Thread Rating:
  • 26 Vote(s) - 3.31 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery পুরোনো টুথব্রাশ
#3
3
ও কেন কাঁদছিলো?

আপনারা হয়তো এই প্রশ্নের উত্তরে উপহাসের একটি হাসি হাসবেন। সেটাই হবে যুক্তিযুক্ত। কেন প্রতারক হাতেনাতে ধরা পরে কান্নাকাটি করে? অবশ্যই নিজেকে বাঁচাতে, প্রমাণ করতে যে সে যারপরনাই দুঃখিত। এক্কেবারে সঠিক ধারণা, এক্কেবারে গ্রহণযোগ্য। কিন্তু তাদের পক্ষে যারা সুহাসকে ঠিক জানেন না। আমি কিন্তু ওকে চিনি অন্যভাবে!

তখন আমাদের মেয়ের বয়স দুই। সুহাস সমস্ত জামাকাপড় নিজে সেলাই করতো। খুব দক্ষতার সাথে। এক সন্ধ্যায় আমি টিভি দেখছি, হঠাৎ একটা ক্ষীণ কিন্তু যন্ত্রণাকাতর আওয়াজ শুনে ছুটে গেলাম। দেখি, ছুঁচটা তার আঙুলের নখ আর হাড় ভেদ করে মেশিনে আটকে আছে। ও লজ্জিতমুখে বসে, ক্ষণিকের অমনোযোগিতায় এই বিভ্রাট। ও বিব্রত কেননা দোষটা তার। মুখে একটু বোকা বোকা হাসি কিন্তু চোখে কোনো জল ছিলোনা। সেই ছুঁচটা বের করতে বেশ অসুবিধা হয়েছিলো, ও টুঁ শব্দটি করেনি।

আমি ওকে কখনো কাঁদতে দেখিনি।

আজ ওর চোখে জল?

তার সেই চোখের জল অবিরল বয়ে চলেছে নিঃশব্দে। চোখ নিচু, মাথা নিচু, চোখের কোণ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে আমার হাতের ওপর, ও থামাবার চেষ্টা পর্যন্ত করছে না। সেই চোখের দিকে তাকাবার বা তার ভাষা পড়বার সাহস আমার নেই। সেই নীরব অশ্রু কি বলতে চায় জানি না, প্রস্তুতও না।

তবু তাকালাম ওর দিকে, ও আমার টিশার্টটা আঁকড়ে ধরলো। উল্টোদিকে মুখটা ঘুরিয়ে নিলাম... কষ্ট তো আমারও কম নয়।

সারাদিনের ক্লান্তি আর উদ্ভট অবাস্তব ঘটনাগুলো আমার চিন্তা করার শক্তি অসাড় করে দিয়েছিলো। একটা সামুদ্রিক আবর্তের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিলাম।

অদৃষ্টক্রমে চোখ জড়িয়ে এলো গাঢ় ঘুমে। হাতটা ভিজতেই থাকলো। নাঃ, ঘাম না।

ভোরের প্রথম আলো চোখে পড়তেই ধড়মড় করে উঠে বসলাম। ও পাশে ঘুমাচ্ছে, ছোট্ট এক শিশুর মতন, হাঁটুটা বুকের কাছে টানা। অক্ষম, দুর্বল, শক্তিহীন। কি ভেবে চাদরটা দিয়ে ওকে ঢাকা দিলাম। ও চাদরটা চেপে ধরলো। ঘুম ভাঙলো না।

রান্নাঘরে ঢুকে চা বানালাম। রান্নাঘরের ওই একটাই কাজ করার অনুমতি সুহাস আমাকে দিয়েছে, বরং কিছুটা প্রশ্রয়ও দেয়। কি মনে করে, দুজনের মতো জল নিলাম। দশ মিনিট ভেজাতেই সেই পুরনো গন্ধ ভেসে এলো, আগের মতোই। চুমুক দিয়ে দেখলাম, কোন অন্য স্বাদ তো মনে হলো না, তাহলে কি পালটেছে? কিছু কি আদৌ পাল্টালো?

যুক্তি বলে, সব, সব বদলে গেছে। শুধু আমার প্রতিক্রিয়াটি যথাযথ নয়। আমার নিজের ব্যবহার অদ্ভুত, জানি। আমার তো রাগে উন্মাদ হওয়া উচিত। সেই হবে সঠিক, সমর্থনযোগ্য ব্যবহার। সে স্থানে, আমি যেন এক পাথর; ব্যথা, অপমান, লাঞ্ছনা, সমস্ত বোধশক্তির ঊর্ধ্বে।

নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছি। কোথায় গেল আমার সেই উদ্ধত মেজাজ?

পরিশেষে, বসে চিন্তা করলাম; নিজের আর আমাদের গত ২০ বছরের জীবনের পর্যালোচনা। হঠাৎ মনে হোল আমরা পরস্পরের সাথে যতটা সময় কাটিয়েছি তা মা বাবার সাথেও কাটাই নি। আশ্চর্য লাগলো ভেবে। আমরা একে অপরকে যতটা জানি; আমাদের ছোটোখাটো প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যগুলি... তা বোধহয় তাঁরাও জানতেন না। ছোট, বড় কতকিছু একসাথে করেছি।

আমার মাথার ভেতরে যে জালটা তৈরী হয়েছিল তা সহসা পরিষ্কার হয়ে গেলো। আমার কি করা দরকার, তা দ্ব্যর্থহীনভাবে স্পষ্ট।

এই উদ্ভট আচরণের ব্যাখ্যা আছে আমার কাছে। মনের গ্লানি, সংশয় আর নেই।

আমি শোবার ঘরে ফিরে আলতো করে ওকে জাগালাম। ও শূন্য চোখে তাকালো আমার পেছনের দেয়ালটাতে। আমি প্রথম কথা বললাম, যা আমি অজস্রবার আগে বলেছি, "চলো, চা তৈরী।"

মুহূর্তের জন্য ও অবাক হয়ে তাকালো। আর সমস্ত লজ্জা ঝাঁকবেঁধে ঘিরে ধরলোপরমুহূর্তেই। মাথাটা বিমূঢ়ভাবে নাড়িয়ে ওঠার চেষ্টা করলো। ওর লম্বা কালো চুল অবিন্যস্ত, ভালো লাগছিলো। আমি বাইরে চলে এলাম, অপেক্ষা করতে লাগলাম।

কিছুক্ষণ পরে ও এসে ঢুকলো, আমরা টেবিলে মুখোমুখি বসলাম আর এক প্রস্থ চা নিয়ে। বিস্কুট দিয়ে চা খেলাম, বছরের পর বছর যা করে আসছি। যা ছিল সব তেমনি আছে। শুধু সুহাস চুপ করে বসে আছে, চোখদুটো কাপের দিকে নিবদ্ধ।

যদিও প্রথমটা আমার নিজের কণ্ঠস্বর নিজের কানেই খাপছাড়া লাগলো, একটু ভেবে বললাম, "সুহাস, আমি কিছু বলবো আর তুমি মন দিয়ে শুনবে। শুনবে কি? শোনো, হঠাৎ একটা মুহূর্তের ঘটনা কখনও প্রকৃত সত্য হয় না। কালকের ঘটনা আমাদের জীবনের একটা মুহূর্ত মাত্র, তার ব্যতীত আর কিছু নয়। আমার জীবনে তোমার মূল্যায়ন একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কখনোই হবে না। কারণ আমি জানি, তুমি কে; তুমি আমার কি। যদি বলো দুঃস্বপ্ন, আমি মানতে রাজি। তার বাইরে কিছু না। কিছু পাল্টায়নি।"

সুহাসিনী ঘাড় নামিয়ে বসেই থাকলো। ওকে আমি কখনো এই রূপে দেখিনি, ওর মাথা সবসময় উঁচু। আজ ওর বিধ্বস্ত শরীরী ভাষা আমাকে অনেক বেশি দুঃখ দিলো; ও যা করেছে তার থেকেও।

"শুনছো! কি বলছি! ও কিছু নয়।"

ও উঠে দাঁড়ালো, তাচ্ছিল্যভরে বিড়বিড় করে, "কিছু নয়?" বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।

স্তম্ভিত হয়ে বসে রইলাম। ভেবেছিলাম সব ঠিক করে দেব। আমি কি ভুল করলাম?

কিন্তু আমার ষষ্ঠেন্দ্রিয় আমাকে সাবধান করছে যে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফেরানো দরকার। জবাবদিহি পরে হবে। অবস্থা যেন কোনোমতেই হাত থেকে বেরিয়ে না যায়।

ওকে খুঁজে পেলাম বিছানার পাশে বসে, দেয়ালের দিকে তাকিয়ে। আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম, অবিন্যস্ত চুলের মধ্যে দিয়ে। ও চুপ করে বসে রইল, আবেগশূন্য, ভাবলেশহীন।

জীবন্মৃত।

ব্যাপারটা বেশি না ঘাঁটানোটাই যুক্তিযুক্ত মনে হলো আমার। পেছনের ঘরটার থেকে আমার ব্যাগটা উদ্ধার করে আনলাম। ভাবলাম, যদি ব্যাগটা বসার ঘরে ছেড়ে যেতাম, তাহলে হয়তো...........

ব্যাগে একটা 'আই প্যাড' এনেছিলাম, রঞ্জুর পরামর্শে। কিনেও এনেছিল ও।

কিছু করার নেই। ব্যাগটা খালি করলাম আর বাথরুমে অনেকটা সময় নিয়ে স্নান করলাম।

বেরিয়ে দেখি, আমার প্রিয় ব্রেকফাস্ট 'লুচি আলুর ছেঁচকি।'

সেই আগের মতনই, তফাৎ একটাই, চারদিকে শ্মশানের নিস্তব্ধতা। যদিও বাড়ির প্রতিটি কাজ চলছে ঘড়ির কাঁটা ধরে।

আর একবার চেষ্টা করা যাক, "যাবে নাকি বিকালে ডিনার করতে?"

ও মুখ তুলে তাকালো। নিরুৎসুক দৃষ্টি... “কোথায়?”

আমি বেশ খানিকটা উৎসাহ দেখিয়ে বললাম, "কেন! চাইনিজ রুম!"

এর পেছনে একটা কারণ ছিল। এই রেস্তোঁরাটার কথা যখনি আগে উঠেছে, সুহাস একবাক্যে নাকচ করে দিয়েছে। বলেছে, "টাকা কামড়াচ্ছে, নাকি?"

এর পরিপ্রেক্ষিতে যদি কোনো কথাবার্তা চালু করা যায়।

দেখলাম কী যেন ভাবছে। আমি বললাম, "অবশ্য, টাকার শ্ৰাদ্ধ, অন্য কোথাও যাওয়া যাক। "

ও একটু চুপ করে বললো, "না, তোমার পছন্দ, ওখানেই চলো।"

সন্ধ্যাটা বিপর্যয় বলা যেতে পারে অনায়াসে। ও চুপ করে বসে থাকলো। আমি একই কথা বলে গেলাম। ও প্রায় কিছুই খেলো না। আমি ওকে ‘আই প্যাডটা’ দিলাম। ওটা হাতে নিয়ে ও শুধু বললো, "এতো দামি জিনিস নিয়ে আমি কি করবো?"

অতি কষ্টে সময়টা কাটিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম।

আবার সেই রাত, সেই বিছানা আর সেই নীরবতা। কিন্তু জাগতিক নিয়মে রাতের পর দিন; শনিবারে পর রবিবার আসতে বাধ্য।সকালে ঘুম ভেঙে দেখি বিছানা খালি। সাধারণতঃ আমি সবার আগে ভোরে ঘুম থেকে উঠি, দেরি হয়ে গেছে।

সুহাস টেবিলে বসে ছিল, আমি চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে, ওর কাছে বসলাম।

ও আমার দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো, "তুমি দিল্লি ফিরে যাও। "

ঘাবড়ে গেলাম, তবু হালকা মেজাজে বললাম, “সে তো মঙ্গলবার। যেতে তো হবেই ।"

আমার ওপর থেকে চোখ না সরিয়ে বললো, "না, তুমি আজই ফিরে যাও।"

এই দুদিনে, প্রথমবার আমার মাথা গরম হয়ে গেল, হয়তো নিরাশায়, বলতে পারি না। দুত্তোর, আমি কি খেলার পুতুল যে তুমি যেমন চাইবে আমি তেমনি করতে বাধ্য? অনেক কষ্টে দাঁত চেপে বললাম, "কেন, কী ব্যাপার?"

ঠিক একইভাবে চোখ না সরিয়ে বললো, "আমাকে অনেক কিছু ভাবতে হবে। তুমি এখানে থাকলে হবে না। তোমাকে যেতে হবে।"

মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো, তবু বোঝাবার চেষ্টা করলাম, "সুহাস! কিচ্ছু ভাবার নেই, সব ঠিক আছে। আমি বলছি। কেন বুঝতে পারছো না?"

ম্লান হেসে ও বললো, "তাই নাকি? সব ঠিক আছে? তোমার জন্য হতে পারে, আমার জন্য নয়!"

শেষবারের মতো চেষ্টা করলাম, চেঁচিয়ে বললাম, "হঠাৎ করে দিল্লি ফিরবো। রঞ্জু জিজ্ঞাসা করলে কি বলবো?"

ঠাণ্ডা চোখে তাকিয়ে ও আস্তে করে বললো, "ওকে সত্যিটাই বোলো।"
[+] 5 users Like Trambak's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: পুরোনো টুথব্রাশ - by Trambak - 09-12-2020, 01:22 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)