31-12-2020, 03:48 PM
আসিফ – কিরে রামু?! চলে এসেছিস? আরে বাইরে দাঁড়িয়ে ড্যাবড্যাব করে কি দেখছিস? আয় আয় ভেতরে আয়! আমি তো খালি ভাবছি আরর উপায় নেই, টেলিগ্রাম হয়তো যায়নি, তোর আপিসে ফোন করবো! তর বোনের বিয়েত্রে তুই না থাকলে তো সুরাইয়া বলছে তো নিকাহই করবেনা! তুই এসেছিস দেখে তার যে কি আনন্দ তা তোকে কি বোঝাই! আয় বস বস! (বলে সামনের কাউচটা দ্যাখালো আসিফ)
এটা হলো আসিফদের আউটহাউস কাম লিভিং হল! একপাশে বিলিয়ার্ড টেবিল, গ্রামাফোন রেকর্ড, ক্যরাম টেবিল আর ঘরের চার কোনায় সুদৃশ্য কাউচ! এসব রামচরনের দ্যাখা! কিন্তু এ কাউচ তো আগের কাউচ নয়! দেখে বোঝাই যাচ্ছে এ হলো বিদেশের মাল, দারুন দামী জিনিষ! ইন ফ্যাক্ট সারা ঘরেই হটাৎ করে পাওয়া অপার প্রাচুর্য্যের চিহ্ন ছড়িয়ে রয়েছে! স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে আসিফদের সেই বোলবোলা আবার নব কলেবরে দ্বিগুন তীব্রতায় ফেরত এসেছে! অদম্য কৌতুহল আর চেপে রাখতে পাররলো না রামচরন! আসিফের দিকে অপাঙ্গ চেয়ে বললো – হ্যাঁ রে শালা! তুই যে লটারি জিতেছিস সে কথা তো টেলিগ্রামে লিখিস নি!
আসিফ – লটারি??!! হাহাহাহাহা! তা মাইরি ঠিক বলেছিস তুই। লটারিই বটে! তোকে আমি কবে টেলিগ্রামটা পাঠিয়েছিলাম সেই ডেটটা দেখেছিলিস?! আজ থেকে তিন হপ্তা আগে! ভারতের টেলিগ্রাম ব্যবস্থার উপরে আমার অগাধ ভরসা কিনা, তাই হাতে সময় নিয়েই পাঠিয়েছিলাম! তারপর যা হয়েছে তা তোকে জানানোর জন্যে আমার আর তর সইছে না! কিন্তু ব্যাপারটা তোকে গোপন রাখতে হবে কিন্তু!
রামচরন – সে বিশ্বাস আমায় করতে পারিস তুই। কিন্তু, কি ব্যাপার! কোনো গুপ্তধন টন পেয়ে গেছিস নাকি রে?
আসিফ (মুচকি হেসে) – কতকটা সেরকমই! ঘটনাটা বলি শোন! হপ্তা তিনেক আগে এই বাড়িতে আমি কলকাতা থেকে ফেরত আসি! আব্বুর তো কলকাতাতেই সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়ে এন্তেকাল হলো। এদিকে আমি অথৈ জলে, সুরাইয়ার শাদির জোগাড় কেমন করে করবো কিচ্ছু ভেবে পাচ্ছিনা! ঠিক করলাম সামান্য কিছু জমি-জিরেত আছে, আম্মিজান বললেন ওগুলো বেচে দিতে!তাতেও কুলান অবশ্য হওয়ার নয়, আশাইয় বুক বাঁধলাম এই ভেবে যে এই দুর্দিনে ঠিক পাশে দাঁড়াবি! ভাবলাম ব্যবসার যা কিছু মূলধন, আয় সেগুলোও বন্ধক দেবো! এই গ্রামের বাড়িতে ফিরে এসে মোক্তার মশাই এর সাথে আলাপ আলোচনা করলাম! ওনার কথা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো! উনি বললেন বাকি জমি জিরেতও ডিসপিউটেড, বেচা খুব মুশকিল! সে রাত্তিরে মাইরি বলছি দু চোখের পাতা এক করতে পারি নি দুশ্চিন্তায়! এক মনে আল্লাকে ডেকেছি, উনিই পারেন এই বিপদ থেকে আমায় বাঁচাতে! ঠিক করলাম, সকাল হতেই কলকাতায় ফেরত যাবো, ব্যবসা-পত্তর সব বেচে দেবো, কিন্তু এই নিকাহ করাবোই করাবো! আমার সুরাইয়ার হাতে মেহেন্দি লাগবেই লাগবে। পরের দিন সকালবেলা খবরের কাগজ নিয়ে বসে চা খাচ্ছি, ইচ্ছে চা খেয়েই রওনা দেওয়ার! এমন সময় সদর দরজায় কে যে হাঁক পাড়লো – তবরেজ মিঞা আছো নাকি? ও তবরেজ ভাই?!!
কে এসেছে দেখতে বাইরে এসে দেখি এক খুব বয়স্ক এক গাল একহাত লম্বা দাড়িওয়ালা এক সাধুবাবা, গায়ে শত ছেঁড়া এক গেরুয়া কাপড়, কাঁধেতে ততোধিক ছিন্ন আর তাপ্পি দেওয়া এক ঝোলা, হাতে খয়ে যাওয়া তুবড়ানো এক কমণ্ডুল! সারা মুখে অজস্র বলিরেখা, কোমর নুইয়ে দাঁড়িয়ে আছেন! সাম্প্রতিক অনটনে আসিফের মেজাজ একেবারেই ভালো ছিলনা, খানিকটা রুক্ষ স্বরেই সে জবাব দিল – কে আপনি? তবরেজ মিঞাকে খুঁজছেন কেন? দেখুন উনি আর নেই? ভিক্ষে টিক্ষে লাগলে দাঁড়ান! (পকেট থেকে একটা দু আনা পাওয়া গেল, আসিফ তাই দিতে গেলো সাধুকে)
সাধু হাঁ হাঁ করে উঠলো – হে শিব শম্ভু! না না বাবা, আমার ভিক্ষে চাইনা!
আসিফ যা বোঝার বুঝেছে, সে তিক্ত হেসে বললো – সংসার ছেড়েচেন সাধুবাবা! কিন্তু জাতের খুঁটিটি দিব্যি ধরে আছেন! মোছলমানের ভিক্ষেতে জাত যাবে আপনার, তাই তো? তা তাই যখন যাবে, তখন আমার আব্বার কাছে হাত পাততে এসেছেন কেন? আপনি যান তো, বিদেয় হন এখান থেকে! আমায় বেরোতে হবে!
সাধু ক্ষীন হেসে বললো – আমি সাধু সন্ন্যাসি কেউ নই গো! তবে হ্যাঁ সংসারীও নই! পথে পথে ঘুরে বেড়াই যদি তার দ্যাখা মেলে! কিন্তু আজও মেলে নাই! তা তুমি বুঝি তবরেজের ছেলে! মুখে ভারি মিল আছে! তবরেজকে দেখছিনা যে! সেকি নেই?
আসিফ এইসব ছেঁদো কথায় আরো বিরক্ত হলো – আশচর্য লোক তো মশাই! হ্যাঁ আমি তবরেজ আলমের ছেলে! আব্বুর আজ দিন দশ হলো এন্তেকাল হয়েছে! আমি দুঃখিত, তার সাথে আপনার কি কাজ বলুন চটপট, আমায় তারপর বেরোতে হবে!
এটা হলো আসিফদের আউটহাউস কাম লিভিং হল! একপাশে বিলিয়ার্ড টেবিল, গ্রামাফোন রেকর্ড, ক্যরাম টেবিল আর ঘরের চার কোনায় সুদৃশ্য কাউচ! এসব রামচরনের দ্যাখা! কিন্তু এ কাউচ তো আগের কাউচ নয়! দেখে বোঝাই যাচ্ছে এ হলো বিদেশের মাল, দারুন দামী জিনিষ! ইন ফ্যাক্ট সারা ঘরেই হটাৎ করে পাওয়া অপার প্রাচুর্য্যের চিহ্ন ছড়িয়ে রয়েছে! স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে আসিফদের সেই বোলবোলা আবার নব কলেবরে দ্বিগুন তীব্রতায় ফেরত এসেছে! অদম্য কৌতুহল আর চেপে রাখতে পাররলো না রামচরন! আসিফের দিকে অপাঙ্গ চেয়ে বললো – হ্যাঁ রে শালা! তুই যে লটারি জিতেছিস সে কথা তো টেলিগ্রামে লিখিস নি!
আসিফ – লটারি??!! হাহাহাহাহা! তা মাইরি ঠিক বলেছিস তুই। লটারিই বটে! তোকে আমি কবে টেলিগ্রামটা পাঠিয়েছিলাম সেই ডেটটা দেখেছিলিস?! আজ থেকে তিন হপ্তা আগে! ভারতের টেলিগ্রাম ব্যবস্থার উপরে আমার অগাধ ভরসা কিনা, তাই হাতে সময় নিয়েই পাঠিয়েছিলাম! তারপর যা হয়েছে তা তোকে জানানোর জন্যে আমার আর তর সইছে না! কিন্তু ব্যাপারটা তোকে গোপন রাখতে হবে কিন্তু!
রামচরন – সে বিশ্বাস আমায় করতে পারিস তুই। কিন্তু, কি ব্যাপার! কোনো গুপ্তধন টন পেয়ে গেছিস নাকি রে?
আসিফ (মুচকি হেসে) – কতকটা সেরকমই! ঘটনাটা বলি শোন! হপ্তা তিনেক আগে এই বাড়িতে আমি কলকাতা থেকে ফেরত আসি! আব্বুর তো কলকাতাতেই সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়ে এন্তেকাল হলো। এদিকে আমি অথৈ জলে, সুরাইয়ার শাদির জোগাড় কেমন করে করবো কিচ্ছু ভেবে পাচ্ছিনা! ঠিক করলাম সামান্য কিছু জমি-জিরেত আছে, আম্মিজান বললেন ওগুলো বেচে দিতে!তাতেও কুলান অবশ্য হওয়ার নয়, আশাইয় বুক বাঁধলাম এই ভেবে যে এই দুর্দিনে ঠিক পাশে দাঁড়াবি! ভাবলাম ব্যবসার যা কিছু মূলধন, আয় সেগুলোও বন্ধক দেবো! এই গ্রামের বাড়িতে ফিরে এসে মোক্তার মশাই এর সাথে আলাপ আলোচনা করলাম! ওনার কথা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো! উনি বললেন বাকি জমি জিরেতও ডিসপিউটেড, বেচা খুব মুশকিল! সে রাত্তিরে মাইরি বলছি দু চোখের পাতা এক করতে পারি নি দুশ্চিন্তায়! এক মনে আল্লাকে ডেকেছি, উনিই পারেন এই বিপদ থেকে আমায় বাঁচাতে! ঠিক করলাম, সকাল হতেই কলকাতায় ফেরত যাবো, ব্যবসা-পত্তর সব বেচে দেবো, কিন্তু এই নিকাহ করাবোই করাবো! আমার সুরাইয়ার হাতে মেহেন্দি লাগবেই লাগবে। পরের দিন সকালবেলা খবরের কাগজ নিয়ে বসে চা খাচ্ছি, ইচ্ছে চা খেয়েই রওনা দেওয়ার! এমন সময় সদর দরজায় কে যে হাঁক পাড়লো – তবরেজ মিঞা আছো নাকি? ও তবরেজ ভাই?!!
কে এসেছে দেখতে বাইরে এসে দেখি এক খুব বয়স্ক এক গাল একহাত লম্বা দাড়িওয়ালা এক সাধুবাবা, গায়ে শত ছেঁড়া এক গেরুয়া কাপড়, কাঁধেতে ততোধিক ছিন্ন আর তাপ্পি দেওয়া এক ঝোলা, হাতে খয়ে যাওয়া তুবড়ানো এক কমণ্ডুল! সারা মুখে অজস্র বলিরেখা, কোমর নুইয়ে দাঁড়িয়ে আছেন! সাম্প্রতিক অনটনে আসিফের মেজাজ একেবারেই ভালো ছিলনা, খানিকটা রুক্ষ স্বরেই সে জবাব দিল – কে আপনি? তবরেজ মিঞাকে খুঁজছেন কেন? দেখুন উনি আর নেই? ভিক্ষে টিক্ষে লাগলে দাঁড়ান! (পকেট থেকে একটা দু আনা পাওয়া গেল, আসিফ তাই দিতে গেলো সাধুকে)
সাধু হাঁ হাঁ করে উঠলো – হে শিব শম্ভু! না না বাবা, আমার ভিক্ষে চাইনা!
আসিফ যা বোঝার বুঝেছে, সে তিক্ত হেসে বললো – সংসার ছেড়েচেন সাধুবাবা! কিন্তু জাতের খুঁটিটি দিব্যি ধরে আছেন! মোছলমানের ভিক্ষেতে জাত যাবে আপনার, তাই তো? তা তাই যখন যাবে, তখন আমার আব্বার কাছে হাত পাততে এসেছেন কেন? আপনি যান তো, বিদেয় হন এখান থেকে! আমায় বেরোতে হবে!
সাধু ক্ষীন হেসে বললো – আমি সাধু সন্ন্যাসি কেউ নই গো! তবে হ্যাঁ সংসারীও নই! পথে পথে ঘুরে বেড়াই যদি তার দ্যাখা মেলে! কিন্তু আজও মেলে নাই! তা তুমি বুঝি তবরেজের ছেলে! মুখে ভারি মিল আছে! তবরেজকে দেখছিনা যে! সেকি নেই?
আসিফ এইসব ছেঁদো কথায় আরো বিরক্ত হলো – আশচর্য লোক তো মশাই! হ্যাঁ আমি তবরেজ আলমের ছেলে! আব্বুর আজ দিন দশ হলো এন্তেকাল হয়েছে! আমি দুঃখিত, তার সাথে আপনার কি কাজ বলুন চটপট, আমায় তারপর বেরোতে হবে!