06-12-2020, 09:09 PM
#অন্য_রূপকথা
আজ সকালবেলাটা একটু অন্যভাবে শুরু হলো।
আমি ঘুমকাতুরে মনিষ্যি। রোববার সক্কাল সক্কাল ঘুম থেকে উঠলে ঠাকুর পাপ দেন শুনেছি, তাই ঘড়ির কাঁটার সাথে আমার আড়ি থাকে এইদিন। তা, আজ ও সেইরকম একটা ঘুম ঘুম রবিবার কাটছিল, তাও ঘুম থেকে উঠে পড়তে হলো তাড়াতাড়ি।
সৌজন্যে - কলিং বেল!
দরজা খুলে দেখি আমাদের আবাসনের এক বাসিন্দা। মধ্যবয়সী এক কাকু। এই নিউ নর্ম্যাল দিনে মাস্কের আড়ালে থাকা মুখ তো চেনা যায় না...তাই, বলা ভালো, ওনার সাথে চোখ চেনা। তবে, ক'দিন আগেই ওনার ফ্ল্যাটের সামনে বিস্তর চ্যাঁচামেচি শুনেছি। ওনার এক বোন সম্ভবত, সম্পত্তি, বাড়ি ইত্যাদি সম্পর্কে কিছু আলোচনা করছিলেন, যে টি ঠিক আলোচনা নয়, ঝগড়ার পর্যায়ে চলে গেছিল। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে শুনতে পেয়েছিলাম বেশ কিছু অপ্রীতিকর শব্দ। শান্তিপ্রিয় মানুষ আমি, খারাপ লেগেছিল শুনে।
যাই হোক, আজ সকালে ওঁকে দেখে অবাক হয়েছিলাম। কেন জানি না, মনে হচ্ছিল "এই রে, ইনি আবার কেন!" আর, অবান্তর ভাবেই মনে হচ্ছিল "ইনি আমার সাথে ঝগড়া করবেন না তো!"
আমাকে অবাক করে উনি বলে উঠলেন "আমাকে একটা সাহায্য করবে মা? আমার একজনকে...মানে তাকে কিছু পাঠাতে চাই...সেই জন্য..."
"আ...আমি কি করব কাকু..." আমতা আমতা করে বলে উঠেছিলাম।
"তুমি তো প্রায়ই বাইরে থেকে খাবার আনাও...আমার জন্য একটা অর্ডার দিয়ে দেবে? এখানে না...পাশের পাড়ায় একজনের বাড়ি..." বললেন কাকু।
'একজনের বাড়ি!' সেরেছে!
কৌতুহল হচ্ছিল খুব। তাই ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম "কার বাড়ি কাকু?"
"আমার বোনের কাছে...এই তো পাশের পাড়াতেই থাকে...সেদিন ঝগড়াঝাঁটি করে চলে গেল...আজ জন্মদিন...ফোন ও ধরছে না যে বলব 'আজ তোর নেমতন্ন'... তাই একটু যদি অর্ডার করে দাও...ওই ফোন দেখে...আমি তোমাকে ক্যাশ টাকা দিয়ে দেব..." একটানা বলছিলেন উনি।
একটা হাতাওলা গেঞ্জি পরা... কাঁধের কাছে দুটো ছোট্ট ছোট্ট ফুটো...কাঁচাপাকা দাড়ি... কন্ঠার হাড় উঁচু হয়ে আছে।
হাত দুটো একসাথে... ঢোঁক গিলছেন...চোখে প্রত্যাশা...
আর একটু জল ও কি!?
হ্যাঁবাচক মাথা নাড়ার পরে স্বস্তির চিহ্ন ফুটে উঠল সেই দুটি চোখে।
"কাকু, এখন তো সবে সকাল আটটা...আরো পরে লাঞ্চের অর্ডার দেওয়া যায়... আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করে অর্ডার দিয়ে দেব..."
হাসিমুখে মাথা নেড়ে, আমাকে আশীর্বাদ করে চলে গেলেন উনি।
ঘরে ঢুকে ভাবছিলাম... কতরকম রূপকথা ই যে ঘটে যায় চারিদিকে...খালি চোখে কইটুকুই বা বুঝতে পারি আমরা!
আর, অনেক সময় কানে শোনা, চোখে দেখা সবকিছুর বাইরেও... বুকের ধুকপুকুনিটাই সত্যি। আর সেইটুকুকে খুঁজে নিতে হবে, নিতে হয় আমাদের... আর তাই, সেদিনের ঝগড়া করা দাদা যেমন সত্যি, তেমনি বোনের জন্মদিনে খাবার পাঠানোর জন্য...সামান্য চেনা একজনের কাছে ছুটে আসা...পরম সত্যি...
এই সাদা আর কালোর মাঝের রঙ ঝলমলে মানুষ গুলোকে...একটু খুঁজে যদি নেওয়া যেত...সবসময়...প্রত্যেকদিন...
ভালোটাকে আঁকড়ে ভালো থাকুন সবাই...
ভালোবাসার রঙ রামধনু ছড়াক সব্বার জীবনে...
আজ সকালবেলাটা একটু অন্যভাবে শুরু হলো।
আমি ঘুমকাতুরে মনিষ্যি। রোববার সক্কাল সক্কাল ঘুম থেকে উঠলে ঠাকুর পাপ দেন শুনেছি, তাই ঘড়ির কাঁটার সাথে আমার আড়ি থাকে এইদিন। তা, আজ ও সেইরকম একটা ঘুম ঘুম রবিবার কাটছিল, তাও ঘুম থেকে উঠে পড়তে হলো তাড়াতাড়ি।
সৌজন্যে - কলিং বেল!
দরজা খুলে দেখি আমাদের আবাসনের এক বাসিন্দা। মধ্যবয়সী এক কাকু। এই নিউ নর্ম্যাল দিনে মাস্কের আড়ালে থাকা মুখ তো চেনা যায় না...তাই, বলা ভালো, ওনার সাথে চোখ চেনা। তবে, ক'দিন আগেই ওনার ফ্ল্যাটের সামনে বিস্তর চ্যাঁচামেচি শুনেছি। ওনার এক বোন সম্ভবত, সম্পত্তি, বাড়ি ইত্যাদি সম্পর্কে কিছু আলোচনা করছিলেন, যে টি ঠিক আলোচনা নয়, ঝগড়ার পর্যায়ে চলে গেছিল। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে শুনতে পেয়েছিলাম বেশ কিছু অপ্রীতিকর শব্দ। শান্তিপ্রিয় মানুষ আমি, খারাপ লেগেছিল শুনে।
যাই হোক, আজ সকালে ওঁকে দেখে অবাক হয়েছিলাম। কেন জানি না, মনে হচ্ছিল "এই রে, ইনি আবার কেন!" আর, অবান্তর ভাবেই মনে হচ্ছিল "ইনি আমার সাথে ঝগড়া করবেন না তো!"
আমাকে অবাক করে উনি বলে উঠলেন "আমাকে একটা সাহায্য করবে মা? আমার একজনকে...মানে তাকে কিছু পাঠাতে চাই...সেই জন্য..."
"আ...আমি কি করব কাকু..." আমতা আমতা করে বলে উঠেছিলাম।
"তুমি তো প্রায়ই বাইরে থেকে খাবার আনাও...আমার জন্য একটা অর্ডার দিয়ে দেবে? এখানে না...পাশের পাড়ায় একজনের বাড়ি..." বললেন কাকু।
'একজনের বাড়ি!' সেরেছে!
কৌতুহল হচ্ছিল খুব। তাই ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম "কার বাড়ি কাকু?"
"আমার বোনের কাছে...এই তো পাশের পাড়াতেই থাকে...সেদিন ঝগড়াঝাঁটি করে চলে গেল...আজ জন্মদিন...ফোন ও ধরছে না যে বলব 'আজ তোর নেমতন্ন'... তাই একটু যদি অর্ডার করে দাও...ওই ফোন দেখে...আমি তোমাকে ক্যাশ টাকা দিয়ে দেব..." একটানা বলছিলেন উনি।
একটা হাতাওলা গেঞ্জি পরা... কাঁধের কাছে দুটো ছোট্ট ছোট্ট ফুটো...কাঁচাপাকা দাড়ি... কন্ঠার হাড় উঁচু হয়ে আছে।
হাত দুটো একসাথে... ঢোঁক গিলছেন...চোখে প্রত্যাশা...
আর একটু জল ও কি!?
হ্যাঁবাচক মাথা নাড়ার পরে স্বস্তির চিহ্ন ফুটে উঠল সেই দুটি চোখে।
"কাকু, এখন তো সবে সকাল আটটা...আরো পরে লাঞ্চের অর্ডার দেওয়া যায়... আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করে অর্ডার দিয়ে দেব..."
হাসিমুখে মাথা নেড়ে, আমাকে আশীর্বাদ করে চলে গেলেন উনি।
ঘরে ঢুকে ভাবছিলাম... কতরকম রূপকথা ই যে ঘটে যায় চারিদিকে...খালি চোখে কইটুকুই বা বুঝতে পারি আমরা!
আর, অনেক সময় কানে শোনা, চোখে দেখা সবকিছুর বাইরেও... বুকের ধুকপুকুনিটাই সত্যি। আর সেইটুকুকে খুঁজে নিতে হবে, নিতে হয় আমাদের... আর তাই, সেদিনের ঝগড়া করা দাদা যেমন সত্যি, তেমনি বোনের জন্মদিনে খাবার পাঠানোর জন্য...সামান্য চেনা একজনের কাছে ছুটে আসা...পরম সত্যি...
এই সাদা আর কালোর মাঝের রঙ ঝলমলে মানুষ গুলোকে...একটু খুঁজে যদি নেওয়া যেত...সবসময়...প্রত্যেকদিন...
ভালোটাকে আঁকড়ে ভালো থাকুন সবাই...
ভালোবাসার রঙ রামধনু ছড়াক সব্বার জীবনে...