Thread Rating:
  • 5 Vote(s) - 2.8 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
নীলা (সংগৃহীত)
#5
নীলা - পর্ব ৪


দরজায় কলিং বেল বাজছে, ড্রেসিং গাউনটা পড়ে নীলা দরজার আইহোলে চোখটা রেখে দেখল ফুড অ্যাপের ডেলিভারি বয় খাবার হাতে দাঁড়িয়ে আছে | আগেই ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে পেমেন্ট করা ছিল, খাবারটা নিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিল নীলা ডাইনিং টেবিলের উপর প্যাকেটটা রেখে কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল, ডুব দিল স্মৃতির অন্দরমহলে | ওর মনে পড়ছিল কুণালের কথা | ক্লায়েন্ট, সার্ভিসের ব্যস্ততা ঘেরা দিনযাপনের শেষে যখন ওর চোখের জলের সঙ্গী হত বিছানার পাশে রাখা তুলোর বালিশ, ঠিক তখনই নীলার একাকীত্বে ঘেরা অন্ধকার জীবনে কুণাল এসেছিল একঝলক ঠান্ডা বাতাসের মতো ! কুণাল পেশায় ফটোগ্রাফার ছিল | ওর আওয়ার গ্লাস ফিগারের প্রশংসা করে বলেছিল, আমি টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করি | আপনার ফিগার যা আকর্ষণীয় টলিউডের অনেক হিরোইনেরই এমন নির্মেদ দীর্ঘদেহী চেহারা নেই ! আপনি নায়িকা হবার জন্য আবেদন করেন না কেন ? এত সুন্দর মুখশ্রী, বাঁশির মতো টিকালো নাক, রসালো ঠোঁট, দীঘল চুল, মাদকতায় পরিপূর্ণ ফিগার... আপনার জন্ম তো হিরোইন হবার জন্যই হয়েছে | আপনি এসব জায়গায় কি করছেন | প্রশংসায় কে না গলে ? নীলাও গলে গেল | ক্লায়েন্ট আর প্রফেশনাল এসকর্টের মধ্যকার সম্পর্কের বাইরে ওদের আরো একটা সম্পর্ক তৈরি হল | ফটোশ্যুটের নাম করে কুণাল ওকে বিভিন্ন রিসর্টে নিয়ে যেত | সেখানকার লনে, সুইমিং পুলে বিকিনি পরা নীলার নানা ভঙ্গিমাকে নিজের দামী ডিএসএলআরে ক্যাপচার করত কুণাল | নীলা যখন স্ক্রিপ্ট পড়তে চাইত, কোন সিরিয়াল বা সিনেমার পরিচালক ওর ছবিগুলোকে পছন্দ করেছে কিনা জানতে চাইত কুণাল হেসে এড়িয়ে যেত... বলত চিন্তা কি সোনা ? আমি তো সবসময় তোমার পাশে আছি | তুমি চিন্তা করো না সোনা আমি বেশ কয়েকজন পরিচালক, প্রযোজকের সঙ্গে কথা বলেছি, তোমার নাম অ্যাপ্রোচ করেছি | একটু অপেক্ষা করো একটা না একটা প্রজেক্ট লেগেই যাবে !

ছ'মাস কুণালের সঙ্গে সম্পর্কে ছিল নীলা | এই ছ'মাস ধরে সিনেমা বা সিরিয়ালে ডাক পাওয়ার জন্য নীলা অনন্ত অপেক্ষা করে আছে... কিন্তু ঝোড়ো বাতাসেও কুণাল কোনদিনই সে সুখবর বয়ে আনতে পারে না ! তবুও কুণালের সঙ্গে নীলা রয়ে যায়... ফটোশ্যুট করে... আশায় আশায় ! যদি কোনোদিন শিকে ছেঁড়ে... কিন্তু সেই আপাত ঠান্ডা বাতাস যে জীবনের জন্য কতটা বিষাক্ত ছিল তা বুঝতে নীলার একটু বেশিই সময় লেগে গেছিল | কুণাল দাম দিয়ে ওর সময় কিনত গল্প করবে বলে, ছবি তুলবে বলে ! নামীদামী রিসর্ট, নীলচে জলের সুইমিং পুল, দীঘা-মন্দারমণি-তাজপুরের সৌন্দর্য দেখিয়ে নীলাকে ক্রমশঃ মুগ্ধ করছিল কুণাল | নীলার মনে হচ্ছিল এতদিন বাদে ও এমন একটা মানুষ পেয়েছে যে ওকে সময় দেয়, মনটাকে বোঝে, ভবিষ্যতের কথা ভাবে ! নীলার পেশায় পয়সা মেলে শরীরের জন্য গল্প করার জন্য নয় ! কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় কুণালের সঙ্গে ও কত ঘুরেছে... প্রিন্সেপ ঘাট, ভিক্টোরিয়া, ময়দান... সেখানে ও রঙ-বেরঙের বেলুন কিনত, ভীড় রাস্তায় সিগারেটের ধোঁয়ায় একলা হতে চাইত | আর হ্যাঁ নানা পোজে ফটোশ্যুটও চলত দেদার !কুণাল ওকে নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখাত... বারবার সুযোগ না পাওয়া সত্ত্বেও নীলা ওর স্বপ্নের ফেরিওয়ালার গল্পে বিশ্বাস করত কিন্তু হঠাৎ কুণালের মুখোশটা খুলে আসল চেহারাটা ওর কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল ! নীলা স্বপ্নের ঘোর থেকে জেগে উঠল | কুণালের জন্মদিনে সারপ্রাইজ দিতে এসে নীলা নিজের সারপ্রাইজড হয়ে এক ঝটকায় কুণালের ফ্ল্যাটের দরজার সামনে থেকে পালিয়ে এসেছিল | ভাগ্যিস সেদিন কুণালের ফ্ল্যাটের সদর দরজা খানিকটা ফাঁক করা ছিল, নইলে অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়া নীলা আরো কোন ভয়ঙ্কর অন্ধকারে তলিয়ে যেত.... সেটা ভাবলেই আজো নীলা শিউরে ওঠে | তবে একথা সত্যি কুণাল ওকে নায়িকা বানাতেই চেয়েছিল তবে ছবির নয়, নীল ছবির .....
দরজার ফাঁক থেকে নীলা শুনতে পেয়েছিল ফোনে কুণাল কোন একজনকে বলছিল আরে আমি সত্যি বলছি আমি একদম নিজের চোখে দেখেছি সুপার সেক্সি ফিগার ! ছবি ? মেহেকের নেকেড ছবি তো এই মুহূর্তে আমার কাছে নেই ! তবে শর্ট ড্রেস, বিকিনি পরা শট তো আপনাকে পাঠিয়েছি | আপনি যদি ওকে আপনার ব্লু ফিল্মে হিরোইন হিসাবে সাইন করাতে গ্রিন সিগন্যাল দেন তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যে আপনার কাছে মেহেকের ভেরিয়াস টাইপ নেকেড পিক পৌঁছে যাবে | আমার পিঠব্যাগটা আজই চুরি গেছে, জানেনই তো আজকাল চোরগুলো কেমন হাতসাফাইতে ওস্তাদ ! প্রচুর লোকসান হয়ে গেল... ওতে আমার ল্যাপটপ, ক্যামেরা পেন ড্রাইভটা ছিল.... নইলে আজই আপনাকে মেহেকের কিছু নেকেড স্টিল পাঠাতে পারতাম ! আরে স্যার বুঝছেন না কেন ? মালটা ঝক্কাস, পুরো চারশো চল্লিশ ভোল্ট, একবার ছ্যাঁকা খেলে না ! আপনার নীল ছবি ইন্টারনেট দুনিয়ায় ছেয়ে যাবে..... টাকার কথা ছাড়ুন ডলারে কামাবেন ডলারে | আমি কি আর মেহেকের পিছনে এত সময় এমনি এমনি নষ্ট করেছি ? মেয়েটা আমার পিছনে একেবারে দিওয়ানি স্যার দিওয়ানি ! শ্যুটিংয়ের জন্য যেখানে নিয়ে যেতে বলবেন নিয়ে চলে যাব .... তারপর ড্রাগসের জাস্ট কয়েকটা ইনজেকশন... আর একবার মালটাকে যদি নেশার বশে আনা যায় তখন টাকার জন্য সবই করবে ! ব্লু ফিল্ম তো কোন ছাড় ! আপনার দু-নম্বরী ব্যবসার ড্রাগস, আর্মস সবই পাচার করাতে পারবেন ! আমি মেহেকের বেশ কয়েকটা ছবি আপনাকে পাঠিয়ে দিয়েছি, আপনি শুধু জানান ডিলটা ফাইনাল কিনা ! তবে আমার রেট কিন্তু এক ফিফটি, ফিফটি ল্যাকস ! না, না... কমাতে পারব না ! শুনলেন তো সব গ্যাজেটগুলো চুরি হয়ে গেছে ওগুলো আবার নতুন করে কিনতে হবে... জানেন তো একটা শ্যুটকে পারফেক্ট করতে ক্যামেরার পিছনে থাকা ফটোগ্রাফারের গুরুত্ব কতটা ! আর অপেক্ষা করে নি নীলা ওরফে মেহেক .... সোজা এসে এসকর্ট এজেন্সিতে কুণালের নামে রিপোর্ট করে | আর এসকর্ট এজেন্সিগুলো এ ব্যপারে ওদের মেয়েদের যথেষ্ট সাপোর্ট করে আর নীলা ওদের স্টার, ওকে তো হেল্প করবেই ! তবুও রিপোর্ট করার পর থেকেই কুণাল হঠাৎ করে ওর ফ্ল্যাটে এসে ওকে আক্রমণ করতে পারে এমন একটা ভয় নীলাকে রাতে ঘুমাতে দিচ্ছিল না ! যতই হোক টাকাটা তো‌ কম নয়, পঞ্চাশ লাখ ! নীলা ঠিকঠাকভাবে কাস্টমারকে‌ স্যাটিসফাই করতে পারছিল না ! ঠিক করে না ঘুমানোয় ওর শরীর জুড়ে ক্লান্তিরা বাসা বাঁধছিল | কিন্তু এসব এজেন্সির রুল খুব কড়া, কাস্টমারকে স্যাটিসফাই না করতে পারলে তোমার কেরিয়ার খতম | কাস্টমারদের কাছ থেকে নীলার নামে রিপোর্টের পর রিপোর্ট আসছিল | এজেন্সি থেকে দুবার ওয়ার্নিং বেল পাওয়ার পর নীলা সিদ্ধান্ত নেয় ও নিজের পুরোনো ফ্ল্যাটটা বেচে দেবে আর সেই টাকার সঙ্গে আরো কিছু টাকা ইনভেস্ট করে নতুন ফ্ল্যাটে উঠে যাবে .... আর তারই ফসল আজকের এই বিলাসবহুল ফ্ল্যাট | এখানকার সিকিউরিটি খুব কড়া, কুণাল কোনোদিনই এখানে ঢুকতে পারবে না ! হঠাৎ মোবাইল ফোনের ট্রিং ট্রিং শব্দে বর্তমানে ফিরে এল নীলা | মেসেজ বলছে সুপ্রতীক আসছে ! এতরাতে সুপ্রতীকের নীলার সঙ্গে কি দরকার ?
( ক্রমশঃ )
Like Reply


Messages In This Thread
RE: নীলা (সংগৃহীত) - by Brihannala - 25-11-2020, 01:02 PM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)