06-01-2021, 09:43 PM
[৯২]
ঘুম ভাঙ্গতে চোখ মেলে দেখল পাশে গভীর নিদ্রায় ডুবে আছে অঙ্গন।অনুভব করল সারা দেহে ছেয়ে আছে সুখের রেশ।কাল রাতে বলা কথাগুলো। কলিং বেলের শব্দ পেয়ে সাড়া দিল,আসছি।
অঙ্গনের অবিন্যস্ত কাপড় ঠিক করে দিয়ে উঠে বসল।মুন্নার ঘুম ভেঙ্গেছে।ওকে নিয়ে বিছানা থেকে নেমে দরজা খুলে দিতে মিতা মৌসী ঢূকলো।
--মৌসী চায় বানাও।বাবুকে ডাকার দরকার নেই।
বাথ্রুমে গিয়ে চোখে মুখে জল দিয়ে ফ্রেশ হল।মৌসী চা দিয়ে গেল।
চা পাণ শেষে মৌসীকে বলল,আমি বাজার থেকে আসছি।বাবু উঠলে ওকে চা দিও।
মুন্নাকে নিয়ে নীচে নেমে গ্যারাজ থেকে গাড়ী বের করে মুন্নাকে পাশে বসিয়ে স্টার্ট করল।গাড়ি চালাতে চালাতে এমনি জিজ্ঞেস করল,মুন্না বেটা তোমাকে কে বেশি ভালবাসে?মম না বাপি?
মুন্না আড়চোখে দেখে মনে মনে ভাবে কি বলবে?
--কি বেটা বোলো?
--বাপি-ই।
বেইমান।দুধ পিলায়ে বড় করল, যেখানে গেছে কোমরে বেধে নিয়ে গেছে কি করেছে তোর বাপি।মুন্না সবে কথা বলতে শিখেছে ওকি অত বোঝে তবু অভিমান হয় যশের।অঙ্গন কি এমন করেছে।সকালে বের হয় রাতে ফেরে কয়েক ঘণ্টা দেখা বাপ-বেটায়।পরমুহূর্তে মনে হল শিশুদের বুদ্ধি পরিণত নাহলেও ওরা বোঝে অনুভূতি দিয়ে।অঙ্গন বলছিল চাঁদ মানুষের বড় প্রিয় কেন জানো?তার চাঁদনীর জন্য।মানুষের সুকীর্তি তার জ্যোতস্না আই মিন মুন লাইট। কথাটা মনে হতে যশের মন উদাস হয়।অঙ্গন তার হাজবান্ড ভেবে গর্ব বোধ করে।বাজারে বাইরে গাড়ীতে মুন্নাকে বসিয়ে রেখে বলল,চুপচাপ বসবে সারারাতি পিটানি দিব।
নিয়মিত বাজারে এসে তার উপর ডাক্তার ভেন্ডাররা সবাই বেশ খাতির করে।ঘুরে ঘুরে তরিতরকারি কিনতে কিনতে নজরে পড়ল দিলীপও এসেছে বাজারে।ডাকতে গিয়েও ডাকলো না।মছলি বাজারে গিয়ে ট্যাংরা পার্সে ভেটকি মাছ কিনলো।চুনা মাছ অঙ্গনের বহুত পরসন্দ।
--বৌদি বাজার হয়ে গেল?
দিলীপকে দেখে হেসে বলল,আজ অফিস নেই?
--আজ ছুটি।পল্টূ ঘুমোচ্ছে?
যশ সম্মতি সূচক হেসে বলল,একদম আসোনা, বৌদিকে আর মনে পড়ে না?
--না না তা নয়--ঠিক আছে কখন বেরোবেন আজ?
--অঙ্গন বেরোবার পর একটা দেড়টা হবে।
--ঠিক আছে আপনি যান আমি আসছি।
--পাক্কি?তোমার বাজার হয়ে গেছে?
--হ্যা আপনাকে দেখে আসলাম।
--চলো তোমাকে পৌছে দিই।
দিলীপ পিছনে বসল, সামনে মুন্নাকে নিয়ে যশ বিন্দার।দিলীপ বলতে থাকে পাড়াটা একদম বদলে গেছে।বড় বড় মাল্টি স্টোরিড বিল্ডিং হয়েছে কেউ কাউকে চেনেনা। জানেন বৌদি আগে একটা হোমলি পরিবেশ ছিল পাড়ার সবাই বছরে একবার পিকনিক যেতাম।পুজো হতো প্যাণ্ডেলেই পড়ে থাকতো সবাই।
--ফ্যামিলি পিকনিক?
--হ্যা সেই রকম। অঞ্জনাবৌদির সঙ্গে পল্টুর পিকনিকে আলাপ।তখন ও ডাক্তারীর জন্য জয়েণ্টে বসার তোড়জোড় করছে।
যশ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে যশ বলল,ওর উমর তো অনেক বেশী।
--পল্টু অন্যরকম বয়স জাত ধর্ম নিয়ে মাথা ব্যথা নেই।অনেক মেয়ের নজর ছিল ওর দিকে।অঞ্জনা বৌদি সবাইকে হতাশ করেছে।
দিলীপের ফ্লাটের নীচে গাড়ী থামতে দিলীপ নেমে বলল,পনেরো মিনিটের মধ্যে আসছি।
--ওকে।যশ গাড়ী স্টার্ট করল।মুন্না জিজ্ঞেস করল,মম লোকটা কে?
--লোকটা বলেনা উনি আঙ্কেল আছে।
গাড়ী আর গ্যারাজে ঢোকায়না।আবার বেরিয়ে ড্যাফোডিলে যেতে হবে।গাড়ী হতে নামতে দেখল ঘোমটায় মুখ ঢাকা এক আউরত বাড়ীর দিকে তাকিয়ে।কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,কিসি কো মতলব কাউকে খুজছেন?
--এইডা ফল্টুর বাড়ী না?
--কৌন?
--ফল্ডু মানে ডাক্তার--।
--হ্যা উনি বাসায় পেশেণ্ট দেখেনা।
-- ফল্ডুর লগে দরকার তারে কইলে বুঝবো।
যশ কয়েক মুহূর্ত ইতস্তত করে উপরে নিয়ে যাবে কিনা।আবার ভাবে অঙ্গন রেগে যাবে নাতো?মহিলার কথাশুনে মনে হচ্ছে অঙ্গণের জানাশোনা।দ্বিধার সঙ্গে বলল,আইয়ে।দু-হাতে দুটো ঢাউস ব্যাগ,বাজারে প্রায় এক সপ্তাহের তরিতরকারী কিনে আনে।দোতলায় উঠে দরজার সামনে বলল,আপ ইধার ঠাইরিয়ে।
ডাইনিং টেবিলে বসে অঙ্গন খবর কাগজ নিয়ে চা খাচ্ছে।পাশে বসে আছে মুন্না।ও কখন উঠে এসেছে হঠাৎ খেয়াল হল।
--অঙ্গন এক আউরত তোমার খোজ করছে।
পল্টু কাগজ থেকে মুখ তুলে বলল,কোথায়?
--দরজায় দাঁড়িয়ে--।
--একেবারে উপরে নিয়ে এসোছো?বিরক্ত হয়ে পল্টূ দরজার কাছে গিয়ে দেখল অবগুণ্ঠীত এক মহিলা।বিরক্তি সহ জিজ্ঞেস করে,কি চাই?
--ফল্টু আমারে চিনবার পারতেছো না?
নাম ধরে ডাকছে অবাক হয় পল্টূ বলল,মুখ ঢেকে রেখেছেন কি করে চিনবো?কোথায় থাকেন?
ততক্ষনে ঘোমটা খুলে ফেলে বলল,কেউ যাতে চিনতে না পারে তাই ঘোমটা দিচ্ছি।
কথা শুনে মনে মনে অতীত হাতড়ায় সেই মণিকা আণ্টি মানে--।আপনি মণিকা মানে--
--এইতো চিনছো আমি মণিকাআন্টি।বড় বিপদে পড়ে তুমার কাছে আসছি বাবা--।
--আসুন ভিতরে আসুন।
একটা চেয়ারে বসিয়ে পল্টু বলল,বাড়ী বিক্রী করে কোথায় চলে গেলেন--হ্যা বলুন কেন এসেছেন?
ইতিমধ্যে এক কাপ চা নিয়ে যশ ডাইনিং টেবিলের একটা চেয়ার নিয়ে বসেছে।যাক অঙ্গনের চেনা।
মণিকা বলল,তুমার রমেণকাকারে মনে আছে?
--হ্যা তিনিও তো বউ মারা যাবার পর বাড়ী বেচে চলে গেলেন।
--তুমার সব মনে আছে?জানো ফল্টু রমুর অবস্থা ভাল নয়।
--আপনি কি করে জানলেন?
--আমরা একলগে থাকি।
--একলগে থাকি মানে আপনারা বিয়ে করেছেন?
কণিকা মাথা নীচু কিছুক্ষন ভাবে তারপর বলল,বিয়ে করিনাই সেই আমার সব।মাস দুয়েক আগে একা একা খাড়াইতে পারেনা বিছানায় শয্যাশায়ী।আমি ধইরা ধইরা বাথ্রুমে নিয়া যাই বিছানায় বসাইয়া খাওয়াই।তুমি যদি বাবা একবার যাইতা বড় ডাক্তার হইছো শুনছি।
বিয়ে করেনি রমু কাকুই এখন সব।যে মানুষটাকে এক সময় কাছে ঘেষতে দিতোনা,কাছে গেলেই দূরছাই করতো এখন তার সেবা যত্ন করে।
--ফল্টু বড় আশা কইরা আসছি বাবা।
--উম।পল্টু মুখ তুলে তাকালো।জিজ্ঞেস করে কোথায় থাকেন?
--ঐ নপাড়ার দিকে ফেলাট কিনছি।
--এতো উলটো পথ।আচ্ছা আপনি বসুন।চিবুকে হাত বোলাতে বোলাতে কি ভাবে।
দরজার বেল বাজতে যশ উঠে দরজা খুলে দিতে দিলীপ ঢূকে ইতস্তত করে।যশ বলল,তুমি বোসো।আমি চা নিয়ে আসছি।যেতে গিয়ে মণিকাকে জিজ্ঞেস করে,হ্যালো ম্যাম আপ চা খাবেন তো?
--না মা আমি ছা খামুনা।আমার আর খাওন?দীর্ঘশ্বাস ফেলল মণিকা।
--দিলীপ বোস আমি স্নানটা সেরে ফেলি। তুই মণিকা আণ্টির সঙ্গে কথা বল।বিল্লু স্নান করে আজ তাড়াতাড়ি বের হব।যাবার পথে একবার মণিকাআণ্টির বাড়ী হয়ে যাব।
যশ সেটা বুঝতে পেরেছিল অঙ্গন এখনই বের হবে।
দিলীপ জিজ্ঞেস করল,কেমন আছেন আণ্টি?
ঘোমটার ফাক দিয়ে দেখে মণিকা বলল,তুমি দিলীপ না?
--হ্যা।কারো কিছু হয়েছে?
যশ চা নিয়ে ইশারা করে দিলীপকে অন্য ঘরে ডাকলো।দিলীপ উঠে চলে যেতে মণিকা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।পাড়ায় ঢোকার মুখ নেই বিপদে পড়ে লজ্জার মাথা খেয়ে ফল্টুর কাছে এসেছে।ফল্টু নামকরা ডাক্তার।ওকে একলা রেখে এসেছে চিন্তা হচ্ছে।পল্টু বাথরুম হতে বেরোতে যশ রান্নাঘরে গিয়ে মৌসীকে ভাত দিতে বলল।
দিলীপকে দেখে পল্টূ বলল,রমেণকাকু অসুস্থ সেজন্য আণ্টি এসেছে।
--তুই যাবি?
--অনেকদিনের চেনা।সব সময় নীতি মেনে চলা যায়?তবে যা শুনলাম খুব একটা আশা দেখছিনা।আরেকদিন আসিস কথা হবে।
পল্টু খেতে বসে বলল,বিল্লু তুমি ইকবালকে বলো ডাক্তারবাবু বেরোবে।
ফল্টুর মাকে চিনতো মণিকা।ভদ্রমহিলা পাড়ায় খুব একটা মিশতেন না।কিন্তু মনটা খুব ভাল ফল্টূও হয়েছে মায়ের মতো।আধঘণ্টার মধ্যে তৈরী হয়ে আণ্টিকে নিয়ে বেরিয়ে গেল পল্টু।
যশের মনে কিছু প্রশ্ন ঘুর ঘুর করে।ওদের আলাপের ছিটকে আসা দু-একটা কথা কানে এসেছিল,বিয়ে করে নি কিন্তু সেই ওর সব।দিলীপ হয়তো জানতে পারে।দিলীপের কাছে সব শুনলো।মহিলা বিধবা ভদ্রলোকের বউ দুরারোগ্য ব্যধিতে ভুগছিল।ভদ্রমহিলা লোকটিকে পছন্দ করত না।তারপর বউ মারা যাবার পর দুজনে বাড়ী বিক্রি করে অন্যত্র চলে যায়।বিয়ে করেনি কিন্তু একসঙ্গে থাকে।ভদ্রমহিলার কাছে আজ লোকটি তার সব।অদ্ভুত সম্পর্ক।ফোন বাজতে যশ গিয়ে ফোন ধরে,হ্যালো?
--ড সোম?
--যশবিন্দার সিং সোম।
--ম্যাডাম আমি দীপান্বিতাকে ড্যাফোডিলে ভর্তি করে দিয়েছি।
--আপনি কে বলছেন?
--ঐযে কাল রাতে....আপনি বললেন ড্যাফোডিলে ভর্তি করতে---।
--হ্যা-হ্যা বুঝেছি।কোনো চিন্তা করবেন না।আজ রাতেই পেশেণ্টকে বাড়ী নিয়ে যেতে পারবেন।ফোন রেখে ফিরে আসতে দিলীপ বলল,বৌদি আরেকদিন আসব।আজ আসি?
--আচ্ছা কোনো কথা হলনা।বউ নিয়ে এসো আরেকদিন।
ঘুম ভাঙ্গতে চোখ মেলে দেখল পাশে গভীর নিদ্রায় ডুবে আছে অঙ্গন।অনুভব করল সারা দেহে ছেয়ে আছে সুখের রেশ।কাল রাতে বলা কথাগুলো। কলিং বেলের শব্দ পেয়ে সাড়া দিল,আসছি।
অঙ্গনের অবিন্যস্ত কাপড় ঠিক করে দিয়ে উঠে বসল।মুন্নার ঘুম ভেঙ্গেছে।ওকে নিয়ে বিছানা থেকে নেমে দরজা খুলে দিতে মিতা মৌসী ঢূকলো।
--মৌসী চায় বানাও।বাবুকে ডাকার দরকার নেই।
বাথ্রুমে গিয়ে চোখে মুখে জল দিয়ে ফ্রেশ হল।মৌসী চা দিয়ে গেল।
চা পাণ শেষে মৌসীকে বলল,আমি বাজার থেকে আসছি।বাবু উঠলে ওকে চা দিও।
মুন্নাকে নিয়ে নীচে নেমে গ্যারাজ থেকে গাড়ী বের করে মুন্নাকে পাশে বসিয়ে স্টার্ট করল।গাড়ি চালাতে চালাতে এমনি জিজ্ঞেস করল,মুন্না বেটা তোমাকে কে বেশি ভালবাসে?মম না বাপি?
মুন্না আড়চোখে দেখে মনে মনে ভাবে কি বলবে?
--কি বেটা বোলো?
--বাপি-ই।
বেইমান।দুধ পিলায়ে বড় করল, যেখানে গেছে কোমরে বেধে নিয়ে গেছে কি করেছে তোর বাপি।মুন্না সবে কথা বলতে শিখেছে ওকি অত বোঝে তবু অভিমান হয় যশের।অঙ্গন কি এমন করেছে।সকালে বের হয় রাতে ফেরে কয়েক ঘণ্টা দেখা বাপ-বেটায়।পরমুহূর্তে মনে হল শিশুদের বুদ্ধি পরিণত নাহলেও ওরা বোঝে অনুভূতি দিয়ে।অঙ্গন বলছিল চাঁদ মানুষের বড় প্রিয় কেন জানো?তার চাঁদনীর জন্য।মানুষের সুকীর্তি তার জ্যোতস্না আই মিন মুন লাইট। কথাটা মনে হতে যশের মন উদাস হয়।অঙ্গন তার হাজবান্ড ভেবে গর্ব বোধ করে।বাজারে বাইরে গাড়ীতে মুন্নাকে বসিয়ে রেখে বলল,চুপচাপ বসবে সারারাতি পিটানি দিব।
নিয়মিত বাজারে এসে তার উপর ডাক্তার ভেন্ডাররা সবাই বেশ খাতির করে।ঘুরে ঘুরে তরিতরকারি কিনতে কিনতে নজরে পড়ল দিলীপও এসেছে বাজারে।ডাকতে গিয়েও ডাকলো না।মছলি বাজারে গিয়ে ট্যাংরা পার্সে ভেটকি মাছ কিনলো।চুনা মাছ অঙ্গনের বহুত পরসন্দ।
--বৌদি বাজার হয়ে গেল?
দিলীপকে দেখে হেসে বলল,আজ অফিস নেই?
--আজ ছুটি।পল্টূ ঘুমোচ্ছে?
যশ সম্মতি সূচক হেসে বলল,একদম আসোনা, বৌদিকে আর মনে পড়ে না?
--না না তা নয়--ঠিক আছে কখন বেরোবেন আজ?
--অঙ্গন বেরোবার পর একটা দেড়টা হবে।
--ঠিক আছে আপনি যান আমি আসছি।
--পাক্কি?তোমার বাজার হয়ে গেছে?
--হ্যা আপনাকে দেখে আসলাম।
--চলো তোমাকে পৌছে দিই।
দিলীপ পিছনে বসল, সামনে মুন্নাকে নিয়ে যশ বিন্দার।দিলীপ বলতে থাকে পাড়াটা একদম বদলে গেছে।বড় বড় মাল্টি স্টোরিড বিল্ডিং হয়েছে কেউ কাউকে চেনেনা। জানেন বৌদি আগে একটা হোমলি পরিবেশ ছিল পাড়ার সবাই বছরে একবার পিকনিক যেতাম।পুজো হতো প্যাণ্ডেলেই পড়ে থাকতো সবাই।
--ফ্যামিলি পিকনিক?
--হ্যা সেই রকম। অঞ্জনাবৌদির সঙ্গে পল্টুর পিকনিকে আলাপ।তখন ও ডাক্তারীর জন্য জয়েণ্টে বসার তোড়জোড় করছে।
যশ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে যশ বলল,ওর উমর তো অনেক বেশী।
--পল্টু অন্যরকম বয়স জাত ধর্ম নিয়ে মাথা ব্যথা নেই।অনেক মেয়ের নজর ছিল ওর দিকে।অঞ্জনা বৌদি সবাইকে হতাশ করেছে।
দিলীপের ফ্লাটের নীচে গাড়ী থামতে দিলীপ নেমে বলল,পনেরো মিনিটের মধ্যে আসছি।
--ওকে।যশ গাড়ী স্টার্ট করল।মুন্না জিজ্ঞেস করল,মম লোকটা কে?
--লোকটা বলেনা উনি আঙ্কেল আছে।
গাড়ী আর গ্যারাজে ঢোকায়না।আবার বেরিয়ে ড্যাফোডিলে যেতে হবে।গাড়ী হতে নামতে দেখল ঘোমটায় মুখ ঢাকা এক আউরত বাড়ীর দিকে তাকিয়ে।কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,কিসি কো মতলব কাউকে খুজছেন?
--এইডা ফল্টুর বাড়ী না?
--কৌন?
--ফল্ডু মানে ডাক্তার--।
--হ্যা উনি বাসায় পেশেণ্ট দেখেনা।
-- ফল্ডুর লগে দরকার তারে কইলে বুঝবো।
যশ কয়েক মুহূর্ত ইতস্তত করে উপরে নিয়ে যাবে কিনা।আবার ভাবে অঙ্গন রেগে যাবে নাতো?মহিলার কথাশুনে মনে হচ্ছে অঙ্গণের জানাশোনা।দ্বিধার সঙ্গে বলল,আইয়ে।দু-হাতে দুটো ঢাউস ব্যাগ,বাজারে প্রায় এক সপ্তাহের তরিতরকারী কিনে আনে।দোতলায় উঠে দরজার সামনে বলল,আপ ইধার ঠাইরিয়ে।
ডাইনিং টেবিলে বসে অঙ্গন খবর কাগজ নিয়ে চা খাচ্ছে।পাশে বসে আছে মুন্না।ও কখন উঠে এসেছে হঠাৎ খেয়াল হল।
--অঙ্গন এক আউরত তোমার খোজ করছে।
পল্টু কাগজ থেকে মুখ তুলে বলল,কোথায়?
--দরজায় দাঁড়িয়ে--।
--একেবারে উপরে নিয়ে এসোছো?বিরক্ত হয়ে পল্টূ দরজার কাছে গিয়ে দেখল অবগুণ্ঠীত এক মহিলা।বিরক্তি সহ জিজ্ঞেস করে,কি চাই?
--ফল্টু আমারে চিনবার পারতেছো না?
নাম ধরে ডাকছে অবাক হয় পল্টূ বলল,মুখ ঢেকে রেখেছেন কি করে চিনবো?কোথায় থাকেন?
ততক্ষনে ঘোমটা খুলে ফেলে বলল,কেউ যাতে চিনতে না পারে তাই ঘোমটা দিচ্ছি।
কথা শুনে মনে মনে অতীত হাতড়ায় সেই মণিকা আণ্টি মানে--।আপনি মণিকা মানে--
--এইতো চিনছো আমি মণিকাআন্টি।বড় বিপদে পড়ে তুমার কাছে আসছি বাবা--।
--আসুন ভিতরে আসুন।
একটা চেয়ারে বসিয়ে পল্টু বলল,বাড়ী বিক্রী করে কোথায় চলে গেলেন--হ্যা বলুন কেন এসেছেন?
ইতিমধ্যে এক কাপ চা নিয়ে যশ ডাইনিং টেবিলের একটা চেয়ার নিয়ে বসেছে।যাক অঙ্গনের চেনা।
মণিকা বলল,তুমার রমেণকাকারে মনে আছে?
--হ্যা তিনিও তো বউ মারা যাবার পর বাড়ী বেচে চলে গেলেন।
--তুমার সব মনে আছে?জানো ফল্টু রমুর অবস্থা ভাল নয়।
--আপনি কি করে জানলেন?
--আমরা একলগে থাকি।
--একলগে থাকি মানে আপনারা বিয়ে করেছেন?
কণিকা মাথা নীচু কিছুক্ষন ভাবে তারপর বলল,বিয়ে করিনাই সেই আমার সব।মাস দুয়েক আগে একা একা খাড়াইতে পারেনা বিছানায় শয্যাশায়ী।আমি ধইরা ধইরা বাথ্রুমে নিয়া যাই বিছানায় বসাইয়া খাওয়াই।তুমি যদি বাবা একবার যাইতা বড় ডাক্তার হইছো শুনছি।
বিয়ে করেনি রমু কাকুই এখন সব।যে মানুষটাকে এক সময় কাছে ঘেষতে দিতোনা,কাছে গেলেই দূরছাই করতো এখন তার সেবা যত্ন করে।
--ফল্টু বড় আশা কইরা আসছি বাবা।
--উম।পল্টু মুখ তুলে তাকালো।জিজ্ঞেস করে কোথায় থাকেন?
--ঐ নপাড়ার দিকে ফেলাট কিনছি।
--এতো উলটো পথ।আচ্ছা আপনি বসুন।চিবুকে হাত বোলাতে বোলাতে কি ভাবে।
দরজার বেল বাজতে যশ উঠে দরজা খুলে দিতে দিলীপ ঢূকে ইতস্তত করে।যশ বলল,তুমি বোসো।আমি চা নিয়ে আসছি।যেতে গিয়ে মণিকাকে জিজ্ঞেস করে,হ্যালো ম্যাম আপ চা খাবেন তো?
--না মা আমি ছা খামুনা।আমার আর খাওন?দীর্ঘশ্বাস ফেলল মণিকা।
--দিলীপ বোস আমি স্নানটা সেরে ফেলি। তুই মণিকা আণ্টির সঙ্গে কথা বল।বিল্লু স্নান করে আজ তাড়াতাড়ি বের হব।যাবার পথে একবার মণিকাআণ্টির বাড়ী হয়ে যাব।
যশ সেটা বুঝতে পেরেছিল অঙ্গন এখনই বের হবে।
দিলীপ জিজ্ঞেস করল,কেমন আছেন আণ্টি?
ঘোমটার ফাক দিয়ে দেখে মণিকা বলল,তুমি দিলীপ না?
--হ্যা।কারো কিছু হয়েছে?
যশ চা নিয়ে ইশারা করে দিলীপকে অন্য ঘরে ডাকলো।দিলীপ উঠে চলে যেতে মণিকা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।পাড়ায় ঢোকার মুখ নেই বিপদে পড়ে লজ্জার মাথা খেয়ে ফল্টুর কাছে এসেছে।ফল্টু নামকরা ডাক্তার।ওকে একলা রেখে এসেছে চিন্তা হচ্ছে।পল্টু বাথরুম হতে বেরোতে যশ রান্নাঘরে গিয়ে মৌসীকে ভাত দিতে বলল।
দিলীপকে দেখে পল্টূ বলল,রমেণকাকু অসুস্থ সেজন্য আণ্টি এসেছে।
--তুই যাবি?
--অনেকদিনের চেনা।সব সময় নীতি মেনে চলা যায়?তবে যা শুনলাম খুব একটা আশা দেখছিনা।আরেকদিন আসিস কথা হবে।
পল্টু খেতে বসে বলল,বিল্লু তুমি ইকবালকে বলো ডাক্তারবাবু বেরোবে।
ফল্টুর মাকে চিনতো মণিকা।ভদ্রমহিলা পাড়ায় খুব একটা মিশতেন না।কিন্তু মনটা খুব ভাল ফল্টূও হয়েছে মায়ের মতো।আধঘণ্টার মধ্যে তৈরী হয়ে আণ্টিকে নিয়ে বেরিয়ে গেল পল্টু।
যশের মনে কিছু প্রশ্ন ঘুর ঘুর করে।ওদের আলাপের ছিটকে আসা দু-একটা কথা কানে এসেছিল,বিয়ে করে নি কিন্তু সেই ওর সব।দিলীপ হয়তো জানতে পারে।দিলীপের কাছে সব শুনলো।মহিলা বিধবা ভদ্রলোকের বউ দুরারোগ্য ব্যধিতে ভুগছিল।ভদ্রমহিলা লোকটিকে পছন্দ করত না।তারপর বউ মারা যাবার পর দুজনে বাড়ী বিক্রি করে অন্যত্র চলে যায়।বিয়ে করেনি কিন্তু একসঙ্গে থাকে।ভদ্রমহিলার কাছে আজ লোকটি তার সব।অদ্ভুত সম্পর্ক।ফোন বাজতে যশ গিয়ে ফোন ধরে,হ্যালো?
--ড সোম?
--যশবিন্দার সিং সোম।
--ম্যাডাম আমি দীপান্বিতাকে ড্যাফোডিলে ভর্তি করে দিয়েছি।
--আপনি কে বলছেন?
--ঐযে কাল রাতে....আপনি বললেন ড্যাফোডিলে ভর্তি করতে---।
--হ্যা-হ্যা বুঝেছি।কোনো চিন্তা করবেন না।আজ রাতেই পেশেণ্টকে বাড়ী নিয়ে যেতে পারবেন।ফোন রেখে ফিরে আসতে দিলীপ বলল,বৌদি আরেকদিন আসব।আজ আসি?
--আচ্ছা কোনো কথা হলনা।বউ নিয়ে এসো আরেকদিন।