23-03-2019, 12:50 PM
রাহুল একবার সামনে রাস্তার দিকে তাকায় আর একবার ইশিকার রাগে ফুলে থাকা মুখটার দিকে। "রাগলে ভারি মিষ্টি দেখায় তোমাকে।" ইশিকার ফোলা মুখে এবার লালচে আভা পরে।মনে মনে বলে,"কী অসভ্য দেখো একভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। যেন কোনোদিন দেখেনি। হ্যাঙলা..." ইশিকা আড় চোখে তাকিয়ে দেখে রাহুল ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ওরও চোখ চলে যায় বারবার রাহুলের দিকে।
বৃষ্টি হওয়ার কারনে গাড়ি একটু আস্তেই চলছিল। বৃষ্টি ধারা আরও বাড়াতে থাকায় গাড়ির গতি আরও কমিয়ে দিতে হয়। রাহুল একটু খুশিই হয়।আবার ইশিকার দিকে মুখ করে থাকে।
ইশিকা,"এই, আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন? অন্য দিকে তাকাও..."
রাহুল,"ওফ ইশি, তুমি না..."
আমার সাথে কথা বলতে বারন করেছি।"
রাহুল এবার চুপ করে যায়। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকায় আর বৃষ্টির বড়ো বড়ো ফোঁটা রাস্তায় আছাড় খাওয়া দেখতে থাকে।
কুড়ি মিনিট পার হয়ে যায়। রাহুল চুপ করে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে। এবার ইশিকার একটু অস্বস্থি হতে থাকে। মনে মনে বলে,"এই ডাম্বোটাকে ভালোবেসে রাগ করে একটু চুপ করতে বললাম। এযে পুরোপুরি চুপ করে গেল। আমার ওরকম করে বলা উচিত্* হয়নি। ক্ষমা চেয়ে নেব? না না, আমি কেন ক্ষমা চাইতে যাব? যেটা আমি বলবো সেটাই ওকে শুনতে হবে। দেখি কেমন না শুনে থাকে..."
ইশিকা গলা খাঁকড়ানি দেয়। রাহুল কোনো সাড়া দেয় না। চুপ করে জানালার দিকে তাকিয়ে থাকে।
ইশিকা আদেশের সুরে বলে,"আমি ওই গানটা আমি ওই গানটা আরও একবার শুনতে চাই।"
কোনো উত্তর আসে না।
ইশিকা এবার প্রচন্ড রেগে যায়। জোরে চেঁচিয়ে ওঠে,"আমি ওই গানটা আরও একবার শুনতে চাই।"
এবার রাহুল ইশিকার দিকে না তাকিয়ে বাঁকা সুরে বলে,"কেউ একজন একটু আগে বলছিল কথা বলতে চায় না আমার সাথে।"
ইশিকা রাগের মাথায়"আচ্ছা ঠিক আচ্ছে"বলে জোরে ব্রেক কষে দেয়। বৃষ্টি হওয়ার দরুন রাস্তা পিছল থাকায় গাড়ি পিছল খেয়ে একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে থেমে যায়। রাহুল এটার জন্য তৈরি ছিল না। তাই রাহুলের মাথা কিছুটা এগিয়ে গিয়ে ডাসবোর্ডের সাথে ঠোক্কর খায়।
"আউ" রাহুল ব্যাথা পেয়ে হালকা চেঁচিয়ে ওঠে। ডান হাত দিয়ে মাথা হাত বোলাতে থাকে। ইশিকার খুব খারাপ লাগে। হাত বাড়িয়ে রাহুলের মাথায় হাত বোলাতে যায়।
রাহুল একটু রেগে গিয়ে ইশিকার হাত নিজের মাথা থেকে সরিয়ে দিয়ে বলে,"এটা কী হল? হঠাং করে ব্রেক লাগালে কেন?"
ইশিকার অভিমান এখনও যায়নি। আড় চোখে রাহুলের দিকে তাকিয়ে রাহুলের কথার নকল করে বলে,"কেউ একজন একটু আগে বলছিল কথা বলবে না।"
রাহুল আরও রেগে গিয়ে বলে,"হুঁ, সব মেয়েরাই একরকম।"
ইশিকা চেঁচিয়ে ওঠে,"মুখ সামলে কথা বলো বলছি।"
দুজনের ঝগড়া শুরু হয়ে যায়। ওদিকে পিছনে গাড়ির হর্ন বাজতে থাকে। রাস্তার মাঝখানে গাড়ি দাঁড় করানো রয়েছে।
রাহুল,"রাস্তার মাঝখানে গাড়ি দাঁড় করানো রয়েছে। তাড়াতাড়ি স্টার্ট করো।"
ইশিকা মুখ ঘুরে বলে,"হুঁ, আমি ওসব জানি না।"
রাহুল,"আচ্ছা বাবা, তুমি যা বলবে তাই শুনবো। এবার তাড়াতাড়ি গাড়ি স্টার্ট করো।"
ইশিকা,"আগে গানটা চালাও।"
রাহুল সঙ্গে সঙ্গে গান চালিয়ে দেয়। ইশিকার মুখে হাঁসি ফুটে ওঠে। রাহুলের দিকে একবার তাকিয়ে যেন বলতে চায়,"দেখলে আমার সাথে কেউ জিততে পারবে না।"
সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালু করে দেয়। গান চলতে থাকে। পুরো রাস্তা রাহুল ইশিকার দিকে তাকিয়ে থাকে। এটা ইশিকার আদেশ, মানতেই হবে।
অবশেষে গাড়ি থেমে যায় একটি বড়ো বিল্ডিং এর সামনে। বৃষ্টি অনেক আগেই থেমে গিয়েছিল।
রাহুল,"এটা রক্তিমের বাড়ি?"
ইশিকা,"ফ্ল্যাট নং 219."
রাহুল "ওহ্" বলে দুজনে গাড়ি থেকে নামে। রাহুল নেমে একপাশে দাঁড়িয়ে পড়ে। ইশিকা গাড়ি থেকে নেমে যেই সামনে এগিয়ে আসে রাহুলের চোখ ধাঁধা লেগে যায়। খুব সুন্দর দেখতে লাগছে আজ ইশিকাকে। একমাথা চুল একটা ক্লিপ দিয়ে আটকানো। লাল রঙের গাউন যেটা পুরো শরীরকে ঢেকে রেখেছে। কিন্তু শরীরের গঠন অবায়ব ফুটে উঠেছে। যেন সর্গ এক অপ্সরী এসে ওর কাছে ধরা দিয়েছে। সোনিয়ার সাথে এই সৌন্দর্যের তুলনা হয় না।
ইশিকা "এসো" বলে বিল্ডিং এর দিকে এগিয়ে যায়।
"ইশি" রাহুল পিছন থেকে ইশিকাকে ডাকে। ইশিকা ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছন দিকে তাকায়।
"আজ মনে হচ্ছে স্বর্গ থেকে কোনো পরি মাটিতে নেমে এসেছে। তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।"
ইশিকার মন অজানা এক আনন্দে নেচে ওঠে। সাথে রাহুলের মনও। দুজনের এই আনন্দে যেন সারা পৃথিবীটা আনন্দে মেতে ওঠে। মেঘ সরে গিয়ে চাঁদ মামা জ্বল জ্জ্বল করে ওঠে মাথার উপরে। দুজনে একে অপরের দিকে তাকিয়ে স্থির হয়ে। সময়ও যেন স্থির হয়ে যায় ওদের স্থিরতা দেখে।
ইশিকা রাহুলের কাছে সরে এসে হাত বাড়িযে রাহুলের কপাল ছোঁয়। হাত বোলাতে বোলাতে বলে,"তোমার বেশি লাগেনি তো..."
ইশিকার নরম কোমল হাতের স্পর্শে কপালের ব্যাথাটুকু নিমেষে গায়েব হয়ে যায়।
রাহুল ইশিকার হাতের উপর হাত রেখে মাথা নাড়ায়। পরস্পরের হাতের স্পর্শে দুজনেই কেঁপে ওঠে।
ইশিকা নিজেকে সামলে নিয়ে "আচ্ছা চলো.." বলে ইশিকা রাহুলের হাত ধরে রক্তিমের ফ্ল্যাটের দিকে এগিয়ে যায়। রাহুল নিজের হাতে ইশিকার হাতের স্পর্শ হৃদয়ে মেখে নিতে নিতে ইশিকার পাশে পাশে হেঁটে এগিয়ে যায় রক্তিমের ফ্ল্যাটের দিকে।
ইশিকা রাহুলের হাত ধরে রক্তিমের ফ্ল্যাটের দিকে এগিয়ে যায়। দুজনে এমনভাবে হাত ধরাধরি করে থাকে যেন মনে হবে দুই প্রেমিক প্রেমিকা যাচ্ছে। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে চার তলায় পৌঁছে যায়। প্রতিটা ফ্ল্যাটের সামনে একটি করে নাম্বার লাগানো রয়েছে। চলতে চলতে ইশিকা একটি ফ্ল্যাটের সামনে এসে থেমে যায়। ফ্ল্যাট নং 291. রাহুলকেও থামতে হয়।
রাহুল,"এটা কার ফ্ল্যাট?"
ইশিকা একটু অবাক হয়ে,"কার আবার, রক্তিমের।"
রাহুল,"কিন্তু তুমি তো একটু আগে নিচে বললে যে রক্তিমের ফ্ল্যাট নং 219."
ইশিকা,"তাই?"
রাহুল,"হ্যাঁ, তুমি তাই তো বললে।"
ইশিকা,"ওহ, ভুল করে বলে ফেলেছি। 219 নং ফ্ল্যাটে কোমল থাকে।"
ইশিকা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বেল বাজায়। গেট খোলার আগে রাহুল একবার আশপাশটা তাকিয়ে দেখে। বেশ বড়ো বিল্ডিংটা। সামনে 293 নং ফ্ল্যাটে রাহুলের চোখ আটকে যায়। ওই ফ্ল্যাটটা বাকি ফ্ল্যাটের থেকে কিছুটা আলাদা।
"স্ট্রেঞ্জ" রাহুলের মুখ থেকে বেড়িয়ে আসে।
ততক্ষনে রক্তিম এসে দরজা খুলে দেয়। ওদের দিকে তাকিয়ে বলে,"হাই, ইশিকা, রাহুল, ভিতরে এসো।"
রাহুল ইশিকার সঙ্গে ফ্ল্যাটের ভিতরে প্রবেশ করে। বাইরে থেকে ফ্ল্যাটটা সাধারন মনে হলেও ভিতরটা খুব সুন্দর লাগছিল। দরজা দিয়ে প্রবেশ করেই সামনে একটা বড়ো হল ঘর। যার চারিদিকে নানান ধরনের জিনিসপত্র সাজানো রয়েছে। সামনে একটি সোফা রয়েছে। এককথায় অতি সুন্দর।
"ওয়াও রক্তিম, তোর ফ্ল্যাটটা খুব সুন্দর।" রাহুল ফ্ল্যাটের চারিদিকে দেখতে দেখতে বলে।
রক্তিম হেঁসে বলে থ্যাঙ্কস।
রাহুল সামনে তাকিয়ে দেখে সোফায় বাকি বন্ধুরা বসে রয়েছে। কুবের, কোমল, অজিত, দিক্ষা, এবার ওদের সাথে রাহুল আর ইশিকাও যোগদান করে। রাহুল একটা কালো শার্ট পড়েছিল। যার পিছন দিকে ডিজাইন করা আর নিচে একটা লাল রঙের ট্রাউজার পড়েছিল। রাহুলকে একদম মস্ত দেখতে লাগছিল আজকে।
দিক্ষা,"রাহুল, আজ তোমাকে হেব্বি লাগছে।"
রাহুল দিক্ষার দিকে তাকিয়ে হেঁসে ধন্যবাদ জানায়।
আজ মোটামুটি সবাই ভালো জামাকাপড় পরে এসেছে। আড্ডা চালু হয়ে যায়। সবাই মন খুলে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকে। কারন প্রায় একমাস ভালো করে কথা বলতে পারবে না। হইহই, হাঁসাহাঁসি চলতেই থাকে। ইশিকা রক্তিমকে ডেকে বলে পার্টি শুরু করে দিতে। রক্তিম বলে পার্টি আবার কি শুরু করবে, টেবিলে ড্রিঙ্কস রাখা আছে, খাওয়া চালু করে দিতে। অজিত বলে শুধু মদ খেয়ে কি পার্টি হয়, মিউজিক চালাতে।
রক্তিম একটু রূঢ় হয়ে বলে,"না এখন গান চলবে না।"
সবার মুখ থেকে হাঁসি উড়ে যায়। ইশিকা জিজ্ঞেস করে,"কেন?"
রক্তিম,"এখনও সবাই আসেনি।"
রাহুল আগ বাড়িয়ে বলে,"ও হ্যাঁ, সোনিয়া এখনও আসেনি।"
ব্যাস, ইশিকা রাহুলের দিকে চোখ কটমট করে তাকায়। যেন বলতে চায় সোনিয়ার নাম ওর মুখে কেন..
একটু পরেই দরজায় বেল বেজে ওঠে। রক্তিম "এসে গেছে আমার ডার্লিং" বলে বড়ো লাইটটা অফ করে অন্য একটা লাইট জ্বেলে দেয়। যাতে পুরো ঘরটা নীল হয়ে যায়। ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। সোনিয়া দরজা পেরিয়ে ঘরে ঢুকতেই সবাইয়ের মুখ আরও একবার হাঁ হয়ে যায়। হাই হিল সাথে ওয়ান পিস ড্রেস। যার নিচের অংশ পাছা পর্যন্ত গিয়ে থেমে গেছে। আর উপরে স্তনের ঠিক নিপলের উপর পর্যন্ত। মাঝে পেটের অংশটা কাটা। ছেলেমেয়ে সবাইয়ের নজর ওর দিকে। ঘর পুরে গরম হয়ে ওঠে।
সোনিয়া সবাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,"হাই গাইস"
সব ছেলেরা একসাথে বলে ওঠে হাই।
দিক্ষা অজিতের দাবনায় কুট করে খিমচি কাটে। বেচারা অজিত "আউ" আওয়াজ করে ওখান থেকে সরে দাঁড়ায়। কিন্তু রাহুলকে খিমচি কাটবার কেউ ছিল না।
সোনিয়া চলতে চলতে ঠিক রাহুলের কাছে এসে দাঁড়ায়। রাহুলের সাথে হাগ করে গুড ইভিনিং উইশ করে। রাহুলও বলে গুড ইভিনিং। পাশে দাঁড়িয়ে রক্তিম আর ইশিকা ওদের লক্ষ্য করছিল।
রক্তিম,"ইশিকা তোমার মনে হয় না যে রাহুল সোনিয়ার কাছে আসবার চেষ্টা করছে?"
রক্তিমের কথা শুনে ইশিকার বুকের মধ্যে চিন চিন করে ওঠে। চোখের কোনায় এক ফোঁটা জল চলে আসে। রক্তিমের কথার কোনো উত্তর দেয় না। ওখান থেকে সরে গিয়ে হল ঘর লাগোয়া একটা ব্যালকনি মতো জায়গায় গিয়ে রেলিং এ হাতের ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। কোমল এটা লক্ষ্য করে ইশিকার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।
রাহুলও এটা লক্ষ্য করে। ও নিজেও চাইছিল না সোনিয়ার সাথে মিশতে। কিন্তু বন্ধুত্বের খাতিরে মানা করতে পারছিল না। ওর এই সমস্যার সমাধান করে দেয় রক্তিম।
বৃষ্টি হওয়ার কারনে গাড়ি একটু আস্তেই চলছিল। বৃষ্টি ধারা আরও বাড়াতে থাকায় গাড়ির গতি আরও কমিয়ে দিতে হয়। রাহুল একটু খুশিই হয়।আবার ইশিকার দিকে মুখ করে থাকে।
ইশিকা,"এই, আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন? অন্য দিকে তাকাও..."
রাহুল,"ওফ ইশি, তুমি না..."
আমার সাথে কথা বলতে বারন করেছি।"
রাহুল এবার চুপ করে যায়। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকায় আর বৃষ্টির বড়ো বড়ো ফোঁটা রাস্তায় আছাড় খাওয়া দেখতে থাকে।
কুড়ি মিনিট পার হয়ে যায়। রাহুল চুপ করে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে। এবার ইশিকার একটু অস্বস্থি হতে থাকে। মনে মনে বলে,"এই ডাম্বোটাকে ভালোবেসে রাগ করে একটু চুপ করতে বললাম। এযে পুরোপুরি চুপ করে গেল। আমার ওরকম করে বলা উচিত্* হয়নি। ক্ষমা চেয়ে নেব? না না, আমি কেন ক্ষমা চাইতে যাব? যেটা আমি বলবো সেটাই ওকে শুনতে হবে। দেখি কেমন না শুনে থাকে..."
ইশিকা গলা খাঁকড়ানি দেয়। রাহুল কোনো সাড়া দেয় না। চুপ করে জানালার দিকে তাকিয়ে থাকে।
ইশিকা আদেশের সুরে বলে,"আমি ওই গানটা আমি ওই গানটা আরও একবার শুনতে চাই।"
কোনো উত্তর আসে না।
ইশিকা এবার প্রচন্ড রেগে যায়। জোরে চেঁচিয়ে ওঠে,"আমি ওই গানটা আরও একবার শুনতে চাই।"
এবার রাহুল ইশিকার দিকে না তাকিয়ে বাঁকা সুরে বলে,"কেউ একজন একটু আগে বলছিল কথা বলতে চায় না আমার সাথে।"
ইশিকা রাগের মাথায়"আচ্ছা ঠিক আচ্ছে"বলে জোরে ব্রেক কষে দেয়। বৃষ্টি হওয়ার দরুন রাস্তা পিছল থাকায় গাড়ি পিছল খেয়ে একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে থেমে যায়। রাহুল এটার জন্য তৈরি ছিল না। তাই রাহুলের মাথা কিছুটা এগিয়ে গিয়ে ডাসবোর্ডের সাথে ঠোক্কর খায়।
"আউ" রাহুল ব্যাথা পেয়ে হালকা চেঁচিয়ে ওঠে। ডান হাত দিয়ে মাথা হাত বোলাতে থাকে। ইশিকার খুব খারাপ লাগে। হাত বাড়িয়ে রাহুলের মাথায় হাত বোলাতে যায়।
রাহুল একটু রেগে গিয়ে ইশিকার হাত নিজের মাথা থেকে সরিয়ে দিয়ে বলে,"এটা কী হল? হঠাং করে ব্রেক লাগালে কেন?"
ইশিকার অভিমান এখনও যায়নি। আড় চোখে রাহুলের দিকে তাকিয়ে রাহুলের কথার নকল করে বলে,"কেউ একজন একটু আগে বলছিল কথা বলবে না।"
রাহুল আরও রেগে গিয়ে বলে,"হুঁ, সব মেয়েরাই একরকম।"
ইশিকা চেঁচিয়ে ওঠে,"মুখ সামলে কথা বলো বলছি।"
দুজনের ঝগড়া শুরু হয়ে যায়। ওদিকে পিছনে গাড়ির হর্ন বাজতে থাকে। রাস্তার মাঝখানে গাড়ি দাঁড় করানো রয়েছে।
রাহুল,"রাস্তার মাঝখানে গাড়ি দাঁড় করানো রয়েছে। তাড়াতাড়ি স্টার্ট করো।"
ইশিকা মুখ ঘুরে বলে,"হুঁ, আমি ওসব জানি না।"
রাহুল,"আচ্ছা বাবা, তুমি যা বলবে তাই শুনবো। এবার তাড়াতাড়ি গাড়ি স্টার্ট করো।"
ইশিকা,"আগে গানটা চালাও।"
রাহুল সঙ্গে সঙ্গে গান চালিয়ে দেয়। ইশিকার মুখে হাঁসি ফুটে ওঠে। রাহুলের দিকে একবার তাকিয়ে যেন বলতে চায়,"দেখলে আমার সাথে কেউ জিততে পারবে না।"
সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালু করে দেয়। গান চলতে থাকে। পুরো রাস্তা রাহুল ইশিকার দিকে তাকিয়ে থাকে। এটা ইশিকার আদেশ, মানতেই হবে।
অবশেষে গাড়ি থেমে যায় একটি বড়ো বিল্ডিং এর সামনে। বৃষ্টি অনেক আগেই থেমে গিয়েছিল।
রাহুল,"এটা রক্তিমের বাড়ি?"
ইশিকা,"ফ্ল্যাট নং 219."
রাহুল "ওহ্" বলে দুজনে গাড়ি থেকে নামে। রাহুল নেমে একপাশে দাঁড়িয়ে পড়ে। ইশিকা গাড়ি থেকে নেমে যেই সামনে এগিয়ে আসে রাহুলের চোখ ধাঁধা লেগে যায়। খুব সুন্দর দেখতে লাগছে আজ ইশিকাকে। একমাথা চুল একটা ক্লিপ দিয়ে আটকানো। লাল রঙের গাউন যেটা পুরো শরীরকে ঢেকে রেখেছে। কিন্তু শরীরের গঠন অবায়ব ফুটে উঠেছে। যেন সর্গ এক অপ্সরী এসে ওর কাছে ধরা দিয়েছে। সোনিয়ার সাথে এই সৌন্দর্যের তুলনা হয় না।
ইশিকা "এসো" বলে বিল্ডিং এর দিকে এগিয়ে যায়।
"ইশি" রাহুল পিছন থেকে ইশিকাকে ডাকে। ইশিকা ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছন দিকে তাকায়।
"আজ মনে হচ্ছে স্বর্গ থেকে কোনো পরি মাটিতে নেমে এসেছে। তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।"
ইশিকার মন অজানা এক আনন্দে নেচে ওঠে। সাথে রাহুলের মনও। দুজনের এই আনন্দে যেন সারা পৃথিবীটা আনন্দে মেতে ওঠে। মেঘ সরে গিয়ে চাঁদ মামা জ্বল জ্জ্বল করে ওঠে মাথার উপরে। দুজনে একে অপরের দিকে তাকিয়ে স্থির হয়ে। সময়ও যেন স্থির হয়ে যায় ওদের স্থিরতা দেখে।
ইশিকা রাহুলের কাছে সরে এসে হাত বাড়িযে রাহুলের কপাল ছোঁয়। হাত বোলাতে বোলাতে বলে,"তোমার বেশি লাগেনি তো..."
ইশিকার নরম কোমল হাতের স্পর্শে কপালের ব্যাথাটুকু নিমেষে গায়েব হয়ে যায়।
রাহুল ইশিকার হাতের উপর হাত রেখে মাথা নাড়ায়। পরস্পরের হাতের স্পর্শে দুজনেই কেঁপে ওঠে।
ইশিকা নিজেকে সামলে নিয়ে "আচ্ছা চলো.." বলে ইশিকা রাহুলের হাত ধরে রক্তিমের ফ্ল্যাটের দিকে এগিয়ে যায়। রাহুল নিজের হাতে ইশিকার হাতের স্পর্শ হৃদয়ে মেখে নিতে নিতে ইশিকার পাশে পাশে হেঁটে এগিয়ে যায় রক্তিমের ফ্ল্যাটের দিকে।
ইশিকা রাহুলের হাত ধরে রক্তিমের ফ্ল্যাটের দিকে এগিয়ে যায়। দুজনে এমনভাবে হাত ধরাধরি করে থাকে যেন মনে হবে দুই প্রেমিক প্রেমিকা যাচ্ছে। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে চার তলায় পৌঁছে যায়। প্রতিটা ফ্ল্যাটের সামনে একটি করে নাম্বার লাগানো রয়েছে। চলতে চলতে ইশিকা একটি ফ্ল্যাটের সামনে এসে থেমে যায়। ফ্ল্যাট নং 291. রাহুলকেও থামতে হয়।
রাহুল,"এটা কার ফ্ল্যাট?"
ইশিকা একটু অবাক হয়ে,"কার আবার, রক্তিমের।"
রাহুল,"কিন্তু তুমি তো একটু আগে নিচে বললে যে রক্তিমের ফ্ল্যাট নং 219."
ইশিকা,"তাই?"
রাহুল,"হ্যাঁ, তুমি তাই তো বললে।"
ইশিকা,"ওহ, ভুল করে বলে ফেলেছি। 219 নং ফ্ল্যাটে কোমল থাকে।"
ইশিকা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বেল বাজায়। গেট খোলার আগে রাহুল একবার আশপাশটা তাকিয়ে দেখে। বেশ বড়ো বিল্ডিংটা। সামনে 293 নং ফ্ল্যাটে রাহুলের চোখ আটকে যায়। ওই ফ্ল্যাটটা বাকি ফ্ল্যাটের থেকে কিছুটা আলাদা।
"স্ট্রেঞ্জ" রাহুলের মুখ থেকে বেড়িয়ে আসে।
ততক্ষনে রক্তিম এসে দরজা খুলে দেয়। ওদের দিকে তাকিয়ে বলে,"হাই, ইশিকা, রাহুল, ভিতরে এসো।"
রাহুল ইশিকার সঙ্গে ফ্ল্যাটের ভিতরে প্রবেশ করে। বাইরে থেকে ফ্ল্যাটটা সাধারন মনে হলেও ভিতরটা খুব সুন্দর লাগছিল। দরজা দিয়ে প্রবেশ করেই সামনে একটা বড়ো হল ঘর। যার চারিদিকে নানান ধরনের জিনিসপত্র সাজানো রয়েছে। সামনে একটি সোফা রয়েছে। এককথায় অতি সুন্দর।
"ওয়াও রক্তিম, তোর ফ্ল্যাটটা খুব সুন্দর।" রাহুল ফ্ল্যাটের চারিদিকে দেখতে দেখতে বলে।
রক্তিম হেঁসে বলে থ্যাঙ্কস।
রাহুল সামনে তাকিয়ে দেখে সোফায় বাকি বন্ধুরা বসে রয়েছে। কুবের, কোমল, অজিত, দিক্ষা, এবার ওদের সাথে রাহুল আর ইশিকাও যোগদান করে। রাহুল একটা কালো শার্ট পড়েছিল। যার পিছন দিকে ডিজাইন করা আর নিচে একটা লাল রঙের ট্রাউজার পড়েছিল। রাহুলকে একদম মস্ত দেখতে লাগছিল আজকে।
দিক্ষা,"রাহুল, আজ তোমাকে হেব্বি লাগছে।"
রাহুল দিক্ষার দিকে তাকিয়ে হেঁসে ধন্যবাদ জানায়।
আজ মোটামুটি সবাই ভালো জামাকাপড় পরে এসেছে। আড্ডা চালু হয়ে যায়। সবাই মন খুলে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকে। কারন প্রায় একমাস ভালো করে কথা বলতে পারবে না। হইহই, হাঁসাহাঁসি চলতেই থাকে। ইশিকা রক্তিমকে ডেকে বলে পার্টি শুরু করে দিতে। রক্তিম বলে পার্টি আবার কি শুরু করবে, টেবিলে ড্রিঙ্কস রাখা আছে, খাওয়া চালু করে দিতে। অজিত বলে শুধু মদ খেয়ে কি পার্টি হয়, মিউজিক চালাতে।
রক্তিম একটু রূঢ় হয়ে বলে,"না এখন গান চলবে না।"
সবার মুখ থেকে হাঁসি উড়ে যায়। ইশিকা জিজ্ঞেস করে,"কেন?"
রক্তিম,"এখনও সবাই আসেনি।"
রাহুল আগ বাড়িয়ে বলে,"ও হ্যাঁ, সোনিয়া এখনও আসেনি।"
ব্যাস, ইশিকা রাহুলের দিকে চোখ কটমট করে তাকায়। যেন বলতে চায় সোনিয়ার নাম ওর মুখে কেন..
একটু পরেই দরজায় বেল বেজে ওঠে। রক্তিম "এসে গেছে আমার ডার্লিং" বলে বড়ো লাইটটা অফ করে অন্য একটা লাইট জ্বেলে দেয়। যাতে পুরো ঘরটা নীল হয়ে যায়। ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। সোনিয়া দরজা পেরিয়ে ঘরে ঢুকতেই সবাইয়ের মুখ আরও একবার হাঁ হয়ে যায়। হাই হিল সাথে ওয়ান পিস ড্রেস। যার নিচের অংশ পাছা পর্যন্ত গিয়ে থেমে গেছে। আর উপরে স্তনের ঠিক নিপলের উপর পর্যন্ত। মাঝে পেটের অংশটা কাটা। ছেলেমেয়ে সবাইয়ের নজর ওর দিকে। ঘর পুরে গরম হয়ে ওঠে।
সোনিয়া সবাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,"হাই গাইস"
সব ছেলেরা একসাথে বলে ওঠে হাই।
দিক্ষা অজিতের দাবনায় কুট করে খিমচি কাটে। বেচারা অজিত "আউ" আওয়াজ করে ওখান থেকে সরে দাঁড়ায়। কিন্তু রাহুলকে খিমচি কাটবার কেউ ছিল না।
সোনিয়া চলতে চলতে ঠিক রাহুলের কাছে এসে দাঁড়ায়। রাহুলের সাথে হাগ করে গুড ইভিনিং উইশ করে। রাহুলও বলে গুড ইভিনিং। পাশে দাঁড়িয়ে রক্তিম আর ইশিকা ওদের লক্ষ্য করছিল।
রক্তিম,"ইশিকা তোমার মনে হয় না যে রাহুল সোনিয়ার কাছে আসবার চেষ্টা করছে?"
রক্তিমের কথা শুনে ইশিকার বুকের মধ্যে চিন চিন করে ওঠে। চোখের কোনায় এক ফোঁটা জল চলে আসে। রক্তিমের কথার কোনো উত্তর দেয় না। ওখান থেকে সরে গিয়ে হল ঘর লাগোয়া একটা ব্যালকনি মতো জায়গায় গিয়ে রেলিং এ হাতের ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। কোমল এটা লক্ষ্য করে ইশিকার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।
রাহুলও এটা লক্ষ্য করে। ও নিজেও চাইছিল না সোনিয়ার সাথে মিশতে। কিন্তু বন্ধুত্বের খাতিরে মানা করতে পারছিল না। ওর এই সমস্যার সমাধান করে দেয় রক্তিম।