31-12-2020, 03:43 PM
এই যখন মনের অবস্থা, সেই সময়ে রামচরনের জীবনে এক অভাবনীয় আর প্রত্যাশিত পরিবর্তন এলো! এমন এক টার্ণিং পয়েন্ট, যার কথা রামচরন কখনো স্বপ্নেও ভাবেনি! সেদিন ছিল মঙ্গলবার, কি এক হরতালের কারনে তার আপিস বন্ধ! রোজকারের অভ্যেস মতন রামচরন কসরত করা শুরু করলো! স্যানাল দম্পতি চলে যাওয়ার পরে সে আরর পড়াশোনোয় তেমন কিছু কেউকেটা হয়ে উঠতে না পারলেও শরীরচর্চাতে সে কোনো ফাঁক রাখেনি! বরং বয়েস যত বেড়েছে, তত সে এই বিদ্যেটায় আরো চৌখস হয়ে উঠেছে! নিজের আগ্রহে আর সান্যাল বাবুরর সুপারিশে সে ১৯ বছর বয়েসে প্রথম পিস্তলটা (০.৩২ এসিপি কার্টিজওয়ালা ১০ রাউন্ডের ম্যাগাজিনের ব্যারেটা ৭০ রিভলভার) কেনে। পিছনের বাগানে সে শুটিং প্র্যাকটিস করতো নিয়মিত। তখন সে ধর্মতলার এক বিখ্যাত ফায়ার আর্মস কোম্পানির বার্ষিক আয়কর নিরীক্ষনে যেতো, সেই সুবাদে তার একটা বিশেষ সুবিধে হয়েছিল। তা হলো পর্যাপ্ত কাটরিজের সাপ্লাই! চমৎকার হাতের নিশানা ছিল রামচরনের্। ভোর পাঁচটায় উঠে দৌড়ানো, ডন বৈঠক, চিন আপ, বেঞ্চ প্রেস – ইত্যাদি টুকটাক ফ্রি হ্যণ্ড ও সামান্য আয়রন এক্সারসাইজ করে সে কাকুমনির শেখানো মার্শাল আর্টের অনুশীলন করতো! পরিশেষে ফায়ারিং প্র্যাকটিস শেষ হতে তার সাড়ে আটটা বেজে যেত! মধ্যে মাঝে ইচ্ছে হলে তার বাবার উপহার দেওয়া ফিয়াট গাড়িটা চালিয়ে সে আপিসে যেত! কিন্তু অধিকাংশ দিন সে গাড়ি না চালিয়ে সাইকেল চালিয়ে স্টেশনে গিয়ে ট্রেন ধরে হাওড়া হয়ে বাসে করে আপিস যাওয়াই পছন্দ করতো! এই রোজকার রুটিন ছুটির দিনে সামান্য রদবদল হয়! সেদিন সে গাড়ি নিয়ে টহল দিতে বেরোবেই! তেমনই প্ল্যান ছিল আজকেও! কিন্তু বাদ সাধল এক টেলিগ্রাম! টেলিগ্রামটা পাঠিয়েছে তার বাল্যকাল থেকে কলেজকাল পর্যন্ত এক প্রাণের বন্ধু, আসিফ ইকবাল! আসিফ লিখেছে ওর ওয়ালিদের এন্তেকাল হয়েছে আকস্মিক, অথচ এমন সময়ে ওর বোন সুরাইয়ার নিকাহ স্থির হয়েছে! দুলাভাই ফিরদৌস খান কানাডা নিবাসী ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার, অনেক কষ্টে ভিসা জোগাড় করে দেশে এসেছে শাদির জন্যে! এই দফায় যদি নিকাহ না হয়, তাহলে পুরো ব্যাপারটাই ৩-৪ বছর পিছিয়ে যাবে! অতএব বিয়েটা হচ্ছেই আর হচ্ছে তাদের পুরুলিয়ার শিমুলতলীর আদি বাড়িতে! এই কঠিন পরিস্থিতিতে রামচরন যেন কিছু অর্থ (যতটা সম্ভব) আসিফকে ধার দেয় আর নিজে যেন নিকাহতে উপস্থিত থেকে বোন আর দুলাভাইকে আশীর্বাদ করে! টেলিগ্রাম পড়ার পরে রামচরন বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে বেরিয়ে পরার স্বীদ্ধান্ত নেয় পরেরদিনই!
বিয়ের তারিখ অনুযায়ী বিয়েটা হচ্ছে আজ থেকে সাত দিন বাদে। ঠিক করে কালই সে প্রথমে গাড়ি নিয়ে আপিস যাবে ছুটির দরখাস্ত দিতে, মঞ্জুর যে হবেই তা নিয়ে তার মনে কোনো চিন্তা ছিলনা! তারপর ব্যাঙ্ক থেকে নগদ ৮০০০ টাকা তুলবে সে! সে টাকার মূল্য আজকের বাজারে ৩০ লাখের উপরে! কিন্তু সুরাইয়া যে তার হাড়ের হাড়, বোনটাকে সে মায়ের পেটের বোনের মতই ভালোবাসে! টাকা রামচরনের দেদার, এই টাকায় তার গায়ে আঁচড়টাও পড়বে না! তারপর সে টাকা নিয়ে সে পাড়ি দেবে সোজ্জা তার বন্ধুর গ্রামের বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে! আসিফরা হলো বনেদি বড়লোক, এককালে জমিদারি ছিল তাদের, হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘোড়া, মস্ত বড় মহল ওয়ালা প্রাসাদ! কিন্তু জমি জিরেতের মোকদ্দমায় আসিফের নির্বোরোধী বাবা পৈতৃক সম্পত্তির প্রায় সবটাই খুইয়েছেন জ্ঞাতি-গোষ্ঠির কাছে! আসিফ নিজে মেটালার্জি নিয়ে পড়ে বর্তমানে জেমস কাটিং এর ব্যবসা শুরু করেছে! আসিফের বুদ্ধি, ব্যবসার দক্ষতা আর পরিশ্রমের উপর রামচরনের অগাধ বিশ্বাস আছে! সে জানে, আজ অবস্থা পড়তির দিকে হলেও আসিফ ঘুড়ে দাড়াবেই! আর একদিন সে শহরের অন্যতম বিত্তবানদের মধ্যে একজন বলে গণ্য হবে! যাই হোক, যেমন ভাবা, তেমন কাজ। বসদবাটি তালাবন্ধ করে আসিফ দুই সপ্তাহের ছুটির দরখাস্ত দিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে রওনা দিল গাড়িতে করে শিমূলতলীতে! সঙ্গে পিস্তল আর তিনটে ম্যাগাজিনও রাখতে ভুললো না! এতগুলো টাকা, পথে কোথাও ছিনতাইবাজদের খপ্পরে পড়লে আত্মরক্ষারও বিশেষ প্রয়োজন! অবশ্য পথে কোনো ব্বিপদ ঘটলোনা!
সন্ধ্যে সাড়ে ছটা নাগাদ সে পৌছালো আসিফের তিন মহলা বাড়িতে! দেখলো নহবত খানা বসানোর তোড়জোড় চলছে! এ বাড়িতে সে আগেও এসেছে! কিন্তু এখন যেন সেই বাড়ির জৌলুসই পালটে গেছে! চতুর্দিকে মিস্ত্রি মজুর কাজ করছে প্রচুর, বাড়ি মেরামতি আর রঙ লাগানোর কাজ চলছে পুরোদমে! কোনো এক ভোজবাজিতে যেন সেকেলে প্রাসাদটার ভোল পালটে যাচ্ছে খুব দ্রুত! কাজকর্মের রকমসকম আর আয়োজন দেখে রামচরনের মনে খটকা লাগলো! এ যা ব্যবস্থা দেখছে সে তাতে তো শুধু বাড়ি সারাতেই প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ হতে চলেছে! ঝাড়লন্ঠনগুলো বেলজিয়াম থেকে আনানো হয়েছিল সাবেক - এটা সে শুনেছিল, কিন্তু তাতে এমন চমক তো সে কোনোকালে দ্যাখেনি! তাহলে এমনই যদি বিয়ের আগের খরচ হয়, তাহলে বিয়ের জন্যে আসিফ কোন কারনে টাকা চাইতে গেল?! এত টাকা জলের মতন না উড়িয়ে তো বরং বিয়েতেই খরচ করতে পারতো! অথচ এতকালের বন্ধু আসিফ, তাকে কোনোদিনই তার অমিতব্যয়ী বলে মনে হয়নি! এইসব যখন গাড়িটা প্রধান প্ররবেশদ্বারের সামনে দাঁড় করিয়ে রামচরন ভেবে চলেছে, ঠিক সেই সময়ে অন্দররমহল থেকে আসিফ ছুটে এসে বাইরে দাঁড়ালো!
বিয়ের তারিখ অনুযায়ী বিয়েটা হচ্ছে আজ থেকে সাত দিন বাদে। ঠিক করে কালই সে প্রথমে গাড়ি নিয়ে আপিস যাবে ছুটির দরখাস্ত দিতে, মঞ্জুর যে হবেই তা নিয়ে তার মনে কোনো চিন্তা ছিলনা! তারপর ব্যাঙ্ক থেকে নগদ ৮০০০ টাকা তুলবে সে! সে টাকার মূল্য আজকের বাজারে ৩০ লাখের উপরে! কিন্তু সুরাইয়া যে তার হাড়ের হাড়, বোনটাকে সে মায়ের পেটের বোনের মতই ভালোবাসে! টাকা রামচরনের দেদার, এই টাকায় তার গায়ে আঁচড়টাও পড়বে না! তারপর সে টাকা নিয়ে সে পাড়ি দেবে সোজ্জা তার বন্ধুর গ্রামের বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে! আসিফরা হলো বনেদি বড়লোক, এককালে জমিদারি ছিল তাদের, হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘোড়া, মস্ত বড় মহল ওয়ালা প্রাসাদ! কিন্তু জমি জিরেতের মোকদ্দমায় আসিফের নির্বোরোধী বাবা পৈতৃক সম্পত্তির প্রায় সবটাই খুইয়েছেন জ্ঞাতি-গোষ্ঠির কাছে! আসিফ নিজে মেটালার্জি নিয়ে পড়ে বর্তমানে জেমস কাটিং এর ব্যবসা শুরু করেছে! আসিফের বুদ্ধি, ব্যবসার দক্ষতা আর পরিশ্রমের উপর রামচরনের অগাধ বিশ্বাস আছে! সে জানে, আজ অবস্থা পড়তির দিকে হলেও আসিফ ঘুড়ে দাড়াবেই! আর একদিন সে শহরের অন্যতম বিত্তবানদের মধ্যে একজন বলে গণ্য হবে! যাই হোক, যেমন ভাবা, তেমন কাজ। বসদবাটি তালাবন্ধ করে আসিফ দুই সপ্তাহের ছুটির দরখাস্ত দিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে রওনা দিল গাড়িতে করে শিমূলতলীতে! সঙ্গে পিস্তল আর তিনটে ম্যাগাজিনও রাখতে ভুললো না! এতগুলো টাকা, পথে কোথাও ছিনতাইবাজদের খপ্পরে পড়লে আত্মরক্ষারও বিশেষ প্রয়োজন! অবশ্য পথে কোনো ব্বিপদ ঘটলোনা!
সন্ধ্যে সাড়ে ছটা নাগাদ সে পৌছালো আসিফের তিন মহলা বাড়িতে! দেখলো নহবত খানা বসানোর তোড়জোড় চলছে! এ বাড়িতে সে আগেও এসেছে! কিন্তু এখন যেন সেই বাড়ির জৌলুসই পালটে গেছে! চতুর্দিকে মিস্ত্রি মজুর কাজ করছে প্রচুর, বাড়ি মেরামতি আর রঙ লাগানোর কাজ চলছে পুরোদমে! কোনো এক ভোজবাজিতে যেন সেকেলে প্রাসাদটার ভোল পালটে যাচ্ছে খুব দ্রুত! কাজকর্মের রকমসকম আর আয়োজন দেখে রামচরনের মনে খটকা লাগলো! এ যা ব্যবস্থা দেখছে সে তাতে তো শুধু বাড়ি সারাতেই প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ হতে চলেছে! ঝাড়লন্ঠনগুলো বেলজিয়াম থেকে আনানো হয়েছিল সাবেক - এটা সে শুনেছিল, কিন্তু তাতে এমন চমক তো সে কোনোকালে দ্যাখেনি! তাহলে এমনই যদি বিয়ের আগের খরচ হয়, তাহলে বিয়ের জন্যে আসিফ কোন কারনে টাকা চাইতে গেল?! এত টাকা জলের মতন না উড়িয়ে তো বরং বিয়েতেই খরচ করতে পারতো! অথচ এতকালের বন্ধু আসিফ, তাকে কোনোদিনই তার অমিতব্যয়ী বলে মনে হয়নি! এইসব যখন গাড়িটা প্রধান প্ররবেশদ্বারের সামনে দাঁড় করিয়ে রামচরন ভেবে চলেছে, ঠিক সেই সময়ে অন্দররমহল থেকে আসিফ ছুটে এসে বাইরে দাঁড়ালো!