07-01-2021, 11:35 AM
গাড়ীর মধ্যে আর কোনও কথা হয়না দুজনের। মাঝে রাস্তায় একবারের জন্য গাড়ি দাড় করিয়ে রাস্তার পাশের দোকান থেকে বুম্বার জন্য ভালো কিছু চকোলেট কিনে নিয়ে আসে ইন্দ্র। সুমিত্রাকে বোকারো তে তার মায়ের কাছে রেখে ফেরত চলে আসে ইন্দ্রজিত। সুমিত্রার মা মানে ইন্দ্রর শাশুড়ি তখনও মনে হয় আজকের ঘটনা নিয়ে কিছু জানেন না। গাড়ীর আওয়াজ শুনে বাড়ির বাইরে বেড়িয়ে এসে ইন্দ্রকে বাড়ির ভেতরে আসার জন্য ডাকেন। কিন্তু ইন্দ্র, কিছু কাজ আছে বলে বেড়িয়ে যায়। ড্রাইভ করতে করতেই প্রবাল কে ফোন করে ইন্দ্র। ডেকে নেয় তাকে নিজের অফিসে। আজ সে সাধারণত অফিস বন্ধ রাখে। কিন্তু ঘরে যেতে একটুও ইচ্ছে করে না ইন্দ্রজিতের। ঘরে গেলেও বাবা মায়ের এক গাদা প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে তাকে। কি বলবে সে তাঁদের? যে ঘটনা টা ঘটেছে, সেটা গুরুজনদের কে বোঝানো যাবে না। তার চেয়ে নিজের অফিসেই কিছুক্ষণ সময় কাটানো ঢের ভালো। প্রবালের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে নিজেকে একটু হাল্কা করতে চায় ইন্দ্রজিত।
অফিসের এসি টা চালিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে প্রবালের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে সে। কি দোষ করেছে সে? রাগে, মুখের চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে। আজ অব্দি জেনে কোনও অপরাধ করেনি সে। গুরুজনকে যথা সম্ভব সন্মান দিয়ে এসেছে। অভদ্র ভাবে কারও সাথে কথা বলতে বিশ্রী লাগে তার। মনে প্রানে এটাই বিশ্বাস করে সে যে, মানুষের মুখের ভাষাই আসল। ব্যাবসা করে রোজগার করে সে। জিভে সোনা রেখে কথা বলে সে। বাইরের মানুষগুলো কত ভালবাসে তাকে। কিন্তু নিজের ঘরে? যার থেকে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসা পাওয়ার কথা তার, তার কাছে চরম উপেক্ষিত সে। নাহহ……আর উপেক্ষা সহ্য করবেনা সে। একটা অব্যাক্ত বেদনা চোখের জল হয়ে গড়িয়ে পড়ে ইন্দ্রর। অনেক হয়েছে। অনেক চেষ্টা করেছে সে, সুমিত্রার সাথে যাতে তার সম্পর্ক টা বাকি আর পাঁচটা দম্পত্তির মতন সুখের হয়। কিন্তু কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না……বার বার চেষ্টা করেও।
“কি হল সাহেব, আজকে হটাত এই গরীব কে মনে পড়ে গেল তোর? আজ তো রবিবার ভাই………কি এমন হল রে ইন্দ্র”? ইন্দ্রর থমথমে মুখ দেখে কিছু একটা আন্দাজ করেছে হয়তো প্রবাল। পাশেই রাখা একটা চেয়ার টেনে বসতে গিয়েও ইন্দ্রর চোখের কোনে উপচে আসা অশ্রু দেখে ইন্দ্রর পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। ইন্দ্রর কাঁধে একটা হাত রেখে বলে ওঠে, “এমন অনেক কিছু সংসারে হয় রে ভাই। মন খারাপ করিস না। কি হয়েছে আমাকে একটু বল প্লিস, দেখবি মনটা একটু শান্ত হবে। পুরুষ মানুষ হয়ে কাঁদে নাকি রে পাগলা”? বেশ কিছুক্ষণ ইন্দ্র নিজের কপালে হাত দিয়ে বসে থেকে একটু একটু করে নিজেকে শান্ত করে। ধীরে ধীরে গত রাত থেকে সব কথা বলতে শুরু করলো প্রবাল কে কিন্তু ইচ্ছে করেই রাতের চ্যাটের অংশটা অতি সাবধান হয়ে বাদ দিল। না এই ব্যাপারটা তার একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। এটা কাউকে বলা চলবে না। সেটা আগেই মনে মনে ঠিক করে ফেলেছিল।
প্রবাল একটা সিগারেট জ্বালিয়ে একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে একটু গুছিয়ে বলতে শুরু করলো, “দেখ ভাই, এখন যা অবস্থা, তোদের বাড়িতে, তোকে আমার কিছু কথা মেনে চলতে হবে। তুই যদি আমার কথা মেনে চলিস তাহলে বলি, প্রথম কথা হচ্ছে, তুই সুমিত্রা কে আনতে যাবি না সে ও যতই তোকে বলুক। দ্বিতীয় ব্যাপার হচ্ছে, ওকে ফোন করা বা ওর ফোন ধরা বন্ধ কর। আর চেষ্টা কর জীবন টা কে নিজের মতন করে চালাতে। ও অথবা ওর বাড়ির লোক যেন তোকে আর ডোমিনেট করতে না পারে। বেশ কিছুদিন একটু দূরত্ব বজায় রাখ ওদের থেকে। এবারে আসি আসল কথাতে, তোকে তো আমি উপায় বলেছিলাম, এবার সময় এসেছে ওই ব্যাপারটা নিয়ে একটু ভাবার। জানিনা এখন ও তুই অনলাইনে চ্যাট করে কাউকে পেয়েছিস কি না? যদি পেয়ে থাকিস, তাহলে আরেকটু এগিয়ে যা। সুখ যদি তোর কাছে না আসে তাহলে, তুই সুখের কাছে যা। দেখবি মন ভালো হয়ে যাবে। তখন আর এত খারাপ লাগবে না। এত একাকী মনে হবে না নিজেকে। আর একটা কথা………… আজ তো তোর তেমন কাজ নেই। আজ সন্ধ্যে বেলায় চল দুজনে মিলে দু পেগ হুইস্কি খাব, দেখবি মনটা তরতাজা হয়ে উঠবে”।
“হুমমমমম…………আমিও তাই ভাবছি রে, প্রবাল। এত তো করলাম, সবার জন্য। নিজের ইচ্ছাকে বিসর্জন দিয়ে, বাবার ইচ্ছে, সুমিত্রার বাবার ইচ্ছে কে প্রাধান্য দিয়েছি। পরিবর্তে শুধু অপমান, অসন্মান, অশান্তি ছাড়া কিছুই পেলাম না। তবে আর না। এবার নিজের মতন করে বাঁচবো। একটু হাসি, একটু সুখের ওপর আমারও অধিকার আছে। দরকার হলে সেই অধরা সুখ কে ছিনিয়ে নিতে হবে আমাকে অন্যের থেকে। দেখা যাক এবারে ভাগ্যে কি আছে? পুরুষ মানুষ আমি। রাজপুত ক্ষত্রিয় আমি। অত সহজে হার মেনে নেওয়া আমার রক্তে নেই। যা হবে দেখা যাবে। থ্যাংকস প্রবাল”, কথাগুলো যেন তার বুক চিরে বেড়িয়ে আসে। চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে ইন্দ্রর। মনে মনে ঠিক করে নেয়, আজ থেকে ও একটু অন্যভাবে বাঁচতে চেষ্টা করবে। প্রবাল খুব একটা খারাপ বলে নি। দুপেগ গলায় ঢাললে হয়তো মনটা একটু শান্ত হবে। কিন্তু কোনোদিন উষ্ণ পানীয় মুখে তলেনি সে। যদি বাবা মা জানতে পারেন তাহলে দুঃখ পেতে পারেন। ওনাদের জানতে দেওয়া চলবে না। “তোকে বিকেলে ফোন করবো, তুই তৈরি থাকিস। এখন চল তোকে ছেড়ে দিচ্ছি গাড়িতে,” বলে উঠে পড়ে দুজনেই।
অফিসের এসি টা চালিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে প্রবালের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে সে। কি দোষ করেছে সে? রাগে, মুখের চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে। আজ অব্দি জেনে কোনও অপরাধ করেনি সে। গুরুজনকে যথা সম্ভব সন্মান দিয়ে এসেছে। অভদ্র ভাবে কারও সাথে কথা বলতে বিশ্রী লাগে তার। মনে প্রানে এটাই বিশ্বাস করে সে যে, মানুষের মুখের ভাষাই আসল। ব্যাবসা করে রোজগার করে সে। জিভে সোনা রেখে কথা বলে সে। বাইরের মানুষগুলো কত ভালবাসে তাকে। কিন্তু নিজের ঘরে? যার থেকে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসা পাওয়ার কথা তার, তার কাছে চরম উপেক্ষিত সে। নাহহ……আর উপেক্ষা সহ্য করবেনা সে। একটা অব্যাক্ত বেদনা চোখের জল হয়ে গড়িয়ে পড়ে ইন্দ্রর। অনেক হয়েছে। অনেক চেষ্টা করেছে সে, সুমিত্রার সাথে যাতে তার সম্পর্ক টা বাকি আর পাঁচটা দম্পত্তির মতন সুখের হয়। কিন্তু কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না……বার বার চেষ্টা করেও।
“কি হল সাহেব, আজকে হটাত এই গরীব কে মনে পড়ে গেল তোর? আজ তো রবিবার ভাই………কি এমন হল রে ইন্দ্র”? ইন্দ্রর থমথমে মুখ দেখে কিছু একটা আন্দাজ করেছে হয়তো প্রবাল। পাশেই রাখা একটা চেয়ার টেনে বসতে গিয়েও ইন্দ্রর চোখের কোনে উপচে আসা অশ্রু দেখে ইন্দ্রর পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। ইন্দ্রর কাঁধে একটা হাত রেখে বলে ওঠে, “এমন অনেক কিছু সংসারে হয় রে ভাই। মন খারাপ করিস না। কি হয়েছে আমাকে একটু বল প্লিস, দেখবি মনটা একটু শান্ত হবে। পুরুষ মানুষ হয়ে কাঁদে নাকি রে পাগলা”? বেশ কিছুক্ষণ ইন্দ্র নিজের কপালে হাত দিয়ে বসে থেকে একটু একটু করে নিজেকে শান্ত করে। ধীরে ধীরে গত রাত থেকে সব কথা বলতে শুরু করলো প্রবাল কে কিন্তু ইচ্ছে করেই রাতের চ্যাটের অংশটা অতি সাবধান হয়ে বাদ দিল। না এই ব্যাপারটা তার একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। এটা কাউকে বলা চলবে না। সেটা আগেই মনে মনে ঠিক করে ফেলেছিল।
প্রবাল একটা সিগারেট জ্বালিয়ে একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে একটু গুছিয়ে বলতে শুরু করলো, “দেখ ভাই, এখন যা অবস্থা, তোদের বাড়িতে, তোকে আমার কিছু কথা মেনে চলতে হবে। তুই যদি আমার কথা মেনে চলিস তাহলে বলি, প্রথম কথা হচ্ছে, তুই সুমিত্রা কে আনতে যাবি না সে ও যতই তোকে বলুক। দ্বিতীয় ব্যাপার হচ্ছে, ওকে ফোন করা বা ওর ফোন ধরা বন্ধ কর। আর চেষ্টা কর জীবন টা কে নিজের মতন করে চালাতে। ও অথবা ওর বাড়ির লোক যেন তোকে আর ডোমিনেট করতে না পারে। বেশ কিছুদিন একটু দূরত্ব বজায় রাখ ওদের থেকে। এবারে আসি আসল কথাতে, তোকে তো আমি উপায় বলেছিলাম, এবার সময় এসেছে ওই ব্যাপারটা নিয়ে একটু ভাবার। জানিনা এখন ও তুই অনলাইনে চ্যাট করে কাউকে পেয়েছিস কি না? যদি পেয়ে থাকিস, তাহলে আরেকটু এগিয়ে যা। সুখ যদি তোর কাছে না আসে তাহলে, তুই সুখের কাছে যা। দেখবি মন ভালো হয়ে যাবে। তখন আর এত খারাপ লাগবে না। এত একাকী মনে হবে না নিজেকে। আর একটা কথা………… আজ তো তোর তেমন কাজ নেই। আজ সন্ধ্যে বেলায় চল দুজনে মিলে দু পেগ হুইস্কি খাব, দেখবি মনটা তরতাজা হয়ে উঠবে”।
“হুমমমমম…………আমিও তাই ভাবছি রে, প্রবাল। এত তো করলাম, সবার জন্য। নিজের ইচ্ছাকে বিসর্জন দিয়ে, বাবার ইচ্ছে, সুমিত্রার বাবার ইচ্ছে কে প্রাধান্য দিয়েছি। পরিবর্তে শুধু অপমান, অসন্মান, অশান্তি ছাড়া কিছুই পেলাম না। তবে আর না। এবার নিজের মতন করে বাঁচবো। একটু হাসি, একটু সুখের ওপর আমারও অধিকার আছে। দরকার হলে সেই অধরা সুখ কে ছিনিয়ে নিতে হবে আমাকে অন্যের থেকে। দেখা যাক এবারে ভাগ্যে কি আছে? পুরুষ মানুষ আমি। রাজপুত ক্ষত্রিয় আমি। অত সহজে হার মেনে নেওয়া আমার রক্তে নেই। যা হবে দেখা যাবে। থ্যাংকস প্রবাল”, কথাগুলো যেন তার বুক চিরে বেড়িয়ে আসে। চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে ইন্দ্রর। মনে মনে ঠিক করে নেয়, আজ থেকে ও একটু অন্যভাবে বাঁচতে চেষ্টা করবে। প্রবাল খুব একটা খারাপ বলে নি। দুপেগ গলায় ঢাললে হয়তো মনটা একটু শান্ত হবে। কিন্তু কোনোদিন উষ্ণ পানীয় মুখে তলেনি সে। যদি বাবা মা জানতে পারেন তাহলে দুঃখ পেতে পারেন। ওনাদের জানতে দেওয়া চলবে না। “তোকে বিকেলে ফোন করবো, তুই তৈরি থাকিস। এখন চল তোকে ছেড়ে দিচ্ছি গাড়িতে,” বলে উঠে পড়ে দুজনেই।
তোমাকে খুঁজে বেড়াই