13-12-2020, 08:29 PM
(This post was last modified: 13-12-2020, 08:31 PM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
সন্ধ্যে বেলায় সবাই মানে আমি সমির রাজু সুজাতা আর হরপ্রিত পার্কে বসে ঠিক করছি কে কি ভাবে তাদের বাবা মায়ের কাছে বিয়ে করার পারমিসন নেবে ! হরপ্রিত বলল " আমার কোন প্রব্লেম নেই ! আমার মতেই বাবার মত ! তবে আমরা শিখ ! হয়ত মা বা কাকারা একটু ঝামেলা পাকাতে পারে ! বাবা ম্যানেজ করে নিতে পারবে আশা করি ! "
- আমার বাড়িতে সহজে মানবে না ! আমাদের দক্ষিন ভারতের লোকেরা হিন্দি ভাষীদের পছন্দ করে না ! আমার বাবা খুব গোঁরা ! হিন্দি জানলেও বলতে চান না ! তার উপর যদি জানতে পারেন যে আমি রাজুকে ভালবাসি তাহলে হয়ত হয় আমাকে খুন করে দেবেন আর নাহলে রাজুকে খুন করে দেবেন ! আমার বাবা এখানের একজন নাম করা ব্যবসায়ি ! ওনার হাতে প্রচুর খমতা !
সবাই ঝোঁকের মাথায় রেজিস্ট্রি করার কথা বলে ফেলেছিল ! কিন্তু এখন প্রতিপদে বিপদের সম্ভবনা !
ওদেরকে স্বান্তনা দিয়ে বললাম !"মেয়েদের বাড়ির কথা পরে ভাবা যাবে ! যদি ছেলেদের বাড়ির থেকে মত থাকে তাহলে বিয়ের পরে মেয়েদের বারি থেকে কিছুই করতে পারবে না ! আগে সমির আর রাজুর বাবা মায়ের সাথে কথা বলে দেখা যাক ! তারপর যদি ওনারা মত দেন তাহলে ঠিক আছে ! আর না হলে আমার রাস্তা খোলা ! যে ভাবে আমাকে বিয়ে করতে হবে সেই ভাবেই না হয় সবার বিয়ে হবে !
সবাই আমার কথা মেনে নিলো ! আমি বললাম " চল হস্টেলের ফোন থেকে ফোন করি ! তাহলে নিরিবিলিতে বসে কথাও বলা যাবে আর সাথে পয়সাও খরছ হবে না !
আমরা সবাই হস্টেলের অফিসে ফিরে এলাম ! গার্ড আমাদের দেখেই বলল " বাবু এখানে মেয়েছেলে এলাও নয় ! " আমি ওকে বললাম "ওরা কেউ আমাদের রুমে যাবে না ! অফিসেই বসে থাকবে ! তুমি যাও আমাদের মাল নিয়ে এসো ! " আমার কথায় আশ্বস্ত হয়ে ও চলে গেলো ! আমি সমিরকে বললাম "তুই আগে তর বাবাকে ফোন কর ! খুব ঠাণ্ডা হাবে বলবি যে তুই হরপ্রিতকে ভালবাসিস ওকে বিয়ে করতে চাস ! যেহেতু আর পনেরদিনের মধ্যেই ফাইনাল পরিক্ষা শুরু হবে তোরা তোদের জীবনের ফাইনাল টাও সেরে রাখতে চাস !"
রাজু আর সমির দুজনেই আমার কথায় ঘার নেরে সায় দিল ! প্রথমে সমির ফোন করল ওর বাবাকে " হ্যা বাবা ! কেমন আছ ! ...। না আমি খুব ভাল আছি ! তোমার শরির কেমন ? মা ঠিক আছে ?...... এদিক সেদিকের কথা চলছে দেখে আমি সমিরের পিঠে একটা কিল মেরে বললাম শালা আসল কথায় আয় ! " হরপ্রিত বড় বড় চোখ করে সমিরের দিকে তাকিয়ে আছে !
- পাপা ! আমি একজন মেয়েকে ভালবাসি ! তাকে বিয়ে করতে চাই ! ওর নাম হরপ্রিত কৌর ! পাঞ্জাবের মেয়ে !... আমরা ঠিক করেছি যে ফাইনাল পরিক্ষার আগে রেজিস্ট্রি করে নেব ! তাহলে ............... না পাপা ! ও খুব ভাল মেয়ে ! .........। কি বলছ তুমি পরশু আসবে ? কিন্তু কেন পাপা ? তুমি এসে কি করবে ? ............।। না না পাপা ! ও খুব ভাল মেয়ে !
আমরা শুধু এক তরফের কথাই শুনতে পাচ্ছিলাম ! অপর প্রান্তে কি হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছিলাম না ! বেশ কিছুক্ষণ হ্যা ! হু ! ঠিক আছে হতে হতে ফোন রাখল সমির ! সারা শরির বেয়ে ঘামের বন্যা নামছে ! ফোন রেখেই গার্ডের রাখা জলের বোতল তুলে নিয়ে ধক ধক করে জল খেয়ে নিলো সমির ! আমরা সবাই ওর দিকে উদ্গ্রিব তাকিয়ে আছি ! ওর বাবা কি বলল সেটা শোনার জন্য ! বিশেষ করে হরপ্রিত !
জলের বোতল রেখে সমির আমাকে জরিয়ে ধরল ! বলল "বাবা আর মা আসছেন কাল সকালের ফ্লাইটে ! উনি নিজে হরপ্রিতের বাবা মায়ের সাথে কথা বলবেন !
হরপ্রিত ওর কথা শুনে সমিরকে জরিয়ে ধরে চুমুর বন্যা বইয়ে দিল ! আমি ওদেরকে থামিয়ে দিয়ে রাজুর হাতে ফোন দিয়ে বললাম " এবার তুই তোর বাবাকে ফোন কর ! "
কাঁপা হাতে রাজু আঙ্গুল ঢুকিয়ে ওদের বাড়ির নাম্বারে ডায়াল করল ! বেশ কিছুক্ষণ ফোন বেজে থেমে গেলো ! ও আমার দিকে বিষণ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো ! আমি ওকে ওর বাবার অফিসে ফোন করতে বললাম !
আবার ও ফোন মেলালো !
- হ্যা বাবা ! কেমন আছো ! ... সেই একই স্টাইল ! যে ভাবে সমির শুরু করেছিল ! কথা বলতে বলেতেই হটাত রাজু বলে বসলো " বাবা আমি একটা সাউথ ইন্ডিয়ান মেয়েকে বিয়ে করতে চাই ! আর আমরা কাল বা পুরশুর মধ্যেই রেজিস্ট্রি করে নিতে চাই ! তোমার সাহায্য দরকার ! আমকি চাই তুমি কালকের মধ্যেই হ্যদেরাবাদে চলে এসো ! " একটু থামার পর "ওকে ! ঠিক আছে ! " বলেই রাজু ফোন নামিয়ে দিল !
সুজাতার মুখে বিশ্বের সমস্ত জিজ্ঞাসা !
জিজ্ঞাসা আমাদের সবার মুখেই ! রাজু থম মেরে বসে আছে ! কিছুই বলছে না ! আর থাকতে পারলাম না ! " কি রে কি হোল ? বলবি নাকি ?"
- কাল বাবা আসছেন সকাল এগারোটার ফ্লাইটে ! জানিনা কি হবে ! বাবা খুব রেগে আছেন ! কি হবে জানিনা ! সুজাতা আর রাজু ! দুজনের মুখেই দুশ্চিন্তার ছাপ পরিস্কার !
ওদের সাহস দেবার জন্য আমি বললাম ! "তোরা চিন্তা করিস না ! আমরা সবাই সকালে এয়ারপোর্ট যাবো ওনাদের রিসিভ করতে ! বাকি যা হবে আমি দেখে নেবো ! যদিও আমি জানিনা রাজুর বাবাকে কি করে সামলাবো ! কিন্তু কেন জানিনা আমার মনের মধ্যে একটা বিজগনিত কাজ করে চলেছে ! আর সেই বিজগনিতের বীজ আমার মনে ধীরে ধীরে অঙ্কুরিত হয়ে যাচ্ছে !সুজাতা আর হরপ্রিতকে কাল সকাল আটটার মধ্যে কলেজে চলে আসতে বললাম ! কারন এক ঘণ্টার ব্যবধানে দুজনেরই বাবা মা আসবেন ! সুজাতা একরাশ চিন্তা নিয়ে বেরুতে গেলে আমি ওর হাত ধরে বললাম " দুনিয়া এদিক থেকে ওদিক হয়ে গেলেও তোমাদের বিয়ে আমি দেবো ! ! নিশ্চিন্ত হয়ে বাড়ি যাও ! ভরসা রাখো ! কথা দিচ্ছি তোমাকে ! "
সুজাতা একটু ম্লান হাসি দিয়ে চলে গেলো !
কাল থেকে আমাদের কলেজের স্টাডি লিভ ! সুতরাং কলেজের ক্লাস করার কোনও চাপ নেই ! হস্টেলের রুমে আমরা তিনজন মাল খেতে শুরু করলাম ! মাল খেতে খেতেই সমির আর রাজু ওদের বাবা মায়ের সমন্ধে অনেক কথা বলল ! সব শুনে গেলাম ! ওদের মনেতে বিরাট ভয় ! ওদের আমাই আমার বাবা মায়ের সমন্ধে বললাম ! জিজ্ঞাসা করলাম আমার বাবা মা কি বাঘ না ভাল্লুক ? তোরা তো দেখে এসেছিস ! কিন্তু আমার আর মঞ্জুর সম্পর্কে ওনারা হয়ত বাঘ ভাল্লুকের থেকেও বেশি হয়ে যাবেন ! একবার আমার কথা ভাব ! যা হবে সেটা দেখা যাবে !
পরের দিন সকাল বেলাতেই সুজাতা আর হরপ্রিত এসে হাজির ! তখনও সকাল আটটা বাজেনি ! খুব সাধারন পোশাকে দুজনকে দেখে আমাদের গার্ড আমাদের তুলে নিয়ে গেলো ! ওদের দেখে আমরাও অবাক ! এত সাধারন পোশাক ! এত সাধারন ভাবে মানে মেক আপ ছারা আমরা কোনোদিনই হরপ্রিত আর সুজাতাকে দেখিনি ! তবুও সকালের আলোতে ওদের দুজনকে খুব সুন্দর লাগছিলো !
সমির চোখ কচলাতে কচলাতে বলল "তোমরা এত সকালে ?"
- না মানে কাল সারা রাত আমি আর সুজাতা কেউ ঘুমাতে পারিনি ! তাই আমরা ঠিক করেছি আমরা এয়ারপোর্ট এ যাবনা !
এক ধমকে দুজনকে চুপ করিয়ে দিয়ে বললাম ! এখানে এই ভাবেই বসে থাকো ! আমরা তৈরি হয়ে আসছি !
রাজু আর সমিরকে সঙ্গে নিয়ে আমরা তারাতারি তৈরি হয়ে নিচে নেমে এলাম ! সুজাতা আর হরপ্রিত স্থানুর মতো বসে ! ওদের কে নিয়ে আগে চা খেলাম ! সবাইকে উৎসাহ দিয়ে বললাম সব ঠিক হয়ে যাবে ! চিন্তা করার কোনও কারন নেই ! যা হবে সেটা ভালর জন্যই হবে !
দুরু দুরু মন্ নিয়ে আমরা পাঁচজন এয়ারপোর্ট এর উদেশ্যে বেরিয়ে গেলাম !
ঠিক সাড়ে দশটায় ! সমিরের বাবা আর মা বাইরে বেরিয়ে এলেন ! সমির গিয়ে তাদের পা ছুঁতেই আমি হরপ্রিতকে থেলে দিলাম ! হরপ্রিত ওনাদের পা ছুঁতেই সমিরের বাবা ওকে দাঁড় করিয়ে হরপ্রিতের দুই কাঁধে দু হাত দিয়ে তাকিয়ে ওকে বুকে টেনে নিলেন ! সমিরের মা ও হারপ্রিতকে জরিয়ে ধরে বুকে টেনে নিলেন ! " যেরকম চেয়েছিলাম তার থেকেও সুন্দর আমার বউমা ! " বলেই উনি হরপ্রিতের মুখে কপালে চুমু খেলেন !
যাক ! একটা দুশ্চিন্তা শেষ হয়ে গেলো ! এবার রাজুর বাবার আসার পালা ! ।
সমিরের বাবা বললেন " চলো রেজিস্ট্রি অফিসে ! "
আমি রাজু আর সুজাতাকে দেখিয়ে বললাম " এখনও ওদের ভাগ্য ঠিক হবার জন্য এক ঘণ্টা অপেখ্যা করতে হবে ! " এই প্রথম সমিরের বাবা মা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন " তুমিই সুনন্দ ? তোমার কথা অনেক শুনেছি ! " আমি ওনাদের পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করলাম ! " আমাকে সমিরের বাবা জরিয়ে ধরলেন !
এমিনিতেই সমিরের বাবা মোনা পাঞ্জাবি ! তার উপর ফর্সা টকটকে রঙ ! একটা আলাদা ব্যাক্তিত্ব ! মাকেও দেখতে খুব সুন্দরি ! এই বয়েসেও উনি যে কোনও পুরুষের বুকে আগুন জ্বালাতে পারেন ! কিন্তু কি অমাইক ব্যবহার ওনাদের ! আমি রাজু আর সুজাতার সাথে আলাপ করিয়ে দিয়ে
বললাম "রাজুর বাবা আধঘণ্টার মধ্যেই চলে আসবেন ! আমাদের অপেখ্যা করতে হবে ! "
উনি বললেন তাহলে চলো ক্যান্টিনে বসে কিছু খেয়ে নেওয়া যাক !
ওনার কথা মতই আমরা সবাই ক্যান্টিনে বসে পরলাম ! সমিরের মা হরপ্রিতের পাশে বসে বার বার ওর মুখে মাথায় হাত বলাতে লাগলেন ! বুঝলাম যে ওনার হরপ্রিতকে খুবই পছন্দ হয়েছে ! চা আর বারগারের সাথে অনেক গল্প শুরু করলেন সমিরের বাবা ! অনাকে দেখে মনেই হুলনা যে উনি সমিরের বাবা ! একদম যেন একজন বন্ধু আরেক জন বন্ধুর সাথে কথা বলছে ! খুব ভাল লাগলো ! এত ভালো সম্পর্কের মাঝেও সমিরের যে কুণ্ঠিত ভাবে তার বাবার সাথে ফোনে কথা বলাকে বাপ ছেলের পরিপক্ক শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার সম্পর্ক কে উজাগর করল !
- আমার বাড়িতে সহজে মানবে না ! আমাদের দক্ষিন ভারতের লোকেরা হিন্দি ভাষীদের পছন্দ করে না ! আমার বাবা খুব গোঁরা ! হিন্দি জানলেও বলতে চান না ! তার উপর যদি জানতে পারেন যে আমি রাজুকে ভালবাসি তাহলে হয়ত হয় আমাকে খুন করে দেবেন আর নাহলে রাজুকে খুন করে দেবেন ! আমার বাবা এখানের একজন নাম করা ব্যবসায়ি ! ওনার হাতে প্রচুর খমতা !
সবাই ঝোঁকের মাথায় রেজিস্ট্রি করার কথা বলে ফেলেছিল ! কিন্তু এখন প্রতিপদে বিপদের সম্ভবনা !
ওদেরকে স্বান্তনা দিয়ে বললাম !"মেয়েদের বাড়ির কথা পরে ভাবা যাবে ! যদি ছেলেদের বাড়ির থেকে মত থাকে তাহলে বিয়ের পরে মেয়েদের বারি থেকে কিছুই করতে পারবে না ! আগে সমির আর রাজুর বাবা মায়ের সাথে কথা বলে দেখা যাক ! তারপর যদি ওনারা মত দেন তাহলে ঠিক আছে ! আর না হলে আমার রাস্তা খোলা ! যে ভাবে আমাকে বিয়ে করতে হবে সেই ভাবেই না হয় সবার বিয়ে হবে !
সবাই আমার কথা মেনে নিলো ! আমি বললাম " চল হস্টেলের ফোন থেকে ফোন করি ! তাহলে নিরিবিলিতে বসে কথাও বলা যাবে আর সাথে পয়সাও খরছ হবে না !
আমরা সবাই হস্টেলের অফিসে ফিরে এলাম ! গার্ড আমাদের দেখেই বলল " বাবু এখানে মেয়েছেলে এলাও নয় ! " আমি ওকে বললাম "ওরা কেউ আমাদের রুমে যাবে না ! অফিসেই বসে থাকবে ! তুমি যাও আমাদের মাল নিয়ে এসো ! " আমার কথায় আশ্বস্ত হয়ে ও চলে গেলো ! আমি সমিরকে বললাম "তুই আগে তর বাবাকে ফোন কর ! খুব ঠাণ্ডা হাবে বলবি যে তুই হরপ্রিতকে ভালবাসিস ওকে বিয়ে করতে চাস ! যেহেতু আর পনেরদিনের মধ্যেই ফাইনাল পরিক্ষা শুরু হবে তোরা তোদের জীবনের ফাইনাল টাও সেরে রাখতে চাস !"
রাজু আর সমির দুজনেই আমার কথায় ঘার নেরে সায় দিল ! প্রথমে সমির ফোন করল ওর বাবাকে " হ্যা বাবা ! কেমন আছ ! ...। না আমি খুব ভাল আছি ! তোমার শরির কেমন ? মা ঠিক আছে ?...... এদিক সেদিকের কথা চলছে দেখে আমি সমিরের পিঠে একটা কিল মেরে বললাম শালা আসল কথায় আয় ! " হরপ্রিত বড় বড় চোখ করে সমিরের দিকে তাকিয়ে আছে !
- পাপা ! আমি একজন মেয়েকে ভালবাসি ! তাকে বিয়ে করতে চাই ! ওর নাম হরপ্রিত কৌর ! পাঞ্জাবের মেয়ে !... আমরা ঠিক করেছি যে ফাইনাল পরিক্ষার আগে রেজিস্ট্রি করে নেব ! তাহলে ............... না পাপা ! ও খুব ভাল মেয়ে ! .........। কি বলছ তুমি পরশু আসবে ? কিন্তু কেন পাপা ? তুমি এসে কি করবে ? ............।। না না পাপা ! ও খুব ভাল মেয়ে !
আমরা শুধু এক তরফের কথাই শুনতে পাচ্ছিলাম ! অপর প্রান্তে কি হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছিলাম না ! বেশ কিছুক্ষণ হ্যা ! হু ! ঠিক আছে হতে হতে ফোন রাখল সমির ! সারা শরির বেয়ে ঘামের বন্যা নামছে ! ফোন রেখেই গার্ডের রাখা জলের বোতল তুলে নিয়ে ধক ধক করে জল খেয়ে নিলো সমির ! আমরা সবাই ওর দিকে উদ্গ্রিব তাকিয়ে আছি ! ওর বাবা কি বলল সেটা শোনার জন্য ! বিশেষ করে হরপ্রিত !
জলের বোতল রেখে সমির আমাকে জরিয়ে ধরল ! বলল "বাবা আর মা আসছেন কাল সকালের ফ্লাইটে ! উনি নিজে হরপ্রিতের বাবা মায়ের সাথে কথা বলবেন !
হরপ্রিত ওর কথা শুনে সমিরকে জরিয়ে ধরে চুমুর বন্যা বইয়ে দিল ! আমি ওদেরকে থামিয়ে দিয়ে রাজুর হাতে ফোন দিয়ে বললাম " এবার তুই তোর বাবাকে ফোন কর ! "
কাঁপা হাতে রাজু আঙ্গুল ঢুকিয়ে ওদের বাড়ির নাম্বারে ডায়াল করল ! বেশ কিছুক্ষণ ফোন বেজে থেমে গেলো ! ও আমার দিকে বিষণ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো ! আমি ওকে ওর বাবার অফিসে ফোন করতে বললাম !
আবার ও ফোন মেলালো !
- হ্যা বাবা ! কেমন আছো ! ... সেই একই স্টাইল ! যে ভাবে সমির শুরু করেছিল ! কথা বলতে বলেতেই হটাত রাজু বলে বসলো " বাবা আমি একটা সাউথ ইন্ডিয়ান মেয়েকে বিয়ে করতে চাই ! আর আমরা কাল বা পুরশুর মধ্যেই রেজিস্ট্রি করে নিতে চাই ! তোমার সাহায্য দরকার ! আমকি চাই তুমি কালকের মধ্যেই হ্যদেরাবাদে চলে এসো ! " একটু থামার পর "ওকে ! ঠিক আছে ! " বলেই রাজু ফোন নামিয়ে দিল !
সুজাতার মুখে বিশ্বের সমস্ত জিজ্ঞাসা !
জিজ্ঞাসা আমাদের সবার মুখেই ! রাজু থম মেরে বসে আছে ! কিছুই বলছে না ! আর থাকতে পারলাম না ! " কি রে কি হোল ? বলবি নাকি ?"
- কাল বাবা আসছেন সকাল এগারোটার ফ্লাইটে ! জানিনা কি হবে ! বাবা খুব রেগে আছেন ! কি হবে জানিনা ! সুজাতা আর রাজু ! দুজনের মুখেই দুশ্চিন্তার ছাপ পরিস্কার !
ওদের সাহস দেবার জন্য আমি বললাম ! "তোরা চিন্তা করিস না ! আমরা সবাই সকালে এয়ারপোর্ট যাবো ওনাদের রিসিভ করতে ! বাকি যা হবে আমি দেখে নেবো ! যদিও আমি জানিনা রাজুর বাবাকে কি করে সামলাবো ! কিন্তু কেন জানিনা আমার মনের মধ্যে একটা বিজগনিত কাজ করে চলেছে ! আর সেই বিজগনিতের বীজ আমার মনে ধীরে ধীরে অঙ্কুরিত হয়ে যাচ্ছে !সুজাতা আর হরপ্রিতকে কাল সকাল আটটার মধ্যে কলেজে চলে আসতে বললাম ! কারন এক ঘণ্টার ব্যবধানে দুজনেরই বাবা মা আসবেন ! সুজাতা একরাশ চিন্তা নিয়ে বেরুতে গেলে আমি ওর হাত ধরে বললাম " দুনিয়া এদিক থেকে ওদিক হয়ে গেলেও তোমাদের বিয়ে আমি দেবো ! ! নিশ্চিন্ত হয়ে বাড়ি যাও ! ভরসা রাখো ! কথা দিচ্ছি তোমাকে ! "
সুজাতা একটু ম্লান হাসি দিয়ে চলে গেলো !
কাল থেকে আমাদের কলেজের স্টাডি লিভ ! সুতরাং কলেজের ক্লাস করার কোনও চাপ নেই ! হস্টেলের রুমে আমরা তিনজন মাল খেতে শুরু করলাম ! মাল খেতে খেতেই সমির আর রাজু ওদের বাবা মায়ের সমন্ধে অনেক কথা বলল ! সব শুনে গেলাম ! ওদের মনেতে বিরাট ভয় ! ওদের আমাই আমার বাবা মায়ের সমন্ধে বললাম ! জিজ্ঞাসা করলাম আমার বাবা মা কি বাঘ না ভাল্লুক ? তোরা তো দেখে এসেছিস ! কিন্তু আমার আর মঞ্জুর সম্পর্কে ওনারা হয়ত বাঘ ভাল্লুকের থেকেও বেশি হয়ে যাবেন ! একবার আমার কথা ভাব ! যা হবে সেটা দেখা যাবে !
পরের দিন সকাল বেলাতেই সুজাতা আর হরপ্রিত এসে হাজির ! তখনও সকাল আটটা বাজেনি ! খুব সাধারন পোশাকে দুজনকে দেখে আমাদের গার্ড আমাদের তুলে নিয়ে গেলো ! ওদের দেখে আমরাও অবাক ! এত সাধারন পোশাক ! এত সাধারন ভাবে মানে মেক আপ ছারা আমরা কোনোদিনই হরপ্রিত আর সুজাতাকে দেখিনি ! তবুও সকালের আলোতে ওদের দুজনকে খুব সুন্দর লাগছিলো !
সমির চোখ কচলাতে কচলাতে বলল "তোমরা এত সকালে ?"
- না মানে কাল সারা রাত আমি আর সুজাতা কেউ ঘুমাতে পারিনি ! তাই আমরা ঠিক করেছি আমরা এয়ারপোর্ট এ যাবনা !
এক ধমকে দুজনকে চুপ করিয়ে দিয়ে বললাম ! এখানে এই ভাবেই বসে থাকো ! আমরা তৈরি হয়ে আসছি !
রাজু আর সমিরকে সঙ্গে নিয়ে আমরা তারাতারি তৈরি হয়ে নিচে নেমে এলাম ! সুজাতা আর হরপ্রিত স্থানুর মতো বসে ! ওদের কে নিয়ে আগে চা খেলাম ! সবাইকে উৎসাহ দিয়ে বললাম সব ঠিক হয়ে যাবে ! চিন্তা করার কোনও কারন নেই ! যা হবে সেটা ভালর জন্যই হবে !
দুরু দুরু মন্ নিয়ে আমরা পাঁচজন এয়ারপোর্ট এর উদেশ্যে বেরিয়ে গেলাম !
ঠিক সাড়ে দশটায় ! সমিরের বাবা আর মা বাইরে বেরিয়ে এলেন ! সমির গিয়ে তাদের পা ছুঁতেই আমি হরপ্রিতকে থেলে দিলাম ! হরপ্রিত ওনাদের পা ছুঁতেই সমিরের বাবা ওকে দাঁড় করিয়ে হরপ্রিতের দুই কাঁধে দু হাত দিয়ে তাকিয়ে ওকে বুকে টেনে নিলেন ! সমিরের মা ও হারপ্রিতকে জরিয়ে ধরে বুকে টেনে নিলেন ! " যেরকম চেয়েছিলাম তার থেকেও সুন্দর আমার বউমা ! " বলেই উনি হরপ্রিতের মুখে কপালে চুমু খেলেন !
যাক ! একটা দুশ্চিন্তা শেষ হয়ে গেলো ! এবার রাজুর বাবার আসার পালা ! ।
সমিরের বাবা বললেন " চলো রেজিস্ট্রি অফিসে ! "
আমি রাজু আর সুজাতাকে দেখিয়ে বললাম " এখনও ওদের ভাগ্য ঠিক হবার জন্য এক ঘণ্টা অপেখ্যা করতে হবে ! " এই প্রথম সমিরের বাবা মা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন " তুমিই সুনন্দ ? তোমার কথা অনেক শুনেছি ! " আমি ওনাদের পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করলাম ! " আমাকে সমিরের বাবা জরিয়ে ধরলেন !
এমিনিতেই সমিরের বাবা মোনা পাঞ্জাবি ! তার উপর ফর্সা টকটকে রঙ ! একটা আলাদা ব্যাক্তিত্ব ! মাকেও দেখতে খুব সুন্দরি ! এই বয়েসেও উনি যে কোনও পুরুষের বুকে আগুন জ্বালাতে পারেন ! কিন্তু কি অমাইক ব্যবহার ওনাদের ! আমি রাজু আর সুজাতার সাথে আলাপ করিয়ে দিয়ে
বললাম "রাজুর বাবা আধঘণ্টার মধ্যেই চলে আসবেন ! আমাদের অপেখ্যা করতে হবে ! "
উনি বললেন তাহলে চলো ক্যান্টিনে বসে কিছু খেয়ে নেওয়া যাক !
ওনার কথা মতই আমরা সবাই ক্যান্টিনে বসে পরলাম ! সমিরের মা হরপ্রিতের পাশে বসে বার বার ওর মুখে মাথায় হাত বলাতে লাগলেন ! বুঝলাম যে ওনার হরপ্রিতকে খুবই পছন্দ হয়েছে ! চা আর বারগারের সাথে অনেক গল্প শুরু করলেন সমিরের বাবা ! অনাকে দেখে মনেই হুলনা যে উনি সমিরের বাবা ! একদম যেন একজন বন্ধু আরেক জন বন্ধুর সাথে কথা বলছে ! খুব ভাল লাগলো ! এত ভালো সম্পর্কের মাঝেও সমিরের যে কুণ্ঠিত ভাবে তার বাবার সাথে ফোনে কথা বলাকে বাপ ছেলের পরিপক্ক শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার সম্পর্ক কে উজাগর করল !