07-01-2021, 11:30 AM
দিনটা রবিবার। তাই আজকে একটু বেলা অব্দি ঘুমাবে বলে ঠিক করে রেখেছিল।
ঘুমটা আচমকাই ভেঙ্গে গেল ইন্দ্রর। ঘরের বাইরে গাড়ীর হর্নের বিকট আওয়াজে। ঘুমটা ভেঙ্গে গেলেও বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করে না তার। শুয়েই থাকে, পাশ বালিশ টা কে দুই পায়ের মাঝে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। হটাতই তার রুমের দরজায় দুম দুম করে, আওয়াজ করে, ধাক্কা মারতে থাকে কেও। মেজাজ টা খচরে যায় ইন্দ্রর। কে রে বাবা সকালে তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।
কি রে বাবা? দরজা খুলবে না নাকি? সুমিত্রার গলার কর্কশ আওয়াজ ভেসে আসে ইন্দ্রর কানে। চমকে ওঠে ইন্দ্র। দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ঘুমন্ত চোখে। সকাল নয়টা। হুড়মুড় করে বিছানায় উঠে বসে ইন্দ্র। একটু সময় লাগে ঘুমের রেশ টা কাটতে। চোখ খুলতেই নজর পড়ে বিছানার চাদরের ওপর। বিছানার বিরাট একটা অংশ ভিজে চ্যাট চ্যাট করছে। ছ্যাঁত করে ওঠে ইন্দ্রর বুকটা। তারমানে ঘুমের মধ্যেই তাঁর বীর্যপাত হয়ে গেছে।ইসসসস...... যদি ব্যাপার টা সুমিত্রার চোখে পড়ে তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। ঘরে একটা মারাত্মক অশান্তি সৃষ্টি করবে সে। কতকিছুই না সে ভেবে বসবে। বিপদের একটা অশনি সংকেত যেন ইন্দ্রের মস্তিস্কের কোষ গুলোকে ছিঁড়ে ফেলতে থাকে। ওইদিকে দরজার বাইরে সুমিত্রা চিৎকার করেই চলেছে। কিংকর্তব্যবিমুড় হয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর, আরেকটা চাদর নিয়ে বিছানায় ভেজা অংশ টা ডেকে দেয় ইন্দ্র। ভাগ্যে যা আছে সেটাই হবে।আর কোনও উপায় নেই। ইসসসস.....খুব গভীর ভাবে ঘুমিয়ে পড়েছিল সে। কোনরকমে দরজা খুলতেই ঝড়ের মতন ঘরে প্রবেশ করে সুমিত্রা। ভেতরে ঢুকেই চিৎকার করে বলতে থাকে, কি করছিলে কি? এত সময় কেন লাগছিল তোমার দরজা খুলতে? অন্য কাউকে নিয়ে শুয়েছিলে নাকি রাত্রে? ইন্দ্র একবার চুপ করতে বলার পরেও থামে না সুমিত্রা। একই সুরে বলতে থাকে, "শোনো...... মা অসুস্থ...... মা কে ডাক্তার দেখাতে হবে। আমাকেও ওখানে কিছুদিন থাকতে হবে। তুমি দয়া করে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে আমাকে বোকারো তে ছেড়ে আসবে। আমাদের ড্রাইভার টার অন্য কিছু কাজ আছে। সেইজন্য তাকে ছেড়ে দিয়েছি। এখন বোকার মতন তাকিয়ে না থেকে তাড়াতাড়ি তৈরি হবে যাও"। সুমিত্রার জন্য তার ঘুমের তেরোটা তো বেজে গেছিলো আগেই, এখন আবার সাত তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে কার বের করে বোকারো যেতে হবে। ভাবতেই মেজাজ টা খচরে যায় ইন্দ্রর। কিন্তু মুখে কিছু বলে না সে। কেননা কিছু বললেই আবার কথা বাড়বে, আর সুমিত্রার যা মুখ, আর মুখের ভাষা, কিছুই তো আটকায় না। নিজে যা ভাবে, সেটাই করে, কারও কথা মেনে চলা তার ঠিকুজি তে লেখা নেই। প্রচণ্ড উদ্ধত স্বভাব বলতে যা বোঝায় আর কি।
সুমিত্রা কথাগুলো বলেই নিজের আলমারি খুলে নিজের প্রয়োজনীয় জামা কাপড়, জিনিষ পত্র গুছিয়ে ব্যাগে পুড়তে ব্যাস্ত হয়ে যায় সুমিত্রা। অগত্যা একটা টাওয়েল নিয়ে বাথরুমে ঢুকে যায় ইন্দ্র। সাধারণত রবিবারে নিজের প্রতি একটু যত্ন নেয় ইন্দ্রজিত। অনেকক্ষণ ধরে স্নান, শেভিং সব কিছু করে সে। আজকে কিছুই হবেনা। কোনও রকমে স্নান করেই বেরোতে হবে তাকে। তবে একটা ব্যাপারে একটু স্বাস্তি পায় এটা ভেবে যে, সুমিত্রা বেশ কিছুদিন ঘরে থাকবে না। সপ্তাহের অন্যদিনে একগাদা কাজ থাকে তার, তাই নিজের প্রতি তেমন করে যত্ন নেওয়া হয়না।
বাথরুমে ঢুকেই আগে হাতজোড় করে ঠাকুরের উদ্দেশ্যে বলে, হে ঠাকুর, সুমিত্রার চোখে যেন বিছানার চাদরটা না পড়ে। কিন্তু কথায় আছে, ভবিতব্য কে কেও কি আটকাতে পারে?
“এই যে শুনছো তুমি? বাথরুমের দরজা টা একটু খোলো তো, একটু দরকার আছে তোমার সাথে”। সুমিত্রার বজ্র কঠিন গলার আওয়াজ শুনে চমকে ওঠে ইন্দ্র, বাথরুমের ভেতরে। বাথরুমের দরজায় দুম দুম করে বারদুয়েক দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ। বাথরুমের ভেতরে বেশী শব্দ না করে চুপ করেই দাঁড়িয়েছিল ইন্দ্র। বাথরুমের বাইরের আবহাওয়া টা বোঝার চেষ্টা করছিল। বাথরুমের দরজায় সুমিত্রার গলার আওয়াজ শুনে সুমিত্রার কথার কি উত্তর দেবে সেটা মনে মনে ঠিক করে নেওয়ার আপ্রান চেষ্টা করতে থাকে ইন্দ্র। কিন্তু মাথায় কিছুই আসে না ইন্দ্রর। মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয় ইন্দ্রর। কোনওরকমে ভেতর থেকে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে টা কি? শান্তি তে কি স্নান ও করতে দেবে না? যা বলার, বাইরে থেকেই বল, এখন আমি খুলতে পারবোনা। অসুবিধা আছে”। আবার দুম দুম করে বাথরুমের দরজায় আঘাত করে সুমিত্রা। একরকম বাধ্য হয়েই বাথরুমের দরজা খুলে দেয় ইন্দ্র। নিজের মন কে শক্ত করে ইন্দ্রজিত সিংহ, বুঝতে পারে যে কারনে অশান্তির আশঙ্কা ছিল, সেটাই হয়েছে।
বিছানার চাদর টা দলা করে ছুড়ে দেয় ইন্দ্রজিতের গায়ে সুমিত্রা।
“কি এইগুলো? কি করেছো তুমি আমার বিছানাতে? রাত্রে আমার বিছানাতে কার সাথে যৌনলীলা চলেছে তোমার? ছি ছি……… এইজন্যই আমি তোমাকে ছুই না……তোমাকে ঘেন্না করি আমি মিস্টার ইন্দ্রজিত সিংহ”। রাগে থর থর করে কাঁপতে থাকে সুমিত্রা। বাথরুমের সামনে এত চিৎকার শুনে সুনন্দা দেবীও পায়ে পায়ে এসে দাঁড়িয়েছেন। অসুস্থ বাবাও কোনও রকমে এসে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু সুমিত্রার ওপর যেন কোনও অপদেবতা ভর করেছে। কে শুনছে, সে কি বলে চলেছে, কোনও দিকে তার যেন কোনও হুঁশ নেই। সাহসের ওপর একটু ভর করে সুনন্দা দেবী সুমিত্রা কে চুপ করাতে যান। কেননা যেমন ভাষা সুমিত্রার মুখ থেকে বেড়িয়ে আসছে, তেমন কোনও ভদ্র ঘরের বৌয়ের মুখ থেকে সাধারণত বেরোয় না। সুমিত্রা দেবী একটু এগিয়ে এসে, সুমিত্রা কে একটু শান্ত হতে বলতেই, সুমিত্রা দেবী কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় সুমিত্রা। সেই ধাক্কা সামলাতে না পেরে পড়ে যান সুনন্দা দেবী। মাথাটা ডাইনিং টেবিলের কোনাতে লেগে কেটে যায় অনেকটা সুনন্দা দেবীর। রক্তের ধারা গড়িয়ে পড়ে কপাল বেয়ে। উফফফ………মা গো…… বলে একটা আর্তনাদ বেড়িয়ে আসে ওনার মুখ থেকে। একটা টাওয়েল পড়ে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে এসেছিল ইন্দ্র। মা কে ওই অবস্থায় দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনা ইন্দ্র। রাগে কাঁপতে থাকে সে। শরীরের পেশীগুলো যেন বিদ্রোহ ঘোষণা করতে চাইছে। এই মুহূর্তে ওর ইচ্ছা করছে, সুমিত্রা কে এক চড়ে গাল লাল করে দিতে। কিন্তু নিজেকে একটু হলেও সামলে চিৎকার করে ওঠে, “কি বলতে চাইছ তুমি, সুমিত্রা? কি করেছি আমি? দিনের পর দিন, মাসের পর মাস আমাদের দুজনের মধ্যে কোনও শারীরিক সম্পর্ক নেই, সেটা তো তুমি জানোই। তবে আমিও একটা রক্ত মাংসের তৈরি মানুষ। আমারও মন আছে, আমারও শরীর আছে, আমারও চাহিদা আছে। তবে আমি এতোটাও নীচে নেমে যাইনি না যে তুমি ঘরে নেই বলে আমি কোনও বারবনিতাকে নিজের ঘরে ডেকে তাকে আমি নিজের শয্যাসঙ্গী করবো। তবে তুমি যে ভাবে ব্যাপারটা চিন্তা করে আজ আমার মায়ের গায়ে হাত তুললে, তোমাকে আমি সহজে ক্ষমা করবোনা, এটা কথা দিলাম আমি তোমাকে। তুমি কি ভেবেছ? তুমি যা বলবে তাই আমাকে আর আমাদের মুখ বন্ধ করে সহ্য করে যেতে হবে চিরকাল? আজ তুমি যা করলে, তারপরে আর তোমাকে স্পর্শ করা তো দূরের কথা, তোমার সাথে এক বিছানায় শোয়া টাও আমি আজ থেকে বন্ধ করলাম।
আহত সাপের মতন ফোঁস করে সুমিত্রা…… চিৎকার করে বলে ওঠে, “আরে যাও……কেই বা তোমার সাথে থাকতে চায়? কেই বা শুতে চায় তোমার সাথে? ঘেন্না করি তোমাকে আমি। ঘেন্না করি তোমার মা কে আমি। তোমার সাতপুরুষের ভাগ্য ভালো যে আমার মতন মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে হয়েছে। তানাহলে তোমার মতন ছেলে আমাদের বাড়িতে ড্রাইভারের কাজ করে বুঝলে”।
ঘটনাটা যখন আরও বীভৎস আকার ধারন করতে চলেছে, সেই সময় সবার নজর গিয়ে পড়ে, ভয়ে চুপ করে একপাশে দাঁড়ানো বুম্বার ওপর। কখন যে নিঃশব্দে এসে সে তার প্রিয় থাম্মার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, সেটা কেও লক্ষ্য করেনি।
“কি হয়েছে মাম্মা………থাম্মার? তুমি থাম্মা কে মারলে কেন মাম্মা”? বুম্বার প্রশ্নে সবাই নিজের সম্বিত ফিরে পায়। সুনন্দা দেবী দু হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরতে যায় বুম্বা কে কিন্তু সুমিত্রা বুম্বার এক হাত ধরে টানতে টানতে নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। ইন্দ্রজিত ও এগিয়ে এসে মা কে ধরে মেঝের থেকে উঠিয়ে চেয়ারে বসায়। রেফ্রিজেরেটার খুলে বরফ বের করে এনে মায়ের কপালে লাগিয়ে দেয়।
বাথরুমে ঢুকে অনেকক্ষণ চুপ করে শাওয়ার খুলে শীতল জলের ফোয়ারার নীচে দাঁড়িয়ে থাকে। গ্রীক দেবতার মতন সুন্দর শরীর বেয়ে ফোয়ারার জল গড়িয়ে পড়তে থাকে। নাহহ……অনেক অপমান সহ্য করেছে সে। আর না। মনে মনে একবার মনে মনে ভাবে, সুমিত্রার সাথে যদি তার ডিভোর্স হয়, তাহলে কেমন হয়? ব্যাপারটা ভাবতেই তার চিন্তাধারা সেই দিকে প্রবাহিত হতে গিয়েও থেমে যায়। বুম্বা……বুম্বার কি হবে তাহলে? নিজের সন্তানের কাছে দোষী সাব্যস্ত হতে চায় না ইন্দ্রর। যদি একবার বুম্বার কচি মস্তিস্কে সুমিত্রা এটা ঢুকিয়ে দিতে সফল হয় যে তার বাবা খারাপ লোক আর তার বাবাই তাকে ছেড়ে চলে গেছে, তাহলে সেটা তার ছেলের মাথা থেকে বের হতে প্রচুর সময় লেগে যাবে। ব্যাপারটা বুম্বার মাথায় সারাজীবন থেকেও যেতে পারে। নাহহ…… ডিভোর্স নেওয়া যাবে না। তার চেয়ে নিজের জীবন নিজের মতন করে কাটানো ঢের ভালো। থাকুক সুমিত্রা একা। দরকার নেই সুমিত্রার, তার জীবনে। যে কথা সে আজ দিয়েছে সুমিত্রা কে, সেই কথাটাই থাকুক। এমনিতেও সুমিত্রার সাথে তার যৌন জীবনের ইতি বহু আগেই হয়ে গেছে। মনে মনে ঘেন্না ধরে গেছে সুমিত্রাকে। মেয়ে মানুষ যে এমন মুখোরা হয়, সেটা জানা ছিল না ইন্দ্রর। একটা মেয়েমানুষই পারে সংসার কে শান্তিতে গুছিয়ে নিতে, আবার একটা মেয়ে মানুষই পারে একটা সংসার কে তছনছ করে দিতে। দ্বিতীয় টাই যেন ঘটতে চলেছে তার জীবনে। আজ যেন একটা অলিখিত, অদৃশ্য লাইন টানা হয়ে গেল দুজনের মধ্যে।
ঘুমটা আচমকাই ভেঙ্গে গেল ইন্দ্রর। ঘরের বাইরে গাড়ীর হর্নের বিকট আওয়াজে। ঘুমটা ভেঙ্গে গেলেও বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করে না তার। শুয়েই থাকে, পাশ বালিশ টা কে দুই পায়ের মাঝে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। হটাতই তার রুমের দরজায় দুম দুম করে, আওয়াজ করে, ধাক্কা মারতে থাকে কেও। মেজাজ টা খচরে যায় ইন্দ্রর। কে রে বাবা সকালে তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।
কি রে বাবা? দরজা খুলবে না নাকি? সুমিত্রার গলার কর্কশ আওয়াজ ভেসে আসে ইন্দ্রর কানে। চমকে ওঠে ইন্দ্র। দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ঘুমন্ত চোখে। সকাল নয়টা। হুড়মুড় করে বিছানায় উঠে বসে ইন্দ্র। একটু সময় লাগে ঘুমের রেশ টা কাটতে। চোখ খুলতেই নজর পড়ে বিছানার চাদরের ওপর। বিছানার বিরাট একটা অংশ ভিজে চ্যাট চ্যাট করছে। ছ্যাঁত করে ওঠে ইন্দ্রর বুকটা। তারমানে ঘুমের মধ্যেই তাঁর বীর্যপাত হয়ে গেছে।ইসসসস...... যদি ব্যাপার টা সুমিত্রার চোখে পড়ে তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। ঘরে একটা মারাত্মক অশান্তি সৃষ্টি করবে সে। কতকিছুই না সে ভেবে বসবে। বিপদের একটা অশনি সংকেত যেন ইন্দ্রের মস্তিস্কের কোষ গুলোকে ছিঁড়ে ফেলতে থাকে। ওইদিকে দরজার বাইরে সুমিত্রা চিৎকার করেই চলেছে। কিংকর্তব্যবিমুড় হয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর, আরেকটা চাদর নিয়ে বিছানায় ভেজা অংশ টা ডেকে দেয় ইন্দ্র। ভাগ্যে যা আছে সেটাই হবে।আর কোনও উপায় নেই। ইসসসস.....খুব গভীর ভাবে ঘুমিয়ে পড়েছিল সে। কোনরকমে দরজা খুলতেই ঝড়ের মতন ঘরে প্রবেশ করে সুমিত্রা। ভেতরে ঢুকেই চিৎকার করে বলতে থাকে, কি করছিলে কি? এত সময় কেন লাগছিল তোমার দরজা খুলতে? অন্য কাউকে নিয়ে শুয়েছিলে নাকি রাত্রে? ইন্দ্র একবার চুপ করতে বলার পরেও থামে না সুমিত্রা। একই সুরে বলতে থাকে, "শোনো...... মা অসুস্থ...... মা কে ডাক্তার দেখাতে হবে। আমাকেও ওখানে কিছুদিন থাকতে হবে। তুমি দয়া করে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে আমাকে বোকারো তে ছেড়ে আসবে। আমাদের ড্রাইভার টার অন্য কিছু কাজ আছে। সেইজন্য তাকে ছেড়ে দিয়েছি। এখন বোকার মতন তাকিয়ে না থেকে তাড়াতাড়ি তৈরি হবে যাও"। সুমিত্রার জন্য তার ঘুমের তেরোটা তো বেজে গেছিলো আগেই, এখন আবার সাত তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে কার বের করে বোকারো যেতে হবে। ভাবতেই মেজাজ টা খচরে যায় ইন্দ্রর। কিন্তু মুখে কিছু বলে না সে। কেননা কিছু বললেই আবার কথা বাড়বে, আর সুমিত্রার যা মুখ, আর মুখের ভাষা, কিছুই তো আটকায় না। নিজে যা ভাবে, সেটাই করে, কারও কথা মেনে চলা তার ঠিকুজি তে লেখা নেই। প্রচণ্ড উদ্ধত স্বভাব বলতে যা বোঝায় আর কি।
সুমিত্রা কথাগুলো বলেই নিজের আলমারি খুলে নিজের প্রয়োজনীয় জামা কাপড়, জিনিষ পত্র গুছিয়ে ব্যাগে পুড়তে ব্যাস্ত হয়ে যায় সুমিত্রা। অগত্যা একটা টাওয়েল নিয়ে বাথরুমে ঢুকে যায় ইন্দ্র। সাধারণত রবিবারে নিজের প্রতি একটু যত্ন নেয় ইন্দ্রজিত। অনেকক্ষণ ধরে স্নান, শেভিং সব কিছু করে সে। আজকে কিছুই হবেনা। কোনও রকমে স্নান করেই বেরোতে হবে তাকে। তবে একটা ব্যাপারে একটু স্বাস্তি পায় এটা ভেবে যে, সুমিত্রা বেশ কিছুদিন ঘরে থাকবে না। সপ্তাহের অন্যদিনে একগাদা কাজ থাকে তার, তাই নিজের প্রতি তেমন করে যত্ন নেওয়া হয়না।
বাথরুমে ঢুকেই আগে হাতজোড় করে ঠাকুরের উদ্দেশ্যে বলে, হে ঠাকুর, সুমিত্রার চোখে যেন বিছানার চাদরটা না পড়ে। কিন্তু কথায় আছে, ভবিতব্য কে কেও কি আটকাতে পারে?
“এই যে শুনছো তুমি? বাথরুমের দরজা টা একটু খোলো তো, একটু দরকার আছে তোমার সাথে”। সুমিত্রার বজ্র কঠিন গলার আওয়াজ শুনে চমকে ওঠে ইন্দ্র, বাথরুমের ভেতরে। বাথরুমের দরজায় দুম দুম করে বারদুয়েক দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ। বাথরুমের ভেতরে বেশী শব্দ না করে চুপ করেই দাঁড়িয়েছিল ইন্দ্র। বাথরুমের বাইরের আবহাওয়া টা বোঝার চেষ্টা করছিল। বাথরুমের দরজায় সুমিত্রার গলার আওয়াজ শুনে সুমিত্রার কথার কি উত্তর দেবে সেটা মনে মনে ঠিক করে নেওয়ার আপ্রান চেষ্টা করতে থাকে ইন্দ্র। কিন্তু মাথায় কিছুই আসে না ইন্দ্রর। মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয় ইন্দ্রর। কোনওরকমে ভেতর থেকে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে টা কি? শান্তি তে কি স্নান ও করতে দেবে না? যা বলার, বাইরে থেকেই বল, এখন আমি খুলতে পারবোনা। অসুবিধা আছে”। আবার দুম দুম করে বাথরুমের দরজায় আঘাত করে সুমিত্রা। একরকম বাধ্য হয়েই বাথরুমের দরজা খুলে দেয় ইন্দ্র। নিজের মন কে শক্ত করে ইন্দ্রজিত সিংহ, বুঝতে পারে যে কারনে অশান্তির আশঙ্কা ছিল, সেটাই হয়েছে।
বিছানার চাদর টা দলা করে ছুড়ে দেয় ইন্দ্রজিতের গায়ে সুমিত্রা।
“কি এইগুলো? কি করেছো তুমি আমার বিছানাতে? রাত্রে আমার বিছানাতে কার সাথে যৌনলীলা চলেছে তোমার? ছি ছি……… এইজন্যই আমি তোমাকে ছুই না……তোমাকে ঘেন্না করি আমি মিস্টার ইন্দ্রজিত সিংহ”। রাগে থর থর করে কাঁপতে থাকে সুমিত্রা। বাথরুমের সামনে এত চিৎকার শুনে সুনন্দা দেবীও পায়ে পায়ে এসে দাঁড়িয়েছেন। অসুস্থ বাবাও কোনও রকমে এসে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু সুমিত্রার ওপর যেন কোনও অপদেবতা ভর করেছে। কে শুনছে, সে কি বলে চলেছে, কোনও দিকে তার যেন কোনও হুঁশ নেই। সাহসের ওপর একটু ভর করে সুনন্দা দেবী সুমিত্রা কে চুপ করাতে যান। কেননা যেমন ভাষা সুমিত্রার মুখ থেকে বেড়িয়ে আসছে, তেমন কোনও ভদ্র ঘরের বৌয়ের মুখ থেকে সাধারণত বেরোয় না। সুমিত্রা দেবী একটু এগিয়ে এসে, সুমিত্রা কে একটু শান্ত হতে বলতেই, সুমিত্রা দেবী কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় সুমিত্রা। সেই ধাক্কা সামলাতে না পেরে পড়ে যান সুনন্দা দেবী। মাথাটা ডাইনিং টেবিলের কোনাতে লেগে কেটে যায় অনেকটা সুনন্দা দেবীর। রক্তের ধারা গড়িয়ে পড়ে কপাল বেয়ে। উফফফ………মা গো…… বলে একটা আর্তনাদ বেড়িয়ে আসে ওনার মুখ থেকে। একটা টাওয়েল পড়ে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে এসেছিল ইন্দ্র। মা কে ওই অবস্থায় দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনা ইন্দ্র। রাগে কাঁপতে থাকে সে। শরীরের পেশীগুলো যেন বিদ্রোহ ঘোষণা করতে চাইছে। এই মুহূর্তে ওর ইচ্ছা করছে, সুমিত্রা কে এক চড়ে গাল লাল করে দিতে। কিন্তু নিজেকে একটু হলেও সামলে চিৎকার করে ওঠে, “কি বলতে চাইছ তুমি, সুমিত্রা? কি করেছি আমি? দিনের পর দিন, মাসের পর মাস আমাদের দুজনের মধ্যে কোনও শারীরিক সম্পর্ক নেই, সেটা তো তুমি জানোই। তবে আমিও একটা রক্ত মাংসের তৈরি মানুষ। আমারও মন আছে, আমারও শরীর আছে, আমারও চাহিদা আছে। তবে আমি এতোটাও নীচে নেমে যাইনি না যে তুমি ঘরে নেই বলে আমি কোনও বারবনিতাকে নিজের ঘরে ডেকে তাকে আমি নিজের শয্যাসঙ্গী করবো। তবে তুমি যে ভাবে ব্যাপারটা চিন্তা করে আজ আমার মায়ের গায়ে হাত তুললে, তোমাকে আমি সহজে ক্ষমা করবোনা, এটা কথা দিলাম আমি তোমাকে। তুমি কি ভেবেছ? তুমি যা বলবে তাই আমাকে আর আমাদের মুখ বন্ধ করে সহ্য করে যেতে হবে চিরকাল? আজ তুমি যা করলে, তারপরে আর তোমাকে স্পর্শ করা তো দূরের কথা, তোমার সাথে এক বিছানায় শোয়া টাও আমি আজ থেকে বন্ধ করলাম।
আহত সাপের মতন ফোঁস করে সুমিত্রা…… চিৎকার করে বলে ওঠে, “আরে যাও……কেই বা তোমার সাথে থাকতে চায়? কেই বা শুতে চায় তোমার সাথে? ঘেন্না করি তোমাকে আমি। ঘেন্না করি তোমার মা কে আমি। তোমার সাতপুরুষের ভাগ্য ভালো যে আমার মতন মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে হয়েছে। তানাহলে তোমার মতন ছেলে আমাদের বাড়িতে ড্রাইভারের কাজ করে বুঝলে”।
ঘটনাটা যখন আরও বীভৎস আকার ধারন করতে চলেছে, সেই সময় সবার নজর গিয়ে পড়ে, ভয়ে চুপ করে একপাশে দাঁড়ানো বুম্বার ওপর। কখন যে নিঃশব্দে এসে সে তার প্রিয় থাম্মার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, সেটা কেও লক্ষ্য করেনি।
“কি হয়েছে মাম্মা………থাম্মার? তুমি থাম্মা কে মারলে কেন মাম্মা”? বুম্বার প্রশ্নে সবাই নিজের সম্বিত ফিরে পায়। সুনন্দা দেবী দু হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরতে যায় বুম্বা কে কিন্তু সুমিত্রা বুম্বার এক হাত ধরে টানতে টানতে নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। ইন্দ্রজিত ও এগিয়ে এসে মা কে ধরে মেঝের থেকে উঠিয়ে চেয়ারে বসায়। রেফ্রিজেরেটার খুলে বরফ বের করে এনে মায়ের কপালে লাগিয়ে দেয়।
বাথরুমে ঢুকে অনেকক্ষণ চুপ করে শাওয়ার খুলে শীতল জলের ফোয়ারার নীচে দাঁড়িয়ে থাকে। গ্রীক দেবতার মতন সুন্দর শরীর বেয়ে ফোয়ারার জল গড়িয়ে পড়তে থাকে। নাহহ……অনেক অপমান সহ্য করেছে সে। আর না। মনে মনে একবার মনে মনে ভাবে, সুমিত্রার সাথে যদি তার ডিভোর্স হয়, তাহলে কেমন হয়? ব্যাপারটা ভাবতেই তার চিন্তাধারা সেই দিকে প্রবাহিত হতে গিয়েও থেমে যায়। বুম্বা……বুম্বার কি হবে তাহলে? নিজের সন্তানের কাছে দোষী সাব্যস্ত হতে চায় না ইন্দ্রর। যদি একবার বুম্বার কচি মস্তিস্কে সুমিত্রা এটা ঢুকিয়ে দিতে সফল হয় যে তার বাবা খারাপ লোক আর তার বাবাই তাকে ছেড়ে চলে গেছে, তাহলে সেটা তার ছেলের মাথা থেকে বের হতে প্রচুর সময় লেগে যাবে। ব্যাপারটা বুম্বার মাথায় সারাজীবন থেকেও যেতে পারে। নাহহ…… ডিভোর্স নেওয়া যাবে না। তার চেয়ে নিজের জীবন নিজের মতন করে কাটানো ঢের ভালো। থাকুক সুমিত্রা একা। দরকার নেই সুমিত্রার, তার জীবনে। যে কথা সে আজ দিয়েছে সুমিত্রা কে, সেই কথাটাই থাকুক। এমনিতেও সুমিত্রার সাথে তার যৌন জীবনের ইতি বহু আগেই হয়ে গেছে। মনে মনে ঘেন্না ধরে গেছে সুমিত্রাকে। মেয়ে মানুষ যে এমন মুখোরা হয়, সেটা জানা ছিল না ইন্দ্রর। একটা মেয়েমানুষই পারে সংসার কে শান্তিতে গুছিয়ে নিতে, আবার একটা মেয়ে মানুষই পারে একটা সংসার কে তছনছ করে দিতে। দ্বিতীয় টাই যেন ঘটতে চলেছে তার জীবনে। আজ যেন একটা অলিখিত, অদৃশ্য লাইন টানা হয়ে গেল দুজনের মধ্যে।
তোমাকে খুঁজে বেড়াই