Thread Rating:
  • 80 Vote(s) - 3.55 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica অনঙ্গর অণু পানু (a collection of micro-stories) _ অনঙ্গদেব রসতীর্থ
#72
ভূতুড়ে কাণ্ড

শীতের ফুরফুরে সকাল। বারান্দায় নরম রোদে বসে, স্বামী স্ত্রী চা খাচ্ছিলেন।
এমন সময় মিসেস গড়গড়ি স্বামীকে জিজ্লেঞেস করলেন: "কাল রাত্তিরে কোথায় গিয়েছিলে গো?"
ভূততত্ত্ববিদ মিস্টার কিরকিরিনাথ গড়গড়ি খবরের কাগজ থেকে চোখটা না তুলেই, সতর্ক গলায় বললেন: "ওই একটা রহস্যময় ভৌতিক তদন্তে।"
মিসেস গড়গড়ি ভুরু কোঁচকালেন: "কোথায়?"
কিরকিরিনাথ মৃদু হেসে বললেন: "সে এক গভীর জঙ্গলে!"
মিসেস গড়গড়ি উত্তেজনায় নড়েচড়ে বসলেন: "সেখানে কী হল?"
কিরকিরিনাথ তখন খবরের কাগজটাকে মুড়ে, টেবিলে ছুঁড়ে দিয়ে, গল্পের ঢঙে বলতে শুরু করলেন: "গভীর রাত; চারদিকে কুপকুপ করছে অন্ধকার। দু’পাশে ঘন কালো লতাপাতার জঙ্গল। উঁচু-উঁচু ঘাসের বনে, দু-হাত তফাতে চোখ চলে না। ওদিকে মাটিটাও ভিজে, নরম, আর পিছল মতো।
পিছলে পড়ে যাওয়ার ভয়ে, এক সময় হাঁটা থামিয়ে, হামা দিতে শুরু করলাম।
হাত দিয়ে অন্ধকারে হাতড়াতে-হাতড়াতে, হঠাৎ এক সময় একটা লম্বাটে ডোবার সামনে এসে পড়লাম।
ডোবাটা ঘন, পচা জলে থইথই করছে। কেমন একটা উগ্র গন্ধ বেরচ্ছে চারদিকে। আর অশরীরীর মতো 'উফ্-আহ্-আই-উই' শব্দ ভেসে বেড়াচ্ছে বাতাসে।
আমার খুব ভয় করতে লাগল। উত্তেজনায় আমার শরীর ঘামতে লাগল, আর ইয়েটাও দাঁড়িয়ে উঠল।"
মিসেস গড়গড়ি মাঝপথে বলে উঠলেন: "ইয়েটা কী?"
কিরকিরিনাথ অপ্রস্তুত হেসে বললেন: "ইয়ে মানে, ওই গায়ের লোম ভয়ে খাড়া হয়ে উঠল।"
তারপর কিরকিরিনাথ আবার বলতে শুরু করলেন: "লম্বাটে ডোবাটার পাড় দুটো সামান্য উঁচু, আর পাশের দিকে ঢেউ খেলানো মতো। সেখানে দিয়ে ছুঁয়ে-ছুঁয়ে ডোবাটার মাথায় পৌঁছতেই, ঘন ঘাস-বনের নীচে একটা নরম মাটির ঢিপি আমার হাতে ঠেকল।
ঢিপির মাথাটা ডোবার পচা জলে পিচ্ছিল হয়ে ছিল। আমার হাত সেখানে পড়তেই, সেই অশরীরী-চিৎকারটা রীতিমতো আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে তুলল।
আমি তাতে এতোটাই ভয় পেয়ে গেলাম যে, অন‍্যমনস্কতায় পা হড়কে, ডোবার জলের মধ্যে পড়ে গেলাম।
ডোবাটা অপরিসর দেখতে হলেও, তলাটা বেশ গভীর। ডোবার দুপাশের ঢালু দেওয়ালের নরম কাদা-মাটিতে আমার শরীর ঘষে-ঘষে যেতে লাগল।
যতো ঘষা লাগে, ততোই সেই 'ওরে মা রে!' বলে পরিত্রাহী অশরীরী চিৎকারটা বেড়ে ওঠে।
আমি তখন খুব ভয় পেয়ে গেলাম। তাই হ‍্যাঁচড়-প‍্যাঁচড় করে ডোবার মধ্যে থেকে ওঠবার চেষ্টা করলাম।
কিন্তু আমি ততোক্ষণে প্রায় ডোবার কাদায় বুক পর্যন্ত ডুবে বসে আছি। পা-টা ডোবার তলায় কোথায় চোরা-স্রোতের টানে ভেসে যাচ্ছে, কিছুতেই তার তল পাচ্ছি না।
আমি যতো ওঠবার চেষ্টা করছি, ততো ডোবার গভীর থেকে ঘোলাটে, পচা, ঘোলা জল ছিটকে-ছিটকে উঠে, আমার সর্বাঙ্গ ভিজিয়ে দিতে লাগল। তারপর ক্রমশ ডোবার চোরা-স্রোত আবার আমাকে কী এক অলৌকিক টানে নীচের দিকে টানতে লাগল।
তবু আমি হাল ছাড়লাম না। ডোবার কাদা-জলে নাকানি-চোবানি খেতে-খেতে, প্রাণপণে উপর দিকে ওঠবার চেষ্টা করতে লাগলাম।
কিন্তু আমি দু-কদম উঠি তো, আবার সেই ভয়াবহ 'উ-হু-হু-রে' চিৎকার বাজের মতো ফেটে পড়ে, আমাকে ডোবার তলায় ঘূর্ণি-স্রোতে টানতে থাকে। আর আমাকে নীচে টেনে নিয়েই, ডোবার গভীর থেকে, সেই ঘোলা ও গরম জল ছলাক-ছলাক করে ছিটকে ওঠে।
এমন উপর-নীচে টানাটানি, আর ঘষাঘষি বেশ কিছুক্ষণ চলতে থাকল।
আমি একটু উপরে ওঠবার চেষ্টা করি, আর অশরীরী সেই ডোবা আমাকে রাম-চিৎকারের সঙ্গে নীচের দিকে টানতে থাকে।
এমন করতে-করতে আমি যখন ক্লান্ত হয়ে হাঁপাচ্ছি, মনে হচ্ছে, শরীরে আর কোনও বল নেই, তখন আমি শেষবারের মতো এক মোক্ষম চাগাড় দিলাম।
ডোবার নীচের নরম, থকথকে জমিতে পা ছুঁড়ে সজোরে ধাক্কা দিয়ে, নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র অনুসারে শরীরটাকে উপর দিকে উঠিয়ে দিলাম।
আর সঙ্গে-সঙ্গে সেই অশরীরী চিৎকারটা সপ্তমে চড়ে উঠে, একরাশ ঘোলা জল ফোয়ারার মতো উপচে পাড় ভাসিয়ে, আমাকে সমেত ডোবার বাইরে আছাড় মেরে তুলে ফেলল।
আমি সর্বাঙ্গ ভিজে, সপসপে অবস্থায় কোনও মতে ডাঙায় উঠে, অসম্ভব হাঁপাতে লাগলাম।
তারপর গলা শুকিয়ে, আমার খুব বমি পেল। আমি তখন ডোবার পাড়ের কোঁকড়ানো ঘাসবনের ডগাগুলো দু-হাত দিয়ে জাপটে ধরে, ডোবার জলের মধ্যে, হড়হড় করে, বেশ অনেকটা বমি করে দিলাম।
অশরীরী ডোবাটা আমার থকথকে বমিটা, কোঁতকোঁত করে গিলে নিয়ে, 'আহ্' বলে, কেমন একটা যেন তৃপ্তির আওয়াজ করল।
এরপর আমার শরীরটা ভীষণ অবশ হয়ে এল। আমি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে, ওই ডোব পাশেই গুটিশুটি মেরে শুয়ে, ঘুমিয়ে পড়লাম।
তারপর সকল হতেই দেখি, ডোবা, জঙ্গল সব বেবাক উধাও! আমি একা একটা রাস্তার ফুটপাতে পড়ে রয়েছি। গত রাতে ব‍্যাপারটা যে ঠিক কী ঘটেছে, ঠিক যেন মনে করতে পারছি না। তবে শরীরটা বেশ চনমনে, আর ঝরঝরে লাগছে। তাই তো টুকটুক করে উঠে, চটপট বাড়ি চলে এলাম।"
 
গল্পটা শুনে, মিসেস গড়গড়ি শিউরে উঠে বললেন: "বাব্বা! কী সাংঘাতিক কাণ্ড!"
কিরকিরিনাথ মৃদু হসে, একটা স্বস্তির শ্বাস ফেললেন বউয়ের ভয় পাওয়া দেখে।
মিসেস গড়গড়ি আবার জিজ্ঞেস করলেন: "কোন অতৃপ্ত আত্মায় এমনটা করল, সেটা কিছু বুঝতে পারলে?"
কিরকিরিনাথ গম্ভীর হয়ে বললেন: "এখনও ঠিক ধরতে পারিনি। আরও কয়েকদিন রাতে অভিযান চালিয়ে দেখতে হবে।"
মিসেস গড়গড়ি ঘাড় নেড়ে বললেন: "তুমি তো এর আগেও কয়েকদিন রাতে এই আত্মাটার পিছনে ছোটাছুটি করেছ, তাই না?"
কিরকিরিনাথ সামান্য চমকে উঠে, দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন: "হ‍্যাঁ, ওই তো পরশুদিন রাত্রে একবার ট্রাই নিয়েছিলাম।"
মিসেস গড়গড়ি বললেন: "তার আগে গত মঙ্গলবার, তারও আগের শুক্রবারও তো তুমি ঘাসবনের পচা ডোবাতে ভূত খুঁজতে গিয়েছিলে বলে, আমার কাছে খবর আছে!"
কিরকিরিনাথ চমকে উঠে বললেন: "তোমায় কে বলল?"
মিসেস গড়গড়ি দুষ্টু হেসে বললেন: "তুমি যেদিন-যেদিন করে পচা-ডোবার ভূত খুঁজতে গেছ, সেইদিন-সেইদিন করে ও-পাড়ার বোস-গিন্নি, অথবা বিশ্বাস-বউদিও রাতে ভূতের কবলে পড়ে গায়েব হয়ে গিয়েছিল।
তখন বোসবাবু, বিশ্বাসবাবুরা রাতদুপুরে তাঁদের বউ খুঁজতে-খুঁজতে, আমার কাছে এসেছিলেন।
আমিও তখন ওনাদের সঙ্গে করে, আমার চেনা ঘাসবনের পচা-ডোবা, আর মাখনপুরের জোড়া মালভূমিতে ঘুরিয়ে আনলাম।
গতকালও তো তুমি চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই, দত্তবাবু রাত্তিরে এসেছিলেন। উনি আর আমি মিলে তখন হৃদয়পুরের জোড়া আগ্নেয়গিরিতে কতো টেপাটিপি, খোঁজাখুঁজি, আর ঘাঁটাঘাঁটি করলাম…"
মিসেস গড়গড়ি কথা থামিয়ে দেখলেন, তাঁর স্বামী বিখ্যাত ভূত-তাত্ত্বিক কিরকিরিনাথ, বসে-বসেই বিস্ময়ে পাথর হয়ে গিয়েছেন।
মিসেস গড়গড়ি তখন হেসে, স্বামীর থুতনি নাড়িয়ে আদর করে বললেন: "একেই বলে, ভূতের মার শেষ রাত্তিরে, বুঝলে মশাই!"
 
২৪.১২.২০২০
Like Reply


Messages In This Thread
RE: অনঙ্গর অণু পানু (a collection of micro-stories) _ অনঙ্গদেব রসতীর্থ - by anangadevrasatirtha - 24-12-2020, 02:21 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)