Thread Rating:
  • 24 Vote(s) - 3.29 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery ঝর্ণা The Untold story ! সমাপ্ত
কমলদার ও অপারেশন চলছে ! ওখানে কানাই আর লাহিড়ীদা আছেন ! মিতালীর এখানে আমরা বাকি সবাই ! আমি রাজু আর সমীর কে বললাম যে একবার কমলদার অবস্থার খোঁজ নিতে ! ওরা  চলে গেলো ! আমার দুই দিকে মঞ্জু আর চৈতালি আমাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে ! সকাল থেকেই কারুর কিছুই খাওয়া হয়নি ! আর দু দুজনের অপারেশনের টেনশনে কারুরই খিদে পায়নি  ! এই প্রথম চৈতালি বললো "একটু চা পাওয়া যাবে না ?"
- খিদে পেয়েছে ?
- না ! ঘোষ কাকুর জন্য বলছিলাম !
ওয়েটিং এরিয়ার এক কোনে  ঘোষদা উদাস চোখে বসে আছেন ! আমি হাসপাতালের ক্যান্টিন এ গিয়ে সবার জন্য চায়ের অর্ডার দিলাম ! ওরা একটা ফ্লাস্কে চা আর ডিসপোজেবল কাপ দিলো ! সবার আগে ঘোষদার  দিকে চা এগিয়ে দিলাম ! উদাস চোখে আমার দিকে তাকিয়ে চুপচাপ চায়ের কাপ তুলে নিলেন !
সবাইকে চা দিয়ে আমার কাপে চা ঢেলে খেয়ে নিয়ে ফ্লাস্কটা ফেরত দিয়ে এলাম ! একটা জিনিস এখানে খুব ভালোই অনুভব করছি ! এখানে প্রত্যেকের ব্যবহার মনোমুগ্ধকর ! কিন্তু সবাই রুগীদের ব্যাপারে খুবই উদাসীন ! হয়তো মৃত্যু দেখে দেখে এদের মনে আর মৃত্যু দাগ কাটতে পারেনা !
সমীর আর রাজু ফিরে এলো ! বললো যে এখনো অপারেশন চলছে !এখনো ঘন্টা খানেক টাইম লাগবে ! মিতালীর ওটির  দরজা খুলে নার্স বেরিয়ে এলো ! আমি তাড়াতাড়ি নার্সের কাছে গিয়ে মিতালীর খবর জানতে চাইলাম !
নার্স বললো "আট  ইউনিট ব্লাড লাগবে বি পজেটিভ  ! তাড়াতাড়ি ব্লাডব্যাংকে গিয়ে ব্যবস্থা করতে !
আমি সমীর আর রাজু ! সবাই যদি দু ইউনিট করে দিই তাহলে ছয় ইউনিট হচ্ছে ! আমি রাজুকে বললাম তাড়াতাড়ি কানাইকে ডেকে নিয়ে আসতে !
ওরা  কানাইকে ডেকে নিয়ে এলো ! কানাই এসেই বললো যে কমলদার ৪ ইউনিট ব্লাড লাগবে এবি নেগেটিভ ! আমরা নিজেদের ব্লাড গ্রুপ জানিনা ! তা সত্ত্বেও  ব্যাংকে গিয়ে বলতে ওরা  বললেন আমাদের স্টকে   যা আছে সেটা দিয়ে দিতে পারি কিন্তু আপনাদের ডোনেট করে সেই স্টক পুরো করতে হবে !  আমরা নিশ্চিন্ত হলাম ! উনি বললেন আপনারা কি ব্রেকফাস্ট করছেন ? আমরা সবাই মাথা নাড়লাম ! উনি বললেন ব্রেকফাস্ট করে আসতে ! আমি বললাম "ওখানে ওদের আর্জেন্ট  ব্লাডের দরকার ! দেরি হয়ে যাবে ! আপনি এখন ব্লাড নিয়ে নিন ! পরে ব্রেকফাস্ট করা যাবে ! "
আমার কথা শুনে ব্লাডব্যাংকের লোকটি বললেন " রিকুইজেশন হিসাবে আমরা ব্লাড পাঠিয়ে দিয়েছি ! আপনারা খেয়ে আসুন ! "
হাসপাতালের ক্যান্টিনেই সবাই ব্রেকফাস্ট করে নিলাম ! ঘোষদাকে বলে এলাম যে আমরা ব্লাড দিতে যাচ্ছি ! আপনি এখানেই থাকুন ! ঘোষদা উদাস চোখে ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালেন !
আমরা ছয় জন মানে আমি কানাই সমীর রাজু চৈতালি আর মঞ্জু সবাই ব্লাড দিতে চলে গেলাম ! ওনারা সবার ব্লাড প্রেসার এবং রক্তের গ্রূপ চেক করে পর পর বেছানো বেদে  আমাদের শুইয়ে দিয়ে সবার হাতে একটা বিরাট ছুঁচ ঢুকিয়ে দিয়ে রক্ত নিতে শুরু করে দিলেন ! মঞ্জু প্রথমে একটু ভয় পেয়ে গেছিলো কিন্তু ছুঁচ ঢোকার পর আর কোনো অসুবিধা কারুরই হয়নি ! মিনিট কুড়ির মধ্যেই ব্লাড দেওয়া শেষ হলো কিন্তু ওনারা আমাদের কেউকেই উঠতে দিলেন না প্রায় ৩০ মিনিট মতো ! পরে সবার হাতে একটা করে জুসের প্যাকেট আর গ্লুকোজ বিস্কুটের প্যাকেট দিয়ে বললেন " খেয়ে নিন ! সারা দিনে বেশি করে জল খাবেন আর আজ কেউ গাড়ি চালাবেন না ! "
আমার কিছুতেই ত্বর সই ছিলোনা ! কোনোরকমে সময় অতিক্রান্ত হতেই আমি বেরিয়ে গিয়ে কানাইকে আর রাজুকে বললাম তোরা আগে কমলদার কি অবস্থা দেখে আয়  ! আমি মিতালীর কাছে আছি ! মঞ্জু আর চৈতালির মাথা ঘুরছে !আমি আর সমীর  ওদের ধরে ধরে আমি মিতালীর ওটির  ওয়েটিং এরিয়াতে নিয়ে এনে বসিয়ে দিলাম ! ঘোষদা ঠিক একই ভাবে বসে আছে ! রাজু কিছুক্ষনের মধ্যেই ফিরে এসে আমার সাথে হাত মেলালো ! " কমলদার অপারেশন সাকসেসফুল ! ওনাকে এখন আইসিইউতে রাখা আছে ! জ্ঞান ফিরলেই আমাদের ডাকা হবে ! শুধু একজন আটেনডেন্টকে ২৪ ঘন্টা ওখানে থাকতে হবে ! এখন লাহিড়ীদা আছেন ! মাথার উপর দিয়ে যেন একটা ঠান্ডা হাওয়া বয়ে গেলো ! দুই হাত জোর করে ভগবানের উদ্দেশে প্রণাম জানিয়ে মিতালীর ভালোর প্রার্থনা করলাম ! কমলদার খবর শুনে ঘোষদা একটু নড়েচড়ে বসলেন ! " তাহলে আমার মিতুও ঠিক হয়ে যাবে ! কি বলো সুনন্দ !
"ওনার চোখের আকুল চাহুনিতে আমি সারা দিতে পারলাম না ! মনে মনে বললাম "ভগবান মঙ্গলময় ! উনি যা করবেন ভালোর জন্যেই করবেন ! "
কমলদার খবরে সবাই স্বস্তির নিঃস্বাস ফেললেও মিতালীর চিন্তা সবাইকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেতে লাগলো !
সমীরকে বললাম "যা গিয়ে লাহিড়ীদাকে কিছু খাইয়ে দে আগে ! উনিও সকাল থেকে কিছুই খাননি ! "  সমীর চলে গেলো !
কিছুক্ষন পরেই লাহিড়ীদাকে নিয়ে সমীর ফিরে এলো ! লাহিড়ীদা ঘোষদার  পাশে বসে স্বান্তনা দিলেন ! "কমলবাবুর অপারেশন সাকসেসফুল ! মিতালীও ঠিক হয়ে যাবে ! চলুন আমার সাথে কিছু খেয়ে নিন ! "
টেনশনে আমার একদমই খেয়াল ছিলোনা যে ঘোষদাও  কিছুই খাননি !
জোর করে লাহিড়ীদা ঘোষদাকে নিয়ে চলে গেলেন !
সকাল আটটায় দুজনকেই অপারেশন টেবিলে ঢোকানো হয়েছিল ! এখন সাড়ে এগারোটা বাজছে  ! কমলদার খবর একটু শান্তি এনে দিলেও মিতালীর জন্য সবাই দুশ্চিন্তায় !
এখন প্রায় আড়াইটে বাজে ! কিন্তু মিতালীর কোনো খবর নেই ! প্রায় সাড়ে তিনটের সময় নার্স এসে আমাকে দেখে ডাকলেন ! "অপারেশন হয়ে গেছে ! কিন্তু ৭২ ঘন্টার আগে আমরা কিছুই বলতে পারবো না ! "
- ম্যাডাম প্লিজ একটু বলুন ওর বাঁচার আশা কতটা ?
- ৭২ ঘন্টার আগে কিছুই বলতে পারবো না ! অপারেশন খুবই ক্রিটিকাল ছিল ! এশিয়ার সব থেকে বড়ো  ডাক্তার ওর অপারেশন করেছে ! কিন্তু উনি নিজেই সিওর নন কি হবে ! এটা  নাকি ওনার জীবনের সব থেকে বড়ো  অপারেশন !
- আমি কি একটু মিতালীকে দেখতে পারি ? এইটুকু কথা বলতেই আমার গলা বুঁজে এলো ! জানিনা কেন আমার কথা বলার ধরণ দেখে নার্সের মনে একটু দয়া  হলো ! উনি আমাকে ইশারা করে আইসিউর পিছনের দিকে নিয়ে গেলেন ! কাঁচের দেওয়ালের ওপারে মিতালীর শরীর পরে আছে ! মাথায় বিরাট ব্যান্ডেজ ! সারা শরীরে নানা রকমের নল পাশে  দু তিনটে মনিটরে বিভিন্ন রকমের রেখা খেলা করে চলেছে !
মিতালীর শরীর পুরো নীল হয়ে রয়েছে ! কাঁচে গ্লাস থেকেই মিতালীর বুকের ধুকপুকানির শব্দ ছোঁয়ার চেষ্টা করলাম !
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ঝর্ণা The Untold story ! - by dada_of_india - 08-12-2020, 07:49 PM



Users browsing this thread: 43 Guest(s)