22-03-2019, 06:38 PM
-- পর্ব ১২ --
সৌভিক মুখ তুলে তাকায় নগ্ন দেহে শুয়ে থাকা এলির পানে... হিলহিলে শরীরে এলি শুয়ে আছে তার দিকে পেছন ফিরে... মসৃণ সুঠাম পীঠ, সরু কোমর আর উদ্বেল স্ফিত নিতম্বে এক কাল্পনিক পরীর মত দেখতে লাগছে এলিকে... যেন বাস্তব নয়... এক স্বপনচারিতার মত নিজের শরীরটাকে মেলে ফেলে রেখেছে সে বিছানার ওপরে... নিঃশ্বাস নেবার সাথে ধীর লয়ে মেদহীন পেটটা খুব ধীরে ধীরে উঠছে নামছে... এলির নগ্ন পীঠে হাত রাখে সৌভিক... এই খানিক আগেই প্রচন্ড উদ্যামতায় তাকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে সে... রমনের প্রখর ছলাকলায় যৌন উত্তেজনার শিখরে কি করে পৌছে দিতে হয় সেটা বোধহয় এলির সংস্পর্শে না এলে জানতেও পারতো না সৌভিক... তার শরীর নিংড়ে যেন সমস্ত শক্তিকে চুষে নিয়ে অশেষ করে দিয়েছে যোনির উষ্ণতা দিয়ে... একটা বড় নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে সৌভিকের... সামনে এহেন এক প্রচন্দ কামোদ্রেককারি নারী থাকা সত্ব্যেও, তার মনের গভীরে সুদেষ্ণার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে... নিজেকে হটাৎ করে ভিষন দোষী মনে হয় তার...
‘কি ভাবছ? বউএর কথা?’ চিন্তার জাল ছেঁড়ে এলির কথায়... এলিজাবেথের মুখের দিকে তাকায় সে...
‘উমমমম...’ সরাসরি স্বীকার করতে দ্বিধা বোধ করে সৌভিক...
সৌভিকের দিকে ঘুরে শোয় এলি, চাঁপাকলির মত সরু সরু আঙুলে সাজানো হাত তুলে সৌভিকের বুকের ওপরে রেখে বলে, ‘ভেবো না... তোমার বউ ভালোই আছে... যার হাতে সে পড়েছে, সে জানে কি করে সুখে ভাসাতে হয়... ওর ভালোই লাগবে...’ বলতে বলতে ক্ষনিক থামে... তারপর সৌভিকের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, ‘তুমি এঞ্জয় করেছে?’
‘ওহ! নিশ্চয়ই...!’ বলতে বলতে সামনের দিকে একটু ঝোঁকে সৌভিক, এলির নগ্ন কাঁধে গাঢ় চুম্বন এঁকে দেয় তার কথার স্বীকারক্তি হিসাবে... এলি আরো ঢুকে আসে সৌভিকের পানে... তার বুকের মধ্যে ঢুকে মাথা গুঁজে দেয় সে... সৌভিক প্রগাঢ় আলিঙ্গনে টেনে নেয় এলির শরীরটা নিজের দিকে... জড়িয়ে ধরে আদর করতে থাকে এলির চুলে পীঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে... আস্তে আস্তে ঘুমের কোলে ঢলে পড়ে এলিজাবেথ, সৌভিকের হাতের আদর খেতে খেতে...
এলিজাবেথ ঘুমিয়ে পড়ে, কিন্তু ঘুম আসে না কিছুতেই সৌভিকের... ছটফট করে বিছানায় শুয়ে... বারে বারে পাশ ফেরে এদিক থেকে ওদিকে... সে তার ফ্যান্টাসি পূরণ করেছে... এলিজাবেথ সততই নিঃসন্দেহে এক অপরূপ নারী, আর শুধু সুন্দরীই নয়, কামকলায় এলির অপার অভিজ্ঞতা... সে জানে কি ভাবে সুখের চূড়ায় পৌছে দিতে হয়... কিন্তু এই মুহুর্তে এক অদ্ভুত শূণ্যতা যেন সৌভিককে গ্রাস করে ফেলেছে... কিছুতেই যেন নিজের কাছে সে পরিষ্কার হতে পারছে না... মনের এক কোনায় যেন কি এক অশান্তির কালো মেঘ জমে উঠেছে...
বিছানা ছেড়ে সাবধানে উঠে দাঁড়ায় যাতে এলিজাবেথের ঘুমের কোন ব্যাঘাত না ঘটে... তারপর নিঃশব্দে ঘরের দরজা খুলে বাইরে আসে... ধীর পায়ে নেমে আসে নীচতলায়... কেন, তা সে জানে না... হয়তো সুদেষ্ণা ঠিক আছে, সেটা শুধু জানতেই? নিজের মনকে প্রবোধ দেয় সৌভিক...
ড্রইংরুমটা খালি, অবস্য সেটা থাকাটাই স্বাভাবিক... কিন্তু কেন জানে না সে, হয়তো আশা করেছিল এই মুহুর্তে ড্রইংরুমে সুদেষ্ণা আর ডেভিড বসে থাকবে... নিজেই নিজের বোকার মত চিন্তায় মাথা নাড়ে... ইতস্থত হেঁটে বেড়ায় নির্জন শব্দহীন ড্রইংরুমের মধ্যে, এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত... হটাৎ একটা শব্দে সচকিত হয়ে ওঠে সে... আওয়াজ লক্ষ্যে করে এগিয়ে যায়... কিচেনের মধ্যে সুদেষ্ণার দেখা পায়... ওকে দেখে খানিকটা আস্বস্থ হয় সৌভিক...
‘এই! এত রাত্রে কিচেনে কি করছ?’ চাপা গলায় পেছন থেকে প্রশ্ন করে সে...
পেছন থেকে এই ভাবে হটাৎ গলার স্বরে প্রথমটা চমকে উঠেছিল সুদেষ্ণা... তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে সৌভিককে দেখে হেসে ফেলে সে... ‘ওহ! তুমি! বাব্বা... হটাৎ করে জিজ্ঞাসা করাতে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম গো...’ তারপর ঘুরে মন দেয় নিজের কাজে... সৌভিককে উদ্দেশ্য করেই বলে ওঠে, ‘কফি করছিলাম... তা তুমি এখানে?’
‘না, মানে এই, জল খেতে এসেছিলাম...’ সুদেষ্ণার সরল প্রশ্নে কেমন ঘাবড়ে গিয়ে কোনো মতে উত্তর দেয় সে... ‘তুমি... তুমি ঠিক আছো তো?’ উদ্বিগ্ন প্রশ্ন করে পরমুহুর্তে...
‘হ্যাএ্যা... কেন? আমায় নিয়ে চিন্তা হচ্ছিল?’ বলতে বলতে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে সুদেষ্ণা... ‘দূর... তোমায় সামলে দিয়েছি যখন, তখন একেও সামলানো আমার কাছে কোনো ব্যাপারই না, বুঝেছো?’ ঘাড় ফিরিয়ে বলতে বলতে তাকায় সুদেষ্ণা, চোখের মণিতে দুষ্টুমীর ঝিলিক খেলে যায়...
‘ওহ!!!... হ্যা... আচ্ছা!...’ বোকার মত মুখ করে জোর করে ঠোঁটের কোনে হাসি টেনে আনে সৌভিক...
‘তুমি কফি খাবে? করবো তোমার জন্যও?’ আবার নিজের হাতের কাজে মন দেয় সুদেষ্ণা... তার ফাঁকে জিজ্ঞাসা করে সৌভিককে...
‘না... খাবো না...’ বলতে বলতে খেয়াল করে সুদেষ্ণার পরনের কাপড় বদলে গিয়েছে... এই মুহুর্তে তার পরনে আগের লং স্কার্ট নয়, তার বদলে একটা নাইট গাউন... গায়ের জামাটাও নিশ্চয়ই নেই... মনে মনে ভাবে সৌভিক...
‘তুমি নাইট গাউন পড়ে আছো? তোমার জামা কাপড়?’ না ভেবেই দুম করে জিজ্ঞাসা করে বসে সে, আর তারপরই বুঝে চুপ করে যায়...
ফের খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে সুদেষ্ণা... ‘এটা পড়তেই বেশি সুবিধার, তাই...’ হাসতে হাসতে জবাব দেয় সে...
সৌভিকের কিরকম একটা ভিষন অস্বস্থি হয়... কিন্তু সুদেষ্ণা তার মনের কথা ধরতে পারে না...
‘এই তুমি সত্যিই খাবে না কফি?’ ফের প্রশ্ন করে সুদেষ্ণা দুটো কাপে কফি ঢালতে ঢালতে... সে দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সৌভিক...
ট্রের ওপরে কাপ দুটোকে তুলে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় সুদেষ্ণা... ‘এই না গো... এবার যাই...’
‘ওহ!... হ্যা...’ মাথা নেড়ে সরে দাঁড়ায় সৌভিক... ওকে পাশ কাটিয়ে ট্রেতে রাখা দুকাপ কফি নিয়ে কিচেন থেকে বেরিয়ে এগিয়ে যায় নীচের তলার বেডরুমের দিকে সুদেষ্ণা... ওর চলে যাওয়ার দিকে বিহবল চোখে পলকহীন তাকিয়ে থাকে সৌভিক... খানিক পরেই কানে আসে বেডরুমের দরজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার আওয়াজ...
ধীর পায়ে কিচেন থেকে বেরিয়ে এসে দাঁড়ায় বেডরুমের বন্ধ দরজার সামনে... ভেতর থেকে হাল্কা কথা ভেসে আসে...
‘তোমার কফি...’ সুদেষ্ণার গলার স্বর... তারপরই সৌভিকের হাতের লোম খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে যায় ... ‘এই... একটু তো ঢেকে শোও... ইশ... কি ভাবে শুয়ে আছো!’ সুদেষ্ণার খিলখিলে হাঁসির সাথে প্রচ্ছন্ন প্রেমের পরিভাষা মিশে থাকে ওইটুকু তিরষ্কারে...
‘আচ্ছা, আচ্ছা... ঢেকে নিচ্ছি...’ হাসির সাথে ডেভিডের গলার স্বর...
বেডরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে দরজার পানে আরো খানিক তাকিয়ে থাকে সৌভিক... মনের মধ্যে একটা মিশ্র অনুভূতি খেলে বেড়ায়... কিছুটা অপরাধবোধ আর তার থেকে অনেকটাই বেশি বোধহয় ইর্ষার... ‘আমার স্ত্রী... যে এই গতকাল অবধিও এই ঘটনাটার তীব্র বিরোধিতা করে এসেছে... বারে বারে বাধা সৃষ্টি করেছে তাকে এটা নিয়ে এগোবার... আর সেই কিনা...’ ভাবতে ভাবতে সরে আসে দরজার সামনে থেকে... দ্রুত পায়ে উঠে আসে ওপর তলায়... নিঃশব্দে বেডরুমের দরজা খুলে ঘরে ঢোকে... এলিজাবেথ তখনও বিছানার ওপরে গভীর ঘুমে তলিয়ে রয়েছে... স্থির দৃষ্টিতে খানিক তাকিয়ে থাকে এলির নগ্ন লোভনীয় দেহটার পানে... কিন্তু এলির সে নগ্নতা তার কামোত্তেজনা জাগাতে পারে না... চোখের সামনে তখন সুদেষ্ণার দুষ্টুমী মাখা ঠোঁট আর ঘরের মধ্যে থেকে ভেসে আসা খিলখিলিয়ে ওঠা হাসি তার বুকের মধ্যেটায় কেমন অদ্ভুত ভাবে কুরে কুরে দেয়... একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে বুকটাকে কাঁপিয়ে... ‘ও তাহলে এঞ্জয় করছে ভালোই!’
.
.
.
‘তোমার ভালো লেগেছে?’ কফির কাপে চুমুক দিয়ে সুদেষ্ণার দিকে মুখ তুলে প্রশ্নটা ছুড়ে দেয় ডেভিড...
‘সত্যিকথা বললে তো পুরুষ অহংটা ফুলে ফেঁপে উঠবে যে...’ ঠোঁটের কোনে একটা রহস্যের ছোঁয়া রেখে উত্তর দেয় সুদেষ্ণা... একটা প্রচ্ছন্ন ভালো লাগা চোখের মণিতে চকচক করে ওঠে উত্তরটা দেবার সময়...
‘হ্যা... অবস্যই... আমার এতে পৌরষের অহংবোধটা আরো বেড়ে যাবে বইকি!’ হাসতে হাসতে বলে ডেভিড...
‘আর সেটা বেড়ে গেলে কি করা হবে শুনি?’ চোখের মণিতে কামনা ঘনিয়ে আসে সুদেষ্ণার... ঝিলিক দেয় এক দূরন্ত আহ্বান...
‘তখন আমি একটা পশুতে পরিণত হয়ে যাবো... আর তোমায় এই বিছানায় পেড়ে ফেলে...’ বলতে বলতে থামে ডেভিড... মুখের কথা শেষ না করে তাকিয়ে থাকে সুদেষ্ণার দিকে...’
‘কি? কি করবে?’ খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে সুদেষ্ণা সারা শরীরটা দুলিয়ে... নাইট গাউনটার আড়ালে থাকা ব্রাহীন ভারী স্তন হাসির দমকে টলটলিয়ে ওঠে...
সেই দিকে দেখতে দেখতে গাঢ় স্বরে বলে ওঠে ডেভিড... ‘আইল্ ফাক ইয়ু অল ওভার এগেন...’
‘ওহ! তাই? ইশশশশ... তাহলে তো আমার ভিষন ভয় পেয়ে যাওয়া উচিত! তাই না?’ বলে মেকি ভয় পাওয়ার ভঙ্গি করে সুদেষ্ণা... আর তাতে দুজনেই হো হো করে হেসে ওঠে...
হাসি থামতে হাতের কফির কাপটা নামিয়ে রেখে আরো খানিকটা এগিয়ে আসে ডেভিডের দিকে... তার কাছ ঘেঁসে বসে বুকের ওপরে হাত রাখে সুদেষ্ণা... ‘সত্যিই বলছি... আমার তোমায় ভালো লেগেছে...’ বলতে বলতে থামে সে, তারপর ডেভিডের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে বলে, ‘জানো... এটা আমার জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা... মানে এই ভাবে একজন স্বামী ছাড়া অপর কোনো পুরুষের সাথে সঙ্গম... আমি প্রথম থেকে এই ব্যাপারটা নিয়ে খুব নেতিবাচক ছিলাম... মানতে চাইনি কিছুতেই... এখানে আসার আগেও, বার বার মনে হচ্ছিল যে এটা না ঘটলেই ভালো হয়... যদি কোনভাবে ক্যান্সেল হয়ে যায় পুরো ঘটনাটা... কিন্তু আমার স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে তুমি সেটাকে খুব সুন্দরভাবে মনোময় করে তুলেছ... ইয়ু হ্যাভ মেক ইট আ গুড এক্সপিরিয়েন্স... কিন্তু তা সত্ত্যেও, এটাও আবার ঠিক, যে এটাই আমার প্রথম আর এটাই আমার শেষ...’ বলতে বলতে থামে সুদেষ্ণা... ম্লান হাসে ডেভিডের পানে চেয়ে...
‘তা কেন?’ ভুর কুঁচকে প্রশ্ন করে ডেভিড...
‘কারণ আমি এটাতে রাজি হয়েছিলাম শুধু মাত্র আমার স্বামীর কথা ভেবে... আর সত্যি বলতে কি জানি না ভবিষ্যতে আমি তোমার মত একজন কে পাবো কি না, সেই রকম ভাগ্য আমার হবে কিনা...’ বলতে বলতে আনমনে ডেভিডের বুকের স্তনবৃন্তে আঁচড় কাটে নখের...
‘তাতে কি? আর দরকারই বা কি অন্য কোন কাপলএর... আমরাই পরে আবার করতে পারি... তাই না?’ উৎসাহি হয়ে ওঠে ডেভিডের গলার স্বর...
মাথা নাড়ে সুদেষ্ণা... পলকহীন খানিক তাকিয়ে থাকে ডেভিডের দিকে... তারপর নীচু গলায় বলে ওঠে... ‘উহু... আর নয়... আমি প্রথমেই বলে দিয়েছিলাম এই একবারই... সেটা আমি আমার স্বামীর কাছেও পরিষ্কার করে দিয়েছিলাম... তাই আমাদের কাছে কাল বলে কিছু নেই আর...’ বলতে বলতে মৃদু হেসে ওঠে সুদেষ্ণা... ঠোঁটের কোনে কামজ ছোঁয়া লাগে... ‘দরকার কি কালকের কথা ভেবে... আজকের রাতটা তো পুরো পরে রয়েছে... এসো না... আজকের রাতটাকে কালকের মধূর স্মৃতি করে রাখি...’
‘বেশ... তবে তাই হোক... আই অ্যাম অ্যাট ইয়োর সার্ভিস ম্যাডাম...’ বলতে বলতে উঠে বসে ডেভিড... সাড়ম্বর অভিবাদন জানায় ঝুঁকে পড়ে... ওকে এই ভাবে দেখে ফের খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে সুদেষ্ণা... অসম্ভব এক ভালোলাগায় মনটা ভরে ওঠে...
.
.
.
সূর্যদয়ের সাথে সাথেই প্রায় যত দ্রুত সম্ভব তৈরী হয়ে নীচে নেমে আসে সৌভিক... তাড়াতাড়ি গিয়ে দাঁড়ায় নীচের তলার বেডরুমের সামনে... কিন্তু অবাক হয় বেডরুমের দরজা খোলা দেখে... একটু ইতঃস্থত করে উঁকি মারে ভেতরে... কিন্তু কারুর দেখা পায় না সে... কুঞ্চিত ভুরুতে সে ফিরে আসে ড্রইংরুমে, কিন্তু সেখানেও কেউ নেই... এবার একটু অবাকই হয়... চিন্তিতচিত্তে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে ঘুরতে ঘুরতে পেছনের বাগানে ঢুকতেই দূর থেকে ডেভিড বলে ওঠে... ‘গুড মর্নিং সৌভিক...!’
ডেভিডের উদ্বাত গলার স্বরে কেমন যেন গুটিয়ে যায় সৌভিক... কোন রকমে উত্তর দেয় ডেভিডের সুপ্রভাতের সম্বোধনের... ‘অ্যা... হ্যা... গুড মর্নিং...’ আড় চোখে তাকায় সুদেষ্ণার দিকে... ভোরের আলোয় এক অপার্থিব সৌন্দর্য যেন ঘিরে রেখেছে সুদেষ্ণাকে... অন্য সময় হলে কি করত সে জানে না, কিন্তু এই মুহুর্তে সুদেষ্ণার ওই রকম সতেজ সৌন্দর্যেও তার যেন ভালো লাগে না... সুদেষ্ণার দিকে মুখ তুলে বলে সে, ‘সুদেষ্ণা... এবার আমাদের যেতে হবে... তুমি তৈরী তো?’
সুদেষ্ণার বদলে উত্তর দেয় ডেভিড... একটু আশ্চর্যও হয় যেন সৌভিকের এহেন আচরণে... ‘সেকি? এতো তাড়া কিসের? ব্রেকফাস্ট করে না হয়...’
ডেভিডের কথা শেষ করতে দেয় না সৌভিক... একটু কঠিন স্বরেই কথার মধ্যে বলে ওঠে সে, ‘না ডেভিড, আমাদের এখনই যেতে হবে, আমাদের বেলার ফ্লাইট রয়েছে মুম্বাই ফিরে যাবার... তাই অনর্থক আর বেশি দেরী করতে চাই না...’ বলতে বলতে সুদেষ্ণার দিকে ফিরে বলে ‘তুমি তো রেডিই হয়ে আছো দেখছি... তাহলে চলো এখান থেকেই রওনা হয়ে যাই...’ বলতে বলতে ফিরে হাঁটা লাগায় সে...
সুদেষ্ণা আর ডেভিড দুজনেই সৌভিকের আচরণে খানিকটা হতবাক হয়েই তাকিয়ে থাকে তার দিকে, তারপর কাঁধটাকে শ্রাগ করে ডেভিড ক্যাব ডেকে নেয়...
যতক্ষন না ক্যাব আসে, ওরা ড্রইংরুমেই অপেক্ষা করে... ডেভিড আর সুদেষ্ণা গল্প করতে থাকে... সৌভিক চুপচাপ বসে থাকে তাদের কথার মধ্যে না ঢুকে... ক্যাবের হর্ন পেয়েই উঠে হাঁটা লাগায় দরজার দিকে...
ঠিক গাড়িতে ওঠার মুহুর্তে হটাৎ করে সুদেষ্ণা বলে ওঠে, ‘এক মিনিট...’
‘আবার কি?’ বিরক্ত সৌভিক প্রশ্ন করে...
‘না, একবার এলিজাবেথকে বাই বলে আসি...’ বলে আর সৌভিকের উত্তরের অপেক্ষা করে না সে... দ্রুত পায়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ায়...
‘আরে এলিজাবেথ এখনও ঘুমাচ্ছে তো...’ প্রায় চিৎকার করেই জানায় পেছন থেকে সৌভিক, কিন্তু সুদেষ্ণা কানে তোলে না... দাঁড়িয়ে থাকা ডেভিডের পাশ ঘেঁসে ঢুকে যায় বাড়ির মধ্যে... যেতে যেতে একবার অর্থপূর্ণ দৃষ্টি হানে ডেভিডের দিকে... বিহবল ডেভিড কিছু না বুঝেই সুদেষ্ণার পেছন পেছন ঢুকে আসে বাড়ির মধ্যে...
সৌভিকের দৃষ্টির আড়াল হতেই ডেভিডকে জড়িয়ে ধরে সুদেষ্ণা উষ্ণ আলিঙ্গনে...
‘এলিজাবেথ তো সত্যিই ঘুমাচ্ছে...’ ডেভিড জানায় সুদেষ্ণাকে...
‘আমি জানি সেটা...’ মুচকি হেসে বলে সুদেষ্ণা... ‘আমি তোমাকে গুডবাই বলার জন্যই এসেছি... সঠিক ভাবে...’ বলতে বলতে পায়ের আঙুলের ভরে নিজের শরীরটাকে সামান্য তুলে ধরে নিজের তপ্ত ওষ্ঠ চেপে ধরে ডেভিডের ঠোঁটের ওপরে... ডেভিড অনুভব করে সুদেষ্ণার দেহের উষ্ণতা তার শরীরেরও ছড়িয়ে পড়ার...
‘হুম... তাহলে ম্যাডাম সিম টু বী ইন লাভ...’ হেসে বলে ওঠে ডেভিড... ডেভিডের কথায় খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে সুদেষ্ণা... তারপর আরো দৃঢ় আলিঙ্গনে ডেভিডকে জড়িয়ে ধরে মিশিয়ে দেয় নিজের ঠোঁট জোড়া ডেভিডের ঠোঁটের সাথে... বাইরে গাড়ির হর্ন বাজানো অবধি সেই ভাবেই মিশে থাকে তারা দুজনে দুজনের মধ্যে...
‘ওকে... বাই...’ বলে এক ছুটে সুদেষ্ণা বেরিয়ে যায় বাড়ির থেকে...
.
.
.
গাড়ির মধ্যে একটা কথাও বলে না সৌভিক... যেন কোন এক গভীর চিন্তায় নিমগ্ন থাকে সারাটা রাস্তা...
‘কেমন কাটলো তোমার রাতটা?’ হোটেলের রুমে ঢুকে প্রশ্ন করে সুদেষ্ণা...
‘ভালো...’ ছোট্ট উত্তর দেয় সৌভিক...
‘তুমি এঞ্জয় করেছো?’ বাচ্ছা মেয়ের মত আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে বলে ওঠে সুদেষ্ণা, জড়িয়ে ধরে সৌভিককে...
‘হুম... তুমি?’ গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন করে সৌভিক...
‘ভিষণ... খুব এঞ্জয় করেছি...’ উচ্ছসিত সুদেষ্ণা ঠোঁট বাড়িয়ে চুমু খেতে যায় সৌভিককে...
‘হুম... আমারও তাই মনে হয়...’ বলে সুদেষ্ণার আলিঙ্গন থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে সে...
‘তাহলে? তোমার ফ্যান্টাসি পূরণ হলো... বলো! এখন থেকে আবার আমরা সেই বিয়ের দিন গুলোর মত হয়ে যাবো... তাই না?’ উচ্ছাসে উদ্বেল সুদেষ্ণা ফের চেষ্টা করে সৌভিককে চুম্বন করতে...
এবার প্রায় একটু জোর করেই সরিয়ে দেয় সুদেষ্ণাকে নিজের থেকে সৌভিক... ‘আগে স্নান করে এসো...’ রুঢ় গলায় বলে ওঠে সে...
এহেন সৌভিকের ব্যবহারে হতচকিত হয়ে পড়ে সুদেষ্ণা... বিভ্রান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে স্বামীর দিকে... এ যেন কেমন অচেনা ঠেকে তার...
‘এই... ইজ এভ্রিথিং ওকে?’ চিন্তিত মুখে প্রশ্ন করে সুদেষ্ণা...
‘হ্যা, হ্যা... এভ্রিথিং ইজ ওকে...’ বলতে বলতে ঘুরে দাঁড়ায় সৌভিক... ‘যাও, আগে স্নান করে এসো...’
সৌভিকের এহেন আচরণে ভিষন ভাবে আহত হয় সুদেষ্ণা... ধীর পায়ে গিয়ে ঢোকে হোটেলের বাথরুমে...
ক্রমশ...