27-12-2020, 06:18 PM
সত্যি কি প্রেম ছিল (#04)
আমি, অহনা মুখার্জি, বাবা মার এক মেয়ে। আমার দাদা আমার চেয়ে পাঁচ বছরের বড় এবং সে একটা গভর্নমেন্ট অফিসে কাজ করেন। আমার বাবা অনেক শক্ত মানুষ তাই ছোটবেলা থেকে আমাকে অনেক বন্ধনের মধ্যে কাটাতে হয়। আমার মা, গৃহিণী। ছোটবেলা থেকে আমি শুধু পড়াশোনা করে গেছি। নিজের দিকেও বিশেষ তাকাই নি। ছেলে বেলা থেকে আমি আর বাসবি অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলাম। সেই কলেজের দিন থেকে। কোনোদিন যে ছেলেদের সাথে মিশবো সেটাও ছিল গুড়ে বালি। যত বড় হই, তত যেন মনে হতো বাঁধন ভেঙে কবে বের হব তবে বাবা মা কে কষ্ট দিয়ে নিচ্ছই নয়। তাই যখন কলেজএর গণ্ডি তে পা পড়ল তখন ভাবলাম এই তো জীবন টাকে ভাল ভাবে উপভোগ করবো। তবে কোন দিন যে প্রেম করবো সে কথাটা মাথায় ছিলনা। প্রেমটা কি বলে কয়ে আসে নাকি? এই অহনা আমি আসছি আমায় দেখ।
আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করতাম "কেন তোকে লোকে দেখে না, অহনা?" অনেক দিন আমি আয়না কে এই প্রশ্নটা ছুড়ে দিয়েছি। একদিন থাকতে না পেরে বাসবি (আমার আয়না) আমাকে বলল "কি দেখিস নিজেকে এতো? তোকে বলে ও তো বোঝানো যাবে না। অন্য মেয়েরা কেমন সুন্দর সাজে আর তুই কি না ঢলঢোলা সালওয়ার কামিজ পরে কলেজ যাবি। কোনোদিন ঠিকঠাক ভাবে সাজিসও না। পারমিতা আরে সুপর্ণা কে দেখ। কেমন maintain করে নিজেদের।"
আমি নিজেকে আবার দেখি, "কুড়ি বছর বয়স হল অহনা, কমনীয়তার লেশ মাত্র নেই তোর মধ্যে। ভরাট বুক নিয়ে লুকিয়ে রেখেছিস এক চাদরের আস্তরণে। পোশাক-আশাক এ ঢেকে রেখেছিস নিজেকে। যেই সময় মেয়েরা নিজের যৌবন কে মেলে ধরে সেই সময় তুই নিজেকে নিজের থেকে লুকিয়ে রেখেছিস। নিজের মনেকে উন্মুক্ত ও তো করতে পারিসনি তুই।"
তারপর আবার নিজেকেই বললাম "আমায় যদি কেউ ভালবাসে তবে আমার মন কে বাসবে না আমার শরীর কে।"
সেই দিক থেকে, সুপর্ণা যেন একটা আগুনে পোড়ান নারী। নিজের রূপ নিয়ে বেশ সতর্ক। উন্নত বক্ষ যুগল যেন হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকে সব হ্যাংলা ছেলে গুলো কে আরে ছেলে গুলো হুমড়ি খেয়ে পরে ঐ হাতের একটু পরশ পাওয়ার জন্য। মাঝে মাঝে হিংসে হতো সুপর্ণা র ওপরে, কিন্তু যখন ভাবতাম যে কি পেয়েছে ও ঐ জলন্ত রূপ নিয়ে? সবাই জানে ও কি রকম মেয়ে। সবাই জানে, যে ঐ মেয়ে এক রাতের জন্য ভাল লাগে, চির জীবন পাশে বসিয়ে রাখার মতন নয়।
নিজেকে দেখে তখন মনে হতো আমার চেয়ে সুখী আর এই পৃথিবীতে কেউ নেই, অন্তত আমাকে কেউ এক রাতের সয়ন সঙ্গিনি বলে তো ভাবে না।
দিন দিন আমার আর শুভ্রর মধ্যে দূরত্ব বেড়ে গেল। ও আজকাল আমার সাথে ভাল করে কথাও বলত না, প্রথম কয় এক দিন মনে হয়েছিলো তার পরে সেটাও আর থাকেনি। যাকগে নিজের জীবন ও কি করে কাটাবে সেটা ওর ব্যাপার। দেখতে দেখতে ফার্স্ট ইয়ার পরীক্ষা চলে এল কাছে। আমি নিজে কে ডুবিয়ে নিয়েছিলাম পরাশুনর মধ্যে, আসে পাশে কি ঘটে চলেছে তার দিকে কোন ভ্রুকেপ করে দেখিনি। পরীক্ষায় বেশ ভাল অঙ্কও নিয়ে উতরে গেলাম। আমি ভেবেছিলাম যে শুভ্র যে হেতু ভাল ছেলে, সে হেতু ও বেশ ভাল মার্কস নিয়ে পাশ করবে। কিন্তু হল তার উলটো। ও কোন রকমে পাস করল। আমার দেখে বেশ মজা হয়েছিল ঐ দিন। "করবিনা পড়াশুনা তো হবে না? শুধু তো সুপর্ণার পেছনে লেগে থাকা। এবারে বোঝো ঠেলা আর কি।"
সেকেন্ড ইয়ার এর ক্লাস শুরু হল। আমি তো অবাক, প্রথম দিনে, যে শুভ্র আগে ছিল সেই শুভ্র আর নেই। অনেক রোগা হয়ে গেছে, আবার অনেক চুপ চাপ হয়ে গেছে। আমি জিজ্ঞেস করবো কি করবো না এই ভাবতে ভাবতে বেশ কিছু দিন চলে গেল। আমি আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম যে ওর আরে সুপর্ণার মধ্যে যে ভাব ভালবাসা বা হৃদ্যতা চলছিল সেটা কেটে গেছে। আমি ওর মুখ দেখে বুঝতে পারি যে ও বেশ কষ্টে আছে। তাও আমি ওকে গিয়ে জগ্যেস করিনি "কি হল তোর? এই রকম কাচুমাচু হয়ে বসে আছিস কেন?" আমার তো সেই দিন খুব ভাল লেগেছিল যে বেশ হয়েচে ভেবে।
একদিন আমি, বাসবি আর পারমিতা বসে গল্প করছিলাম।
বাসবি এক সময় পারমিতা কে জিজ্ঞেস করে---"এই বলতে পারিস, শুভ্রর কি হয়েছে?"
পারমিতা এক বার আমার দিকে এক বার বাসবির দিকে ভুরু কুঁচকে দেখে বলল---"কেন, তোরা জানিশ না? সুপর্ণা আর শুভ্রর মধ্যে কাটা কাটি হয়ে গেছে।"
সত্যি কি প্রেম ছিল (#05)
আমি জিজ্ঞেস করবো করবো ভাবলাম, ইতিমধ্যে বাসবি আমার হয়ে জিজ্ঞেস করলো---"কি হয়েছে?"
---"আমি কি জানি বাবা। তবে এই টুকু শুনেছি যে, সুপর্ণা ওকে ডিচ করেছে। শুভ্র নাকি ওর টাইপ এর ছেলে নয়। ওর চাই নতুন সখ মেটানোর জন্য একটা পোষা বেড়াল যেটা নাকি শুভ্রর পছন্দ নয়।"
আমি থাকতে না পেরে জিজ্ঞেস করি---"মানে?"
---"মানের আর কি জানি। সুপর্ণা ও বেশ মেয়ে, ডিচ করলো ঠিক পরীক্ষার আগে আগে, বেচারা ভেঙে গেলো একদম আর তার ফল তো দেখলি।"
আমি আড় চোখে তাকিয়ে দেখি শুভ্র দরজা দিয়ে ক্লাসে ঢুকল। চুপচাপ গিয়ে পেছনের বেঞ্চে গিয়ে বসে পড়ল। আমি তাকিয়ে থাকি ওর দিকে, এই আশায় যে এক বার দেখুক আমার দিকে। কিন্তু না, এক মন দিয়ে মাথা নিচু করে কি যেন পড়তে লাগলো। বাসবি বেশ বুঝতে পারল আমার মুখ দেখে যে আমি কি দেখছি।
কলেজ শেষ হবার পরে, আমি আর বাসবি যথারিতি বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে বাসের অপেক্ষা করছি, এমন সময় দেখি শুভ্র আরে পরাশর আসছে। বুক ভরে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে একটু নিজেকে তৈরি করি, না আজ জিজ্ঞেস করে ছাড়বো যে কি হয়েছে। কিন্তু ও আমদের দিকে দেখলও না। চুপচাপ চলে গেলো পরাশরএর সাথে। আমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে ওর চলে যাওয়া দেখলাম তার পরে বাসে উঠে বাড়ি চলে এলাম।
বেশ কিছু দিন কেটে যায়, অপেক্ষায় যদি কখন কথা বলে তাখন আমি সব থেকে আগে ওর মাথা টা ফাতিয়ে দেবো তার পরে কিছু জিজ্ঞেস করবো। কিন্তু কথা আর হয়ে ওঠে না আমাদের। দেখা হলে আমাকে পাস কাটিয়ে চলে যায়। যদি বা এক আধ বার চোখাচুখি হয়ে যায় তো একটা ম্লান হাসি হেসে চলে যায়।
সেই দিন অনেক বৃষ্টি পড়ছিল। চারদিকে অন্ধকার হয়ে এল। বাসবি কলেজএ আসেনি, ওর শরীর খারাপ হয়েছিল তাই। আমি একা একা সারা দিন ক্লাস করি। লাস্ট পিরিওড হয়ে যাবার পরে, দেখলাম সবাই এক এক করে চলে যায়। আমিও নিজের ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করি। আসপাশে আমার ক্লাসরই বন্ধুরা ছিল। হটাত করে একটা সিঁড়ি পিছল খেয়ে আমি পরে যাই। আমার বাম পায়ে মচকা লাগে। আমি চিৎকার করে উটি, চখ থেকে জল বেরিয়ে আসে। দাঁড়াতে পারিনা ঠিক করে। আমার পরে যাওয়া দেখে বেশ কিছু ছেলে মেয়ে জমা হয়ে গেলো আমার চারদিকে। আমি পা ধরে বসে থাকি আর যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যেতে থাকি। ছেলে গুলো যেন মজা দেখছিল একটা অসহায় মেয়ের পরে যাওয়া।
এমন সময় কোথাথেকে শুভ্র দেখি এগিয়ে আসে। আমার দিকে তাকিয়ে দেখে আমার চোখ থেকে জল বেরিয়ে আসে। আমার কাতর বেদনাময় চোখ দুটি দেখে আমার দিকে এগিয়ে আসে। বাকি ছেলেগুলো কে এক ধমকে জিজ্ঞেস করে---"শালা, একটা মেয়ে এখানে পরে গেছে আর তোরা কুকুর গুলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিশ। লজ্জা করেনা শূয়রের বাচ্চা।"
এক হাঁক দেয় পরাশর কে "এই শূয়র একটা ট্যাক্সি ডাক।"
তখনও পর্যন্ত ও আমার সাথে একটাও কথা বলেনি। আমার দিকে এক বার দেখে জিজ্ঞেস করলো---"হাঁটতে পারবি বলে তো মনে হছে না?"
আমি দুই ভেজা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে মাথা নেড়ে বললাম "না"
ব্যাথায় আমার ঠোঁট দুটি তির তির করে কাঁপছিল।
আমার দিকে ঝুঁকে পরে একটা হাত আমার পিঠের পেছনে রাখল, বলল---"আমার কাঁধে হাত রাখ।" আর একটা হাতে আমার দুই হাঁটুর নিচ থেকে দিয়ে আমায় পাঁজাকোলা করে তুলে নিল।
আমি অগত্যা ওর গলাটা জড়িয়ে ধরে থাকি। বুকের মাঝে তখন একটা বিশাল ঝড় উঠল। ধুকপুক ধুকপুক করে হৃদয়টা বাড়ি মারতে লাগলো বুকের পাঁজরে। তাকাতে গিয়ে ও ওর মুখের দিকে তাকাতে পারিনা। দৃষ্টি তো ততখনে ঝাপ্সা হয়ে গেছে।
ট্যাক্সি তে আমায় বসিয়ে দিয়ে ও পারমিতা কে জিজ্ঞেস করলো---"কি রে, যাবি নাকি?"
পারমিতা আমার দিকে এক বার তাকিয়ে দেখে বলে---"আমার না বাড়ি তে একটু কাজ আছে।"
আমার কান গুলো গরম হয়ে ওঠে, "এই কিনা বন্ধু? তুই কত নোট্*স আমার কাছ থেকে নিয়ে গেছিস আর আজ তুই একবার আমার জন্য নিজের কাজটা বন্ধ রাখতে পারিস না?" কিছু বলার ছিলনা ওকে আমার।
আমি কাতর স্বরে শুভ্রকে বললাম---"ট্যাক্সি তে ওঠ।
আমি, অহনা মুখার্জি, বাবা মার এক মেয়ে। আমার দাদা আমার চেয়ে পাঁচ বছরের বড় এবং সে একটা গভর্নমেন্ট অফিসে কাজ করেন। আমার বাবা অনেক শক্ত মানুষ তাই ছোটবেলা থেকে আমাকে অনেক বন্ধনের মধ্যে কাটাতে হয়। আমার মা, গৃহিণী। ছোটবেলা থেকে আমি শুধু পড়াশোনা করে গেছি। নিজের দিকেও বিশেষ তাকাই নি। ছেলে বেলা থেকে আমি আর বাসবি অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলাম। সেই কলেজের দিন থেকে। কোনোদিন যে ছেলেদের সাথে মিশবো সেটাও ছিল গুড়ে বালি। যত বড় হই, তত যেন মনে হতো বাঁধন ভেঙে কবে বের হব তবে বাবা মা কে কষ্ট দিয়ে নিচ্ছই নয়। তাই যখন কলেজএর গণ্ডি তে পা পড়ল তখন ভাবলাম এই তো জীবন টাকে ভাল ভাবে উপভোগ করবো। তবে কোন দিন যে প্রেম করবো সে কথাটা মাথায় ছিলনা। প্রেমটা কি বলে কয়ে আসে নাকি? এই অহনা আমি আসছি আমায় দেখ।
আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করতাম "কেন তোকে লোকে দেখে না, অহনা?" অনেক দিন আমি আয়না কে এই প্রশ্নটা ছুড়ে দিয়েছি। একদিন থাকতে না পেরে বাসবি (আমার আয়না) আমাকে বলল "কি দেখিস নিজেকে এতো? তোকে বলে ও তো বোঝানো যাবে না। অন্য মেয়েরা কেমন সুন্দর সাজে আর তুই কি না ঢলঢোলা সালওয়ার কামিজ পরে কলেজ যাবি। কোনোদিন ঠিকঠাক ভাবে সাজিসও না। পারমিতা আরে সুপর্ণা কে দেখ। কেমন maintain করে নিজেদের।"
আমি নিজেকে আবার দেখি, "কুড়ি বছর বয়স হল অহনা, কমনীয়তার লেশ মাত্র নেই তোর মধ্যে। ভরাট বুক নিয়ে লুকিয়ে রেখেছিস এক চাদরের আস্তরণে। পোশাক-আশাক এ ঢেকে রেখেছিস নিজেকে। যেই সময় মেয়েরা নিজের যৌবন কে মেলে ধরে সেই সময় তুই নিজেকে নিজের থেকে লুকিয়ে রেখেছিস। নিজের মনেকে উন্মুক্ত ও তো করতে পারিসনি তুই।"
তারপর আবার নিজেকেই বললাম "আমায় যদি কেউ ভালবাসে তবে আমার মন কে বাসবে না আমার শরীর কে।"
সেই দিক থেকে, সুপর্ণা যেন একটা আগুনে পোড়ান নারী। নিজের রূপ নিয়ে বেশ সতর্ক। উন্নত বক্ষ যুগল যেন হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকে সব হ্যাংলা ছেলে গুলো কে আরে ছেলে গুলো হুমড়ি খেয়ে পরে ঐ হাতের একটু পরশ পাওয়ার জন্য। মাঝে মাঝে হিংসে হতো সুপর্ণা র ওপরে, কিন্তু যখন ভাবতাম যে কি পেয়েছে ও ঐ জলন্ত রূপ নিয়ে? সবাই জানে ও কি রকম মেয়ে। সবাই জানে, যে ঐ মেয়ে এক রাতের জন্য ভাল লাগে, চির জীবন পাশে বসিয়ে রাখার মতন নয়।
নিজেকে দেখে তখন মনে হতো আমার চেয়ে সুখী আর এই পৃথিবীতে কেউ নেই, অন্তত আমাকে কেউ এক রাতের সয়ন সঙ্গিনি বলে তো ভাবে না।
দিন দিন আমার আর শুভ্রর মধ্যে দূরত্ব বেড়ে গেল। ও আজকাল আমার সাথে ভাল করে কথাও বলত না, প্রথম কয় এক দিন মনে হয়েছিলো তার পরে সেটাও আর থাকেনি। যাকগে নিজের জীবন ও কি করে কাটাবে সেটা ওর ব্যাপার। দেখতে দেখতে ফার্স্ট ইয়ার পরীক্ষা চলে এল কাছে। আমি নিজে কে ডুবিয়ে নিয়েছিলাম পরাশুনর মধ্যে, আসে পাশে কি ঘটে চলেছে তার দিকে কোন ভ্রুকেপ করে দেখিনি। পরীক্ষায় বেশ ভাল অঙ্কও নিয়ে উতরে গেলাম। আমি ভেবেছিলাম যে শুভ্র যে হেতু ভাল ছেলে, সে হেতু ও বেশ ভাল মার্কস নিয়ে পাশ করবে। কিন্তু হল তার উলটো। ও কোন রকমে পাস করল। আমার দেখে বেশ মজা হয়েছিল ঐ দিন। "করবিনা পড়াশুনা তো হবে না? শুধু তো সুপর্ণার পেছনে লেগে থাকা। এবারে বোঝো ঠেলা আর কি।"
সেকেন্ড ইয়ার এর ক্লাস শুরু হল। আমি তো অবাক, প্রথম দিনে, যে শুভ্র আগে ছিল সেই শুভ্র আর নেই। অনেক রোগা হয়ে গেছে, আবার অনেক চুপ চাপ হয়ে গেছে। আমি জিজ্ঞেস করবো কি করবো না এই ভাবতে ভাবতে বেশ কিছু দিন চলে গেল। আমি আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম যে ওর আরে সুপর্ণার মধ্যে যে ভাব ভালবাসা বা হৃদ্যতা চলছিল সেটা কেটে গেছে। আমি ওর মুখ দেখে বুঝতে পারি যে ও বেশ কষ্টে আছে। তাও আমি ওকে গিয়ে জগ্যেস করিনি "কি হল তোর? এই রকম কাচুমাচু হয়ে বসে আছিস কেন?" আমার তো সেই দিন খুব ভাল লেগেছিল যে বেশ হয়েচে ভেবে।
একদিন আমি, বাসবি আর পারমিতা বসে গল্প করছিলাম।
বাসবি এক সময় পারমিতা কে জিজ্ঞেস করে---"এই বলতে পারিস, শুভ্রর কি হয়েছে?"
পারমিতা এক বার আমার দিকে এক বার বাসবির দিকে ভুরু কুঁচকে দেখে বলল---"কেন, তোরা জানিশ না? সুপর্ণা আর শুভ্রর মধ্যে কাটা কাটি হয়ে গেছে।"
সত্যি কি প্রেম ছিল (#05)
আমি জিজ্ঞেস করবো করবো ভাবলাম, ইতিমধ্যে বাসবি আমার হয়ে জিজ্ঞেস করলো---"কি হয়েছে?"
---"আমি কি জানি বাবা। তবে এই টুকু শুনেছি যে, সুপর্ণা ওকে ডিচ করেছে। শুভ্র নাকি ওর টাইপ এর ছেলে নয়। ওর চাই নতুন সখ মেটানোর জন্য একটা পোষা বেড়াল যেটা নাকি শুভ্রর পছন্দ নয়।"
আমি থাকতে না পেরে জিজ্ঞেস করি---"মানে?"
---"মানের আর কি জানি। সুপর্ণা ও বেশ মেয়ে, ডিচ করলো ঠিক পরীক্ষার আগে আগে, বেচারা ভেঙে গেলো একদম আর তার ফল তো দেখলি।"
আমি আড় চোখে তাকিয়ে দেখি শুভ্র দরজা দিয়ে ক্লাসে ঢুকল। চুপচাপ গিয়ে পেছনের বেঞ্চে গিয়ে বসে পড়ল। আমি তাকিয়ে থাকি ওর দিকে, এই আশায় যে এক বার দেখুক আমার দিকে। কিন্তু না, এক মন দিয়ে মাথা নিচু করে কি যেন পড়তে লাগলো। বাসবি বেশ বুঝতে পারল আমার মুখ দেখে যে আমি কি দেখছি।
কলেজ শেষ হবার পরে, আমি আর বাসবি যথারিতি বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে বাসের অপেক্ষা করছি, এমন সময় দেখি শুভ্র আরে পরাশর আসছে। বুক ভরে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে একটু নিজেকে তৈরি করি, না আজ জিজ্ঞেস করে ছাড়বো যে কি হয়েছে। কিন্তু ও আমদের দিকে দেখলও না। চুপচাপ চলে গেলো পরাশরএর সাথে। আমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে ওর চলে যাওয়া দেখলাম তার পরে বাসে উঠে বাড়ি চলে এলাম।
বেশ কিছু দিন কেটে যায়, অপেক্ষায় যদি কখন কথা বলে তাখন আমি সব থেকে আগে ওর মাথা টা ফাতিয়ে দেবো তার পরে কিছু জিজ্ঞেস করবো। কিন্তু কথা আর হয়ে ওঠে না আমাদের। দেখা হলে আমাকে পাস কাটিয়ে চলে যায়। যদি বা এক আধ বার চোখাচুখি হয়ে যায় তো একটা ম্লান হাসি হেসে চলে যায়।
সেই দিন অনেক বৃষ্টি পড়ছিল। চারদিকে অন্ধকার হয়ে এল। বাসবি কলেজএ আসেনি, ওর শরীর খারাপ হয়েছিল তাই। আমি একা একা সারা দিন ক্লাস করি। লাস্ট পিরিওড হয়ে যাবার পরে, দেখলাম সবাই এক এক করে চলে যায়। আমিও নিজের ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করি। আসপাশে আমার ক্লাসরই বন্ধুরা ছিল। হটাত করে একটা সিঁড়ি পিছল খেয়ে আমি পরে যাই। আমার বাম পায়ে মচকা লাগে। আমি চিৎকার করে উটি, চখ থেকে জল বেরিয়ে আসে। দাঁড়াতে পারিনা ঠিক করে। আমার পরে যাওয়া দেখে বেশ কিছু ছেলে মেয়ে জমা হয়ে গেলো আমার চারদিকে। আমি পা ধরে বসে থাকি আর যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যেতে থাকি। ছেলে গুলো যেন মজা দেখছিল একটা অসহায় মেয়ের পরে যাওয়া।
এমন সময় কোথাথেকে শুভ্র দেখি এগিয়ে আসে। আমার দিকে তাকিয়ে দেখে আমার চোখ থেকে জল বেরিয়ে আসে। আমার কাতর বেদনাময় চোখ দুটি দেখে আমার দিকে এগিয়ে আসে। বাকি ছেলেগুলো কে এক ধমকে জিজ্ঞেস করে---"শালা, একটা মেয়ে এখানে পরে গেছে আর তোরা কুকুর গুলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিশ। লজ্জা করেনা শূয়রের বাচ্চা।"
এক হাঁক দেয় পরাশর কে "এই শূয়র একটা ট্যাক্সি ডাক।"
তখনও পর্যন্ত ও আমার সাথে একটাও কথা বলেনি। আমার দিকে এক বার দেখে জিজ্ঞেস করলো---"হাঁটতে পারবি বলে তো মনে হছে না?"
আমি দুই ভেজা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে মাথা নেড়ে বললাম "না"
ব্যাথায় আমার ঠোঁট দুটি তির তির করে কাঁপছিল।
আমার দিকে ঝুঁকে পরে একটা হাত আমার পিঠের পেছনে রাখল, বলল---"আমার কাঁধে হাত রাখ।" আর একটা হাতে আমার দুই হাঁটুর নিচ থেকে দিয়ে আমায় পাঁজাকোলা করে তুলে নিল।
আমি অগত্যা ওর গলাটা জড়িয়ে ধরে থাকি। বুকের মাঝে তখন একটা বিশাল ঝড় উঠল। ধুকপুক ধুকপুক করে হৃদয়টা বাড়ি মারতে লাগলো বুকের পাঁজরে। তাকাতে গিয়ে ও ওর মুখের দিকে তাকাতে পারিনা। দৃষ্টি তো ততখনে ঝাপ্সা হয়ে গেছে।
ট্যাক্সি তে আমায় বসিয়ে দিয়ে ও পারমিতা কে জিজ্ঞেস করলো---"কি রে, যাবি নাকি?"
পারমিতা আমার দিকে এক বার তাকিয়ে দেখে বলে---"আমার না বাড়ি তে একটু কাজ আছে।"
আমার কান গুলো গরম হয়ে ওঠে, "এই কিনা বন্ধু? তুই কত নোট্*স আমার কাছ থেকে নিয়ে গেছিস আর আজ তুই একবার আমার জন্য নিজের কাজটা বন্ধ রাখতে পারিস না?" কিছু বলার ছিলনা ওকে আমার।
আমি কাতর স্বরে শুভ্রকে বললাম---"ট্যাক্সি তে ওঠ।