Thread Rating:
  • 26 Vote(s) - 3.31 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery পুরোনো টুথব্রাশ
#7
7
তিন মাস পার হয়ে গেছে। ভালোই চলছে সব। বরং বলা যায় 'চোখ যেন ঝলসে যাচ্ছে। ' উঃ, আমার কোনো অসুবিধা কিন্তু হচ্ছে না। কোনো নালিশ, অভিযোগ নেই। কিছু না, কিছু না। জীবনে একজন কম, আপদ গেছে, ঝকঝকে জীবন।
কতটা ঝকঝকে? এই ধরুন, বৃষ্টিঝরা রাত? এই ধরুন যেমন আমার স্তিমিত মস্তিস্ক। ভালো, ভালো, বেড়ে চলছে।
এ আমি কী করলাম?
ডাবলিম পর্যন্ত রাস্তাটা যেন অস্পষ্ট মনে হলো। পিন্টো রাস্তায় দুটো কথা বললো, "বহুত শর্ট ট্রিপ স্যার?" আমার জবাব না পেয়ে একটু ভেবে বললো, "তুমারা গার্লফ্রেন্ড বহুত ঝকাস!" মাথাটা খারাপ হয়ে গেলো, ইচ্ছা হলো লোকটাকে ঘুঁষি মেরে দি। আমার জীবনের একমাত্র বন্ধু আজ শুধুমাত্র মেয়েবন্ধু? চুপ করে গোঁজ হয়ে থাকলাম।
আজ আমি নিজের হাতে সেই সংযোগস্থলটা ভেঙে দিয়ে এসেছি। ভালোই করেছি।
টিকিট কেনার মাঝপথে খেয়াল হল যে ‘পুনার টিকিট’ বলেছি। তড়িঘড়ি করে বললাম দিল্লি। লোকটা অদ্ভুতভাবে তাকালো আমার দিকে তারপর মাথা নেড়ে দিল্লির টিকিট তৈরী করে দিলো। পুণা যাবার রাস্তা বন্ধ। কোনো ব্যাপার না।
দিল্লিতে বেশ ভালো কাটছে। সকালে ব্রেকফাস্ট, তারপর অফিস; লাঞ্চ, তারপর বাড়ি! সন্ধ্যায় একটু অসুবিধা হয়, সময়টা কাটতে চায় না। রাত্রে আর মেসে খেতে যাই না, আবার জামাকাপড় পরা, সে এক হ্যাপা! রঞ্জু আমাকে ঠেলে ঠুলে পাঠাবার চেষ্টা করত। আজকাল আর করে না। মাঝে মাঝে বাইরে খেতে যাই। ও কিছু জানেনা, ভাবে আমি ওজন কমাবার ধান্দায় আছি।
রঞ্জুর জন্যে খারাপ লাগে, ওকে নেগলেক্ট করছি বোধহয়। কিন্তু আমি কিছুতেই উৎসাহ পাই না।
সুহাসকে যতই ভুলতে চাই, ততই যেন ওর স্মৃতি আমাকে চেপে ধরে। আমার সমস্ত মন প্রাণ আর কিছু ভাবতে পারে না। আমি চেষ্টা করি, বিশ্বাস করুন, কিন্তু সে আমার মনের গভীরতম স্থানে বসে আছে। পারি না।
ওর চোখের জল, ওর ক্ষমা প্রার্থনা, আমার বুকের ভেতরটা ক্ষতবিক্ষত করে দেয়।
আমি রোজ ভাবি। আমার উর্বর মস্তিস্ক বলে, "ঠিকই করেছিস তুই, ভাবিস না, কী বা করতিস এছাড়া?" মন বলে, "শালা, তোর মতন নৃশংস, হিংস্র প্রাণী দুটো দেখিনি রে!" আগে মাথাটা জিতে যেত, আজকাল মনটা চেপে ধরছে। তীব্র অনুশোচনা আমাকে চোরাবালির ভেতরে ঠেলে দিচ্ছে, চেষ্টা করছি উঠতে, আরো তলিয়ে যাচ্ছি।
ও আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলো।
সহজ কাজ তো নয়! আগে নিজের ঘর গোছানোর দরকার, তারপর অন্য কথা। দুর্বলচিত্ত হলে কি পারতো?
সাথীকে ফিরে পেতে কত কাঠখড় পোড়ালো! নিজেকে বদলালো, সুন্দর করে তুললো।
কার জন্যে ভাই, এইসব? আমার?
ও কোনো ভয়টয় না পেয়ে নিজের দিকটা অকপটে বলে ফেললো। আমার ওপর বোধহয় বিশ্বাস ছিল যে আমি নিশ্চই বুঝবো।
সরি দিদি, ঠিক বুঝতে পারলাম না তো! আপনি নিজের জীবনের কিছু ঘনিষ্ট অভ্যন্তরীণ কথা বললেন, আত্মসম্মান জলাঞ্জলি দিয়ে। না বললেও চলতো, তাও নিরর্থক ট্রাই নিলেন। জানি এসব বলতে প্রচুর মানসিক শক্তির প্রয়োজন। কিন্তু 'সকলি গরলী ভেল।'
ধ্যাৎ? কি সব বাজে বকছি?
শেষমেশ, লাভটা কি হলো দিদি? পারলেন বোঝাতে?
পারলেন না। দুও দুও।
আমিও কি তার প্রতিদান দিয়েছি? দিলাম তো। সুন্দরভাবে মুখ ঘুরিয়ে ফিরে এলাম। ও বললো, "ক্ষমা করে দাও, যেও না। " বয়েই গেলো।
আজ তিন মাস হয়ে গেলো? কোনো খবর নিইনি।
এ আমি কি করলাম। উদার, সহানুভূতিশীল জীবনসঙ্গী হিসাবে আমার যে একটা কর্তব্য ছিল সেটা আমি ধূলিসাৎ করে দিয়ে এলাম। আমার মুখোশটা সরিয়ে আসল চেহারাটা বেরিয়ে পড়লো। ঈর্ষাপরায়ণ, নিষ্ঠুর, কুচুটে।
আজ আমার সাহস নেই যে সুহাস কে ফোনে করি। ক্ষমা চাই। সে অধিকার আর নেই।
রঞ্জু আজ সাত দিনের জন্য পন্ডিচেরি গেলো, অবশ্য আমাকে আগেই জানিয়েছিল। তিন মাসে তৃতীয়বার। ওরও একটা ব্রেক দরকার, আপত্তি করি নি। আমি একা।
নাই কাজ তো খৈ ভাজ। অনেকদিন পর মেল চেক করলাম। একটা পাঁচদিনের পুরোনো মেল দেখে থমকে গেলাম। সুহাস লিখেছে, "তুমি নাকি ভালকরে খাওয়াদাওয়া করোনা আজকাল? এরকম কেন করো? আমার জন্যেই আজ তোমার এ অবস্থা। আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারিনা। কী বলবো বল? কষ্ট পাচ্ছ, অযত্ন করোনা। যখনি বেল বাজে, ছুটে যাই। কিন্তু 'ভূমির' গানের মতন 'তোমার দেখা নাই রে।' একটু মজা করলাম, আমাকে নিয়ে ভেবো না। আমি ভালোই আছি।"
আবার করে পড়লাম, তারপর আবার। সারারাত্তির। সকালে উঠে সোজা বসের সামনে।
বাঙালি। প্যাঁচার মত মুখ করে বললেন, "বলে ফেলো।"
"ছুটি চাই, পুণা যাবো।"
উনি বিরসবদনে খানিকক্ষণ তাকিয়ে, আমার জুনিয়র কে ডাকলেন, "আমার গাড়িটা নে, এটাকে বাড়ি নিয়ে যা, ব্যাগ প্যাক করে এয়ারপোর্ট নিয়ে যাবি, আমি টিকিট মেল্ করছি। যতক্ষণ প্লেন না যায়, এয়ারপোর্টের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবি। যদি বেরিয়ে আসে, ঠ্যাং খোঁড়া করে দিস।"
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, "সুবুদ্ধি হয়েছে দেখছি।"
বলে তিনি আবার কাজে মন দিলেন।
দুপুর বারোটার ফ্লাইটে পুণা, তারপর বাড়ি। যাত্রাটা ঘোরের মধ্যে কাটলো। দরজার সামনে দাঁড়ালাম। হাত পা অবশ হয়ে আসছে। মাথা ঝিমঝিম করছে।
বেলটা টিপলাম।
কঙ্কালসার একটা মূর্তি, এলোমেলো অগোছালো চুল, চোখের কোন কালী। ছায়ামূর্তি।
অভিনন্দন আমাকে, আমার কীর্তি!
বিবর্ণ, মৃতবৎ। সুহাসই বটে। একটু দেরি হয়ে গেলো কি?
একটু হাসলো, "জানতাম তুমি আসবে।"
আমি চেপে ধরলাম, শুধুমাত্র কয়েকটা হাড়। খায়টায় না মনে হয়। self flagellation, আত্মনিগ্রহ।
খুব কাঁদলো খানিকক্ষণ।
শেষে একটা উল্টো কথা বললো, "ক্ষমা করে দাও।"
শেষের দুটো কথা
বেল বাজছে, উঠে দরজাটা খুললাম, রঞ্জু একরাশ জিনিসপত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে। ওর পন্ডিচেরিতে থাকার কথা না?
ঢুকেই বললো, "দেখেছো মা'র অবস্থাটা?
আমি বলতে গেলাম, "তুই জানিস না......."
"বাবা, আমি সব জানি, মা বলেছে। তোমরা না, যাতা। "

সমাপ্তি
Like Reply


Messages In This Thread
RE: পুরোনো টুথব্রাশ - by Trambak - 09-12-2020, 01:32 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)