31-12-2020, 07:22 PM
যাইহোক, বিয়ের অনুষ্ঠানের দুই দিন পরে আসিফ রামচরনকে এক ভোরবেলায় বললো যে তাকে এক জরুরি কাজে এক্ষুনি কলকাতা ছুটতে হবে! রামচরন শুনে তাকে গাআড়িতে করে কলকাতায় ছেড়ে দেওয়ার কথা বললো, কিন্তু আসিফ জানালো তার দরকার পড়বে না! সে দুদিন পরেই ফিরে আসবে! এর মধ্যে চাইলে রামচরন সেই সাধুবাবার সাথে দ্যাখা করে আসতে পারে, কাছেই তো শ্মশান! নয়তো আসিফ ফিরলে তার সাথেও সে যেতে পারে! আসলে আসিফের মাথায় অন্য চিন্তা ছিল! প্রাণের সখাকে সে তার লব্ধ গুপ্তধনের কিছু অংশ দিতে চায়! সে জানে আসিফ সরাসরি বললে রামচরন তাতে বাধা দেবে! একটা জয়েন্ট লকার খোলার স্বীদ্ধান্ত নিয়েছে সে! সেখানে সে কিছু ধন দৌলত রাখবে আর লকারের চাবি আর কাগজপত্র রামচরনের নামে ট্রান্সফার করাবে, ফিরে এসে রামচরনের সইসাবুদ নিয়ে! এদিকে রামচরন দেখলো দুই সপ্তাহ ছুটি নেওয়া যখন আছেই তখন আর দিন পাঁচেক থাকা যেতেই পারে আসিফের এখানে! আসিফের এই তিন মহলা বাড়ি বা প্রাসাদে থাকতে সে বড় ভালোবাসে! অনেক প্রাচীন ইতিহাসের চিহ্ন যেন আনাচেকানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে! অদ্ভুত অজানা নস্টালজিয়ায় মন তার আদ্র হয়! সেই সাথে সেই অলীক সাধুবাবার সাথে দ্যাখা করার হাতছানিও আছে! রামচরন রাজী হয়ে গেল আসিফের কথায়! আসিফ কলকাতার জন্যে রওনা দিতে সেও পাড়ি দিল পায়ে হেঁটে গ্রামের সীমানার শ্মশানের দিকে! শ্মশানটার চারি পাশে অনেক গাছ গাছালি! কতকটা যেন জঙ্গলই বলা চুলে! আসিফের কথা মতন শ্মশানের মধ্যে খানিক এগিয়ে যেতে একটা বড় আম গাছের নীচে এক অস্থায়ী তাঁবু মতন আস্তানা নজরে এলো! গাছের ঠিক নীচে একটা খাটিয়া গোছের কিছু রাখা আর তার উপরে জীর্ন শীর্ন জটাজুটধারী এক প্রচুর বয়স্ক মানুষ শুয়ে আছে! এ যে সেই সাধু তা রামচরনের বুঝতে দেরী হলো না! মানুষটার মাথার কাছে পিঠ অব্দি কোঁকড়ান লম্বা চুলের এক ফর্সা মহিলা মাটিতে বসে সেই সাধুকে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছে! মহিলার বয়েস দেখে সত্যি সত্যিই তিরিশের বেশি মনে হয় না! আসিফ কিছু ভুল বলেনি! সত্যিই অপূর্ব দেখতে, কিন্তু চাহনিতে কেমন এক অজানা ইঙ্গিত! তা যে কি তা বোঝা মুশকিল! চেহারায় হাল্কা স্থুলতা রয়েছে, তবে স্থুলত্বের ছোঁয়া এই মহিলার স্তন আর নিতম্ব যেভাবে অকাতরে পেয়েছে, তেমনটা ওনার কোমর পেয়ে ওঠেনি! ইনিই তাহলে সেই বিন্দুবালা! রামচরন ধীর পায়ে এসে সাধুবাবার খাটিয়ার পাশে এসে দাঁড়ালো!
সাধুবাবা একবার কেশে উঠলেন আর তারপর ক্ষীন গলায় বললেন – যাক তাহলে শেষমেষ এলে তুমি! চিন্তা হচ্ছিল, বেশি দেরী না করে ফেল!
রামচরন অবাক হয়ে একবার বিন্দুবালার দিকে তাকাল! বুন্দুবালার মুখে হাসি আর দুঃখ একসাথে মিলেমিশে এক অচেন অভিব্যক্তি ফুটে ঊঠেছে! রামচরন
সেই সাধুর দিকে তাকিয়ে বললো – আমায় কিছু বলছেন সাধু মহারাজ?
সাধু আবার ভাঙা গলায় বলে উঠলো – হ্যাঁ তো! বলছি তো তোমাকেই বাবা! তুমি রামচরন, তাই না?!
রামচরন খুব অবাক হলো, তারপর ভাবলো হতেও পারে আসিফের কাছে তার নাম শুনে থাকবে! সামলে নিয়ে বললো – আসিফ বুঝি আমার কথা আপনাকে বলেছে? আমি আসিফের বাল্যবন্ধু!
সাধু – হ্যাঁ তা সে বলেছে! কিন্তু আমি তোমায় তার আগের থেকেই চিনি, জানি!
রামচরন (অবাক হয়ে) – তা কি করে সম্ভব? আমি তো আপনাকে প্রথমবার দেখছি! আমায় তো আপনার চেনার কথা নয়!
সাধু – এ জীবনে অনেক অসম্ভবই সম্ভব হয় বাছা! সব কিছুর ব্যাখ্যা হয় কোথায়? শোনো আমার কিছু সিদ্ধাই আছে, পারলে সে সব দেখিয়েও অনেক জুড়ি গাড়ি হাঁকাতে পারতাম! কিন্তু সেসব করেই যে আত্মার ক্ষয় হয়, মনে ঘুনপোকা বাস করে! তবু তোমার বিজ্ঞানমনস্ক মনে বিশ্বাসের উদ্রেক করানোর জন্যে তোমার ব্যাপারে আমি কিছু কথা বলবো! তাহলেই বুঝবে আমি কতটা চিনি তোমায়!
রামচরনের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝরা শুরু হলো, এসব তো গপ্প কথায় শুনেছে সে! মানুষের কি এমন ক্ষমতা থাকে কখনো? শুকনো গলায় সন্দিগ্ধভরা কন্ঠে সে বললো – বেশ বলুন তাহলে কেমন চেনেন আমায়!
সাধু – বরুন স্যানাল আর রেবতী স্যান্যালের হাতে গড়া রামচরন, তোমাকে তারা শিক্ষাও দিয়েছে আর শোষনও করেছে নির্বিচারে! যৌনতার বেদিতে তোমার অভিষেক তো তাদের হাত ধরেই! কি মনে পরে?
রামচরনের গলাটা যেন কেউ চেপে ধরেছে! যে কথাআ তার জীবনের সব থেকে বড় কলঙ্কের, সব থেকে বড় গোপন, যার অস্তিত্বের কথা তার মা-বাবাও জানেনা, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় – কেই না! জানে শুধু তারা তিনজন, তা এই সাধু কোন উপায়ে জানলো! ইসসস কি লজ্জা লাগছে তার, নিজেকে এক মুহুর্তে কুঁকড়ে যেতে দেখলো সে সাধুবাবার সামনে। সাধুবাবা বোধহয় রামচরনের মনের কথা পড়তে পারলো।
সাধু – দ্যাখো বাছা! যে মানুষকে নিজেকে তিরস্কার করতে জানে সঙ্গত কারনে, তার চাইতে ভালো মানুষ দুটি নেই! কিন্তু যে মানুষ নিজেকে ঘেন্না করে সে ঈশ্বরের সাথে তঞ্চকতা করে! কারন আমাদের ভেতরেই তো তার বাস! নিজেকে ঘৃণা করা মানে তাকেই ছোট করা! যা হয়েছে তা তুমি কুতসিত ভেবোনা! তা তোমায় গড়েপিঠে তুলেছে বাবা! লোহা না জ্বললে, না পিটলে যে আকার দেওয়া যাবেনা!
রামচরনের চোখ দিয়ে ঝর ঝর করে জল বইতে লাগলো! এতদিনের জমা ক্লেদ যেন এক ধাক্কাআয় ধুয়ে মুছে পরিস্কার হয়ে গেল! এ কোন যাদুকরের সামনে এসেছে সে! হুমড়ি খেয়ে মাটিতে বসে রামচরন সাধুবাবার পা দুটো আঁকড়ে ধরলো আর হাউমাউ করে কাদতে থাকলো! সাধুবাবার শীর্ন হাত দুখানা উথে এস্ল আর পরম মমতায় তিনি রামচরনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে উঠলেন- থাক বাবা থাক! আর নয়, সারা জীবন অনেক কেঁদেছ! এবার সব শান্ত হোক! আগে আমার কথা শোনো
রামচরন মাথা তুলে অশ্রুসজল চোখে বলে উঠলো – বলুন বাবা আপনি কি বলতে চান
সাধু – তোমার জীবনে এক বড় দ্দায়ীত্ব আমি সঁপতে চাই বাবা।! বদলে আমি কিছুই তোমায় দিতে পারবো না! তুমি সেই দায়ীত্ব নিতে পারবে?
রামচরন ভেজা গলায় বললো – আমার কিচ্ছু চাইনা! কিন্তু না জেনে কথা কি করে দিই?! যদি সেই দায়ীত্ব পালনের সামর্থ্য আমার না থাকে সাধুজি?
সাধু – আমি তোমার কথা স্বপ্নাদেশে জেনেছি! তুমি অযোগ্য বা অসমর্থ হলে সে আদেশ আমি পেতাম না রামচরন! দ্যাখো, যোগবলে আমি জেনেছি আজ রাত বারোটার পরে আমি আমার নস্বর দেহকে ত্যাগ করবো! এই খাচাটা অনেক পুরোনো হয়ে গেছে গো! এবার মায়া ত্যাগ করতে হবে! আমার বিন্দু মা আমার যোগিনী, আমার কামিনী, আমার দেহ সঙ্গিনী, আমার ধাত্রি, আমার শক্তি, আমার দেবী! ওকে পেয়েছিলাম এক বস্তিতে, তখন ওর বয়েস ৫ কি ৬! একদল পশুরূপি মা-বাপ মরা এই মেয়েটিকে খুবলে খেতে চাইছিল! সেসময় আমি এমন অশক্ত, অসমর্থ ছিলাম না! আমি কন্যা শিশুটিকে উদ্ধার করি! সেই থেকে বিন্দু মা আমার ছায়াচরী! ও আমার সব! ওর তরে এই খাঁচার মধ্যে অ্যাদ্দিন বন্দি ছিলাম! তোমায় আমি হাত জোড়ে প্রার্থনা করছি বাছা, তুমি আজ থেকে বিন্দুর সঙ্গী, সাথী, সহচর হয়ে ওঠো! ওর ভার নিয়ে তুমি আমার মুক্তির পথ প্রশস্ত করো বাছা!
রামচরন আঁতকে উঠলো – জানে না, চেনে না, এমন অচেনা এক অতীব রুপবতী নারীকে সে কেমন করে আশ্রয় দেবে নিজের কাছে! সে যদি রক্ষক থেকে নিজেই ভক্ষক হয়ে যায়? আর তা ছাড়া সমাজ বলেও তো একটা বস্তু আছে! সবাই কি ভাববে তাদের সম্পর্কে! সে কাঁপা গলায় বললো – সাধু মহারাজ! এটা কেমন প্রস্তাব আপনার?!
বিন্দুবালা এইবার কথা বলে উঠলো – আমি আপনার সাথে থাকতে চাই! বাবার আদেশ আমি অমান্য করবো না! মনে করুন দরকার হলে এক দাসীকে রাখছেন! আপনি বাবার কথা মেনে নিন দয়া করে! কথা দিচ্ছি আপনার যাতে বিন্দুমাত্র অসুবিধে না হয়, সে ভার আমার!
সাধু হঠাত প্রচণদ জোরে কেশে উঠলো, তারপর মুখটা বিশাল বড় হাঁ হয়ে গিয়ে আবার বন্ধ হলো! খুব কষ্ট পাচ্ছেন বোধহয় শ্বাস নিতে! অনেকক্ষন থেমে বলে উঠলো – আমার বিন্দু মাকে সামান্য ভেবোনা! তুমি রাজী হও! নয়তো বিন্দু আমার সাথে চলে যেতে চাইবে! তা হয়না! তুমি ওর ভার নাও রামচরন!
কি যেন এক অলীক আত্মবিশ্বাস ভর করলো রামচরনের মাথায়! সে সাধুবাবার হাত ধরলো, দৃড় গলায় বললো – বেশ, কথা দিলাম আপনাকে সাধু মহারাজ! বিন্দু দিদির সব ভার আজ থেকে আমার!
সাধুবাবা একবার কেশে উঠলেন আর তারপর ক্ষীন গলায় বললেন – যাক তাহলে শেষমেষ এলে তুমি! চিন্তা হচ্ছিল, বেশি দেরী না করে ফেল!
রামচরন অবাক হয়ে একবার বিন্দুবালার দিকে তাকাল! বুন্দুবালার মুখে হাসি আর দুঃখ একসাথে মিলেমিশে এক অচেন অভিব্যক্তি ফুটে ঊঠেছে! রামচরন
সেই সাধুর দিকে তাকিয়ে বললো – আমায় কিছু বলছেন সাধু মহারাজ?
সাধু আবার ভাঙা গলায় বলে উঠলো – হ্যাঁ তো! বলছি তো তোমাকেই বাবা! তুমি রামচরন, তাই না?!
রামচরন খুব অবাক হলো, তারপর ভাবলো হতেও পারে আসিফের কাছে তার নাম শুনে থাকবে! সামলে নিয়ে বললো – আসিফ বুঝি আমার কথা আপনাকে বলেছে? আমি আসিফের বাল্যবন্ধু!
সাধু – হ্যাঁ তা সে বলেছে! কিন্তু আমি তোমায় তার আগের থেকেই চিনি, জানি!
রামচরন (অবাক হয়ে) – তা কি করে সম্ভব? আমি তো আপনাকে প্রথমবার দেখছি! আমায় তো আপনার চেনার কথা নয়!
সাধু – এ জীবনে অনেক অসম্ভবই সম্ভব হয় বাছা! সব কিছুর ব্যাখ্যা হয় কোথায়? শোনো আমার কিছু সিদ্ধাই আছে, পারলে সে সব দেখিয়েও অনেক জুড়ি গাড়ি হাঁকাতে পারতাম! কিন্তু সেসব করেই যে আত্মার ক্ষয় হয়, মনে ঘুনপোকা বাস করে! তবু তোমার বিজ্ঞানমনস্ক মনে বিশ্বাসের উদ্রেক করানোর জন্যে তোমার ব্যাপারে আমি কিছু কথা বলবো! তাহলেই বুঝবে আমি কতটা চিনি তোমায়!
রামচরনের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝরা শুরু হলো, এসব তো গপ্প কথায় শুনেছে সে! মানুষের কি এমন ক্ষমতা থাকে কখনো? শুকনো গলায় সন্দিগ্ধভরা কন্ঠে সে বললো – বেশ বলুন তাহলে কেমন চেনেন আমায়!
সাধু – বরুন স্যানাল আর রেবতী স্যান্যালের হাতে গড়া রামচরন, তোমাকে তারা শিক্ষাও দিয়েছে আর শোষনও করেছে নির্বিচারে! যৌনতার বেদিতে তোমার অভিষেক তো তাদের হাত ধরেই! কি মনে পরে?
রামচরনের গলাটা যেন কেউ চেপে ধরেছে! যে কথাআ তার জীবনের সব থেকে বড় কলঙ্কের, সব থেকে বড় গোপন, যার অস্তিত্বের কথা তার মা-বাবাও জানেনা, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় – কেই না! জানে শুধু তারা তিনজন, তা এই সাধু কোন উপায়ে জানলো! ইসসস কি লজ্জা লাগছে তার, নিজেকে এক মুহুর্তে কুঁকড়ে যেতে দেখলো সে সাধুবাবার সামনে। সাধুবাবা বোধহয় রামচরনের মনের কথা পড়তে পারলো।
সাধু – দ্যাখো বাছা! যে মানুষকে নিজেকে তিরস্কার করতে জানে সঙ্গত কারনে, তার চাইতে ভালো মানুষ দুটি নেই! কিন্তু যে মানুষ নিজেকে ঘেন্না করে সে ঈশ্বরের সাথে তঞ্চকতা করে! কারন আমাদের ভেতরেই তো তার বাস! নিজেকে ঘৃণা করা মানে তাকেই ছোট করা! যা হয়েছে তা তুমি কুতসিত ভেবোনা! তা তোমায় গড়েপিঠে তুলেছে বাবা! লোহা না জ্বললে, না পিটলে যে আকার দেওয়া যাবেনা!
রামচরনের চোখ দিয়ে ঝর ঝর করে জল বইতে লাগলো! এতদিনের জমা ক্লেদ যেন এক ধাক্কাআয় ধুয়ে মুছে পরিস্কার হয়ে গেল! এ কোন যাদুকরের সামনে এসেছে সে! হুমড়ি খেয়ে মাটিতে বসে রামচরন সাধুবাবার পা দুটো আঁকড়ে ধরলো আর হাউমাউ করে কাদতে থাকলো! সাধুবাবার শীর্ন হাত দুখানা উথে এস্ল আর পরম মমতায় তিনি রামচরনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে উঠলেন- থাক বাবা থাক! আর নয়, সারা জীবন অনেক কেঁদেছ! এবার সব শান্ত হোক! আগে আমার কথা শোনো
রামচরন মাথা তুলে অশ্রুসজল চোখে বলে উঠলো – বলুন বাবা আপনি কি বলতে চান
সাধু – তোমার জীবনে এক বড় দ্দায়ীত্ব আমি সঁপতে চাই বাবা।! বদলে আমি কিছুই তোমায় দিতে পারবো না! তুমি সেই দায়ীত্ব নিতে পারবে?
রামচরন ভেজা গলায় বললো – আমার কিচ্ছু চাইনা! কিন্তু না জেনে কথা কি করে দিই?! যদি সেই দায়ীত্ব পালনের সামর্থ্য আমার না থাকে সাধুজি?
সাধু – আমি তোমার কথা স্বপ্নাদেশে জেনেছি! তুমি অযোগ্য বা অসমর্থ হলে সে আদেশ আমি পেতাম না রামচরন! দ্যাখো, যোগবলে আমি জেনেছি আজ রাত বারোটার পরে আমি আমার নস্বর দেহকে ত্যাগ করবো! এই খাচাটা অনেক পুরোনো হয়ে গেছে গো! এবার মায়া ত্যাগ করতে হবে! আমার বিন্দু মা আমার যোগিনী, আমার কামিনী, আমার দেহ সঙ্গিনী, আমার ধাত্রি, আমার শক্তি, আমার দেবী! ওকে পেয়েছিলাম এক বস্তিতে, তখন ওর বয়েস ৫ কি ৬! একদল পশুরূপি মা-বাপ মরা এই মেয়েটিকে খুবলে খেতে চাইছিল! সেসময় আমি এমন অশক্ত, অসমর্থ ছিলাম না! আমি কন্যা শিশুটিকে উদ্ধার করি! সেই থেকে বিন্দু মা আমার ছায়াচরী! ও আমার সব! ওর তরে এই খাঁচার মধ্যে অ্যাদ্দিন বন্দি ছিলাম! তোমায় আমি হাত জোড়ে প্রার্থনা করছি বাছা, তুমি আজ থেকে বিন্দুর সঙ্গী, সাথী, সহচর হয়ে ওঠো! ওর ভার নিয়ে তুমি আমার মুক্তির পথ প্রশস্ত করো বাছা!
রামচরন আঁতকে উঠলো – জানে না, চেনে না, এমন অচেনা এক অতীব রুপবতী নারীকে সে কেমন করে আশ্রয় দেবে নিজের কাছে! সে যদি রক্ষক থেকে নিজেই ভক্ষক হয়ে যায়? আর তা ছাড়া সমাজ বলেও তো একটা বস্তু আছে! সবাই কি ভাববে তাদের সম্পর্কে! সে কাঁপা গলায় বললো – সাধু মহারাজ! এটা কেমন প্রস্তাব আপনার?!
বিন্দুবালা এইবার কথা বলে উঠলো – আমি আপনার সাথে থাকতে চাই! বাবার আদেশ আমি অমান্য করবো না! মনে করুন দরকার হলে এক দাসীকে রাখছেন! আপনি বাবার কথা মেনে নিন দয়া করে! কথা দিচ্ছি আপনার যাতে বিন্দুমাত্র অসুবিধে না হয়, সে ভার আমার!
সাধু হঠাত প্রচণদ জোরে কেশে উঠলো, তারপর মুখটা বিশাল বড় হাঁ হয়ে গিয়ে আবার বন্ধ হলো! খুব কষ্ট পাচ্ছেন বোধহয় শ্বাস নিতে! অনেকক্ষন থেমে বলে উঠলো – আমার বিন্দু মাকে সামান্য ভেবোনা! তুমি রাজী হও! নয়তো বিন্দু আমার সাথে চলে যেতে চাইবে! তা হয়না! তুমি ওর ভার নাও রামচরন!
কি যেন এক অলীক আত্মবিশ্বাস ভর করলো রামচরনের মাথায়! সে সাধুবাবার হাত ধরলো, দৃড় গলায় বললো – বেশ, কথা দিলাম আপনাকে সাধু মহারাজ! বিন্দু দিদির সব ভার আজ থেকে আমার!