Thread Rating:
  • 18 Vote(s) - 3.44 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica আমার স্বপ্ন তুমি
দেবিকা আমার দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে ব্যাকুল কণ্ঠে বলল, তুমি সত্যিই জানো না ?
আমি অবাক হয়ে বললাম, না তো, তোমাকে তিনবার কোথায় বাঁচালাম বুঝতে পারছি না।

দেবিকা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল তখনই কলিংবেলটা বেজে উঠলো। আমি চোখের ইশারায় দেবিকাকে ভেতরের ঘরের দরজার পিছনে লুকোতে বলে ডাইনিং টেবিলের উপর রাখা ফল কাটার ছুরিটা নিয়ে দরজার কাছে এসে দাঁড়ালাম। পুরনো ফ্ল্যাট, দরজায় আইহোল নেই, কে এসেছে বোঝা যায় না। দরজার হাতলটা ধরে চকিতে খুলে ছুরিটা উঁচিয়ে ধরতেই দেখলাম শ্যামলী মাসি হাতে খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে। আসার সময় পাড়ার গলির মুখে বাইক থামিয়ে মাসির দোকানে দু’প্যাকেট পরোটা-চিকেন কারি বাড়িতে পৌঁছে দিতে বলেছিলাম। আমাকে ওইভাবে ছুরি হাতে দেখে মাসি ঘাবড়ে গেছে। মাসিকে আস্বস্ত করে হেসে খাবারের প্যাকেটটা নিয়ে দাম মিটিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম। দেবিকা বেডরুমের দরজার পিছন থেকে উঁকি মেরে দেখছিল। বিপদ নেই দেখে বেরিয়ে এসে মিটিমিটি হাসছে।
প্যাকেট দুটো টেবিলে রেখে দেবিকাকে বললাম, তোমার কথা পরে শুনবো বিছানায় বসে। আগে খেয়ে নাও, সন্ধ্যে থেকে তো কিছুই পেটে পড়ে নি, না তোমার না আমার। চটপট বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসো।
দেবিকা বাধ্য মেয়ের মতো মৃদু হাসি টেনে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে বাথরুমে গেল। ওর মত্ত চালে সুডৌল নিতম্ব দুলিয়ে হেঁটে যাবার দিকে তাকিয়ে রইলাম মুগ্ধ চোখে, ভারী মিষ্টি আর সেক্সি আমার দেবিকা, হেসে উঠলাম মনে মনে।

খাওয়ার পর রাতে বিছানায় দেবিকাকে পাশে নিয়ে বসে বললাম, হ্যাঁ এবার বলো তো তখন কি বলছিলে, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
দেবিকা একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে আমার দিকে আয়ত চোখে তাকিয়ে বলতে থাকলো, তেরো বছর আগে মালদার একটা অজ গ্রাম থেকে এক অতি গরিব মাঝবয়সী দম্পতি তাদের একমাত্র মেয়েকে নিয়ে কলকাতায় আসে তার চিকিৎসার জন্য। মেয়েটির তখন মাত্র আট বছর বয়স, কিন্তু এরই মধ্যে সে লিভারের এক দুরারগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত। থেকে থেকেই পেটে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হতো ওর। গ্রাম আর সদরের ডাক্তার জানিয়ে দেয় নিরাময়ের একমাত্র উপায় অপারেশন, কিন্তু সেই বিশেষ অপেরেশনের ব্যবস্থা ওখানকার হাসপাতালে নেই। তাই কলকাতায় আসা ওদের। কিন্তু কলকাতার কোনো হাসপাতালে জায়গা পাওয়া যায় না। দু’দিন ধরে শহরের সব সাধ্যের মধ্যে থাকা হাসপাতাল ঘুরেও কোনো লাভ হয় না। এদিকে যাতায়াতের ধকলেই হোক বা অন্য কোনো কারনে, মেয়েটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে।

একটু থেমে বিরতি নিয়ে দেবিকা আবার বলতে শুরু করে, পরদিন এক বেসরকারি হাসপাতাল এডমিট নেয়। পুনরায় পরীক্ষা হয় মেয়েটির লিভারের। তারপর ডাক্তাররা জানায় অপারেশনের খরচ হবে নয় লক্ষ টাকা। মেয়েটির বাবা-মায়ের তো মাথায় হাত। এতো টাকার নাম পর্যন্ত তারা কোনোদিন শোনেনি, চোখে দেখা তো দূর। টাকা পয়সা যা এনেছিল তারা সেসব এই ক’দিনে থাকা-খাওয়া আর আলট্রাসনগ্রাফিতেই জলের মতো বেরিয়ে গেছে। তাদের অনেক কাকুতি-মিনতিতে একটুও কর্ণপাত করলো না ব্যবসা করতে আসা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ব্যর্থ মনোরথে চরম হতাশ হয়ে তারা বেরিয়ে আসে রাস্তায়। আসলে মেয়েটির লিভারে একটা টিউমার হয়েছিল যা সময় মতো অপারেশন না করতে পারলে ক্যানসার হয়ে যাবে। এই অচেনা শহরে কার কাছে সাহায্য চাইবে তারা বুঝতে পারে না। সবাই অবজ্ঞার চোখে মুখ ফিরিয়ে নেয়। অগত্যা মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়া দুই অসহায় বাবা-মা মেয়েটিকে রাস্তার ধারের এক দোকানের বেঞ্ছিতে বসিয়ে রেখে মাঝরাস্তায় এক চলন্ত বাসের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে স্বেচ্ছা মৃত্যু গ্রহণ করে। মেয়েটি  কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভিড় জমে যায় রাস্তায়। পথচারীরা সবাই বলাবলি করে, নাহ স্পট ডেড। তখন সেই অসহায় ভাবে বাবা মায়ের রক্তাক্ত মৃতদেহকে আঁকড়ে ধরে সমানে কেঁদে চলা ছোট্ট মেয়েটিকে সাহায্য বা সহানুভুতির হাত বাড়িয়ে দেয় লম্বা, পেটানো চেহারার ঝকঝকে চোখের এক যুবক। সে ওই সদ্য মা-বাবা হারানো মেয়েটিকে কোলে তুলে নিয়ে পরম স্নেহের সঙ্গে কান্না ভুলিয়ে চোখ মুছিয়ে দিয়ে ওকে নিয়ে যায় এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে। যুবকটি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে মৃত দম্পতির সৎকার সম্পন্ন করে। - এতটা বলে দেবিকা থামল। ওর দু’চোখ দিয়ে অশ্রুধারা গাল বেয়ে অঝোরে গড়িয়ে পড়ছে। 
থেমে থেমে সজল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, সেই যুবকটি এখন পরিপূর্ণ মানুষ একজন। চেহারায় সামান্য কিছু পরিবর্তন এলেও সেই দুই উজ্জ্বল দৃঢ় চোখ একটুও পাল্টায় নি। 

উত্তেজনায় স্তম্ভিত আমি দরদর করে ঘামছি। এই দেওয়াল ফুঁড়ে কোনো জিন-দানব বেরিয়ে এলেও এতো হতবাক হতাম না। 
মুহূর্তের মধ্যে আমি স্মৃতির সরণীতে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম তেরো বছর আগের সেই দিনে। তখন আমি এমএ ফার্স্ট ইয়ার। বাড়ি বাড়ি টিউশনি করে পার্ট টাইম আয় করি আর কলেজ স্ট্রিটের একটা মেসবাড়িতে থাকি। এরকমই লেকটাউনের একটা বাড়িতে পড়িয়ে রাস্তার ধারের একটা কচুরির দোকানে বসেছিলাম টিফিন করতে। দেখি বেঞ্চিতে আমার পাশে অদুরে বসে একটি আট-দশ বছরের ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে আমার হাতে ধরা কছুরি-আলুর দমের শালপাতার দিকে জুলজুল করে তাকিয়ে। মেয়েটির পরনে একটা ময়লা ফ্রক, মেয়েটা রোগা হলেও বেশ ফর্সা আর চোখদুটো বেশ ডাগর, মায়াভরা। ওকে দেখে আমার করুনা হল।
হেসে নরম স্বরে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার খিদে পেয়েছে ? কচুরি খাবে ?
মেয়েটি একটু লজ্জা পেয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল। 
আমি আরও দুটো কচুরি চেয়ে ওকে দিলাম খেতে। বেশ ক্ষুধার্ত ছিল, গোগ্রাসে খেতে লাগল। সহসা একটা ধরাম শব্দ আর সেই সাথে লোকজনের কোলাহল শুনে রাস্তার দিকে চোখ গেল। একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে। সবাই বলাবলি করছে দুজন স্বামী-স্ত্রী বাসের সামনে দাঁড়িয়ে আত্মহত্যা করেছে। মেয়েটি ছুটে গেল সেদিকে। আমিও গেলাম। 
মেয়েটি ক্রমাগত রাস্তায় লুটিয়ে থাকা দুটো মৃতদেহকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলছে, ও মা, ও বাবা চোখ খোলো না ! আমার মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। হৃদয় ভীষণই কেঁপে উঠল এই দৃশ্য দেখে। ফুলের মতো নিষ্পাপ মেয়েটিকে কোলে তুলে নিয়ে বিভিন্ন ভাবে সান্ত্বনা দিতে লাগলাম আর ভাবছিলাম ভগবান তুমি এতো নিষ্ঠুর কেন ? এই ছোট্ট মেয়েটিকে এভাবে কষ্ট দিলে ?
 ওকে নিয়ে আমার চেনাজানা এক এনজিওতে চলে গেলাম। নাম জিজ্ঞেস করায় মেয়েটি বলেছিল কিছু একটা, কিন্তু সেটা এখন আমার মনে নেই। ওর মা-বাবার শেষকৃত্য সম্পন্ন করে মেয়েটিকে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে ভর্তি করে দিই। ওকে বিদায় জানিয়ে চলে আসি, আর কোনো খোঁজ নেওয়া হয়নি আর। 

আমি বিস্মিত চোখে ধরা ধরা গলায় বললাম, তুমিই সেই মেয়েটি  ? দেবিকা তুমিই সেই দিনের... আমার কথা শেষ হওয়ার আগে দেবিকা আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কেঁদে উঠে বললো, হ্যাঁ হ্যাঁ আমি উজান, আমিই সেই ছোট্ট মেয়েটি। 
[+] 8 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: এসকর্ট সার্ভিস - by Mr Fantastic - 05-12-2020, 09:32 PM



Users browsing this thread: 15 Guest(s)