07-01-2021, 03:46 PM
পরেরদিন সকালে মা কিচেনে কাজ করছিলো দিদা কাছে এলো।
কামিনীঃ মা কিছু বলবে।
দিদাঃ হুম তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে রে।
মাঃ বলো মা কি বলবে।
দিদাঃ বিষয়টা কমল কে নিয়ে।
মাঃ ওহ আচ্ছা।
দিদাঃ বলছি তোর ছেলেতো এখন চাকরি করছে,তা ওর বিয়ে দেবো ভাবছি।
মাঃ কি বলছো মা,সবে তো ও ২১ সে পা রাখলো এর মধ্যে ওর বিয়ে দেবে তোমারা! আগে ওকে একটু সময় দাও।
দিদাঃ দ্যাখ কামিনী আমি জানি কমল ২১ সে পড়েছে,কিন্তু তোর বাবা ও আমি আর কদিনই বা বাঁঁচবো তাই মরার আগে নাতির ভবিষ্যৎ দেখে যেতে চাই।
মাঃ কি বলছো মা এসব কথা একেবারে বলবে না,তোমাদের ছাড়া আমি কি করে বাঁঁচবো।
দিদাঃ কিন্তু মা মরতে তো একদিন সবাইকেই হবে তাই মরার আগে নাতির বিয়ে দেখে যেতে চাই।
মাঃ আচ্ছা বাবা ঠিক আছে তুমি আর বাবা যেটা ভালো বোঝো সেটা করো। কিন্তু বিয়ে দিতে গেলে তো একটা মেয়ের দরকার,কোনো মেয়ে কি তোমরা দেখে রেখেছো?
দিদাঃ হুম,একটা মেয়ে আমাদের নজরে কিন্তু মেয়েটাকে রাজি করাতে হবে।
মাঃ ওমা তাই মেয়েও তোমরা ঠিক করে ফেলেছো,মেয়েটা কেমন দেখতে, পড়াশুনা কতোদূর করেছে,বাড়ি কোথায়?
দিদাঃ মায়ের দিকে তাকিয়ে, মেয়েটা খুবই সুন্দরী, আর বাড়ির কাজে খুব পটু আর আমাদের কমলকে খুবই সুখেই রাখবে।
মাঃ আমাকেও বলো না কোথায় থাকে সেই মেয়েটা,আমাকেও আলাপ করিয়ে দাও না মা।
দিদাঃ মায়ের থুতুনিতে হাত রেখে বললো,কেন আমাদের কামিনী কি সুন্দরী নয়,বাড়িতেই যখন এতো সুন্দর মেয়ে আছে তখন বাইরে কেনো যাবো।
মাঃ কি বলছো মা! আমি মানে?
দিদাঃ হ্যাঁ মা কামিনী, তুই ঠিকই বুঝেছিস তোর থেকে কমলকে কেউ বুঝতে পারবে না,তোর থেকে ওকে কেউ ভালোবাসতে পারবে না।
মাঃ তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে মা,কি উল্টোপালটা কথা বলছো, ও আমার ছেলে আর তুমি কিনা ছিঃ ছিঃ এটা ভাবাও যে পাপ!
কাঁদতে কাঁদতে কামিনী ওর বেডরুমের দিকে চলে গেলো।
দিদাঃ কামিনী কামিনী শোন আমার কথাটা শুনে যা মা।
সেদিন কামিনী সারাদিন ঘর থেকেই বেরলো না,নাওয়া খাওয়া সবই বন্ধ রাখলো সে।
রাতে শোয়ার ঘরে দিদা দাদুকে সমস্ত ব্যাপারটা পরিস্কার করে বললো।দাদু প্রথমে ব্যাপারটা নিয়ে কিন্তু কিন্তু করলেও দিদার মতে সম্মতি জানালো।
আমি এসবের কিছুই জানিনা মাকে কয়েকবার ফোন করলাম কিন্তু বারবার ফোনটা রিং হয়ে কেটে গেলো কিন্তু মা ফোনটা ধোরলো না,ভাবলাম মা হয়তো ব্যাস্ত আছে তাই ফোন ধরছে না।
পরেরদিন সকালে মা ঘুম থেকে উঠলো না দেখে দিদাই বাড়ির সব কাজ করতে লাগলো,দিদা ও মাকে বিরক্ত করলো না। দুদিন এভাবেই কেটে গেলো তিন দিনের মাথায় হঠাৎ কামিনী সকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির যাবতীয় কাজ করতে লাগলো,কামিনী রান্নাঘরে কাজ করছিলো সেই সময় কাকলী কামিনীর ঘাড়ে স্নেহের হাত রাখলো।
দিদাঃ আমি কি আমার মেয়ের কোনো ক্ষতি চাইতে পারি?
মাঃ মাথা নিচু করে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো।
দিদাঃ আমার মেয়ে রাজরানী হয়ে থাকবে,তুই খুব সুখী হ মা।
মাঃ যেটা ভালো বোঝো সেটা করো। বলেই মাথা নিচু করে লজ্জায় মুচকি হেসে বেরিয়ে গেলো।
আজ শনিবার আমার বাড়িতে ফেরার দিন,অফিসে একগাদা ফাইল কিন্তু কাজে মন নেই আমার, কখন যে বাড়ি ফিরবো সেটাই চিন্তা। দেখতে দেখতে বাড়ি ফেরার টাইম হয়ে গেলো,রাত ৯ টা নাগাদ বাড়ি এসে পৌঁছলাম দাদু দিদা সবার সাথে দেখা হলো কিন্তু মাকে কোথাও দেখতে পেলাম না।
দাদুঃ কমল।
আমিঃ হ্যাঁ দাদু।
দাদুঃ তোমার সঙ্গে আমার কিছু জরুরি কথা আছে।
আমিঃ বলো দাদু,কি বলবে।
দাদুঃ এখন না রাতে খাবার পর বলবো এখন তুমি বিশ্রাম নাও।
আমিঃ ওকে দাদু।
এই বলে ঘরে গেলাম বিশ্রাম নিতে,কিন্তু মার সাথে এখনও দেখা হোলো না।রাতে খাবার টেবিলে মাকে দেখতে পেলাম না,মা কি আমার উপর রাগ করেছে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।রাতে খাবার পর দাদু আমাকে তার রুমে আসতে বলে চলে গেলো, আমিও গুটি গুটি পায়ে দাদুকে অনুসরন করে দাদুর রুমে পৌঁছলাম।
দাদুঃ কমল বসো।
আমিঃ জী, দাদু।
দাদুঃ তোমার জীবনের একটা বড়ো সিদ্ধান্ত নিতে চলেছি।
আমিঃ হ্যাঁ দাদু,কি সিদ্ধান্ত বলুন।
দাদুঃ তোমার জন্য আমরা একটা মেয়ে দেখেছি আর ওর সাথেই তোমার বিয়ে দেবো ঠিক করেছি।
আমিঃ কিন্তু দাদু,আমি তো সবে মাত্র চাকরি পেয়েছি আর এরই মধ্যে বিয়ে।
দাদুঃ দ্যাখ বাবা আমাদের বয়স হয়েছে, ব্যবসাও গুটিয়ে এনেছি প্রায় বুড়ো বুড়ী তোর ছেলে মেয়ে নিয়ে খেলে দিন পার করতে চাই।
আমিঃ কিন্তু মা কি মেয়েটা দেখেছে,মা কি রাজি হয়েছে আমার বিয়ে দিতে?
দাদুঃ হুমম, কিন্তু বিষয়টা একটু অন্য তোর সাথে আলোচনা করতে চাই।
আমিঃ কোন বিষয়ে দাদু।
দাদুঃ তোর মায়ের বিষয়ে।
আমিঃ মায়ের কি হয়েছে দাদু? আমি আসার পর থেকে মাকে দেখছি না,মায়ের কি শরীর খারাপ।
দাদুঃ না আসলে আমরা তোর জন্য যে মেয়েটি ঠিক করেছি তার নাম হলো কামিনী।
নামটা শুনে একটু হকচকিয়ে গেলাম।
আমিঃ কামিনী তো আমার মায়ের নাম,ওই নামের মেয়ে আমি বিয়ে করতে পারবো না দাদু তুমি অন্য নামের মেয়ে খোঁজ করো।
দাদু আমার দুই কাঁধে হাত রেখে বললো।
দাদুঃ দ্যাখ বাবা কমল আমার যাবতীয় স্থায়ী অস্থায়ী সম্পত্তির মালিক ভবিষ্যতে তুই,আর আমাদের তুই ছাড়া কেউ নেই। আমি এক অসহায় বাবা আমার বিধবা মেয়ের জন্য তোর কাছে ভিক্ষা চাইছি তুই ওকে আপন করে নে,তাহলে আমি মরে শান্তি পাবো।
দাদু হাউ হাউ করে কাঁদছিলো,আমি পরিস্থিতির জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি দ্রুত ওখান থেকে বেরিয়ে আমার ঘরে চলে এলাম। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম দাদু এটা কি বললো মায়ের সাথে আমাকে না না এ মোটেও সম্ভবপর নয়।জন্মথেকে যাকে মাতৃস্নেহে পূজা করে এসেছি স্ত্রী হিসাবে কি করে মেনে নেব। মা যে ছেলেকে স্নেহ দিয়ে মানুষ করেছেন সেই বা কি করে স্বামী হিসাবে আমকে মেনে নেবে।মনের মধ্যে হাজারো প্রস্ন্যের ভিড় বন্ধ দরজার আড়লে হৃদয়ে বারবার আলোড়নের ঝড় তুলছে,কোনটা ঠিক কোনটা ভুল সব কিছুই যেনো মুহুর্তের মধ্যে পরিস্কার এবং ঝাপসায় রুপান্তরিত হচ্ছে,কখন যে দুচোখ লেগে গেলো বুঝতেই পারলাম না। একটা নরম হাতের স্পর্শে ঘুম ভাঙলো চোখ খুলে দেখলাম দিদা মাথার পাশে বসে পরম স্নেহে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। চোখাচোখি হতেই দিদার কোলে মাথাটাকে তুলে দিলাম,দিদার কোমোরটাকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।
দিদাঃ কমল।
আমিঃ হুম দিদা।
দিদাঃ আমাকে তুই কতোটা ভালোবাসিস রে?
আমিঃ তুমি জানোনা বুঝি, আমার চেয়েও বেশি।
দিদাঃ আর আমি তোকে ভালোবাসিনা তাইনা!
আমিঃ বারে আমি কি কোনোদিন বলেছি নাকি। তুমি আমাকে প্রানের থেকে বেশি ভালোবাসো।
দিদাঃ তাহলে আমাকে কথা দে,আমি তোকে যেটা বলবো তুই সেটা মেনে নিবি।
একটু হকচকিয়ে গেলাম দিদার কথায় গতোরাতে দাদুর ওইভাবে কান্নাকাটি আজ দিদার অনুরোধ কি বলতে চাইছে দিদা?
আমিঃ আচ্ছা, ঠিক আছে দিদা বলো কি বলবে।
দিদাঃ গতরাতে তোর দাদু যেটা বলেছে সেটা কে মেনে নে, তাহলে বুঝবো তুই আমাকে কতোটা ভালোবাসিস।
আমিঃ কিন্তু দিদা দাদু যেটা বলছে সেটা মেনে নেওয়া কিভাবে সম্ভব,আজকের সমাজে সেটা যে অবৈধ আমরা কি সমাজের কাছে মুখ দেখাতে পারবো।
দিদাঃ কমল,আমরা তোর থেকে অনেক বড়ো সমাজের চোখে কোনটা ঠিক কোনটা ভুল সেটা বোঝার ক্ষমতা আমাদের অনেক বেশি। তোর মা সারাজীবন অনেক কষ্ট করেছে সন্তান হয়ে তোর মায়ের দুঃখ দূর করা তোর জীবনের সবচেয়ে বড়ো কাজ। আমি তোর দাদু হয়তো আর বেশিদিন বাঁচবো না তাই মরার আগে তোর মাকে একটু সুখী দেখে যেতে চাই।
কথা গুলো বলতে বলতে দিদার চোখ দিয়ে অশ্রুধারা প্লাবিত হতে লাগলো। দিদার কান্না দেখে মনটা ভারী হয়ে উঠলো আমার, আমি সন্মতি জানাতেই খুশিতে ভরে উঠলো দিদার মন।
দিদাঃ আমার সোনা দাদু ভাই।
আমার কপালে একটা স্নেহের চুমু দিয়ে চলে যেতেই মায়ের মুখটা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলাম "কামিনী আই লাভ ইউ"।
আজকের দিনটা যেনো খুব তাড়াতাড়ি কাটতে লাগলো কিন্তু মাকে দেখতে পাচ্ছিনা কেনো,তাহলে কি মা ইচ্ছাকৃতভাবে আমার সামনে আসছে না?হবে হয়তো। মনটাকে শান্ত কোরলাম দেখতে দেখতে আমার কলকাতায় ফেরার টাইম হয়ে এলো দাদু দিদা কে বিদায় জানালাম বাড়ি থেকে বেরবো ঠিক এমন সময় মা আমার সামনে চলে এলো একটা মুচকি হেসে আমার সামনে দিয়ে চলে গেলো, আমার ট্রেনের টাইম হয়ে এসেছিলো সেহেতু আর দেরি না করে বেরিয়ে পড়লাম।বাড়ির বাইরে থেকে দেখলাম মা ওপরের ঘর থেকে হাত নেড়ে বিদায় জানাচ্ছে, আমিও কেনো জানিনা হাত তুলে মাকে একটা ফ্লাইং কিস দিলাম কিন্তু এর পর যেটা ঘটলো তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না মা ও নিজের হাতটা ঠোঁটের কাছে চুমু খেয়ে বুকের মধ্যে বুলিয়ে নিলো। মা যে আমাদের নতুন সম্পক্ক টাকে মন থেকে মেনে নিয়েছে সেটা বুঝতে আমার আর বাকি রইলো না, খুশি মনে কলকাতায় দিকে রওনা দিলাম।
কামিনীঃ মা কিছু বলবে।
দিদাঃ হুম তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে রে।
মাঃ বলো মা কি বলবে।
দিদাঃ বিষয়টা কমল কে নিয়ে।
মাঃ ওহ আচ্ছা।
দিদাঃ বলছি তোর ছেলেতো এখন চাকরি করছে,তা ওর বিয়ে দেবো ভাবছি।
মাঃ কি বলছো মা,সবে তো ও ২১ সে পা রাখলো এর মধ্যে ওর বিয়ে দেবে তোমারা! আগে ওকে একটু সময় দাও।
দিদাঃ দ্যাখ কামিনী আমি জানি কমল ২১ সে পড়েছে,কিন্তু তোর বাবা ও আমি আর কদিনই বা বাঁঁচবো তাই মরার আগে নাতির ভবিষ্যৎ দেখে যেতে চাই।
মাঃ কি বলছো মা এসব কথা একেবারে বলবে না,তোমাদের ছাড়া আমি কি করে বাঁঁচবো।
দিদাঃ কিন্তু মা মরতে তো একদিন সবাইকেই হবে তাই মরার আগে নাতির বিয়ে দেখে যেতে চাই।
মাঃ আচ্ছা বাবা ঠিক আছে তুমি আর বাবা যেটা ভালো বোঝো সেটা করো। কিন্তু বিয়ে দিতে গেলে তো একটা মেয়ের দরকার,কোনো মেয়ে কি তোমরা দেখে রেখেছো?
দিদাঃ হুম,একটা মেয়ে আমাদের নজরে কিন্তু মেয়েটাকে রাজি করাতে হবে।
মাঃ ওমা তাই মেয়েও তোমরা ঠিক করে ফেলেছো,মেয়েটা কেমন দেখতে, পড়াশুনা কতোদূর করেছে,বাড়ি কোথায়?
দিদাঃ মায়ের দিকে তাকিয়ে, মেয়েটা খুবই সুন্দরী, আর বাড়ির কাজে খুব পটু আর আমাদের কমলকে খুবই সুখেই রাখবে।
মাঃ আমাকেও বলো না কোথায় থাকে সেই মেয়েটা,আমাকেও আলাপ করিয়ে দাও না মা।
দিদাঃ মায়ের থুতুনিতে হাত রেখে বললো,কেন আমাদের কামিনী কি সুন্দরী নয়,বাড়িতেই যখন এতো সুন্দর মেয়ে আছে তখন বাইরে কেনো যাবো।
মাঃ কি বলছো মা! আমি মানে?
দিদাঃ হ্যাঁ মা কামিনী, তুই ঠিকই বুঝেছিস তোর থেকে কমলকে কেউ বুঝতে পারবে না,তোর থেকে ওকে কেউ ভালোবাসতে পারবে না।
মাঃ তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে মা,কি উল্টোপালটা কথা বলছো, ও আমার ছেলে আর তুমি কিনা ছিঃ ছিঃ এটা ভাবাও যে পাপ!
কাঁদতে কাঁদতে কামিনী ওর বেডরুমের দিকে চলে গেলো।
দিদাঃ কামিনী কামিনী শোন আমার কথাটা শুনে যা মা।
সেদিন কামিনী সারাদিন ঘর থেকেই বেরলো না,নাওয়া খাওয়া সবই বন্ধ রাখলো সে।
রাতে শোয়ার ঘরে দিদা দাদুকে সমস্ত ব্যাপারটা পরিস্কার করে বললো।দাদু প্রথমে ব্যাপারটা নিয়ে কিন্তু কিন্তু করলেও দিদার মতে সম্মতি জানালো।
আমি এসবের কিছুই জানিনা মাকে কয়েকবার ফোন করলাম কিন্তু বারবার ফোনটা রিং হয়ে কেটে গেলো কিন্তু মা ফোনটা ধোরলো না,ভাবলাম মা হয়তো ব্যাস্ত আছে তাই ফোন ধরছে না।
পরেরদিন সকালে মা ঘুম থেকে উঠলো না দেখে দিদাই বাড়ির সব কাজ করতে লাগলো,দিদা ও মাকে বিরক্ত করলো না। দুদিন এভাবেই কেটে গেলো তিন দিনের মাথায় হঠাৎ কামিনী সকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির যাবতীয় কাজ করতে লাগলো,কামিনী রান্নাঘরে কাজ করছিলো সেই সময় কাকলী কামিনীর ঘাড়ে স্নেহের হাত রাখলো।
দিদাঃ আমি কি আমার মেয়ের কোনো ক্ষতি চাইতে পারি?
মাঃ মাথা নিচু করে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো।
দিদাঃ আমার মেয়ে রাজরানী হয়ে থাকবে,তুই খুব সুখী হ মা।
মাঃ যেটা ভালো বোঝো সেটা করো। বলেই মাথা নিচু করে লজ্জায় মুচকি হেসে বেরিয়ে গেলো।
আজ শনিবার আমার বাড়িতে ফেরার দিন,অফিসে একগাদা ফাইল কিন্তু কাজে মন নেই আমার, কখন যে বাড়ি ফিরবো সেটাই চিন্তা। দেখতে দেখতে বাড়ি ফেরার টাইম হয়ে গেলো,রাত ৯ টা নাগাদ বাড়ি এসে পৌঁছলাম দাদু দিদা সবার সাথে দেখা হলো কিন্তু মাকে কোথাও দেখতে পেলাম না।
দাদুঃ কমল।
আমিঃ হ্যাঁ দাদু।
দাদুঃ তোমার সঙ্গে আমার কিছু জরুরি কথা আছে।
আমিঃ বলো দাদু,কি বলবে।
দাদুঃ এখন না রাতে খাবার পর বলবো এখন তুমি বিশ্রাম নাও।
আমিঃ ওকে দাদু।
এই বলে ঘরে গেলাম বিশ্রাম নিতে,কিন্তু মার সাথে এখনও দেখা হোলো না।রাতে খাবার টেবিলে মাকে দেখতে পেলাম না,মা কি আমার উপর রাগ করেছে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।রাতে খাবার পর দাদু আমাকে তার রুমে আসতে বলে চলে গেলো, আমিও গুটি গুটি পায়ে দাদুকে অনুসরন করে দাদুর রুমে পৌঁছলাম।
দাদুঃ কমল বসো।
আমিঃ জী, দাদু।
দাদুঃ তোমার জীবনের একটা বড়ো সিদ্ধান্ত নিতে চলেছি।
আমিঃ হ্যাঁ দাদু,কি সিদ্ধান্ত বলুন।
দাদুঃ তোমার জন্য আমরা একটা মেয়ে দেখেছি আর ওর সাথেই তোমার বিয়ে দেবো ঠিক করেছি।
আমিঃ কিন্তু দাদু,আমি তো সবে মাত্র চাকরি পেয়েছি আর এরই মধ্যে বিয়ে।
দাদুঃ দ্যাখ বাবা আমাদের বয়স হয়েছে, ব্যবসাও গুটিয়ে এনেছি প্রায় বুড়ো বুড়ী তোর ছেলে মেয়ে নিয়ে খেলে দিন পার করতে চাই।
আমিঃ কিন্তু মা কি মেয়েটা দেখেছে,মা কি রাজি হয়েছে আমার বিয়ে দিতে?
দাদুঃ হুমম, কিন্তু বিষয়টা একটু অন্য তোর সাথে আলোচনা করতে চাই।
আমিঃ কোন বিষয়ে দাদু।
দাদুঃ তোর মায়ের বিষয়ে।
আমিঃ মায়ের কি হয়েছে দাদু? আমি আসার পর থেকে মাকে দেখছি না,মায়ের কি শরীর খারাপ।
দাদুঃ না আসলে আমরা তোর জন্য যে মেয়েটি ঠিক করেছি তার নাম হলো কামিনী।
নামটা শুনে একটু হকচকিয়ে গেলাম।
আমিঃ কামিনী তো আমার মায়ের নাম,ওই নামের মেয়ে আমি বিয়ে করতে পারবো না দাদু তুমি অন্য নামের মেয়ে খোঁজ করো।
দাদু আমার দুই কাঁধে হাত রেখে বললো।
দাদুঃ দ্যাখ বাবা কমল আমার যাবতীয় স্থায়ী অস্থায়ী সম্পত্তির মালিক ভবিষ্যতে তুই,আর আমাদের তুই ছাড়া কেউ নেই। আমি এক অসহায় বাবা আমার বিধবা মেয়ের জন্য তোর কাছে ভিক্ষা চাইছি তুই ওকে আপন করে নে,তাহলে আমি মরে শান্তি পাবো।
দাদু হাউ হাউ করে কাঁদছিলো,আমি পরিস্থিতির জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি দ্রুত ওখান থেকে বেরিয়ে আমার ঘরে চলে এলাম। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম দাদু এটা কি বললো মায়ের সাথে আমাকে না না এ মোটেও সম্ভবপর নয়।জন্মথেকে যাকে মাতৃস্নেহে পূজা করে এসেছি স্ত্রী হিসাবে কি করে মেনে নেব। মা যে ছেলেকে স্নেহ দিয়ে মানুষ করেছেন সেই বা কি করে স্বামী হিসাবে আমকে মেনে নেবে।মনের মধ্যে হাজারো প্রস্ন্যের ভিড় বন্ধ দরজার আড়লে হৃদয়ে বারবার আলোড়নের ঝড় তুলছে,কোনটা ঠিক কোনটা ভুল সব কিছুই যেনো মুহুর্তের মধ্যে পরিস্কার এবং ঝাপসায় রুপান্তরিত হচ্ছে,কখন যে দুচোখ লেগে গেলো বুঝতেই পারলাম না। একটা নরম হাতের স্পর্শে ঘুম ভাঙলো চোখ খুলে দেখলাম দিদা মাথার পাশে বসে পরম স্নেহে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। চোখাচোখি হতেই দিদার কোলে মাথাটাকে তুলে দিলাম,দিদার কোমোরটাকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।
দিদাঃ কমল।
আমিঃ হুম দিদা।
দিদাঃ আমাকে তুই কতোটা ভালোবাসিস রে?
আমিঃ তুমি জানোনা বুঝি, আমার চেয়েও বেশি।
দিদাঃ আর আমি তোকে ভালোবাসিনা তাইনা!
আমিঃ বারে আমি কি কোনোদিন বলেছি নাকি। তুমি আমাকে প্রানের থেকে বেশি ভালোবাসো।
দিদাঃ তাহলে আমাকে কথা দে,আমি তোকে যেটা বলবো তুই সেটা মেনে নিবি।
একটু হকচকিয়ে গেলাম দিদার কথায় গতোরাতে দাদুর ওইভাবে কান্নাকাটি আজ দিদার অনুরোধ কি বলতে চাইছে দিদা?
আমিঃ আচ্ছা, ঠিক আছে দিদা বলো কি বলবে।
দিদাঃ গতরাতে তোর দাদু যেটা বলেছে সেটা কে মেনে নে, তাহলে বুঝবো তুই আমাকে কতোটা ভালোবাসিস।
আমিঃ কিন্তু দিদা দাদু যেটা বলছে সেটা মেনে নেওয়া কিভাবে সম্ভব,আজকের সমাজে সেটা যে অবৈধ আমরা কি সমাজের কাছে মুখ দেখাতে পারবো।
দিদাঃ কমল,আমরা তোর থেকে অনেক বড়ো সমাজের চোখে কোনটা ঠিক কোনটা ভুল সেটা বোঝার ক্ষমতা আমাদের অনেক বেশি। তোর মা সারাজীবন অনেক কষ্ট করেছে সন্তান হয়ে তোর মায়ের দুঃখ দূর করা তোর জীবনের সবচেয়ে বড়ো কাজ। আমি তোর দাদু হয়তো আর বেশিদিন বাঁচবো না তাই মরার আগে তোর মাকে একটু সুখী দেখে যেতে চাই।
কথা গুলো বলতে বলতে দিদার চোখ দিয়ে অশ্রুধারা প্লাবিত হতে লাগলো। দিদার কান্না দেখে মনটা ভারী হয়ে উঠলো আমার, আমি সন্মতি জানাতেই খুশিতে ভরে উঠলো দিদার মন।
দিদাঃ আমার সোনা দাদু ভাই।
আমার কপালে একটা স্নেহের চুমু দিয়ে চলে যেতেই মায়ের মুখটা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলাম "কামিনী আই লাভ ইউ"।
আজকের দিনটা যেনো খুব তাড়াতাড়ি কাটতে লাগলো কিন্তু মাকে দেখতে পাচ্ছিনা কেনো,তাহলে কি মা ইচ্ছাকৃতভাবে আমার সামনে আসছে না?হবে হয়তো। মনটাকে শান্ত কোরলাম দেখতে দেখতে আমার কলকাতায় ফেরার টাইম হয়ে এলো দাদু দিদা কে বিদায় জানালাম বাড়ি থেকে বেরবো ঠিক এমন সময় মা আমার সামনে চলে এলো একটা মুচকি হেসে আমার সামনে দিয়ে চলে গেলো, আমার ট্রেনের টাইম হয়ে এসেছিলো সেহেতু আর দেরি না করে বেরিয়ে পড়লাম।বাড়ির বাইরে থেকে দেখলাম মা ওপরের ঘর থেকে হাত নেড়ে বিদায় জানাচ্ছে, আমিও কেনো জানিনা হাত তুলে মাকে একটা ফ্লাইং কিস দিলাম কিন্তু এর পর যেটা ঘটলো তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না মা ও নিজের হাতটা ঠোঁটের কাছে চুমু খেয়ে বুকের মধ্যে বুলিয়ে নিলো। মা যে আমাদের নতুন সম্পক্ক টাকে মন থেকে মেনে নিয়েছে সেটা বুঝতে আমার আর বাকি রইলো না, খুশি মনে কলকাতায় দিকে রওনা দিলাম।