02-12-2020, 03:51 PM
কি বলে এই রিক্সা চালক , এটা মিয়াঁ বাড়ি , অসম্ভব দু পাশে পুকুর ছিলো বিশাল বিশাল , প্রায় দুই বিঘা করে এক এক টা পুকুর । মাঝে খোয়া বিছানো রাস্তা , রাস্তার দুই পাশে সাড়ি সাড়ি নারকেল গাছ । অথচ রিক্সা ওয়ালা আমাকে এনে একটা সরু গলির সামনে এনে নামিয়ে দিলো । ১০০ টাকা ভারা আদায় করে চলে ও গেলো । একটা সরু রাস্তাটা খুব বেশি হলে ৭ ফুট হবে পাশে । অথচ মিয়াঁ বাড়ির রাস্তা ২০ ফুট এর বেশি ছিলো । সরু গলির দু পাশে দালান উঠছে লম্বা করে । বোঝা গেলো দোকান হবে ।
“ ভাই এইটাই কি মিয়াঁ বাড়ির রাস্তা “ কর্মরত এক রাজমিস্ত্রি কে জিজ্ঞাস করলাম । প্রথমবার উত্তর দিলো না । দ্বিতীয়বার জিজ্ঞাস করতেই তার সারগেদ জবাব দিলো
“ এই রস্তা ধইরা সোজা চইলা জান পাইবেন “
আমি ঢুকলাম সেই শুরু গলিতে । হ্যাঁ একটু একটু পরিচিত মনে হচ্ছে এখন । দুই পাশে দুটি পুকুর এর কংকাল পড়ে আছে । জঙ্গুলে লতা পাতা দিয়ে এমন ভাবে ঢেকে আছে যে একটা মানুষ অনায়েসে এর উপর দিয়ে হেঁটে যেতে পারবে । আমার এই বিশ্বাস কে সত্য প্রমানিত করতেই মনে হয় একটি কুকুর কে দেখলাম কোন কিছুর পিছু নিতে ওই লতা পাতার উপর ভর করে । ঠিক পুকুর এর মাঝ বরাবর ।
ওই তো দেখা যাচ্ছে দোতলা দালান এর ছাদের কার্নিশ । শ্যাওলা পড়ে বট গাছ গজিয়ে একটা জঙ্গল ভাব চলে এসেছে । অথচ আজমত চাচা কে তিন্ মাস আগে দের লক্ষ্য টাকা পাঠিয়েছি আমি বাড়ি মেরামত এর জন্য । চাচা নিজেই চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন যে দালান মেরামত না করলে আর থাকা যাচ্ছে না ।
রাস্তার শেষে এবং বাড়িতে ঢোকার পথে একটি বাছুর বাধা দেখলাম । আর সেই বাছুর কে খাবার দিচ্ছে একটি মেয়ে । পড়নে ঘিয়ে রং এর সাড়ি ।
“ এই যে শুনছেন “ আমি ডাকতেই মেয়েটি ঘুরে তাকালো । আমি একটা ধাক্কা খেলাম বড়সড় । রাবু , এ তো আমাদের রাবু । কিন্তু রাবু বয়স তো এতো কম হওয়ার কথা না । এই মেয়ের বয়স খুব বেশি হলে ২৫-২৬ হবে । রাবু আমার চেয়ে ২ বছর এর বড় ছিলো । আমার দাদার এক জন দূরসম্পর্কের ভাই এর নাতনী ছিলো রাবু , দাদার ওই ভাই পরিবার নিয়ে আমাদের বাড়িতেই থাকতো , কাজ করতো ক্ষেতে । আব্বু যখন এখানকার পাঁট চুকিয়ে চলে গেলো দাদার ওই ভাই ই এই বাড়ির দেখা শুনার দায়িত্বে ছিলো এখন তার ছেলে আজমত চাচা আছেন ।
“ কারে চান ?” চিকন ঝাঝালো কন্ঠে জিজ্ঞাস কলো মেয়েটি
মেয়েটির প্রশ্ন শুনে আমি সম্বিৎ ফিরে পেলাম তবে চোখ ফেরাতে পারলাম না । “ আজমত চাচা আছেন ?”
“ নানা জান বাইরে গেছে আপনে পড়ে আসেন “ মেয়েটি আবার বাছুর কে খাবার দিতে ব্যেস্ত হয়ে পড়লো । আমি অবাক হয়ে দেখতে লাগলাম মেয়েটি কে । সেই নাক চোখ মুখের গরন , দুধে আলতা গায়ের রং , শরীর এর বাধন ও এক , বেশ ছড়ানো পাছা , গোল মতন আর ভারি । কুঁজো হয়ে থাকার কারনে পাছার গড়ন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে । মেয়েটি মনে হয় আমার চাহনি টের পেয়েছে তাই আবার পিছনে ফিরে তাকালো , চোখে মুখে বিরক্তি
“ আপনে কি কিছু কইবেন ?”
“জী আমি আজমত চাচার কাছে এসেছি “
“ বললাম তো উনি বাড়ি নাই “
মেয়েটির গলার স্বর কঠিন হয়ে আসছে মনে হচ্ছে অনেক রেগে যাচ্ছে । তাই আমি ব্যাপারটা পরিষ্কার করতে চাইলাম ।
“ আসলে আমি এখানে থাকতে এসেছি “
“ থাকতে আসছেন মানে ? আপনে এইখানে থাকবেন ক্যান ? এইটা কি কোন হোটেল? “
মেয়েটির এমন রেগে যাওয়া দেখে একটু ভরকে গেলাম । কি বলবো বুঝতে পারলাম না , কিভাবে বলবো এই বাড়ির মালিক আমি । অবশ্য বাড়িটিকে নিজের বলে আজকাল আর মনেও হয় না । “ আমি আজমত চাচার পরিচিত “
“তাইলে আপনের আজমত চাচার কাছে জান আমার কাছে বইলা কোন লাভ নাই “ এই বলে মেয়েটি গট গট করে চলে গেলো , আমি রাস্তায় দারিয়েই মেয়েটির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম । হাটার তালটা একদম রাবুর মতো । কেমন জানি একটু নেচে নেচে হাটা। হঠাত আমার মাথায় এলো মেয়েটি আজমত চাচা কে নানা জান বলছে , এর মানে মেয়েটি রাবুর ই মেয়ে । রাবু ছাড়া আজমত চাচার কোন মেয়ে ছিলো না । আসলে এতো বছর একা একা এসব সম্পর্ক থেকে দূরে থাকার কারনে বুঝতে একটু দেরিই হয়েছে । নয়তো আমার প্রথম ই বোঝা উচিৎ ছিলো এটা রাবুর মেয়ে । তাহলে কি রাবুও এদিকেই আছে নাকি মেয়ে বেড়াতে এসেছে সুধু , আসলে আজমত চাচার সাথে ওনার পরিবার নিয়ে আমার তেমন কথা হয় না তাই কে কি অবস্থায় আছে সেটাও জানা নাই ।
রাবুর উপস্থিতি থকার সভাবনা আমাকে নতুন করে একটু ভাবিয়ে তুলল , কেমন আছে রাবু , আর এখন দেখতেও বা কেমন হয়েছে । একসময় আমার মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার মতো রুপের অধিকারিনির উপর বয়স তার থাবা কতটা বসাতে পেরেছে সেটা দেখার খুব আগ্রহ হছে। আবার অন্য দিকে এতদিন পর দেখা হলে পরিস্থিতি কেমন হবে সেটাও বুঝতে পারলাম না ।
“ কে আপনে ?”
ধ্যান ভাংলো পেছন থেকে একজন পুরুষ মানুষ এর কণ্ঠ শুনে । পেছনে তাকিয়ে দেখি সাদা পাঞ্জাবি আর লুঙ্গী পড়া এক লোক মুখ ভর্তি সাদা চাপ দাড়ি , মাথায় নৌকা আকৃতির সাদা টুপি ।
“এইখানে দাঁড়াইয়া আসেন যে “
“ আমি মিয়াঁ বাড়ি এসেছি আজমত চাচার কাছে “
“নাম কি আপনের ? আইসেন কুনহান থেইকা ?”
“ আমার নাম সরিফ “ বাকি টুকু আর বলতে হলো না মনে হলো বুড়ো লোকটি এক লাফে মাটি থেকে তিন হাত উপরে উঠে গেলো ।
“ আরে ছোট মিয়াঁ আপনে রাস্তায় দাঁড়াইয়া ক্যান , আমারে তো একটা খবর ও দেন নাই , আহারে ক্যামনে আইলেন এই পর্যন্ত ?”
বুঝতে বাকি রইলো না এই লোকটি ই আজমত চাচা “ না না চাচা আসতে আসুবিধা হয়নি , বাসে বাজার পর্যন্ত এসে রিক্সায় চলে আসছি “
“ আহা রে আমারে একটা খবর দিলে আমি বাজারে গিয়ে বইয়া থাকতাম “ তারপর লাগেজ আর কাঁধ ব্যাগ আমার কাছ থেকে প্রায় ছোঁ মেরে নিয়ে বলল “ আহেন আহেন বিতরে আহেন “
চাচা বয়সে কম করে হলেও আমার চেয়ে বয়সে ৩০ বছরের বড় হবেন । কিন্তু হাটায় ওনার সাথে পেরে ওঠার জো নেই আমার । আমার আনা লাগেজ আর কাঁধ ব্যাগটি নিয়েও ওনার গতি আমার প্রায় দ্বিগুণ । বাড়িতে ঢুকেই হাঁক ছারতে লাগলেন । “ কইরে ঝুমা কই গেলি পোড়াকপালনি এদিকে আয় দেখ কে আইসে “ বাক্য শেষ হতে না হতেই আবার ডাক শুরু করলেন আজমত চাচা ঝুমা নামের মেয়েটিকে কোন উত্তর দেয়ার সুযোগ না দিইয়েই “ ওই ঝুমা গেলি কই “ নিজেই আমার ব্যাগ দুটো আমাদের পুরনো বৈঠক খানার ফাটল ধরা বারান্দায় রাখলো ।
চাচার ডাকে ঝুমা না এলেও একটি ৭-৮ বছরের বালক বেড়িয়ে এলো কালো গায়ের রং লিক লিকে দেহের মাঝে কেউ যেন বেলুন এর মতো ফুলা একটা পেট বসিয়ে দিয়েছে আর সেই পেটের নিচের দিকে বোতলের কর্ক এর মতো ফুলে ওঠা নাভি ।
“ মায় গরুর খাওন দেয় বড় আব্বা”
“ শিগগীর যা তো বাজান তোর মায় রে ডাইকা আন শিগগীর যা “ ছেলেটি যাওয়ার জন্য দৌর শুরু করতেই ধমকে উঠলেন আজমল চাচা “ওই হারামজাদা সালাম করলি না তোর নানা লাগে “
খুব অস্বস্তি অনুভব হলো নানা শব্দটি শুনে , আমি কারো নানা শুনতেই কেমন জানি লাগে “ থাক থাক বাবা লাগবে না তুমি যাও “ সালাম করতে আসা কালো ছেলেটিকে কোন রকমে বিরত করলাম । কিন্তু আজমত চাচা গর্জে উঠলো
“ লাগবো না মানে অবশ্যই লাগবো কর সালাম কর “ অনেকটা আজমত চাচার ভয়েই সালাম গ্রহন করলাম আমার “নাতির”!!!!!!। সালাম গ্রহন করতে করতেই সেই মেয়েটি চলে এলো কোমরে গোজা আঁচল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে । “ কি হইসে কে মরসে “ এসেই খেঁকিয়ে উঠলো তারপর আমাকে দেখে থেমে গেলো ।
“ কি হইসে মানে মেহমান বাইরে খারাইয়া রইসে , আর তুই বলস কি হইসে “
“ ইনি যে মেহমান সেইটা তো আমারে বলতে হইব , আইয়া ভোন্দার মতন খারাইয়া থাকলে হইব”
“ ওই ছেড়ি সাবধানে কথা ক জানস ইনি কে উনি আমাগো ছোট মিয়াঁ “
“ ছোট মিয়াঁ হইলে উনি মেহমান হইব ক্যান উনি তো বাড়ির মালিক , আমরা অনাগো চাকর বাকর “ কথা বার্তায় রাবুর ছায়া স্পষ্ট মেয়েটির মাঝে , রাবু নিজেও এমন ত্যাড়া বাঁকা কথা বলতো
“ হইসে মুখপুড়ি ওনার লইগা ঘর পরিষ্কার কর “
“ কোন ঘর দালানের নাকি বৈঠক খানার”
“ দালানের ঘর পরিষ্কার করবি আবার কি , উনি কি বৈঠক খানায় থাকবো , বাড়ির পোলা কোনদিন বৈঠক খানায় থাকে? “
“ দালানে ঘর কোনটা ঠিক করমু একটা ঘর ও ঠিক নাই সাপ খোপ ও থাকতে পারে”
এবার একটু চুপসে গেলো আজমত চাচা , নিচু গলায় কি যেন বলল ঝুমা নামের মেয়েটিকে । ঝুমা গজ গজ করতে করতে চলে গেলো । আজমত চাচা আমার দিকে চেয়ে একটা অপ্রস্তুত হাসি দিলো । আমি বুঝতে পারলাম আজমত চাচা আমার কাছ থেকে আনা টাকার একটি পয়সা ও মিয়াঁ বাড়ি মেরামত এর কাজে ব্যাবহার করেন নি ।
“ কিছু মনে করবেন না ছোট মিয়াঁ , ওই একটু এমন ই একদম মায়ের মতো হইসে , রাবুরে তো আপনে দেখসেনই কিমুন ঘাড় তেড়া আসিলো”
“না না কিছু মনে করিনি “ এই বলে আমি বাড়িটার চার পাশ চোখ বুলিয়ে দেখতে লাগলাম ।
“ ভাই এইটাই কি মিয়াঁ বাড়ির রাস্তা “ কর্মরত এক রাজমিস্ত্রি কে জিজ্ঞাস করলাম । প্রথমবার উত্তর দিলো না । দ্বিতীয়বার জিজ্ঞাস করতেই তার সারগেদ জবাব দিলো
“ এই রস্তা ধইরা সোজা চইলা জান পাইবেন “
আমি ঢুকলাম সেই শুরু গলিতে । হ্যাঁ একটু একটু পরিচিত মনে হচ্ছে এখন । দুই পাশে দুটি পুকুর এর কংকাল পড়ে আছে । জঙ্গুলে লতা পাতা দিয়ে এমন ভাবে ঢেকে আছে যে একটা মানুষ অনায়েসে এর উপর দিয়ে হেঁটে যেতে পারবে । আমার এই বিশ্বাস কে সত্য প্রমানিত করতেই মনে হয় একটি কুকুর কে দেখলাম কোন কিছুর পিছু নিতে ওই লতা পাতার উপর ভর করে । ঠিক পুকুর এর মাঝ বরাবর ।
ওই তো দেখা যাচ্ছে দোতলা দালান এর ছাদের কার্নিশ । শ্যাওলা পড়ে বট গাছ গজিয়ে একটা জঙ্গল ভাব চলে এসেছে । অথচ আজমত চাচা কে তিন্ মাস আগে দের লক্ষ্য টাকা পাঠিয়েছি আমি বাড়ি মেরামত এর জন্য । চাচা নিজেই চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন যে দালান মেরামত না করলে আর থাকা যাচ্ছে না ।
রাস্তার শেষে এবং বাড়িতে ঢোকার পথে একটি বাছুর বাধা দেখলাম । আর সেই বাছুর কে খাবার দিচ্ছে একটি মেয়ে । পড়নে ঘিয়ে রং এর সাড়ি ।
“ এই যে শুনছেন “ আমি ডাকতেই মেয়েটি ঘুরে তাকালো । আমি একটা ধাক্কা খেলাম বড়সড় । রাবু , এ তো আমাদের রাবু । কিন্তু রাবু বয়স তো এতো কম হওয়ার কথা না । এই মেয়ের বয়স খুব বেশি হলে ২৫-২৬ হবে । রাবু আমার চেয়ে ২ বছর এর বড় ছিলো । আমার দাদার এক জন দূরসম্পর্কের ভাই এর নাতনী ছিলো রাবু , দাদার ওই ভাই পরিবার নিয়ে আমাদের বাড়িতেই থাকতো , কাজ করতো ক্ষেতে । আব্বু যখন এখানকার পাঁট চুকিয়ে চলে গেলো দাদার ওই ভাই ই এই বাড়ির দেখা শুনার দায়িত্বে ছিলো এখন তার ছেলে আজমত চাচা আছেন ।
“ কারে চান ?” চিকন ঝাঝালো কন্ঠে জিজ্ঞাস কলো মেয়েটি
মেয়েটির প্রশ্ন শুনে আমি সম্বিৎ ফিরে পেলাম তবে চোখ ফেরাতে পারলাম না । “ আজমত চাচা আছেন ?”
“ নানা জান বাইরে গেছে আপনে পড়ে আসেন “ মেয়েটি আবার বাছুর কে খাবার দিতে ব্যেস্ত হয়ে পড়লো । আমি অবাক হয়ে দেখতে লাগলাম মেয়েটি কে । সেই নাক চোখ মুখের গরন , দুধে আলতা গায়ের রং , শরীর এর বাধন ও এক , বেশ ছড়ানো পাছা , গোল মতন আর ভারি । কুঁজো হয়ে থাকার কারনে পাছার গড়ন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে । মেয়েটি মনে হয় আমার চাহনি টের পেয়েছে তাই আবার পিছনে ফিরে তাকালো , চোখে মুখে বিরক্তি
“ আপনে কি কিছু কইবেন ?”
“জী আমি আজমত চাচার কাছে এসেছি “
“ বললাম তো উনি বাড়ি নাই “
মেয়েটির গলার স্বর কঠিন হয়ে আসছে মনে হচ্ছে অনেক রেগে যাচ্ছে । তাই আমি ব্যাপারটা পরিষ্কার করতে চাইলাম ।
“ আসলে আমি এখানে থাকতে এসেছি “
“ থাকতে আসছেন মানে ? আপনে এইখানে থাকবেন ক্যান ? এইটা কি কোন হোটেল? “
মেয়েটির এমন রেগে যাওয়া দেখে একটু ভরকে গেলাম । কি বলবো বুঝতে পারলাম না , কিভাবে বলবো এই বাড়ির মালিক আমি । অবশ্য বাড়িটিকে নিজের বলে আজকাল আর মনেও হয় না । “ আমি আজমত চাচার পরিচিত “
“তাইলে আপনের আজমত চাচার কাছে জান আমার কাছে বইলা কোন লাভ নাই “ এই বলে মেয়েটি গট গট করে চলে গেলো , আমি রাস্তায় দারিয়েই মেয়েটির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম । হাটার তালটা একদম রাবুর মতো । কেমন জানি একটু নেচে নেচে হাটা। হঠাত আমার মাথায় এলো মেয়েটি আজমত চাচা কে নানা জান বলছে , এর মানে মেয়েটি রাবুর ই মেয়ে । রাবু ছাড়া আজমত চাচার কোন মেয়ে ছিলো না । আসলে এতো বছর একা একা এসব সম্পর্ক থেকে দূরে থাকার কারনে বুঝতে একটু দেরিই হয়েছে । নয়তো আমার প্রথম ই বোঝা উচিৎ ছিলো এটা রাবুর মেয়ে । তাহলে কি রাবুও এদিকেই আছে নাকি মেয়ে বেড়াতে এসেছে সুধু , আসলে আজমত চাচার সাথে ওনার পরিবার নিয়ে আমার তেমন কথা হয় না তাই কে কি অবস্থায় আছে সেটাও জানা নাই ।
রাবুর উপস্থিতি থকার সভাবনা আমাকে নতুন করে একটু ভাবিয়ে তুলল , কেমন আছে রাবু , আর এখন দেখতেও বা কেমন হয়েছে । একসময় আমার মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার মতো রুপের অধিকারিনির উপর বয়স তার থাবা কতটা বসাতে পেরেছে সেটা দেখার খুব আগ্রহ হছে। আবার অন্য দিকে এতদিন পর দেখা হলে পরিস্থিতি কেমন হবে সেটাও বুঝতে পারলাম না ।
“ কে আপনে ?”
ধ্যান ভাংলো পেছন থেকে একজন পুরুষ মানুষ এর কণ্ঠ শুনে । পেছনে তাকিয়ে দেখি সাদা পাঞ্জাবি আর লুঙ্গী পড়া এক লোক মুখ ভর্তি সাদা চাপ দাড়ি , মাথায় নৌকা আকৃতির সাদা টুপি ।
“এইখানে দাঁড়াইয়া আসেন যে “
“ আমি মিয়াঁ বাড়ি এসেছি আজমত চাচার কাছে “
“নাম কি আপনের ? আইসেন কুনহান থেইকা ?”
“ আমার নাম সরিফ “ বাকি টুকু আর বলতে হলো না মনে হলো বুড়ো লোকটি এক লাফে মাটি থেকে তিন হাত উপরে উঠে গেলো ।
“ আরে ছোট মিয়াঁ আপনে রাস্তায় দাঁড়াইয়া ক্যান , আমারে তো একটা খবর ও দেন নাই , আহারে ক্যামনে আইলেন এই পর্যন্ত ?”
বুঝতে বাকি রইলো না এই লোকটি ই আজমত চাচা “ না না চাচা আসতে আসুবিধা হয়নি , বাসে বাজার পর্যন্ত এসে রিক্সায় চলে আসছি “
“ আহা রে আমারে একটা খবর দিলে আমি বাজারে গিয়ে বইয়া থাকতাম “ তারপর লাগেজ আর কাঁধ ব্যাগ আমার কাছ থেকে প্রায় ছোঁ মেরে নিয়ে বলল “ আহেন আহেন বিতরে আহেন “
চাচা বয়সে কম করে হলেও আমার চেয়ে বয়সে ৩০ বছরের বড় হবেন । কিন্তু হাটায় ওনার সাথে পেরে ওঠার জো নেই আমার । আমার আনা লাগেজ আর কাঁধ ব্যাগটি নিয়েও ওনার গতি আমার প্রায় দ্বিগুণ । বাড়িতে ঢুকেই হাঁক ছারতে লাগলেন । “ কইরে ঝুমা কই গেলি পোড়াকপালনি এদিকে আয় দেখ কে আইসে “ বাক্য শেষ হতে না হতেই আবার ডাক শুরু করলেন আজমত চাচা ঝুমা নামের মেয়েটিকে কোন উত্তর দেয়ার সুযোগ না দিইয়েই “ ওই ঝুমা গেলি কই “ নিজেই আমার ব্যাগ দুটো আমাদের পুরনো বৈঠক খানার ফাটল ধরা বারান্দায় রাখলো ।
চাচার ডাকে ঝুমা না এলেও একটি ৭-৮ বছরের বালক বেড়িয়ে এলো কালো গায়ের রং লিক লিকে দেহের মাঝে কেউ যেন বেলুন এর মতো ফুলা একটা পেট বসিয়ে দিয়েছে আর সেই পেটের নিচের দিকে বোতলের কর্ক এর মতো ফুলে ওঠা নাভি ।
“ মায় গরুর খাওন দেয় বড় আব্বা”
“ শিগগীর যা তো বাজান তোর মায় রে ডাইকা আন শিগগীর যা “ ছেলেটি যাওয়ার জন্য দৌর শুরু করতেই ধমকে উঠলেন আজমল চাচা “ওই হারামজাদা সালাম করলি না তোর নানা লাগে “
খুব অস্বস্তি অনুভব হলো নানা শব্দটি শুনে , আমি কারো নানা শুনতেই কেমন জানি লাগে “ থাক থাক বাবা লাগবে না তুমি যাও “ সালাম করতে আসা কালো ছেলেটিকে কোন রকমে বিরত করলাম । কিন্তু আজমত চাচা গর্জে উঠলো
“ লাগবো না মানে অবশ্যই লাগবো কর সালাম কর “ অনেকটা আজমত চাচার ভয়েই সালাম গ্রহন করলাম আমার “নাতির”!!!!!!। সালাম গ্রহন করতে করতেই সেই মেয়েটি চলে এলো কোমরে গোজা আঁচল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে । “ কি হইসে কে মরসে “ এসেই খেঁকিয়ে উঠলো তারপর আমাকে দেখে থেমে গেলো ।
“ কি হইসে মানে মেহমান বাইরে খারাইয়া রইসে , আর তুই বলস কি হইসে “
“ ইনি যে মেহমান সেইটা তো আমারে বলতে হইব , আইয়া ভোন্দার মতন খারাইয়া থাকলে হইব”
“ ওই ছেড়ি সাবধানে কথা ক জানস ইনি কে উনি আমাগো ছোট মিয়াঁ “
“ ছোট মিয়াঁ হইলে উনি মেহমান হইব ক্যান উনি তো বাড়ির মালিক , আমরা অনাগো চাকর বাকর “ কথা বার্তায় রাবুর ছায়া স্পষ্ট মেয়েটির মাঝে , রাবু নিজেও এমন ত্যাড়া বাঁকা কথা বলতো
“ হইসে মুখপুড়ি ওনার লইগা ঘর পরিষ্কার কর “
“ কোন ঘর দালানের নাকি বৈঠক খানার”
“ দালানের ঘর পরিষ্কার করবি আবার কি , উনি কি বৈঠক খানায় থাকবো , বাড়ির পোলা কোনদিন বৈঠক খানায় থাকে? “
“ দালানে ঘর কোনটা ঠিক করমু একটা ঘর ও ঠিক নাই সাপ খোপ ও থাকতে পারে”
এবার একটু চুপসে গেলো আজমত চাচা , নিচু গলায় কি যেন বলল ঝুমা নামের মেয়েটিকে । ঝুমা গজ গজ করতে করতে চলে গেলো । আজমত চাচা আমার দিকে চেয়ে একটা অপ্রস্তুত হাসি দিলো । আমি বুঝতে পারলাম আজমত চাচা আমার কাছ থেকে আনা টাকার একটি পয়সা ও মিয়াঁ বাড়ি মেরামত এর কাজে ব্যাবহার করেন নি ।
“ কিছু মনে করবেন না ছোট মিয়াঁ , ওই একটু এমন ই একদম মায়ের মতো হইসে , রাবুরে তো আপনে দেখসেনই কিমুন ঘাড় তেড়া আসিলো”
“না না কিছু মনে করিনি “ এই বলে আমি বাড়িটার চার পাশ চোখ বুলিয়ে দেখতে লাগলাম ।