির কাছ থেকে। কিন্তু তখন বুঝতে পারে যে ওর চুল চুলির নিচে কিছুতে আটকে গেছে। জোরে টান দেয় চুল ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু না, চুল ছাড়ায় না। বরং একটু টাল খেয়ে রেগুলেটরের উপর হাত পরে যায় আর রেগুলেটর ঘুরে গিয়ে সর্ব্বোচ্চ আঁচে চলে আসে। এবার বার্নাল থেকে আগুনের প্রচন্ড তাপ এসে লাগে বুড়ি মুখে। বুড়ি ভয় পেয়ে জোরে চেঁচিয়ে ওঠে।