Thread Rating:
  • 100 Vote(s) - 3.34 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance সুপ্তির সন্ধানে
#59
পর্ব এক (#2-#2)

 
সেদিন বৃষ্টি নেই। অনির্বাণের তাড়া ছিল তাই ক্লাসের শেষেই বাসে চেপে চলে গেল। অনুস্কা সেদিন আমার আগে থেকেই বাসস্টান্ডে দাঁড়িয়ে ছিল। লক্ষ্য করেছিলাম যে ক্লাসের সময়েও বেশ আনমনা ছিল। অনির্বাণ ইয়ার্কি মেরে বলেছিল, নিশ্চয় বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া হয়েছে নয়ত বয়ফ্রেন্ড বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। অনুস্কার চোখে মুখে ভীষণ একটা অস্বস্তিকর অস্থিরতার ভাব, যেন কিছু হারিয়ে গেছে। পরনে গোলাপি রঙের একটা চাপা সালোয়ার কামিজ, কপালে ছোট একটা গোলাপি টিপ। বাম হাতের কব্জিতে একটা পাতলা সোনার চেন দেওয়া ঘড়ি, টাইটানের মনে হয়। কাঁধে কলেজের ব্যাগ। পাতলা ঠোঁট জোড়া মিষ্টি গোলাপি রঙের। প্রসাধন বলতে তেমন কিছুই নেই মুখ মন্ডলে। মেকি সাজ নেই চেহারায় তাই হয়ত অনন্যা। আমাকে দেখে এগিয়ে এলো, মনে হল যেন আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। আমি একটু চিন্তিত হয়ে পড়লাম। সেই সাথে একটু অচেনা উত্তেজনা যেটা এর আগে কোনদিন অনুভব করিনি। আসলে এত সুন্দরী কেউ নিজে থেকে আগ বাড়িয়ে আমার সাথে গল্প করেনি তাই। ছোট বেলা থেকে ছেলেদের কলেজে পড়াশুনা, ছেলেদের কলেজে পড়াশুনা। সেখানে মেয়েদের যাওয়া আসা মানে ছাত্রের পরিবারের কেউ। তাদের সাথে কোনদিন কথাবার্তা হত না।
 
আমার দিকে এগিয়ে এসে আমাকে বলল, “তোমার তাড়া আছে নাকি?”

আমি নেতি সূচক মাথা নাড়ালাম, “না না তেমন তাড়া নেই।” অনুস্কা একটু দোনামনা করছে দেখে আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কি হয়েছে?”

একটু অস্বস্তি, একটু ইতস্তত ভাব নিয়েই বলল, “না মানে আমার পার্সটা না হারিয়ে গেছে।”

শুনে একটু খারাপ লাগলো তাই জিজ্ঞেস করলাম, “কোথায় হারালো?”

ভারাক্রান্ত চেহারা করে অনুস্কা উত্তর দিল, “কলেজ থেকে আসার সময়ে।”

আমি জিজ্ঞেস করলাম, “বাসে নাকি? বাসের টিকিট আছে?”

মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিল অনুস্কা, “না না ট্যাক্সিতে হয়ত পরে গেছে। ইন্সটিটিউটে এসে দেখি আমার ব্যাগ খোলা ছিল সেখান থেকে কখন পরে গেছে খেয়াল নেই।”
 
আমার চক্ষু চড়ক গাছ। কলেজ থেকে ট্যাক্সি করে ইন্সটিটিউট আসে রোজ দিন। কলেজের সামনে থেকে খালি মিনিবাসে চাপলেই হয়, সোজা কাঁকুড়গাছি। বেশ বড় লোকের মেয়ে তাহলে।
 
আমার বাইকের কাছে এসে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষন এদিকে ওদিকে তাকিয়ে আমাকে বলল, “আমাকে বাড়িতে ছেড়ে দেবে প্লিজ।”
 
ওর অসহায় কাতর আবেদনে সারা না দিয়ে থাকতে পারলাম না। আমিও মাথা দুলিয়ে বললাম, “হ্যাঁ হ্যাঁ।” তবে পার্স হারিয়ে গেছে শুনে একটু দুঃখ পেলাম।
 
আমি বাইকে বসলাম। বাঁ দিকে পা ঝুলিয়ে বাইকে বসে পড়ল অনুস্কা। একটা মিষ্টি গন্ধ মাতাল করে দিল আমাকে, অনুস্কার গায়ের মদির ঘ্রাণ।
 
বাইকের পেছনে বসতে বসতে আমি জিজ্ঞেস করলাম অনুস্কাকে, “আজ, তোমার সারথি আসেনি?”

অনুস্কা বলল, “না ভাইয়ের জ্বর হয়েছে তাই আসতে পারেনি।”
 
কথাটা শুনে আমার বুক থেকে যেন একটা বড় পাথর সরে গেল। আচ্ছা তাহলে যে ছেলেটা অনুস্কাকে নিতে আসত সে ওর ভাই। আমি তো কত কিছুই ভেবে বসেছিলাম। মনের মধ্যে গুচ্ছ গুচ্ছ গোলাপ গ্যাদা শিউলি জবা কত কিছুর ফুল ফুটে গেল, ইয়াত্তা নেই। মনে মনে কড় গুনে দেখলাম, অনুস্কা এই কুড়ি হবে আমার পঁচিশ, জমবে ভালো। ইতর শয়তানি মানসিকতা। ধ্যাত, বলে নিজেই হেসে ফেললাম।
 
আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “পার্সে ইম্পরট্যান্ট কিছু ছিল কি?”

মাথা নাড়াল অনুস্কা, “না বিশেষ কিছুই ছিল না। এই চার পাঁচ’শ টাকা আর কলেজের আইডি কার্ড।”
 
চার পাঁচ’শ টাকা মানে আমার কাছে অন্তত অনেক টাকা। কত অনায়াসে অনুস্কা বলে দিল যে বিশেষ কিছুই ছিল না। আমিও বুঝলাম বেশি ফুল ফুটানো একদম উচিত নয়। ওই বাইকের পেছনে পর্যন্ত ঠিক আছে। আমার কাঁধে হাত রাখল, নরম চাঁপার কলি ফর্সা আঙ্গুল দিয়ে একটু চেপে ধরল কাঁধ। দুইজনের মাঝে ওর ব্যাগ রাখা, দুই দেহের মাঝে একটা ভদ্রতার ব্যাবধান। বাইকে স্টার্ট দিলাম। রাত অনেক, বৃষ্টি না হলেও জলো হাওয়া আমাদের উড়িয়ে নিয়ে চলেছে। নাগের বাজার পর্যন্ত কারুর মুখে কোন কথা ছিল না। চুপচাপ আমার কাঁধে হাত রেখে বসেছিল। কাজিপাড়ার মোড়ের অদুরে আসতেই আমার কাঁধে আলতো চাপ দিল অনুস্কা।
 
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “কি হল?”

অনুস্কা নিচু গলায় বলল আমাকে, “এইখানে নামিয়ে দাও।”

আমি ভদ্রতার খাতিরে বললাম, “না না, এত রাতে এই রাস্তায় কেন নামিয়ে দেব। চলো বাড়ির সামনে পৌঁছে দিচ্ছি।”

অনুস্কা মাথা দুলিয়ে বলল, “না না বাড়িতে নয়।” গলাটা একটু ভীত সন্ত্রস্থ শোনাল। “তুমি আমাকে এখানেই নামিয়ে দাও। এই তো সামনেই বাড়ি। আমি হেঁটে চলে যাবো।”
 
অগত্যা আমি বাইক থামিয়ে দিলাম একটা গলির সামনে। আমার কাঁধে হাত রেখে বাইক থেকে নেমে পড়ল অনুস্কা।
 
বাইক থেকে নেমে আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে ডান হাত তুলে মিষ্টি হেসে বলল, “এই আমি আসছি।”
 
আমিও মাথা দোলালাম, বাড়ি দেখা হল না তবে জানা গেল কোন গলিতে ওর বাড়ি। জেনেও কি লাভ, যে মেয়ে সব সময়ে ট্যাক্সি চড়ে, দামী জামা কাপড় পরে তার বাড়ি জেনে কোন লাভ নেই। অলীক স্বপ্ন দেখে কি হবে, শুধু শুধু রাতের ঘুম নষ্ট হবে আর কিছুই হবে না।
 
দুই কদম এগিয়ে গিয়ে আবার আমার দিকে ফিরে এলো। বাইকের সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল, “পরের ক্লাসে আসছ তো?”

আমি একটু হেসে উত্তর দিলাম, “হ্যাঁ আসছি।” মনে মনে বললাম, তোমার জন্য না এসে কি আর পারা যায় নাকি।

টিয়াপাখির মতন টিকালো নাক কুঁচকে বলে, “এই আজকের ক্লাসের কিছুই আমার মাথায় ঢোকেনি।”

আমি ওকে হেসে জিজ্ঞেস করলাম, “তাহলে স্যারকে প্রশ্ন করনি কেন?”

একটু হারিয়ে যাওয়া চেহারা করে বলল, “পার্স হারিয়ে যাওয়াতে মন খারাপ লাগছিল। কার কাছে টাকা চাইব ভেবে পাচ্ছিলাম না। কে আবার কি ভেবে বসে জানি না।”
 
বুকটা ভরে গেল আমার, তাহলে আমার প্রতি একটু সদয় হয়েছে মহারানী। ভরসা জেগেছে আমার ওপরে একটু। কিন্তু ওর মুখ থেকে শোনার জন্য মন ছটফট করছিল।
 
তাই শয়তান মন শেষ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করে ওকে, “তারপর?”

মুচকি লাজুক হাসি দিল আমাকে, “কিছু না। তোমার রাত হচ্ছে না তো?”

আমি মাথা দোলালাম, আমার রাত কি আর দিন কি। “না না, বাড়িতে দেরি করেই ফিরি।”

অনুস্কা মুচকি হেসে বলল, “তোমার সাথে যে থাকে, আই মিন তোমার বন্ধু।”

মাথা দোলালাম, “হ্যাঁ, অনির্বাণ, এই এক নম্বর গেটে থাকে।”

নাক কুঁচকে বাঁকা হেসে বলে, “একটু কেমন যেন।”

আমার ভীষণ হাসি পেয়ে গেছিল। আমি মাথা চুলকে অপরাধীর হাসি দিয়ে বললাম, “হ্যাঁ একটু শয়তান।”
 
ফিক করে হেসে ফেলল সুন্দরী ললনা। গোলাপি ঠোঁটের মাঝে দুই সারি মুক্তো ঝকমক করে উঠল। সত্যি বলতে অনির্বাণটা এমন শোঁক শোঁক করে আমার নিজেরই মাঝে মাঝে বড্ড খারাপ লাগে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মাঝে মাঝেই অনির্বাণ আর আমি গল্প করার সময়ে মেয়েদের দেখে একটু টিপ্পনি কাটত। মালের পাছা দেখ মাইরি, চাঁটি মারতে ইচ্ছে করে। উফফফ, কি মাই রে, ডাব ঝুলছে। ইসস, এটা একদম ম্যঞ্চেস্টার বাঁড়া। দেখ বাঁড়া, পুরো এম্বাসেডরের ডিগি রে। আমার ভীষণ হাসি পেত ওর কথা শুনে। আমি উত্তর দিতে পারলাম না। কারণ আমি ওর সাথেই থাকতাম, নিশ্চয় ওর সাথে মিলিয়ে আমার চরিত্র এতক্ষনে মনের মধ্যে ধরে নিয়েছে।
 
বেশ কিছুক্ষন কারুর মুখে কোন কথা নেই। হটাত করেই যেন সব কথা শেষ হয়ে গেছে আমাদের, অবশ্য কি বা বলব, এইভাবে কোন মেয়ের সাথে কোনদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে এইভাবে কথা বলিনি। ল্যাম্প পোস্টের হলদে আলোয়, গোলাপি চাপা সালোয়ার কামিজে স্বর্গের অপ্সরা রম্ভার মতন লাগছিল ওকে। আমি হা করে ওর দিকে চেয়ে দেখাতে চোখ নামিয়ে নিল অনুস্কা। মনে হল ওর যেন একটু অস্বস্তি হচ্ছে।
 
লাজুক হেসে আমাকে জিজ্ঞেস করল, “তোমার নামটা এত বড় কেন?”

কথাটা শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম। নাম তো দিম্মার দেওয়া। এখন তো আর কেটে ছেঁটে ছোট করতে পারি না। ইয়ার্কি মেরে উত্তর দিলাম, “তখন তোমার সাথে দেখা হয়নি, না হলে তোমাকে জিজ্ঞেস করে নিজের নাম রাখতাম।”

হেসে ফেলল অনুস্কা। নাকের ডগা লাল হয়ে উঠল, গালে রক্তিমাভা, নিচের ঠোঁট দাঁতে চেপে খুব নরম গলায় বলল, “আদি।”
 
প্রথমেই কানে গেছিল শব্দটা কারণ আমার দিম্মা শুধু মাত্র আমাকে এই নামে ডাকে, বাকি আরো একজন ডাকতেন তিনি এখন ইহলোকে নেই। সেই আদরের নাম শুনে আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। নিজের কান কে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। সবার কাছে আমি বুধাদিত্য অথবা বুধো, শুধু মাত্র দিম্মার কাছে আদি। সেই নাম আমার সামনে দাঁড়ানো লাজুক রূপসীর ঠোঁটে।
 
শুনেও না শোনার ভান করে ওর দিকে মাথা এগিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “কিছু বললে কি?”

বাঁ দিকে ঘাড় কাত করে মৃদু হেসে যেন ইশারায় একটু বকুনি দিল। মাথা দুলিয়ে বলল, “কিছু না, যাও তুমি বাড়ি যাও।”

আমি বাইকে স্টার্ট দিয়ে ওকে বললাম, “তুমি আগে যাও তারপরে আমি যাবো।”

ঘড়ি দেখল অনুস্কা, আমিও দেখলাম। রাত পৌনে ন’টা বাজে। মুখ শুকনো হয়ে গেল মুহূর্তের জন্য, “আচ্ছা আজকে আমি আসি।”
 
এক্সেলেটরে মোচর দিয়ে আওয়াজ করে দিলাম। ওর চোখ জোড়া কিছু একটা বলতে চাইছে। হটাত করে ডান হাত আর বাঁ হাত নিজের বুকের সামনে আনল। দুই হাতের উল্টো পিঠ করে, আড়াআড়ি করে একটার উপরে আরো একটা রেখে, একত্রে জুড়ে দিল। দুই হাতের তালু নিজের দিকে ফেরানো, দুটো বুড়ো আঙ্গুল পরস্পরের সাথে মেশান। ইশারায় কি যে বলতে চাইছে বুঝতে পারলাম না। দুই হাতের ধাঁচ দেখে মনে হল এক পাখির মতন কিম্বা প্রজাপতির মতন একটা আকার। আমি অবাক হয়েই ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। তারপরে নিজের দিকে দেখিয়ে ইশারা করল। মাথায় কিছুই ঢুকল না আমার। বোকা, ভীষণ বোকা আমি।
 
ফিসফিস করে বলল আমাকে, “তিতলি।”
 
বলেই লাজুক হেসে সারা অঙ্গে ঢেউ তুলে ত্রস্ত পায়ে গলির মধ্যে যাত্রা করল। আমি ওর ত্রস্ত পায়ের চলনের দিকে হা করে তাকিয়ে রইলাম। সত্যি কত বোকা, প্রজাপতিকে তিতলি ও বলে। কিন্তু তিতলি কি? গলির মোড় পর্যন্ত এগিয়ে গিয়ে আমার দিকে ঘুরে তাকাল। ওই দিকটা একটু অন্ধকার হলেও দুর থেকে দেখতে পেলাম দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমি হাত তুলে একটু নাড়ালাম। দুর থেকে ওর মুখের ভাব বোঝা গেল না তবে মাথা নিচু করে হারিয়ে গেল। বাইক চালিয়ে বাড়ির দিকে যেতে যেতে ভাবতে বসলাম, এই তিতলি কি জিনিস। ওহ শালা, নিজেকে বেশ কয়েকটা উত্তম মধ্যম গালাগালি দিলাম। ওর নাম তিতলি, সেটাই বলতে চেয়েছিল। মনে হচ্ছিল বাইক ফিরিয়ে নিয়ে একবার ওকে ডাকি, তারপরে ভাবলাম, বড্ড বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলছ আদি।
 
দুই দিন পরে যথারীতি আবার ক্লাসে দেখা। সবার সামনে যেন আমাকে দেখেও না দেখার ভান করল। সেই বসলো গিয়ে সামনের সিটে, ওর পাশে আরও দুটো মেয়ে। সাদা বোর্ডে পেন দিয়ে লিখে লিখে কিছু বুঝিয়ে চলেছে স্যার। আমি মাথা দুলাই আর আড় চোখে তিতলির দিকে তাকাই। না, ওর নজর পেছনের দিকে নেই একদম। আমি সারাক্ষন ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। কারণ আকাশী নীল রঙের একটা লম্বা বেশ বড় ঘেরের ফ্রক পরে এসেছিল সেদিন। একদম নীল আকাশের পরীর মতন দেখতে লাগছিল তিতলিকে। ফ্রকের পেছনের দিকটা বেশ কাটা ছিল, ফর্সা চওড়া পিঠ দেখে মাথা ঘুরে যাচ্ছিল আমার। নিশ্চয় আরো অনেকের হচ্ছিল সেই অবস্থা। ওর ঠিক পেছনে একটা ছেলে বসেছিল, সে বোর্ডে কম তিতলির পিঠের দিকে বেশি করেই চেয়েছিল। স্যার ঝড়ের গতিতে বলেই চলেছে। মাঝে মাঝে কেউ কেউ প্রশ্ন করলে তাদের উত্তর দিচ্ছেন বটে। অনেকের প্রশ্নের হাত উঠানোর মধ্যে তিতলিও ছিল। গলায় জোর না থাকায় সেই প্রশ্ন আর স্যারের কানে পৌঁছায় না। ক্লাসের শেষের দিকে বাঁ দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে একটু পেছনে মুড়ে আড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে দেখল তিতলি। আমি ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কি হল। ঠোঁট উলটে চোখের ইশারায় স্যারের দিকে দেখিয়ে মাথা নেতি সূচক একটু দুলিয়ে দিল। বুঝলাম কিছুই বুঝতে পারছে না। আমি মুচকি হেসে চোখ টিপে ইশারায় বললাম, দাঁড়াও কিছু একটা করছি।
 
একটা সাদা কাগজে লিখলাম “বম্ব”। কাগজটা দলা পাকিয়ে সামনের দিকে ছুঁড়ে মারলাম। পড়ল গিয়ে স্যারের টেবিলের ওপরে। সঙ্গে সঙ্গে চেঁচিয়ে উঠলাম “বম্ব, বম্ব” সবাই থ।

স্যার থতমত খেয়ে পড়া থামিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল, “কোথায় বম্ব।” সবাই বোমার নাম শুনে তটস্থ।

অনির্বাণ হেসে ফেলল। আমি বললাম, “স্যার, টেবলের ওপরে।”

পড়া থামিয়ে আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন স্যার, “এটা কি হচ্ছে ঘোষ বাবু?”

আমি উত্তর দিলাম, “বোমা ফাটালাম, না হলে থামছিলেন না তো।”

স্যার আমাকে প্রশ্ন করল, “মানে? কেন?”

আমি স্যারের চোখে চোখ রেখে বললাম, “আশিকে নব্বুই করার জন্য দৌড়াচ্ছেন। সেটা তো সবাই পারে। কোনদিন দশকে চল্লিশ করে দেখান।”
 
কেউ কি বুঝল না বুঝলো জানি না, কারণ সবাই আমার কথা শুনে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। শুধু মাত্র দেখলাম, মুখ চেপে তিতলি হেসে চলেছে। চোখা চুখি হতেই মৃদু মাথা দুলিয়ে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করল। স্যার হয়ত বুঝলেন কি বলতে চাইছি, তাই পড়া থামিয়ে দিয়ে মৃদু হেসে আমাকেই জিজ্ঞেস করলেন কি প্রশ্ন। আমি ইশারায় তিতলিকে বললাম প্রশ্ন কর। তখন তিতলি প্রশ্ন করল। আর তার উত্তর পেল।
 
ক্লাস শেষের পরে আমি আর অনির্বাণ অন্যদিনের মতন বাইরে বেড়িয়ে এলাম। আমার চোখ তিতলিকে খুঁজে বেড়ায়। মনে হয় বেড়িয়েছিল আমাদের আগেই, কারণ সামনের চেয়ারে বসে ছিল তিতলি। বাইরে বের হতেও দেখেছিলাম মনে হয়, একটা নীল রঙের পোশাকের কেউ। কিন্তু বাইরে বেড়িয়ে আর ওর দেখা পেলাম না। বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলাম বাস স্টান্ডে সেদিন। হয়ত আমার দেখার ভুল হতে পারে, হয়ত ক্লাসের শেষে ওয়াশ রুমে গেছে। কিন্তু মিনিট পনেরো পরেও যখন আর দেখা পেলাম না তখন বুঝলাম যে তিতলি চলে গেছে। দিনটা শুক্রবার, সেই সোমবারে দেখা হবে। দুটো দিন তিতলিকে দেখতে পাবো না ভেবেই বুকের মধ্যে একটু শূন্যতা ভর করে এলো। কারণ জানি না। ভালোবাসি নাকি ওকে, কই না তো। প্রেমে পড়লে নাকি ঘুম হয় না, কাজে মন বসে না। আমি তো দিব্বি খাই দাই ঘুমাই কাজ করি। মন ভালো ছিল না, শুধু মনে হচ্ছিল হাত নাড়াল না। আমার আগেই চলে গেল আমাকে বিদায় না জানিয়ে। মনকে শান্ত করলাম, নিশ্চয় ওর ভাই আগেই চলে এসেছিল তাই হয়ত আমার জন্য অপেক্ষা করেনি। দেখা যদিও বেশ কয়েকদিনের তবে মোটে দুই দিন কথা হয়েছে। এই তো শুধু নাম জানা জানি হল। এর মধ্যে এইভাবে কাতর হয়ে পরাটা ভীষণ খারাপ। তারপরে আমি কি জানি ওর মনে কি আছে?
[Image: 20210115-150253.jpg]
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by pinuram - 04-01-2021, 12:38 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 14-01-2021, 11:07 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 07-02-2021, 12:55 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 07-02-2021, 01:06 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 08-02-2021, 02:00 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 08-02-2021, 08:42 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 08-02-2021, 08:45 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 09-02-2021, 12:15 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 09-02-2021, 08:38 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 10-02-2021, 01:32 AM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 12-02-2021, 12:03 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 14-02-2021, 02:45 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 18-02-2021, 05:02 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 24-02-2021, 05:46 PM



Users browsing this thread: 52 Guest(s)