21-12-2020, 11:23 PM
৬১ পর্ব
হঠাৎ আর্তনাতের শব্দে অঞ্জলী দ্রুত বাথরুম থেকে ছুটে এলো।এসেই দরজার মুখে দাঁড়াতেই তার শিরদাড়া ঠান্ডা হয়ে গেল।কালো পোশাকে ঢাকা শরীর মুখেও কালো মুখোশ একজন অমিতের দিকে পিস্তল তাঁক করে দাড়িয়ে আছে।আর অমিত ডান হাত দিয়ে নিজের বাম বাহু চেপে ধরে আছে।সেদিকে তাকিয়ে অঞ্জলীর শরীর আরো ঠান্ডা হয়ে গেল তারমানে চিৎকারটা ছিলো বাম বাহুতে গুলি লাগার পর অমিতের।সাইলেন্সার লাগানো বলে গুলির শব্দ শুনতে পায়নি অঞ্জলী।হাজার যুদ্ধ জয় করা অঞ্জলী এতো সহজে দমে যাবার পাত্রী নয়।লোকটি দ্বিতীয় বার গুলি চালাতে যাবে।অঞ্জলী রোহিতদা!!বলে চিৎকার করে উঠলো।সাথে সাথে লোকটি অপ্রস্তুত হয়ে গেল হাতটাও নেমে গেল অমিতের দিক থেকে।এতোটুকুই সময় দরকার ছিলো ব্লাকবেল্ট পাওয়া অঞ্জলীর জন্য।লোকটার হাত অঞ্জলীর দিকে তাক করার আগেই।অঞ্জলী লাভ দিয়ে লোকটার মুখ বরাবর দিলো এক লাথী,লোকটা ছিটকে গিয়ে পরলো,হাত থেকে পিস্তলটা ছিটকে গেল আর মাথা গিয়ে লাগলো পিছনের দেয়ালে।মাথা চেপে ধরে ব্যথায় চিৎকার করে উঠলো।অঞ্জলী সাথে সাথে পিস্তলটা কুড়িয়ে নিয়ে লোকটার মাথায় তাক করলো।ঘটনা গুলো এতো তাড়াতাড়ি ঘটে গেল যে রুমের ভিতরে থাকা লোকটা ও অমিত এখনো একটা ঘোরের মধ্যে আছে।পাশের রুম থেকে দরজা ধাক্কার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।তারমানে লোকটা আসার সময় সব দরজা বাইরে থেকে লক করে দিয়েছে।
অঞ্জলী অমিতকে বললো প্লিজ কষ্ট করে ওদের লক খুলে দাও।অমিত সময় নষ্ট না করে রক্ত মাখা হাত নিয়েই বাইরে গিয়ে সবার রুমের লক খুলে দিতেই সবাই বেড়িয়ে পরলো।অমিতের হাতে রক্ত দেখে সবাই হতবাক হয়ে গেল।ইতিমধ্যো অমিতকে নিয়ে সবাই অঞ্জলীর রুমে চলে এসেছে।আর অঞ্জলী ও সবার সামনে লোকটার মুখোশ খুলে দিতেই বন্যা চিৎকার করে উঠলো বাপি তুমি!!!???
মঞ্জুও রোহিতকে দেখে হতবাক হয়ে গেছে ছিঃ শেষ পর্যন্ত তুমি!?অঞ্জলী তখনো রোহিতের দিকে পিস্তল তাক করে রেখেছে।এর বিশ্বাস নেই।কি গো রোহিত দা!!এবার বলো তোমার এ রুপের কারণ?আমি তোমাকে নিজের দাদার মত দেখে এসেছি আর শেষ পর্যন্ত তুমি!!ছিঃ রোহিতদা ছিঃ।
মঞ্জু ভিতরে আসতে চাইলে অঞ্জলী বললো না দিদি তোর যা বলার ওখান থেকে বল।অঞ্জলীর চোখের দিকে তাকিয়ে মঞ্জু আর ভিতরে এলো না।কি গো তুমি না দেশের বাইরে গেছো?এই তোমার দেশের বাইরে?শেষ পর্যন্ত নিজের ভাইকে!!আর বলতে পারলো না মঞ্জু কান্নায় ভেঙ্গে পরলো।এতোক্ষণেও অমিত একটা কথাও বলেনি।আসলে তার রোহিতদা এমন করবে সে দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি।
বাপি তুমি ছোটু কাকুকে মারতে এসেছো?বন্যা ফুঁপাতে ফুঁপাতে বললো।তোর বাপি শুধু তোর ছোট কাকুকে না সাথে আমাকেও মারতে এসেছে।তাছাড়া তোর বাপি এর আগেও একজনকে শেষ করে দিয়েছে!কি গো রোহিতদা ঠিক বললাম তো?তুমিই তো সিধুকে শেষ করে দিলে নিজের অপকর্ম ঢাকতে,অঞ্জলী বললো।
সিধুকে তুমি???একি করলে রোহিতদা মনি শংকর বললো।দু হাতে নিজের মাথা চেপে ধরে রোহিত চিৎকার করে বললো,, হা আমিই ওকে শেষ করেছি।আর আমি অমিতকেও শেষ করতে এসেছি কারণ সব সময় ঠাকুমা ওকে বেশি ভালোবেসেছে,সম্পতি সবার সমান ভাগে দিলেও তোমরা জানোনা রায় টেক্সটাইলের নামে প্রায় পাঁচশো একর জমি কিনে লিছ দেওয়া আছে যেটা আমরা কেউ জানতাম না।ঠাকুমা সুকৌশলে ওকে বিদেশে পাঠিয়ে পড়িয়েছে আর ওর কোম্পানি আমি সামলে ওর খরচ বহন করেছি।আর এখন উড়ে এসেছে জুড়ে বসতে।তাও না হয় মেনে নিতাম কিন্তু আমি ওর আসল পরিচয় জানি!!আসল পরিচয় মানে?রোহিতের কথার মাঝেই মনি,বিন্দু,মঞ্জু এক সাথে বলে উঠলো।হা আসল পরিচয় ওর মা ছিলো এক দুশ্চরিত্রা মহিলা যিনি আমাদের পরিবারের জন্য কলঙ্ক।আমার এখন ঘৃণা হয় ওমন মহিলাকে কাকিমনি বলতাম বলে।নিজের ভবিষৎ আর এই বাড়ির সম্পতির লোভে।নিজের স্বামী নপুংসক হওয়া স্বত্বেও অমিতকে পেটে ধরেছে!একজন রাস্তার মানুষ যার সাথে আমাদের বংশের রক্তের সম্পর্ক নেই সে কিনা উড়ে এসে জুড়ে বসবে তা তো আমি হতে দিতে পারিনা।রোহিতের কথা শুনে অমিতের দু চোখ বেয়ে অঝোরে অশ্রু বেয়ে এলো।রোহিতের কথা শুনে সবাই হতবাক।আমি জানিনা অমিতের জন্মপরিচয় আর জানতেও চাইনা,তবুও তো তোমরা একসাথে বড় হয়েছো তোমার একটু হাতও কাঁপলো না মঞ্জু বললো।সময় বড় নির্মম জিনিস মঞ্জু আমার বাবা যেটা শেষ করতে পারেনি আমাকে তো সেটা করতেই হবে।আর মাসিমনি সে তোমার কি ক্ষতি করেছে?বন্য নিজের বাবার দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো।ওই তো সব নষ্টের গোড়া আশ্রমের জমি বাড়িটা বাগিয়ে নিয়েছে আগেই আর এখন অমিতের হয়ে সব কিছু আগলে চলেছে।ওর জন্য আমার প্লান সব ভেস্তে গেছে,ও না থাকলে সব কিছু এতো কঠিন হতো না।কথা শেষ করেই রোহিতের হাত চলে গেল নিজের কোমড়ে পিছনে আর তড়িত গতীতে বেড়িয়ে আসলো ছোট একটা পিস্তল।রোহিত জানতো অঞ্জলী থাকবে আর অঞ্জলী থাকা মানে কোন একটা ঝামেলা হবে তাই কোমড়ে এক্সট্রা একটা পিস্তল গুজে আনছিলো।রোহিত ঘটনাটা এতো দ্রুত ঘটালো যে অঞ্জলী কিছু বুঝে উঠার আগেই পরপর দুটো ফায়ার আর সাথে সাথে অঞ্জলীর কোমড় থেকে ছিটকে রক্ত বেরিয়ে এলো।আর দ্বিতীয় বার ফায়ারে অঞ্জলী দু রানের মাংস ঘেসে বেড়িয়ে গেল বুলেটা।অঞ্জলী দাঁড়িয়ে থাকার দরুন অঞ্জলীর কোমড়টা রোহিতের মাথার উচ্চতায় ছিলো।অঞ্জলী তখনো রোহিতের মাথার দিকে পিস্তল তাক করে ছিলো।নিজের শরীরে দুটো গুলির আঘাতে অঞ্জলীর শরীর কেঁপে টলে পরলো মেঝেতে কিন্তু শরীরের সব শক্তি সঞ্চয় করে পিস্তল তাক করলো রোহিতের দিকে।রোহিত ততোক্ষণে অমিতের দিকে পিস্তলের নল ঘুড়িয়ে ফেলেছে।অঞ্জলী আগু পিছু না ভেবে নিজের পিস্তলের ট্রিগার টিপে দিলো।রোহিতের হাত থেকে পিস্তল খসে পরলো,সাথে ফিনকি দিয়ে রক্ত ছিটিয়ে পরলো রোহিতের পিছের দেয়ালে।অঞ্জলীর ছোঁড়া গুলিটা রোহিতের কপাল ফুরে মাথা দিয়ে বেড়িয়ে গেছে।চাপা চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারালো মঞ্জু।অমিত ছুটে গেল অঞ্জলীর কাছে যন্ত্রনায় জ্ঞান হারাবার অবস্থা।চিৎকার করলো অমিত কিন্তু আস্তে করেই শুধু গলা থেকে বের হলো একি করলে অঞ্জলী আমার জন্য।ঘটনা গুলো এতো তাড়াতাড়ি ঘটে গেল বিন্দু থ মেরে বসে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর সম্বিত ফিরে পেয়ে মঞ্জুর কাছে গেল। বন্যা কি করবে বুঝতে পারছেনা তার বাপির জন্য এতো কিছু তবুও তো ওর জন্মদাতা। রোহিতের মৃত দেহটার দিকে তাকিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলে ছুটে গিয়ে আঁছরে পরলো রোহিতের দেহের উপর।অমিতের হাত দিয়ে তখনো রক্ত পরছে।মনি শংকর দেখলো রোহিতের কোন আশা নেই অঞ্জলী আর অমিতকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিতে হবে।দ্রুত অঞ্জলীর কাছে গিয়ে অঞ্জলীকে কোলে তুলে নিয়ে অমিতকে সাথে নিয়ে নিচে নেমে এলো মনি শংকর।বিন্দু কে বললো মঞ্জুর চোখে মুখে জল ছিটিয়ে জ্ঞান ফিরলে তোমরা হাসপাতালে এসো।নিচে নেমে অঞ্জলী আর অমিতকে সাথে নিয়ে নিজের গাড়ি ছুটালো।যেতে যেতে ম্যাগীকে ফোন করে দিলো মনি শংকর।
হসপিটালে অঞ্জলী আর অমিতকে আলাদা ভাবে রেখে চিকিৎসা শুরু হলো।অমিতের শুধু মাএ হাতে গুলি লেগেছে।অঞ্জলী অবস্থা বিশেষ ভালো না।অঞ্জলীর দেখাশোনার দায়িত্ব বিশিষ্ট সার্জন ডাঃ সেন কে দেওয়া হলো।
মনি শংকরের ফোন পেয়ে ম্যাগীও চলে এসেছে।এসে মনি শংকরের কাছ থেকে সব শুনে ম্যাগীর হ্নদয় কেঁপে উঠলো।অমিতের চেয়েও অঞ্জলীর জন্য খুব কষ্ট লাগছে ম্যাগীর মেয়েটা সারাজীবন নিজের ভালোবাসার জন্য শুধু দিয়েই গেল বিনিময়ে কতো যন্ত্রনাটাই না ভোগ করতে হচ্ছে।অমিতের অপারেশন মোটামুটি সফল।আঘাত খুব বিশেষ না লাগায় একটু পরেই কেবিনে দেওয়া হবে এমনটাই জানালো ডাক্তার।অঞ্জলীর অপারেশন চলছে।এর মধ্যে মনি শংকর বাড়িতে কল করে অমিতের ব্যাপারটা বললো।মঞ্জু খুব কান্নাকাটি করছে খারাপ হোক সে তো স্বামী।জ্ঞান ফেরার পর থেকে বিন্দু ওকে শান্তনা দিয়ে যাচ্ছে।তবুও প্রলাপ বকে চলেছে।ওদিকে বিন্দু এমনিতেই প্রেগনেন্ট সেও কিছুটা অসুস্থ ফিল করছে।বাড়িতে কথা বলার পর মনি শংকর ম্যাগীকে বললো,আমি কি করবো বলতে পারো সবাই কাঁদছে,আমার বুঝি কষ্ট হচ্ছে না দুজনই আমার ভাই।আর একদিকে নিজের ছোটবোনের মতো অঞ্জলী।কি করে এদের সামলাবো।তারপর তো পুলিশি ঝামেলা আছে।ম্যাগীর অনেক ঘাটের জল খাবার অভ্যাস আছে।তাই মনি শংকরের কথা শুনে ম্যাগী বললো স্যার আমার কিছু কথা ছিলো।ম্যাগী কথার শুনে মনি শংকর ম্যাগীর দিকে তাকিয়ে বললো কি কথা?ম্যাগী নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে নিজের আসল পরিচয় দিলো।অমিতের সাথে সম্পর্ক বা পরিচয়,তার এদেশে আসার কারণ।অঞ্জলীর সাথে কিভাবে পরিচিয়।যতোটুকু প্রয়োজন এবং বলা যায় বিস্তারিত এবং তার পরিচয় গোপনের কারণ।সব শুনে মনি শংকর কিছুটা চুপ করে থেকে বললো সত্যি এবারে তোমাকে কিছু বলার নেই কারণ এক সময় তো সত্যি আমি অমিতকে আমার শক্র ভাবতাম।তাছাড়া আমারও মাঝে মাঝে মনে হতো তুমি কিছু লুকিয়ে চলেছো।যাক বাদ দাও ওসব এখন তো তুমি আমাদের একজনই হয়ে গেছো।
ম্যাগী একটু চিন্তায় ছিলো সব শুনে মনি শংকর কি রিয়েক্ট করে।যাক সব ঠিক আছে।তাই আবার বললো স্যার আমি একটা পরামর্শ দিতে পারি!!মনি শংকর ম্যাগীর দিকে তাকিয়ে বললো সব গোপন কথা যখন বলেই দিলে তখন তুমিও অঞ্জলীর মত আমাকে দাদা বলতে পারো।আবেগে খুশিতে ম্যাগীর দু চোখের কোন চিকচিক করে উঠলো।আচমকা মনি শংকরকে জরিয়ে ধরে বললো থ্যাংকু দাদা।মনি শংকরও ভ্রাতৃস্নেহের পরশমাখা হাত দিয়ে ম্যাগীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো।এখন আবেগের সময় না ম্যাগী আমাদের এখন অনেক কাজ।ম্যাগীও মনি শংকরকে ছেড়ে চোখের কোন মুছতে মুছতে বললো সরি দাদা,আপনি ঠিকই বলেছেন।আচ্ছা দাদা আপনি যে পুলিশি ঝামেলার কথা বলছেন,সেই ব্যাপারে আমি বলবো আপনি অঞ্জলী আর অমিতের ব্যাপারটা নিয়ে এই হাসপাতালের কোন ডাক্তারের সাথে কথা বলে যেকোন উপায়ে মিটিয়ে নিন।আর রোহিতদার ব্যাপারটা গোপন রেখে উনার সৎকারের ব্যবস্থা করা উচিত।কারন দেখুন ব্যাপারটা সম্পূর্ণ পারিবারিক।যার হাতে উনার মৃত্যু সে আমাদের অঞ্জলী,এদিকে আপনি নিজেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন যে অঞ্জলীও কতোটা নিরুপায় ছিলো।তাই আমি বলবো এটাই করা উচিত আমাদের।ম্যাগীর কথাটা মনি শংকরেরও মনে ধরলো হা তুমি ঠিকই বলছো এটাই ভালো হবে।
এর মধ্যো একজন নার্স এসে বললো অমিতের বাড়ির কে আছে?মনি শংকর ও ম্যাগী দুজনেই উঠে দাঁড়ালো।স্যার আপনাদের ডাকছেন বলে নার্সটা চলে গেল।মনি শংকর আর ম্যাগী ডাক্তারে রুমে ঢুকলে।উদ্বিগ্ন হয়ে মনি শংকর প্রশ্ন করলো স্যার আমার ভাই এখন কেমন আছে?আগে বসুন বলছি ব্যস্ত হবার কিছু নেই।দেখুন উনার ইনজুরি খুব বেশিনা।উনাকে আমরা অজ্ঞান করিনি জাষ্ট হাতটা অবশ করে নিয়েছি।এখন উনি বিপদমুক্ত। আমরা হাত ব্যান্ডেজ করে দিয়েছি।আপনারা চাইলে আগামীকাল বাড়ি নিয়ে গিয়েও পরবর্তী চিকিৎসা করাতে পারেন।আমরা কি একটু দেখা করতে পারি?ম্যাগী বললো।হা সিউর।মনি আর ম্যাগী ডাক্তারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেড়িয়ে এলো।
অমিতের কেবিনে মনি শংকর আর ম্যাগীকে ঢুকতে দেখেই অমিত অস্থির হয়ে বললো মনিদা অঞ্জলী কেমন আছে?এখনো অপারেশন চলছে সব ঠিক হয়ে যাবে তুই শান্ত হ।কি থেকে কি হয়ে গেল রোহিতদা কেন যে এমন করতে গেল।নিজে তো শেষ হলো সাথে গোটা পরিবারটাকে শেষ করে দিয়ে গেল।অমিতের পাশে বসতে বসতে কথা গুলো বললো মনি শংকর।তারপর অমিতকে বললো দেখ যা হবার তা তো হয়ে গেছে।ম্যাগী বলছিলো পুলিশের ঝামেলায় না জরিয়ে কিভাবে সৎকার করা যায় সেটা করতে।অমিতও একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো হা যেটা ভালো বোঝ করো।
প্রায় তিন ঘন্টা হয়ে গেছে অঞ্জলী এখনো অপারেশন টেবিলে।অঞ্জলীর অপারেশন শেষ না হলে যেতে চাচ্ছেনা মনি শংকর তবুও ম্যাগী বুঝিয়ে বললো দাদা ওদিকেও তো অনেক কাজ বাকি আপনি যান আমি তো আছি এখানে।অগ্রত মনি শংকর বাড়ির পথ ধরলো। যথাসময়ে রোহিতের সৎকার সম্পন্ন হলো।প্রায় চার ঘন্টা পর অঞ্জলীর অপারেশন শেষ হলো ডাক্তার সেন বের হতেই ম্যাগী জানতে চাইলো অঞ্জলীর অবস্থা।ডাঃ সেন জানালো অপারেশন মোটামুটি সাকসেসফুল তবুও ৭২ ঘন্টা না গেলে কিছু বলা যাচ্ছেনা।অনেক জায়গায় আঘাত পেয়েছে তো।না এ খবর অমিতকে এখন জানানো যাবেনা ম্যাগী ভাবলো।
পরদিন অমিতের রিলিজ দেওয়ার দিন তবুও সে যেতে চাচ্ছেনা অঞ্জলীকে ছেড়ে।অঞ্জলীর যে জ্ঞান এখনো ফেরেনি সেটা এতোক্ষণ বলা হয়নি তাকে বাধ্য হয়ে মনি শংকর স্বরবিস্তারে বললো দেখ ভাই এখানে থেকে আরো বেশি ঝামেলা।ওদিকে তোর বৌদি এমনিতে প্রেগনেন্ট তার উপর এমন মানসিক চাপ যাচ্ছে।বন্যা আর মঞ্জু তো একদম ভেঙ্গে পরেছে এখন তুই এখানে থাকার জেদ করলে আমি কি করে সব দিক সামলাবো।তুই ম্যাগীকে নিয়ে বাড়ি যা।ডাঃ এর কাছ থেকে নিউজ পেলেই আমি তোদের জানাব।
অঞ্জলীর জ্ঞান ফিরলো প্রায় ৫০ ঘন্টা পর রাত তখন প্রায় তিনটা।অঞ্জলীকে কেবিনে দেওয়া হবে সকালে মনি শংকর ডাঃ এর কাছ থেকে এমনটাই শুনলো।অতরাতে মনি শংকর আর বাড়িতে ফোন না করার সিদ্ধান্ত নিলো।সকাল ৬ টার দিকে অমিতের ফোন বেঁজে উঠলো হাতে নিয়ে দেখে মনি শংকরের কল।কলটা রিসিভ করতে গিয়ে বুকের ভিতরটা একবার কেঁপে উঠলো অমিতের।কানে দিতেই ওপাশ থেকে মনি শংকর বললো অঞ্জলীর জ্ঞান ফিরেছে।কিছুক্ষণ পর কেবিনে দিবে।আমি তাহলে এখনি আসছি অমিত বললো।আরে না না শোন এখনো তো কেবিনে দেয়নি তোরা বরং সকালে নাস্তা করে তবেই আয়।সকাল সকাল একটা ভালো খবর শুনে এতো কষ্টের ভিতরেও মনটা খুশিতে ভরে গেল অমিতের।এমনিতেও বাড়িতে আসার পর ম্যাগীর সেবায় অনেকটাই সুস্থ সে এখন।বন্যা মঞ্জু সবাই ভবিতব্যকে মেনে নিয়ে আস্তে আস্তে নিজেদের গুছিয়ে নিচ্ছে।
সকাল ৯ টা নাগাত অমিত ম্যাগী বিন্দু মঞ্জু বন্যা সবাই হাসপাতালে এলো।অঞ্জলীকে কেবিনে দেওয়া হলো।মুখে এখনো অক্সিজেন মাস্ক দেওয়া তাই কথা বলতে পারবে না।ডাঃ বললো এক এক করে দেখা করতে আর বেশি কথা না বলতে।
হঠাৎ আর্তনাতের শব্দে অঞ্জলী দ্রুত বাথরুম থেকে ছুটে এলো।এসেই দরজার মুখে দাঁড়াতেই তার শিরদাড়া ঠান্ডা হয়ে গেল।কালো পোশাকে ঢাকা শরীর মুখেও কালো মুখোশ একজন অমিতের দিকে পিস্তল তাঁক করে দাড়িয়ে আছে।আর অমিত ডান হাত দিয়ে নিজের বাম বাহু চেপে ধরে আছে।সেদিকে তাকিয়ে অঞ্জলীর শরীর আরো ঠান্ডা হয়ে গেল তারমানে চিৎকারটা ছিলো বাম বাহুতে গুলি লাগার পর অমিতের।সাইলেন্সার লাগানো বলে গুলির শব্দ শুনতে পায়নি অঞ্জলী।হাজার যুদ্ধ জয় করা অঞ্জলী এতো সহজে দমে যাবার পাত্রী নয়।লোকটি দ্বিতীয় বার গুলি চালাতে যাবে।অঞ্জলী রোহিতদা!!বলে চিৎকার করে উঠলো।সাথে সাথে লোকটি অপ্রস্তুত হয়ে গেল হাতটাও নেমে গেল অমিতের দিক থেকে।এতোটুকুই সময় দরকার ছিলো ব্লাকবেল্ট পাওয়া অঞ্জলীর জন্য।লোকটার হাত অঞ্জলীর দিকে তাক করার আগেই।অঞ্জলী লাভ দিয়ে লোকটার মুখ বরাবর দিলো এক লাথী,লোকটা ছিটকে গিয়ে পরলো,হাত থেকে পিস্তলটা ছিটকে গেল আর মাথা গিয়ে লাগলো পিছনের দেয়ালে।মাথা চেপে ধরে ব্যথায় চিৎকার করে উঠলো।অঞ্জলী সাথে সাথে পিস্তলটা কুড়িয়ে নিয়ে লোকটার মাথায় তাক করলো।ঘটনা গুলো এতো তাড়াতাড়ি ঘটে গেল যে রুমের ভিতরে থাকা লোকটা ও অমিত এখনো একটা ঘোরের মধ্যে আছে।পাশের রুম থেকে দরজা ধাক্কার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।তারমানে লোকটা আসার সময় সব দরজা বাইরে থেকে লক করে দিয়েছে।
অঞ্জলী অমিতকে বললো প্লিজ কষ্ট করে ওদের লক খুলে দাও।অমিত সময় নষ্ট না করে রক্ত মাখা হাত নিয়েই বাইরে গিয়ে সবার রুমের লক খুলে দিতেই সবাই বেড়িয়ে পরলো।অমিতের হাতে রক্ত দেখে সবাই হতবাক হয়ে গেল।ইতিমধ্যো অমিতকে নিয়ে সবাই অঞ্জলীর রুমে চলে এসেছে।আর অঞ্জলী ও সবার সামনে লোকটার মুখোশ খুলে দিতেই বন্যা চিৎকার করে উঠলো বাপি তুমি!!!???
মঞ্জুও রোহিতকে দেখে হতবাক হয়ে গেছে ছিঃ শেষ পর্যন্ত তুমি!?অঞ্জলী তখনো রোহিতের দিকে পিস্তল তাক করে রেখেছে।এর বিশ্বাস নেই।কি গো রোহিত দা!!এবার বলো তোমার এ রুপের কারণ?আমি তোমাকে নিজের দাদার মত দেখে এসেছি আর শেষ পর্যন্ত তুমি!!ছিঃ রোহিতদা ছিঃ।
মঞ্জু ভিতরে আসতে চাইলে অঞ্জলী বললো না দিদি তোর যা বলার ওখান থেকে বল।অঞ্জলীর চোখের দিকে তাকিয়ে মঞ্জু আর ভিতরে এলো না।কি গো তুমি না দেশের বাইরে গেছো?এই তোমার দেশের বাইরে?শেষ পর্যন্ত নিজের ভাইকে!!আর বলতে পারলো না মঞ্জু কান্নায় ভেঙ্গে পরলো।এতোক্ষণেও অমিত একটা কথাও বলেনি।আসলে তার রোহিতদা এমন করবে সে দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি।
বাপি তুমি ছোটু কাকুকে মারতে এসেছো?বন্যা ফুঁপাতে ফুঁপাতে বললো।তোর বাপি শুধু তোর ছোট কাকুকে না সাথে আমাকেও মারতে এসেছে।তাছাড়া তোর বাপি এর আগেও একজনকে শেষ করে দিয়েছে!কি গো রোহিতদা ঠিক বললাম তো?তুমিই তো সিধুকে শেষ করে দিলে নিজের অপকর্ম ঢাকতে,অঞ্জলী বললো।
সিধুকে তুমি???একি করলে রোহিতদা মনি শংকর বললো।দু হাতে নিজের মাথা চেপে ধরে রোহিত চিৎকার করে বললো,, হা আমিই ওকে শেষ করেছি।আর আমি অমিতকেও শেষ করতে এসেছি কারণ সব সময় ঠাকুমা ওকে বেশি ভালোবেসেছে,সম্পতি সবার সমান ভাগে দিলেও তোমরা জানোনা রায় টেক্সটাইলের নামে প্রায় পাঁচশো একর জমি কিনে লিছ দেওয়া আছে যেটা আমরা কেউ জানতাম না।ঠাকুমা সুকৌশলে ওকে বিদেশে পাঠিয়ে পড়িয়েছে আর ওর কোম্পানি আমি সামলে ওর খরচ বহন করেছি।আর এখন উড়ে এসেছে জুড়ে বসতে।তাও না হয় মেনে নিতাম কিন্তু আমি ওর আসল পরিচয় জানি!!আসল পরিচয় মানে?রোহিতের কথার মাঝেই মনি,বিন্দু,মঞ্জু এক সাথে বলে উঠলো।হা আসল পরিচয় ওর মা ছিলো এক দুশ্চরিত্রা মহিলা যিনি আমাদের পরিবারের জন্য কলঙ্ক।আমার এখন ঘৃণা হয় ওমন মহিলাকে কাকিমনি বলতাম বলে।নিজের ভবিষৎ আর এই বাড়ির সম্পতির লোভে।নিজের স্বামী নপুংসক হওয়া স্বত্বেও অমিতকে পেটে ধরেছে!একজন রাস্তার মানুষ যার সাথে আমাদের বংশের রক্তের সম্পর্ক নেই সে কিনা উড়ে এসে জুড়ে বসবে তা তো আমি হতে দিতে পারিনা।রোহিতের কথা শুনে অমিতের দু চোখ বেয়ে অঝোরে অশ্রু বেয়ে এলো।রোহিতের কথা শুনে সবাই হতবাক।আমি জানিনা অমিতের জন্মপরিচয় আর জানতেও চাইনা,তবুও তো তোমরা একসাথে বড় হয়েছো তোমার একটু হাতও কাঁপলো না মঞ্জু বললো।সময় বড় নির্মম জিনিস মঞ্জু আমার বাবা যেটা শেষ করতে পারেনি আমাকে তো সেটা করতেই হবে।আর মাসিমনি সে তোমার কি ক্ষতি করেছে?বন্য নিজের বাবার দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো।ওই তো সব নষ্টের গোড়া আশ্রমের জমি বাড়িটা বাগিয়ে নিয়েছে আগেই আর এখন অমিতের হয়ে সব কিছু আগলে চলেছে।ওর জন্য আমার প্লান সব ভেস্তে গেছে,ও না থাকলে সব কিছু এতো কঠিন হতো না।কথা শেষ করেই রোহিতের হাত চলে গেল নিজের কোমড়ে পিছনে আর তড়িত গতীতে বেড়িয়ে আসলো ছোট একটা পিস্তল।রোহিত জানতো অঞ্জলী থাকবে আর অঞ্জলী থাকা মানে কোন একটা ঝামেলা হবে তাই কোমড়ে এক্সট্রা একটা পিস্তল গুজে আনছিলো।রোহিত ঘটনাটা এতো দ্রুত ঘটালো যে অঞ্জলী কিছু বুঝে উঠার আগেই পরপর দুটো ফায়ার আর সাথে সাথে অঞ্জলীর কোমড় থেকে ছিটকে রক্ত বেরিয়ে এলো।আর দ্বিতীয় বার ফায়ারে অঞ্জলী দু রানের মাংস ঘেসে বেড়িয়ে গেল বুলেটা।অঞ্জলী দাঁড়িয়ে থাকার দরুন অঞ্জলীর কোমড়টা রোহিতের মাথার উচ্চতায় ছিলো।অঞ্জলী তখনো রোহিতের মাথার দিকে পিস্তল তাক করে ছিলো।নিজের শরীরে দুটো গুলির আঘাতে অঞ্জলীর শরীর কেঁপে টলে পরলো মেঝেতে কিন্তু শরীরের সব শক্তি সঞ্চয় করে পিস্তল তাক করলো রোহিতের দিকে।রোহিত ততোক্ষণে অমিতের দিকে পিস্তলের নল ঘুড়িয়ে ফেলেছে।অঞ্জলী আগু পিছু না ভেবে নিজের পিস্তলের ট্রিগার টিপে দিলো।রোহিতের হাত থেকে পিস্তল খসে পরলো,সাথে ফিনকি দিয়ে রক্ত ছিটিয়ে পরলো রোহিতের পিছের দেয়ালে।অঞ্জলীর ছোঁড়া গুলিটা রোহিতের কপাল ফুরে মাথা দিয়ে বেড়িয়ে গেছে।চাপা চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারালো মঞ্জু।অমিত ছুটে গেল অঞ্জলীর কাছে যন্ত্রনায় জ্ঞান হারাবার অবস্থা।চিৎকার করলো অমিত কিন্তু আস্তে করেই শুধু গলা থেকে বের হলো একি করলে অঞ্জলী আমার জন্য।ঘটনা গুলো এতো তাড়াতাড়ি ঘটে গেল বিন্দু থ মেরে বসে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর সম্বিত ফিরে পেয়ে মঞ্জুর কাছে গেল। বন্যা কি করবে বুঝতে পারছেনা তার বাপির জন্য এতো কিছু তবুও তো ওর জন্মদাতা। রোহিতের মৃত দেহটার দিকে তাকিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলে ছুটে গিয়ে আঁছরে পরলো রোহিতের দেহের উপর।অমিতের হাত দিয়ে তখনো রক্ত পরছে।মনি শংকর দেখলো রোহিতের কোন আশা নেই অঞ্জলী আর অমিতকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিতে হবে।দ্রুত অঞ্জলীর কাছে গিয়ে অঞ্জলীকে কোলে তুলে নিয়ে অমিতকে সাথে নিয়ে নিচে নেমে এলো মনি শংকর।বিন্দু কে বললো মঞ্জুর চোখে মুখে জল ছিটিয়ে জ্ঞান ফিরলে তোমরা হাসপাতালে এসো।নিচে নেমে অঞ্জলী আর অমিতকে সাথে নিয়ে নিজের গাড়ি ছুটালো।যেতে যেতে ম্যাগীকে ফোন করে দিলো মনি শংকর।
হসপিটালে অঞ্জলী আর অমিতকে আলাদা ভাবে রেখে চিকিৎসা শুরু হলো।অমিতের শুধু মাএ হাতে গুলি লেগেছে।অঞ্জলী অবস্থা বিশেষ ভালো না।অঞ্জলীর দেখাশোনার দায়িত্ব বিশিষ্ট সার্জন ডাঃ সেন কে দেওয়া হলো।
মনি শংকরের ফোন পেয়ে ম্যাগীও চলে এসেছে।এসে মনি শংকরের কাছ থেকে সব শুনে ম্যাগীর হ্নদয় কেঁপে উঠলো।অমিতের চেয়েও অঞ্জলীর জন্য খুব কষ্ট লাগছে ম্যাগীর মেয়েটা সারাজীবন নিজের ভালোবাসার জন্য শুধু দিয়েই গেল বিনিময়ে কতো যন্ত্রনাটাই না ভোগ করতে হচ্ছে।অমিতের অপারেশন মোটামুটি সফল।আঘাত খুব বিশেষ না লাগায় একটু পরেই কেবিনে দেওয়া হবে এমনটাই জানালো ডাক্তার।অঞ্জলীর অপারেশন চলছে।এর মধ্যে মনি শংকর বাড়িতে কল করে অমিতের ব্যাপারটা বললো।মঞ্জু খুব কান্নাকাটি করছে খারাপ হোক সে তো স্বামী।জ্ঞান ফেরার পর থেকে বিন্দু ওকে শান্তনা দিয়ে যাচ্ছে।তবুও প্রলাপ বকে চলেছে।ওদিকে বিন্দু এমনিতেই প্রেগনেন্ট সেও কিছুটা অসুস্থ ফিল করছে।বাড়িতে কথা বলার পর মনি শংকর ম্যাগীকে বললো,আমি কি করবো বলতে পারো সবাই কাঁদছে,আমার বুঝি কষ্ট হচ্ছে না দুজনই আমার ভাই।আর একদিকে নিজের ছোটবোনের মতো অঞ্জলী।কি করে এদের সামলাবো।তারপর তো পুলিশি ঝামেলা আছে।ম্যাগীর অনেক ঘাটের জল খাবার অভ্যাস আছে।তাই মনি শংকরের কথা শুনে ম্যাগী বললো স্যার আমার কিছু কথা ছিলো।ম্যাগী কথার শুনে মনি শংকর ম্যাগীর দিকে তাকিয়ে বললো কি কথা?ম্যাগী নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে নিজের আসল পরিচয় দিলো।অমিতের সাথে সম্পর্ক বা পরিচয়,তার এদেশে আসার কারণ।অঞ্জলীর সাথে কিভাবে পরিচিয়।যতোটুকু প্রয়োজন এবং বলা যায় বিস্তারিত এবং তার পরিচয় গোপনের কারণ।সব শুনে মনি শংকর কিছুটা চুপ করে থেকে বললো সত্যি এবারে তোমাকে কিছু বলার নেই কারণ এক সময় তো সত্যি আমি অমিতকে আমার শক্র ভাবতাম।তাছাড়া আমারও মাঝে মাঝে মনে হতো তুমি কিছু লুকিয়ে চলেছো।যাক বাদ দাও ওসব এখন তো তুমি আমাদের একজনই হয়ে গেছো।
ম্যাগী একটু চিন্তায় ছিলো সব শুনে মনি শংকর কি রিয়েক্ট করে।যাক সব ঠিক আছে।তাই আবার বললো স্যার আমি একটা পরামর্শ দিতে পারি!!মনি শংকর ম্যাগীর দিকে তাকিয়ে বললো সব গোপন কথা যখন বলেই দিলে তখন তুমিও অঞ্জলীর মত আমাকে দাদা বলতে পারো।আবেগে খুশিতে ম্যাগীর দু চোখের কোন চিকচিক করে উঠলো।আচমকা মনি শংকরকে জরিয়ে ধরে বললো থ্যাংকু দাদা।মনি শংকরও ভ্রাতৃস্নেহের পরশমাখা হাত দিয়ে ম্যাগীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো।এখন আবেগের সময় না ম্যাগী আমাদের এখন অনেক কাজ।ম্যাগীও মনি শংকরকে ছেড়ে চোখের কোন মুছতে মুছতে বললো সরি দাদা,আপনি ঠিকই বলেছেন।আচ্ছা দাদা আপনি যে পুলিশি ঝামেলার কথা বলছেন,সেই ব্যাপারে আমি বলবো আপনি অঞ্জলী আর অমিতের ব্যাপারটা নিয়ে এই হাসপাতালের কোন ডাক্তারের সাথে কথা বলে যেকোন উপায়ে মিটিয়ে নিন।আর রোহিতদার ব্যাপারটা গোপন রেখে উনার সৎকারের ব্যবস্থা করা উচিত।কারন দেখুন ব্যাপারটা সম্পূর্ণ পারিবারিক।যার হাতে উনার মৃত্যু সে আমাদের অঞ্জলী,এদিকে আপনি নিজেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন যে অঞ্জলীও কতোটা নিরুপায় ছিলো।তাই আমি বলবো এটাই করা উচিত আমাদের।ম্যাগীর কথাটা মনি শংকরেরও মনে ধরলো হা তুমি ঠিকই বলছো এটাই ভালো হবে।
এর মধ্যো একজন নার্স এসে বললো অমিতের বাড়ির কে আছে?মনি শংকর ও ম্যাগী দুজনেই উঠে দাঁড়ালো।স্যার আপনাদের ডাকছেন বলে নার্সটা চলে গেল।মনি শংকর আর ম্যাগী ডাক্তারে রুমে ঢুকলে।উদ্বিগ্ন হয়ে মনি শংকর প্রশ্ন করলো স্যার আমার ভাই এখন কেমন আছে?আগে বসুন বলছি ব্যস্ত হবার কিছু নেই।দেখুন উনার ইনজুরি খুব বেশিনা।উনাকে আমরা অজ্ঞান করিনি জাষ্ট হাতটা অবশ করে নিয়েছি।এখন উনি বিপদমুক্ত। আমরা হাত ব্যান্ডেজ করে দিয়েছি।আপনারা চাইলে আগামীকাল বাড়ি নিয়ে গিয়েও পরবর্তী চিকিৎসা করাতে পারেন।আমরা কি একটু দেখা করতে পারি?ম্যাগী বললো।হা সিউর।মনি আর ম্যাগী ডাক্তারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেড়িয়ে এলো।
অমিতের কেবিনে মনি শংকর আর ম্যাগীকে ঢুকতে দেখেই অমিত অস্থির হয়ে বললো মনিদা অঞ্জলী কেমন আছে?এখনো অপারেশন চলছে সব ঠিক হয়ে যাবে তুই শান্ত হ।কি থেকে কি হয়ে গেল রোহিতদা কেন যে এমন করতে গেল।নিজে তো শেষ হলো সাথে গোটা পরিবারটাকে শেষ করে দিয়ে গেল।অমিতের পাশে বসতে বসতে কথা গুলো বললো মনি শংকর।তারপর অমিতকে বললো দেখ যা হবার তা তো হয়ে গেছে।ম্যাগী বলছিলো পুলিশের ঝামেলায় না জরিয়ে কিভাবে সৎকার করা যায় সেটা করতে।অমিতও একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো হা যেটা ভালো বোঝ করো।
প্রায় তিন ঘন্টা হয়ে গেছে অঞ্জলী এখনো অপারেশন টেবিলে।অঞ্জলীর অপারেশন শেষ না হলে যেতে চাচ্ছেনা মনি শংকর তবুও ম্যাগী বুঝিয়ে বললো দাদা ওদিকেও তো অনেক কাজ বাকি আপনি যান আমি তো আছি এখানে।অগ্রত মনি শংকর বাড়ির পথ ধরলো। যথাসময়ে রোহিতের সৎকার সম্পন্ন হলো।প্রায় চার ঘন্টা পর অঞ্জলীর অপারেশন শেষ হলো ডাক্তার সেন বের হতেই ম্যাগী জানতে চাইলো অঞ্জলীর অবস্থা।ডাঃ সেন জানালো অপারেশন মোটামুটি সাকসেসফুল তবুও ৭২ ঘন্টা না গেলে কিছু বলা যাচ্ছেনা।অনেক জায়গায় আঘাত পেয়েছে তো।না এ খবর অমিতকে এখন জানানো যাবেনা ম্যাগী ভাবলো।
পরদিন অমিতের রিলিজ দেওয়ার দিন তবুও সে যেতে চাচ্ছেনা অঞ্জলীকে ছেড়ে।অঞ্জলীর যে জ্ঞান এখনো ফেরেনি সেটা এতোক্ষণ বলা হয়নি তাকে বাধ্য হয়ে মনি শংকর স্বরবিস্তারে বললো দেখ ভাই এখানে থেকে আরো বেশি ঝামেলা।ওদিকে তোর বৌদি এমনিতে প্রেগনেন্ট তার উপর এমন মানসিক চাপ যাচ্ছে।বন্যা আর মঞ্জু তো একদম ভেঙ্গে পরেছে এখন তুই এখানে থাকার জেদ করলে আমি কি করে সব দিক সামলাবো।তুই ম্যাগীকে নিয়ে বাড়ি যা।ডাঃ এর কাছ থেকে নিউজ পেলেই আমি তোদের জানাব।
অঞ্জলীর জ্ঞান ফিরলো প্রায় ৫০ ঘন্টা পর রাত তখন প্রায় তিনটা।অঞ্জলীকে কেবিনে দেওয়া হবে সকালে মনি শংকর ডাঃ এর কাছ থেকে এমনটাই শুনলো।অতরাতে মনি শংকর আর বাড়িতে ফোন না করার সিদ্ধান্ত নিলো।সকাল ৬ টার দিকে অমিতের ফোন বেঁজে উঠলো হাতে নিয়ে দেখে মনি শংকরের কল।কলটা রিসিভ করতে গিয়ে বুকের ভিতরটা একবার কেঁপে উঠলো অমিতের।কানে দিতেই ওপাশ থেকে মনি শংকর বললো অঞ্জলীর জ্ঞান ফিরেছে।কিছুক্ষণ পর কেবিনে দিবে।আমি তাহলে এখনি আসছি অমিত বললো।আরে না না শোন এখনো তো কেবিনে দেয়নি তোরা বরং সকালে নাস্তা করে তবেই আয়।সকাল সকাল একটা ভালো খবর শুনে এতো কষ্টের ভিতরেও মনটা খুশিতে ভরে গেল অমিতের।এমনিতেও বাড়িতে আসার পর ম্যাগীর সেবায় অনেকটাই সুস্থ সে এখন।বন্যা মঞ্জু সবাই ভবিতব্যকে মেনে নিয়ে আস্তে আস্তে নিজেদের গুছিয়ে নিচ্ছে।
সকাল ৯ টা নাগাত অমিত ম্যাগী বিন্দু মঞ্জু বন্যা সবাই হাসপাতালে এলো।অঞ্জলীকে কেবিনে দেওয়া হলো।মুখে এখনো অক্সিজেন মাস্ক দেওয়া তাই কথা বলতে পারবে না।ডাঃ বললো এক এক করে দেখা করতে আর বেশি কথা না বলতে।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!