Thread Rating:
  • 100 Vote(s) - 3.34 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance সুপ্তির সন্ধানে
#90
পর্ব এক (#3-#3)

 
পাড়ার রাস্তায় ঢুকতেই দেখলাম কারেন্ট চলে গেল। ধ্যাত এই কারেন্ট নিয়ে বড় সমস্যা। বাইক রেখে অন্ধকার সিঁড়ি বেয়ে উঠে কোন মতে হাতড়ে হাতড়ে দরজা খুললাম। কোন মতে জুতো খুলে রান্না ঘরে গিয়ে একটা মোমবাতি ধরালাম। শুন্য ফ্লাট সেদিন ভীষণ ভাবেই শুন্য লাগছিল। কারণ সত্যি সেদিন অজানা ছিল। বারেবারে মনে হচ্ছিল, ওর জন্য করলাম আর দাঁড়াল না। ভীষণ ভাবেই অকৃতজ্ঞ মনে হচ্ছিল তিতলিকে, ভীষণ রাগ হচ্ছিল ওর ওপরে। রান্না করতে আর ইচ্ছে করছিল না। সকালে রান্না করে রেখে গিয়েছিলাম তাই রক্ষে না হলে হয়ত না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়তাম। একা একা অন্ধকারে খেতে বসে ভাবলাম, একি জীবন। এত বড় একটা ফ্লাটে সম্পূর্ণ একা। ফ্লাটে আসবাব পত্র বিশেষ কিছুই নেই। দুটো বেশ বড় শোয়ার ঘর, কিন্তু একা মানুষ তাই খাট বিছানা একটাতেই। অন্য ঘরে একটা পড়ার টেবিল আর চেয়ার। যদিও পড়াশুনা আর তেমন হয় না। ভেবেছিলাম একটা কম্পিউটার কিনব, কিন্তু যা দাম তাতে আর পোষাল না। বসার ঘরে একটা লম্বা সোফা আর একটা ছোট টেবিল। ওই সোফায় বসে টিভি দেখতে দেখতেই আমার খাওয়া দাওয়া হয়। কিন্তু কারেন্ট না থাকায় মোমবাতির আলোতেই সেদিন রাতের খাওয়া সারতে হল।
 
রাত অনেক, প্রায় সাড়ে দশটা, হটাত করেই ফোন বেজে উঠল। সাধারণত এতরাতে আমাকে কেউই ফোন করে না। ফোন তুলে দেখলাম, অন্য পাশে প্রবালদা।

প্রবালদা, “হ্যাঁ রে খাওয়া দাওয়া হল?”

আমি উত্তর দিলাম, “হ্যাঁ এই হল। তোদের হয়েছে?”

উত্তর দিল প্রবালদা, “হ্যাঁ।” একটু থেমে আমাকে বলল, “ঠাম্মা বলছিল হরিদ্বার ঋশিকেশের কথা।”

আমি বললাম, “হ্যাঁ, আমাকেও বলছিল।”

প্রবালদা আমাকে বলল, “তোর কি পুজোর সময়ে ছুটি হবে?”

আমি হেসে বললাম, “হ্যাঁ রে বাবা, পুজোতে কার না ছুটি হয়।”

হেসে ফেলল প্রবালদা, “আচ্ছা, তাহলে সবার টিকিট কাটবো।”

আমি একটু ভেবে বললাম, “আচ্ছা কেটে ফেল। কত কি দিতে হবে জানিয়ে দিস।”

প্রবালদা, হুম করে একটু চুপ করে গেল। তারপরে আমাকে বলল, “আরো একটা কথা ছিল তোর সাথে। তুই কি পরের সপ্তাহে আমাদের বাড়ি আসতে পারবি?”

আমি একটু ভেবে বললাম, “শুক্রবার লাস্ট লোকাল ধরে চলে আসব। কিন্তু কি কথা একটু বল?”

প্রবালদার হাসি শুনতে পেলাম সেই সাথে পেছন থেকে তোতাপাখির হাসিও শুনতে পেলাম। প্রবালদার হাত থেকে তোতাপাখি ফোন নিয়ে আমাকে বলল, “গেছো, তোমায় অনেকদিন দেখিনি তাই।”

তোতাপাখির গলার আওয়াজ শুনে আমিও ইয়ার্কি মেরে বললাম, “বসে আছো তো হোঁৎকার কোলে চেপে।” প্রবালদা একটু মোটা গোলগাল তাই আমি ওকে হোঁৎকা বলে ডাকতাম ছোট বেলা থেকে। এক সপ্তাহ আগেই মামাবাড়িতে দেখা হয়েছিল। আমাকে শুধু মাত্র দেখার জন্য নিশ্চয় এত রাতে ফোন করেনি প্রবালদা। আমি বললাম, “আমার বিরুদ্ধে দুই জনে মিলে কি জল্পনা কল্পনা করছ বল তো?”

খিলখিল করে হেসে ফেলল তোতাপাখি, “না না কিছু না। তুমি কিন্তু পরের সপ্তাহে এসো।” তারপরে শুরু হল তোতাপাখির গল্প, “এই জানো, বাড়ির পেছনে যে পেয়ারা গাছটা ছিল তাতে অনেক পেয়ারা হয়েছে।” আমি মাথা নাড়লাম, সেটা অবশ্য ফোনের মধ্যে থেকে দেখা যায় না। খিলখিল করে হেসে বলল, “তুমি আসো তোমার জন্য পেয়ারা গুলো গাছেই রেখে দিয়েছি। আচ্ছা আজকে তুমি কি রান্না করলে?”

আমি বললাম, “সকালের রান্না ছিল। ঐ ডাল আর ভাত। তুমি কি রান্না করলে আজকে?”

তোতাপাখির গল্প কি আর থামে, “আজকে মোরলা মাছের ঝোল বানিয়ে ছিলাম আর পুঁই শাকের চচ্চড়ি আর সোনা মুগের ডাল।”

আমি হেসে বললাম, “আমাকে এখন বলছ, দেখো তোমার পেট খারাপ করবে।” আমি গলা নামিয়ে বললাম, “মোরলার ঝোল খেয়ে রাতে বিছানায় তো...”

তোতাপাখি ফিক করে হেসে ফেলল, “কি আছে তোমার দাদা পরিষ্কার করবে।”

আমিও হেসে ফেললাম তোতাপাখির কথা শুনে, “পেট খারাপ করে তুমি বিছানায় পটি করবে সে কথা কিন্তু বলতে যাইনি।”

তোতাপাখিও ফিক করে হেসে বলল, “আমিও জানি তুমি শয়তান কি বলতে চাইছিলে।” একটু চুপ করে থাকার পরে তোতাপাখি জিজ্ঞেস করল, “তোমার বাড়িটা বেশ ফাঁকা, তাই না?”

আমি প্রশ্ন শুনে আকাশ থেকে পড়লাম। তাও ইয়ার্কি মেরে গলা নামিয়ে বললাম, “কেন কেন, হোঁৎকাকে ছেড়ে পালাচ্ছও নাকি? তাহলে বল, টেবিল চেয়ার সোফা সব কিনে ফেলব।”

তোতাপাখির পাশ থেকে হোঁৎকা আওয়াজ দিল, “কেটে হাতে ধরিয়ে দেব কুত্তা।”

আমিও ইয়ার্কি মেরে প্রবালদাকে জিজ্ঞেস করলাম, “আমার বাড়িতে কি আছে কি নেই সেটা তোর বউ আমাকে কেন জিজ্ঞেস করল সেটা আগে বল।”

প্রবালদা হেসে বলল, “তুই আগে আয় না বাড়িতে তারপরে বলব।”
 
তোতাপাখির সাথে আরো কিছুক্ষন গল্প করার পরে মন বেশ ভালো হয়ে গেল। দুর্গাপুর খুব কম যাওয়া হয়, হয়ত কোন মাসে একবার, মামাবাড়িও খুব কম যাওয়া হয় আজকাল। শনি রবি জামা কাপড় কাচা, অন্য অনেক কাজ থাকে যে গুলো কাজের দিনে করা হয় না। তবে তোতাপাখির দুষ্টুমি ভরা কন্ঠস্বর শুনে বুঝতে পারলাম স্বামী স্ত্রী মিলে আমার বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর একটা ষড়যন্ত্র করছে। কি সেই ষড়যন্ত্র সেটা অনুধাবন করতে সক্ষম হলাম না।
 
সোমবার যথারীতি ইন্সটিটিউটে তিতলির সাথে দেখা। আমাকে দেখেও মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল। আমিও মনে মনে হেসে শেষের দিকের টেবিলে গিয়ে বসে পড়লাম। অনির্বাণ আসেনি আমার মাথা খাওয়ার কেউ নেই। স্যার পড়ালেও মাঝে মাঝেই তিতলি ঘাড় ঘুরিয়ে আড় চোখে আমার দিকে দেখছিল। চোখা চুখি হতেই সেই রোষকষিত নয়ন, যার অর্থ বিন্দুমাত্র বোধগম্য হল না। বার কতক ওর ওই রোষ কষিত নয়নের দর্শনের পরে ক্লাস আমার মাথায় উঠে গেল। কি করলাম রে বাবা। ওই মিষ্টি চেহারায় এমন রাগরাগ ভাব একদম মানায় না। যাক গে, যা করছে করতে দাও। আদার কারবারি আমার জাহাজের খবর নিয়ে কি দরকার।
 
অন্যদিনে ক্লাস শেষ হওয়ার পরে সবার থেকে আগেই ক্লাস ছেড়ে বেড়িয়ে যায় তিতলি, কিন্তু সেদিন বসেই আছে টেবিলে। ক্লাস শেষ হওয়ার পরে প্রায় অনেকেই বেড়িয়ে গেল। ক্লাস একটু ফাঁকা হয়ে যেতেই আমিও চেয়ার ছেড়ে উটে দাঁড়ালাম। এবারে আমি আর কেন বসে থাকি। সেদিন আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল আজকে আমি কেন ওর জন্য দাঁড়িয়ে থাকব। আমাকে চেয়ার ছেড়ে উঠতে দেখে তিতলিও চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। ওর চোখ আমার চোখের ওপরে নিবদ্ধ, চোয়াল মাঝে মাঝে শক্ত হচ্ছে, দাঁতে দাঁত পিষছে। সেই রক্তিম চেহারা দেখে আমি প্রমাদ গুনলাম, কিন্তু কিছুতেই ভেবে পেলাম না আমার দোষ কোথায়।
 
ক্লাসের দরজা দিয়ে বের হতে যাবো, একদম পিঠের পেছনে দাঁড়িয়ে গম্ভির গলায় তিতলি বলল, “দাঁড়াও কথা আছে।”

আমি ওর দিকে দেখে বললাম, “কি?”

নিচু গম্ভির গলায় আমাকে বলল, “নিচে চল তারপরে।”
 
ইন্সটিটিউট থেকে বের হতে যাবো কি হোঁচট খেল তিতলি আর ওর জুতোর ফিতে ছিঁড়ে গেল। আমি পাশেই ছিলাম তাই টাল সামলাতে না পেরে আমার জামা খামচে ধরে ফেলল। আমিও সঙ্গে সঙ্গে ওর সামনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলাম যাতে পরে না যায়। এক হাতে আমার জামা ধরে অন্য হাতে আমার হাত সরিয়ে দিয়ে আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে রইল।
 
ছেঁড়া জুতো পায়ে ফুটপাথের একপাশে দাঁড়িয়ে আমার দিকে রোষকষিত নয়নে আগুন ঝরিয়ে বলল, “এই তোমার জন্য আমার জুতো ছিঁড়ে গেল।”

আমি হা করে ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “তোমার জুতো ছেঁড়ার পেছনে আমার হাত কোথায়?”

আমার হাতের মধ্যে দুম করে নিজের ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বলল, “আগে বল রবিবার কোথায় ছিলে।”

আমি ওর প্রশ্ন শুনে অবাক হয়ে গেলাম, “বাড়িতে আর কোথায় থাকব।”

তিতলি ভুরু কুঁচকে আমার দিকে দেখে বলল, “এক্সট্রা ক্লাস ছিল তুমি জানতে না?”

আমি আকাশ থেকে পড়লাম, “না।”

দাঁত কিড়মিড় করে বলল তিতলি, “থাকো আরো তোমার ওই ওই বন্ধুর সাথে।”

আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “এর মধ্যে অনির্বাণ কি করল?”

দাঁত কিরমির করেই উত্তর এলো, “ক্লাসের পরে সিগারেট টানার জন্য দৌড় দিয়ে চলে গেলে।”

আমিও তখন ওকে বললাম, “তুমিও তো চলে গেলে সেদিন।”

কটমট করে আমার দিকে দেখে বলল, “একদম মিথ্যে কথা বলবে না। আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ। ভাইকেও বলেছিলাম দাঁড়িয়ে থাকতে।”

আমি আকাশ থেকে পড়লাম, “সেদিন আমি সচক্ষে দেখেছি তুমি ক্লাস শেষে ইন্সটিটিউট থেকে বেড়িয়ে গেলে। আমিও তোমার পেছন পেছন ইন্সটিটিউট থেকে বেড়িয়ে দেখলাম যে তুমি আর নেই।”

অভিমানিনীর ক্রোধ কিছুতেই কম হয় না। ঝাঁঝিয়ে উঠল আমার দিকে দেখে, “হ্যাঁ, কাকে না কাকে দেখে তার পেছনে দৌড়েছে কি জানে রে বাবা। ক্লাসের পরে আমি কোওরডিনেটরের কাছে গেছিলাম এক্সট্রা মেসিন রুমের জন্য। ভেবেছিলাম বাইরে বেড়িয়ে তোমাকে বলব। কিন্তু তোমার দেখা নেই। প্রায় কুড়ি মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলাম। ভাই বার বার জিজ্ঞেস করছিল তাও দাঁড়িয়েছিলাম। তুমি না...” বলেই আমার হাত থেকে নিজের ব্যাগ টানতে গেল।
 
অভিমানিনীর রোষকষিত নয়নের কারণ এতক্ষনে আমার সামনে সব পরিষ্কার হল। সত্যি বড় অপরাধ, এই অপরাধের ক্ষমা নেই। কাকে দেখে যে সেদিন কি ভেবে নিয়েছিলাম জানি না। আমি অপরাধীর মতন মাথা চুলকে ওর সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম। কটমট করে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে তিতলি। কি উত্তর দেব ভেবে পাচ্ছি না। ওর হাত এখন ওর ব্যাগের ওপরে আর ওর ব্যাগ আমার বাঁ হাতের মধ্যে। ব্যাগের ওপরে টানাটানি চলছে না তবে টানাটানি চলছে বুকের মধ্যে।
 
আমি মৃদু হেসে ওকে বললাম, “আচ্ছা বাবা, এই ছেঁড়া জুতো পায়ে দিয়ে যাবে নাকি বাড়ি?”

ঝাঁঝিয়ে উঠল রূপসী ললনা, “হ্যাঁ, খালি পায়ে যাবো।”
 
সেই প্রথম বার ওকে ওইভাবে ঝাঁঝিয়ে উঠতে দেখলাম। যে মেয়ের মুখে কোনদিন জোরে আওয়াজ শুনিনি তার মুখ থেকে এই ভাবে ঝাঁঝালো শব্দ শুনে হাসিও পেয়ে গেল।
 
আমাকে হাসতে দেখে আরও রেগে গেল তিতলি, “তুমি হাসছ?”

আমি এপাশ ওপাশ দেখে দেখলাম মোড়ের মাথায় রাস্তার পাশেই একটা মুচি বসে আছে। আমি তিতলিকে বললাম, “দেখো আমার ওপরে রাগ করে খালি পায়ে বাড়ি গেলে পা কেটে রক্ত বেড়িয়ে যাবে।”

নিজের ব্যাগে টান মেরে বলল, “যায় যাক, তুমি যাও তোমার সিগারেট ধরাও।”

আমি পড়লাম মহা সমস্যায়, কি করা যায়। শেষ পর্যন্ত ক্ষমা চাইলাম, ভুল আমার, কাঁচুমাচু মুখ করেই বললাম, “আচ্ছা সরি। তুমি এখানে দাঁড়াও, জুতোটা দাও আমি ঠিক করিয়ে নিয়ে আসছি।”

সঙ্গে সঙ্গে আমার হাত ধরে ফেলে তিতলি, প্রায় চেঁচিয়ে বলল, “এই না না, ছিঃ জুতো নয়।”
 
তারপরে কোন রকমে জুতো পায়ের মধ্যে ঘষতে ঘষতে মুচির ওইখানে গেলাম দুইজনে। মুচি কে দিয়ে জুতো সারানোর সময়ে আমার বাঁ পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রইল তিতলি। আমার বাজুর সাথে ওর বাজুর ছুঁয়ে থাকে। এমন সময়ে ওর আনমনা ডান হাতের আঙ্গুল আমার আঙ্গুলের সাথে ছুঁয়ে যায়। চাঁপার কলি নরম ফর্সা হাতের আঙ্গুলের ছোঁয়ার মধ্যে একটা বিদ্যুৎ চমকায় জানতাম না। আমি ডান হাতের কড়ে আঙ্গুল দিয়ে আলতো করে ওর আঙ্গুল ছুঁয়ে দিলাম। আড় চোখে ভুরু কুঁচকে আমার দিকে দেখল আমি সঙ্গে সঙ্গে হাত সরিয়ে নিলাম। মুচকি হাসি ঝিলিক দিলো মিষ্টি গোলাপি ঠোঁটে।
 
আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “আজ তোমার ভাই আসছে না?”

মৃদু হেসে মাথা দোলায় রমণী, “না আর আসবে না। ওর কোচিং ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। বাবা বলেছে ক্লাস শেষে ট্যাক্সি করে বাড়ি ফিরতে।”

আমার চক্ষু চড়ক গাছ, জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি সব সময়ে ট্যাক্সিতেই চড় নাকি?”

ম্লান হেসে শুকনো মুখে আমাকে উত্তর দিল তিতলি, “আমি না একটু ক্লস্ট্রোফোবিক। মানুষের ভিড় দেখেলেই আমার কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে আসে। ভিড় ভর্তি বাসে একদম চড়তে পারি না। মনে হয় যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে। পাগল পাগল লাগে, শ্বাস নিতে পারি না একদম।”

আমি বুঝলাম, মাথা দুলিয়ে বললাম, “আচ্ছা, এবারে বুঝলাম।”

মৃদু হাসি দিল আমাকে দেখে, “কি বুঝলে?”

আমিও চোখ নাচিয়ে উত্তর দিলাম, “এই যে তুমি ভিড় একদম পছন্দ কর না। তাই বিশেষ কারুর সাথে মেলা মেশাও করো না।”

মুচকি হাসি দিল তিতলি, “অনেক কিছুই বুঝে গেলে দেখছি।”
 
আমি মাথা নাড়লাম, বুঝতে চাইলেও কি আর বুঝতে পারি নাকি, নাকি বুঝতে চাইছি না একদম। জুতো ঠিক হয়ে গেলে আমি আর তিতলি আমার বাইকের দিকে হাঁটতে শুরু করে দিলাম। রাত সাড়ে আটটা, কোলকাতার রাস্তায় তখন মনে হয় যেন সন্ধ্যে নেমেছে, মানুষের ঢল চারপাশে। ভিড় বাঁচিয়েই ওকে আগলে নিয়েই বাস স্টান্ডের দিকে চলে এলাম যেখানে আমার বাইক রাখা থাকে। মুচির জায়গা থেকে বাস স্টান্ড বড় জোড় বিশ পা হবে, তবে সেই বিশ পা পাশাপাশি হাঁটতে খুব ভালো লেগেছিল। কারুর মুখে কোন কথা ছিল না। ওর ব্যাগ তখন আমার হাতের ছিল আর আমার ব্যাগ ছিল আমার কাঁধে। বাইক পারকিঙ্গের ওইখানে দাঁড়িয়ে আমি ওর হাতে ব্যাগ ধরিয়ে দিলাম।
 
ব্যাগ হাতে নিয়ে আমার চোখে চোখ রেখে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল, “বাড়িতে ড্রপ করে দেবে?”

সেই শুনে আমার মনে হল যেন হাতে চাঁদ পেয়ে গেছি। আমি তৎক্ষণাৎ বলে উঠলাম, “হ্যাঁ হ্যাঁ, নিশ্চয়। মহারানীর জন্য রথ হাজির, সারথিও হাজির।” বলে কুর্নিশ করার ভান করে একটু মাথা নোয়ালাম।

লজ্জা পেয়ে গেল তিতলি, নাকের ডগা লাল হয়ে গেল, ফোলা নরম গালে রক্তিমাভা দেখা দিল। “ধ্যাত।” বলে আমার বাইকের পেছনে উঠে বসলো।
 
ব্যাগের ব্যাবধান আর নেই আমাদের মাঝে। আমার পিঠ ঘেঁষেই বসলো তিতলি। আমার চওড়া পিঠের ওপরে রূপসী ললনার নধর দেহবল্লরির উষ্ণ পরশ পেলাম। ডান হাতে আমার ডান কাঁধ ধরে বসলো। নরম চাঁপার কলি আঙ্গুলের পরশে মাতন লাগলো আমার শরীরে। শক্ত পিঠের ওপরে আরও একটা কোমল স্পর্শ পেয়েছিলাম। তিতলির পীনোন্নত নিটোল কোমল ডান স্তনের। একটু লজ্জা লেগেছিল সেই পরশে। শরীরের রক্ত এলোপাথারি ছুটে বেড়িয়েছিল সারা দেহের সব ধমনী দিয়ে।
 
আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “ঠিক করে বসেছ?”

কাঁধে চাপ দিয়ে উত্তর দিল রূপসী ললনা, “হ্যাঁ।”
 
বাইকে স্টার্ট দিলাম আমি। মনে হল পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চেপে কোন রাজকুমারীকে নিয়ে তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে চলেছি। সেই সাথে মনে হল, শুধু মাথা ঢাকা ওয়ালা একটা হেলমেট কেনার হয়ত সময় হয়ে এসেছে। পিঠের ওপরে শরীরের প্রায় সম্পূর্ণ ভার ঢেলে দিয়েছিল তিতলি। দেহের উষ্ণ পরশে মাতাল হয়ে যাওয়ার যোগার আমার।
 
যেতে যেতে আমাকে জিজ্ঞেস করল, “তোমার অফিস ক’টায় ছুটি হয়?”

উত্তর দিলাম, “এই সাড়ে পাঁচটা কি ছ’টা নাগাদ।”

জিজ্ঞেস করল তিতলি, “কাল তো ক্লাস নেই, তাহলে অফিসের পরে কি করছ?”

আমি উলটে ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “কিছু না, অফিস শেষে বাড়ি ফিরব। একটু বাজার ঘাট করার আছে এই আর কি।”

একটু চুপ করে থাকার পরে মিহি কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, “আমাকে একটু ভিসুয়াল বেসিকটা বুঝিয়ে দেবে? ওই ডায়লগ বক্স গুলো কি করে বানায়।”

আমি মাথা দোলালাম, “হ্যাঁ, পরশু দিন ক্লাসের আগে না হয় বুঝিয়ে দেব।”
[Image: 20210115-150253.jpg]
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by pinuram - 05-01-2021, 12:32 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 14-01-2021, 11:07 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 07-02-2021, 12:55 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 07-02-2021, 01:06 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 08-02-2021, 02:00 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 08-02-2021, 08:42 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 08-02-2021, 08:45 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 09-02-2021, 12:15 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 09-02-2021, 08:38 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 10-02-2021, 01:32 AM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 12-02-2021, 12:03 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 14-02-2021, 02:45 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 18-02-2021, 05:02 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 24-02-2021, 05:46 PM



Users browsing this thread: 31 Guest(s)