03-12-2020, 05:23 PM
#অন্য_রূপকথা
শনিবার, ঠিক ভূতের ঢেলা মারা দুপ্পুরবেলা, আমার মনটা বড্ড খারাপ হয়ে গেল।
ক'দিন ধরেই একটি বিশেষ জিনিসের প্রত্যাশায় ছিলাম। ভীষন ভাবে অপেক্ষায় ছিলাম তার। কিন্তু, শনিবার ই জানতে পারলাম আমার প্রতীক্ষা আরও প্রলম্বিত হতে চলেছে। মুষড়ে পড়েছিলাম বেশ! আর মন খারাপ হলেই আমি যা করি, যেমন তেমন ভাবে রেডি হয়ে, বেরিয়ে পড়ি বাড়ি থেকে। আমাদের শহর এত্ত সুন্দর, ঠিক কোনো না কোনো দিকশুন্যপুর ঠিক জুটে যায় আমার, প্রতিবার!
তা, কাল গেছিলাম ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম। কোভিড পরবর্তী, 'নিউ নর্ম্যাল' গাইডলাইন মেনে সদ্যই খুলেছে মিউজিয়াম। খুব কম মানুষই ছিলেন ওখানে। আর, আমি গিয়েই ঢুকে গেলাম আমার সবচেয়ে প্রিয় কক্ষ, ভারতীয় পুরাতত্ত্বের হলে। ঘন্টাখানেক পরে, দেখে, ফটো তুলে, নোট নিয়ে, বড্ড হাঁপিয়ে গেছিলাম। তাই যে মাঠটি আছে মিউজিয়ামের মাঝে, তার কাছাকাছি একটি বেঞ্চে বসে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলাম। জল-টল খাচ্ছিলাম। ফাঁকা চত্বর। আকাশ থেকে সুয্যি মামা বিদায় নিয়েছেন ততক্ষণে...শুধু, উনি ছিলেন জানান দেবার জন্য একটা হাল্কা লাল রেখা রেখে গেছেন আকাশে। দুটো শালিখ পাখি খেলছিল নিজেদের মতো।
আমার মন খারাপ কাটছিল না কিছুতেই।
হঠাৎ শুনি, শিশুকন্ঠের চিৎকার "টাটা! বাই! বাই! আবার যেন দেখা পাই!"
আমি ভাবলাম 'এ আবার কি!"
তাকিয়ে দেখি, একটি নিতান্ত শিশু...কত হবে? বছর সাত বা আট? আকাশের দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে নেড়ে 'টাটা বাই বাই' করছে। একটু দূরে দুজন বসে আছেন। ওর বাবা-মা হবেন।
কেন জানি না, মন টা খুব ভালো হয়ে গেল। পায়ে পায়ে ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে বললাম, "তোমার নাম কি?"
লজ্জা লজ্জা মুখে বলল "সোহিনী"।
"কোন ক্লাসে পড়ো?"
"ক্লাস থ্রি। এখন ছুটি!"
ছুটি! আহা রে! এই হতভাগা করোনা যে কেন এলো!
কি মনে হতে জিজ্ঞেস করলাম "তুমি কাকে টাটা করলে?"
একগাল হেসে মেয়েটি বলল "কেন? একটা প্লেন যাচ্ছিল তো...ওকে..."
এবার আমার অবাক হবার পালা। বলে উঠলাম, "কিন্তু প্লেন তো অনেএএএক দূরে আর উঁচুতে...তোমার কথা তো শুনতে পাবে না!"
আমার দিকে হতাশ চোখে তাকিয়ে মেয়েটি বলে উঠল "ওমা, আমি তো প্লেনের জন্য 'টাটা' করিনি! আমার করতে ইচ্ছে হয়েছে, ভালো লাগে, তাই করেছি। প্লেন দেখল কি না দেখল তাতে আমার কি?"
একটা ঝটকা লাগল যেন! নিউ নর্ম্যাল নিয়ম অগ্রাহ্য করে ওর মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিলাম। তারপর আমার সেই বেঞ্চিতে এসে বসলাম আবার।
কী গভীর কথা, তাই না?
আমার করতে ইচ্ছে হয়েছে, ভালো লাগে, তাই! অপরপক্ষের দেখা না দেখায় যায় আসে না কিছু!
অনেকটা যেন "কর্মন্যে বাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন"...।
কাজ টা করা পর্যন্ত আমার অধিকার। তারপরে আমার না।
বুক ভরে শ্বাস নিলাম একটা।
যে কাজের জন্য প্রতীক্ষায় ছিলাম, আমি নিজে নিজের যোগ্যতা এবং এফোর্ট নিয়ে সন্তুষ্ট...আর সেই সন্তুষ্টি...সেই ভালো লাগা তো আমার ই, আমার একার সম্পদ! আর অন্যের সিদ্ধান্ত, যা আমার একার নয়, সেজন্য আমি মনখারাপ করে বসে ছিলাম?
ধ্যাত!
পায়ে পায়ে সেই শিশু ভোলানাথ তখন আবার উঠে এসেছে মা বাবার পাশ টি থেকে। দৌড়চ্ছে...যেন উড়ছে পরীর মতো...
বড্ড ভালো লাগছিল আমার সবকিছু... ভালো লাগছিল এই পৃথিবীটাকে...যেখানে অবিরাম ঘটে যাচ্ছে রূপকথা...শুধু হাত বাড়ানোর অপেক্ষায়....।।
শনিবার, ঠিক ভূতের ঢেলা মারা দুপ্পুরবেলা, আমার মনটা বড্ড খারাপ হয়ে গেল।
ক'দিন ধরেই একটি বিশেষ জিনিসের প্রত্যাশায় ছিলাম। ভীষন ভাবে অপেক্ষায় ছিলাম তার। কিন্তু, শনিবার ই জানতে পারলাম আমার প্রতীক্ষা আরও প্রলম্বিত হতে চলেছে। মুষড়ে পড়েছিলাম বেশ! আর মন খারাপ হলেই আমি যা করি, যেমন তেমন ভাবে রেডি হয়ে, বেরিয়ে পড়ি বাড়ি থেকে। আমাদের শহর এত্ত সুন্দর, ঠিক কোনো না কোনো দিকশুন্যপুর ঠিক জুটে যায় আমার, প্রতিবার!
তা, কাল গেছিলাম ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম। কোভিড পরবর্তী, 'নিউ নর্ম্যাল' গাইডলাইন মেনে সদ্যই খুলেছে মিউজিয়াম। খুব কম মানুষই ছিলেন ওখানে। আর, আমি গিয়েই ঢুকে গেলাম আমার সবচেয়ে প্রিয় কক্ষ, ভারতীয় পুরাতত্ত্বের হলে। ঘন্টাখানেক পরে, দেখে, ফটো তুলে, নোট নিয়ে, বড্ড হাঁপিয়ে গেছিলাম। তাই যে মাঠটি আছে মিউজিয়ামের মাঝে, তার কাছাকাছি একটি বেঞ্চে বসে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলাম। জল-টল খাচ্ছিলাম। ফাঁকা চত্বর। আকাশ থেকে সুয্যি মামা বিদায় নিয়েছেন ততক্ষণে...শুধু, উনি ছিলেন জানান দেবার জন্য একটা হাল্কা লাল রেখা রেখে গেছেন আকাশে। দুটো শালিখ পাখি খেলছিল নিজেদের মতো।
আমার মন খারাপ কাটছিল না কিছুতেই।
হঠাৎ শুনি, শিশুকন্ঠের চিৎকার "টাটা! বাই! বাই! আবার যেন দেখা পাই!"
আমি ভাবলাম 'এ আবার কি!"
তাকিয়ে দেখি, একটি নিতান্ত শিশু...কত হবে? বছর সাত বা আট? আকাশের দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে নেড়ে 'টাটা বাই বাই' করছে। একটু দূরে দুজন বসে আছেন। ওর বাবা-মা হবেন।
কেন জানি না, মন টা খুব ভালো হয়ে গেল। পায়ে পায়ে ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে বললাম, "তোমার নাম কি?"
লজ্জা লজ্জা মুখে বলল "সোহিনী"।
"কোন ক্লাসে পড়ো?"
"ক্লাস থ্রি। এখন ছুটি!"
ছুটি! আহা রে! এই হতভাগা করোনা যে কেন এলো!
কি মনে হতে জিজ্ঞেস করলাম "তুমি কাকে টাটা করলে?"
একগাল হেসে মেয়েটি বলল "কেন? একটা প্লেন যাচ্ছিল তো...ওকে..."
এবার আমার অবাক হবার পালা। বলে উঠলাম, "কিন্তু প্লেন তো অনেএএএক দূরে আর উঁচুতে...তোমার কথা তো শুনতে পাবে না!"
আমার দিকে হতাশ চোখে তাকিয়ে মেয়েটি বলে উঠল "ওমা, আমি তো প্লেনের জন্য 'টাটা' করিনি! আমার করতে ইচ্ছে হয়েছে, ভালো লাগে, তাই করেছি। প্লেন দেখল কি না দেখল তাতে আমার কি?"
একটা ঝটকা লাগল যেন! নিউ নর্ম্যাল নিয়ম অগ্রাহ্য করে ওর মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিলাম। তারপর আমার সেই বেঞ্চিতে এসে বসলাম আবার।
কী গভীর কথা, তাই না?
আমার করতে ইচ্ছে হয়েছে, ভালো লাগে, তাই! অপরপক্ষের দেখা না দেখায় যায় আসে না কিছু!
অনেকটা যেন "কর্মন্যে বাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন"...।
কাজ টা করা পর্যন্ত আমার অধিকার। তারপরে আমার না।
বুক ভরে শ্বাস নিলাম একটা।
যে কাজের জন্য প্রতীক্ষায় ছিলাম, আমি নিজে নিজের যোগ্যতা এবং এফোর্ট নিয়ে সন্তুষ্ট...আর সেই সন্তুষ্টি...সেই ভালো লাগা তো আমার ই, আমার একার সম্পদ! আর অন্যের সিদ্ধান্ত, যা আমার একার নয়, সেজন্য আমি মনখারাপ করে বসে ছিলাম?
ধ্যাত!
পায়ে পায়ে সেই শিশু ভোলানাথ তখন আবার উঠে এসেছে মা বাবার পাশ টি থেকে। দৌড়চ্ছে...যেন উড়ছে পরীর মতো...
বড্ড ভালো লাগছিল আমার সবকিছু... ভালো লাগছিল এই পৃথিবীটাকে...যেখানে অবিরাম ঘটে যাচ্ছে রূপকথা...শুধু হাত বাড়ানোর অপেক্ষায়....।।