28-12-2020, 07:52 PM
আমার সাথে সাথে সবাই হেসে ফেলে। পারমিতা চিৎকার করে ওঠে---"না না, এটা সত্যি কথা নয়।"
ও একটা ব্যঙ্গ হাসি দেয় পারমিতার দিকে, একটু পরে বলে ওঠে---"আমি কি বলেত চাই না চাই সেটা কি তোকে বলে দিতে হবে। আমার কিছু বলার থাকলে তো বলবো, তোরা এমন ভাবে কোনটাসা করে ফেলেছিস ক্যানও।"
আমরা সবাই বেরিয়ে পড়ি, সবাই এবারে বাড়ি ফেরার পালা। আমি, বাসবি আর শুভ্র এক দিকে থাকি সুতরাং আমরা একটা ট্যাক্সি নিলাম। আমি বসলাম শুভ্রর পাশে, ও আমার দিকে দেখে বলল---"তোকে আজ দারুন মিষ্টি দেখাচ্ছে রে। আমি তো ভাবতে পারিনি তুই এই রকম ভাবে সাজতে পারিস।"
আমি ভুরু নাচিয়ে বলে উঠি---"সবে তো শুরু সোনা মনি, আরও কত আছে লুকিয়ে তুমি কি জানো"
চোখ বড় বড় করে আমার দিকে দেখে বলে---"বাঃবা আরও কত আছে রে লুকিয়ে, দেখাস যাকে দেখানোর আমি নয়।"
---"কেন তুই নস?"
আমার কথা শুনে ওর চোখ দুটি কেমন ভাসা ভাসা হয়ে ওঠে। ও আবার আমায় বলে অথে---"আমি নয় অহনা, আমি নয়।"
আমি চিৎকার করে জিজ্ঞেস করতে চাইছিলাম "কেন তুই নয়?"
বাসবি আমার দিকে তাকিয়ে দেখে বলে---"তোদের কি হয়েছে বলতো আজ, একজন তো উদাস বাউল আর একজন চাতক পাখী।"
আমি ওকে আবার জিজ্ঞেস করি---"তাহলে তুই কিছু বলবি না আমায়?"
মাথা নাড়ায় ও---"না আমি কিছু বলবো না।"
রেগে উঠি আমি, জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে নিজের চোখের জল লুকিয়ে রাখতে চেষ্টা করি। আমার অজান্তে ডান হাত টা মুঠি হয়ে আমার মুখের কাছে চলে আসে, দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরি নিজের কড়ে আঙ্গুল নিজেকে সামলে নেবার জন্য। "কি হবে চোখের জল ফেলে যে আমাকে বুঝল না।"
ট্যাক্সি থেকে নামার সময় আমাকে জিজ্ঞেস করে---"কাল কলেজে দেখা হবে।"
রেগে মেগে বলে উঠি---"কথা বলবি না আমার সাথে।"
---"ঠিক আছে, আমি তো এই রকম কিছু একটা আশা করেছিলাম রে।"
আমার বুক টা ফেটে যায়, চোয়াল শক্ত করে জলে ভেজা চোখে তাকিয়ে দেখি। ট্যাক্সি ছেড়ে দেয়। পেছনে তাকিয়ে দেখি, ও দাঁড়িয়ে আছে আমার চলে যাবার দিকে তাকিয়ে। মনে হোল এক বারের জন্য ও নিজের চোখের কোল টা আঙ্গুল দিয়ে মুছে নিলো।
তারপর দিন থেকে ও আমার সাথে এমন ভাব দেখায় যেন কিছুই হয়নি, আমরা খুব ভাল বন্ধু মাত্র। আমি ও বেশ ভাল ভাবে বুঝতে পারি ও আমার কাছে কিছু বলতে চায় কিন্তু বলে উঠতে পারে না। দিন কেটে যায় একটা লুকচুরি খেলা চলে যেন আমাদের মধ্যে। শুভ্র সবসময় একটা দূরত্ব রেখে যায় আমার সাথে। আমি যতই ধরতে চেষ্টা করি ওকে ও তত যেন মাগুর মাছের মতন পিচ্ছিল হয়ে আমার হাত ফশকে বেরিয়ে যায়। ধরা আর পরেনা। আমাদের বন্ধুতের মাঝে কোন বিচ্ছেদ ঘটাতে ও দেয় না ঠিকই কিন্তু ও আমাকে ওর মন খুলে কিছু বলতে ও চায় না।
শত বার জিজ্ঞেস করার পরেও ওর সেই একি উত্তর "আমার বলার সময় আসেনি অহনা"
সত্যি কি প্রেম ছিল (#14)
আমি অনেক দিন ধরে ভাবি "শুভ্র কি চায় আমার কাছ থেকে?" আমি মাঝে মাঝে বাসবি কে সেই প্রশ্নটা করি। ওর কাছ থেকে ও কোন রকম মন মানানো উত্তর পাই না। ও বলে হয়তো হবে তোকে পড়ে জানাবে। আমি জিজ্ঞেস করি এখন কেন নয়? এখন জানাতে আমাকে দোষটা কি? পারমিতাও আমাকে জিজ্ঞেস করতে থাকে কি রে শুভ্র কিছু বলল? আমি মাথা নেড়ে বলি "কি আর, কিছুই তো বলে না রে?"
কিছু দিন ধরে দেখতে পাই যে ও আমাকে কেমন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে। শীত কাল চলে আসে। সামনে পরীক্ষা। পরীক্ষার পড়া নিয়ে সবাই ব্যাস্ত হয়ে পড়ি।
একদিন শুভ্র আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করে---"কি রে আমার ওপরে রাগ করে আছিস নাকি?"
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে থাকি ওর দিকে, কি বলছে ও আমি কেন রাগ করবো ওর ওপরে। আমার তাকিয়ে থাকা দেখে ও বুঝতে পারে আমি কি জিজ্ঞেস করতে চাই।
আমার দিকে একটু ঝুঁকে জিজ্ঞেস করে---"মায়াপুর ঘুরতে যাবি?"
আমি কিছু বুঝে উঠতে পারিনা, যে ছেলে আমাকে মাঝে মাঝে এড়িয়ে চলছিল সে হটাথ করে আমাকে মায়াপুর যাবার জন্য কেন জিজ্ঞেস করছে?
---"যা হয়ে গেছে, হয়ে গেছে। যাবি কি না বল।"
আমি রেগে মেগে বলি---"তোর সাথে কেন যাবো?"
একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে বলে---"ওকে যাস না। আমি ভাবছিলাম একটু ঘুরতে যাবো তাই তোকে জিজ্ঞেস করা। আমি তাহলে একাই যাবো আর কি।"
আমার খুব বড় প্রশ্ন ছিল---"মায়াপুর কেন?"
---"আরে কিছু না, আমার একটু শান্তশিষ্ট জায়গা ভাল লাগে তাই মায়াপুর যাওয়া।"
আমি নিমরাজি হয়ে সম্মতি দেই---"ঠিক আছে আমি যাবো।"
আমি বাসবি কে জানাই যে আমি আর শুভ্র মায়াপুর বেড়াতে যাবো। বাসবি আমায় জিজ্ঞেস করে যে শুভ্র কি আমাকে একা যেতে বলেছে না ও আমাদের সাথে যাবে। আমি ওকে জানাই যে আমি আর শুভ্র শুধু আমরা দুইজনেই মায়াপুর বেড়াতে যাবো। সেই শুনে, বাসবি আমার চেয়ে বেশি খুশি হল মনে হল। আমি ওকে জিজ্ঞেস করি "কি হল এতো আনন্দিত হবার কি আছে?" ও আমায় বলে যে "দেখ এবারে নিসচ্ছই কিছু বলবে" আমি মাথা নেড়ে জানাই "কি জানি বাবা ছেলের মতি গতি কিছুই তো বুঝে উঠতে পারছিনা আমি।"
সেইদিন আমি একটা কচি কলাপাতা রঙের শারী পরি। চুল টাকে একটা ছোটো হাত খোঁপা করে ঘাড়ের পেছনে এলিয়ে দেই। দুই ভুরুর মাঝে একটা ছোটো টিপ এঁকে দেই। একটা পেন গুঁজে দেই খোঁপার ভেতরে। ডান কাঁধে একটা লাল শাল পাট পাত করে ঝুলিয়ে দেই। নিজেকে আয়নার সামনে দেখে বেশ লাগে আমার। মনে একটু দ্বিধা থাকলেও সেটা আমি আমার মুখে আনতে দেইনি। বাড়ি থেকে বলে বের হই যে আমি কলেজ যাচ্ছি। মা আমায় দেখে হেসে জিজ্ঞেস করে "কি রে সত্যি কলেজ যাচ্ছিস তো নাকি?" আমি আলত হেসে মাকে জানাই যে আমি কলেজেই যাচ্ছি।
বাসবি আমায় দেখে বলে---"বাহ বাঃ অনেক সেজেছিশ তো রে। কি ব্যাপার।"
মনের কোনো এক কোনায় আমার তখন একটা দ্বিধা বোধ থাকে। মনটা তৃষ্ণার্ত চাতক পাখীর মতন উরতে থাকে যেন আমি এক অজানা তরি বাইতে চলেছি, কোথায় যাবো কোথায় তীর ঠিকানা জানা নেই আমার। মনের কোন গহিনে জেগে ওঠে এক আনমনা সুর, সেই সুর কাছে ডাকে না দূরে সরাবে আমি কিছু বুঝে উটতে পারিনা। আমার ম্লান চোখের চাহনি দেখে বাসবি আমায় জড়িয়ে ধরে। চোখের কোলে আমার জল চলে আসে। ঠোঁট জোড়া একটু কেঁপে ওঠে।
---"কোথা থেকে বাসে উঠছিস তোরা?"
---"উলটোডাঙা"
---"ঠিক আছে, সাবধানে যাস কিছু হলে জানাস আমায়।"
আমি মাথা নেড়ে জানাই ঠিক আছে।
বাস স্ট্যান্ডে এসে ওকে দেখে আমি তো থ। ও একটা ব্রাউন রঙের সুট পরেছে। আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ওঠে---"লুকিং গরজিয়াস ডার্লিং। সো ক্যান উই স্টার্ট।"
আমি একটু লজ্জাই পেয়েছিলাম ওকে দেখে। আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানাই "চল।"
বাস দৌরতে থাকে রাস্তা ধরে। কিছুক্ষণের মধ্যে শহর ছাড়িয়ে গ্রাম গঞ্জের মাঝ ধরে এগুতে থাকে বাস। কারুর মুখে কোন কথা নেই। আমি এক দৃষ্টে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকি। বুকের মাঝে ধুক পুক করতে থাকে এক বিশাল প্রশ্ন "কি বলতে চলেছে শুভ্র আমায়। আমি যা জানতে চাই সেটা না অন্য কিছু।"
আমার নীরবতা দেখে শুভ্র আমায় জিজ্ঞেস করে---"কি হয়েছে, এতো চুপ চাপ কেন? কিছু তো বল। তুই কথা না বললে কি ভাল লাগে?"
একটা ম্লান হাসি হেসে তাকাই ওর দিকে---"কি শুনতে চাস বল, আমি বলে দেবো।"
আমায় একটু ঠেলে বলে---"তুই না একদম সাঙ্ঘাতিক দেখাচ্ছিস।"
আমি মুখ টিপে হেসে বলি---"কেন আগে আমাকে এই রকম অবস্থায় দেখিসনি।"
---"হায় পোড়া কপাল আমার, তুই আর দেখালি কোথায়।"
ও একটা ব্যঙ্গ হাসি দেয় পারমিতার দিকে, একটু পরে বলে ওঠে---"আমি কি বলেত চাই না চাই সেটা কি তোকে বলে দিতে হবে। আমার কিছু বলার থাকলে তো বলবো, তোরা এমন ভাবে কোনটাসা করে ফেলেছিস ক্যানও।"
আমরা সবাই বেরিয়ে পড়ি, সবাই এবারে বাড়ি ফেরার পালা। আমি, বাসবি আর শুভ্র এক দিকে থাকি সুতরাং আমরা একটা ট্যাক্সি নিলাম। আমি বসলাম শুভ্রর পাশে, ও আমার দিকে দেখে বলল---"তোকে আজ দারুন মিষ্টি দেখাচ্ছে রে। আমি তো ভাবতে পারিনি তুই এই রকম ভাবে সাজতে পারিস।"
আমি ভুরু নাচিয়ে বলে উঠি---"সবে তো শুরু সোনা মনি, আরও কত আছে লুকিয়ে তুমি কি জানো"
চোখ বড় বড় করে আমার দিকে দেখে বলে---"বাঃবা আরও কত আছে রে লুকিয়ে, দেখাস যাকে দেখানোর আমি নয়।"
---"কেন তুই নস?"
আমার কথা শুনে ওর চোখ দুটি কেমন ভাসা ভাসা হয়ে ওঠে। ও আবার আমায় বলে অথে---"আমি নয় অহনা, আমি নয়।"
আমি চিৎকার করে জিজ্ঞেস করতে চাইছিলাম "কেন তুই নয়?"
বাসবি আমার দিকে তাকিয়ে দেখে বলে---"তোদের কি হয়েছে বলতো আজ, একজন তো উদাস বাউল আর একজন চাতক পাখী।"
আমি ওকে আবার জিজ্ঞেস করি---"তাহলে তুই কিছু বলবি না আমায়?"
মাথা নাড়ায় ও---"না আমি কিছু বলবো না।"
রেগে উঠি আমি, জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে নিজের চোখের জল লুকিয়ে রাখতে চেষ্টা করি। আমার অজান্তে ডান হাত টা মুঠি হয়ে আমার মুখের কাছে চলে আসে, দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরি নিজের কড়ে আঙ্গুল নিজেকে সামলে নেবার জন্য। "কি হবে চোখের জল ফেলে যে আমাকে বুঝল না।"
ট্যাক্সি থেকে নামার সময় আমাকে জিজ্ঞেস করে---"কাল কলেজে দেখা হবে।"
রেগে মেগে বলে উঠি---"কথা বলবি না আমার সাথে।"
---"ঠিক আছে, আমি তো এই রকম কিছু একটা আশা করেছিলাম রে।"
আমার বুক টা ফেটে যায়, চোয়াল শক্ত করে জলে ভেজা চোখে তাকিয়ে দেখি। ট্যাক্সি ছেড়ে দেয়। পেছনে তাকিয়ে দেখি, ও দাঁড়িয়ে আছে আমার চলে যাবার দিকে তাকিয়ে। মনে হোল এক বারের জন্য ও নিজের চোখের কোল টা আঙ্গুল দিয়ে মুছে নিলো।
তারপর দিন থেকে ও আমার সাথে এমন ভাব দেখায় যেন কিছুই হয়নি, আমরা খুব ভাল বন্ধু মাত্র। আমি ও বেশ ভাল ভাবে বুঝতে পারি ও আমার কাছে কিছু বলতে চায় কিন্তু বলে উঠতে পারে না। দিন কেটে যায় একটা লুকচুরি খেলা চলে যেন আমাদের মধ্যে। শুভ্র সবসময় একটা দূরত্ব রেখে যায় আমার সাথে। আমি যতই ধরতে চেষ্টা করি ওকে ও তত যেন মাগুর মাছের মতন পিচ্ছিল হয়ে আমার হাত ফশকে বেরিয়ে যায়। ধরা আর পরেনা। আমাদের বন্ধুতের মাঝে কোন বিচ্ছেদ ঘটাতে ও দেয় না ঠিকই কিন্তু ও আমাকে ওর মন খুলে কিছু বলতে ও চায় না।
শত বার জিজ্ঞেস করার পরেও ওর সেই একি উত্তর "আমার বলার সময় আসেনি অহনা"
সত্যি কি প্রেম ছিল (#14)
আমি অনেক দিন ধরে ভাবি "শুভ্র কি চায় আমার কাছ থেকে?" আমি মাঝে মাঝে বাসবি কে সেই প্রশ্নটা করি। ওর কাছ থেকে ও কোন রকম মন মানানো উত্তর পাই না। ও বলে হয়তো হবে তোকে পড়ে জানাবে। আমি জিজ্ঞেস করি এখন কেন নয়? এখন জানাতে আমাকে দোষটা কি? পারমিতাও আমাকে জিজ্ঞেস করতে থাকে কি রে শুভ্র কিছু বলল? আমি মাথা নেড়ে বলি "কি আর, কিছুই তো বলে না রে?"
কিছু দিন ধরে দেখতে পাই যে ও আমাকে কেমন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে। শীত কাল চলে আসে। সামনে পরীক্ষা। পরীক্ষার পড়া নিয়ে সবাই ব্যাস্ত হয়ে পড়ি।
একদিন শুভ্র আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করে---"কি রে আমার ওপরে রাগ করে আছিস নাকি?"
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে থাকি ওর দিকে, কি বলছে ও আমি কেন রাগ করবো ওর ওপরে। আমার তাকিয়ে থাকা দেখে ও বুঝতে পারে আমি কি জিজ্ঞেস করতে চাই।
আমার দিকে একটু ঝুঁকে জিজ্ঞেস করে---"মায়াপুর ঘুরতে যাবি?"
আমি কিছু বুঝে উঠতে পারিনা, যে ছেলে আমাকে মাঝে মাঝে এড়িয়ে চলছিল সে হটাথ করে আমাকে মায়াপুর যাবার জন্য কেন জিজ্ঞেস করছে?
---"যা হয়ে গেছে, হয়ে গেছে। যাবি কি না বল।"
আমি রেগে মেগে বলি---"তোর সাথে কেন যাবো?"
একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে বলে---"ওকে যাস না। আমি ভাবছিলাম একটু ঘুরতে যাবো তাই তোকে জিজ্ঞেস করা। আমি তাহলে একাই যাবো আর কি।"
আমার খুব বড় প্রশ্ন ছিল---"মায়াপুর কেন?"
---"আরে কিছু না, আমার একটু শান্তশিষ্ট জায়গা ভাল লাগে তাই মায়াপুর যাওয়া।"
আমি নিমরাজি হয়ে সম্মতি দেই---"ঠিক আছে আমি যাবো।"
আমি বাসবি কে জানাই যে আমি আর শুভ্র মায়াপুর বেড়াতে যাবো। বাসবি আমায় জিজ্ঞেস করে যে শুভ্র কি আমাকে একা যেতে বলেছে না ও আমাদের সাথে যাবে। আমি ওকে জানাই যে আমি আর শুভ্র শুধু আমরা দুইজনেই মায়াপুর বেড়াতে যাবো। সেই শুনে, বাসবি আমার চেয়ে বেশি খুশি হল মনে হল। আমি ওকে জিজ্ঞেস করি "কি হল এতো আনন্দিত হবার কি আছে?" ও আমায় বলে যে "দেখ এবারে নিসচ্ছই কিছু বলবে" আমি মাথা নেড়ে জানাই "কি জানি বাবা ছেলের মতি গতি কিছুই তো বুঝে উঠতে পারছিনা আমি।"
সেইদিন আমি একটা কচি কলাপাতা রঙের শারী পরি। চুল টাকে একটা ছোটো হাত খোঁপা করে ঘাড়ের পেছনে এলিয়ে দেই। দুই ভুরুর মাঝে একটা ছোটো টিপ এঁকে দেই। একটা পেন গুঁজে দেই খোঁপার ভেতরে। ডান কাঁধে একটা লাল শাল পাট পাত করে ঝুলিয়ে দেই। নিজেকে আয়নার সামনে দেখে বেশ লাগে আমার। মনে একটু দ্বিধা থাকলেও সেটা আমি আমার মুখে আনতে দেইনি। বাড়ি থেকে বলে বের হই যে আমি কলেজ যাচ্ছি। মা আমায় দেখে হেসে জিজ্ঞেস করে "কি রে সত্যি কলেজ যাচ্ছিস তো নাকি?" আমি আলত হেসে মাকে জানাই যে আমি কলেজেই যাচ্ছি।
বাসবি আমায় দেখে বলে---"বাহ বাঃ অনেক সেজেছিশ তো রে। কি ব্যাপার।"
মনের কোনো এক কোনায় আমার তখন একটা দ্বিধা বোধ থাকে। মনটা তৃষ্ণার্ত চাতক পাখীর মতন উরতে থাকে যেন আমি এক অজানা তরি বাইতে চলেছি, কোথায় যাবো কোথায় তীর ঠিকানা জানা নেই আমার। মনের কোন গহিনে জেগে ওঠে এক আনমনা সুর, সেই সুর কাছে ডাকে না দূরে সরাবে আমি কিছু বুঝে উটতে পারিনা। আমার ম্লান চোখের চাহনি দেখে বাসবি আমায় জড়িয়ে ধরে। চোখের কোলে আমার জল চলে আসে। ঠোঁট জোড়া একটু কেঁপে ওঠে।
---"কোথা থেকে বাসে উঠছিস তোরা?"
---"উলটোডাঙা"
---"ঠিক আছে, সাবধানে যাস কিছু হলে জানাস আমায়।"
আমি মাথা নেড়ে জানাই ঠিক আছে।
বাস স্ট্যান্ডে এসে ওকে দেখে আমি তো থ। ও একটা ব্রাউন রঙের সুট পরেছে। আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ওঠে---"লুকিং গরজিয়াস ডার্লিং। সো ক্যান উই স্টার্ট।"
আমি একটু লজ্জাই পেয়েছিলাম ওকে দেখে। আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানাই "চল।"
বাস দৌরতে থাকে রাস্তা ধরে। কিছুক্ষণের মধ্যে শহর ছাড়িয়ে গ্রাম গঞ্জের মাঝ ধরে এগুতে থাকে বাস। কারুর মুখে কোন কথা নেই। আমি এক দৃষ্টে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকি। বুকের মাঝে ধুক পুক করতে থাকে এক বিশাল প্রশ্ন "কি বলতে চলেছে শুভ্র আমায়। আমি যা জানতে চাই সেটা না অন্য কিছু।"
আমার নীরবতা দেখে শুভ্র আমায় জিজ্ঞেস করে---"কি হয়েছে, এতো চুপ চাপ কেন? কিছু তো বল। তুই কথা না বললে কি ভাল লাগে?"
একটা ম্লান হাসি হেসে তাকাই ওর দিকে---"কি শুনতে চাস বল, আমি বলে দেবো।"
আমায় একটু ঠেলে বলে---"তুই না একদম সাঙ্ঘাতিক দেখাচ্ছিস।"
আমি মুখ টিপে হেসে বলি---"কেন আগে আমাকে এই রকম অবস্থায় দেখিসনি।"
---"হায় পোড়া কপাল আমার, তুই আর দেখালি কোথায়।"