07-12-2020, 12:06 AM
(06-12-2020, 09:38 PM)Mr Fantastic Wrote: কম্পিত হাতে আমার বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে ওঠা দেবিকাকে জড়িয়ে ধরে কাঁপা কাঁপা মোহাচ্ছন্ন গলায় বললাম, তারপর কি হল ?bolchi biye ta jano ektu jomkalo vabe hoy sar....
দেবিকা ঘোর লাগা স্বরে বলে চলল, তিনদিন পর ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জানতে পারে আমার অসুস্থতার কথা। পেটব্যথায় কুঁকড়ে থাকতাম দেখে ওদের সন্দেহ হয়। একটা ক্লিনিকে আবার হোল অ্যাবডোমেন ইউএসজি করানো হয় আমার। রিপোর্টে জানা যায় লিভারে একটা সিস্ট হয়েছে কিন্তু ওটা কোনো ম্যালিগন্যান্ট টিউমার নয়। আসলে গ্রামের ডাক্তাররা রোগ নির্ধারণে ভুল করেছিল। শহরের ওই বেসরকারি হাসপাতালও বড়ো দাও মারবার লোভে আসল কথা চেপে যায়। আসল চিকিৎসা শুরু হতেই আমি সুস্থ হতে থাকি, সব খরচ ওই এনজিও থেকেই দেওয়া হয়। মাঝখান দিয়ে প্রাণ দিতে হয় আমার মা-বাবাকে – এতটা বলে দেবিকা থামল। ওর দুচোখ ভরে উঠেছে জলে।
প্রচণ্ড রাগ হতে থাকে আমার এইসব মিথ্যাচারী মানুষদের ওপর যারা চিকিৎসাজগতে ভদ্রতার মুখোশ পরে আসলে ডাকাতি করছে।ওর পিঠে স্নেহের পরশে হাত বুলিয়ে পরের ঘটনা জানতে চাওয়ায় দেবিকা আবার বলল, এরপর সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলে আমাকে হাওড়ার একটা অনাথ আশ্রমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে আমার মতো আরও দশটা বাপ-মা মরা ছেলেমেয়ের সাথে হেসে-খেলে বেড়ে উঠতে থাকি। সবাই একটা পরিবারের মতো ছিলাম।
আমার যখন তেরো বছর বয়স তখন একদিন দুই স্বামী-স্ত্রী আসে আশ্রমে দত্তক নিতে। সবার মধ্যে থেকে আমাকেই ওদের পছন্দ হয় আর দত্তক নেয়। আমার নতুন ঠিকানা হয় আহিরিটোলার একটা বাড়িতে। কিন্তু তখন থেকেই আমার জীবনে নেমে আসে কালো আঁধার। ওই দম্পতি আসলে নিজেদের বাড়িতে মধুচক্র চালাত। সেখানে দেখলাম আমি ছাড়াও নানা বয়সের আরও মেয়েদের ওখানে বন্দি করে রাখা হয়েছে। যারা পুরনো তাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয় আমার মতো ‘নয়া চিড়িয়া’দের মগজধোলাই করতে, আদব কায়দা শেখাতে। রাত নামলেই দেখতাম মেয়েরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে খদ্দের ধরার চেষ্টা করছে, সবার ঘর থেকে শীৎ্কারের আওয়াজ ভেসে আসছে, কোথাও বা মদ-নাচের আসর।
দেবিকা একটু থেমে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ষোল বছর বয়সে আমি কুমারীত্ব হারাই, কি বিভীষিকাময় যন্ত্রণাদায়ক ছিল সে রাত। ঘুমিয়ে থাকা এক গোলাপের কুঁড়িকে ভোর হওয়ার আগেই অকালে জোর করে পাপড়ি টেনে খুলে ফেলা হয়। বলতে বলতে দেবিকা দু’হাতে মুখ ঢেকে ডুকরে কেঁদে উঠলো। আমার চোয়াল শক্ত হয়ে গেল, বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলাম।
দেবিকা বলে চলল, একদিন কলকাতা পুলিশ খবর পেয়ে রেড করে ওই বাড়িতে। আমি সবে এক নারীমাংসলোলুপ জানোয়ারকে সামলে ক্লান্ত হয়ে শুয়েছিলাম বিছানায়। হঠাৎ ‘পুলিশ পুলিশ!’ চিৎকারে বাইরে বেরিয়ে দেখি নীচে একতলায় সবার ঘরে পুলিশ হানা দিয়েছে। ভয় পেয়ে আমি একছুটে বারান্দায় গিয়ে পাশের বাড়ির ছাদে চলে যাই। তখন আমার এই জ্ঞান ছিল না যে পুলিশ আসলে আমাদের উদ্ধার করতেই এসেছিল। পাশের বাড়ির ছাদ থেকে লোহার ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে নীচে রাস্তায় নেমে এসে উদ্দেশ্যহীন ছোটাছুটি করতেই রতনদার সামনে পড়ে গেলাম। রতন দালাল আমাকে নিয়ে গেল এক এসকর্ট এজেন্সিতে। ধীরে ধীরে হয়ে উঠলাম মোস্ট ডিজায়ারেবেল কলগার্ল।
সব শুনে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছি। কিছুক্ষন বিহ্বল হয়ে থাকার পর নীরবতা ভেঙে ক্রন্দনরতা দেবিকার মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম, এতো বছর পর তুমি চিনতে পারলে আমাকে ?
দেবিকা চোখ মুছে শুষ্ক হেসে বলল, হ্যাঁ বললাম না তোমার তীক্ষ্ণ উজ্জ্বল চোখদুটো আর এই নাক চিনতে আমার কোনো ভুল হয়নি। মনে আছে প্রথম যেদিন এখানে এসেছিলাম সেদিন তোমাকে দেখে আমি স্থানুর মতো থমকে গিয়েছিলাম ? কেন জানো ? আমাকে যে মানুষটা অসহায় পরিস্থিতিতে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল তার সাথে এতদিন পর দেখা করতে পেরেছি বলে, আমার দীর্ঘদিনের মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়েছে বলে।
বাঁহাতে দেবিকার চিবুক ধরে ওর পানপাতার মতো মুখটা আমার দিকে তুলে ধরে আরেকহাতে সযত্নে ওর বেদনাশ্রু মুছিয়ে দিয়ে বললাম, তোমাকে এভাবে নতুন রুপে পাবো আমি ভাবতেই পারিনি দেবিকা।
আমার ঠোঁটে একটা চুম্বন এঁকে দিয়ে বুকে মাথা রেখে দেবিকা বলল, সেই জন্যই তোমার এই চওড়া বুকের মাঝে মাথা রাখলে বড়ো নিশ্চিন্ত মনে হয় নিজেকে। তুমি আমার কাছে দেবদূতের মতো। তুমি না থাকলে আজ যে কি হতো ভাবতেই আমার হাত-পা অবশ হয়ে আসছে উজান।
চোয়াল শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ হাতে বিছানায় একটা ঘুষি মেরে বললাম, ওই শালা সুরজকে আমি ছাড়বো না, খুঁজে বার করে গঙ্গায় ওর লাশ ফেলে দেবো! আর সেই হসপিটালের বিরুদ্ধেও কেস করে দেবো!
দেবিকা আমার মুখ ওর হাত দিয়ে চেপে আঁতকে উঠে বলল, একদম এমন গোঁয়ার্তুমি করবে না তুমি, একা পেয়ে ওকে শায়েস্তা করেছো, কিন্তু ওর দলবল বোমা-পিস্তল নিয়ে ঘোরে সবসময়।যদি কোনো ক্ষতি হয়ে যায় তোমার ? ওকে অজ্ঞান করে পালিয়ে এসেছি আর খুঁজে পাবে না আমাদের।
আমার ঠোঁটের ওপর থেকে দেবিকার নরম হাতটা সরিয়ে নিজের দু’হাতের মুঠোয় নিয়ে কিছুক্ষন একদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললাম, দেবিকা, চলো আমরা বিয়ে করে নিই।
দেবিকা ঘোলাটে চোখে আমার দিকে চেয়ে অস্ফুটে জিজ্ঞেস করলো, বিয়ে ?
দু’হাতে ওর দুই পেলব গোল কাঁধ ধরে ওর চোখে চোখ রেখে গার স্বরে বললাম, হ্যাঁ বিয়ে করবো আমরা, তোমার গায়ে কোনো শয়তানের এতটুকু আঁচড় লাগতে দেবো না, খুব ভালবাসবো তোমাকে। তুমি ভালোবাসো আমাকে ?
দেবিকা দুই কাজলকালো সজল চোখের উদ্ভাসিত দৃষ্টিতে মধুর স্বরে বলল, হ্যাঁ বাসি উজান, খুব ভালোবাসি তোমায়।