Thread Rating:
  • 5 Vote(s) - 2.8 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
নীলা (সংগৃহীত)
#4
নীলা - পর্ব ৩


রিশেপসনের মেয়েটার কাছে নিজের পরিচয় দিয়ে নির্দিষ্ট রুম নম্বর জেনে দরজায় মৃদু নক করতেই যে লোকটি বেরিয়ে এসেছিল তাকে দেখে চারশো চল্লিশ ভোল্টের ঝটকা খেয়েছিল নীলা ! দেবাশিস ? ও এখানে কি করছে ? অনেকদিন ধরেই দেবাশিসের কানে উটকো খবর আসছিল ওর স্ত্রী নীলাকে শর্ট ড্রেস পড়ে বিভিন্ন ফাইভ স্টার হোটেলের রিশেপসনে, নামীদামী শপিং মলে বিভিন্ন উচ্চবিত্ত পুরুষের বক্ষলগ্না হয়ে হাসতে হাসতে বেরোতে দেখা গেছে | ব্যপারটায় দেবাশিস তেমন একটা আমল দিত না, বিয়ের পর থেকেই ও নীলাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করত | ওর দৃঢ়বিশ্বাস ছিল নীলা কোনোদিনই ওকে‌ ঠকাতে পারে না... কেউ কাগে‌ কান নিয়ে গেছে বললেই নিজের কানে হাত না দিয়ে কাগের পিছনে দৌড়য় কেবল বোকারা ! কিন্তু যেদিন ওদের অফিসের একজন সিনিয়র কলিগ চ্যাটার্জিদা এসে দেবাশিসকে ডেকে বললেন উনি নাকি নিজের চোখে নীলাকে ওদের বসের সঙ্গে ফাইভ স্টার হোটেল থেকে বেরোতে‌ দেখেছেন, সেদিন আর অবিশ্বাসের করার কোনো‌ জায়গা ছিল না | চ্যাটার্জিদা মিথ্যে বলার লোক নন, অফিসে কোনরকম পিএনপিসি করেন না, তাই ওনাকে অবিশ্বাস করা নেক্সট টু ইম্পসিবল | এক মুহূর্তের জন্য দেবাশিস ব্ল্যাক আউট হয়ে গেছিল | ওর মনে হচ্ছিল কে যেন ওর কানে তরল সীসা ঢেলে দিয়েছে | তবুও ও আমতা আমতা করে প্রতিবাদের চেষ্টা করেছিল | চ্যাটার্জিদা হেসে বলেছিলেন অভিজ্ঞ চোখ ভুল দেখে না দেবাশিস, পারলে মিসেসকে সামলাও | হাতের বাইরে বেরিয়ে গেলে কিন্তু.....

তারপর থেকে দেবাশিস খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নীলার চালচলন লক্ষ্য করে গেছে | কাজপাগল দেবাশিস অফিস কেটেছে নীলাকে ফলো করবে বলে ! নীলার পিছনে ফলো করে করে যেদিন ও প্রথমবারের জন্য নীলাকে এসকর্ট এজেন্সির অফিসে ঢুকতে দেখেছিল, সেদিন এক মুহূর্তের জন্য যেন ওর পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছিল | ওর মনে হয়েছিল ও যেন শূন্যে ভেসে আছে কেউ না ধরলে এখুনি ! রোদে দাঁড়িয়ে থেকে চোখে ভুল দেখেছে এমনটা ভেবে ও বাড়ির ল্যান্ডলাইনে ফোন লাগিয়েছিল | কেউ ফোন তোলে নি ! চোখের সামনে সন্দেহকে সত্যি হতে দেখে দেবাশিসের পৃথিবী দুলছিল, ও কোনক্রমে এসকর্ট এজেন্সির ফোন নম্বরটা টুকে নিয়ে চলে এসেছিল | বাইরে পার্লারের বোর্ড ঝোলানো থাকলেও ওটা যে এসকর্ট এজেন্সি সেটা চ্যাটার্জিদা ওকে আগেই জানিয়ে দিয়েছিল | আর জানিয়েছিল এই পেশায় নীলার নাম মেহেক |দেবাশিস সেদিন রাতেই ওর একমাসের মাইনে জলাঞ্জলি দিয়ে ওই এজেন্সিতে ফোন করে নিজের ব
স্ত্রীর সঙ্গে একবার নতুন করে শোওয়ার অ্যাপয়মেন্ট ফিক্স করেছিল | যদিও শেষ অবধি দেবাশিস আশায় আশায় ছিল সব, সব মিথ্যে ! হয়ত হোটেল রুমে মেহেক নামের যে মেয়েটা ওকে সঙ্গ দিতে আসবে সে নীলা নয়, নীলার মত দেখতে কোন মেয়ে ! এমনটা তো কতই হয়... যমজ কি পৃথিবীতে নতুন নাকি ? এমনও তো হয় দুজন দুজনকে চেনেই না অথচ তাদের একইরকম দেখতে ! আহা এমনটা যদি হয়... এই আশাতেই দেবাশিস হোটেলে এসেছিল | কিন্তু রুমের দরজা খুলতেই ওকে দেখে নীলার বিস্ফারিত চোখ, তারপর এক দৌড়ে দরজা থেকে পালিয়ে যাওয়া দেখে দেবাশিস বুঝে ফেলে এসকর্ট সার্ভিস দেওয়া মেয়েটা অন্য কেউ নয়, তার মন্ত্র পড়ে বিয়ে করা স্ত্রী নীলা | নিজের চাহিদা পূরণের জন্য গৃহবধূ মেয়েটা আজ এই পথ বেছে নিয়েছে | ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ দেবাশিস নিজের সঙ্গে প্রচন্ড যুদ্ধ করে সেদিন গভীর রাতে যখন তার ছোট্ট দু-কামরার ফ্ল্যাটে ফিরেছিল তখন বাড়ির কোত্থাও নীলাকে খুঁজে পায় নি‌ | না বেডরুমে, না ডাইনিংয়ে, না কিচেনে... কোত্থাও কোত্থাও নীলার কোনো অস্তিত্ব ছিল না ! দেবাশিস বুঝেছিল নীলা স্বেচ্ছায় হারিয়ে গেছে, তাই পুলিশের কাছে গিয়ে রিপোর্ট লিখিয়ে ওকে আর বিব্রত করে নি | বাড়ির সামনে ছোট মদের দোকানটা থেকে কিনে আনা সস্তার বিলিতি তরল প্রথমবারের জন্য গলায় ঢেলে তরল আগুনে পুড়তে পুড়তে দেবাশিস ভেবেছিল অন্য অনেকের মতো ওরও নীলা সহ্য হল না !
সেদিনের ঝটকাটা সহ্য করতে পারে নি নীলা, হোটেল রুমে ক্লায়েন্টের ভূমিকায় দেবাশিসকে দেখে ও ভীষণরকম চমকে উঠেছিল ! পালাতে চেয়েছিল এই পৃথিবীর বুক থেকে ! শেষে কিনা দেবাশিস ? নিয়ম মেনে বিয়ে করা স্বামী দাম দিয়ে একদিনের জন্য ওর দেহ ভোগ করার অধিকার কিনেছে ? এক মুহূর্তের জন্য নীলার দুনিয়াটা যেন নরক হয়ে গেছিল ! পাগলের মতো দৌড়ে হোটেল থেকে পালিয়ে গিয়েছিল... গিয়েছিল সুপ্রতীকের কাছে, একটু আশ্রয়ের প্রত্যাশায় | নীলার মনে হয়েছিল ওকে গ্রাস করবে বলে ওর পিছু পিছু হোটেলটাও যেন তার দৈত্যাকার চেহারা নিয়ে দৌড়ে আসছে | সুপ্রতীকের ফ্ল্যাটে পৌঁছে নীলা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল | সব খুলে বলার পর সুপ্রতীকের দুকামরার ফ্ল্যাটে নীলা মাথা গোঁজার একটা আশ্রয় পেয়েছিল বটে তবে তার বিনিময়ে সুপ্রতীকের হাতে মাসে মাসে ওর রোজগারের একটা মোটা অংশ তুলে দিতে হতো | নীলা খবর নিয়ে জানতে পেরেছিল সিক্স প্যাক অ্যাবস আর সুন্দর মুখ দেখিয়ে প্রেম নিবেদন করে‌ দেদার টাকা রোজগারের লোভ দেখিয়ে সুপ্রতীক সুন্দরী ও আকর্ষণীয় ফিগারের গৃহবধূ ও তরুণী মেয়েদের এই এসকর্ট এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয় | আর তার বিনিময়ে জোটে বেশ মোটা অঙ্কের মাসোহারা | এটাই ওর আসল রোজগার | জিমের ইন্সট্রাক্টরের চাকরিটা লোক দেখানো... তবে ওই চাকরিটা ওর ভীষণ দরকার, ওখান থেকেই সুপ্রতীক সুন্দর ফিগার ওয়ালা মেয়েদের নিজের মোহজালে বশ করে এসকর্ট এজেন্সিতে নিয়ে আসে .... নীলাও ওর এক শিকার ছিল | কিন্তু.... এতকিছুর পরেও নীলার জীবনে প্রেম এসেছিল আর সেই প্রেমের সমুদ্রে নীলা চোখ বন্ধ করে ভেসে গেছিল কিন্তু নীলাদের মতো মেয়েদের জীবনে‌ প্রেম হয় না... প্রেমের অভিনয় হয় ! কুণালও ওর সঙ্গে অভিনয় করছিল... বড় আকস্মিকভাবে নীলা একদিন আবিষ্কার করেছিল কুণাল ওকে নিয়ে কি ভয়ঙ্কর খেলা খেলতে চলেছে ! সেদিনের কথা মনে পড়লে এখনও আতঙ্কে শিউরে ওঠে নীলা ! যখন ভাঙা হৃদয়ের টুকরোগুলোকে কুড়িয়ে নিয়ে নীলা নিজের অন্ধকার বাসায় ফিরছিল... তখন যেন দেবাশিসের যন্ত্রণার পরিপূর্ণ স্বরূপ ও নিজের সমস্ত সত্তা দিয়ে উপলব্ধি করতে পেরেছিল | চোখ খুলল নীলা, স্মৃতির ভারে মন জর্জরিত | এবার ওকে একটা হট শাওয়ার নিতে হবে, তারপর ফুড অ্যাপ থেকে ডিনারের জন্য কিছু খাবার অর্ডার করলেই কাজ মিটে যাবে | নীলার শরীরে যেন এক অজানা ক্লান্তি ভর করেছে | আজকের ক্লায়েন্টটা বড় অত্যাচারী ছিল, আঁচড়ে, কামড়ে পয়সা উসুল করে নিয়েছে | ক্ষতস্থানে ক্রিম ঘষতে ঘষতে নীলা ভাবছিল অবশ্য এ পেশায় সেটাই স্বাভাবিক | যে যত বেশি যন্ত্রণা সহ্য করতে পারবে তার রোজগার তত বেশি ! আজ আর নীলার কেউ নেই, একাকী এই বিরাট শহরে রোজগার না করলে ও বাঁচবে কি করে ?
( ক্রমশঃ )
Like Reply


Messages In This Thread
RE: নীলা (সংগৃহীত) - by Brihannala - 25-11-2020, 01:01 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)