09-12-2020, 07:38 PM
পাঁচ।
আমি স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম
কারো মুখে কোনো কথা নেই। আমি তো মিতালীর দিকে তাকাতেই পারছিলাম না। কি করবো বুঝতে না পেরে রান্নাঘরে গেলাম চা বানাতে। দুজনেরই চিন্তা করার কোনো ক্ষমতা শেষ হয়ে গিয়েছিলো।
মিনিট দশ পরে চা আর বিস্কুট নিয়ে যখন ঘরে ঢুকলাম তখন দেখি মিতালি উপুড় হয়ে শুয়ে আছে বালিশ আঁকড়ে, ওর সমস্ত শরীর কান্নায় গুমরে গুমরে উঠছে। আমি ওর মাথায় হাত দিতেই ও ধড়মড় করে উঠে বসলো। সজল চোখে কান্না জড়ানো গলায় শুধু বললো, "দাদা সব ভুল বললেন।"
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ও চলে গেলো, চা না খেয়েই। আমার স্টুপিড বর যে কোথায় হাওয়া হলো তাও বুঝলাম না। চাটা রান্নাঘরে গিয়ে ফেলে দিলাম।
ও অনেক রাত্রে ফিরলো, কথা বলার চেষ্টা করলো কিন্তু আমি ঠিকই করেছিলাম যে ওর সাথে আমার কোনো কথা নেই। মানুষ যে এতো নির্মম, নিষ্ঠুর আর দয়ামায়াহীন হতে পারে আমার জানা ছিল না.
মনস্টার!
তিন দিন ওর সাথে আমার কোনো কথা হলো না, আমি পারলাম না.
চতুর্থ দিন সকালে ঝড়ের মতন এসে ঢুকলো মিতালি. এসেই বললো, "দিদি শিগগির এক কাপ ভালো চা খাওয়াও তো." মুখটা দেখলাম খুশি খুশি. কি ব্যাপার! যাই হোক চা নিয়ে যখন ঢুকলাম তখন দেখি জমিয়ে বসেছে বিছানায়. আমার হাত থেকে চা টা নিয়ে বললো, " দিদি, কলকাতার পাট শেষ, বারাসাত ফিরছি."
বলে কি মেয়েটা? আমি তো তাজ্জব বনে গেলাম, মিনমিন করে বললাম, "কি সব বলছিস, এতো বড় সিদ্ধান্ত, কখন নিলি, কিছুই তো বুঝতে পারছিনা?"
মিতু আমার গায়ে হাত দিয়ে বললো, “বড় সিদ্ধান্ত বলেই তো এতো সহজে নিতে পারলাম দিদি."
আমার মুখ দেখে মিতু বুঝতেই পারলো যে আমার মনের অবস্থা একাধারে বিহবল, বিভ্রান্ত আর অতীব খুশি.
মিতালি চায়ে শেষ চুমুকটা দিয়ে বললো, "সেদিন যখন এ বাড়ি থেকে বেরোলাম তখন আমার মন যে কি টানাপোড়েনের মধ্যে ছিল তা ভাবতেও আমার গা শিউরে ওঠে, কি করবো, কোথায় যাবো. যাক, শেষে ড্রাইভার কে বললাম বুটিকে নিয়ে যেতে. তুমি বিশ্বাস করো যে বুটিক গত এক বছর ধরে আমার অস্তিত্ব কেন্দ্র ছিল সেটা সেদিন আমার অপরিচিত মনে হলো, এ আমি কোথায় এসেছি? কিন্তু এতো কাজ ছিল যে সময়টা না জানি কিভাবে বেরিয়ে গেলো. সাড়ে আটটার সময় দোকান বন্ধ করে সবাই চলে গেলে আমি বসে রইলাম. আমি জানতাম ও আসবে, আমার সব ইন্দ্রিয়গুলো একজোট হয়ে তার অপেক্ষা করতে লাগলো. নটার সময় দেখলাম ও বন্ধ দরজাটার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, আমি দরজাটা খুলে দিলাম. আমাকে দেখে লজ্জিত মুখে হাসলো, ধরা পরে গেলে যেমন হয়.
জানো দিদি, এই এক বছর পর আমি ওর সাথে প্রথম কথা কি বললাম? জিজ্ঞাসা করলাম, “তুই কি রোজ আসিস?”
ও লজ্জায় লাল হয়ে মাথা নাড়লো. আমি কোনোদিন জানতেও পারিনি দিদি.
বললাম, "ভেতরে আয়ে. প্রথমটা একটু ইতস্তত করলো তারপরে খুব সাবধানে ঢুকলো. কিন্তু ভেতরে এসে ও অবাক চোখে চারদিকটা দেখতেই থাকলো, ওর চেহারায় স্পষ্ট দেখলাম আনন্দ আর গর্ব. আর আমি দেখলাম ওর মলিন জামাকাপড়, কিন্তু মনের কোনো অমলিনতা দেখলাম না.
বিশ্বাস করতে পারো, জুতোটা বাইরে খুলে তবে ঢুকলো, সেই পুরোনো ময়লা জুতোটা, এবার দেখলাম ছিঁড়েও গেছে.
ও শুধু বললো, "কি সুন্দর রে."
আমার বলার কিছু ছিল না, কি বলবো? ক্ষমা চাইবো? আমার নিজের আচরণে? কিন্তু ওর চোখে আমি তো কোনো ভুলই করতে পারি না. ক্ষমা চাইলে হয়তো অবাক হয়তো অপ্রস্তুত হবে.
তাই ওর সাথে মাটিতেই বসলাম, ও মন দিয়ে দামি টাইলসগুলো দেখলো, এগুলোও নাকি সুন্দর.
তারপর আমার দিকে তাকালো. দিদি, লোকে বলে মানুষে মুখ আয়নাস্বরূপ, আমি ওর মুখে কত কিছুই না দেখলাম, ওর অবাক চোখ, ওর সেই হাসি আর শেষে চোখ নিচু করে মাটির দিকে তাকানো, সবই দেখলাম দিদি. এই মানুষটার মনের অন্তস্থল দেখা হয়ে গেলো আমার. আমি নিজেকেই কোনোদিন দেখলাম না.
কিন্তু আমার তো কথা বলার প্রয়োজন ছিলই, তাই একটু ভেবেচিন্তে বললাম, "শোন, আমি বারাসাত ফিরে যাবো." ও অবাক হয়ে আমার দিকে খানিক্ষন তাকিয়ে রইলো, এইমাত্র আগে তুমি যে ভাবে তাকিয়ে ছিলে ঠিক সেইভাবে.
আমি বলতেই থাকলাম, "দ্যাখ, এই বুটিকটার জন্য, আমার পার্সোনাল কন্টাক্টগুলো হারিয়ে যাচ্ছে, আবার ব্যক্তিগত যোগাযোগটা আরম্ভ করতে হবে. তাতে আমাদরে বিসনেস বাড়বে."
ও বুঝলো, মাথা নাড়লো কিন্তু পরমুহূর্তেই দেখলাম ওর চোখে শঙ্কার ছায়া. কেন, তা বুঝলাম. ওকে আস্বস্থ করার জন্য বললাম, "এই বুটিকটা আমাদের ম্যানেজার চালাবে, আমরাও মধ্যে মধ্যে এসে দেখে যাবো, হবে না?"
এবার দেখলাম ও খুশি, কথাটা মনে ধরেছে.
আমার কথা শেষ, ও দেখি কিছু বলবে বলবে করে বলতে পারছেনা.
আমি ওর হাতটা ধরলাম, "বল, কি বলবি?"
অনেক্ষন ভেবেচিন্তে, লজ্জায় লাল হয়ে চোখ নামিয়ে বললো, "এই যে ভদ্রলোক তোকে সাহায্য করছেন, তুই হটাৎ করে ছেড়ে দিলে রাগ করবেন না?"
ও, এই কথা? আমি হেসে বললাম, "রাগ করবেন বৈকি, দেখিস আমাদের দুজনকে বেধড়ক প্যাঁদাবেন, চল আমরা পালাই, যাবি?
ও হাসিমুখে বললো, "কখন?"
আমি বললাম, "এখনই, গাড়িতে তেল আছে?"
সোজা শান্তিনিকেতন! আজ সকালে ফিরলাম."
আমি স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম
কারো মুখে কোনো কথা নেই। আমি তো মিতালীর দিকে তাকাতেই পারছিলাম না। কি করবো বুঝতে না পেরে রান্নাঘরে গেলাম চা বানাতে। দুজনেরই চিন্তা করার কোনো ক্ষমতা শেষ হয়ে গিয়েছিলো।
মিনিট দশ পরে চা আর বিস্কুট নিয়ে যখন ঘরে ঢুকলাম তখন দেখি মিতালি উপুড় হয়ে শুয়ে আছে বালিশ আঁকড়ে, ওর সমস্ত শরীর কান্নায় গুমরে গুমরে উঠছে। আমি ওর মাথায় হাত দিতেই ও ধড়মড় করে উঠে বসলো। সজল চোখে কান্না জড়ানো গলায় শুধু বললো, "দাদা সব ভুল বললেন।"
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ও চলে গেলো, চা না খেয়েই। আমার স্টুপিড বর যে কোথায় হাওয়া হলো তাও বুঝলাম না। চাটা রান্নাঘরে গিয়ে ফেলে দিলাম।
ও অনেক রাত্রে ফিরলো, কথা বলার চেষ্টা করলো কিন্তু আমি ঠিকই করেছিলাম যে ওর সাথে আমার কোনো কথা নেই। মানুষ যে এতো নির্মম, নিষ্ঠুর আর দয়ামায়াহীন হতে পারে আমার জানা ছিল না.
মনস্টার!
তিন দিন ওর সাথে আমার কোনো কথা হলো না, আমি পারলাম না.
চতুর্থ দিন সকালে ঝড়ের মতন এসে ঢুকলো মিতালি. এসেই বললো, "দিদি শিগগির এক কাপ ভালো চা খাওয়াও তো." মুখটা দেখলাম খুশি খুশি. কি ব্যাপার! যাই হোক চা নিয়ে যখন ঢুকলাম তখন দেখি জমিয়ে বসেছে বিছানায়. আমার হাত থেকে চা টা নিয়ে বললো, " দিদি, কলকাতার পাট শেষ, বারাসাত ফিরছি."
বলে কি মেয়েটা? আমি তো তাজ্জব বনে গেলাম, মিনমিন করে বললাম, "কি সব বলছিস, এতো বড় সিদ্ধান্ত, কখন নিলি, কিছুই তো বুঝতে পারছিনা?"
মিতু আমার গায়ে হাত দিয়ে বললো, “বড় সিদ্ধান্ত বলেই তো এতো সহজে নিতে পারলাম দিদি."
আমার মুখ দেখে মিতু বুঝতেই পারলো যে আমার মনের অবস্থা একাধারে বিহবল, বিভ্রান্ত আর অতীব খুশি.
মিতালি চায়ে শেষ চুমুকটা দিয়ে বললো, "সেদিন যখন এ বাড়ি থেকে বেরোলাম তখন আমার মন যে কি টানাপোড়েনের মধ্যে ছিল তা ভাবতেও আমার গা শিউরে ওঠে, কি করবো, কোথায় যাবো. যাক, শেষে ড্রাইভার কে বললাম বুটিকে নিয়ে যেতে. তুমি বিশ্বাস করো যে বুটিক গত এক বছর ধরে আমার অস্তিত্ব কেন্দ্র ছিল সেটা সেদিন আমার অপরিচিত মনে হলো, এ আমি কোথায় এসেছি? কিন্তু এতো কাজ ছিল যে সময়টা না জানি কিভাবে বেরিয়ে গেলো. সাড়ে আটটার সময় দোকান বন্ধ করে সবাই চলে গেলে আমি বসে রইলাম. আমি জানতাম ও আসবে, আমার সব ইন্দ্রিয়গুলো একজোট হয়ে তার অপেক্ষা করতে লাগলো. নটার সময় দেখলাম ও বন্ধ দরজাটার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, আমি দরজাটা খুলে দিলাম. আমাকে দেখে লজ্জিত মুখে হাসলো, ধরা পরে গেলে যেমন হয়.
জানো দিদি, এই এক বছর পর আমি ওর সাথে প্রথম কথা কি বললাম? জিজ্ঞাসা করলাম, “তুই কি রোজ আসিস?”
ও লজ্জায় লাল হয়ে মাথা নাড়লো. আমি কোনোদিন জানতেও পারিনি দিদি.
বললাম, "ভেতরে আয়ে. প্রথমটা একটু ইতস্তত করলো তারপরে খুব সাবধানে ঢুকলো. কিন্তু ভেতরে এসে ও অবাক চোখে চারদিকটা দেখতেই থাকলো, ওর চেহারায় স্পষ্ট দেখলাম আনন্দ আর গর্ব. আর আমি দেখলাম ওর মলিন জামাকাপড়, কিন্তু মনের কোনো অমলিনতা দেখলাম না.
বিশ্বাস করতে পারো, জুতোটা বাইরে খুলে তবে ঢুকলো, সেই পুরোনো ময়লা জুতোটা, এবার দেখলাম ছিঁড়েও গেছে.
ও শুধু বললো, "কি সুন্দর রে."
আমার বলার কিছু ছিল না, কি বলবো? ক্ষমা চাইবো? আমার নিজের আচরণে? কিন্তু ওর চোখে আমি তো কোনো ভুলই করতে পারি না. ক্ষমা চাইলে হয়তো অবাক হয়তো অপ্রস্তুত হবে.
তাই ওর সাথে মাটিতেই বসলাম, ও মন দিয়ে দামি টাইলসগুলো দেখলো, এগুলোও নাকি সুন্দর.
তারপর আমার দিকে তাকালো. দিদি, লোকে বলে মানুষে মুখ আয়নাস্বরূপ, আমি ওর মুখে কত কিছুই না দেখলাম, ওর অবাক চোখ, ওর সেই হাসি আর শেষে চোখ নিচু করে মাটির দিকে তাকানো, সবই দেখলাম দিদি. এই মানুষটার মনের অন্তস্থল দেখা হয়ে গেলো আমার. আমি নিজেকেই কোনোদিন দেখলাম না.
কিন্তু আমার তো কথা বলার প্রয়োজন ছিলই, তাই একটু ভেবেচিন্তে বললাম, "শোন, আমি বারাসাত ফিরে যাবো." ও অবাক হয়ে আমার দিকে খানিক্ষন তাকিয়ে রইলো, এইমাত্র আগে তুমি যে ভাবে তাকিয়ে ছিলে ঠিক সেইভাবে.
আমি বলতেই থাকলাম, "দ্যাখ, এই বুটিকটার জন্য, আমার পার্সোনাল কন্টাক্টগুলো হারিয়ে যাচ্ছে, আবার ব্যক্তিগত যোগাযোগটা আরম্ভ করতে হবে. তাতে আমাদরে বিসনেস বাড়বে."
ও বুঝলো, মাথা নাড়লো কিন্তু পরমুহূর্তেই দেখলাম ওর চোখে শঙ্কার ছায়া. কেন, তা বুঝলাম. ওকে আস্বস্থ করার জন্য বললাম, "এই বুটিকটা আমাদের ম্যানেজার চালাবে, আমরাও মধ্যে মধ্যে এসে দেখে যাবো, হবে না?"
এবার দেখলাম ও খুশি, কথাটা মনে ধরেছে.
আমার কথা শেষ, ও দেখি কিছু বলবে বলবে করে বলতে পারছেনা.
আমি ওর হাতটা ধরলাম, "বল, কি বলবি?"
অনেক্ষন ভেবেচিন্তে, লজ্জায় লাল হয়ে চোখ নামিয়ে বললো, "এই যে ভদ্রলোক তোকে সাহায্য করছেন, তুই হটাৎ করে ছেড়ে দিলে রাগ করবেন না?"
ও, এই কথা? আমি হেসে বললাম, "রাগ করবেন বৈকি, দেখিস আমাদের দুজনকে বেধড়ক প্যাঁদাবেন, চল আমরা পালাই, যাবি?
ও হাসিমুখে বললো, "কখন?"
আমি বললাম, "এখনই, গাড়িতে তেল আছে?"
সোজা শান্তিনিকেতন! আজ সকালে ফিরলাম."