Thread Rating:
  • 24 Vote(s) - 3.38 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance দেবদাস [[শরৎ এর নয় কলির কেষ্টোর ]]
#21
দুই পর্ব


বাড়ি এসে স্নান সেরে নিলো দেবু। রান্না ঘরে উঁকি দিয়ে দেখলো সরলাদেবী রান্না করছে। বাবাও হয়ত স্নানে গেছে পুকুরে। বাবার চিরকালের অভ্যাস পুকুরে স্নান করার। স্নান সেরে ঘরে এসে বিছানায় মাএ ই শুয়েছে, অমনি সরলাদেবী ডাক দিলো,,,দেবু ভাত দিয়েছি বাবা, তোর বাবাও বসে আছে তাড়াতাড়ি আয়। মায়ের ডাকে উঠে বাইরে এসে দেখে বাবা বসে গেছে। দেবুও পাশে পাতা মাদুরে বসে পরলো। গরম ভাত সাথে পুঁটি মাছের ঝাল চচ্চড়ি,দেখেই জিহবায় জল এসে গেল। 
তৃপ্তি করে খেলো দেবু,মায়ের হাতের রান্নায় যেন এক অপূর্ব স্বাদ।

দুপুরে খাওয়া শেষে একটু বিছানায় গড়াগড়ি না দিলে আরাম হয় না। তাই ঘরে ঢুকে শুয়ে পরলো। মা বাবাও খাওয়া শেষ করে বারান্দার খাটে বসেছে। একটা মাএ বেড়ার দেয়ালের ঘর ওদের।ভিতরে দেবু থাকে আর বারান্দায় একটা খাট পেতে সরলাদেবী স্বামীকে নিয়ে থাকে।অভাবের সংসার তবুও সরলাদেবীর মনে কোন কষ্ট নেই। তিন জনের সংসারে অভাব থাকলেও মনে এক প্রশান্তি আছে। চিন্তা শুধু ছেলেটাকে নিয়ে। সামনে দেবুর উচ্চ মাধ্যমিকের ফাইনাল পরীক্ষার জন্য ফর্মফিলাপ। তাও প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকার ব্যাপার। যা রোজকার হয় সব খেতে পরতেই চলে যায়। এক বড় দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের কাজ করতে গেলেন।

ঘর থেকে বেড়িয়ে দেবু বললো মা আমি একটু ঘুড়তে গেলাম। ছেলের কথায় সরলাদেবী মৃদু বকুনির সুরে বললেন,,
"যা কি আর করবি সারাদিন তো খাওয়া আর টোটো করে ঘুরা। বের হলে তো আর বাড়ির কথা মনে থাকে না। তাড়াতাড়ি আসিস,তোর বাবার শরীরটা ভালো নেই। হয়ত দোকানে বসা লাগতে পারে।

দেবু রাস্তায় হাটতে হাটতে ভাবে সত্যি বাবার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। বুকের ব্যথা ব্যথা বলছে কয়দিন ধরে। কাল সারারাত খুক খুক করে কেঁশেছে। বড় ডাক্তার দেখাতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু সে অবস্থা নেই। হাঁটতে হাটতে কতদুর চলে এসেছে খেয়াল হতেই থেমে গেল দেবু। বেড়িয়ে তো পরেছিলো বাড়িতে ভালো লাগছিলো না বলে। এখন কোথায় যায়।সাতপাঁচ ভেবে ভাবলো ধুর নদীর পারের দিকে যাই। রাস্তা পাল্টে হাটতে লাগলো। সামনেই বিকাশদার দোতলা বাড়ি। বিকাশদা কি বাড়ি আছে?একবার যাবো নাকি? যদি বিকাশদাকে বলে তার আড়ৎতে কোন লেখালেখির কাজ পাওয়া যেত। তা না হয় পড়াশোনার পাশাপাশি করা যেত। এসব ভাবতে ভাবতেই বাড়ির সামনে চলে এলো দেবু। ঢুকবে কি ঢুকবে না করতে করতে ঢুকে গেল। এমা বাড়িতে তো মনে হচ্ছে কেউ নেই। ফিরে যাবার জন্য দেবু পা বাড়াতে যাবে।অমনি পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো কাকে চাই?

দেবু কথা শুনে পিছনে ফিরতেই দেখলো দেবী প্রতিমার মত মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে পার্বতী বৌদি। বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলোনা দেবু চোখ নামিয়ে নিয়ে বললো,,বিকাশদা নেই?

দেবুর লাজুক মুখটা পার্বতীর নজর এড়ায় না।বিয়েতে এসেছিলো ছেলেটা স্বামীর মুখে ছেলেটার কথা অনেক শুনেছে,খুব ভদ্র আর সরল নাকি ছেলেটা। 
"না তোমার বিকাশদা বাড়ি নেই। দেবু যেন একটু আশাহত হয়ে বললো,,ওহ তাহলে আমি যাই।বাড়িতে কেউ নেই শাশুড়ি গেছে নিজের বোনের বাড়ি। বরটাও বাইরে,একা একা মুখ বুজে থাকতে হচ্ছে। তাই দেবুকে উদ্দেশ্য করে বললো,কেন কোন দরকার বুঝি?

পার্বতীর কথার উত্তরে মুখ নিচু করেই দেবু বললো না এমনি, আমি যায় এখন। পার্বতীর মজা লাগে এমন লাজুক ছেলে সে দেখেনি,তাই মজা করে বললো,,
"কেন আমি বাঘ না ভাল্লুক যে অমন দৌড় দিচ্ছো? পার্বতী বৌদির কথায় কি বলবে দেবু ভেবে পায়না। কোন রকমে মুখটা তুলে বললো না মানে বাড়িতে কেউ নেই। কেউ দেখলে খারাপ ভাববে। 

দেবুর কথায় আরো মজা করার ইচ্ছা হয় পার্বতীর। মুখ বুজে থাকতে থাকতে একদম মাথা ধরে গেছে। কিছুক্ষণের জন্য একটা কথা বলার সঙ্গী পেলে ক্ষতি কি? কেন বাড়িতে কেউ নেই বলে মানুষে খারাপ ভাববে কেন?
দেবু উত্তরে কি বলবে এখন? বৌদি কি বুঝতে পারছেনা? নাকি তার সাথে ইচ্ছা করে মজা করছে?! দেবু কিছু বলছে না দেখে পার্বতী একটা মোড়া এগিয়ে দিয়ে বললো বসো অতো লজ্জা পাওয়ার দরকার নেই। দেবু একটু ইতস্তত করেও বসলো। পার্বতী একটা মোড়া টেনে বসে বললো। 
""তুমি অতো লাজুক কেন? পুরুষ মানুষের এতো লজ্জা পেলে কি চলে?
"দেবু নিজের ইতস্তত ভাব কাটিয়ে নিয়ে বললো পুরুষ আর হলাম কোথায়? সৃষ্টিকর্তা যতোটুকু দান করেছে,তার বেশিতো কিছুই করতে পারিনি।যখন সত্যিকারের পুরুষ হবো তখন আর লজ্জা পাবোনা। পার্বতী দেখলো ছেলেটা কথা ভালোই বলে। মনে কোন ময়লা নেই যা মনে আসে গড়গড়িয়ে বলে দেয়। যদিও জানে তবুও আলাপ জমানোর জন্য দেবুকে বললো তোমার বাড়িতে কে কে আছে? 
"মা বাবা আর আমি"দেবু বললো।

তুমি একটু বসো বলে পার্বতী উঠে গেল ঘরের দিকে একটু পর একটা বাটিতে করে গোটা তিনেক নাড়ু এনে দেবুকে দিয়ে বললো নাও এগুলা খাও! নাড়ু দেখে খেতে ইচ্ছা করছে দেবুর কিন্তু বৌদির সামনে কেন জানি লজ্জা করছে।পার্বতী দেবুর মনের কথা বুঝতে পেরে বললো।খাও আমার সামনে লজ্জা কিসের?দেবু একটা নাড়ু নিয়ে মুখে পুরলো। তারপর একটা চিবিয়েই বললো নাড়ুগুলা অনেক সুন্দর ঠিক তোমার মত!! দেবুর কথা শুনেই পার্বতী ড্যাবড্যাব চোখে দেবুর দিকে তাকালো। দেবুও খাওয়া থামিয়ে দিয়েছে,বুঝতে পরেছে একটা বেফাঁস কথা বলে ফেলেছে। 

পার্বতীর ভালো লাগলো কথাটা তবুও মনে খুশি গোপন রেখে বললো,"কি বললে?
"দেবু আমতা আমতা করে বললো না,,মানে মুখ ফোঁসকে বেরিয়ে গেছে। 
"কি বেড়িয়ে গেছে আবার বলো ? পাবতী বললো।
দেবু দেখলো না বলে কোন উপায় নেই,অগ্রত বললো বললাম তুমিও নাড়ু গুলার মত সুন্দর। 
দেবুর কথা শুনে পার্বতী না হেসে পারলো না।হাসতে হাসতে বললো আমি কি খাওয়ার জিনিস যে তুমি নাড়ুর মত সুন্দর বলছো?!
দেবু ভেবে পায়না এতে হাসির কি হলো!? কিন্তু এই ভেবে স্বস্তি পেল যাক বৌদি তাহলে রাগ করেনি। তাই নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বললো এমা,, আমি কি অমনটা বলতে চাইছি নাকি,তুমি দেখতে খুব সুন্দর,একদম দেবী প্রতিমার মতো।বলেই বাটি থেকে নাড়ু দুটা হাতে নিয়ে দেখলো,বৌদি ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।আহ কি সুন্দর দেখতে,বয়সও বেশি না আমার থেকে বছর ছয়েক বড় হবে। কি দেখে বিকাশদার সাথে যে বিয়ে দিলো। হয়ত বিকাশদার অবস্থাশালী ভালো তাই। হাসলে দু গালে কেমন টোল পরে।ইশশ..বৌদির মত কেউ যদি আমার প্রমিকা হতো। 

দেবুকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে পার্বতী বললো কি গো ঠাকুরপো এতো কি দেখছো?
পার্বতীর কথায় লজ্জা পেয়ে দেবু চোখ নামিয়ে নিয়ে বলল আমি এখন আসি গো বলে ছুট দিলো। তাই দেখে পার্বতী হেঁসে কুটিকুটি হয়ে পরে। রাস্তায় এসে দেবু যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।উফ এতোক্ষণ ধরে একটা মেয়ের সাথে কথা বলছিলো ও, ওর নিজেরই যেন বিশ্বাস হয়না।হাতে থাকা অবশিষ্ট নাড়ুটা মুখে পুরে দোকানের দিকে হাঁটা দিলো। হাটতে হাটতে ভাবছে পার্বতী বৌদি খুব ভালো মানুষ কেমন বসতে দিয়ে নাড়ু খেতে দিলো। ইশ বৌদির মত দেখতে তারও যদি কেউ থাকতো। নিজের কথায় নিজেই লজ্জা পায় দেবু। দোকানের কাছে এসে দেখে বাবা বসে আছে। দেবু ভিতরে ঢুকে বললো তুমি বাড়ি যাও আমি দোকান বন্ধ করে আসবো।

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
RE: দেবদাস [[শরৎ এর নয় কলির কেষ্টোর ]] - by Kolir kesto - 07-12-2020, 06:54 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)