29-11-2020, 08:11 PM
(This post was last modified: 29-11-2020, 08:11 PM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
সন্ধ্যে হয়ে গেছে অনেক আগে ! গাড়ি চলছে ! আমাদের সামনে সাইড সীটে দুজন যাত্রী উঠলেন ! একজনের সিট সাইড লোয়ার আর একজনের সাইড আপার ! দুজনের বয়সই ৫৫ ষাটের কাছ কাছি ! সুমি স্ত্রী ! ভদ্রলোকের বয়স প্রায় ষাট বছর আর ভদ্রমহিলার ৫৫ বা ৫৬ হবে ! ওনারা খুব দ্বিধায় বসে আছেন ! আমি প্যান্ট্রিতে যাবার জন্য পর্দা খুলতেই দেখি ওনারা বসে আছেন ! আমি কিছুই বললাম না ! এমনিতেই ট্রেনে অনেকে যাত্রী চাপেন আর নামেন তাদের গন্তব্যে ! সেই খানে সবার সাথে পরিচয় করা যায় না ! আমি কোনো কথা না বলে প্যান্ট্রিতে চলে গেলাম ! ম্যানেজারের কে বললাম যে আমাদের রাতের খাবার খেতে মোটামুটি রাত দশটা হবে ওনাদের সেই সময় খাবার গরম করে দিতে কোনো অসুবিধা নেই তো ? উনি বললেন একটু তাড়াতাড়ি হলে ভালো হয় ! কারণ সবার দিনরাত কাজ করছে ওদের একটু রেস্ট দরকার ! বুঝলাম যে আমরা এসে থেকে প্যান্ট্রি থেকে কিছুই কিনিনি ! তাই হয়তো উনি রাজি হচ্ছেন না ! আমি কথায় কথায় ওনাকে জিজ্ঞাসা করলাম " এখন চাটের জন্য কি পাওয়া যেতে পারে গরম গরম ?"
একটু ভেবে বললেন চিকেন ফ্রাই পাবেন আর ফিশ কাটলেট পাবেন ! তবে একটু দেরি হবে আধঘন্টা মতো ! আমি ওনাকে ফিশ কাটলেটের অর্ডার দিয়ে তিনটে ঠান্ডা জলের বোতল নিয়ে আমাদের সিটে ফিরে এলাম ! সমীর আর রাজু ততক্ষনে সমস্ত রেডি করে ফেলেছে ! দেখি টিটি সাহেব ওই দুই যাত্রীর সাথে কথা বলছেন ! ওনাদের বললেন ! দেখি কি করতে পারি ! ততক্ষনে আপনারা পাশের কূপে বসে যান ! নেক্সট স্টেশন আসতে আসতে প্রায় দশটা বাজবে ! ততক্ষন একটু আরাম করে নিন ! ওনারা পাশের কূপে চলে গেলো ! টিটি সাহেব আমাদের কূপে ঢুকে বললেন একটু সাবধানে খেয়ো ! আমি ওনাকে আহ্বান করলাম " আপনিও আসুন আমাদের সাথে ! " বয়েসে আমরা অনেক ছোট তাই হয়তো টিটি সাহেব একটু ইতস্তত করছেন ! আমি বললাম " স্যার ! এখন আমরা অ্যাডাল্ট ! আর তাছাড়া কোনো না কোনো সময় তো বয়সের ব্যবধান টাকে ভাঙতেই হবে ! কারণ আপনি ট্রেনে কত লোকের সাথে আলাপ করেন কত নতুন নতুন লোক দেখেন ! আপনার তো সংকোচ হয় উচিত নয় !
উনি বললেন " তোমরা শুরু করো ! আমি আধঘন্টা পরে আসছি ! যে সমস্ত প্যাসেঞ্জার উঠেছে তাদের টিকিট চেক করে আসছি ! "
আমরা পর্দা টেনে দিয়ে হুইস্কির বোতল খুলে বসে পড়লাম ! মেয়েদের বললাম তোরা ভদকা খেয়ে না ! যতটা আছে তোদের জন্য অনেক ! কিন্তু ওরা বললো ওরাও হুইস্কি খাবে ! তিনজন মেয়ের গ্লাসে হালকা হালকা ঢেলে দিলাম হরপ্রীত চোখটাকে ট্যারা করে আমার দিকে তাকালো ! আমি বললাম হুইস্কি একটু বেশি হার্ড ! আর এতে নেশাও প্রচুর হয় ! ধীরে ধীরে খা ! একটা কাগজ বিছিয়ে তাতে চানাচুর ঢালা হলো ! বাইরে একটা হকার পোকোরে পোকোরে বলে আওয়াজ দিছিলো ! সমীর উঠে গিয়ে ২০ টাকার পকোড়া নিয়ে এলো ! যেটাকে আমরা পিঁয়াজি বলি সেটাই ! বেশ গরম ছিলো ! পিঁয়াজি দিয়ে হুইস্কি বেশ ভালোই লাগছিলো ! প্রথম পেগ মুখে দিয়েই মেয়েরা মুখটাকে একটু ব্যাঁকা করলেও এক চুমুকে পুরো গ্লাস শেষ করে দিলো ! আসলে ওদের বিয়ার আর ভদকা খাবার অভ্যাস আছে ! তাই একটু করা হলেও ওদের বেশি প্রব্লেম হলো না ! দ্বিতীয় পেগ ডলার মাঝেই ফিশ কাটলেট চলে এলো ! পেগ ঢালার মাঝেই টিটি সাহেব ফিরে এলেন ! ওনার জন্য একটা গ্লাস বের করে বোতল ওনার হাতে ধরিয়ে দিলাম ! বললাম " আপনি নিজেই নিজের মতো নিয়ে নিন স্যার ! "
উনি কোনো কথা না বলে একটা পাটিয়ালা পেগ ঢেলে তাতে জল ঢাললেন !
মাল খেতে খেতেই উনি বললেন ওই দুই যাত্রীর কথা ! দুজনেরই আলাদা আলাদা সিট পড়েছে আর দুটোই উপরে ! আমরা যদি একটু এডজাস্ট করে ওনাদের লোয়ার দুটো সিট দিতে পারি। ..... কারণ সামনের দুটো লোয়ার সিটে সামনের স্টেশন থেকে দুজন চড়বে ! ওরা যদি এডজাস্ট করতে না চায় তখন ওই দুই পৌঢ়র খুব অসুবিধা হবে !
- সে জন্য আপনি চিন্তা করবেন না ! আগে দেখুন সামনের স্টেশনে যারা উঠবে তারা যদি রাজি না হয় তখন না হয় আমরা এডজাস্ট করে নেবো !
টিটি সাহেব আরও একটা পাতিয়ালা পেগ মেরে চলে গেলেন ! আমাদের তখন দুই পেগ শেষ হয়ে গেছে ! মেয়েরা কেউই টিটির সামনে খায়নি ! আর না খাবার কারণও আছে কোয়েলের বাবা ওই টিটির বন্ধু ! উনি যদি সুভাষ বাবুকে তার মেয়ের কীর্তি বলে দেন তাহলে কোয়েলের বাড়িতে প্রব্লেম হয়ে যাবে ! টিটি চলে যেতেই হরপ্রীত আমার হাত থেকে বোতল কেড়ে নিয়ে নিজেদের পেগ নিজেরাই বানিয়ে নিলো ! টিটির মতো অত বড়ো না হলেও বেশ বড়ো পেগ ই বানালো ! আমি কিছুই বললাম না ! শুধু দেখে গেলাম !
ফিশ ফ্রাইয়ের আমরা বিশেষ কিছুই পেলাম না ! মেয়েরাই গপ গোপি করে শেষ করে দিলো ! শেষ পেগ যখন নিলাম তখন বোতলে মাত্র দুই কি তিন পেগ বেঁচে আছে ! মেয়েদের সবার চোখ লাল ! কেবিনের নীলাভ আলোয় সব কটা মেয়েকেই খুব সেক্সী আর রহস্যময়ী লাগছিলো ! কোয়েলের চোখ ঢুলুঢুলু ! সেই অবস্থাতেই আমাকে দেখে যাচ্ছে ! আমি আমাদের জন্য শেষ পেগ ঢেলে বাকি বোতলটা ব্যাগে ঢোকাতে যাবো ঠিক তখনই কোয়েল আমার হাত থেকে বোতলটা কেড়ে নিলো ! " তোমাকে আমার দরকার নেই ! আজ থেকে এই বোতল আমার সাথী ! তোমরাই শুধু দেবদাস হতে জানো ! আমি কি দেবদাসী হতে পারিনা ?"
ওর কথা শুনে আমি হেসে ফেললাম ! ওকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম ! দেবদাস হওয়া যায় না ! দেবদাস একজনের নাম ছিল ! সে প্রেমে ঢোকা খেয়েছিলো তাই তার নাম ফেমাস হয়ে গেছিলো ! আর দেব দাসী মানে যারা পুরোহিতদের বাঁধা মেয়েছেলে ! ভগবানের নাম উৎসরকৃত হলেও ওরা পুরোহিতদের সেক্সের পুতুল ছিল !
কোয়েল রাগে গোঁ গোঁ করতে লাগলো ! আমি হরপ্রীতকে ইশারা করলাম ! হরপ্রীত ওর হাত থেকে বোতল কেড়ে নেবার চেষ্টা করলো ! কিন্তু ও কিছুতেই বোতল দেবেনা ! রাজু বললো ছেড়ে দে ! ওকে খেতে দে ! আমি উঠে চলে গেলাম প্যান্ট্রিতে ! যা খুশি করুক ! আমার দেখার দরকার নেই ! প্যান্ট্রিতে মাংস গরম করতে বলে ফিরে এলাম ! দেখি তিন মেয়ের গ্লাসে সব মালটাই ঢেলে দিয়েছে কোয়েল ! খাক ওরা !
-একটু সাবধানে খা ! এটা ট্রেন ! আমাদের বাড়ি না ! !
যেই আমার কথা শোনা অমনি কোয়েল চেঁচিয়ে উঠলো " ট্রেন তো কি হয়েছে ? পয়সা দিয়ে টিকিট কেটে বসেছি ! কার বাপের হিম্মত আছে আমার কিছু করবে ? তুমি শালা ফাট্টু ! তোমার ফাটে ! নিজের পিসির মেয়ের সাথে প্রেম করছো আর আমি তোমাকে ভালোবাসলেই দোষ ?"
প্রমাদ গুনলাম ! আজ কোয়েল ভোগাবে ! ইতিমধ্যেই দু একজন উঁকি মেরে দেখে গেছে কি চলছে এখানে ! সুজাতা গলা বাড়িয়ে সবাইকে বলেছে কিছুই না ! আমাদের নিজেদের ঝগড়া চলছে ! আপনারা যান ! বেশ বুঝতে পারছি সবাই চলে গেলেও প্রত্যেকের কান খাড়া আমাদের ঝগড়া শোনার জন্য !
- তুমি আমার সাথে চিট করেছো ! আমাকে ধোঁকা দিয়েছো ! আমার কলার ধরে কোয়েল চেঁচিয়ে উঠলো ! আমি ওর হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম ! কিন্তু মালের নেশায় ওকে কিছুতেই থামানো যাচ্ছিলো না ! মোটামুটি আশেপাশের সবাই উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছিলো ! সুজাতা, হরপ্রীত সবাই কোয়েলকে থামানোর চেষ্টা করছিলো ! কিন্তু কোয়েল কিছুতেই থামতে চায়না ! বেশ কিছুক্ষন সহ্য করার পর আর পারলাম না ! টেনে একটা চর মারলাম কোয়েলের গালে !
আমার চর খেয়ে কোয়েল থতমত খেয়ে গেলো !
দুচোখে জল নিয়ে আমাকে বললো " তুমি আমাকে মারতে পারলে ?" কেঁদে ফেললো ! ওকে জড়িয়ে ধরে আমি স্বান্তনা দেবার চেষ্টা করলাম ! ও আমাকে এলোপাথাড়ি মারতে থাকলো ! আমি ওকে ছাড়লাম না ! জানি যদি আমি ওকে ছেড়ে দিই তাহলে ও একটা বিরাট কেওয়াশ সৃষ্টি করবে ! ওকে থামানোর জন্য ওর মাথায় গায়ে হাত বুলাতে বুলাতেই ওকে বললাম " তোমাকে আমিও ভালোবাসি কোয়েল !কিন্তু তুমি তো জানো। ....."
আমার বুকে মাথা গুঁজে ও কাঁদতে কাঁদতে বললো " আমার কিছুই জানার দরকার নেই !! আমি তোমাকে ভালোবাসি ! আমার বাবা মা সবাইকে আমি বলে রেখেছি ! তোমাকে ছাড়া আমি অন্য কাউকে ভাবতেই পারিনা সুনন্দ ! " ওর কথা শুনে আমি স্তম্ভিত !" ও যে মনে মনে এতদূর এগিয়েছে সেটা আজকের আগে ঘূর্ণাক্ষরেও আমাকে জানতে দেয়নি ! এখন আর কিছুই করার নেই ! ওকে জড়িয়ে রাখলাম ! কেমন যেন মনে হতে লাগলো মঞ্জু আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে ! অনেক দূরে !
কাঁদতে কাঁদতে কোয়েল আমার বুকেতেই ঘুমিয়ে পড়লো ! প্যান্ট্রির একটা ছেলে আমাদের মাংসের পাত্র গরম করে দিয়ে যেতেই আমি ওদের বললাম " তোরা খাবার ব্যবস্থা কর ! কোয়েলকে আগে খাইয়ে দিয়ে তারপর আমি খাবো ! জোর করে ঘুমন্ত কোয়েলের মুখে আমি রুটি আর মাংস ঢুকিয়ে দিতে থাকলাম ! সবার খাওয়া হলে আমি হরপ্রীত আর সুজাতাকে বললাম ওরা যেনো কোয়েলকে জোর করে বাথরুমে নিয়ে যায় ! কারণ মালের নেশায় মেয়েরা কি কী করে সেটা আমার থেকে বেশি কেউ জানেনা ! ওরা অনেক কষ্টে কোয়েলকে বাথরুমে নিয়ে গেলো ! কখন যে পরের স্টেশন পেরিয়ে গেছে কোয়েলের পাগলামিতে সেটাও খেয়াল করতে পারিনি ! টিটি সাহেব বললেন ! পিছনের কূপে ভদ্রলোকের ব্যবস্থা হয়েছে ! কিন্তু ভদ্রমহিলার ব্যবস্থা হয়নি ! কারণ সাইড এর লোয়ার সিটে একজন বৃদ্ধা রয়েছেন ! আমি বললাম "চিন্তার কোনো কারণ নেই ! ওনাকে আমাদের লোয়ার বার্থ এ শুইয়ে দেব ! কিন্তু একটু সময় লাগবে ! এখনো আমার খাওয়া হয় নি ! টিটিসাহেব আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে গেলেন ! কোয়েল আমার সমস্ত নেশার পিন্ডি চটকে দিয়েছিলো ! তাই আমার ব্যাগ থেকে অন্য বোতল বের করে একটা মোটা পেগ ঢেলে বোতল ব্যাগেই ঢুকিয়ে দিলাম ! এক চুমুকেই সমস্ত পেগ শেষ করে দিলাম ! ওরা এখনো ফেরেনি ! ঘটনার আস্বকীতায় সমীর আর রাজু একটু উদভ্রান্ত ! ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম ! "তোরা বলেছিলিস না সেন্টিমেন্ট ? দেখ সেন্টিমেন্ট কি ভাবে কাজ করে ! তোদের জীবনে হয়তো এই সেন্টিমেন্ট নেই ! কিন্তু একজন বাঙালি হিসাবে আমার সেন্টিমেন্টের দাম অনেক রে ! কারণ আমরা বাঙালিরা ভালোবাসতে জানি ! কেয়ার করতে জানি ! " চোখ জ্বলছিল ! কেবল থেকে বাইরে বেরিয়ে এলাম ! একটা সিগারেট ধরালাম ! খুব জোরে সিগারেটে টান দিতে থাকলাম ! বুকের জ্বলন আর সিগারেটের ধোঁয়ায় জ্বলন দুটোই মিশে গেলো ! সিগারেট শেষ করে কেবিনে ফিরলাম ! সমস্ত খাবার এখনো খোলা অবস্থায় পরে আছে ! কোনোরকমে একটা রুটি খেলাম ! সমস্ত প্যাক করে প্যান্ট্রির দিকে যাবার সময় দেখি হরপ্রীত বাথরুমের বাইরে উদভ্রান্তের মতো দাঁড়িয়ে ! আমি বললাম " কি হলো ? "
- সুজাতা অনেকক্ষন কোয়েলকে নিয়ে ঢুকেছে ! কিন্তু এখনো বেরুচ্ছে না ! আমি বাথরুমের দরজায় জোরে জোরে ধাক্কা লাগাতেই সুজাতা ভিতর থেকে বলে উঠলো " একটু টাইম লাগবে ! "
বুঝলাম সব ঠিক আছে ! প্যান্ট্রির ফ্রিজে খাবার রেখে ফিরে এলাম ! সুজাতা হরপ্রীত সমীর রাজু সবাই কেবিনে বসে আছে ! আমি কোয়েলের কথা জিজ্ঞাসা করতে ওরা বললো যে সাইড আপারে ওকে অনেক কষ্টে তুলে দিয়েছে ! ও এখন গভীর ঘুমে !
পাশের কেবিনে গিয়ে ভদ্রমহিলাকে বললাম যে উনি এখন আমাদের এখানে এসে শুতে পারে !
উনি আমাদের ধন্যবাদ জানিয়ে ভদ্র্লোককে একটা ট্যাবলেট খাইয়ে আর নিজে একটা ট্যাবলেট খেয়ে চলে এলেন ! ভেবেছিলাম বয়স হয়েছে তাই হয়তো ওষুধের প্রয়োজন ! জিজ্ঞাসা করলাম কিসের ট্যাবলেট খাচ্ছেন ? উনি বললেন ঘুমের ! রাতে ওনাদের ঘুম হয়না ! তাই ঘুমের টেবলেট নিতে হয় !
কোয়েলের সিটে ওনাকে বিছানা করে দেওয়া হলো ! আমি আপার সিটে ! একদিকের লোয়ার সিটে সুজাতা, মিডল সাথে হরপ্রীত ! আর আমার অপজিটে রাজু ! আমার নিচে সমীর !
ঘুম আসছিলো না কিছুতেই ! একবার উঠে কোয়েলকে দেখতে গেলাম ! ওর শরীরে কোনো চাদর ছিল না ! বেডরোল খুলে ওর গায়ে চাদর দিয়ে দিলাম ! মাথায় বালিশ গুঁজে দিলাম ! কেবিনের বাইরে এসে আবার একটা সিগারেট ধরালাম ! টিটি সাহেব নিজের কাজ সেরে ফিরছিলেন ! আমাকে বাইরে দেখে একটা সিগারেট চাইলেন ! সিগারেট ধরিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন " কিসের ঝগড়া চলছিল ? সবাই কিন্তু আমাকে কমপ্লেইন করেছে ! আমি পাত্তা দিইনি ! কারণ আমি জানতাম যে ট্রেনে মাল খেতে খেতে অনেকেই ঝগড়া করে ! "
- না সেরকম কিছুই না ! এটা প্রেমের ঝগড়া ! এটা মাল না খেলেও হয় আবার খেলেও হয় !
তিটি সাহেব হাসতে শুরু করে দিলেন ! " এই বয়েসে এইরকম হবে নাতো কি আমাদের বয়েসে হবে ? ! তবে এগুলো ট্রেনে না করে যদি বাড়িতেই করা যায় তাহলে ভালো হয় !
টিটির কথায় আমার ঝাঁট পর্যন্ত জ্বলে উঠলো ! হাসতে হাসতেই বললাম " যদি আপনার এখন হিসি পায় তাহলে কি আপনি এখানেই মানে বাথরুমে করবেন নাকি বাড়িতে গিয়ে করবেন?"
ভদ্র্লোক থতমত খেয়ে গেলেন ! আমি বললাম "দেখুন আমাদের যা বয়স এই বয়েসে যদি আমরা গলা খুলে ঝগড়া না করতে পারি তবে কবে করবো ?এটাই তো আমাদের সময় ! এখনই তো আমরা ভালোবাসবো ঝগড়া করবো ! মারামারি করবো ! আপনাদের বয়েসে এসে কি আর সেই সব জিনিস করতে পারবো?"
- ঠিক ঠিক ! তবে কিনা ট্রেনে। .......
- আমরা সময় কাল পাত্র কিছুই দেখিনা ! আমাদের উন্মাদনা আমাদের এক নতুন পৃথিবী দেখায় ! আপনাদের পৃথিবীকে আমরা বিশ্বাস করতে চাইনা ! যদিও জানি যখন আপনাদের বয়সে আমরা পৌঁছাবো তখন আপনাদের মতোই বেহভে করবো ! কিন্তু এখন তো মন মানতে চায়না !
ঘাড় নাড়তে নাড়তে টিটি সাহেব বিদায় নিলেন !
আমিও বাথরুম সেরে নিজের সিটে শুয়ে পড়লাম ! সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে ! বেশ কিছু নাক ডাকার শব্দ পাচ্ছি ! চোখ বুঁজে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলাম ! কিন্তু কোয়েলের আহবান আমাকে কিছুতেই ঘুমাতে দিচ্ছে না !
একটু ভেবে বললেন চিকেন ফ্রাই পাবেন আর ফিশ কাটলেট পাবেন ! তবে একটু দেরি হবে আধঘন্টা মতো ! আমি ওনাকে ফিশ কাটলেটের অর্ডার দিয়ে তিনটে ঠান্ডা জলের বোতল নিয়ে আমাদের সিটে ফিরে এলাম ! সমীর আর রাজু ততক্ষনে সমস্ত রেডি করে ফেলেছে ! দেখি টিটি সাহেব ওই দুই যাত্রীর সাথে কথা বলছেন ! ওনাদের বললেন ! দেখি কি করতে পারি ! ততক্ষনে আপনারা পাশের কূপে বসে যান ! নেক্সট স্টেশন আসতে আসতে প্রায় দশটা বাজবে ! ততক্ষন একটু আরাম করে নিন ! ওনারা পাশের কূপে চলে গেলো ! টিটি সাহেব আমাদের কূপে ঢুকে বললেন একটু সাবধানে খেয়ো ! আমি ওনাকে আহ্বান করলাম " আপনিও আসুন আমাদের সাথে ! " বয়েসে আমরা অনেক ছোট তাই হয়তো টিটি সাহেব একটু ইতস্তত করছেন ! আমি বললাম " স্যার ! এখন আমরা অ্যাডাল্ট ! আর তাছাড়া কোনো না কোনো সময় তো বয়সের ব্যবধান টাকে ভাঙতেই হবে ! কারণ আপনি ট্রেনে কত লোকের সাথে আলাপ করেন কত নতুন নতুন লোক দেখেন ! আপনার তো সংকোচ হয় উচিত নয় !
উনি বললেন " তোমরা শুরু করো ! আমি আধঘন্টা পরে আসছি ! যে সমস্ত প্যাসেঞ্জার উঠেছে তাদের টিকিট চেক করে আসছি ! "
আমরা পর্দা টেনে দিয়ে হুইস্কির বোতল খুলে বসে পড়লাম ! মেয়েদের বললাম তোরা ভদকা খেয়ে না ! যতটা আছে তোদের জন্য অনেক ! কিন্তু ওরা বললো ওরাও হুইস্কি খাবে ! তিনজন মেয়ের গ্লাসে হালকা হালকা ঢেলে দিলাম হরপ্রীত চোখটাকে ট্যারা করে আমার দিকে তাকালো ! আমি বললাম হুইস্কি একটু বেশি হার্ড ! আর এতে নেশাও প্রচুর হয় ! ধীরে ধীরে খা ! একটা কাগজ বিছিয়ে তাতে চানাচুর ঢালা হলো ! বাইরে একটা হকার পোকোরে পোকোরে বলে আওয়াজ দিছিলো ! সমীর উঠে গিয়ে ২০ টাকার পকোড়া নিয়ে এলো ! যেটাকে আমরা পিঁয়াজি বলি সেটাই ! বেশ গরম ছিলো ! পিঁয়াজি দিয়ে হুইস্কি বেশ ভালোই লাগছিলো ! প্রথম পেগ মুখে দিয়েই মেয়েরা মুখটাকে একটু ব্যাঁকা করলেও এক চুমুকে পুরো গ্লাস শেষ করে দিলো ! আসলে ওদের বিয়ার আর ভদকা খাবার অভ্যাস আছে ! তাই একটু করা হলেও ওদের বেশি প্রব্লেম হলো না ! দ্বিতীয় পেগ ডলার মাঝেই ফিশ কাটলেট চলে এলো ! পেগ ঢালার মাঝেই টিটি সাহেব ফিরে এলেন ! ওনার জন্য একটা গ্লাস বের করে বোতল ওনার হাতে ধরিয়ে দিলাম ! বললাম " আপনি নিজেই নিজের মতো নিয়ে নিন স্যার ! "
উনি কোনো কথা না বলে একটা পাটিয়ালা পেগ ঢেলে তাতে জল ঢাললেন !
মাল খেতে খেতেই উনি বললেন ওই দুই যাত্রীর কথা ! দুজনেরই আলাদা আলাদা সিট পড়েছে আর দুটোই উপরে ! আমরা যদি একটু এডজাস্ট করে ওনাদের লোয়ার দুটো সিট দিতে পারি। ..... কারণ সামনের দুটো লোয়ার সিটে সামনের স্টেশন থেকে দুজন চড়বে ! ওরা যদি এডজাস্ট করতে না চায় তখন ওই দুই পৌঢ়র খুব অসুবিধা হবে !
- সে জন্য আপনি চিন্তা করবেন না ! আগে দেখুন সামনের স্টেশনে যারা উঠবে তারা যদি রাজি না হয় তখন না হয় আমরা এডজাস্ট করে নেবো !
টিটি সাহেব আরও একটা পাতিয়ালা পেগ মেরে চলে গেলেন ! আমাদের তখন দুই পেগ শেষ হয়ে গেছে ! মেয়েরা কেউই টিটির সামনে খায়নি ! আর না খাবার কারণও আছে কোয়েলের বাবা ওই টিটির বন্ধু ! উনি যদি সুভাষ বাবুকে তার মেয়ের কীর্তি বলে দেন তাহলে কোয়েলের বাড়িতে প্রব্লেম হয়ে যাবে ! টিটি চলে যেতেই হরপ্রীত আমার হাত থেকে বোতল কেড়ে নিয়ে নিজেদের পেগ নিজেরাই বানিয়ে নিলো ! টিটির মতো অত বড়ো না হলেও বেশ বড়ো পেগ ই বানালো ! আমি কিছুই বললাম না ! শুধু দেখে গেলাম !
ফিশ ফ্রাইয়ের আমরা বিশেষ কিছুই পেলাম না ! মেয়েরাই গপ গোপি করে শেষ করে দিলো ! শেষ পেগ যখন নিলাম তখন বোতলে মাত্র দুই কি তিন পেগ বেঁচে আছে ! মেয়েদের সবার চোখ লাল ! কেবিনের নীলাভ আলোয় সব কটা মেয়েকেই খুব সেক্সী আর রহস্যময়ী লাগছিলো ! কোয়েলের চোখ ঢুলুঢুলু ! সেই অবস্থাতেই আমাকে দেখে যাচ্ছে ! আমি আমাদের জন্য শেষ পেগ ঢেলে বাকি বোতলটা ব্যাগে ঢোকাতে যাবো ঠিক তখনই কোয়েল আমার হাত থেকে বোতলটা কেড়ে নিলো ! " তোমাকে আমার দরকার নেই ! আজ থেকে এই বোতল আমার সাথী ! তোমরাই শুধু দেবদাস হতে জানো ! আমি কি দেবদাসী হতে পারিনা ?"
ওর কথা শুনে আমি হেসে ফেললাম ! ওকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম ! দেবদাস হওয়া যায় না ! দেবদাস একজনের নাম ছিল ! সে প্রেমে ঢোকা খেয়েছিলো তাই তার নাম ফেমাস হয়ে গেছিলো ! আর দেব দাসী মানে যারা পুরোহিতদের বাঁধা মেয়েছেলে ! ভগবানের নাম উৎসরকৃত হলেও ওরা পুরোহিতদের সেক্সের পুতুল ছিল !
কোয়েল রাগে গোঁ গোঁ করতে লাগলো ! আমি হরপ্রীতকে ইশারা করলাম ! হরপ্রীত ওর হাত থেকে বোতল কেড়ে নেবার চেষ্টা করলো ! কিন্তু ও কিছুতেই বোতল দেবেনা ! রাজু বললো ছেড়ে দে ! ওকে খেতে দে ! আমি উঠে চলে গেলাম প্যান্ট্রিতে ! যা খুশি করুক ! আমার দেখার দরকার নেই ! প্যান্ট্রিতে মাংস গরম করতে বলে ফিরে এলাম ! দেখি তিন মেয়ের গ্লাসে সব মালটাই ঢেলে দিয়েছে কোয়েল ! খাক ওরা !
-একটু সাবধানে খা ! এটা ট্রেন ! আমাদের বাড়ি না ! !
যেই আমার কথা শোনা অমনি কোয়েল চেঁচিয়ে উঠলো " ট্রেন তো কি হয়েছে ? পয়সা দিয়ে টিকিট কেটে বসেছি ! কার বাপের হিম্মত আছে আমার কিছু করবে ? তুমি শালা ফাট্টু ! তোমার ফাটে ! নিজের পিসির মেয়ের সাথে প্রেম করছো আর আমি তোমাকে ভালোবাসলেই দোষ ?"
প্রমাদ গুনলাম ! আজ কোয়েল ভোগাবে ! ইতিমধ্যেই দু একজন উঁকি মেরে দেখে গেছে কি চলছে এখানে ! সুজাতা গলা বাড়িয়ে সবাইকে বলেছে কিছুই না ! আমাদের নিজেদের ঝগড়া চলছে ! আপনারা যান ! বেশ বুঝতে পারছি সবাই চলে গেলেও প্রত্যেকের কান খাড়া আমাদের ঝগড়া শোনার জন্য !
- তুমি আমার সাথে চিট করেছো ! আমাকে ধোঁকা দিয়েছো ! আমার কলার ধরে কোয়েল চেঁচিয়ে উঠলো ! আমি ওর হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম ! কিন্তু মালের নেশায় ওকে কিছুতেই থামানো যাচ্ছিলো না ! মোটামুটি আশেপাশের সবাই উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছিলো ! সুজাতা, হরপ্রীত সবাই কোয়েলকে থামানোর চেষ্টা করছিলো ! কিন্তু কোয়েল কিছুতেই থামতে চায়না ! বেশ কিছুক্ষন সহ্য করার পর আর পারলাম না ! টেনে একটা চর মারলাম কোয়েলের গালে !
আমার চর খেয়ে কোয়েল থতমত খেয়ে গেলো !
দুচোখে জল নিয়ে আমাকে বললো " তুমি আমাকে মারতে পারলে ?" কেঁদে ফেললো ! ওকে জড়িয়ে ধরে আমি স্বান্তনা দেবার চেষ্টা করলাম ! ও আমাকে এলোপাথাড়ি মারতে থাকলো ! আমি ওকে ছাড়লাম না ! জানি যদি আমি ওকে ছেড়ে দিই তাহলে ও একটা বিরাট কেওয়াশ সৃষ্টি করবে ! ওকে থামানোর জন্য ওর মাথায় গায়ে হাত বুলাতে বুলাতেই ওকে বললাম " তোমাকে আমিও ভালোবাসি কোয়েল !কিন্তু তুমি তো জানো। ....."
আমার বুকে মাথা গুঁজে ও কাঁদতে কাঁদতে বললো " আমার কিছুই জানার দরকার নেই !! আমি তোমাকে ভালোবাসি ! আমার বাবা মা সবাইকে আমি বলে রেখেছি ! তোমাকে ছাড়া আমি অন্য কাউকে ভাবতেই পারিনা সুনন্দ ! " ওর কথা শুনে আমি স্তম্ভিত !" ও যে মনে মনে এতদূর এগিয়েছে সেটা আজকের আগে ঘূর্ণাক্ষরেও আমাকে জানতে দেয়নি ! এখন আর কিছুই করার নেই ! ওকে জড়িয়ে রাখলাম ! কেমন যেন মনে হতে লাগলো মঞ্জু আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে ! অনেক দূরে !
কাঁদতে কাঁদতে কোয়েল আমার বুকেতেই ঘুমিয়ে পড়লো ! প্যান্ট্রির একটা ছেলে আমাদের মাংসের পাত্র গরম করে দিয়ে যেতেই আমি ওদের বললাম " তোরা খাবার ব্যবস্থা কর ! কোয়েলকে আগে খাইয়ে দিয়ে তারপর আমি খাবো ! জোর করে ঘুমন্ত কোয়েলের মুখে আমি রুটি আর মাংস ঢুকিয়ে দিতে থাকলাম ! সবার খাওয়া হলে আমি হরপ্রীত আর সুজাতাকে বললাম ওরা যেনো কোয়েলকে জোর করে বাথরুমে নিয়ে যায় ! কারণ মালের নেশায় মেয়েরা কি কী করে সেটা আমার থেকে বেশি কেউ জানেনা ! ওরা অনেক কষ্টে কোয়েলকে বাথরুমে নিয়ে গেলো ! কখন যে পরের স্টেশন পেরিয়ে গেছে কোয়েলের পাগলামিতে সেটাও খেয়াল করতে পারিনি ! টিটি সাহেব বললেন ! পিছনের কূপে ভদ্রলোকের ব্যবস্থা হয়েছে ! কিন্তু ভদ্রমহিলার ব্যবস্থা হয়নি ! কারণ সাইড এর লোয়ার সিটে একজন বৃদ্ধা রয়েছেন ! আমি বললাম "চিন্তার কোনো কারণ নেই ! ওনাকে আমাদের লোয়ার বার্থ এ শুইয়ে দেব ! কিন্তু একটু সময় লাগবে ! এখনো আমার খাওয়া হয় নি ! টিটিসাহেব আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে গেলেন ! কোয়েল আমার সমস্ত নেশার পিন্ডি চটকে দিয়েছিলো ! তাই আমার ব্যাগ থেকে অন্য বোতল বের করে একটা মোটা পেগ ঢেলে বোতল ব্যাগেই ঢুকিয়ে দিলাম ! এক চুমুকেই সমস্ত পেগ শেষ করে দিলাম ! ওরা এখনো ফেরেনি ! ঘটনার আস্বকীতায় সমীর আর রাজু একটু উদভ্রান্ত ! ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম ! "তোরা বলেছিলিস না সেন্টিমেন্ট ? দেখ সেন্টিমেন্ট কি ভাবে কাজ করে ! তোদের জীবনে হয়তো এই সেন্টিমেন্ট নেই ! কিন্তু একজন বাঙালি হিসাবে আমার সেন্টিমেন্টের দাম অনেক রে ! কারণ আমরা বাঙালিরা ভালোবাসতে জানি ! কেয়ার করতে জানি ! " চোখ জ্বলছিল ! কেবল থেকে বাইরে বেরিয়ে এলাম ! একটা সিগারেট ধরালাম ! খুব জোরে সিগারেটে টান দিতে থাকলাম ! বুকের জ্বলন আর সিগারেটের ধোঁয়ায় জ্বলন দুটোই মিশে গেলো ! সিগারেট শেষ করে কেবিনে ফিরলাম ! সমস্ত খাবার এখনো খোলা অবস্থায় পরে আছে ! কোনোরকমে একটা রুটি খেলাম ! সমস্ত প্যাক করে প্যান্ট্রির দিকে যাবার সময় দেখি হরপ্রীত বাথরুমের বাইরে উদভ্রান্তের মতো দাঁড়িয়ে ! আমি বললাম " কি হলো ? "
- সুজাতা অনেকক্ষন কোয়েলকে নিয়ে ঢুকেছে ! কিন্তু এখনো বেরুচ্ছে না ! আমি বাথরুমের দরজায় জোরে জোরে ধাক্কা লাগাতেই সুজাতা ভিতর থেকে বলে উঠলো " একটু টাইম লাগবে ! "
বুঝলাম সব ঠিক আছে ! প্যান্ট্রির ফ্রিজে খাবার রেখে ফিরে এলাম ! সুজাতা হরপ্রীত সমীর রাজু সবাই কেবিনে বসে আছে ! আমি কোয়েলের কথা জিজ্ঞাসা করতে ওরা বললো যে সাইড আপারে ওকে অনেক কষ্টে তুলে দিয়েছে ! ও এখন গভীর ঘুমে !
পাশের কেবিনে গিয়ে ভদ্রমহিলাকে বললাম যে উনি এখন আমাদের এখানে এসে শুতে পারে !
উনি আমাদের ধন্যবাদ জানিয়ে ভদ্র্লোককে একটা ট্যাবলেট খাইয়ে আর নিজে একটা ট্যাবলেট খেয়ে চলে এলেন ! ভেবেছিলাম বয়স হয়েছে তাই হয়তো ওষুধের প্রয়োজন ! জিজ্ঞাসা করলাম কিসের ট্যাবলেট খাচ্ছেন ? উনি বললেন ঘুমের ! রাতে ওনাদের ঘুম হয়না ! তাই ঘুমের টেবলেট নিতে হয় !
কোয়েলের সিটে ওনাকে বিছানা করে দেওয়া হলো ! আমি আপার সিটে ! একদিকের লোয়ার সিটে সুজাতা, মিডল সাথে হরপ্রীত ! আর আমার অপজিটে রাজু ! আমার নিচে সমীর !
ঘুম আসছিলো না কিছুতেই ! একবার উঠে কোয়েলকে দেখতে গেলাম ! ওর শরীরে কোনো চাদর ছিল না ! বেডরোল খুলে ওর গায়ে চাদর দিয়ে দিলাম ! মাথায় বালিশ গুঁজে দিলাম ! কেবিনের বাইরে এসে আবার একটা সিগারেট ধরালাম ! টিটি সাহেব নিজের কাজ সেরে ফিরছিলেন ! আমাকে বাইরে দেখে একটা সিগারেট চাইলেন ! সিগারেট ধরিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন " কিসের ঝগড়া চলছিল ? সবাই কিন্তু আমাকে কমপ্লেইন করেছে ! আমি পাত্তা দিইনি ! কারণ আমি জানতাম যে ট্রেনে মাল খেতে খেতে অনেকেই ঝগড়া করে ! "
- না সেরকম কিছুই না ! এটা প্রেমের ঝগড়া ! এটা মাল না খেলেও হয় আবার খেলেও হয় !
তিটি সাহেব হাসতে শুরু করে দিলেন ! " এই বয়েসে এইরকম হবে নাতো কি আমাদের বয়েসে হবে ? ! তবে এগুলো ট্রেনে না করে যদি বাড়িতেই করা যায় তাহলে ভালো হয় !
টিটির কথায় আমার ঝাঁট পর্যন্ত জ্বলে উঠলো ! হাসতে হাসতেই বললাম " যদি আপনার এখন হিসি পায় তাহলে কি আপনি এখানেই মানে বাথরুমে করবেন নাকি বাড়িতে গিয়ে করবেন?"
ভদ্র্লোক থতমত খেয়ে গেলেন ! আমি বললাম "দেখুন আমাদের যা বয়স এই বয়েসে যদি আমরা গলা খুলে ঝগড়া না করতে পারি তবে কবে করবো ?এটাই তো আমাদের সময় ! এখনই তো আমরা ভালোবাসবো ঝগড়া করবো ! মারামারি করবো ! আপনাদের বয়েসে এসে কি আর সেই সব জিনিস করতে পারবো?"
- ঠিক ঠিক ! তবে কিনা ট্রেনে। .......
- আমরা সময় কাল পাত্র কিছুই দেখিনা ! আমাদের উন্মাদনা আমাদের এক নতুন পৃথিবী দেখায় ! আপনাদের পৃথিবীকে আমরা বিশ্বাস করতে চাইনা ! যদিও জানি যখন আপনাদের বয়সে আমরা পৌঁছাবো তখন আপনাদের মতোই বেহভে করবো ! কিন্তু এখন তো মন মানতে চায়না !
ঘাড় নাড়তে নাড়তে টিটি সাহেব বিদায় নিলেন !
আমিও বাথরুম সেরে নিজের সিটে শুয়ে পড়লাম ! সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে ! বেশ কিছু নাক ডাকার শব্দ পাচ্ছি ! চোখ বুঁজে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলাম ! কিন্তু কোয়েলের আহবান আমাকে কিছুতেই ঘুমাতে দিচ্ছে না !