06-01-2021, 10:18 PM
#অন্য_রূপকথা
এই হতচ্ছাড়া করোনা টা এইবছর টা একদম শেষ করে দিল! দুর্গাপুজো, কালীপুজো, ঈদের আনন্দ মাটি করে এবার ক্রিসমাসে যে আনন্দ করব, সে গুড়েও বালি (না বাপু, আমি সোশ্যাল ডিসটেন্সিং ভেঙে পার্ক স্ট্রিটে যাব না)! প্রতিবছর পঁচিশ তারিখ আমাদের বাড়ির কাছের 'নির্মলা মাতা মারিয়া গির্জা'য় যাই...কী সুন্দর করে সাজানো হয় সবকিছু ওখানে... লাল নীল টুনি দিয়ে...কাগজের শিকল বানিয়ে...আর ছোট্ট ছোট্ট তাঁবুর ভিতরে বেথলহেম বানানো হয়, আস্তাবল বানানো হয়... দেখে বারবার মনে হয় এ যেন...কংসের কারাগারের দৃশ্যান্তর... কেষ্ট আর খৃষ্ট...মিলে মিশে এক হয়ে যান...।
কিন্তু এই 'নিউ নর্ম্যাল' দিনে চার্চে ঢোকার উপায় নেই। তাই গ্রিলের ফাঁক দিয়েই সাজানো দেখছিলাম হাঁ করে! হঠাৎ দেখি, আমার পাশে একটা ছোট্ট বাচ্চা দাঁড়িয়ে আছে। পথশিশু। এই শীতেও গায়ে ছেঁড়াখোঁড়া একটা মাটি মাটি সোয়েটার। চুল, মুখ সব ই মাটি মাটি, মুখে মাস্ক নেই। ও ও হাঁ করেই সাজানো দেখছে ভিতরের।
খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে বাড়ি আসার জন্য রাস্তার দিকে পা বাড়াতে যাব, হঠাৎ ছেলেটি বলে উঠল "আচ্ছা, ওরা কবে এগুলো ভেঙে দেবে?"
প্রথমে খুব অবাক হয়ে গেছিলাম। তারপর ভাবলাম ও বোধহয় রোজ একবার করে দেখতে আসবে। আমার ই মতো প্রায়! তাই বললাম "এক তারিখ অবধি তো থাকবেই...তারপর জানি না।"
ছেলেটি গম্ভীর মুখে বলল "তাহলে আর কতদিন হয়?"
আমিও গম্ভীর ভাবে বললাম "আর ছয়দিন ধর।"
ছেলেটা মাথা নেড়ে জিজ্ঞেস করল "এরা তো সব ফেলে দেবে, তাই না? আমি চাইলে আমাকে দেবে না?"
ভাবলাম ছোট্ট পুতুল- মডেল নিতে চায় ও। তাই কিন্তু কিন্তু করে বললাম "তা তো জানি না।"
ছেলেটি আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। সামনের দুটো দাঁতই ফোকলা। তারপর বলল "আমি সকালেই চলে আসব। তারপর খড় গুলো নিয়ে যাব।"
পুতুল না? খড়?
খুব অবাক হয়ে তাকালাম। ফোকলা -রাম হেসে বলল "দেখছ না আজ থেকে আবার ঠান্ডা পড়েছে? কুত্তাগুলোর জন্য পেতে দেব...ওরা একটু আরামে ঘুমোবে। খুব কষ্ট পাচ্ছে ওরা গো...ওরাই তো আমাদের পাহারা দেয়..."
অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। 'কুত্তা' শব্দটা কানে লাগা সত্ত্বেও...মনে হলো...
প্রতিবার এক ভুল করি, তাই আজ আকুল হয়ে জিজ্ঞেস করলাম "এই এই, তোর নাম কি রে? কোথায় থাকিস?"
উত্তরে জানাল ওর নাম 'রাজু শেখ', থাকে গির্জার কাছে, ক্যারি রোডের কাছের এক বস্তিতে। জরির কাজ করে আব্বু, আম্মুর 'মাথা খারাপ'। আব্বু খুব রাগী। বলতে বলতে আবার একটু ফোকলা হেসে চলে গেল।
আর, আমি ভাবছিলাম... বস্তিতে থাকে, যেতে -আসতে একবার দুবার দেখেছি এলাকাটিকে...অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর...নোংরা পরিবেশ...সেখানের একজন, নিজের জন্য তো ফ্লেক্স গুলোও চাইতে পারত...তা না করে খড়...সারমেয়রা কষ্ট পাচ্ছে বলে...
আর, কী অপরূপ আমাদের দেশ! রাজু শেখ যাবে মারিয়া গির্জায় কেষ্টর মতো করে খৃষ্টের জন্মবৃত্তান্ত সাজানো তাঁবুর ঘাস নিয়ে এমন প্রানীদের কষ্ট লাঘব করতে...যারা সব ধর্মের ঊর্ধে।
কলকাতার যীশুর হাতে...উঠে আসবে প্রভু যীশুর একটা অংশ...
আহা রে জীবন!
বাহ্ রে এই জীবন!
এই হতচ্ছাড়া করোনা টা এইবছর টা একদম শেষ করে দিল! দুর্গাপুজো, কালীপুজো, ঈদের আনন্দ মাটি করে এবার ক্রিসমাসে যে আনন্দ করব, সে গুড়েও বালি (না বাপু, আমি সোশ্যাল ডিসটেন্সিং ভেঙে পার্ক স্ট্রিটে যাব না)! প্রতিবছর পঁচিশ তারিখ আমাদের বাড়ির কাছের 'নির্মলা মাতা মারিয়া গির্জা'য় যাই...কী সুন্দর করে সাজানো হয় সবকিছু ওখানে... লাল নীল টুনি দিয়ে...কাগজের শিকল বানিয়ে...আর ছোট্ট ছোট্ট তাঁবুর ভিতরে বেথলহেম বানানো হয়, আস্তাবল বানানো হয়... দেখে বারবার মনে হয় এ যেন...কংসের কারাগারের দৃশ্যান্তর... কেষ্ট আর খৃষ্ট...মিলে মিশে এক হয়ে যান...।
কিন্তু এই 'নিউ নর্ম্যাল' দিনে চার্চে ঢোকার উপায় নেই। তাই গ্রিলের ফাঁক দিয়েই সাজানো দেখছিলাম হাঁ করে! হঠাৎ দেখি, আমার পাশে একটা ছোট্ট বাচ্চা দাঁড়িয়ে আছে। পথশিশু। এই শীতেও গায়ে ছেঁড়াখোঁড়া একটা মাটি মাটি সোয়েটার। চুল, মুখ সব ই মাটি মাটি, মুখে মাস্ক নেই। ও ও হাঁ করেই সাজানো দেখছে ভিতরের।
খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে বাড়ি আসার জন্য রাস্তার দিকে পা বাড়াতে যাব, হঠাৎ ছেলেটি বলে উঠল "আচ্ছা, ওরা কবে এগুলো ভেঙে দেবে?"
প্রথমে খুব অবাক হয়ে গেছিলাম। তারপর ভাবলাম ও বোধহয় রোজ একবার করে দেখতে আসবে। আমার ই মতো প্রায়! তাই বললাম "এক তারিখ অবধি তো থাকবেই...তারপর জানি না।"
ছেলেটি গম্ভীর মুখে বলল "তাহলে আর কতদিন হয়?"
আমিও গম্ভীর ভাবে বললাম "আর ছয়দিন ধর।"
ছেলেটা মাথা নেড়ে জিজ্ঞেস করল "এরা তো সব ফেলে দেবে, তাই না? আমি চাইলে আমাকে দেবে না?"
ভাবলাম ছোট্ট পুতুল- মডেল নিতে চায় ও। তাই কিন্তু কিন্তু করে বললাম "তা তো জানি না।"
ছেলেটি আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। সামনের দুটো দাঁতই ফোকলা। তারপর বলল "আমি সকালেই চলে আসব। তারপর খড় গুলো নিয়ে যাব।"
পুতুল না? খড়?
খুব অবাক হয়ে তাকালাম। ফোকলা -রাম হেসে বলল "দেখছ না আজ থেকে আবার ঠান্ডা পড়েছে? কুত্তাগুলোর জন্য পেতে দেব...ওরা একটু আরামে ঘুমোবে। খুব কষ্ট পাচ্ছে ওরা গো...ওরাই তো আমাদের পাহারা দেয়..."
অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। 'কুত্তা' শব্দটা কানে লাগা সত্ত্বেও...মনে হলো...
প্রতিবার এক ভুল করি, তাই আজ আকুল হয়ে জিজ্ঞেস করলাম "এই এই, তোর নাম কি রে? কোথায় থাকিস?"
উত্তরে জানাল ওর নাম 'রাজু শেখ', থাকে গির্জার কাছে, ক্যারি রোডের কাছের এক বস্তিতে। জরির কাজ করে আব্বু, আম্মুর 'মাথা খারাপ'। আব্বু খুব রাগী। বলতে বলতে আবার একটু ফোকলা হেসে চলে গেল।
আর, আমি ভাবছিলাম... বস্তিতে থাকে, যেতে -আসতে একবার দুবার দেখেছি এলাকাটিকে...অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর...নোংরা পরিবেশ...সেখানের একজন, নিজের জন্য তো ফ্লেক্স গুলোও চাইতে পারত...তা না করে খড়...সারমেয়রা কষ্ট পাচ্ছে বলে...
আর, কী অপরূপ আমাদের দেশ! রাজু শেখ যাবে মারিয়া গির্জায় কেষ্টর মতো করে খৃষ্টের জন্মবৃত্তান্ত সাজানো তাঁবুর ঘাস নিয়ে এমন প্রানীদের কষ্ট লাঘব করতে...যারা সব ধর্মের ঊর্ধে।
কলকাতার যীশুর হাতে...উঠে আসবে প্রভু যীশুর একটা অংশ...
আহা রে জীবন!
বাহ্ রে এই জীবন!