Thread Rating:
  • 65 Vote(s) - 3.34 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance শেষের পাতায় শুরু (Completed)
পর্ব নয় – (#3-48)

 
বাড়ি ফিরতে একটু রাত হয়ে যায় ওদের। ক্যাবে সারা রাস্তা পেছনের সিটে বসে যথারীতি তিন কন্যের হাসাহাসি গল্প চলতে থাকে, রিশু মাঝে মাঝে যোগদান দিলেও একটু সংযত মাত্রা রেখেই গল্প করে। রেস্টুরেন্টে বসে ওইভাবে পড়াশুনা নিয়ে কথাটা উঠানো ঠিক হয়নি সেটা বুঝতে পারে রিশু, যার জন্য ওর মিষ্টি শ্যালিকা একটু বেশি চুপচাপ। দিয়া জানে ওর দাদার স্বভাব, বাইরে থেকে কড়া হলেও ভেতরটা খুব নরম, যখন যা চায় মুখ থেকে বলার আগেই পেয়ে যায়। মায়ের কাছে এই নিয়ে দাদাভাই প্রচুর বকুনি খায়। ছোট বেলায় মনে আছে, দাদাভাইয়ের হাতের ওপরে ঘুমিয়ে পড়ত। বাড়িতে কোথাও কোন দুষ্টুমি করলে মা ওকে যখন মারতে আসত তখন দাদাভাইয়ের পড়ার টেবিলের তলায় এসে লুকিয়ে পড়ত। ওদের বাড়িতে একটা ফটো আছে যেটা ওর খুব পছন্দের, তখন দিয়া খুব ছোট হাঁটতেও পারে না, হামাগুড়ি দেয়। সোফার ওপরে দাদাভাইয়ের বুকের ওপরে পাছা উলটে ঘুমিয়ে আর ওকে বুকের ওপরে জড়িয়ে ধরে দাদাভাইও ঘুমিয়ে পড়েছে। মা সেই ফটোটা সঙ্গে সঙ্গে তুলেছিল। আরো একটা ছবি ওর খুব পছন্দের, দাদাভাই তখন দিল্লী চলে এসেছে ডাক্তারি পড়তে, দিপ সবে হয়েছে। দিপের জন্ম হয়েছে শুনেই দাদাভাই কলেজ থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি গিয়েছিল। সদ্যজাত কচি দিপকে ডাক্তার ওদের সামনে নিয়ে এসেছে, সেই সময়ে দাদাভাই দিপকে কোলে নিয়ে কেঁদে ফেলেছিল, পাপা সেই ছবিটা তুলেছিল। দাদাভাইয়ের নাকের ডগায় এক ফোঁটা জল আর সদ্যজাত দিপ চোখ মেলে দেখতেও পারেনা। এই দুটো ছবি ওর খুব প্রিয়।
 
দিয়া আর ঝিনুক গল্পে মত্ত, কলেজে কি চলছে, বাড়িতে কি চলছে এই সব নিয়েই। ঝিলিক মাঝে মাঝে কথা বলে আর ভাবে, সামনের সিটে বসা মানুষটা কেমন হতে পারে। সংযত গম্ভির, চোখের দিকে দেখে বোঝা খুব মুশকিল মনের ভেতরে কি চলছে। অনেকের চোখ প্রচন্ড কথা বলে কিন্তু সেই তুলনায় ওর জিজুর চোখ ভীষণ শান্ত। দিদির কাছেই শুনেছে জিজু মদ সিগারেট কোন কিছুর নেশা করে না। হসপিটালে থাকলে কারুর ফোন উঠায় না, বাড়িতে এসেও অনেক রাত পর্যন্ত নিজের পড়াশুনা নিয়েই ব্যাস্ত থাকে। বন্ধু বান্ধব বলতে ওই এক ইন্দ্রজিৎদা আর শালিনীদি যাদের সাথে বিয়েতেই পরিচয় হয়েছিল।
 
ঝিলিককে চুপচাপ দেখে রিশু ঘাড় ঘুরিয়ে শ্যালিকাকে প্রশ্ন করে, “কি ব্যাপার, তুই ঠান্ডায় জমে গেলি নাকি?”

গলার আওয়াজটা মনে হল বহুদুর থেকে ওর কানে প্রবেশ করেছে, এতক্ষন শুধু মাত্র দিদির প্রানখোলা হাসি আর ওর বান্ধবীকেই দেখে যাচ্ছিল। আচমকা জিজুর গলা পেয়ে জিজ্ঞেস করে, “কিছু বললে কি?”

মৃদু হেসে ফেলে রিশু, “বলছিলাম তুই এত চুপচাপ আছিস কেন?”

মৃদু হাসে ঝিলিক, “না কিছু না।”

রিশু প্রশ্ন করে, “কোন জিন্স কিনবি?”

জিনসের কথা শুনে দিয়া চেঁচিয়ে ওঠে, “লিভাইসের স্টোন ওয়াশ আর একটা টরন জিন্স।”

রিশু হেসে বলে, “তুই শুধু জিন্স জিন্স করেই গেলি।”

দিয়া মুখ ভার করে বলে, “সেই তো লাস্ট মান্থে একটা কিনে দিলে, এই মাসে কই কিনে দিলে।”

রিশুর সাথে ঝিনুক আর ঝিলিকও হেসে ফেলে। ঝিনুক ওকে জিজ্ঞেস করে, “তোর জিন্স খুব পছন্দ?”

মাথা দোলায় দিয়া, “হুম ভীষণ।” বাড়িতে একটা আলমারি ভর্তি ওর পোশাক আশাক, জিন্স টপস শারটস শর্টস পার্টি ড্রেস বডিকন ড্রেস ইভিনিং গাউন পার্টি গাউন নানা ধরনের নানান ডিজাইনের পোশাক আশাক জুতো সব কিছু দাদাভাইয়ের কিনে দেওয়া।

রিশু হেসে বলে, “ওর ওয়ারড্রোব দেখলে মাথা তোমার খারাপ হয়ে যাবে। কি নেই ওর কাছে, কি সব নাম বলে আমাকে কখন ইমেল করে কখন হোয়াটসএপ করে লিঙ্ক পাঠায়।”

ম্লান হাসে ঝিলিক, “হ্যাঁ আমি দেখেছি।”
 
ওর দিদি এমন কোনদিন ছিল না। একটু বড় হতেই দিদির সাথে দূরত্ব বেড়ে যায় ওর। দিদি যখন কলেজে তখন বোনের সাথে রেশারেশি, বড় হলেও দিদি ওর পোশাক আশাক সাজার জিনিস পত্র কোনদিন ওকে ছুঁতে দিত না। পার্থের সাথে সম্পর্ক চলাকালীন ওর দিদি এক ভিন্ন গ্রহের বাসিন্দা হয়ে গিয়েছিল। সারাক্ষন শুধু মাত্র ফোনের মধ্যেই ঢুকে থাকত। জিজুর সাথে বিয়েটা হওয়ার পরেই দিদির আমূল পরিবর্তন হয়েছে, মায়ের সাথে ফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করে, ওর সাথে দিয়ার সাথে গল্প করে।
 
ঝিলিককে চুপ করে থাকতে দেখে ঝিনুক ওর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে যায়। বোনের হাতের ওপরে হাত রেখে মৃদু গলায় বলে, “কি ভাবছিস?”

দিদির চোখের দিকে তাকিয়ে মাথা দোলায় ঝিলিক, “না রে কিছু না।”

দুষ্টু মিষ্টি শ্যালিকার গলার আওয়াজ নেমে গেছে সেটা অনুধাবন করতে অসুবিধে হয় না রিশুর তাই হেসে বলে, “কি ব্যাপার রে, রেস্টুরেন্টে পড়াশুনা নিয়ে বলেছি বলে আমার ওপরে রাগ হয়েছে নাকি?”

ঝিলিক মাথা নাড়ায়, “না...” তারপরে হেসে বলে, “তোমার মতন মানুষের ওপরে রাগ করে থাকা যায় নাকি?” একটু থেমে মজার ছলেই জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা জিজু, তুমি এত চুপচাপ কেন?”

হেসে ফেলে রিশু, রূপসী স্ত্রীর দিকে চোখ টিপে দুষ্টু মিষ্টি শ্যালিকাকে উত্তর দেয়, “তোর দিদি প্রথম রাতেই যা ধ্যাতানি দিয়েছিল তারপরে আর মুখ খুলতে পারিনি।”

ওই কথা শুনে ঝিনুক ছাড়া বাকি সবাই হেসে ফেলে। ঝিনুক স্বামীর দিকে রোষকষিত জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “কি এমন বলেছিলাম...” বলেই মুখ টিপে হেসে ফেলে।

দিয়া আর ঝিলিক, ঝিনুকের হাসি দেখে সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন করে, “কিছু একটা তো হয়েছিল।” ঝিলিক ওর দিদির কাঁধে আলতো ধাক্কা মেরে ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি রে কি হয়েছিল বল না।”

রিশু ঘাড় ঘুরিয়ে রূপসী প্রেয়সীর লাজুক চোখের দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে বলে, “বলো, বলো...”

ঝিনুক ভীষণ লজ্জা পেয়ে সামনে বসা রিশুর মাথায় আলতো চাঁটি মেরে বলে, “তুমি বাড়ি চলো তোমার হচ্ছে আজকে।”

দিয়া ওর ঝিনুকদিকে উত্যক্ত করে তোলার জন্য বলে, “বল না প্লিজ, দাদাভাই কিছু বলেছিল তোমাকে?”

না, এত বড় মিথ্যে কথা ওর গলায় পাড়া দিলেও বলতে পারবে না ঝিনুক। দিয়ার গালে হাত দিয়ে আদর করে বলে, “না রে তোর দাদাভাই কিছু বলেনি।” তারপরে লজ্জায় নিচের ঠোঁট কেটে বলে, “আমি ওকে সোফায় শুতে বলেছিলাম।” বলেই রিশুর মাথায় চাঁটি মেরে অভিমানী কন্ঠে বলে, “তোমায় আজকে আমি কেটেই ফেলব।”

ঝিলিক আর দিয়া হাসিতে ফেটে পরে। হাসতে হাসতে ঝিলিক ওদের বলে, “ইসস জিজু তুমি প্রথম রাতে সোফায় কাটিয়েছ? ইসস আমাকে বলতে আমি চলে আসতাম।” সবাই হেসে ফেলে।

রিশু ওদের জিজ্ঞেস করে, “লাস্ট অফ অল থারটি ফার্স্ট তাহলে পার্টি হচ্ছে?”

তিনজন সুন্দরী সমস্বরে বলে ওঠে, “বিলকুল হচ্ছে।”

ঝিলিক বলে ওঠে, “আমি আর দিয়া তো আগে থেকেই প্লান করে এসেছিলাম। আমরা তো পার্টি ড্রেস ও এনেছি।”

দিয়া বলে ওঠে, “ঝিনুকদি, আমাদের কিন্তু সেদিন বিউটিসিয়ান চাই।”

ঝিলিক ও বলে ওঠে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, এক নয় পার্লার না হলে বাড়িতে ডাক।”

ঝিনুক একটু হেসে বলে, “রিতিকাও আসছে। দেখি কোন বিউটিশিয়ান পেলে বাড়িতেই ডেকে নেব।”

মাথা দুলিয়ে হেসে ফেলে রিশু, “আমার কিন্তু সেদিন ডিউটি আছে।”

ঝিলিক ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “না জিজুকে সেদিন আর হসপিটাল যেতে হবে না।”

ঝিনুক বোনকে বুঝিয়ে বলে, “তোর জিজুর সেদিন ওপিডি আছে।”
 
এতক্ষন একটা চাপা আবহাওয়া ছিল গাড়ির মধ্যে সেটা কেটে যায়। বাড়িতে এসেও বেশ কিছুক্ষন গল্প গুজবে মেতে ওঠে ওরা সবাই। গল্প করতে করতেই রিশুর সুটকেস গুছাতে শুরু করে দেয়। এতদিন বেড়াতে যাওয়া মানেই বাড়িতে ফেরা, কোনদিন কোন কিছুই হাতে নিয়ে যেতে হয়নি বাড়িতে। হসপিটাল শেষে কাঁধে ল্যাপটপের ব্যাগ নিয়েই এয়ারপোর্টে চলে যেত। ওর বাড়িতে ওর সব জিনিস রাখা তাই কিছুই নিয়ে যেতে হত না। আর বেড়াতে গেলে মা সুটকেস গুছিয়ে দিত। সুটকেস ঘুছানো একটা মহা সমস্যা। ভারী জ্যাকেট, বেশ কয়েকটা সুট, দুই জোড়া জুতো, দাড়ি কাটার জিনিস পত্র ইত্যাদি গুছিয়ে নেয়। জামা আর প্যান্ট একদম শেষের দিনে গুছিয়ে দেবে।
 
ঝিনুক মুচকি হেসে ওর দিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে বলে, “এত কিছু পারো আর একটা সুটকেস গুছাতে পারো না।”
 
দিয়া আর ঝিলিক ও দিদির কথা শুনে আর দাদাভাইয়ের অবস্থা দেখে হেসে ফেলে। বাড়িতে যখন কোথাও বেড়াতে যাওয়ার কথা উঠত ঝিনুক সুটকেস গুছাত, এই কাজটা বেশ ভালো ভাবেই পারে। সেই নিয়েই বেশ হাসাহাসি হয় ওদের মধ্যে। ঝিলিক ওর দিদিকে খেপায়, ওর দিদি নাকি একটা সুটকেস সব সময়ে গুছিয়ে রাখত, যদি ওদের বিয়ে না হয় তাহলে পার্থের সাথে পালাবে।
 
একত্রিশ ডিসেম্বরের সকাল, ঠান্ডাটা ভীষণ ভাবেই পড়েছে। দুই দুষ্টু মিষ্টি কন্যে বাড়িতে আসার পর থেকে রোজ দিন ঘুমাতে দেরি হয়ে যায়। সেদিন সকালে উঠেই ঝিলিকের দিদির কাছে আবদার, এখন একটা বিউটিশিয়ান ঠিক করা হয়নি। ঝিনুক জানায় রিতিকাকে বলে রাখা হয়েছে সেই ব্যাপারে দুপুরে রিতিকা বিইউটিশিয়ানকে সঙ্গে নিয়েই আসবে। দুপুরের পরে শালিনীও চলে আসবে। বিকেলে হসপিটালের পরে ইন্দ্রজিৎ আর রিশু বাড়ি ফিরলে ওরা সবাই মিলে সেই ফাইভ স্টার হোটেলের নাইট ক্লাবে পার্টি করতে যাবে। রিশু বেড়িয়ে যাওয়ার পর থেকেই বাড়িতে সাজ সাজ রব। নাইট ক্লাবে যাওয়াটা ঝিলিক আর ঝিনুকের কাছে সহজ হলেও দিয়ার কাছে এই যাওয়াটা অনেক। মাকে অনেক বলে কয়ে তারপরে দাদাভাইয়ের কাছে আবদার করে তখন দাদাভাই যদি ভালো মনে থাকে তবেই দাদাভাই মাকে বলে তবেই মায়ের কাছে অনুমতি পাওয়া যায়। বন্ধুদের সাথে বেশ কয়েক বার বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে পার্টি করেছে দিয়া তবে কোনদিন কোন নাইট ক্লাবে অথবা পাবে যায়নি।
 
সেদিন ওপিডি, তার ওপরে বছরের শেষ, অনেক ডাক্তার আগে থেকেই ছুটি নিয়ে নিয়েছিল। প্রচুর রুগী, শীতকালে মানুষের হাত পা এত কেন ভাঙ্গে, শীতকালেই যত দুর্ঘটনা ঘটে। এর মাঝেই একবার ইন্দ্রজিতের ফোন এলো, রিতিকা নামের মেয়েটা কে, কি করে, কোথায় থাকে ইত্যাদি হাজার প্রশ্ন। প্রশ্ন শুনে হেসে ফেলেছিল রিশু, তুই তোর চরকায় তেল দে না রে ভাই। ইন্দ্রজিৎ ছাড়ার পাত্র নয়, কেমন দেখতে? রিশু ও মজা করে উত্তর দেয়, একদম ডানা কাটা পরীর মতন।
 
লাঞ্চের পরে বাড়িতে ফোন করে রিশু। বাড়িতে পাঁচজন মেয়ে নিজেদের নিয়ে ভীষণ ভাবেই মেতে উঠেছে। ওর ছোট ফ্লাট ভীষণ ভাবেই মেয়েদের কোলাহলে গমগম করে। হসপিটালে ছিল বলে বেশিক্ষন ভিডিও কলে কথা বলতে পারেনি ওদের সাথে। ঝিলিক নাক মুখ কুঁচকে হাত জোড় করে রিশুর কাছে কাতর আবেদন করে, প্লিজ জিজু তাড়াতাড়ি ফিরবে। হেসে ফেলে রিশু, একমাত্র শ্যালিকার এই আবেদন উপেক্ষা করা মুশকিল। মাথা দুলিয়ে জানিয়ে দেয়, আচ্ছা দেখি পাঁচটার মধ্যে বেড়িয়ে যাবো।
 
দুপুরে লাঞ্চের পরেই শালিনী ঝিনুকের বাড়িতে পৌঁছে যায়। তার কিছু পরেই বিউটিশিয়ানকে নিয়ে রিতিকার আগমন ঘটে। পাঁচ জন মেয়েকে দেখে বিউটিশিয়ান ঈশা ভীষণ ঘাবড়ে যায়, এক হাতে এতগুলো মানুষের এক সাথে মেকআপ করা সম্ভব নয়। ঝিনুক একটু আধটু মেক আপ করতে জানে সেটা জানিয়ে দেয়। শুরু হয় ওদের সাজের পালা সেই সাথে গল্প মাতামাতি। অতি সহজে ঈশাও ওদের সাথে মিশে যায়। সাজের মাঝে আর গল্পের মাঝে দুই বার বাইরে থেকে অর্ডার দিয়ে খাবার আনা হয়ে গেছে। রিশু বাড়িতে নেই সেটা শালিনী জানত তাই এক বোতল হুইস্কি এনেছিল। সাজের আগে সবাই মিলে একটু মদ্যপান করে নেয়। বিশেষ করে শালিনী আর ঝিনুকের মদের প্রতি নজর একটু বেশি ছিল। বাঁধন ছাড়া হয়ে দিয়াও সাথে যোগদান করে, যদিও জানে যে ওর দাদাভাই যদি কোনদিন জানতে পারে তাহলে ওর কপালে মরন আছে। সাজতে সাজতে সন্ধ্যে গড়িয়ে যায়, ওদের সাজ গোজ প্রায় শেষের মুখে। ঘরিতে পাঁচটা বাজে, এতক্ষনে রিশুর হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে পরা উচিত। রিশুকে ফোন করতে গিয়ে একটা ছোট মেসেজ পড়ে ঝিনুকের মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে।
 
রিশুর একটা ছোট মেসেজ, “ইন ওটি। এমারজেন্সি এক্সিডেন্ট কেস। কল ইউ লেটার।”
 
মেসেজটা বিকেল সাড়ে চারটেতে করেছিল রিশু, ঝিনুক তখন সাজে ব্যাস্ত ছিল তাই আর তখন মেসেজ দেখা হয়নি। ঘড়ি দেখল ঝিনুক, এখন আর ফোন করে লাভ হবে না। শালিনী ইন্দ্রজিৎ কে ফোন করে রিশুর সম্বন্ধে জানিয়ে দেয়। ইন্দ্রজিতের ডিউটি শেষ, কিছুক্ষনের মধেই ওদের বাড়িতে পৌঁছে যাবে বলে জানিয়ে দেয়। রিশুর বাড়ির দিকে যেতে যেতে ওদের বন্ধু ব্রিজেশকে ফোন করে রিশুর ব্যাপার জেনে নেয়। ব্রিজেশ জানায়, ওপিডির পরে বাড়ির ফেরার জন্য তৈরি ছিল রিশু, কিন্তু শেষ মুহূর্তে একটা গুরুতর দুর্ঘটনার কেস এসে যাওয়াতে আর কম ডাক্তারের জন্য ওকেই শেষ পর্যন্ত অপারেশান করতে যেতে হয়।
 
রিশুর বাড়িতে পা রাখতেই বাড়ির সবার মুখ থমথমে দেখে হেসে ফেলে ইন্দ্রজিৎ, “আরে ইয়ার এতে এত মন খারাপের কি আছে? চলো চলো ড্রেস আপ কর। দেখি কতক্ষনে আসে। না হলে আমরা বেড়িয়ে যাবো। ওকে বলে দেবো সোজা হোটেলেই চলে আসবে।” তারপরে ঝিনুকের ভারাক্রান্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে, “মিসেস সান্যাল, তুমি ডাক্তারকে বিয়ে করেছ তাও আবার এমসের মতন বড় হসপিটালের অরথোপেডিক সার্জেন।”

ওর উত্তরে মৃদু হাসি দেয় ঝিনুক, “হ্যাঁ বুঝতে পারছি।”
 
দিয়া জানে ওর দাদার ব্যাপারে, দাদাভাই একবার কোন কাজের মধ্যে ডুবে গেলে কারুর ফোন তোলে না। কতবার হয়েছে, মা বসে আছে মার্কেটে যাওয়ার জন্য কিন্তু দাদাভাই ওটিতে ব্যাস্ত, শেষ পর্যন্ত মা একাই ওদের নিয়ে শপিং করতে বেড়িয়ে যেত।
 
দিয়া মুচকি হেসে বলে, “দাদাভাইয়ের ব্যাপারে আমার জানা আছে। আমাদের শেষ পর্যন্ত নিজেই যেতে হবে হোটেলে।”
 
বাড়ি ভর্তি লোক, সবাই ওর বন্ধু স্থানীয়, সকাল থেকেই দিয়া আর ঝিলিক ভীষণ আনন্দে মেতে ছিল নাইট ক্লাবে যাবে। ওর মনের মধ্যেও পার্টি করার ভীষণ ইচ্ছে ছিল। কলেজে পড়াকালীন কোন বছর নিউ ইয়ারে পার্টি করা বাদ যায়নি ওর। বিয়ের পরে সেটা আমুল বদলে যাবে সেটা প্রথমে মানতে একটু কষ্ট হয়েছিল, এমনকি বিকেল পর্যন্ত ভীষণ খুশি ছিল যে প্রতিবারের মতন বন্ধু বান্ধবী বোন আর স্বামীর বেশে ওর প্রেমিকের সাথে নাইট ক্লাবে গিয়ে মদ খেয়ে নাচানাচি হই হুল্লোড় করা যাবে।
 
প্রায় সাড়ে সাতটা নাগাদ ঝিনুকের ফোন বেজে ওঠে, অন্য পাশে রিশু, “কি করছ?”

অনেকক্ষণ বাদে রিশুর গলার আওয়াজ পেয়ে প্রান ফিরে পায় ঝিনুক, এমনিতে রোজদিন ডিউটি শেষের পরে কথা হয় কিন্তু সেদিন সেই লাঞ্চের পরে আর কথা হয়নি তার ওপরে ওটি ডিউটি করেছে ভাবতেই মন কেমন করে ওঠে ওর।
 
রিশুকে জিজ্ঞেস করে, “ওটি শেষ?”

রিশু ছোট উত্তর দেয়, “হ্যাঁ।” একটু থেমে প্রশ্ন করে, “তোমরা তৈরি? ইন্দ্র এসে গেছে কি?”

ঝিনুক উত্তর দেয়, “হ্যাঁ আমরা সবাই তৈরি।”

ঝিলিক একটু জোরে বলে, “জিজু প্লিজ তাড়াতাড়ি এসো দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

ইন্দ্রজিৎ বলে, “তোর কত দেরি? আমরা কি বেড়িয়ে পড়ব?”

রিশু একটু ভেবে বলে, “হ্যাঁ সেটাই ভালো হবে, তোরা বেড়িয়ে পর আমি না হয় সোজা হোটেলে পৌঁছে যাবো।”

ঝিনুক ওকে বলে, “বাড়ি ফিরবে না? ওই জামা কাপড় পরেই যাবে নাকি?”

ম্লান হাসে রিশু, “তুমি বাকি সবাইকে নিয়ে ইন্দ্রর সাথে বেড়িয়ে পর আমি ঠিক সময়ে পৌঁছে যাবো।”

শেষের দিকে রিশুর গলাটা অস্বাভাবিক রকমের শান্ত আর ক্লান্ত শোনায়। ঝিনুক প্রশ্ন করে, “কি হয়েছে একটু বলবে?”

শুকনো উত্তর দেয় রিশু, “কিছু না একটু টায়ার্ড। তোমরা বেড়িয়ে পর।”
 
রিশুকে ছাড়া কোথাও যাওয়ার ভাবনা ভাবতেই পারছে না ঝিনুক, কিন্তু অন্যদিকে নাইটক্লাবে যাওয়াটা একদম মন থেকে বিদায় দিতেও পারছে না, সেই সাথে দিয়া ঝিলিক আর রিতিকার মুখের দিকে চেয়ে শেষ পর্যন্ত পার্টি পোশাক পরে সবাই তৈরি হয়ে নেয়।

[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 9 users Like pinuram's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 18-10-2020, 01:30 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 21-10-2020, 04:16 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 22-10-2020, 03:41 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 21-10-2020, 04:13 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 22-10-2020, 02:49 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 27-10-2020, 02:59 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 28-10-2020, 12:21 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 28-10-2020, 10:20 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 29-10-2020, 01:29 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 30-10-2020, 11:22 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 01-11-2020, 01:37 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 02-11-2020, 12:51 PM
পর্ব আট – (#2-38) - by pinuram - 08-12-2020, 05:19 PM
RE: পর্ব আট – (#2-38) - by pinuram - 09-12-2020, 06:58 PM
Block Guest Users! - by pinuram - 09-12-2020, 11:47 PM
RE: Block Guest Users! - by dreampriya - 10-12-2020, 09:46 AM
RE: Block Guest Users! - by pinuram - 10-12-2020, 12:18 PM
পর্ব আট – (#6-42) - by pinuram - 14-12-2020, 11:37 PM
পর্ব আট – (#7-43) - by pinuram - 14-12-2020, 11:38 PM
পর্ব আট – (#8-44) - by pinuram - 14-12-2020, 11:38 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by pinuram - 19-12-2020, 11:17 PM



Users browsing this thread: 8 Guest(s)