27-11-2020, 05:47 PM
৫৪ পর্ব
আশ্রমের কাছে এসে গাড়ি ওয়াশের জায়গায় রেখে সোজা রুমে ঢুকে ওয়াশরুমে রুমে ঢুকে গেল অঞ্জলী,নিজেকে পোশাক মুক্ত করে জলের কল ছেড়ে দিয়ে মেঝেতে বসে পরলো।সমস্ত ঘটনা মনে করতেই শিউরে উঠলো অঞ্জলী।নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে এখন! সিধুকে ধরে না আনলে হয়তো সে এখনো বেঁচে থাকতো।পরক্ষণে ভাবলো না সিধুর বেঁচে থাকার কোন অধিকার ছিলো না,সে আমার রাজকুমারের ক্ষতি চেয়েছিলো।একটু অনুশুচনা হচ্ছে ঠিকই তবুও মনে কোন গ্লানি নেই তার।এখন ভয়ের ব্যাপার সিধুকে এখানে আনা হয়েছিলো খুনি ছাড়া কেউ জানে না।তাছাড়া তখন সিধুর কাছে মোবাইল ছিলো পুলিশ কেস হলে তো লাষ্ট ফোন লোকেশন ট্র্যাক করে যদি এই পর্যন্ত পৌঁছে যায়।না আর ভাবতে পারেনা অঞ্জলী।নিজের একটু ভুলের জন্য এখন এতো চিন্তা করতে হচ্ছে।ফ্রেস হয়ে রুমে ঢুকে বিছানায় বসতেই চোখে ঘুম জড়িয়ে আসছে।বাইরে তাকিয়ে দেখলো আশ্রমের সবাই উঠে পরেছে।না এখন আর ঘুমালে চলবেনা।টিভিটা চালু করে কফি বানাতে গেল অঞ্জলী,একটু পর ফিরে এসে কফির মগ হাতে নিয়ে টিভিটা চালু করে খবরেে চ্যানেলে দিলো।টিভিতে এখন আসন্ন নির্বাচনের জনমত বিষয়ক একটা অনুষ্ঠান হচ্ছে।তাতে দেখা যাচ্ছে সরকারী দল বেশির ভাগ জায়গাতে এগিয়ে আছে।অঞ্জলী ফোন হাতে নিয়ে কাকে যেন ডায়েল করলো।কমলেশ মুখার্জী চিন্তিত ভাবে বসে আছে হাতে চায়ের কাপ। এমন সময় তার ফোনটা বেজে উঠলো দেখলো অচেনা নম্বর রিসিভ করে কানে নিতেই ওপাশ থেকে বললো,,,
-আপনি অভিনয়টা কেমন পারেন?
-সকাল সকাল এমন কথা শুনে মেজাজ হারিয়েই বললো আবার আপনি কল করেছেন হেয়ালি করতে?আগে আপনার পরিচয় দিন! তারপর অন্য কথা!
-আচ্ছা আপনার ইচ্ছাই পূরণ হোক।আমি অঞ্জলী রায় চৌধুরী!!
-অঞ্জলী,অঞ্জলী !! মানে ওই আশ্রম! রায় গ্রুপ!!
-হা ঠিক চিনেছেন!এর বেশি কিছু আপনার না জানলেও চলবে।টিভিতে আজকের জনমত দেখলাম আপনাদের অবস্থা বিশেষ ভালো না।আর আমি আপনাকে কথা দিয়েছিলাম,সেই জন্যই কল করেছি।একনাগারে কথা গুলা বলে অঞ্জলী থামলো।
-ওহ হা! কিন্তু আপনার কথা মতো তো কিছুই হচ্ছেনা।
-হুম হয়নি।আজ থেকে হবে।
-কমলেশ মুখার্জী উৎসাহিত ভাবে বললো,কি ভাবে ?
-শুনুন মন্ত্রী বালেশ্বর ঝাঁর হত্যার পিছে প্রতাপ হাজরার হাত আছে। এটা আজ বিকালের বেকিং নিউজ হবে। আপনি সেভাবেই প্রস্তুত থাকুন।
-অঞ্জলীর কথা শুনে কমলেশ বাবু বসা থেকে লাফিয়ে উঠলেন।ওয়াট!! কি বলো তুমি??এটা সত্যি?তুমি জানলে কি করে?
-অঞ্জলী শান্ত ভাবেই বললো,ঠান্ডা হন আপনি আর আমার কথা শুনুন। আম খান আটির খবর দিয়ে আপনার কি?
-আরে কিভাবে ঠান্ডা হবো,এমনটা হলে তো আমাদের বাজীমাত।
-হুম জানি। আর আমি তো আপনাকে কথাও দিয়েছি। তাই আগে আমার কথা শুনুন।
-হুম বলুন!!
-দেখুন আমি কোন রাজনৈতিক দলের লোক না,তাই আমার কথা আপনি কোথাও উচ্চারণ করতে পারবেন না।
-ওকে করবো না। তারপর ?
-আজ বিকালে যখন নিউজে দেখাবে খবরটা তখন আপনারা প্রতাপ হাজরা আর উনার দলের উপর হামলে পরবেন আপনাদের রাজনৈতিক নিয়মে। উনি অস্বীকার করবে এটাই স্বাভাবিক। তারপর কাল ঠিক দুপুরে আর একটা নিউজ বের হবে।যে প্রতাপ হাজরা একটা নির্মম ধর্ষক।সেটা ভিডিও সহ অডিও ফুটেজ।একটা দলের মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থীর এমন প্রমাণ পাবার পর আপনারা কি করবেন?সেটা কি আর বলে দিতে হবে ?
-আমি জানিনা তুমি যা বলছো সত্যি কিনা! যদি তুমি যা যা বললে সব সত্যি হয়,তাহলে তোমাকে আর কিছু বলতে হবেনা ওই প্রতাপকে ল্যাং মেরে কিভাবে ফেলতে হয় সেটা তুমি শুধু দেখো।
-কিন্তু আমার লাভের দিকটা ভুলে যাবেন না। অঞ্জলী বললো।
-ও হা তুমি কি চাও সেটা তো বললেনা ?
-সেটা সময় হলে বলবো। আপাতত এইটুকু বলে রাখী প্রতাপ হাজরার চৌদ্দ শীকের ঘানিটা যেন কনফার্ম হয় সেটা লক্ষ্য রাখবেন। আর এতো রিস্কে আপনার জন্য কাজ করছি তাই প্রশাসনিক দিক থেকে যদি কোন বিপদে পরি সেটা একটু দেখবেন আমার জন্য। আফটর অল আপনি রাজ্য মুখ্য মন্ত্রী বলে কথা।
-আহ তুমি বার বার এমন ভাবে বলছো যেন,আমি মুখ্যমন্ত্রী হয়ে গেছি। তবুও বলছি মিশন যদি সফল হয় তাহলে তোমাকে সব দিক থেকে সেফ রাখা আমার দায়িত্ব।
-আচ্ছা তাহলে ভালো থাকবেন। বলে ফোন রেখে দিলো।
কমলেশ মুখার্জী আজ অনেক আনন্দিত যদি অঞ্জলী মেয়েটা যেসব বললো একে বারে সঠিক সময়ের সঠিক কাজ। ভোটের মুখে বিরোধীদল নিজের সামলে নেবার সময় ও পাবেনা। ফোন রেখে অঞ্জলী কিছুটা রিলাক্স আপাতত কিছু কাজ সারা হলো।এখন যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে।আততায়ী যে ভাবে উঠে পরে লেগেছে অমিত এবং তার উপরও যে কোন সময় আক্রমন করতে পারে।কিন্তু এই আততায়ী খুনি কে হতে পারে!? মনিদার নাম করে আশ্রমে ঢুকছিলো,রামলাল চোখে কম দেখায় সেভাবে চিনতে পারেনি। খুনির ভয় ছিলো সিধু যদি কিছু বলে দেয় তার সম্পর্কে সেই ভয়ে হয়তো সিধুকে চিরতরে শেষ করে দিলো।অঞ্জলীর ভাবনার ছেদ পরলো মোবাইল বাজার শব্দে।বিন্দু বৌদি আবার এই সময় কি মনে করে কল দিলো। অঞ্জলী রিসিভ করতেই বিন্দু বললো কি রে মুখপুড়ী এতোদিন তো চুপি চুপি আমার ঠাকুরপোর কচি মাথা চিবিয়েছিস।তা এখন নাঁচতে নেমে ঘোমটা টেনে বসে থাকলে হবে।বলি দিনক্ষন তো ঠিক করলাম তো কেনাকাঁটা তো করতে হবে?সে তোমরা করো আমাকে বলছো কেন?মজা করে বললো অঞ্জলী।তবে রে মুখপুড়ি বড় কথা শিখেছিস তাহলে যাই ঠাকুরপোর কাছে জিজ্ঞেস করি যে তোর কোন সাইজের ব্রা প্যান্টি লাগে! কেমন শাড়ি কিনবো?বিন্দুর কথা শুনে অঞ্জলীর মুখ লাল হয়ে গেলো।এই থামো না বৌদি সকাল সকাল কি শুরু করলে বলো। আচ্ছা বলো এখন আমার কি করতে হবে? তুই চলে আয় এখানে আর বিয়ের আগ পর্যন্ত এখানেই থাকবি বিন্দু বললো।এই না বৌদি আর দুটো দিন সময় দাও না আমার লক্ষী বৌদি প্লিজ। তারপর তুমি যা বলবে তাই হবে।বিন্দু কিছুতেই মানতে নারাজ তারপর বললো আচ্ছা কথা দিচ্ছিসতো? হা বাবা কথা দিচ্ছি অঞ্জলী বললো।আচ্ছা মনে থাকে যেন বলে বিন্দু ফোন রেখে দিলো।
বৌদির মনটা অনেক ভালো,যাক ভালো লাগলো তার বিয়ে নিয়ে কেউ একজন খুব ভাবছে। তার নিজেরই তো মনে নেই বিয়ের কথা।উফ রাজকুমারের সাথে সব সময় এক সাথে থাকবে,সারা রাত ও উফফ আর ভাবতে পারেনা অঞ্জলী চেরার মুখে সুরসুর করছে। ধুর অসভ্য কি ভাবছি আমি বলে নিজেই নিজের কাছে লজ্জা পেল অঞ্জলী।উঠে আশ্রমের কাজ দেখতে গেল অঞ্জলী ।
হঠাৎ সিধুর উবে যাওয়াতে মনি শংকর কিছুটা চিন্তিত!!না বলে কোথায় হাওয়া হয়ে গেল।কিন্তু মনি শংকর আর সিধুর ব্যাপারে আগের মত ইন্টারেষ্ট না। কয়েক বার কল করেও পায়নি।যাক যেখানে যায় যাক আপদ বিদায় হোক নিজের মনেই বললো মনি শংকর।অঞ্জলী আশ্রমের কাজ দেখে রুমে এসে বসতেই রিসেপসনের সুদিপ্তা কল করে বললো ম্যাম ম্যাগী নামে একজন আর সুব্রত স্যার দেখা করতে এসেছে।ওকে ওদের আমার রুমে পাঠিয়ে দাও বললো অঞ্জলী।ম্যাগীকে সাথে নিয়ে রুমে ঢুকলো সুব্রত।ম্যাগী এসেই অঞ্জলীকে জরিয়ে ধরে বললো কেমন আছো? সুব্রত বললো ম্যাম বিরক্ত করলাম নাকি? না ব্যাটা বোস। তারপর ওদের বসিয়ে অঞ্জলী চলে গেল একটু পর তিন কাপ কফি হাতে ঢুকলো।কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললো তো বলো কি ব্যাপার।ম্যাগী বললো আমার কোন কাজ নেই সুব্রত বললো তাই এলাম। অঞ্জলী শুনে বললো হুম বুঝেছি ডাল মে কুছ কালা হে! অঞ্জলীর কথা শুনে ম্যাগী চোখ পাকিয়ে তাকালো আর সুব্রত লজ্জায় মুখ নিচু করলো।তারপর অঞ্জলী বললো তো বলো ব্যাটা কি খবর?সুব্রত নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বললো দুইটা নিউজ আছে একটা ভালো আর একটা একটু জটিল বিষয় বলেন আগে কোনটা শুনবেন? অঞ্জলী একটু ভেবে বললো আগে জটিলটা শুনি। সুব্রত ম্যাগীর দিকে তাকতেই অঞ্জলী বললো সমস্যা নাই তুমি বলতে পারো। আসলে ম্যাম ওই ড্রাগের ব্যাপারটা!ওই চালানে অমিত স্যারে সই ছিলো। হোয়াট !?? অঞ্জলী খেঁকিয়ে উঠলো। হা ম্যাম এটাই সত্যি বলে সুব্রত পকেট থেকে চালান কপি গুলা অঞ্জলীর হাতে দিলো।অঞ্জলী চোখ বুলিয়ে দেখলো সুব্রত যা বলছে তা সঠিক। তারপর একটু চুপ থেকে বললো আচ্ছা এগুলা আমার কাছে থাক এটা নিয়ে আমি পরে চিন্তা ভাবনা করবো।এখন বলো গুড নিউজটা কি?সুব্রত বললো ম্যাম এতো দিনে আমার স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে আমার বিদেশে যাবার সব কাগজ রেডি আগামী পরশু ফ্লাইট।অবশ্য সব ক্রেডিট ম্যাগীর ওর জন্য এতো তাড়াতাড়ি সব সম্ভব হলো। ওয়াও এতো দারুন খবর। মনটা একেবারে খুশি করে দিলে ব্যাটা।অঞ্জলী সুব্রতর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো ছোট বেলায় এনেছিলাম এখন আমার ছেলেটা কত বড় হয়ে গেছে। অঞ্জলীর মাতৃ পরশে সুব্রতর চোখের কোণ ও ভিজে উঠলো। এই ম্যাম না থাকলে হয়তো রাস্তার আর দশটা ছেলের মত তারও জায়গা হতো ফুটপাথে। সুব্রত নিজেকে সামলে বললো ম্যাম এখন উঠি অফিসে কিছু কাজ আছে।ম্যাগী বললো আমি কিছু সময় থাকবো।সুব্রত চলে যেতেই ম্যাগী বললো জানো সিধু হারামজাদাকে খু্জে পাওয়া যাচ্ছেনা।ম্যাগীর কথা শুনে অঞ্জলী রুমের দরজা লক করে এসে বললো একটা খারাপ ব্যাপার ঘটে গেছে ম্যাগী।ম্যাগী বিষ্মিত ভাবে অঞ্জলীর দিকে তাকালো। তারপর অঞ্জলী সিধুর সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা বললো ম্যাগীকে।সব শুনে ম্যাগী চুপচাপ বসে থাকলো।তারপর বললো কিন্তু অঞ্জু এসব করছেটা কে?সেটাই তো বুঝতে পারছিনা ম্যাগী।কিন্তু ব্যাপারটা আর রাখঢাক নেই সরাসরি খুনোখুনিতে চলে এসেছে,আর সেটা এখন ভয়ের কারণ। অঞ্জলীর সাথে আরো কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে চলে গেল ম্যাগী।
মঞ্চে ভাষণ দিচ্ছে প্রতাপ হাজরা এমন সময় তার মোবাইলে একটা MMS এলো ১ মিনিটের একটা ক্লিপ্স তাতেই ভাষণ থেমে গেলো।মঞ্চে উপস্থিত সবাই প্রতাপ হাজরার দিকে তাকালো অবস্থা বিবেচনা করে হাত তুলে সবাইকে আশ্বস্ত করে কোন রকমে ভাষণ শেষ করে অসুস্থ অনুভব করছে বলে তড়িঘড়ি করে বাসায় এলো। সবাই সাথে আসতে চাইলেও উনি বললেন আমি ঠিক আছি একটু একা একা রেষ্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে। তারপর সরাসরি নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে ভিডিও টা আর একবার চালু করলো।মন্ত্রী বালেশ্বর ঝাঁকে হত্যার ব্যাপারে যে পরিকল্পনা করা হয়েছিলো নার্গিসের সাথে সেটার এক অংশ। ভোটের মুখে এমনটা আশা করেনি। যে নম্বর থেকে MMS টা এসেছে সেটায় কল করতেই বন্ধ বললো। তাড়াতাড়ি করে নার্গিসের নম্বরে কল করতেও একই অবস্থা। তাহলে কি নার্গিস বেইমানি করলো। আর এটা রেকডিংই বা কখন করলো। মাথায় কোন কাজ করছেনা প্রতাপ হাজরার!!এসব ভোটের পরে ফাঁস হলেও সে সামলে নিতো কিন্তু এখন তো !! উফ শালার মাগীটা !!!!
আশ্রমের কাছে এসে গাড়ি ওয়াশের জায়গায় রেখে সোজা রুমে ঢুকে ওয়াশরুমে রুমে ঢুকে গেল অঞ্জলী,নিজেকে পোশাক মুক্ত করে জলের কল ছেড়ে দিয়ে মেঝেতে বসে পরলো।সমস্ত ঘটনা মনে করতেই শিউরে উঠলো অঞ্জলী।নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে এখন! সিধুকে ধরে না আনলে হয়তো সে এখনো বেঁচে থাকতো।পরক্ষণে ভাবলো না সিধুর বেঁচে থাকার কোন অধিকার ছিলো না,সে আমার রাজকুমারের ক্ষতি চেয়েছিলো।একটু অনুশুচনা হচ্ছে ঠিকই তবুও মনে কোন গ্লানি নেই তার।এখন ভয়ের ব্যাপার সিধুকে এখানে আনা হয়েছিলো খুনি ছাড়া কেউ জানে না।তাছাড়া তখন সিধুর কাছে মোবাইল ছিলো পুলিশ কেস হলে তো লাষ্ট ফোন লোকেশন ট্র্যাক করে যদি এই পর্যন্ত পৌঁছে যায়।না আর ভাবতে পারেনা অঞ্জলী।নিজের একটু ভুলের জন্য এখন এতো চিন্তা করতে হচ্ছে।ফ্রেস হয়ে রুমে ঢুকে বিছানায় বসতেই চোখে ঘুম জড়িয়ে আসছে।বাইরে তাকিয়ে দেখলো আশ্রমের সবাই উঠে পরেছে।না এখন আর ঘুমালে চলবেনা।টিভিটা চালু করে কফি বানাতে গেল অঞ্জলী,একটু পর ফিরে এসে কফির মগ হাতে নিয়ে টিভিটা চালু করে খবরেে চ্যানেলে দিলো।টিভিতে এখন আসন্ন নির্বাচনের জনমত বিষয়ক একটা অনুষ্ঠান হচ্ছে।তাতে দেখা যাচ্ছে সরকারী দল বেশির ভাগ জায়গাতে এগিয়ে আছে।অঞ্জলী ফোন হাতে নিয়ে কাকে যেন ডায়েল করলো।কমলেশ মুখার্জী চিন্তিত ভাবে বসে আছে হাতে চায়ের কাপ। এমন সময় তার ফোনটা বেজে উঠলো দেখলো অচেনা নম্বর রিসিভ করে কানে নিতেই ওপাশ থেকে বললো,,,
-আপনি অভিনয়টা কেমন পারেন?
-সকাল সকাল এমন কথা শুনে মেজাজ হারিয়েই বললো আবার আপনি কল করেছেন হেয়ালি করতে?আগে আপনার পরিচয় দিন! তারপর অন্য কথা!
-আচ্ছা আপনার ইচ্ছাই পূরণ হোক।আমি অঞ্জলী রায় চৌধুরী!!
-অঞ্জলী,অঞ্জলী !! মানে ওই আশ্রম! রায় গ্রুপ!!
-হা ঠিক চিনেছেন!এর বেশি কিছু আপনার না জানলেও চলবে।টিভিতে আজকের জনমত দেখলাম আপনাদের অবস্থা বিশেষ ভালো না।আর আমি আপনাকে কথা দিয়েছিলাম,সেই জন্যই কল করেছি।একনাগারে কথা গুলা বলে অঞ্জলী থামলো।
-ওহ হা! কিন্তু আপনার কথা মতো তো কিছুই হচ্ছেনা।
-হুম হয়নি।আজ থেকে হবে।
-কমলেশ মুখার্জী উৎসাহিত ভাবে বললো,কি ভাবে ?
-শুনুন মন্ত্রী বালেশ্বর ঝাঁর হত্যার পিছে প্রতাপ হাজরার হাত আছে। এটা আজ বিকালের বেকিং নিউজ হবে। আপনি সেভাবেই প্রস্তুত থাকুন।
-অঞ্জলীর কথা শুনে কমলেশ বাবু বসা থেকে লাফিয়ে উঠলেন।ওয়াট!! কি বলো তুমি??এটা সত্যি?তুমি জানলে কি করে?
-অঞ্জলী শান্ত ভাবেই বললো,ঠান্ডা হন আপনি আর আমার কথা শুনুন। আম খান আটির খবর দিয়ে আপনার কি?
-আরে কিভাবে ঠান্ডা হবো,এমনটা হলে তো আমাদের বাজীমাত।
-হুম জানি। আর আমি তো আপনাকে কথাও দিয়েছি। তাই আগে আমার কথা শুনুন।
-হুম বলুন!!
-দেখুন আমি কোন রাজনৈতিক দলের লোক না,তাই আমার কথা আপনি কোথাও উচ্চারণ করতে পারবেন না।
-ওকে করবো না। তারপর ?
-আজ বিকালে যখন নিউজে দেখাবে খবরটা তখন আপনারা প্রতাপ হাজরা আর উনার দলের উপর হামলে পরবেন আপনাদের রাজনৈতিক নিয়মে। উনি অস্বীকার করবে এটাই স্বাভাবিক। তারপর কাল ঠিক দুপুরে আর একটা নিউজ বের হবে।যে প্রতাপ হাজরা একটা নির্মম ধর্ষক।সেটা ভিডিও সহ অডিও ফুটেজ।একটা দলের মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থীর এমন প্রমাণ পাবার পর আপনারা কি করবেন?সেটা কি আর বলে দিতে হবে ?
-আমি জানিনা তুমি যা বলছো সত্যি কিনা! যদি তুমি যা যা বললে সব সত্যি হয়,তাহলে তোমাকে আর কিছু বলতে হবেনা ওই প্রতাপকে ল্যাং মেরে কিভাবে ফেলতে হয় সেটা তুমি শুধু দেখো।
-কিন্তু আমার লাভের দিকটা ভুলে যাবেন না। অঞ্জলী বললো।
-ও হা তুমি কি চাও সেটা তো বললেনা ?
-সেটা সময় হলে বলবো। আপাতত এইটুকু বলে রাখী প্রতাপ হাজরার চৌদ্দ শীকের ঘানিটা যেন কনফার্ম হয় সেটা লক্ষ্য রাখবেন। আর এতো রিস্কে আপনার জন্য কাজ করছি তাই প্রশাসনিক দিক থেকে যদি কোন বিপদে পরি সেটা একটু দেখবেন আমার জন্য। আফটর অল আপনি রাজ্য মুখ্য মন্ত্রী বলে কথা।
-আহ তুমি বার বার এমন ভাবে বলছো যেন,আমি মুখ্যমন্ত্রী হয়ে গেছি। তবুও বলছি মিশন যদি সফল হয় তাহলে তোমাকে সব দিক থেকে সেফ রাখা আমার দায়িত্ব।
-আচ্ছা তাহলে ভালো থাকবেন। বলে ফোন রেখে দিলো।
কমলেশ মুখার্জী আজ অনেক আনন্দিত যদি অঞ্জলী মেয়েটা যেসব বললো একে বারে সঠিক সময়ের সঠিক কাজ। ভোটের মুখে বিরোধীদল নিজের সামলে নেবার সময় ও পাবেনা। ফোন রেখে অঞ্জলী কিছুটা রিলাক্স আপাতত কিছু কাজ সারা হলো।এখন যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে।আততায়ী যে ভাবে উঠে পরে লেগেছে অমিত এবং তার উপরও যে কোন সময় আক্রমন করতে পারে।কিন্তু এই আততায়ী খুনি কে হতে পারে!? মনিদার নাম করে আশ্রমে ঢুকছিলো,রামলাল চোখে কম দেখায় সেভাবে চিনতে পারেনি। খুনির ভয় ছিলো সিধু যদি কিছু বলে দেয় তার সম্পর্কে সেই ভয়ে হয়তো সিধুকে চিরতরে শেষ করে দিলো।অঞ্জলীর ভাবনার ছেদ পরলো মোবাইল বাজার শব্দে।বিন্দু বৌদি আবার এই সময় কি মনে করে কল দিলো। অঞ্জলী রিসিভ করতেই বিন্দু বললো কি রে মুখপুড়ী এতোদিন তো চুপি চুপি আমার ঠাকুরপোর কচি মাথা চিবিয়েছিস।তা এখন নাঁচতে নেমে ঘোমটা টেনে বসে থাকলে হবে।বলি দিনক্ষন তো ঠিক করলাম তো কেনাকাঁটা তো করতে হবে?সে তোমরা করো আমাকে বলছো কেন?মজা করে বললো অঞ্জলী।তবে রে মুখপুড়ি বড় কথা শিখেছিস তাহলে যাই ঠাকুরপোর কাছে জিজ্ঞেস করি যে তোর কোন সাইজের ব্রা প্যান্টি লাগে! কেমন শাড়ি কিনবো?বিন্দুর কথা শুনে অঞ্জলীর মুখ লাল হয়ে গেলো।এই থামো না বৌদি সকাল সকাল কি শুরু করলে বলো। আচ্ছা বলো এখন আমার কি করতে হবে? তুই চলে আয় এখানে আর বিয়ের আগ পর্যন্ত এখানেই থাকবি বিন্দু বললো।এই না বৌদি আর দুটো দিন সময় দাও না আমার লক্ষী বৌদি প্লিজ। তারপর তুমি যা বলবে তাই হবে।বিন্দু কিছুতেই মানতে নারাজ তারপর বললো আচ্ছা কথা দিচ্ছিসতো? হা বাবা কথা দিচ্ছি অঞ্জলী বললো।আচ্ছা মনে থাকে যেন বলে বিন্দু ফোন রেখে দিলো।
বৌদির মনটা অনেক ভালো,যাক ভালো লাগলো তার বিয়ে নিয়ে কেউ একজন খুব ভাবছে। তার নিজেরই তো মনে নেই বিয়ের কথা।উফ রাজকুমারের সাথে সব সময় এক সাথে থাকবে,সারা রাত ও উফফ আর ভাবতে পারেনা অঞ্জলী চেরার মুখে সুরসুর করছে। ধুর অসভ্য কি ভাবছি আমি বলে নিজেই নিজের কাছে লজ্জা পেল অঞ্জলী।উঠে আশ্রমের কাজ দেখতে গেল অঞ্জলী ।
হঠাৎ সিধুর উবে যাওয়াতে মনি শংকর কিছুটা চিন্তিত!!না বলে কোথায় হাওয়া হয়ে গেল।কিন্তু মনি শংকর আর সিধুর ব্যাপারে আগের মত ইন্টারেষ্ট না। কয়েক বার কল করেও পায়নি।যাক যেখানে যায় যাক আপদ বিদায় হোক নিজের মনেই বললো মনি শংকর।অঞ্জলী আশ্রমের কাজ দেখে রুমে এসে বসতেই রিসেপসনের সুদিপ্তা কল করে বললো ম্যাম ম্যাগী নামে একজন আর সুব্রত স্যার দেখা করতে এসেছে।ওকে ওদের আমার রুমে পাঠিয়ে দাও বললো অঞ্জলী।ম্যাগীকে সাথে নিয়ে রুমে ঢুকলো সুব্রত।ম্যাগী এসেই অঞ্জলীকে জরিয়ে ধরে বললো কেমন আছো? সুব্রত বললো ম্যাম বিরক্ত করলাম নাকি? না ব্যাটা বোস। তারপর ওদের বসিয়ে অঞ্জলী চলে গেল একটু পর তিন কাপ কফি হাতে ঢুকলো।কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললো তো বলো কি ব্যাপার।ম্যাগী বললো আমার কোন কাজ নেই সুব্রত বললো তাই এলাম। অঞ্জলী শুনে বললো হুম বুঝেছি ডাল মে কুছ কালা হে! অঞ্জলীর কথা শুনে ম্যাগী চোখ পাকিয়ে তাকালো আর সুব্রত লজ্জায় মুখ নিচু করলো।তারপর অঞ্জলী বললো তো বলো ব্যাটা কি খবর?সুব্রত নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বললো দুইটা নিউজ আছে একটা ভালো আর একটা একটু জটিল বিষয় বলেন আগে কোনটা শুনবেন? অঞ্জলী একটু ভেবে বললো আগে জটিলটা শুনি। সুব্রত ম্যাগীর দিকে তাকতেই অঞ্জলী বললো সমস্যা নাই তুমি বলতে পারো। আসলে ম্যাম ওই ড্রাগের ব্যাপারটা!ওই চালানে অমিত স্যারে সই ছিলো। হোয়াট !?? অঞ্জলী খেঁকিয়ে উঠলো। হা ম্যাম এটাই সত্যি বলে সুব্রত পকেট থেকে চালান কপি গুলা অঞ্জলীর হাতে দিলো।অঞ্জলী চোখ বুলিয়ে দেখলো সুব্রত যা বলছে তা সঠিক। তারপর একটু চুপ থেকে বললো আচ্ছা এগুলা আমার কাছে থাক এটা নিয়ে আমি পরে চিন্তা ভাবনা করবো।এখন বলো গুড নিউজটা কি?সুব্রত বললো ম্যাম এতো দিনে আমার স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে আমার বিদেশে যাবার সব কাগজ রেডি আগামী পরশু ফ্লাইট।অবশ্য সব ক্রেডিট ম্যাগীর ওর জন্য এতো তাড়াতাড়ি সব সম্ভব হলো। ওয়াও এতো দারুন খবর। মনটা একেবারে খুশি করে দিলে ব্যাটা।অঞ্জলী সুব্রতর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো ছোট বেলায় এনেছিলাম এখন আমার ছেলেটা কত বড় হয়ে গেছে। অঞ্জলীর মাতৃ পরশে সুব্রতর চোখের কোণ ও ভিজে উঠলো। এই ম্যাম না থাকলে হয়তো রাস্তার আর দশটা ছেলের মত তারও জায়গা হতো ফুটপাথে। সুব্রত নিজেকে সামলে বললো ম্যাম এখন উঠি অফিসে কিছু কাজ আছে।ম্যাগী বললো আমি কিছু সময় থাকবো।সুব্রত চলে যেতেই ম্যাগী বললো জানো সিধু হারামজাদাকে খু্জে পাওয়া যাচ্ছেনা।ম্যাগীর কথা শুনে অঞ্জলী রুমের দরজা লক করে এসে বললো একটা খারাপ ব্যাপার ঘটে গেছে ম্যাগী।ম্যাগী বিষ্মিত ভাবে অঞ্জলীর দিকে তাকালো। তারপর অঞ্জলী সিধুর সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা বললো ম্যাগীকে।সব শুনে ম্যাগী চুপচাপ বসে থাকলো।তারপর বললো কিন্তু অঞ্জু এসব করছেটা কে?সেটাই তো বুঝতে পারছিনা ম্যাগী।কিন্তু ব্যাপারটা আর রাখঢাক নেই সরাসরি খুনোখুনিতে চলে এসেছে,আর সেটা এখন ভয়ের কারণ। অঞ্জলীর সাথে আরো কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে চলে গেল ম্যাগী।
মঞ্চে ভাষণ দিচ্ছে প্রতাপ হাজরা এমন সময় তার মোবাইলে একটা MMS এলো ১ মিনিটের একটা ক্লিপ্স তাতেই ভাষণ থেমে গেলো।মঞ্চে উপস্থিত সবাই প্রতাপ হাজরার দিকে তাকালো অবস্থা বিবেচনা করে হাত তুলে সবাইকে আশ্বস্ত করে কোন রকমে ভাষণ শেষ করে অসুস্থ অনুভব করছে বলে তড়িঘড়ি করে বাসায় এলো। সবাই সাথে আসতে চাইলেও উনি বললেন আমি ঠিক আছি একটু একা একা রেষ্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে। তারপর সরাসরি নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে ভিডিও টা আর একবার চালু করলো।মন্ত্রী বালেশ্বর ঝাঁকে হত্যার ব্যাপারে যে পরিকল্পনা করা হয়েছিলো নার্গিসের সাথে সেটার এক অংশ। ভোটের মুখে এমনটা আশা করেনি। যে নম্বর থেকে MMS টা এসেছে সেটায় কল করতেই বন্ধ বললো। তাড়াতাড়ি করে নার্গিসের নম্বরে কল করতেও একই অবস্থা। তাহলে কি নার্গিস বেইমানি করলো। আর এটা রেকডিংই বা কখন করলো। মাথায় কোন কাজ করছেনা প্রতাপ হাজরার!!এসব ভোটের পরে ফাঁস হলেও সে সামলে নিতো কিন্তু এখন তো !! উফ শালার মাগীটা !!!!
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!