Thread Rating:
  • 65 Vote(s) - 3.34 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance শেষের পাতায় শুরু (Completed)
পর্ব সাত – (#4-33)

 
প্রথমে জিনস পড়তে ইচ্ছে করেছিল ওর কিন্তু রিশু সাথে প্রথমবার কোন বড় রেস্তোরাঁতে ডিনারের জন্য বেড়িয়েছে সেই ভেবেই শাড়ি পড়েছিল। শালিনী সাহায্য না করলে শাড়ির কুঁচি আর আঁচল ঠিক ভাবে ভাঁজ করতে পারত না, এই নিয়ে শাড়ি পরার সময়ে বেশ হাসাহাসি হয় ওর আর শালিনীর। শালিনীকে দেখে মনেই হয়নি যে এরা অচেনা, অতি সহজেই মিশে গিয়েছিল ওর সাথে। ওকে জিজ্ঞেস করেছিল রিশুর কথা, নিপুন ভাবেই সেই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়েছিল ঝিনুক। নিজেদের সম্পর্কের ব্যাপারে বাইরের কারুর সামনে উজাগর করতে একদম ইচ্ছুক নয়, হয়ত হতে পারে যে এখন পর্যন্ত ওদের মাঝের বরফের দেয়াল গলেনি তবুও কোনদিন রিশু ওর সাথে খারাপ ব্যাবহার করেনি। এই শাড়িটা কে দিয়েছিল সেটা মনে নেই আর কখন নিজের সুটকেসে গুছিয়েছিল সেটাও আর ওর মনে নেই। নরম গালের ওপরে রিশুর উষ্ণ শ্বাসের ঢেউ আর কানের মধ্যে ওর সৌন্দর্যের প্রশংসা শুনে মাতাল হয়ে যায় ঝিনুক, খুব ইচ্ছে করে ওই বুকের ওপরে মাথা রাখতে, হয়ত গাড়িতে কেউ না থাকলে রিশুর বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে নিত।
 
নিচু গলায় উত্তর দেয় ঝিনুক, “শালিনী একটু হেল্প করল তাই।”

রিশু জিজ্ঞেস করে, “এর আগে ত এই শাড়িটা দেখিনি?”

মৃদু স্বরে উত্তর দেয় ঝিনুক, “ছিল একটা আমিও ঠিক জানতাম না।”
 
ঝিনুক মনে মনে বলে, হ্যাঁ কত যেন ওর আলমারি ঘেঁটে দেখেছে রিশু, নিজেও জানত না যে এই শাড়িটা আছে, হটাত করেই সুটকেস থেকে একটা টপ বার করার সময়ে চোখে পরে এই শাড়ি। এখন কিছু কিছু জামা কাপড় ওর সুটকেসে আছে, সম্পূর্ণ ভাবে গুছিয়ে উঠতে পারেনি নিজের গাফিলতির জন্য।
 
রাস্তায় গাড়ির জ্যামের ফলে হোটেল পৌঁছাতে বেশ দেরি হয়ে যায় ওদের। ওরা হোটেলে প্রবেশ করা মাত্রই ম্যানেজার, সুজিত নিজে এসে ওদের অভ্যর্থনা করে। এই হোটেলে এর আগেও বন্ধুদের সাথে ডিনারে এসেছে রিশু, তবে ঝিনুকের জন্য এইরকম হোটেলের রেস্টুরেন্টে প্রথমবার। সুজিত ওদের নিয়ে লিফটে করে ছাদে নিয়ে যায়। হোটেলের ছাদে সুইমিং পুলের পাশে ওদের জন্য আলাদা করে জায়গা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। যেহেতু ম্যানেজার শালিনীর পরিচিত তাই ওদের আপ্যায়ন অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি। সুইমিং পুলের একপাশে এক জায়গায় কাঠ জ্বালিয়ে একটা ছোট বনফায়ার তৈরি করা আর তার দুইপাশে বেশ বড় দুটো সোফা পাতা। সোফার পাশে দুই দিকে ছোট ছোট সাউন্ড বক্সে বেশ মৃদু সঙ্গীত বেজে চলেছে। মাথার ওপরে খোলা আকাশ, বেশ উঁচু বিল্ডিং হওয়ার ফলে দিল্লীর অনেক দুর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে ছাদ থেকে। একটু কুয়াসা আর গাড়ির ধোঁয়ায় এক আবছা আবরণ চারপাশে ছড়িয়ে, একটু দূরে রাস্তার ওপরে সারি সারি গাড়ির আলো দেখা যাচ্ছে। ঝিনুক এই সব দেখে অবাক হয়ে রিশুর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকে, ওর কাছে এইসব একদম নতুন।
 
সুজিত একটা বেশ বড় ফুলের তোড়া নিয়ে এসে রিশু আর ঝিনুকের হাতে তুলে দিয়ে হাত মিলিয়ে বলে, “আপনাদের মতন এতবড় বড় ডাক্তারদের আথিতিয়তা করা সৌভাগ্যের ব্যাপার।”

ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে ঝিনুক বেশ বিব্রতবোধ করে। ঝিনুকের বিব্রতবোধ কাটিয়ে রিশু সুজিতের সাথে আময়িক হেসে হাত মিলিয়ে বলে, “উই ডু জাস্ট আওয়ার ডিউটি, (আমরা শুধু মাত্র নিজেদের কর্তব্য করি।)” ইন্দ্রজিতের দিকে দেখে রিশু বলে, “সো দিস অয়াজ ইউর আইডিয়া?”

ইন্দ্রজিত মাথা নাড়ায়, “না রে আমার নয়, শালিনীর আইডিয়া।”

শালিনী ঝিনুককে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে, “হাউ ইজ দ্যা সারপ্রাইজ?”

ঝিনুক কি বলবে ভেবে পায়না, একবার রিশুর দিকে দেখে উত্তর দেয়, “সত্যি অবাক করে দিয়েছ।”

শালিনী ঝিনুককে বলে, “আমার বাড়িতে আমরা দুই বোন, ভাই বলে কেউ নেই, এই ডাক্তারি পড়তে এসে ভাইয়া কে পেয়েছি।” রিশুর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে ঝিনুককে বলে, “ওর ওপরে অনেক অত্যাচার করেছি।”

রিশু ওর কথা শুনে হেসে ফেলে, “এই সময়ে আবার শুরু হয়ে যেয় না যেন।”

চন্দ্রিকার ঘটনার আসল ব্যাখ্যা ঝিনুকের জানা নেই, তাই একবার রিশুর দিকে তাকিয়ে দেখে আর একবার শালিনীর দিকে তাকিয়ে দেখে।

ইন্দ্রজিত ওর অবাক মুখবয়াব দেখে হেসে ফেলে, “তুমি ওদের কথা ছাড়ো বস বস।”
 
একটা সোফায় পাশাপাশি রিশু আর ঝিনুক আগুনের অন্যপাশের সোফায় ইন্দ্রজিত আর শালিনী বসে পরে। খালি ছাদ পাশেই সুইমিং পুল, চারপাশ থেকে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া বয়ে আসছে সেই সাথে সামনে গনগনে কাঠের আগুনের তাপ এক ভিন্ন ধরনের উত্তাপ জাগিয়ে তোলে রিশু আর ঝিনুকের মাঝে। পাশে রাখা সাউন্ড বক্সে নতুন হিন্দি সিনেমার গান একটানা বেজে চলেছে। কনকনে ঠান্ডা হাওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে পরনের জ্যাকেট একটু বেশি করে গায়ে জড়িয়ে নেয় ঝিনুক। ঝিনুক অবাক চোখে চারপাশে তাকিয়ে দেখে, মাথার ওপরে খোলা আকাশ, সুইমিং পুলের অন্যপাশে কাঁচের দেয়ালের পেছনে রেস্টুরেন্ট, বছরের শেষের দিকের দিনে রেস্টুরেন্টে বেশ ভিড় সেই তুলনায় ওদের এই আয়োজন বেশ রোমান্টিক। শালিনী আর ইন্দ্রজিত না থাকলে হয়ত রিশুর বাজু জড়িয়ে শরীরের উত্তাপ গায়ে মাখিয়ে বসে থাকত।
 
রিশু একটু ঘন হয়ে বসে ঝিনুকের পাশে বসে জিজ্ঞেস করে, “ঠান্ডা লাগছে নাকি?”

মিষ্টি হেসে মাথা দোলায় রমণী, “না না ঠিক আছে, আগুনের তাপে বেশ ভালোই লাগছে।”

সুজিত কিছুক্ষন পরে হাতে একটা বোতল নিয়ে এসে ঝিনুককে দেখিয়ে বলে, “এটা আমার তরফ থেকে আপনার জন্য, স্যাটু দু বোরদে সেভেন্টি থ্রি।”

কলেজে থাকতে ঝিনুক মদ খেয়েছে ঠিক তবে ওর দৌড় ওই কয়েক পেগ হুইস্কি অথবা ভদকা। সুজিতের কথা বুঝতে না পেরে অবাক চোখে রিশুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “এটা কি?”

রিশু ওকে বুঝিয়ে বলে, “এটা ড্রাই ফ্রেঞ্চ ওয়াইন।” তারপরে সুজিতের দিকে তাকিয়ে ভদ্রতার খাতিরে বলে, “এতসব কেন করতে গেলেন?”

সুজিত আময়িক হেসে শালিনীর দিকে দেখে রিশুর প্রশ্নের উত্তরে বলে, “শালিনী ম্যাডাম আমাদের জন্য যা করেছেন তার জন্য সব কিছু দিতে পারি। ম্যাডাম না থাকলে আমার স্ত্রী আর মেয়ে কেউই হয়ত বাঁচত না। আমরা এক সময়ে সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম...” কথাটা বলতে বলতে গলা ধরে আসে সুজিতের।

শালিনী সোফা ছেড়ে উঠে সুজিতের হাত ধরে বলে, “এমন করে কেন বলছেন, ওটা আমাদের কর্তব্য আমাদের কাজ।”

সুজিত ধরা গলায় বলে, “ম্যাডাম আপনি ভগবান।”

সুজিত দুইজন ওয়েটারকে ডেকে বলে, “দিজ আর মাই গেস্ট, এদের আপ্যায়নে যেন কোন ত্রুটি না হয়। যাও লবস্টার নিয়ে এস।”

এবারে শালিনীর অবাক হওয়ার পালা, “এরপরে লবস্টার?”

সুজিত আময়িক হেসে বলে, “হ্যাঁ, গত কাল চারটে ক্রাব এসেছে অস্ট্রেলিয়া থেকে, খেলে বলবেন।”

ইন্দ্রজিত বলে ওঠে, “হ্যাঁ হ্যাঁ একটা ক্রাব, সিঙ্গেল মল্টের সাথে দারুন জমবে।”

রিশু চোখ পাকিয়ে ইন্দ্রজিতের দিকে দেখে বলে, “তুই কি হার্ড ড্রিঙ্কস নিবি?”

ইন্দ্রজিত হেসে বলে, “কত ইচ্ছে ছিল তোর বিয়েতে পুরো আউট হয়ে নাচব, সেটা আজকে হয়ে যাক। লবস্টার ক্রাব হোয়াইট ড্রাই ওয়াইন আর স্কচ, আজকের রাত মনে হচ্ছে এই হোটেলেই রুম বুক করতে হবে।”

সুজিত বাবু হেসে ফেলেন, “এট ইওউর সার্ভিস।”

শালিনী ইন্দ্রজিতকে থামিয়ে দিয়ে বলে, “এই ডিনার কিন্তু ঝিনুকের জন্য, ওকেই চয়েস করতে দাও।”

ঝিনুক হাঁ করে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকে, সি ফুড অর্থাৎ সামুদ্রিক মাছ বলতে কোলকাতার মাছের বাজারে যা পাওয়া সচারাচর পাওয়া যায় তার বেশি কিছুই খায়নি। এই লবস্টার আর অস্ট্রেলিয়ান ক্রাব কোনদিন চোখেও দেখেনি। একটু বিব্রতবোধ নিয়েই রিশুকে প্রশ্ন করে, “এ গুলো কেমন খেতে?”

রিশু ওর মনের ভাব বুঝে ওকে জিজ্ঞেস করে, “লবস্টার অনেকটা চিংড়ি মাছের মতন খেতে, আর ক্রাব ও ভালোই খেতে। তোমার এলারজি নেই ত?”

গলদা চিংড়ি অনেক খেয়েছে, তাই উৎফুল্ল হয়ে বলে, “না না এলারজি নেই, নতুন ডিস ট্রাই করতে পারি।”
 
একজন ওয়েটার ওদের জন্য দুটো প্লেটে দুটো বড় লবস্টার সাজিয়ে নিয়ে ওদের সামনে রেখে দেয়। অন্য ওয়েটার চারটে গ্লাসে ওদের জন্য ওয়াইন ঢেলে দেয়। মদের প্রতি রিশুর কোনদিন আসক্তি ছিল না, বন্ধুদের চাপে না পরলে কোনদিন মদের গ্লাস মুখে তোলে না। ওয়াইনের গেলাস তুলে সবাই চিয়ার্স করে ওয়াইন গ্লাসে হাতেই ধরে থাকে ঝিনুক। এত দামী মদ কোনদিন খায়নি, তার ওপরে রিশুর পাশে বসে মদের গ্লাস হাতে মদ খাবে ভেবেই বেশ বিব্রতবোধ করে ঝিনুক। ঝিনুকের দিকে তাকিয়ে ওর মনের দ্বিধা বুঝতে পারে রিশু, মনে মনে হেসে ফেলে, লাজ দেখ মেয়ের, যেন কোনদিন ভাজা মাছ উলটে খায়নি এমন ভাব দেখাচ্ছে। গ্লাসে একটা ছোট চুমুক দিয়ে ইশারা করে ঝিনুকের দিকে, চুমুক দিতে পারো অসুবিধে নেই। স্বামীর সম্মতি পেয়ে ছোট গ্লাসে চুমুক দেয়। খাওয়া দাওয়া শুরু হয় তার সাথে ওদের গল্প শুরু হয়। ইন্দ্রজিত, শালিনী আর রিশু নিজেদের কলেজের গল্প হসপিটালের গল্প শুরু করে দেয়, ঝিনুকের এর মধ্যে বিশেষ কিছুই গল্প করার থাকে না। ঝিনুক চুপচাপ মাঝে মাঝে ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিয়ে লবস্টার খায় আর ওদের দেখে ভদ্রতার খাতিরে একটু মৃদু হাসি দেয়। কথায় গল্পে ইন্দ্রজিত আর শালিনীর গ্লাস শেষ হয়ে যায়, রিশুর ওয়াইনের গ্লাস তখন অর্ধেকও পৌঁছায়নি। ঝিনুকের গ্লাসও শেষ দেখে ইন্দ্রজিত ওর গ্লাসে ওয়াইন ঢেলে দেয়। ঝিনুক প্রথমে একটু বারণ করলেও রিশু মাথা দুলিয়ে ইশারায় সম্মতি দেয়, অসুবিধে নেই খেতে দোষ নেই। ওয়াইনের দ্বিতীয় গ্লাস শেষের পরে, ক্রাবের অর্ডার করে ইন্দ্রজিত সেই সাথে গ্লেনলিভেট স্কচ।
 
রিশুর ওয়াইনের গ্লাস প্রায় শেষের দিকে, দেখে ইন্দ্রজিত ওকে মজার ছলেই জিজ্ঞেস করে, “কি রে আজকে শেষ পর্যন্ত মেরেই দে।”

মাথা দোলায় রিশু, “না রে ওটা আমার সহ্য হয় না জানিস।”

শালিনী ওকে বাঁচিয়ে দিয়ে বলে, “তুমি জানো ভাইয়া খায় না তাও কেন জোর করছ?” তারপরে ঝিনুকের দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোমার হুইস্কি চলে নাকি?”

নিচের ঠোঁট দাঁতে কামড়ে লজ্জার মাথা খেয়ে মাথা দোলায় ঝিনুক, “মাঝে মাঝে চলে।”

সেই কথা শুনে হাসিতে ফেটে পরে ইন্দ্রজিত, রিশুর দিকে আঙ্গুল তুলে বলে, “আব তেরা কেয়া হোগা কালিয়া।”

রিশু ঘাড় ঘুরিয়ে ঝিনুকের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, “ইউ ক্যান এঞ্জয়, (তুমি আনন্দ করতে পারো) আমার আপত্তি নেই।”
 
ওয়েটার ওদের গ্লাসে একটা লারজ পেগ বানিয়ে চলে যায়। কাঁকড়ার টুকরোর সাথে হুইস্কির গ্লাসে চুমুক দেয় ইন্দ্রজিত, এক চুমুক দিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে ঝিনুক আর শালিনীকেও ইশারায় জানিয়ে দেয় গ্লাসে চুমুক দিতে। গ্লাস হাতে ঝিনুক ভীষণ ভাবেই অপ্রস্তুত পরিস্থিতিতে পরে যায়, ও ভেবেছিল যে হয়ত রিশু ওর সাথে সঙ্গ দেবে কিন্তু রিশুর হাতে ওয়াইনের গ্লাসের বদলে একটা মকটেলের গ্লাস দেখে ভীষণ বিব্রতবোধ করে। রিশু চোখের কোনা থেকে ঝিনুককে দেখে আর মনে মনে হাসে, দুই গ্লাস ওয়াইনের পরেও এই মেয়ে হুইস্কি খেতে চাইছে, কোলকাতায় থাকাকালীন তাহলে কি না বাউন্ডুলেপনা করেছে তার ইয়াত্তা নেই। হোক মাতাল, সেটাই চায় রিশু, হয়ত মাতাল হলে ওদের মাঝের আগল ভেঙ্গে যাবে, যে দুর্ভেদ্য দেয়ালের দুইপাশে দুইজনে দাঁড়িয়ে হয়ত সেই দেয়াল আর থাকবে না। এক পা এক পা করে এগোতে গেলে অনেক দেরি, একটা ছোট দেশলাই কাঠির ঝলকানির খুব দরকার ওদের মাঝের এই আগুন জ্বালানোর জন্য। ওদের বসার জায়গার মাঝ খানে যে আগুন জ্বালানো হয়েছিল একজন লোক এসে সেই আগুনে আরো কয়েকটা কাঠের গুড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে চলে যায়।
 
ঝিনুকের দ্বিধাবোধ কাটিয়ে সহজ হওয়ার জন্য ওকে বলে, “আরে ওটা কি শুধু দেখবে নাকি?”

গলা শুকিয়ে আসে ঝিনুকের, “না মানে, তুমি নেবে না?”

মাথা নাড়ায় রিশু, “না, আমার এইসবের গন্ধ একদম সহ্য হয় না।”

ঝিনুক মুখ গোমড়া করে হুইস্কির গ্লাস টেবিলে রেখে দিয়ে বলে, “তাহলে আমিও খাবো না।”
 
ইসস, তোমার এই অনুরাগের ছোঁয়ায় মরতে রাজি আমি। মনের মধ্যে গানের কলি জেগে উঠেছিল, হয়ত পরিস্থিতি অন্য হলে সেই গান গেয়ে ফেলত রিশু। রাগ যে তোমার মিষ্টি অনুরাগের চেয়ে সাধ করে যে তোমায় রাগাই ওগো সোনার মেয়ে।
 
ঝিনুকের কাঁধে কাঁধ দিয়ে আলতো ধাক্কা মেরে মজার ছলে বলে, “তোমার খাওয়াতেই আমার খাওয়া হয়ে যাবে।”

নিচের ঠোঁট কামড়ে লাজুক হেসে চোখ রাঙ্গিয়ে প্রশ্ন করে, “আচ্ছা তাই নাকি? সেটা কেমন করে হবে?”

রিশু ওর কানে কানে ফিসফিস করে বলে, “সেদিন ফুচকা খেলে যেমন ভাবে ঠিক তেমন ভাবেই।” রিশুর ঠোঁটে যেন সেদিনের ঝিনুকের চাঁপার কলি আঙ্গুলের পরশ এখন লেগে রয়েছে এমন ভাব দেখিয়ে ঠোঁটের ওপরে আঙ্গুল বুলিয়ে নেয়।

ওই ভাবে ঠোঁটে আঙ্গুল বুলাতে দেখে সর্বাঙ্গ কেঁপে ওঠে ঝিনুকের, ইসস কি শয়তান দেখ, “সেদিন আর একটু হলে ত আমার আঙ্গুল খেয়ে ফেলতে।”

খেতে আর দিল কোথায়, চারপাশে যা লোকজনের ভিড় ছিল সেদিন না হলে শুধু আঙ্গুল নয়, ওই মিষ্টি মেয়েটাকে আদর করে পাগল করে খেয়ে ফেলত রিশু, “কামরাতে আর দিলে কোথায় বল।” মুচকি হেসে ঝিনুককে বলে।

শালিনী হাসিতে ফেটে পরে ওদের প্রেমালাপ দেখে, গান গেয়ে ওঠে ওদের দিকে তাকিয়ে, “রাত বাকি বাত বাকি, হোনা হ্যায় জো হো জানে দো... ”

হুইস্কির গ্লাস দুই ঢোকে শেষ করে ইন্দ্রজিত হো হো করে হেসে বলে, “তোদের দেখে আবার প্রেম...”

শালিনী সঙ্গে সঙ্গে ইন্দ্রজিতের পিঠের ওপরে একটা চড় মেরে বলে, “আই উইল কিল ইউ নাই (তাহলে আমি মেরে ফেলব।)”

গ্লাস শেষ হতে না হতেই আরো এক লারজ পেগ সোজা গলায় ঢেলে ইন্দ্রজিত শালিনীকে জড়িয়ে ধরে বলে, “ডারলিং প্রেম আবার তোমার সাথেই করব।”

গ্লাস শেষ করে উঠে দাঁড়ায় শালিনী, ঝিনুকের হাত ধরে বলে, “ওয়ানা ডান্স? লেটস হিট দ্যা ফ্লোর। (নাচতে চাও? চল নাচি)।”
 
ইন্দ্রজিত ওয়েটারকে ডেকে পার্টির উপযুক্ত হিন্দি গান চালাতে অনুরোধ করে। গ্লাসের বাকি হুইস্কি গলায় ঢেলে শালিনীর সাথে সোফা ছেড়ে উঠে পরে ঝিনুক। জ্যাকেট খুলে আঁচল খানি কোমরে গুঁজে ফেলার ফলে ফর্সা নরম তুলতলে পেটের খানিক অংশ বেড়িয়ে পরে। আঁচল খানি সামনের দিকে উঁচিয়ে থাকা আঁটো ব্লাউজে ঢাকা দুই উন্নত স্তনের মাঝে নিয়ে কোমরে পেচিয়ে গুঁজে নেয়। শাড়ির কুঁচি নাভির বেশ নিচে বাধার ফলে সুগভীর নাভি খানি অনায়াসে দেখা যায়। সারা অঙ্গে ছন্দ তুলে আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে পরে সুন্দরী ঝিনুক। চোখে তারায় হাজার বাতির ঝলকানি হেনে তাকায় রিশুর দিকে। রিশু জুলুজুলু চোখে মত্ত হরিণীর হাঁটার ছন্দের দিকে নিস্পলক চোখ তাকিয়ে থাকে। গানের তালে ওর পা নাচতে শুরু করেছিল কিন্তু কোনদিন নাচেনি তাই আর সোফা ছেড়ে ওঠেনা। দুই গ্লাস ওয়াইনের পরে এক গ্লাস হুইস্কির লারজ পেগ ঝিনুকের শিরা উপশিরায় নেশার মাতন জাগিয়ে তুলেছে। শালিনীও গায়ের জ্যাকেট খুলে ফেলে গানের তালে তালে নাচতে শুরু করে দেয়। সেই সাথে ধিরে ধিরে তাল মেলায় ঝিনুক। ওর দুই হাত মাথার ওপরে উঠে যায়, সারা শরীর সাপের মতন এঁকে বেঁকে মত্ত ছন্দে নাচতে শুরু করে ঝিনুক।
 
ইন্দ্রজিত গ্লাস হাতে সোফা ছেড়ে উঠে রিশুর পেছনে এসে দাঁড়িয়ে বলে, “ইউ আর আ ড্যাম লাকি গাই, (তুই অনেক ভাগ্যবান)। কি ভেবে এখন পিছিয়ে আছিস জানি না, তবে একে হারাস না।”

শালিনী আর ঝিনুক গানের তালে নাচে মেতে উঠেছে। সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ঝিনুক আর শালিনীর দিকে দেখে। উচ্চ গানের তালে দুই নারী সব কিছু ভুলে নেচে চলেছে। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে মৃদু হেসে ইন্দ্রজিতের কথার উত্তরে বলে, “কেউ কি আর ইচ্ছে করে কিছু হারাতে চায় রে?”
[Image: 20210115-150253.jpg]
Like Reply


Messages In This Thread
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 18-10-2020, 01:30 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 21-10-2020, 04:16 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 22-10-2020, 03:41 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 21-10-2020, 04:13 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 22-10-2020, 02:49 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 27-10-2020, 02:59 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 28-10-2020, 12:21 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 28-10-2020, 10:20 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 29-10-2020, 01:29 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 30-10-2020, 11:22 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 01-11-2020, 01:37 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 02-11-2020, 12:51 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by pinuram - 30-11-2020, 10:03 PM
পর্ব আট – (#2-38) - by pinuram - 08-12-2020, 05:19 PM
RE: পর্ব আট – (#2-38) - by pinuram - 09-12-2020, 06:58 PM
Block Guest Users! - by pinuram - 09-12-2020, 11:47 PM
RE: Block Guest Users! - by dreampriya - 10-12-2020, 09:46 AM
RE: Block Guest Users! - by pinuram - 10-12-2020, 12:18 PM
পর্ব আট – (#6-42) - by pinuram - 14-12-2020, 11:37 PM
পর্ব আট – (#7-43) - by pinuram - 14-12-2020, 11:38 PM
পর্ব আট – (#8-44) - by pinuram - 14-12-2020, 11:38 PM



Users browsing this thread: 19 Guest(s)