29-12-2020, 02:51 PM
(28-12-2020, 07:29 PM)dada_of_india Wrote: ঝর্না! আমি ঝর্না ! কেন আমার নাম ঝর্না সেটা আমি নিজেও জানিনা ! একটা কালো মেয়ে যার শরীরে কোন ঝলক ছিলোনা ছিলনা তার এই পৃথিবীতে কোন প্রয়োজন তবুও তাকে পৃথিবীতে এনেছিল একজন স্ত্রী আর একজন পুরুষ নিজেদের যৌন লালসা মেটাতে গিয়ে ! কেন আমার নাম ঝর্না রাখা হয়েছিল সেটা জানার বা বোঝার শক্তি বা ইচ্ছা কোনোদিনই আমার ছিলোনা ! তবে আমি বুঝে গেছিলাম আমার জীবন ঝর্নার মতো কোনোদিনই বইতে পারবে না ! যখন পৃথিবীর আলো দেখতে শুরু করলাম কিন্তু প্রান ভরে সেই আলো দেখার আগেই আমি নিজেকে আবিস্কার করলাম অন্যলকের বাড়িতে একজন কাজের মেয়ে হিসাবে !
জাতে আমরা বাগদি ! তবে জাত কি জিনিস সেটাই আজ ৩৫ বছরেও বুঝে উঠতে পারলাম না ! কেনই বা আমাদের বাগদি বলে আর কেনই বা আমাদের ঘৃণার চোখে দ্যাখে সমাজের সব লোক ! পরের দয়াতে লেখাপড়া শিখেছি ! আজ হয়ত আমি নিজে প্রতিষ্ঠিত নিজের জীবনে কিন্তু এখনও সমাজের লোকেরা আমাকে ঘৃণার চোখে দ্যাখে ! হয়ত সামনে কিছুই বলতে পারেনা কিন্তু পিছনে সব সময় চলে একটা ষড়যন্ত্র আমাকে হারাবার ! সব সময় শিডিউল কাস্ট বলে অবহেলা করে ! শিডিউল কাস্ট হয়ে জন্মান কি অপরাধ ? আমি তো নিজে নিজেই জন্ম নিইনি ? তবুও কেন এমন ব্যবহার আমার সাথে ! তবে ওই উঁচু সমাজের লোকেদের চোখে আমার শরীরের খিদে প্রতিপলে বুঝতে পেরেছি ! আমার শরীর নাকি একটা জ্বলন্ত সেক্স বম্ব ! একদিন একটা লরির ডিজেল ট্যাঙ্কের গায়ে লেখা দেখেছিলাম "জন্ম থেকেই জ্বলছি " আমার অবস্থাটাও ঠিক সেই রকম ! জন্ম থেকেই ঘৃণা, অবহেলা, ষড়যন্ত্রের শিকার আমি ! ভালোবাসা যদিও এসেছিল সেটা ছিল ক্ষণস্থায়ী ! ক্ষণস্থায়ী এই কারনেই বলছি সেটা ছিল একতরফা এবং জোর করে কাউর ভালবাসাকে কেরে নেবার চেষ্টা ! লোকের বাড়িতে কাজ করতে করতে আর অপমান সইতে সইতে নিজেকে এতই কঠোর করে নিয়েছিলাম সেটা আজও ভাবলেই হাসি পায় ! তখন আমার মাথায় ছিল শুধুই কেরে নেবার চিন্তা ! আমার নেই ! কেন নেই ? আমাকে পেতেই হবে ! এই বাক্যটিই আমাকে সব সময় হিংসক করে রেখেছিল !
আজ যখন নিজের জীবন নিয়ে আপনাদের বলতে এসেছি তখন আপনাদের মধ্যেই হয়ত কেউ কেউ আছেন আমাকে সেক্সের মাল হিসাবে ভেবে নিতে পারবেন বা পারেন ! আমার শরীরের গঠন বলে দিই আগে ! না হলে আপনাদের ধারনা কি করে হবে যে আমি সেক্স বম্ব কিনা ?
উচ্চতায় আমি ৫ ফুট সাড়ে ৫ ইঞ্চি ! ৩৪-২৪-৩৪ আমার ফিগার ! লোকেদের কথায় যাকে বলে একেবারে খাবো খাবো ফিগার ! আচ্ছা আচ্ছা পুরুশদের দেখেছি আমার শরীরের দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তকাতে ! সেই কোন উঠতি যুবকই হোক বা ঘাটে যাবার পথে কোন বৃদ্ধই হোক ! ভদবান আমার শরীরে কালো রঙ দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু আমার শরীরটাকে এত লোভনীয় করে তৈরি করেছেনে বলে মাঝে মাঝেই ভগবান কে আমি ধন্যবাদ জানাই ! পিঠের শেষ পর্যন্ত আমার চুলের ঝার ! টিকালো নাক ! টানা বড়বড় আমার দুই চোখ ! অনেককেই বলতে শুনেছি যদি আমি কালো না হতাম তাহলে হয়ত শ্রিদেবিও আমার নিখের যোগ্য হতো না ! না আমার শ্রিদেবিকে হারানোর কোন ইচ্ছা ছিলনা বা নেই ! আমি কালো মেয়ে ঝর্না ! কালোই থাকতে চাই !
যখন প্রথম বার লোকের বাড়িতে কাজে গেলাম ...... না গেলাম না ! আমার বাবা আমাকে ছেরে এলো ! তখন আমার বয়স মাত্র আট বছর ! কাজের কিছুই জানিনা ! কারন তখন আমার কাজ করার বয়স নয় ! তখন ছিল আমার খেলার বয়স ! আমার পড়ার বয়স ! নতুন চোখে এই পৃথিবীকে দেখার বয়স ! তখন দেখতাম আমার বয়সি মেয়েরা কি সুন্দর পুতুল খেলছে আর সেই সব মেয়েরাই তাদের বাবা মায়ের পুতুল হয়ে আদর পাচ্ছে ! ভালোবাসা পাচ্ছে তখন ওই ছোট্ট মনেই হিংসার আগুন জ্বলত ! সেই সব পুতুল আর ভালোবাসা পাবার জন্য কেঁদে ফেলতাম ! কিন্তু আমার কান্না কেউ শুনত না ! ! উল্টে মেরে মেরে আমাকে দিয়ে কাজ করাত ! বাসন মাজাত, ঘর ঝাঁট দেওয়াত ! কাপর কাছাত ! ছোট্ট ছোট্ট হাত তখন ব্যাথায় যন্ত্রণায় কুঁকড়ে উঠত ! কিন্তু কেউ কোনোদিন আমার যন্ত্রণা নিয়ে মাথা ঘামায় নি ! আমার সমবয়সি বা একটু বড় তাদের বাড়িতেও একটা মেয়ে ছিল ! তার পৃথিবী একরাশ পুতুল, ভালোবাসা, স্বপ্ন ! আর আমার পৃথিবী হাতে ঝাঁটা, ঘর মোছার ন্যাকরা কাপর কাচার সাবান !
তাদের মেয়ে দুধ, মিষ্টি, ফল কতরকমের কৌটোর খাবার, চকলেট ! আর আমার জন্য রাতের বাসি রুটি একটু গুর ! কোনোকোনো দিন সকালে সেটাও জুটতও না ! খালি পেটে দুপুর অবধি কাজ করে একমুঠো ভাত আর একটু ডাল ! যদি কোনোদিন ভাগ্য ভালো থাকত তাহলে তার মেয়ের ফেলে দেওয়া আধখানা মাছের টুকরো ! চোখের জল দিয়ে ভাত ভিজিয়ে নুনের স্বাদ পুরন করতাম ! রাতেও সেই একই খাবার মেয়ের ফেলে দেওয়া রুটি একটু গুর !
আমি তখনও ভেবে পেতাম না মানুষ কি করে এত নিষ্ঠুর হতে পারে ! একজন মানুষ কে দুবেলা দুমুঠো ভাত দিতে কিসের এত কষ্ট ? অভুক্ত অপুষ্টিতে আমি ভুগে ভুগে একদিন জ্বরে পড়লাম ! বাড়ির মালিক আমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে চাইলে ওনার বউ কিছুতেই যেতে দেবেন না ! ওনার কথা "গরিবদের জ্বর জ্বালা হতেই পারেনা ! ও নাটক করছে ! ! "
রাত হতেই আমার ভেদবমি শুরু হোল ! মুখ দিয়ে রক্ত বেরুতে শুরু করে দিলো ! তখন বাড়ির মালিক আর থাকতে না পেরে আমাকে সোজা সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে দিয়ে আসলেন ! তিনদিন জমে মানুষে টানাটানির পর আমি একটু সুস্থ হলাম ! মালিক রোজ ই একবার করে আমাকে দেখতে আসতেন ! হাসপাতালেই প্রথম দুধের স্বাদ পেলাম ! প্রথম এই কারনেই বলছি কারন মায়ের দুধের স্বাদ সেই ছোট্ট বেলাতেই ভুলে গেছিলাম ! দিন সাতেক আমি হাসপাতালে ছিলাম ! সেই সাতদিন দুবেলা পেট ভরে খেতে পেয়েছিলাম ! নার্সের হাতে পায়ে ধরে বলেছিলাম "আমাকে এখানেই কাজে রেখে দিন ! আপনারা যা বলবেন তাই করবো ! " কিন্তু তখন আমার কথা কেউ শোনেনি ! কারন আমি একজন পেসেন্ট ছাড়া কিছুই ছিলাম না !
কি বলছো এসব , ঝর্নাকে আমি জানি আর চিনি ....
একটা দেবীর মতো চোখে রেখেছি ওকে ...
কালো মেয়ে তো শুধু তো চামড়ায় , আমরা যে কালো সব কিছুতে , বাইরে অন্য চেহারা ....
ক্ষমা করে দিও , প্রচুর বাজে বাজে আর উল্টোপাল্টা কমেন্ট লেখার জন্য ......