12-12-2020, 10:28 PM
(This post was last modified: 16-12-2020, 10:25 PM by Mr Fantastic. Edited 6 times in total. Edited 6 times in total.)
চিঠিটা পড়তে পড়তে আমার চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এসেছিলো। চিঠিটা দুমড়ে মুচড়ে ফেলে দিতে পারতাম, কিন্তু পারলাম না। এটা আরও অনেকবার পড়তে হবে আমাকে - গভীর রাতে, শীতে বা বৃষ্টিতে, দুঃখে বা আনন্দে - একটা মানুষ যে কতো সাবলীল ভাবে চিঠি হয়ে যায়।
কপালের রগ দপদপ করছে। বুকের ভেতর যেন দামামা বাজছে। চিরকুটটা হাতের মধ্যে নিয়ে দুই মুষ্টিবদ্ধ হাত শূন্যে তুলে উপরের দিকে তাকিয়ে চিৎকারে ফেটে পড়লাম, এ হতে পারে না, নাআআ…কিছুতেই নাআআআ…। সঙ্গে সঙ্গে আমার চারপাশের সবকিছু ঘুরতে লাগলো, মাথার ওপর যেন অজস্র আলোর ঝলকানি একসাথে ঘূর্ণির মতো পাক খেতে লাগলো আর আমি কোনো অতল গহ্বরে তলিয়ে যেতে লাগলাম। দূর থেকে ভেসে আসছে একটা ডাক, কেউ আমার নাম ধরে ডাকছে, সহসা চারদিক নিকষ অন্ধকার। ধড়মড় করে উঠে চোখ খুলতেই নিজেকে বিছানায় আবিস্কার করলাম। সকালের নরম কাঁচা রোদে ঘর ভেসে যাচ্ছে। হাতের চেটো ভালো করে দেখলাম, নাহ কোনো চিরকুট নেই।
দেবিকা দেখি পাশে বিছানার ধারে দাঁড়িয়ে উদ্বিগ্ন চোখে বলছে, কি হল তোমার ? ঘুমের মধ্যে হাত-পা ছুঁড়ে এমন ‘না নাআ’ করে চিৎকার করছিলে কেন ? কি হয়েছিল ?
বুঝলাম এতক্ষণের ঘটনা তাহলে একটা স্বপ্ন ছিল, না স্বপ্ন নয়, এ যে দুঃস্বপ্ন। কোনো দুঃস্বপ্ন এতো জীবন্ত, এতো ভয়াবহ হয় ?
সঙ্গে সঙ্গে দেবিকাকে দুহাতে নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথা গুঁজে গার স্বরে বললাম, তুমি কোথাও যাবে না আমাকে ছেড়ে, একদম যেতে দেবো না তোমাকে।
দেবিকা একহাতে আমার কাঁধ বেষ্টন করে আরেক হাতে আমার মাথার চুল ঘেঁটে দিয়ে নরম গলায় বলল, আমি কোথাও যাবো না, এই তো আমি। তোমাকে ছেড়ে কোথায়ই বা যাবো, তুমি তো আমার সব।
দেবিকা নিশ্চয়ই সকালেই স্নান করে নিয়েছে, ওর গা থেকে জুঁই ফুলের মতো সুবাস ভেসে আসছে আমার নাকে। আবেশের সাথে ওকে নিজের বাহুডোরে বেঁধে ওর নরম ভরাট বুকে মাথা রেখে হৃদধ্বনি অনুভব করছি। দেবিকা মুখ নামিয়ে আমার কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে বলল, দুঃস্বপ্ন দেখে ছেলেমানুষি করে না উজান।
- তুমি জানো আমি কি দেখেছি, তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেছো আর…আমার মুখে নিজের হাত চাপা দিয়ে দেবিকা তাড়াতাড়ি করে বলল, যাই দেখে থাকো প্লিজ ভুলে যাও, দুঃস্বপ্ন মনে রাখতে নেই।
তারপর মুখ নামিয়ে নিচু স্বরে বলল, আমিও ঠিক এরকমই একটা স্বপ্ন দেখেছি তোমাকে নিয়ে, আচ্ছা কেন হল এরকম ?
শুকনো হেসে বললাম, কে জানে, ভালবাসলে এরকম নাকি হয় শুনেছি। পেয়েও হারিয়ে ফেলার একটা ভয় অবচেতন মনে কাজ করে।
কিছুক্ষন চুপ থাকার পর গম্ভীর ভাবে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা দেবিকা একটা কথা বলো তো, আমাকে বিয়ে করা নিয়ে তোমার মনে কোনো সংকোচ নেই তো ? তোমার পূর্ব পরিচয় নিয়ে তোমার মধ্যে কোনো হীনমন্যতা বা নতুন জীবন মিয়ে সংশয় নেই তো ? থাকলে প্লিজ সেসব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে দাও।
দেবিকা আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল, আগে তুমি বল তো, আমার ওই বিষাক্ত অতীত জেনেও আমাকে নিয়ে তোমার কখনও অনুশোচনা বা আক্ষেপ হবে না তো ?
আমি জোরে মাথা নাড়িয়ে বললাম, না একেবারেই নেই। শরীরের ছুৎমার্গে আমি বিশ্বাস করি না। সেরকম দেখতে হলে তো আমারও কতো কলগার্লের সাথে শারীরিক সম্পর্ক ছিল। শরীরের থেকেও মন অনেক দামি আর বড়ো জিনিস। তোমাকে আমি মন আর শরীর দুই দিয়েই ভালোবাসি।
দেবিকা আমার ঠোঁটে একটা গাঢ় চুম্বন করে আমার চওড়া বুকে নিশ্চিন্তে মাথা রেখে বলল, আর আমি তো আমার মন, প্রাণ, দেহ সব তোমাকেই দিয়ে বসে আছি সেই কবে থেকে। অতীত জীবন আমি মাথা থেকে সম্পূর্ণ মুছে ফেলেছি। কোনো সংশয় নেই তোমাকে বিয়ে করতে। তোমাকে ছেড়ে যাবার কথা ভাবতেই পারি না।
কিছুক্ষন ওইভাবে জড়াজড়ি করে থাকলাম। তারপর দেবিকা আমার কাঁধে ঠেলা দিয়ে বলল, এই যে মিস্টার, এভাবে প্রেম করলে চলবে ? কতো কাজ আছে আজকে জানেন না ?
আমি মাথা চুলকে হেসে বললাম, হ্যাঁ উঠতে হবে এবার। স্নানে যাই, তোমার তো স্নান হয়ে গেছে মনে হচ্ছে।
দেবিকা আমার চুল ঘেঁটে দিয়ে বলল, হ্যাঁ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে স্নান করে নেওয়া আমার অভ্যাস।
আড়মোড়া ভেঙে বললাম, আচ্ছা শোনো, তুমি তোমার মেসে গিয়ে দরকারি লাগেজ প্যাক করে সোজা কালীঘাটে চলে যাবে। আমি ওখানে আগে গিয়ে সব ব্যবস্থা করে রেখে তোমার জন্য অপেক্ষা করবো। পরিচিত এক ট্যাক্সিওয়ালা আছে, ওই ট্যাক্সিতেই তোমাকে উঠিয়ে দেবো। তারপর বিয়ে হয়ে গেলে মন্দির থেকে সোজা ম্যারেজ রেজিস্ট্রি অফিসে চলে যাবো আমরা। সাক্ষী হিসেবে আমার দু-তিনজন কলিগ থাকবে।
দেবিকা একটু চুপ থেকে বলল, আচ্ছা তোমার মা-বাবাকে জানাবে না ? ওঁদের আশীর্বাদ নেবো না আমরা ?
কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললাম, নাহ এখন কিছু জানানো যাবে না। আমার বাড়ির লোকেরা একটু সেকেলে মানসিকতার। তোমার বিস্তারিত পরিচয়, ঠিকুজী-কুষ্ঠি না জেনে, গ্রহ-নক্ষত্র না মিলিয়ে কিছুতেই রাজি হবে না। একেবারে তোমাকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে যাবো, মেনে নিলে ভালো না হলে তাও ঠিক আছে…একবার বিয়ে হয়ে গেলে কিছু বলতে পারবে না, কিন্তু বিয়ের আগে গেলে নানাভাবে বাধা দেবার চেষ্টা করবে।
দেবিকা মাথা নাড়িয়ে বলল, আচ্ছা তুমি যা ভালো বুঝবে সেরকমই করো, আমি তাই শুনবো।
সকালের জলখাবার খেয়ে ন’টার সময় আমরা বেরবো বলে উদ্যত হলাম। ড্রাইভার নীচে এসে গেছে। দেবিকা যাবার জন্য দরজার বাইরে পা ফেলেছে এমন সময় কি মনে হল বললাম, দাঁড়াও ! দেবিকা ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে বলল, কি হল ?
- আমিও যাবো তোমার সঙ্গে, তারপর একসাথেই মন্দিরে যাবো।
দেবিকা মাথা নাড়িয়ে মিষ্টি করে হেসে বলল, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে এসো।
********
“ এই উজান, তাড়াতাড়ি এসো এখানে। একটু ক্যাপসিকাম আর টমেটো গুলো কেটে দাও না, একা হাতে কতো করবো ?”
দ্রুত পায়ে উজান রান্নাঘরে যায়, দেখে একটা সবুজ স্লিভলেস ব্লাউজ আর লাল সিল্কের শাড়ি আটপৌরে ভাবে পরে আঁচলটা ফর্সা কোমরের কাছে গুঁজে দেবিকা পিছন ফিরে রান্না করতে ব্যস্ত। দেবিকার নধর রমণীয় দেহপল্লবের সাথে ঘামে ভিজে ওঠা শাড়িটা সেঁটে বসে থাকায় শরীরের রেখা গুলি বেশ স্পষ্ট। এলোখোঁপা করে বেঁধে রাখা রেশমি চুলের কিছু গোছ কপালের দুই দিক দিয়ে টোপাপোনা ফর্সা গালের ওপর বেয়ে নেমেছে। সর্বাঙ্গ থেকে আগুনের আঁচে একটা লালচে আভা উপছে পড়ছে। গোল সুডৌল নিতম্ব জোড়া উঁচিয়ে কোমর বেকিয়ে লীলায়িত ভঙ্গিমায় দেবিকা হাত নেড়ে যাচ্ছে। ব্যাকলেস ব্লাউজের মাঝে ফর্সা পেলব প্রশস্ত ঘর্মাক্ত পিঠ উজানকে ভীষণ ভাবেই টানছে। উজানের ভীষণ ইচ্ছা করছিল এক্ষুনি পা টিপে টিপে গিয়ে দেবিকাকে অতর্কিতে পিছন থেকে প্রেমালিঙ্গন করে আদরে সোহাগে ভরিয়ে তুলতে।
উজান যে পিছন থেকে দাঁড়িয়ে ওকে লক্ষ্য করছে সেটা বুঝতে পেরে দেবিকা মরালীর ন্যায় গ্রীবা ঘুরিয়ে একটা দুষ্টু-মিষ্টি হাসি ওর দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলল, "থাক আর ওভাবে দেখতে হবে না চাতকের মতো, এদিকে এসে একটু হেল্প করবে তুমি ? "
উজান ছদ্মরাগ দেখিয়ে বলল, " উফফ কতো খাতা দেখা বাকি আছে এখনও জানো ? পরশুই জমা দিতে হবে ডিপার্টমেন্টে। "
দেবিকা খুন্তি ছেড়ে কোমরে হাত দিয়ে চোখ পাকিয়ে বলল, " ও আচ্ছা ? ভুলে গেলে আজকে তোমার মা-বাবা আসবেন, নেমন্তন্ন করলাম সেদিন। একটু ভালো করে রান্না করবো না আমরা ? খাওয়াবো না একটু তৃপ্তি করে ? "
উজান মুখ টিপে হেসে বলল, " আর ভালো করে রান্না, আগেরবার তো তোমার রান্নার যা মহিমা দেখালে ! নেহাত তোমার করুন মুখ দেখে সবাই চোখ-কান বুজে গিলে নিয়েছিল ! "
দেবিকা মুখ ঝামটা দিয়ে বলল, "এই একদম খোঁটা দেবে না বলে দিচ্ছি, তখন কি আমি ঠিক করে রাঁধতে পারতাম নাকি, এখন তো ইউটিউব দেখে আর তোমার বউদির থেকে ভার্চুয়াল ক্লাস নিয়ে সব শিখে গেছি। ", বলে ফিক করে হেসে ফেলল।
হঠাৎ পাশের ঘর থেকে কান্নার আওয়াজ শুনে দেবিকা ভ্রু কুঁচকে উজানের দিকে তাকিয়ে বলে, "পুঁচকু কাঁদছে কেন ? নিশ্চয়ই তুমি ওর ন্যাপি পাল্টে দাও নি ? "
উজান অপরাধীর মতো মাথা চুলকে বলে, " ইয়ে…আমি তো ন্যাপি পাল্টাতে পারি না, জানোই তো।"
উজানের বাজুতে একটা হালকা করে ঠেলা দিয়ে দেবিকা বলে, " এতো দেখিয়ে দিই তাও শিখতে পারলে না ? চলো এই লাস্ট শেখাবো, ঠিক করে দেখবে", এই বলে ওভেনের আঁচ কমিয়ে ঘরের দিকে পা বাড়ায় ওরা। ডাইপার পাল্টে দেবার পরেও পুচঁকুর কান্না থামে না, দেবিকা বুকের আঁচলটা সরিয়ে ব্লাউজের একদিক নামিয়ে ওকে স্তন্যপান করাতেই কান্না থামিয়ে একদম চুপ। দেবিকা ওর ছোট্ট মাথায় একটা আলতো করে চুম্বন করে বলল, "পুচঁকু সোনার খিদে পেয়েছিল। "
উজান অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে গোঁজ হয়ে বসে আছে। দেবিকা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ঘুমন্ত ছোট্ট শিশুকে কোল থেকে নামিয়ে সন্তর্পণে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে উজানের কাছে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে নরম স্বরে বলল, "এই কি হল তোমার ? "
উজান ওর দিকে তাকিয়ে বলল, " যবে থেকে আমাদের খোকা হয়েছে তুমি আমার দিকে দেখোই না আর, বড্ড বেশি মা মা হয়ে গেছো। "
দেবিকা হেসে উজানের কপালে হাত বুলিয়ে বলল, "কি বলছ তুমি উজান, ও তো আমাদের সন্তান। আমাদের ভালোবাসার অপত্য। তোমারই আত্মজ। একটা বড়ো খোকা আর একটা ছোটো খোকা এই দুজনকে নিয়েই তো আমার পৃথিবী, আমার সব। "
উজান ওকে নিবিড় বাহুপাশে বেঁধে গাঢ় স্বরে বলল, "তাহলে চলো এখন আমাকে আদর করো, আমিও তোমাকে করি। "
দেবিকা ওর মাথায় আলতো চাঁটি মেরে বলল, "ধ্যাত দুষ্টু এখন এসবের সময় নাকি ? একটু পরেই মা-বাবারা এসে পড়বেন, তার আগে আমাদের রান্না সেরে রাখতে হবে তো নাকি ? "
উজান চোখ টিপে মুচকি হেসে বলল, " ঠিক আছে চলো রান্নাও হবে আর আদরও হবে-দুটোই একসাথে হবে আজ !"
দেবিকা ওর দিকে দুই আয়ত কাজলকালো চোখে অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলল, "আচ্ছা ? সেটা কিভাবে ? "
- "এইভাবে", বলে উজান দুহাতে দেবিকাকে কোলে তুলে নিয়ে কিচেনে গেল। দেবিকা দুই পেলব হাতে উজানের গলা-কাঁধ জড়িয়ে ওর গালে নিজের কোমল অধর চেপে ধরে উচ্ছসিত গলায় বলল, " ম্মুউউয়াআআহ সুইটহার্ট, লাভ ইউ ! "
" আমার স্বপ্ন তুমি,ও
গো চিরদিনের সাথী
তুমি সূর্য ওঠা ভোর আমার,
আর তারায় ভরা রাতি
আমার স্বপ্ন তুমি,
ওগো চিরদিনের সাথী।
আমি তোমার ছায়া,
তোমার আকাশ নীলে আমি,
স্নিগ্ধ মেঘের মায়া।
তোমায় কাছে পেয়ে,
পৃথিবী তে কে আর সুখী,
বলো আমার চেয়ে ?
তোমায় কাছে পেয়ে
হাতের আড়াল দিয়ে বাঁচাও,
ঝড়ের মুখে বাতি।
আমার স্বপ্ন তুমি,
ওগো চিরদিনের সাথী।"
( সমাপ্ত )