Thread Rating:
  • 65 Vote(s) - 3.34 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance শেষের পাতায় শুরু (Completed)
Heart 
পর্ব সাত – (#1-30)

 
অরথপেডিক ওপিডিতে ভীষণ চাপ, হসপিটাল পৌঁছে ঝিনুককে ফোন করে দিয়েছিল যে ভালো ভাবেই পৌঁছে গেছে। মুখ শুকনো করে দাঁড়িয়েছিল দরজায়, যেন জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিল কখন আসবে। রিশু নিজেই উত্তর দিয়েছিল, তাড়াতাড়ি ফেরার চেষ্টা করবে। গতকাল রাতে ওর বাড়ির সবার সাথে অনেকক্ষণ ভিডিও কলে গল্প চলেছিল, শপিং করেছিল বলে ঝিনুক বেশ খুশি ছিল। শুধু মাত্র রিশুর মা ছাড়া দুই বাড়ির কেউই জানে না যে ওরা দুজনে একসাথে এক বিছানায় শোয় না, দুইজনের ঘর আলাদা। প্রত্যেকদিন ওর মা ওকে জিজ্ঞেস করে, কি রে কেমন আছিস? প্রত্যেক বার এই একটা ছোট প্রশ্নের মধ্যে অনেক বড় প্রশ্ন লুকিয়ে থাকে, হেসে উত্তর দেয়, এই চলছে। হয়ত ওর মা যদি ঝিনুকের ব্যাপারে একটু রাখঢাক করে বলত তাহলে হয়ত ওর মানিয়ে নিতে এত অসুবিধে হত না। বারে বারে ঝিনুকের মেজাজি উদ্ধত ব্যাবহার গুলো মনে পড়তেই পা পিছিয়ে নেয় রিশু। চঞ্চল উচ্ছল সেই পর্যন্ত ঠিক আছে কিন্তু জেদি বদরাগী মেজাজি মেয়েটার সাথে শেষ পর্যন্ত কতটা মানিয়ে নিয়ে চলতে পারবে সেটাই চিন্তার বিষয়। ছোট ভাই বোন দুটো ওর চোখের মণি, মায়ের আত্মত্যাগের সম্পর্কে অবগত রিশু। মাঝে মাঝেই ভীষণ ভাবে দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পরে, গত পাঁচ ছয়দিনে এক নতুন ঝিনুকের আবির্ভাব অন্যদিকে আবার যদি খোলস থেকে সেই পুরানো ঝিনুক বেড়িয়ে পরে তখন কি করবে। দোদুল্যমান হৃদয় দোলা খায়, কার পাল্লা ভারী হবে সঠিক জানা নেই।
 
রোগী দেখার মাঝেই ব্রিজেশের ফোন আসে, “কি রে, কবে বিয়ের খাওয়া খাওয়াবি?”

উত্তর দেয় রিশু, “হবে রে হবে।”

ব্রিজেশ ছাড়ার পাত্র নয়, “ক্রিসমাস পার্টি হয়ে যাক।”

হেসে ফেলে রিশু, “আচ্ছা দেখা যাবে, ওকে জিজ্ঞেস করে দেখি।”

অট্টহাসিতে ফেটে পরে ব্রিজেশ, “পাঁচ দিন হল না বিয়ে হয়েছে এর মধ্যে বউয়ের আঁচলের তলায়। অহহহহহ না পারি না, আজকাল ত শাড়ি কেউ পরে না, তাহলে কি টপের তলায় নাকি রে?”

শেষের কথাটা কানে যেতেই লজ্জায় কান লাল হয়ে যায় রিশুর, “তুই তোরটা দ্যাখ আমি আমারটা বুঝে নেব। আর হ্যাঁ, কোমল কেমন আছে?”

কোমল, ব্রিজেশের স্ত্রী, দক্ষিণ দিল্লীর একটা স্কুলের টিচার, গত বছরের শুরুর দিকে ওদের বিয়ে হয়েছিল। ব্রিজেশ উত্তর দেয়, “ভালো আছে, তোর বিয়েতে যেতে পারেনি ক্ষেপে আছে কিন্তু তোর ওপরে।”

হেসে দেয় রিশু, “আমি কিন্তু তোকে ফোন করেছিলাম, একদম বলবি না যে বলিনি।”

ব্রিজেশ ইয়ার্কি মেরে বলে, “হ্যাঁ, সকালে ফোন করলি যে বিয়ে চলে আয়, শালা এইভাবে একদিনে হসপিটাল ফেলে যাওয়া যায় নাকি।”

সেটা জানে রিশু, এইচওডি ওর ওপরে একটু বেশি সদয় কিন্তু সেটা সবার ওপরে প্রযোজ্য নয়। “আচ্ছা দিয়ে দেব, টুয়েন্টিফিফথে কোন হোটেলে সবাইকে ডিনার করাব।”

ব্রিজেশ জিজ্ঞেস করে, “ইন্দ্রিজিত ফিরেছে কি?”

উত্তর দেয় রিশু, “হ্যাঁ ফিরেছে, ফোনে একবার কথা হয়েছিল এর মাঝে।”
 
গত সপ্তাহে একবার ইন্দ্রিজিতের ফোন এসেছিল, ওদের ফেরার দিন কয়েক পরে ফিরে এসেছিল কোলকাতা থেকে।  যেহেতু অন্য হসপিটালে চাকরি করে তাই আর কথাবার্তা হয়নি দেখাও হয়নি। ফোন ছাড়ার আগে ব্রিজেশ জানিয়ে দেয়, বিকেলের দিকে একটা ওটি আছে ওর, হিপ ফ্রাকচার। মাথা দোলায় রিশু, ভেবেছিল একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে পারবে, সেটা হয়ত কপালে নেই। ওটি তে ঢুকলে কখন বের হবে সঠিক জানা নেই।
 
সেই সকালে একবার ঝিনুকের সাথে আর মায়ের সাথে কথা হয়েছিল তারপরে আর হয়নি। লাঞ্চের সময় পেরিয়ে যায় কিন্তু রোগীর সংখ্যা কমে না, কারুর হাঁটুতে ব্যাথা, কারুর কাঁধে ব্যাথা, কারুর ঘাড়ে ব্যাথা, কেউ পড়ে গিয়ে হাত ভেঙ্গেছে, একের পর এক পেশেন্ট এসেই চলেছে। এমন সময়ে একটা মেসেজ আসে ওর মোবাইলে, হয়ত এর জন্যেই অপেক্ষা করেছিল। অন্য দিনের মতন খুব ছোট মেসেজ, “লাঞ্চ হয়েছে?” ডান হাতে প্রেস্রিকপ্সান লিখতে লিখতে বা হাতের আঙ্গুল দিয়ে মোবাইল কি বোর্ড টিপে উত্তর দেয়, “না, এই যাবো। তুমি খেয়েছ?” সাধারণত এতদিন এর উত্তর আসত, “হ্যাঁ” অথবা “না”, তবে সেদিন একটু ভিন্ন আসে, “কখন খাবে? এতদেরি হয়ে গেল, দুটো বেজে গেছে।” মনে মনে হেসে ফেলে রিশু। সকালে রক্ত দেওয়ার পরে কাঁদো কাঁদো চেহারা নিয়ে অনেকক্ষণ খ্যান খ্যান করেছিল ঝিনুক, উফফফ এখন ব্যাথা করে যে, কত গুলো রক্ত নিয়ে নিল এমনিতেই নাকি ওর শরীরে রক্ত কম। হেসে ফেলে রিশু, হাড়ের মজ্জা থেকে রক্তের সৃষ্টি হয়, বুঝাতে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সেই মেয়ে কি আর বোঝে। রিশু মেসেজ করে, “খেয়ে নিও।” উত্তর আসে, “আচ্ছা খেয়ে নেব।” বিকেলে ওটি আছে, ফিরতে দেরি হবে, সেটা একবার জানিয়ে দেওয়া দরকার, “একটা এমারজেন্সি ওটি আছে, ফিরতে দেরি হবে।” এবারে খুব ছোট্ট উত্তর আসে, “ওকে।” বুঝে যায় রিশু, নিশ্চয় আশা করে বসেছিল বিকেলে একটু বাজারে বের হবে, নিজেরও একটু খারাপ লাগে বৈকি তাই এইচওডি কে বলে ট্রমা সেন্টারের ডিউটি বদলে ওপিডি ডিউটি করিয়ে নিয়েছিল।
 
সকালে রিশু বেড়িয়ে যাওয়ার পরেই স্নান সেরে নিয়েছিল ঝিনুক। কাজের লোক ভোর বেলা এসেই রিশুর টিফিন, দুপুরের রান্না আর বাড়ির কাজ সেরে চলে গিয়েছিল। রিশু বেড়িয়ে যাওয়ার পরে পুরো বাড়ি ফাঁকা। আবার করে গতদিনের কেনা জিনিস গুলো বিছানার ওপরে ছড়িয়ে একবার দেখে। জ্যাকেট দুটো ওর খুব পছন্দের, একটা লাল রঙের বড় ভারী জ্যাকেট অন্যটা অফ হোয়াইট রঙের ফারের লম্বা জ্যাকেট। খুব ইচ্ছে ছিল কয়েকটা জিন্স কেনে, কিন্তু মনের মধ্যে সংশয় ছিল যে রিশু ওকে জিন্স পড়তে দেবে কি না তাই আর জিন্স কেনেনি, তবে বাড়ি থেকে আনা বেশ কয়েকটা জিন্স আছে ওর। এই কয়দিন ওর মানসিক অনেক ধকল গেছে, সঠিক ভাবে নিজেকে কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারছিল না এই বদ্ধ জীবনে তবে গতকাল শপিং যাওয়ার পর থেকে মেজাজ অনেক বেশি ফুরফুরে হয়ে গেছে ওর। শেষের মেসেজটা পড়ে বেশ খারাপ লাগে, আবার দেরি হবে, মানিয়ে নেওয়া ছাড়া আর কোন গতি নেই। দুপুরে একা একা খেতে বেশ খারাপ লাগে, কিন্তু কিছুই করার নেই ওর। খাওয়া সেরে টিভিতে একটা সিনেমা দেখতে দেখতে ভাবে, বন্ধু বান্ধবী কেউই নেই দিল্লীতে যার সাথে একটু বেড়াতে যাবে অথবা মনের কথা খুলে বলবে, এখানে কাউকেই চেনে না ঠিক ভাবে।
 
দুই দিনের মধ্যে ওদের ছোট মেসেজ গুলো একটু একটু বড় হয়, একটা বাক্যের জায়গায় দুটো তিনটে বাক্য। সেদিন সকালেই এইচওডি ধিলোন স্যার ওকে জানিয়ে দিয়েছিল যে পরের বছর জানুয়ারি মাসের মাঝের দিকে রয়াল ন্যাশানাল অরথোপেডিক হসপিটালে একটা সেমিনার উপলক্ষে ওকে ইংল্যান্ড যেতে হবে আর সেই সাথে ট্রেনিং আছে। সেমিনারে যাবে শুনে ভীষণ খুশি হয় রিশু, ওর ব্যাচের এখন পর্যন্ত কেউই হসপিটালের তরফ থেকে বাইরে যায়নি, যারা গেছে তারা বেশির ভাগ নিজের খরচে গেছে। অবশ্য অনেক সময়ে বাইরের হসপিটাল কনফারেন্সের জন্য টাকা দেয়, তবে এখন সেই পর্যায়ে পৌঁছায়নি। ওর পরের পেপারে এই ট্রেনিং অনেক সাহায্য করবে, এক দিকে বাড়িতে নব বিবাহিতা স্ত্রী অন্যদিকে পড়াশুনা হসপিটাল আর কেরিয়ার, একটু ভাবনায় পরে যায় রিশু। সময় হলে জানিয়ে দেবে ঝিনুককে, যদি ততদিনে ওদের মাঝের সম্পর্ক ঠিক হয়ে যায় তাহলে সাথে নিয়ে যাবে। এতদিনে এক পা এক পা করে এগোলেও পথ এখন অনেক বাকি।
 
সেদিন আর মেসেজ না করে দুপুরে খাওয়ার সময়ে রিশু ফোন করে ঝিনুককে, “কি করছ?”

মোবাইলে রিশুর ছবি দেখে একটু খুশি হয়, বিগত কয়েকদিনে শুধু মাত্র মেসেজেই কথাবার্তা হত ওদের, হসপিটাল থেকে বিশেষ একটা ফোন করত না। “এই’ত টিভিতে একটা সাউথ ইন্ডিয়ান মুভি দিচ্ছিল সেটা দেখছি। তোমার খাওয়া হল?”
 
এর আগে কাজের মেয়ে রাতে আসত ওর বাড়িতে, টিফিনের এই ব্যাপারটা ছিল না, ক্যান্টিনে যা পাওয়া যেত তাই খেতে হত। ঝিনুক আসার পরে টিফিন বক্স কেনা হয়, অন্যদের মতন বাড়ি থেকে টিফিন নিয়ে আসে, যদিও রান্না নব বিবাহিতা স্ত্রীর হাতের নয় তাও টিফিন খুলে খেতে বেশ ভালো লাগে রিশুর। ব্লাড রিপোর্ট আর ইউরিন রিপোরট এসে গিয়েছিল, গায়নোকোলজিস্ট সঞ্জনা ম্যাডামকে দেখিয়েছিল ঝিনুকের রিপোর্ট, ইউরিনে এমোনিয়ার গন্ধ পেয়েই চিন্তিত হয়ে পড়েছিল রিশু, সিস্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে একটু। একটা ওষুধ লিখে দিয়েছিলেন আর বলেছিলেন যে অনেক জল আর ফল খেতে। কথায় কথায় একটা প্রশ্ন করেছিল রিশু, সঞ্জনা ম্যাডামের উত্তরে ভীষণ লজ্জা পেয়ে যায়, এত তাড়া কিসের, এক সপ্তাহ হয়নি বিয়ে হয়েছে এর মধ্যেই? সেই সব ব্যাপার ঝিনুককে জানায়নি যদিও, তবে রোজদিন বাড়ি ফেরার সময়ে যা ফল পেত কিনে নিয়ে যেত ঝিনুকের জন্য। মেয়েটা জল অনেক কম খায়, বারবার বললেও শোনে না।
 
বাড়ি থেকে আনা টিফিন খুলে খাওয়া শুরু করে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ এই খাচ্ছি। তুমি ফল গুলো খেয়েছ?”
 
লাজুক হাসে ঝিনুক, সঠিক ভাবে জানে না ওর ইউরিন আর ব্লাড রিপোরটে কি পেয়েছে রিশু তবে রিপোর্ট পাওয়ায় পর দিন থেকে ওর জন্য আপেল, কলা, কমলালেবু যা ফল পায় সেইগুলো নিয়ে আসে। রোজ রাতে একটা করে ক্যালসিয়াম আর আয়রন ট্যাবলেট খেতে হয়। বাড়িতে থাকাকালীন এতফল কোনদিন খায়নি ঝিনুক, এখানে ডাক্তারের পাল্লায় পরে রোজ সকালের খাওয়ার পরে ফল খেতে হয়, মুসাম্বির জুস খেতে হয়। মাঝে মাঝে ভীষণ বিরক্তি লাগে আবার সেই সাথে ভালো লাগে, অদ্ভুত এক মিশ্রিত অনুভব হৃদয়ে দোলা দেয়।
 
বিছানায় আধা শোয়া হয়ে পা দুলাতে দুলাতে লাজুক হেসে উত্তর দেয় ঝিনুক, “হ্যাঁ বাবা সব শেষ করেছি।”

দুষ্টু মিষ্টি বিরক্তি ভাব দেখে হেসে ফেলে রিশু, ওর ভালো লাগে বলে এখন পায়ের নুপুর খোলেনি, “আজ তাড়াতাড়ি ফিরব, কোথাও যাবে নাকি?”

কোথায় আর নিয়ে যাবে, মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত সেই’ত এই সামনের বাজারে। বাজার থেকে আনার কিছুই নেই, দেখার কিছুই নেই শুধু বাজার ছাড়া তাই মানা করে দেয় ঝিনুক, “না থাক। আজকে আবার ওটি আছে নাকি?”

একদম মায়ের মতন প্রশ্ন, একদিন দেরি হয়েছিল বটে তবে কোন প্রকার রাগ প্রকাশ করেনি ঝিনুক। হেসে উত্তর দেয়, “না খালি ওপিডি আছে।” দেরি হয়ে যাচ্ছে দেখে শেষ পর্যন্ত ফোন রেখে দেয়, “রাখছি, বের হওয়ার আগে ফোন করব।”

অল্প সুর টানে ঝিনুক, “আচ্ছাআআ...”
 
ফোন রাখার পরে হটাত ওর খুব নাচতে ইচ্ছে করে, ছোট বেলায় রানীগঞ্জে থাকাকালীন আষাঢ়ের প্রথম বারিধারায় ভিজতে ভিজতে যেমন ভাবে নাচানাচি করত, ঠিক তেমনি ভাবে এই ঘরের মধ্যেই ওর খুব নাচতে ইচ্ছে করে। বাইরে বের হতে খুব ইচ্ছে করে আর ভালো লাগে না এই বদ্ধ ঘরের মধ্যে সারাদিন বসে। এর আগে এইভাবে এতদিন টানা ঘর বন্দী হয়ে থাকেনি, কিন্তু এখানে কাউকেই চেনে না কার সাথে বের হবে। ডাক্তারের ফিরতে ফিরতে সেই সন্ধ্যে হয়ে যায়। ক্লান্ত বিধ্বস্ত হয়ে এসেও হাত মুখ ধুয়ে চা খেয়ে ওকে নিয়ে এই সামনের বাজারে বের হয়। ওর ক্লান্ত চেহারা দেখে তখন ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছেটা মরে যায়। এই সব ভাবতে ভাবতে আবার মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে, ধ্যাত শুধু এই চার দেওয়াল। একটা সিগারেট পেলে ভালো হত, মাথাটা বড্ড কেমন কেমন করছে।
 
এমন সময়ে রিতিকার ফোন পেয়ে বেশ ভালো লাগে ঝিনুকের। রিতিকা ফোন করেই প্রশ্নের জালে জর্জরিত করে দেয় ওকে, “কি রে কি করছিস? কোথায় হানিমুনে গেলি? সেই সেদিন ফোন করার পরে একদিন ও ফোন করলি না। ডাক্তার বাবু কেমন আছে?”

হেসে ফেলে ঝিনুক, এত কথা রিতিকার সাথে আগে কোনদিন করেনি। উত্তর দেয়, “না রে, হসপিটালে খুব ব্যাস্ত থাকে তাই এখন কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি। ছুটি পেলেই যাবো ভাবছি। তুই কেমন আছিস?”

রিতিকা হেসে উত্তর দেয়, “দারুন আছি রে। তোর খবর বল।”

কেমন আছে ঝিনুক, ভালো মন্দ মিশিয়ে মোটামুটি আছে। পার্থের দেওয়া ঘা এখন সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায়নি ওর বুক থেকে তাও রিশুর সাথে এইমাত্র বলা কথা গুলো ওর বুক ভরিয়ে দেয়, “আমি ভালো আছি রে।”

রিতিকা জিজ্ঞেস করে, “বেড়াতে যাবি, শপিং?”

মুখ ব্যাজার করে উত্তর দেয় ঝিনুক, “না রে, কি করে বের হব বল ওকে বলা হয়নি।”

একটু থেমে ওকে জিজ্ঞেস করে রিতিকা, “টুয়েন্টিফিফথ কি করছিস?”

কোলকাতা থাকলে না হয় বন্ধু বান্ধবী মিলে কোন ডিস্কোতে গিয়ে পার্টি করত, এখানে সে গুড়ে বালি, মুখ ব্যাজার করে উত্তর দেয়, “জানি না রে।”

হেসে ফেলে রিতিকা, “ইসসস আমাদের ব্যাচের মোস্ট বিউটিফুল পার্টি এনিম্যাল একদম খাঁচায় বন্দী হয়ে গেছে দেখছি।”

হেসে ফেলে ঝিনুক, “আচ্ছা কমপ্লিমেন্টস শুধু আমার একার নাকি? তুই কম করেছিস পার্টি?”

রিতিকা হেসে দেয়, “আমি ত এখন পার্টি করে যাচ্ছি রে।”

রিতিকার কথা শুনে একটু হিংসে হয় ঝিনুকের, সুন্দরী বলে দুই মেয়ের বেশ নামডাক ছিল কলেজে। রিতিকা এখন পাখীর মতন উড়ছে আর ঝিনুক খাঁচায় বন্দী, “কি করব কপাল।” বলেই হেসে ফেলে।

রিতিকা গলা নামিয়ে প্রশ্ন করে, “একটা সত্যি কথা বলবি?” ঝিনুক ভেবে পায় না কি প্রশ্ন করতে চলেছে। রিতিকা জিজ্ঞেস করে, “পার্থের সাথে আসলে কি ঝামেলা হয়েছিল?”

পার্থের নাম কানে যেতেই কান লাল হয়ে যায় ঝিনুকের, যে ঘটনা ভুলতে চায় সেই সব আবার কেন মনে করিয়ে দেয় এই মেয়েটা? একটু বিরক্ত হয়েই উত্তর দেয়, “হয়েছিল কিছু ছাড় সেই সব কথা।”

রিতিকা বুঝতে পারে যে ঝিনুক সেই পুরানো ব্যাথা গুলো ভুলতে চাইছে তাই ওর মন রাখার জন্য বলে, “আচ্ছা বাবা, সরি। কাল কি করছিস? বের হবি শপিং করতে?”

হেসে ফেলে ঝিনুক, বাইরে যাওয়ার নাম শুনেই ছটফট করে ওঠে ওর হৃদয়, “আচ্ছা ও এলে জিজ্ঞেস করে নেব। কাল সকালে তোকে জানিয়ে দেব।”

রিতিকা ফোনের মধ্যেই একটা চুমু ছুঁড়ে দিয়ে বলে, “চল ডারলিং লেটস পেন্ট দ্যা টাউন রেড।”

খিলখিল করে হেসে ফেলে ঝিনুক, কলেজে যাকে দেখতে পারত না সেই মেয়ে আজকে ওকে বেড়াতে যাওয়ার জন্য বলছে, ওর জীবনে একের পর এক নতুন আলোর ছটা দেখা দিচ্ছে, “ডেফিনিটলি ডারলিং।” বলেই দুই বান্ধবী হেসে ফেলে।
[Image: 20210115-150253.jpg]
Like Reply


Messages In This Thread
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 18-10-2020, 01:30 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 21-10-2020, 04:16 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 22-10-2020, 03:41 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 21-10-2020, 04:13 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 22-10-2020, 02:49 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 27-10-2020, 02:59 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 28-10-2020, 12:21 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 28-10-2020, 10:20 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 29-10-2020, 01:29 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 30-10-2020, 11:22 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 01-11-2020, 01:37 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 02-11-2020, 12:51 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by pinuram - 24-11-2020, 10:50 PM
পর্ব আট – (#2-38) - by pinuram - 08-12-2020, 05:19 PM
RE: পর্ব আট – (#2-38) - by pinuram - 09-12-2020, 06:58 PM
Block Guest Users! - by pinuram - 09-12-2020, 11:47 PM
RE: Block Guest Users! - by dreampriya - 10-12-2020, 09:46 AM
RE: Block Guest Users! - by pinuram - 10-12-2020, 12:18 PM
পর্ব আট – (#6-42) - by pinuram - 14-12-2020, 11:37 PM
পর্ব আট – (#7-43) - by pinuram - 14-12-2020, 11:38 PM
পর্ব আট – (#8-44) - by pinuram - 14-12-2020, 11:38 PM



Users browsing this thread: 4 Guest(s)