Thread Rating:
  • 65 Vote(s) - 3.34 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance শেষের পাতায় শুরু (Completed)
পর্ব নয় – (#2-47)

 
রিশু পরের দিন যথারীতি হসপিটাল থেকে হাফ ডে নেয়। প্লেনে ওঠার আগে দুই বাড়ির মধ্যে অসংখ্য বার ফোনে কথাবার্তা হয়। এমনকি ফ্লাইটে সিটে বসার আগে পর্যন্ত ঝিনুক বারবার বোনের আর দিয়ার খবরা খবর নেয়। রিশু মাথা দুলিয়ে হেসে ওকে আসস্থ করে বলে, মেয়েরা বড় হয়েছে ঠিক চলে আসবে। মুখ ঝামটা দেয় ঝিনুক, হ্যাঁ চলে আসবে, এই প্রথমবার দুটো কচি মেয়ে বাড়ি থেকে একা বেড়িয়েছে। ওইদিকে যতক্ষণ না প্লেন দিল্লীর মাটি ছোঁয় ততক্ষন দুই বাড়ির মায়ের শান্তি নেই। চাপা উত্তেজনায় ঝিনুক হাতের নখ গুলো বসে বসে পারলে খেয়েই ফেলে, রিশু যত ওকে শান্ত করতে চেষ্টা করে তত ঝিনুক ওকে বলে, তুমি বোঝ না, আচ্ছা প্লেনে যদি ঠিক ভাবে সিট বেল্ট না বাঁধতে পারে তখন কি হবে? আচ্ছা, এই ফ্লাইটে তো খাবার দেয় না, যদি ওদের খিধে পায়? আচ্ছা, লাগেজ বেল্ট থেকে যদি ঠিক সময়ে লাগেজ না নিতে পারে তখন কি হবে? হেসে ফেলে রিশু, তোমার মুড়োর ঘন্ট হবে।
 
সময়ের আগেই রিশু আর ঝিনুক এয়ারপোর্টে পৌঁছে যায়। প্লেন থেকে নেমেই ফোন করে দাদাকে জানিয়ে দিয়েছিল দিয়া। লাগেজ নিয়ে বের হতে আরো একটু সময় লেগে যায় ওদের। ওদের দেরি দেখে ঝিনুক ভীষণ ভাবেই ব্যাস্ত হয়ে পরে, এতক্ষন লাগে নাকি? দুই জনার শুধু দুটো ব্যাগ আর একটা করে ল্যাপটপের ব্যাগ। আজকাল কচি কচি ছেলে মেয়েরাও ল্যাপটপ ছাড়া চলতে পারে না, মোবাইল ফোন তো মনে হয় যেন শরীরের একটা অঙ্গ। অবশেষে এয়ারপোর্টের গেট থেকে দুই তন্বী তরুণীর দর্শন পায় রিশু আর ঝিনুক। ঝিনুক ওদের দেখতে পেয়েই হাঁপ ছেড়ে বাঁচে, এইবারে এসে গেছে অবশেষে। দুইজনের পরনেই চাপা জিন্স আর চাপা টি শারট, দিয়ার গায়ে একটা ঘিয়ে রঙের ফারের জ্যাকেট আর ঝিলিকের গায়ে একটা সাদা রঙের ফারের জ্যাকেট। দুর থেকে দাদাকে আর দিদিকে দেখতে পেয়েই দিয়া আর ঝিলিক দৌড়ে আসে।
 
দাদাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “দেখলে তো এসে গেলাম শেষ পর্যন্ত।”

বোনের মাথায় চুমু খেয়ে বলে, “হ্যাঁ তোর বউদি তো...”

হেসে ফেলে দিয়া, “না না বৌদি কিসের, সুইট সেক...” দাদার সামনে সেক্সি শব্দটা ব্যাবহার করতে লজ্জা পায় দিয়া, দাদা ওর চেয়ে অনেক বড়, দিয়ার কাছে রিশু প্রনম্য ব্যাক্তি। মুচকি হেসে বলে, “মিষ্টি ঝিনুকদি।”

রিশু ওদের বলে, “আচ্ছা বাবা, তোর ঝিনুকদি পাগল হয়ে গেছিল।”

ঝিলিক দিদিকে জড়িয়ে ধরে মুচকি হেসে বলে, “তুই তো পুরো ইলেক্ট্রিক শক দিচ্ছিস মাইরি।” তারপরে রিশুর দিকে দেখে চোখ টিপে বলে, “উফফ জিজু এই ক’দিনে তোকে হাই প্রোটিন রিচ ডায়েট খাইয়ে চকাচক করে...”

কথাটা শুনে রিশু আর ঝিনুকের কান গাল লজ্জায় লাল হয়ে যায়। বোনকে আদর করে আলতো চাঁটি মেরে জড়িয়ে ধরে হেসে বলে, “তোর মুখে কিছু আটকায় না আজকাল।”
 
গল্প করতে করতে ওরা চারজনে ক্যাবের পারকিঙ্গের দিকে হেঁটে যায়। ক্যাবে ওঠার আগে হটাত দিয়া আর ঝিলিক দুইজনেই দাঁড়িয়ে পরে। ঝিনুক ভুরু কুঁচকে ওদের ওইভাবে দাঁড়িয়ে যাওয়াতে প্রশ্ন করে। লজ্জা মাখানো হাসি দুই তন্বী তরুণীর কাজল কালো চোখে। ওদের ক্যাবের বেশ কিছু দূরে দুটো ছেলে দাঁড়িয়ে, দিয়া আর ঝিলিক ওই দুটো ছেলেকে দেখে রিশুর চোখের আড়াল করে হাত তুলে একটু আঙ্গুল নাড়িয়ে বিদায় জানায়। রিশু ততক্ষনে ক্যাবের মধ্যে সামনের সিটে উঠে বসে গেছে।
 
ক্যাবের পেছনের সিটে বসার আগে ঝিলিককে জিজ্ঞেস করে ঝিনুক, “কে?”

গলা নামিয়ে ফিসফিস করে উত্তর দেয় দিয়া, “আরে ঝিনুকদি, এই জাস্ট কোলকাতা এয়ারপোর্টে দেখা হয়েছিল।”

ঝিলিকের চোখের তারায় চমক, “তুই আমার মিষ্টি দিদি, কিছু না রে, জাস্ট ফ্লারটিং।”

ঝিনুক বুক ভরে শ্বাস নিয়ে মৃদু হেসে বলে, “ফ্লারটিং ঠিক আছে, কিন্তু অন্য কিছু হলে আগে থেকে জানিয়ে দে।” দিয়ার দিকে দেখে বলে, “তোর দাদাভাই জানতে পারলে কি হবে জানিস তো?”

দিয়া ঝিনুকের গালে ছোট চুমু খেয়ে হেসে বলে, “তুমি রক্ষাকর্ত্রী। তবে সত্যি বলছি জাস্ট ফ্লারটিং।”
 
ক্যাবে ওঠার আগে দুই তন্বী দুষ্টু মিষ্টি তরুণীকে সাবধান করে দেয় ঝিনুক। ক্যাবে উঠে বাড়ির পথে যাত্রা শুরু করে ওরা। সামনের সিটে রিশু, পেছনের সিটে বসে তিন সুন্দরী। এতদিন পরে তিনজন একসাথে সামনা সামনি একে অপরকে পেয়েছে, কথার ফুলঝুরি ছুটছে পেছনের সিটে। দুই দিন পরেই বছর শেষ, দিয়া আর ঝিলিক দুইজনেই রিশুর কাছে আবদার করে পাবে যাবে পার্টি করতে। ঝিনুক আর রিশুর চোখে চোখে কথা হয়, কি করতে চাও? ঝিনুক চোখ টিপে শান্ত করে বলে পরে দেখা যাবে।
 
বাড়িতে পা রাখতেই ঝিলিক ছোট ফ্লাটের চারপাশ দেখে দিদিকে হাসি মুখে বলে, “বেশ তো সাজিয়ে নিয়েছিস?” দিদির সামনে দাঁড়িয়ে দিদির কাঁধে হাত রেখে চোখে চোখ রেখে হাসি মুখে বলে, “আগে তোকে একটু দেখি।” এই সেই দিদি, সেই নিদারুণ দুর্যোগের রাতে গলায় দড়ি দেওয়ার কথা চিন্তা করছিল, এই সেই দিদি এই কয় দিন আগে পর্যন্ত হাসি মুখে ওদের সাথে কথা বললেও ঝিলিক দিদির বুকের বেদনা বুঝতে পারত।

ভুরু কুঁচকে বোনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি অমন দেখছিস বলতো?”

দিয়া মুচকি হেসে ওকে বলে, “দেখছি যে ঝিনুকদি কোলকাতা ছেড়ে এসেছিল আর এই ঝিনুকদি কত ডিফারেন্ট।”

ঝিলিক হটাত দিদিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে, “তুই চলে যাওয়ার পরে বাড়িটা ভীষণ ফাঁকা হয়ে গেছে রে।”

হটাত করে এইভাবে কাঁদতে দেখে ঝিনুকের গলা ধরে আসে, “এই মেয়ে এমন ভাবে কাঁদে না, দেখ এই তো আমি।”

জল ভরা চোখে রিশুর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে, “মেনি থাঙ্কস জিজু।”

রিশু ওর মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বলে, “আরে পাগলি মেয়ে, দিল্লী দুর নাকি কোলকাতা থেকে? ফ্লাইটে মাত্র দুই ঘন্টা লাগে।”

চোখ মুছে হেসে ফেলে ঝিলিক, “তাও তো ফ্লাইট ছাড়ার দুই ঘন্টা আগে যাও, এখানে এসে লাগেজ নিতে নিতে আরো এক ঘন্টা, সব মিলিয়ে পাঁচ ঘন্টা লেগে যায়।”

ওর কথা শুনে সবাই হেসে ফেলে। দিয়া বান্ধবীকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “এই দেখ কেমন একা একা চলে এসছি, এরপর দাদাভাই টিকিট কেটে দিলেই চলে আসব।”

মৃদু হাসে ঝিলিক, দিদির দিকে দেখে বলে, “জানিস, তুই যেদিন দিল্লী চলে এলি সেদিন বাড়ি ফিরে বাবা তোর পড়ার টেবিলে অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে ছিল।

পরিস্থিতি হাল্কা করার জন্য রিশু ওদের বলে, “আজ রাতে ডিনার বাইরে করব।”
 
ওদের বাড়িতে রেখে রিশু হসপিটালের জন্য বেড়িয়ে যায়। হসপিটালে পা রাখতেই এইচ.ও.ডি ডক্টর ধিলোন ওকে জানায় যে ওর লন্ডনে যাওয়ার ভিসা এসে গেছে। এডমিন ডিপার্টমেন্ট থেকে ভিসা হাতে পেয়ে বেশ খুশি হয় রিশু। ভিসা হাতে নিয়ে কেবিনে বসে সব থেকে আগে মাকে ফোন করে জানায়। তারপরে ঝিনুকেকে ফোন করে জানিয়ে দেয় ভিসার কথা। কয়েকদিন পরেই লন্ডন চলে যাবে শুনে একটু মন খারাপ লাগে ঝিনুকের কিন্তু ওর ডাক্তারের প্রোফেশানাল ক্যারিয়ারের জন্য এই সেমিনার ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ইন্দ্রজিৎ কেও ফোন করে জানিয়ে দেয় ওর লন্ডন যাওয়ার কথা, সেই সাথে এটাও জানায় যে দিয়া আর ওর শ্যালিকা ঝিলিক এসেছে। ইন্দ্রজিৎ জানায় যে এর মাঝে একদিন সময় পেলে ওদের বাড়ি ঘুরে যাবে।
 
ঝিনুক দুই বোনকে পেয়ে ওর মধ্যে একটা অভিভাবক স্বত্বা দেখা দেয়। কাজের মেয়ে যদিও বেশির ভাগ রান্না করে রেখেই যায় তাও বোন আর ননদিনীর জন্য নিজে হাতে কিছু একটা বানাতে ইচ্ছে করে। দুইজনকে এক এক স্নান সারতে বলে রান্না ঘরে ঢুকে পরে ঝিনুক। গতরাতে কাটা রুই আনা হয়েছিল সেটাই ভাজতে বসে যায়। দিদিকে রান্নাঘরে মাছ ভাজতে দেখে ঝিলিকের অবাক লাগে সেই সাথে দিয়া আর ঝিলিক বেশ হাসাহাসি করে।
 
দুপুরে খাওয়ার পরে বসার ঘরে বসে ওদের আড্ডা জমে ওঠে। ঝিনুক জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ আর কলেজের কি খবর?”

দিয়া দুই হাত তুলে আড়ামোড়া খেয়ে আড় চোখে বান্ধবীর দিকে চোখ টিপে ঝিনুকের প্রশ্নের উত্তরে বলে, “বিন্দাস আছি।”

ঝিনুক ওদের বলে, “পড়ার বই নিয়ে এসেছিস তো, না হলে তোর দাদা ভীষণ রেগে যাবে।”

ঝিলিক চোখ টিপে বলে, “ইয়ার ঘুরতে এসেও পড়া পড়া, হ্যাঁ রে বাবা নিয়ে এসেছি। জিজু তো মাত্র চারদিন পরেই চলে যাবে তারপর...”

গম্ভির হয়ে যায় ঝিনুক, “তোর জিজু চলে যাবে তারমানে এই নয় যে আমি থাকবো না। সামনে পরীক্ষা তোদের, পড়াশুনা করতেই হবে।”

দিয়া ঝিনুকের গলা জড়িয়ে আদুরে গলায় বলে, “আরে বাবা প্লিজ এই কটা দিন মাত্র। দাদাভাই রোজদিন আমার আর ভাইয়ের পড়ার খবর নেয়। এই কটা দিন প্লিজ দাদাভাইয়ের হাত থেকে রেহাই দাও। বাড়িতে মাম্মা আর মাথার ওপরে দাদাভাই।”

ঝিলিকও আদুরে কন্ঠে বলে, “কোথায় একটু ঘুরে বেড়াব না তা না বই নিয়ে আসো, পড়াশুনা করতে হবে, ধ্যাত।” নাক কুঁচকে দিদিকে ঠাট্টা করে বলে, “জিজুর পাল্লায় পরে তোর বুলি পালটে গেছে, তুই এখন অনেক বড় বড় কথা বলছিস, নিজের বেলায় দেখ তো, কত পড়াশুনা করেছিস...”

মাথা ঝাঁকিয়ে হেসে ফেলে ঝিনুক, সত্যি কথা, এক প্রকার জেদের বশেই সায়নেস নিয়ে পড়েনি, এমন কি এমবিএ পড়ার সময়েও শুধু মাত্র বাড়ি থেকে বার হতে পারবে এই ভেবেই মাস্টার্স নিয়েছিল। তাও দুই মিষ্টি তন্বী তরুণীকে শান্ত করে বলে, “কিন্তু তোর জিজু জানতে পারলে আমাকে বাড়ি থেকে বার করে দেবে কিন্তু।” বলেই হেসে ফেলে।

হাসিতে ফেটে পরে দিয়া, দাদাভাই হসপিটাল যাওয়ার আগে যেমন ভাবে ওর ঝিনুক দিদির দিকে তাকিয়ে ছিল তাতেই ভীষণ হাসি পেয়ে গেছিল ওর আর ওর বান্ধবীর। হাসতে হাসতে ঝিনুকের থুঁতনি নাড়িয়ে বলে, “উফফ আমি শুধু ভাবছি দাদাভাই এই শীতে দশ দিন লন্ডনে কি করে একা একা বৌ ছেড়ে থাকবে।”

সেই নিয়ে আরো কিছুক্ষন ওদের মধ্যে হাসাহাসি হয়, তারপরে ঝিনুক হাসি থামিয়ে ওদের জিজ্ঞেস করে, “একটা সত্যি কথা বল তো, ওই যে এয়ারপোর্টে যাদের দেখে তোরা হাত নাড়ালি তারা আসলে কে?”

দিয়া আর ঝিলিক একে অপরের মুখ চেয়ে দেখে তারপরে ঝিলিক বলতে শুরু করে, “আরে ওদের সাথে কোলকাতা এয়ারপোর্টে দেখা। ওদের মধ্যে একটা লম্বাটে ছেলে দেখেছিলি না...” ঝিনুক মাথা দোলায়, হুম। ঝিলিক দিয়াকে দেখিয়ে বলে, “ওটা প্রভাত, ওটা দিয়ার...” বলেই চোখ টেপে।

দিয়া মুচকি হেসে ঝিলিকের কথার রেশ টেনে বলে, “আর একটা একটু গোলগাল মতন ছিল, শুভেন্দু, ঝিলিক কে দেখে পাগল পুরো...”

ঝিলিকের গালে রক্তিমাভা দেখা দেয়, দিয়াকে একটু ঠ্যালা মেরে বলে, “ধ্যাত, শালা একটু মোটা।”

দিয়া নাক কুঁচকে বলে, “উহহহ বাবা, কোক কিনে দিল তোর জন্য চুকচুক করে সেই কোক খেলি তো।” ওদের কথা শুনতে শুনতে অবাক হয়ে যায় ঝিনুক।

ঝিলিক ইয়ার্কি মেরে দিয়াকে বলে, “বাঃবা তুই ও তো কোক খেয়েছিল রে।”

হেসে ফেলে দিয়া, তারপরে ঝিনুকের দিকে তাকিয়ে বাকি গল্প বলতে শুরু করে, “আসলে সিকিউরিটি চেকের পরে হাতে অঢেল সময়, আমরা ভেতরের একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসে সেখানেই ওদের সাথে দেখা। ওরা দুই বন্ধু শিবপুর থেকে পাস আউট, এই গুরগাও না কোথায় যেন একটা কোম্পানিতে এপ্রেন্টিসশিপ পেয়েছে।”
 
দুপুরের পরে রিতিকার ফোন এলো, একত্রিশ ডিসেম্বরে কি করছে জানতে চায়। ঝিনুক জানায় এখন কোন পরিকল্পনা করেনি কোথাও যাওয়ার তবে ওর বোন আর ননদিনী এসেছে সেটা জানাতে ভোলে না। সেই সাথে এটাও জানায় যে দিয়ার আর ঝিলিকের ইচ্ছে সেই রাতে কোন নাইট ক্লাবে যাওয়ার। রিতিকা ঝিনুকের বিয়েতে আসেনি তাই দিয়ার আর ঝিলিকের সাথে পরিচয় হয়নি। পার্টিতে গেলে দেখা হয়ে যাবে। দিদির মুখে রিতিকার নাম অনেক বার শুনেছে ঝিলিক তাই দিদিকে প্রশ্ন করে, কি ব্যাপার। হেসেই উত্তর দেয় ঝিনুক, কলেজের সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা পেছনে ফেলে এগিয়ে এসেছে ওরা। এই তো সেদিন দুই বান্ধবী একসাথে মিলে পার্লার গিয়ে পাঁচ ঘন্টা নিজেদের পরিচর্যায় বারো হাজার টাকা খরচ করে এসেছে। সেটা শুনে তিনজনেই হেসে ফেলে।
 
সেই রাতে বাইরে ডিনার করতে গিয়ে দুই তরুণীর মুখের দিকে তাকিয়ে শেষ পর্যন্ত ঝিনুক রিশুকে বলে, “এই শুনছো।”

রিশু মাথা দোলায়, “হুম।”

ঝিনুক বলে, “থারটি ফার্স্ট কোন নাইট ক্লাবে গেলে হয় না?”

ভুরু কুঁচকে ঝিনুকের দিকে তাকায় রিশু, “না না, তোমাদের থারটি ফার্স্ট ছুটি আমার নেই। তিন তারিখ আমার লন্ডন যাওয়ার টিকিট হয়ে গেছে, তার আগে অনেক চাপ।”

দিয়া আর ঝিলিক মুখ কাঁচুমাচু করে ঝিনুকের দিকে তাকিয়ে থাকে। ঝিনুক ওদের ইশারায় আসস্থ করে রিশুকে আরো একবার বলে, “রাতের দিকে যাবো তো, তুমি হসপিটাল থেকে ফেরার পরে।”

রিশু একবার দিয়ার আর একবার ঝিলিকের দিকে দেখে ঝিনুককে গম্ভির গলায় বলে, “এখানে এসেই, এই পার্টি নিয়ে তোমার মাথা খেয়েছে?”

পার্টি করার ইচ্ছেটা ঝিনুকের মনের মধ্যে একটু ছিল তাই মৃদু হেসে বলে, “আরে না না, থারটি ফার্স্ট একটু পার্টি করা যাবে এই আর কি।”

মাথা দোলায় রিশু, “আচ্ছা দেখা যাবে। আর কেউ সাথে আছে নাকি?”

দিয়ার বুক কেঁপে ওঠে, ওর দাদা কি এয়ারপোর্টে প্রভাত আর শুভেন্দুকে দেখে ফেলেছে নাকি? ঝিনুক সঙ্গে সঙ্গে রিশুকে হেসে বলে, “রিতিকা বলছিল যাওয়ার কথা। আর না হয় ইন্দ্রজিৎদা আর শালিনীদিকে ডেকে নেবো।”

হেসে ফেলে রিশু, “হ্যাঁ তোমার ড্রিঙ্ক করার সাথী পেয়ে যাবে তো।” হাসি মুখে কথাটা বললেও একটু ঠেস দিয়েই বলে রিশু।

মুখ গোমড়া করে ঝিনুক রিশুকে বলে, “আচ্ছা বাবা যেতে হবে না। একদিন তো শুধু মাত্র ড্রিঙ্ক করলাম।”

হেসে ফেলে রিশু, “আচ্ছা ঠিক আছে, দেখি ইন্দ্রজিৎ আর শালিনী যদি ফ্রি থাকে।” একটু থেমে দিয়ার দিকে দেখে বলে, “আমি আগামী কাল হসপিটাল থেকে এসে কেমিকাল বন্ডিং আর ওরবিটাল স্ট্রাকচার নিয়ে জিজ্ঞেস করব, তারপরে ডিসাইড করব কোথায় পার্টি করা যাবে।”

ডিনারের টেবিলে পড়াশুনার কথা শুনে দিয়ার মুখ গোমড়া হয়ে যায়, “দাদাভাই, এই কটা দিন মাত্র।”

তর্জনী উঠিয়ে বোনকে চুপ করিয়ে দেয় রিশু, গম্ভির কন্ঠে বলে, “থারটি ফার্স্ট যদি নাইট ক্লাব যেতে চাস তাহলে ভালো করে চ্যাপ্টার পড়ে রাখিস।”
 
রিশুর চশমার পেছনে শান্ত বুদ্ধিদীপ্ত জ্বলজ্বলে চোখ দেখে ঝিলিকের খাওয়া থেমে যায়। টেবিলের ওইপাশে যেন একটা বিশাল সুন্দরবনের বাঘ বসে। ওর বন্ধু বান্ধবীদের কাছে তাদের জামাই বাবুদের সম্বন্ধে যা শুনেছে সেই সব ভুল প্রমানিত হয় রিশুর সামনে। ওর বন্ধু বান্ধবীর জামাই বাবুরা ভীষণ মিশুকে, ওর জামাই বাবু মিশুকে হাসি খুশি বটে তবে ভিন্ন মাটির মানুষ, খুব সংযত।
 
ঝিলিকের খাওয়া থামিয়ে ওর দিকে ওই ভাবে চেয়ে থাকতে দেখে রিশু বাঁকা হেসে বলে, “পড়াশুনার নাম শুনলেই গায়ে জ্বর আসে নাকি?”

বোনের আর দিয়ার মুখ শুকনো দেখে রিশুকে একটু ঝাঁঝিয়ে বলে ঝিনুক, “দিলে তো মেয়ে দুটোর বিকেলটা নষ্ট করে। এখানে একটু মজা করতে এসেছে, একটু ঘুরে বেড়াবে একটু ফ্রিতে থাকবে, তা না। তোমার দাদাগিরি এখানেও ফলানো উচিত।” তারপরে দিয়া আর ঝিলিকের দিকে দেখে ইশারায় আস্বস্থ করে।

মাথা নাড়ায় রিশু, “আমি বুড়ো হয়ে গেলেও ও আমার বোন থাকবে আর আমি ওর দাদা থাকব।” তারপরে দিয়া আর ঝিলিকের ব্যাথিত চেহারা দেখে হাসি মুখে বলে, “আচ্ছা বাবা, টেস্ট নেবো না। কিন্তু আমি যাওয়ার পরে পড়াশুনা যেন করিস।”

সঙ্গে সঙ্গে হাসি মুখে ঝিলিক আর দিয়া একত্রে বলে ওঠে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, তুমি লন্ডন থেকে এসে আমাদের টেস্ট নিও।”
 
রেস্টুরেন্টে বসেই ঠিক করা হল, যে একত্রিশ ডিসেম্বরে ওরা সবাই মিলে একটা নাইটক্লাবে পার্টি করতে যাবে। ইন্দ্রজিৎ আর শালিনীকেও ফোনে জানিয়ে দেওয়া হয়। ঠিক করা হয় শালিনীর চেনাশোনা, সুজিত বাবুর ফাইভ স্টার হোটেলের নাইট ক্লাবে পার্টি করতে যাওয়া হবে। ঝিনুকও রিতিকাকে থারটি ফার্স্ট এর পার্টির কথা জানিয়ে দেয়। ওদের ঠিক হয় যে সবাই বিকেলের মধ্যে রিশুর বাড়িতে পৌঁছে যাবে তারপরে সেখান থেকেই সবাই মিলে ক্যাবে করে হোটেলে যাওয়া হবে।

[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 11 users Like pinuram's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 18-10-2020, 01:30 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 21-10-2020, 04:16 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 22-10-2020, 03:41 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 21-10-2020, 04:13 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 22-10-2020, 02:49 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 27-10-2020, 02:59 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 28-10-2020, 12:21 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 28-10-2020, 10:20 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 29-10-2020, 01:29 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 30-10-2020, 11:22 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 01-11-2020, 01:37 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 02-11-2020, 12:51 PM
পর্ব আট – (#2-38) - by pinuram - 08-12-2020, 05:19 PM
RE: পর্ব আট – (#2-38) - by pinuram - 09-12-2020, 06:58 PM
Block Guest Users! - by pinuram - 09-12-2020, 11:47 PM
RE: Block Guest Users! - by dreampriya - 10-12-2020, 09:46 AM
RE: Block Guest Users! - by pinuram - 10-12-2020, 12:18 PM
পর্ব আট – (#6-42) - by pinuram - 14-12-2020, 11:37 PM
পর্ব আট – (#7-43) - by pinuram - 14-12-2020, 11:38 PM
পর্ব আট – (#8-44) - by pinuram - 14-12-2020, 11:38 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by pinuram - 18-12-2020, 11:02 PM



Users browsing this thread: 8 Guest(s)