18-03-2019, 02:57 PM
-“রুক যা ম্যায় এক ফটু লে লেতা হু”, বলদেও দৌড়ে এল অর্ধ নগ্ন উদিতার ছবি তোলার জন্য মোবাইলে। উদিতা জোর করে চোখ চেপে মাথা টা পাণ্ডের ঘাড়ে এলিয়ে দিল। আর অপমান সঝ্য করার ক্ষমতা নেই ওর। যদি দু চোখ খুলে দেখতে পারত যে সব কিছু শেষ হয়ে গেছে।
-“সব এক এক করকে আও আওউর চাখকে যাও দুধওয়া, দেখও মিঠা হ্যাঁয় ইয়া নমকিন”, দামোদর নিজেই আর কারোর জন্যে অপেক্ষা না করে উদিতার দুধ দুটো টিপে, দুলিয়ে, ঝাঁকিয়ে চোষা শুরু করলো। মুখের হাবভাব এমন করতে লাগলো যেন সত্যি টিপে দুধ বার করতে পারছে। পাণ্ডে উদিতার হাত দুটো পিছনে টেনে ধরে কাঁধের ব্লাউস টা খুলে ওটা দিয়েই টাইট করে বেঁধে দিল যাতে ও কোনভাবে বাধা দিতে না পারে। ভিড়ের থেকে জনা দশ বারো লোক উঠে এসে ঠেলাঠেলি করে লাইন দিয়ে দাঁড়াল। বাকিরা এখনো সাহস করে উঠতে পারেনি, শহুরে বাবু দের ঘরের মেমসাহেব তো, পরে যদি কোনও বিপদ হয়। উদিতা নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে ফিল করতে লাগলো ওর স্তনে একের পর এক অপরিচিত হাত, ঠোঁট, দাত আর জিভের স্পর্শ। প্রত্যেকেই অত্যন্ত রুক্ষ ভাবে ভোগ করতে লাগলো ওর বুক। ওদের দাড়িতে, গালে ঘসা লেগে জ্বালা করতে লাগলো গায়ের চামড়া।
-“ইস্কো থোরি ঝুকাদে পাণ্ডে”, গঙ্গাধর উঠে এসে বলল। পাণ্ডে উদিতার মাথা ধরে সামনের দিকে ঝুকিয়ে দিল। গঙ্গাধর ওর পাশে হাঁটু গেড়ে বসে ওর দুটো বোঁটা দুই হাতে ধরে গরুর বাঁট দ্যোয়ানোর মতো করে টানতে লাগলো। উদিতা ব্যাথায়, অপমানে চেঁচিয়ে উঠল, ধ্বস্তাধস্তি করে গঙ্গাধরের হাত থেকে ছাড়াতে চেষ্টা করলো স্তন দুটোকে। কিন্তু দুলে ওঠা ঝুলে থাকা মাই দুটো আসেপাশের দাঁড়িয়ে থাকা লোক গুলোর মনে আরও বেশী লালসা তৈরি করলো। অনেকগুলো হাত এগিয়ে এসে গঙ্গাধরের সাথে সাথে উদিতার মাই দোয়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো। নিস্ফল আক্রোশে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল ও।
-“আবে গান্ড তো নিকাল ইস্কি”, ভিড়ের মধ্যে থেকে আবার একজন কেউ চেঁচিয়ে বলল। উদিতা কথা টা শুনেই মরিয়া হয়ে বাঁধা হাত দিয়েই পিছনে সায়া টা চেপে ধরল। শরীরের এই শেষ আবরন টুকু ও চলে যেতে দেবেনা কিছুতেই। প্রচণ্ড জোরে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল গঙ্গাধর আর ওর দলবলের হাত থেকে। মুখ দিয়ে চাপা কান্নার আওয়াজ করে পা ছুড়তে শুরু করল। একবার ওর পা গিয়ে সজোরে লাগলো দামোদরের পুরুষাঙ্গে। নাক চিপে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো দামোদর।
-“শালিকি ইত্নি যোশ, দিখাতা হু অভি”, বলদেওর মাথায় যেন খুন চেপে গেছে। উদিতার পা দুটো চেপে ধরে ও আর পাণ্ডে চ্যাংদোলা করে তুলে নিল। শঙ্কর আর গঙ্গাধর আর দু তিনটে কম বয়সি ছেলে এসে ইতি মধ্যে প্রায় ঢিলা হয়ে আসা পেটিকোট টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে দিল উদিতার কোমর থেকে। উদিতা অনুভব করলো ওর পা দুপাশে টেনে সরিয়ে নিয়েছে ওরা আর অনেক গুলো আঙ্গুল একসাথে ওর যৌনাঙ্গ আর পাছার ফুটোর মধ্যে বার বার প্রবেশ করছে। ভয়াবহ আতঙ্ক আর অপমানে উদিতা জ্ঞান হারাল। একটা সুতও না থাকা উলঙ্গ উদিতার গায়ের ওপরে প্রায় পনের কুড়ি জনের ভিড় টা ঝাঁপিয়ে পড়লো।
একটু চিন্তিত ভাবেই ঘরে ফিরলেন রাম্লালজি। চৌবের খবর ভুল হয়না। সুমন শালা আবার সুরাজপুরে আসার সাহস পেল কি করে। সামশের টাও আজকাল একটু বেশী বেয়াড়া হয়ে গেছে। কথার ওপরে কথা বলে খুব। আগেকার সময় হলে চোখ উপড়ে নিতেন কবেই। কিন্তু এখন লোকবল কমে এসেছে। ধান্দাপানি ধরে রাখার জন্যে সামশেরকে খুব দরকার। তাই ওর বেয়াদবি গুলো মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় কি। পুলিশ কাছেরির চক্কর অনেক বেরেছে আর তার সাথে মিডিয়া ওয়ালা গুলো। পাটনার মেয়ে টার কেস টার পরে সাত আটদিন এই চত্বরে মিডিয়ার গাড়ি ঘুরেছে। ওরা প্রায় বের করে ফেলেছিল সবকিছু। চৌবে ওপর তলায় ফোনটোন করে শেষ অবধি বাঁচায়। ওই একটা কোথাকার কি ছোকরির জন্য হটাত এত লোকের দরদ কেন উথলে উঠল কে জানে। কম বয়স যখন ছিল তখন কতো এরকম মেয়েছেলে তুলে এনে ছুড়ে ফেলেছেন। সত্যি দিনকাল বদলে গেছে। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ইয়াদব। বিহার ভাগ হয়ে ঝাড়খণ্ড হওয়ার পর থেকেই ওনাদের পতন শুরু হয়েছে। আগের রাজনৈতিক ছাতা টা অনেকটাই আর নেই।
ঘরে ঢুকে মাথা টা কেমন যেন ঘুরে উঠল রাম্লালজির। আয়নার সামনের টেবিলের কাছে ঘোমটা টেনে কে দাঁড়িয়ে আছে আধো অন্ধকারে? অবয়ব টা অবিকল পূর্বার মতন। পূর্বা রাম্লালজির স্ত্রির নাম। আজ থেকে পয়তিরিশ বছর আগে বাচ্চা দিতে গিয়ে মারা যান। ইদানীং মাঝে মধ্যেই স্বপ্নে দেখছেন পূর্বা কে। কেমন যেন একটা হাতছানি দিয়ে ডাকার মত করে ডাকে। কোনোমতে দরজার পাল্লা টা ধরে পতন সাম্লালেন রাম্লালজি।
-“পূর্বা তুঁ?”, প্রশ্নটা করেই নিজেরই প্রচণ্ড অবাক লাগলো।
-“জী ম্যায় কমলা”, অবয়ব টা মাথা টা একটু তুলে উত্তর দিল। ঘোমটার কাপড় দিয়ে এখনো মুখ ঢেকে রয়েছে। চোখ টা শুধু খোলা। কমলা গঙ্গাধরের বউ। বিয়ের পর আজ প্রায় বছর দশ হল গঙ্গাধর ওকে এই বাড়ি তে এনেছে। এ বাড়ির আনাচ কানাচ এখন ওর মুখস্ত। বলতে গেলে এই কোঠার পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে হেসেল সব কিছুতেই এখন কমলাই শেষ কথা। বাবু তাও ওকে মাঝেমধ্যেই পূর্বা নামে ডেকে ফেলেন।
-“ক্যা কমলা, ইত্নি রাত গয়ে?”, ধুতি টা একটু ভদ্র করে জড়ালেন কোমরে। বাড়া টা এখনো দাঁড়িয়ে আছে। নিজেই একটু আশ্চর্য হলেন নিজেকে লজ্জা পেতে দেখে।
মেয়েদের সামনে শেষ কবে লজ্জা পেয়েছিলেন মনে পড়েনা রাম্লালজির। গঙ্গাধরের বিয়ের খবর শুনেছিলেন বা ও যে বউ কে নিয়ে এ বাড়িতে এসেছে সেটাও জানতেন উনি, কিন্তু কোনোদিন কমলা কে বিশেষ খেয়াল করেননি। হয়তো বুক অবধি ঘোমটা দিয়ে থাকতো বলে। মাস ছয়েক আগে দুপুরে খাওয়ার সময় চকিতে দেখে ফেলেছিলেন কমলার মুখ। ওনাকে পরিবেশন করছিল। হাত থেকে চলকে পরে গেছিল দুধ। ঠিক যেন পূর্বা। পূর্বা চলে যাওয়ার পর আর বিয়ে করেন নি। রাম্লালজি খুব ভালবাসতেন পূর্বা কে। হাজারিবাগের উজির কেসরামের মেয়ে ছিল। তখনকার দিনে কলেজ পাশ করা মেয়ে এখানে আর কোথায়। বাবার অনেক বারন সত্ত্বেও প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন। পাগলের মতন ভালবাসতেন দুজনে দুজন কে। কিন্তু কপালের ফেরে বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় চলে যায় ওকে একলা ফেলে।
কমলা কে দেখে কেমন যেন আনমনা হয়ে গেছিলেন তাই। এত মিল কি করে হতে পারে। নাকি তারই কোনও ভুল হচ্ছে। একদিন গঙ্গাধর কে কথায় কথায় বলে ফেলেছিলেন ব্যাপার টা। সেদিন রাতেই কমলার হাত ধরে হিড়হিড় করে টানতে টানতে ইয়াদবের ঘরে ছেড়ে দিয়ে গেছিলো গঙ্গাধর। যেকোরে হোক মনিব কে খুশী করতে হবে। কমলা কে পাওয়ার জন্যেই হয়তো এরকম কোনও কথা বানিয়ে বলেছেন গঙ্গাধর কে।
-“উনহনে বোলা কি আজ আপকে পাস রহেনে কো”, কমলা আবার মাটির দিকে ঘাড় ঝুঁকিয়ে বলল, “আপ কহা থে ইত্নি দের তক?”। এ বাড়ির অন্দরমহলের মেয়েদের মধ্যে রাম্লাজি কে পাল্টা প্রস্ন করার সাহস শুধু কমলারই আছে। ওর মধ্যে নিজের মড়া বউকে দেখতে পান রাম্লালজি শুনেছিল কমলা। বেশ মজা লেগেছিল তখন। সেই থেকে হাবেভাবে একটু খবরদারি করার চেষ্টা করে মাঝে মধ্যে। প্রায় সত্তর ছোঁয়া এই একলা বুড়োটাকে দেখলে কেমন যেন একটু মায়াই হয় কমলার। বাইরে এত রুক্ষ, কিন্তু ভিতর টা কেমন যেন হাহাকার করছে।
কমলার প্রশ্নের উত্তর কি দেবেন ভেবে পেলেন না রাম্লালজি। চেতনার মুখ তা এক ঝটকায় মনে পড়ে গেল। হাতজোড় করে কাদছিল মেয়েটা। পূর্বা জানলে কি ভাবতো? কমলাও হয়তো সেই রকমি ভাববে। নিচু হয়ে যাবেন কি ওর সামনে? চোখ সরিয়ে নিলেন কমলার কাছ থেকে। বোঝাই যাচ্ছে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছে ও এখানে।
-“থোড়া কাম থা চৌবে সে”, ইয়াদব খাটের পাশে ঢাকা গ্লাস টা থেকে জল ঢকঢক করে খেয়ে নিয়ে খাটে বসলেন। ওনার মাথাই এখন হেট হয়ে আছে। কমলার সাথে চোখাচুখি হয়ে যাওয়ার ভয়ে মুখ তুলছেন না তিনি। শেষ কবে যে এরকম বিবেক দংশন হয়েছিল? বুক টা একটু ধড়ফড় ও করছে। মাথার কাছের ডান দিকের দেওয়ালে পূর্বার একটা অনেক বড় ছবি টাঙ্গানো আছে। ওদিকে তাকাতেও সাহস পাচ্ছেন না এখন।
-“সর দাবা দু আপকা?”, কমলা একটু কাছে এসে বলল, “নিঁদ আ জায়েগা জলদি মে”।
-“নহি নহি, অভি থোড়া সো জাতা হু। টায়ার্ড লগ রহা হ্যাঁয়”, রাম্লালজি আবার একটু লজ্জা পেয়ে গুটিয়ে গেলেন যেন। কি হচ্ছে ওনার আজকে? কমলার সামনে বরাবরই একটু আড়ষ্ট থাকেন। কিন্তু আজকে আরও অন্যরকম লাগছে। পাটনার মেয়েটার মুখ টাও এক ঝলক মনে পড়ে গেল নাকি? ওনার ওপর থুতু ছেটানোর পর কিরকম একটা ঘৃণার দৃষ্টি মেলেছিল।
-“ঠিক হ্যাঁয়, আপ সো জাইয়ে, ম্যায় দরওয়াজা বন্ধ করকে আতি হু”, কমলা রাম্লালজির ঘরের বিরাট দরজা টা, ক্যাচকোঁচ শব্দ করে ভিজিয়ে দিল। বুড়োর আজকে আবার ভীমরতি ধরেছে মনে হচ্ছে। গতমাসে পূর্ণিমার দিনও এরকম ভাবসাব করছিলেন। কমলার দিকে পিছন করে গুটিয়ে শুয়ে ছিলেন। সাড়া রাত পিঠ হাতিয়ে দিয়েছিল কমলা। আজকে গঙ্গাধর বার বার বলেদিয়েছে ওকে মালিক কে সব রকম সোহাগ দিতে। তুলে আনা মেয়ে গুলোর সাথে নষ্টামি করলে বাবুর নাকি এরকম বোধ হয় পরে। বয়স হয়েছে কিনা। খাটের পাশে এসে গা থেকে শাড়ি টা হালকা করে খুলে ফেলল।
-“কমলা, আজ নহি চাহিয়ে”, রাম্লাল ইয়াদব মশারির ভিতরে খাটের ওপরে উঠে বসলেন। আজ আর কিছু করার ইচ্ছে নেই। কিন্তু চান না যে কমলা চলে যাক। একা থাকতে ভয় করবে বাকি রাত টা।
ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে ব্লাউস টা খুলে ফেলে সায়া বুক অবধি টেনে বিছানায় উঠে পড়লো কমলা। পুরুষ মানুষের মন ফিরতে বেশিক্ষণ লাগেনা। শেষ কয়েকবারের ভীমরতি বাদ দিলে এর আগে ওর শরীর নিয়ে সোহাগ করেছেন বৈকি। আজকে মনে হয় শরীর টা বেশ খারাপ। রাম্লালজির দুকাধ ধরে ওকে শুইয়ে দিল কমলা। বেশ ঠাণ্ডা পরে গেছে, কিন্তু এর মধ্যেই ঘামে ভিজে আছেন উনি। ওর মাথা কমলা ওর বুকের ওপরে টেনে আনল। একটা শিশুর মতন আঁকড়ে ধরলেন কমলার শরীর রাম্লালজি।
চোখ জুড়িয়ে এসেছিল কিছুক্ষণের মধ্যেই। বাইরের উঠোনের চিৎকার চেঁচামেচিতে একটু উসখুস করছিলেন কিন্তু ঘুম টা পুরোপুরি ভাঙ্গেনি। ভাঙল প্রচণ্ড বিস্ফরনের শব্দে। প্রায় সত্তর বছরের পুরনো বাড়ির কড়ি বর্গা, খিলান কেঁপে উঠল। জানলা গুলোর খট খট শব্দের মধ্যে ধড়মড় করে বিছানায় উঠে বসলেন ইয়াদব। কিছুক্ষণ চুপ করে কিছু বুঝতে না পেরে খাট থেকে লাফিয়ে নেমে দরজা খুলে বারান্দায় বেড়িয়ে এলেন।
উদিতা কে মাঝ খানে রেখে জটলা টা চারদিকে ছড়িয়ে গেল। উদিতার জ্ঞান চলে এসেছিল কিছুক্ষণের মধ্যেই। সান বাঁধানো ঠাণ্ডা উঠোনটাতে শুয়ে দাঁতে দাঁত চপে সঝ্য করছিল এতক্ষণ। হাত পা গুলো টান টান করে ছড়ানো ছিল কারোর না কারোর হাতে বা কোলের মধ্যে। কেউ একজন ওকে গভীর ভাবে চুমু খাচ্ছিল ঠোঁটে। ওর যোনি চুষে চুষে পিচ্ছিল করে দিয়ে দামোদর প্রস্তুতি নিচ্ছিল উদিতার ভিতরে প্রবেশ করার। আড়চোখে দেখেছিল আশেপাশের বেশ কয়েক জনের হাতে ইতিমধ্যেই বেড়িয়ে এসেছিল তাদের উদ্ধত পুরুষাঙ্গ। দামোদর সবার বড় হওয়ার জন্যে তারই প্রথম অধিকার ঠিক করে নিয়েছিল লোকগুলো বিনা বাক্যব্যায়ে। উৎসাহের চরম পর্যায়ে দামোদর যখন ধুতি সরিয়ে উদ্যত বাড়া বের করে আনবে, তখনি কান ফাটানো শব্দ ও তার সাথে মাটির কাপুনি ওকে ছিটকে দিল উদিতার শরীর থেকে। উদিতা অনুভব করলো একে একে সবাই ওকে ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। ওর নগ্ন দেহের ওপর দিয়ে এতক্ষণ ঘুরে বেড়ানো লালসাসিক্ত হাত গুলো আর নেই। পাঁচিল, দরজা পেড়িয়ে অদুর রেল স্টেশনের কাছাকাছি শব্দের উৎসের দিকে নিস্পলকে তাকিয়ে থাকা ভিড়ের মধ্যে ও যেন অবহেলিত কেউ। ভগবান কি তবে ওর প্রার্থনা শুনেছে? উদিতা দেখল শঙ্করের হাতে এখনো ওর কালো সায়াটা দলা পাকিয়ে আছে। একটুকরো কাপড়ের জন্যে উতলা হয়ে উঠল ও।
-“আয় হারামজাদা শঙ্কর দেখ জলদি ক্যা হুয়া?”, ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলও সবাই, রাম্লালজি বারান্দায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করছেন। অবন্তিপুর জংশন স্টেশনে দাউদাউ করে জ্বলে ওঠা আগুন আর কালো ধোঁয়া তার নজর এড়ায় নি দোতলার বারান্দা থেকে। এটা কোনও রেল দুর্ঘটনা নয়। এই সময়ে এই পথে কোনও গাড়ি নেই। এই ধোঁয়া আর আগুন ইয়াদবের চেনা লাগলো। পাঁচ বছর আগে সুরাজপুর বস্তি তে ওর দলবল এরকম দাবানল লাগিয়েছিল ওর দুই ভাই খুন হওয়ার পর।
-“বলদেও, সামশের ভাই কো বুলা জলদি সে।”, শঙ্কর হাতে ধরে থাকা সায়া মাটিতে ছুড়ে ফেলে সদর দরজা দিয়ে ছুটে বাইরে বেড়িয়ে গেল। আগুনের আভাতে সামনের গলিটাও বেশ আলোকিত। শঙ্কর ভুরু কুঁচকে ঠাহর করার চেষ্টা করলো কি হতে পারে। এই রাস্তা দিয়েই ঘণ্টা দেরেক আগে ওই মাগী টাকে তুলে নিয়ে এসেছে ওরা। কোনও গণ্ডগোল তো দেখেনি। নিজেই নিজের ভাগ্য কে গালি দিল শঙ্কর। শালা এতদিন পরে এরকম মস্ত মাল পেয়েছিলো, ভাল করে চুঁচি টেপাও হল না বাওয়াল শুরু হয়ে গেল। এক পা দু পা করে গলির মোড় অবধি এগিয়ে গেল। কিছু লোকের গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে বটে কিন্তু পরিস্কার দেখা যাচ্ছে না এখনো। পায়ের তলায় নুড়ি গুলো ফুটে যাচ্ছে, দেখলও যে ও খালি পায়েই বেড়িয়ে এসেছে আর প্যান্ট এর চেন টাও খোলা রয়েছে। একটু আগেই বাড়া টা মেয়েটার ঠোঁটের কাছে ঘষছিল, ঝট করে বেরনোর সময় ভুলে গেছে আটকাতে। একটু মুচকি হেসে ফেলল শঙ্কর, মেয়েটাকে এত সহজে ছারবেনা ঠিক করলো। ঝামেলা চুকে গেলে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে রাখবে অন্তত একটা রাত। প্রাণ ভোরে ভোগ করে নেবে তখন। একটু খুশী মনে আবার চিন্তা ফিরিয়ে আনল ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে ওঠা কিছু আগন্তুকের ওপরে। কারা ওরা? সাওতাল পট্টির লোক গুলো ভয় পেয়ে এদিকে ছুটে আসছে নাকি?
ক্যাট … ক্যাট … ক্যাট … ক্যাট
রাম্লালজির ইয়াদবের কোঠার ভিতরে হল্লা ছাপিয়ে আওয়াজ টা চারদিক থেকে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে ফিরে আস্তে লাগলো। সুরাজপুর, অবন্তিপুরের মাটিতে প্রথমবার কেউ কালাশ্নিকভ ব্যাবহার করলো। তিন চারটে 7.62 ন্যাটো রাউনডের ধাক্কায় শঙ্কর একটু শূন্যে উড়ে গিয়ে ভুবনের বাড়ির তুলসি মণ্ডপের সামনে চিত হয়ে পড়লো। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুখ থেকে ভল্কে ভল্কে বেড়িয়ে এলো রক্তের বমি। বুলেট গুলো ওর পাকস্থলী আর ক্ষুদ্রান্ত কে ছিন্নভিন্ন করে এপার ওপার হয়ে গেছে। অমানুষিক যন্ত্রণা সইতে না পেরে ওর মগজ ধিরে ধিরে স্নায়ু গুলো থেকে সঙ্কেত নেওয়া বন্ধ করে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকল। কালো আকাশের তারা গুলো দেখতে দেখতে ঝাপসা হয়ে এলো শঙ্করের কাছে। হাজারীবাগের ভাঙ্গা ঝুপড়িতে ফেলে আসা মা কে একবার দুবার ডেকে এক পুকুর রক্তের মধ্যে চিরঘুমে তলিয়ে গেল সুরাজপুরের যম শঙ্কর সাউ।
উঠোনের ভিড় টা ছত্রখান হয়ে গেল মুহূর্তের মধ্যে। বারান্দার আসেপাসের ঘর গুলো থেকে মেয়েরা চিৎকার করে কান্না শুরু করলো। ব্যাটা ছেলেরা ছুটে ছুটে ঘর থেকে দোনলা বন্দুক আর কার্তুজ গুলি বের করে জড় করতে লাগলো উঠোনের মাঝখানে।
-“চৌবে, খিলাওন পিছেওয়ালে গোডাউন কা দরওয়াজা বন্ধ কর”, ইয়াদব দোতলা থেকে সপ্তম সুরে চিৎকার করে নির্দেশ দিলেন, “সামশের, সুরজমল কহা মর গয়া, এসএলআর নিকাল কর ছত পর চড় কোই”। দামোদর উদ্ধত বাড়া আর আধ খোলা ধুতি সামলাতে সামলাতে সদর দরজার পাঁচিলের পাশের নজরদারির চৌকির উপরে উঠে বাইরে বন্দুক তাক করলো। অবন্তিপুরে ইয়াদব কোঠার বাইরে তখন প্রায় জনা পঞ্চাশেক লোক ঘিরে আছে। দামোদর অন্ধের মতন গুলি চালাতে শুরু করলো, আশা করছিল একজন না একজনের গায়ে তো ঠিক লাগবে। কিন্তু চারিদিক থেকে আকাশ ফেটে পড়ার মতো করে দশ বারোটা বিভিন্ন প্রজাতির আগ্নেয়াস্ত্র গর্জে উঠল ওকে তাক করে। একটা দেশি পাইপ গান এর গুলি বাকি সব কিছু মিস করে দামোদরের ডান চোখ ফুড়ে মাথায় ঢুকে গেল।
উদিতার মনে হচ্ছিল যেন নরকের মধ্যে আছে। চারপাশে এতগুল লোকের হুড়োহুড়ি, চিৎকার আর সেই সাথে বন্দুকের টানা কান ফাটানো শব্দ বিভ্রান্ত করে ফেলছিল আরও।
লোকের পায়ে চাপা পড়ার হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে উদিতা নিজের সায়া টা কুড়িয়ে মাথায় গলিয়ে নিল। কোমরের কাছে বেশ কিছুটা জায়গায় ছিঁড়ে গেছে দেখতে পেল কিন্তু নিজের বেআবরু শরীর কে কিছুটা হলেও ঢাকতে পেরে একটু যেন শান্তি হল উদিতার। গুটিসুটি মেরে বারান্দার একটা পিলারের পিছনে লুকিয়ে রইল। পাঁচিলের ওপার থেকে একটার পর একটা পেটো বোমা উঠোনের ওপরে আছড়ে পড়ছে। প্রচণ্ড শব্দে ফাটার সাথে সাথে চারিদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে গুড়ো কাঁচ আর অসংখ্য পেরেক আর লোহার টুকরো। একটা বোতল বোমা এসে পড়লো গঙ্গাধরের ঘরের টালির চালে। জ্বলন্ত কেরসিন চাল বেয়ে এসে বারান্দায় ছড়িয়ে পড়লো। সেই আলোতেই উদিতা দেখতে পেল সোমনাথ কে, একটা বস্তার পিছনে লুকিয়ে উঠোনের দিকে তাকিয়ে ওঁকেই হয়তো খুজছে।
-“সমু উ উ উ উ উ ”, গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠল উদিতা। সায়াটা বুকের ওপরে দুহাত দিয়ে চেপে বারান্দা দিয়ে দৌড়াতে শুরু করলো ও। দেখতে পেয়েছে কি ওকে? হ্যাঁ, চোখাচুখিও হল এবার। মনেপ্রানে ভগবান কে ধন্যবাদ জানাতে লাগলো উদিতা ওকে বাঁচানোর জন্য। সমুর চওড়া বুকে নিজেকে সঁপে দিয়ে বোধহয় অজ্ঞানই হয়ে যাবে ও।
বারান্দার সিঁড়ির মোড় টার কাছাকাছি যেতেই অন্ধকার থেকে সামশের বেড়িয়ে এসে উদিতা কে জাপটে ধরে নিল পিছন থেকে। একটা চিল চিৎকার আর দীর্ঘশ্বাস উদিতার বুক থেকে বেড়িয়ে এলো। সামশের ওকে পিঠে তুলে নিয়ে দূরে চলে যাচ্ছে সমুর থেকে। মুক্তির আশা হাতছানি দিয়ে কাছে ডেকেও আবার ঠেলে সরিয়ে দিয়েছে ওকে। সামশের কতক টা আন্দাজ করেই জীপ টাকে কোঠার পিছনে সিঁড়ির দরজার কাছে দাড় করিয়ে রেখেছিল। পিছনের সিটে ঘাপটি মেরে বসে ছিল কুরেশি। উদিতা কে ওর হাতে ছুড়ে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল সামশের।
চৌবে, খিলাওন, সামশের বা সুরজমল কাউকেই রাম্লালজি ডেকে ডেকে সাড়া পেলেন না। দোতলায় ওনাকে লক্ষ্য করে একের পরে গুলি ছুটে এসে আশেপাশের দেওয়ালের চলটা উঠিয়ে মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ছে। পায়ে পায়ে পিছিয়ে এসে দেওয়ালে ঠেশ দিয়ে দাঁড়ালেন ইয়াদব। মাথা ঠাণ্ডা করে ভাবার চেষ্টা করলেন এরপরে কি করা উচিত ওনার। সাম্রাজ্যের একছত্র অধিপতি উনি পালিয়ে যাবেন আজ পূর্বপুরুষের ভিটে ছেড়ে? এক কালের দোর্দণ্ড প্রতাপ রনবির সেনা আজকে রাতে এভাবে ইঁদুরের গর্তে কিভাবে শেষ হতে পারে? ইয়াদব ঠিক করলেন নিচ তলার টেলিফোন থেকে মিনিস্টার কে কল করে পুলিশ পাঠাতে বলবেন। ততক্ষণ যদি ধরে রাখা যায়। ঘরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একবার ভিতরে তাকালেন রাম্লালজি, কমলা কে দেখার জন্যে। শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠাণ্ডা স্রোত নেমে গেল যেন। দেখলেন নগ্ন কমলা ওনার স্ত্রি পূর্বার ছবির ঠিক নিচে দাঁড়িয়ে আছে দেয়াল ঘেঁসে। কেমন একটা বিহ্বল ভয়ারত মুখ। রাম্লালজি কে দেখে অদ্ভুত ভাবে হাতছানি দিয়ে ডাকতে লাগলো। ঠিক যেন পূর্বার মতই লাগছেনা? ওঁর স্বপ্নেও তো এরকম ভাবেই ডেকেছিল। রাম্লালজি টলতে টলতে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেলেন। মনের ভিতরে কে যেন বলে চলেছে, ভোরের সূর্য আর হয়তো দেখা হবে না।
-“সব এক এক করকে আও আওউর চাখকে যাও দুধওয়া, দেখও মিঠা হ্যাঁয় ইয়া নমকিন”, দামোদর নিজেই আর কারোর জন্যে অপেক্ষা না করে উদিতার দুধ দুটো টিপে, দুলিয়ে, ঝাঁকিয়ে চোষা শুরু করলো। মুখের হাবভাব এমন করতে লাগলো যেন সত্যি টিপে দুধ বার করতে পারছে। পাণ্ডে উদিতার হাত দুটো পিছনে টেনে ধরে কাঁধের ব্লাউস টা খুলে ওটা দিয়েই টাইট করে বেঁধে দিল যাতে ও কোনভাবে বাধা দিতে না পারে। ভিড়ের থেকে জনা দশ বারো লোক উঠে এসে ঠেলাঠেলি করে লাইন দিয়ে দাঁড়াল। বাকিরা এখনো সাহস করে উঠতে পারেনি, শহুরে বাবু দের ঘরের মেমসাহেব তো, পরে যদি কোনও বিপদ হয়। উদিতা নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে ফিল করতে লাগলো ওর স্তনে একের পর এক অপরিচিত হাত, ঠোঁট, দাত আর জিভের স্পর্শ। প্রত্যেকেই অত্যন্ত রুক্ষ ভাবে ভোগ করতে লাগলো ওর বুক। ওদের দাড়িতে, গালে ঘসা লেগে জ্বালা করতে লাগলো গায়ের চামড়া।
-“ইস্কো থোরি ঝুকাদে পাণ্ডে”, গঙ্গাধর উঠে এসে বলল। পাণ্ডে উদিতার মাথা ধরে সামনের দিকে ঝুকিয়ে দিল। গঙ্গাধর ওর পাশে হাঁটু গেড়ে বসে ওর দুটো বোঁটা দুই হাতে ধরে গরুর বাঁট দ্যোয়ানোর মতো করে টানতে লাগলো। উদিতা ব্যাথায়, অপমানে চেঁচিয়ে উঠল, ধ্বস্তাধস্তি করে গঙ্গাধরের হাত থেকে ছাড়াতে চেষ্টা করলো স্তন দুটোকে। কিন্তু দুলে ওঠা ঝুলে থাকা মাই দুটো আসেপাশের দাঁড়িয়ে থাকা লোক গুলোর মনে আরও বেশী লালসা তৈরি করলো। অনেকগুলো হাত এগিয়ে এসে গঙ্গাধরের সাথে সাথে উদিতার মাই দোয়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো। নিস্ফল আক্রোশে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল ও।
-“আবে গান্ড তো নিকাল ইস্কি”, ভিড়ের মধ্যে থেকে আবার একজন কেউ চেঁচিয়ে বলল। উদিতা কথা টা শুনেই মরিয়া হয়ে বাঁধা হাত দিয়েই পিছনে সায়া টা চেপে ধরল। শরীরের এই শেষ আবরন টুকু ও চলে যেতে দেবেনা কিছুতেই। প্রচণ্ড জোরে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল গঙ্গাধর আর ওর দলবলের হাত থেকে। মুখ দিয়ে চাপা কান্নার আওয়াজ করে পা ছুড়তে শুরু করল। একবার ওর পা গিয়ে সজোরে লাগলো দামোদরের পুরুষাঙ্গে। নাক চিপে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো দামোদর।
-“শালিকি ইত্নি যোশ, দিখাতা হু অভি”, বলদেওর মাথায় যেন খুন চেপে গেছে। উদিতার পা দুটো চেপে ধরে ও আর পাণ্ডে চ্যাংদোলা করে তুলে নিল। শঙ্কর আর গঙ্গাধর আর দু তিনটে কম বয়সি ছেলে এসে ইতি মধ্যে প্রায় ঢিলা হয়ে আসা পেটিকোট টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে দিল উদিতার কোমর থেকে। উদিতা অনুভব করলো ওর পা দুপাশে টেনে সরিয়ে নিয়েছে ওরা আর অনেক গুলো আঙ্গুল একসাথে ওর যৌনাঙ্গ আর পাছার ফুটোর মধ্যে বার বার প্রবেশ করছে। ভয়াবহ আতঙ্ক আর অপমানে উদিতা জ্ঞান হারাল। একটা সুতও না থাকা উলঙ্গ উদিতার গায়ের ওপরে প্রায় পনের কুড়ি জনের ভিড় টা ঝাঁপিয়ে পড়লো।
একটু চিন্তিত ভাবেই ঘরে ফিরলেন রাম্লালজি। চৌবের খবর ভুল হয়না। সুমন শালা আবার সুরাজপুরে আসার সাহস পেল কি করে। সামশের টাও আজকাল একটু বেশী বেয়াড়া হয়ে গেছে। কথার ওপরে কথা বলে খুব। আগেকার সময় হলে চোখ উপড়ে নিতেন কবেই। কিন্তু এখন লোকবল কমে এসেছে। ধান্দাপানি ধরে রাখার জন্যে সামশেরকে খুব দরকার। তাই ওর বেয়াদবি গুলো মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় কি। পুলিশ কাছেরির চক্কর অনেক বেরেছে আর তার সাথে মিডিয়া ওয়ালা গুলো। পাটনার মেয়ে টার কেস টার পরে সাত আটদিন এই চত্বরে মিডিয়ার গাড়ি ঘুরেছে। ওরা প্রায় বের করে ফেলেছিল সবকিছু। চৌবে ওপর তলায় ফোনটোন করে শেষ অবধি বাঁচায়। ওই একটা কোথাকার কি ছোকরির জন্য হটাত এত লোকের দরদ কেন উথলে উঠল কে জানে। কম বয়স যখন ছিল তখন কতো এরকম মেয়েছেলে তুলে এনে ছুড়ে ফেলেছেন। সত্যি দিনকাল বদলে গেছে। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ইয়াদব। বিহার ভাগ হয়ে ঝাড়খণ্ড হওয়ার পর থেকেই ওনাদের পতন শুরু হয়েছে। আগের রাজনৈতিক ছাতা টা অনেকটাই আর নেই।
ঘরে ঢুকে মাথা টা কেমন যেন ঘুরে উঠল রাম্লালজির। আয়নার সামনের টেবিলের কাছে ঘোমটা টেনে কে দাঁড়িয়ে আছে আধো অন্ধকারে? অবয়ব টা অবিকল পূর্বার মতন। পূর্বা রাম্লালজির স্ত্রির নাম। আজ থেকে পয়তিরিশ বছর আগে বাচ্চা দিতে গিয়ে মারা যান। ইদানীং মাঝে মধ্যেই স্বপ্নে দেখছেন পূর্বা কে। কেমন যেন একটা হাতছানি দিয়ে ডাকার মত করে ডাকে। কোনোমতে দরজার পাল্লা টা ধরে পতন সাম্লালেন রাম্লালজি।
-“পূর্বা তুঁ?”, প্রশ্নটা করেই নিজেরই প্রচণ্ড অবাক লাগলো।
-“জী ম্যায় কমলা”, অবয়ব টা মাথা টা একটু তুলে উত্তর দিল। ঘোমটার কাপড় দিয়ে এখনো মুখ ঢেকে রয়েছে। চোখ টা শুধু খোলা। কমলা গঙ্গাধরের বউ। বিয়ের পর আজ প্রায় বছর দশ হল গঙ্গাধর ওকে এই বাড়ি তে এনেছে। এ বাড়ির আনাচ কানাচ এখন ওর মুখস্ত। বলতে গেলে এই কোঠার পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে হেসেল সব কিছুতেই এখন কমলাই শেষ কথা। বাবু তাও ওকে মাঝেমধ্যেই পূর্বা নামে ডেকে ফেলেন।
-“ক্যা কমলা, ইত্নি রাত গয়ে?”, ধুতি টা একটু ভদ্র করে জড়ালেন কোমরে। বাড়া টা এখনো দাঁড়িয়ে আছে। নিজেই একটু আশ্চর্য হলেন নিজেকে লজ্জা পেতে দেখে।
মেয়েদের সামনে শেষ কবে লজ্জা পেয়েছিলেন মনে পড়েনা রাম্লালজির। গঙ্গাধরের বিয়ের খবর শুনেছিলেন বা ও যে বউ কে নিয়ে এ বাড়িতে এসেছে সেটাও জানতেন উনি, কিন্তু কোনোদিন কমলা কে বিশেষ খেয়াল করেননি। হয়তো বুক অবধি ঘোমটা দিয়ে থাকতো বলে। মাস ছয়েক আগে দুপুরে খাওয়ার সময় চকিতে দেখে ফেলেছিলেন কমলার মুখ। ওনাকে পরিবেশন করছিল। হাত থেকে চলকে পরে গেছিল দুধ। ঠিক যেন পূর্বা। পূর্বা চলে যাওয়ার পর আর বিয়ে করেন নি। রাম্লালজি খুব ভালবাসতেন পূর্বা কে। হাজারিবাগের উজির কেসরামের মেয়ে ছিল। তখনকার দিনে কলেজ পাশ করা মেয়ে এখানে আর কোথায়। বাবার অনেক বারন সত্ত্বেও প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন। পাগলের মতন ভালবাসতেন দুজনে দুজন কে। কিন্তু কপালের ফেরে বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় চলে যায় ওকে একলা ফেলে।
কমলা কে দেখে কেমন যেন আনমনা হয়ে গেছিলেন তাই। এত মিল কি করে হতে পারে। নাকি তারই কোনও ভুল হচ্ছে। একদিন গঙ্গাধর কে কথায় কথায় বলে ফেলেছিলেন ব্যাপার টা। সেদিন রাতেই কমলার হাত ধরে হিড়হিড় করে টানতে টানতে ইয়াদবের ঘরে ছেড়ে দিয়ে গেছিলো গঙ্গাধর। যেকোরে হোক মনিব কে খুশী করতে হবে। কমলা কে পাওয়ার জন্যেই হয়তো এরকম কোনও কথা বানিয়ে বলেছেন গঙ্গাধর কে।
-“উনহনে বোলা কি আজ আপকে পাস রহেনে কো”, কমলা আবার মাটির দিকে ঘাড় ঝুঁকিয়ে বলল, “আপ কহা থে ইত্নি দের তক?”। এ বাড়ির অন্দরমহলের মেয়েদের মধ্যে রাম্লাজি কে পাল্টা প্রস্ন করার সাহস শুধু কমলারই আছে। ওর মধ্যে নিজের মড়া বউকে দেখতে পান রাম্লালজি শুনেছিল কমলা। বেশ মজা লেগেছিল তখন। সেই থেকে হাবেভাবে একটু খবরদারি করার চেষ্টা করে মাঝে মধ্যে। প্রায় সত্তর ছোঁয়া এই একলা বুড়োটাকে দেখলে কেমন যেন একটু মায়াই হয় কমলার। বাইরে এত রুক্ষ, কিন্তু ভিতর টা কেমন যেন হাহাকার করছে।
কমলার প্রশ্নের উত্তর কি দেবেন ভেবে পেলেন না রাম্লালজি। চেতনার মুখ তা এক ঝটকায় মনে পড়ে গেল। হাতজোড় করে কাদছিল মেয়েটা। পূর্বা জানলে কি ভাবতো? কমলাও হয়তো সেই রকমি ভাববে। নিচু হয়ে যাবেন কি ওর সামনে? চোখ সরিয়ে নিলেন কমলার কাছ থেকে। বোঝাই যাচ্ছে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছে ও এখানে।
-“থোড়া কাম থা চৌবে সে”, ইয়াদব খাটের পাশে ঢাকা গ্লাস টা থেকে জল ঢকঢক করে খেয়ে নিয়ে খাটে বসলেন। ওনার মাথাই এখন হেট হয়ে আছে। কমলার সাথে চোখাচুখি হয়ে যাওয়ার ভয়ে মুখ তুলছেন না তিনি। শেষ কবে যে এরকম বিবেক দংশন হয়েছিল? বুক টা একটু ধড়ফড় ও করছে। মাথার কাছের ডান দিকের দেওয়ালে পূর্বার একটা অনেক বড় ছবি টাঙ্গানো আছে। ওদিকে তাকাতেও সাহস পাচ্ছেন না এখন।
-“সর দাবা দু আপকা?”, কমলা একটু কাছে এসে বলল, “নিঁদ আ জায়েগা জলদি মে”।
-“নহি নহি, অভি থোড়া সো জাতা হু। টায়ার্ড লগ রহা হ্যাঁয়”, রাম্লালজি আবার একটু লজ্জা পেয়ে গুটিয়ে গেলেন যেন। কি হচ্ছে ওনার আজকে? কমলার সামনে বরাবরই একটু আড়ষ্ট থাকেন। কিন্তু আজকে আরও অন্যরকম লাগছে। পাটনার মেয়েটার মুখ টাও এক ঝলক মনে পড়ে গেল নাকি? ওনার ওপর থুতু ছেটানোর পর কিরকম একটা ঘৃণার দৃষ্টি মেলেছিল।
-“ঠিক হ্যাঁয়, আপ সো জাইয়ে, ম্যায় দরওয়াজা বন্ধ করকে আতি হু”, কমলা রাম্লালজির ঘরের বিরাট দরজা টা, ক্যাচকোঁচ শব্দ করে ভিজিয়ে দিল। বুড়োর আজকে আবার ভীমরতি ধরেছে মনে হচ্ছে। গতমাসে পূর্ণিমার দিনও এরকম ভাবসাব করছিলেন। কমলার দিকে পিছন করে গুটিয়ে শুয়ে ছিলেন। সাড়া রাত পিঠ হাতিয়ে দিয়েছিল কমলা। আজকে গঙ্গাধর বার বার বলেদিয়েছে ওকে মালিক কে সব রকম সোহাগ দিতে। তুলে আনা মেয়ে গুলোর সাথে নষ্টামি করলে বাবুর নাকি এরকম বোধ হয় পরে। বয়স হয়েছে কিনা। খাটের পাশে এসে গা থেকে শাড়ি টা হালকা করে খুলে ফেলল।
-“কমলা, আজ নহি চাহিয়ে”, রাম্লাল ইয়াদব মশারির ভিতরে খাটের ওপরে উঠে বসলেন। আজ আর কিছু করার ইচ্ছে নেই। কিন্তু চান না যে কমলা চলে যাক। একা থাকতে ভয় করবে বাকি রাত টা।
ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে ব্লাউস টা খুলে ফেলে সায়া বুক অবধি টেনে বিছানায় উঠে পড়লো কমলা। পুরুষ মানুষের মন ফিরতে বেশিক্ষণ লাগেনা। শেষ কয়েকবারের ভীমরতি বাদ দিলে এর আগে ওর শরীর নিয়ে সোহাগ করেছেন বৈকি। আজকে মনে হয় শরীর টা বেশ খারাপ। রাম্লালজির দুকাধ ধরে ওকে শুইয়ে দিল কমলা। বেশ ঠাণ্ডা পরে গেছে, কিন্তু এর মধ্যেই ঘামে ভিজে আছেন উনি। ওর মাথা কমলা ওর বুকের ওপরে টেনে আনল। একটা শিশুর মতন আঁকড়ে ধরলেন কমলার শরীর রাম্লালজি।
চোখ জুড়িয়ে এসেছিল কিছুক্ষণের মধ্যেই। বাইরের উঠোনের চিৎকার চেঁচামেচিতে একটু উসখুস করছিলেন কিন্তু ঘুম টা পুরোপুরি ভাঙ্গেনি। ভাঙল প্রচণ্ড বিস্ফরনের শব্দে। প্রায় সত্তর বছরের পুরনো বাড়ির কড়ি বর্গা, খিলান কেঁপে উঠল। জানলা গুলোর খট খট শব্দের মধ্যে ধড়মড় করে বিছানায় উঠে বসলেন ইয়াদব। কিছুক্ষণ চুপ করে কিছু বুঝতে না পেরে খাট থেকে লাফিয়ে নেমে দরজা খুলে বারান্দায় বেড়িয়ে এলেন।
উদিতা কে মাঝ খানে রেখে জটলা টা চারদিকে ছড়িয়ে গেল। উদিতার জ্ঞান চলে এসেছিল কিছুক্ষণের মধ্যেই। সান বাঁধানো ঠাণ্ডা উঠোনটাতে শুয়ে দাঁতে দাঁত চপে সঝ্য করছিল এতক্ষণ। হাত পা গুলো টান টান করে ছড়ানো ছিল কারোর না কারোর হাতে বা কোলের মধ্যে। কেউ একজন ওকে গভীর ভাবে চুমু খাচ্ছিল ঠোঁটে। ওর যোনি চুষে চুষে পিচ্ছিল করে দিয়ে দামোদর প্রস্তুতি নিচ্ছিল উদিতার ভিতরে প্রবেশ করার। আড়চোখে দেখেছিল আশেপাশের বেশ কয়েক জনের হাতে ইতিমধ্যেই বেড়িয়ে এসেছিল তাদের উদ্ধত পুরুষাঙ্গ। দামোদর সবার বড় হওয়ার জন্যে তারই প্রথম অধিকার ঠিক করে নিয়েছিল লোকগুলো বিনা বাক্যব্যায়ে। উৎসাহের চরম পর্যায়ে দামোদর যখন ধুতি সরিয়ে উদ্যত বাড়া বের করে আনবে, তখনি কান ফাটানো শব্দ ও তার সাথে মাটির কাপুনি ওকে ছিটকে দিল উদিতার শরীর থেকে। উদিতা অনুভব করলো একে একে সবাই ওকে ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। ওর নগ্ন দেহের ওপর দিয়ে এতক্ষণ ঘুরে বেড়ানো লালসাসিক্ত হাত গুলো আর নেই। পাঁচিল, দরজা পেড়িয়ে অদুর রেল স্টেশনের কাছাকাছি শব্দের উৎসের দিকে নিস্পলকে তাকিয়ে থাকা ভিড়ের মধ্যে ও যেন অবহেলিত কেউ। ভগবান কি তবে ওর প্রার্থনা শুনেছে? উদিতা দেখল শঙ্করের হাতে এখনো ওর কালো সায়াটা দলা পাকিয়ে আছে। একটুকরো কাপড়ের জন্যে উতলা হয়ে উঠল ও।
-“আয় হারামজাদা শঙ্কর দেখ জলদি ক্যা হুয়া?”, ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলও সবাই, রাম্লালজি বারান্দায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করছেন। অবন্তিপুর জংশন স্টেশনে দাউদাউ করে জ্বলে ওঠা আগুন আর কালো ধোঁয়া তার নজর এড়ায় নি দোতলার বারান্দা থেকে। এটা কোনও রেল দুর্ঘটনা নয়। এই সময়ে এই পথে কোনও গাড়ি নেই। এই ধোঁয়া আর আগুন ইয়াদবের চেনা লাগলো। পাঁচ বছর আগে সুরাজপুর বস্তি তে ওর দলবল এরকম দাবানল লাগিয়েছিল ওর দুই ভাই খুন হওয়ার পর।
-“বলদেও, সামশের ভাই কো বুলা জলদি সে।”, শঙ্কর হাতে ধরে থাকা সায়া মাটিতে ছুড়ে ফেলে সদর দরজা দিয়ে ছুটে বাইরে বেড়িয়ে গেল। আগুনের আভাতে সামনের গলিটাও বেশ আলোকিত। শঙ্কর ভুরু কুঁচকে ঠাহর করার চেষ্টা করলো কি হতে পারে। এই রাস্তা দিয়েই ঘণ্টা দেরেক আগে ওই মাগী টাকে তুলে নিয়ে এসেছে ওরা। কোনও গণ্ডগোল তো দেখেনি। নিজেই নিজের ভাগ্য কে গালি দিল শঙ্কর। শালা এতদিন পরে এরকম মস্ত মাল পেয়েছিলো, ভাল করে চুঁচি টেপাও হল না বাওয়াল শুরু হয়ে গেল। এক পা দু পা করে গলির মোড় অবধি এগিয়ে গেল। কিছু লোকের গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে বটে কিন্তু পরিস্কার দেখা যাচ্ছে না এখনো। পায়ের তলায় নুড়ি গুলো ফুটে যাচ্ছে, দেখলও যে ও খালি পায়েই বেড়িয়ে এসেছে আর প্যান্ট এর চেন টাও খোলা রয়েছে। একটু আগেই বাড়া টা মেয়েটার ঠোঁটের কাছে ঘষছিল, ঝট করে বেরনোর সময় ভুলে গেছে আটকাতে। একটু মুচকি হেসে ফেলল শঙ্কর, মেয়েটাকে এত সহজে ছারবেনা ঠিক করলো। ঝামেলা চুকে গেলে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে রাখবে অন্তত একটা রাত। প্রাণ ভোরে ভোগ করে নেবে তখন। একটু খুশী মনে আবার চিন্তা ফিরিয়ে আনল ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে ওঠা কিছু আগন্তুকের ওপরে। কারা ওরা? সাওতাল পট্টির লোক গুলো ভয় পেয়ে এদিকে ছুটে আসছে নাকি?
ক্যাট … ক্যাট … ক্যাট … ক্যাট
রাম্লালজির ইয়াদবের কোঠার ভিতরে হল্লা ছাপিয়ে আওয়াজ টা চারদিক থেকে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে ফিরে আস্তে লাগলো। সুরাজপুর, অবন্তিপুরের মাটিতে প্রথমবার কেউ কালাশ্নিকভ ব্যাবহার করলো। তিন চারটে 7.62 ন্যাটো রাউনডের ধাক্কায় শঙ্কর একটু শূন্যে উড়ে গিয়ে ভুবনের বাড়ির তুলসি মণ্ডপের সামনে চিত হয়ে পড়লো। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুখ থেকে ভল্কে ভল্কে বেড়িয়ে এলো রক্তের বমি। বুলেট গুলো ওর পাকস্থলী আর ক্ষুদ্রান্ত কে ছিন্নভিন্ন করে এপার ওপার হয়ে গেছে। অমানুষিক যন্ত্রণা সইতে না পেরে ওর মগজ ধিরে ধিরে স্নায়ু গুলো থেকে সঙ্কেত নেওয়া বন্ধ করে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকল। কালো আকাশের তারা গুলো দেখতে দেখতে ঝাপসা হয়ে এলো শঙ্করের কাছে। হাজারীবাগের ভাঙ্গা ঝুপড়িতে ফেলে আসা মা কে একবার দুবার ডেকে এক পুকুর রক্তের মধ্যে চিরঘুমে তলিয়ে গেল সুরাজপুরের যম শঙ্কর সাউ।
উঠোনের ভিড় টা ছত্রখান হয়ে গেল মুহূর্তের মধ্যে। বারান্দার আসেপাসের ঘর গুলো থেকে মেয়েরা চিৎকার করে কান্না শুরু করলো। ব্যাটা ছেলেরা ছুটে ছুটে ঘর থেকে দোনলা বন্দুক আর কার্তুজ গুলি বের করে জড় করতে লাগলো উঠোনের মাঝখানে।
-“চৌবে, খিলাওন পিছেওয়ালে গোডাউন কা দরওয়াজা বন্ধ কর”, ইয়াদব দোতলা থেকে সপ্তম সুরে চিৎকার করে নির্দেশ দিলেন, “সামশের, সুরজমল কহা মর গয়া, এসএলআর নিকাল কর ছত পর চড় কোই”। দামোদর উদ্ধত বাড়া আর আধ খোলা ধুতি সামলাতে সামলাতে সদর দরজার পাঁচিলের পাশের নজরদারির চৌকির উপরে উঠে বাইরে বন্দুক তাক করলো। অবন্তিপুরে ইয়াদব কোঠার বাইরে তখন প্রায় জনা পঞ্চাশেক লোক ঘিরে আছে। দামোদর অন্ধের মতন গুলি চালাতে শুরু করলো, আশা করছিল একজন না একজনের গায়ে তো ঠিক লাগবে। কিন্তু চারিদিক থেকে আকাশ ফেটে পড়ার মতো করে দশ বারোটা বিভিন্ন প্রজাতির আগ্নেয়াস্ত্র গর্জে উঠল ওকে তাক করে। একটা দেশি পাইপ গান এর গুলি বাকি সব কিছু মিস করে দামোদরের ডান চোখ ফুড়ে মাথায় ঢুকে গেল।
উদিতার মনে হচ্ছিল যেন নরকের মধ্যে আছে। চারপাশে এতগুল লোকের হুড়োহুড়ি, চিৎকার আর সেই সাথে বন্দুকের টানা কান ফাটানো শব্দ বিভ্রান্ত করে ফেলছিল আরও।
লোকের পায়ে চাপা পড়ার হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে উদিতা নিজের সায়া টা কুড়িয়ে মাথায় গলিয়ে নিল। কোমরের কাছে বেশ কিছুটা জায়গায় ছিঁড়ে গেছে দেখতে পেল কিন্তু নিজের বেআবরু শরীর কে কিছুটা হলেও ঢাকতে পেরে একটু যেন শান্তি হল উদিতার। গুটিসুটি মেরে বারান্দার একটা পিলারের পিছনে লুকিয়ে রইল। পাঁচিলের ওপার থেকে একটার পর একটা পেটো বোমা উঠোনের ওপরে আছড়ে পড়ছে। প্রচণ্ড শব্দে ফাটার সাথে সাথে চারিদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে গুড়ো কাঁচ আর অসংখ্য পেরেক আর লোহার টুকরো। একটা বোতল বোমা এসে পড়লো গঙ্গাধরের ঘরের টালির চালে। জ্বলন্ত কেরসিন চাল বেয়ে এসে বারান্দায় ছড়িয়ে পড়লো। সেই আলোতেই উদিতা দেখতে পেল সোমনাথ কে, একটা বস্তার পিছনে লুকিয়ে উঠোনের দিকে তাকিয়ে ওঁকেই হয়তো খুজছে।
-“সমু উ উ উ উ উ ”, গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠল উদিতা। সায়াটা বুকের ওপরে দুহাত দিয়ে চেপে বারান্দা দিয়ে দৌড়াতে শুরু করলো ও। দেখতে পেয়েছে কি ওকে? হ্যাঁ, চোখাচুখিও হল এবার। মনেপ্রানে ভগবান কে ধন্যবাদ জানাতে লাগলো উদিতা ওকে বাঁচানোর জন্য। সমুর চওড়া বুকে নিজেকে সঁপে দিয়ে বোধহয় অজ্ঞানই হয়ে যাবে ও।
বারান্দার সিঁড়ির মোড় টার কাছাকাছি যেতেই অন্ধকার থেকে সামশের বেড়িয়ে এসে উদিতা কে জাপটে ধরে নিল পিছন থেকে। একটা চিল চিৎকার আর দীর্ঘশ্বাস উদিতার বুক থেকে বেড়িয়ে এলো। সামশের ওকে পিঠে তুলে নিয়ে দূরে চলে যাচ্ছে সমুর থেকে। মুক্তির আশা হাতছানি দিয়ে কাছে ডেকেও আবার ঠেলে সরিয়ে দিয়েছে ওকে। সামশের কতক টা আন্দাজ করেই জীপ টাকে কোঠার পিছনে সিঁড়ির দরজার কাছে দাড় করিয়ে রেখেছিল। পিছনের সিটে ঘাপটি মেরে বসে ছিল কুরেশি। উদিতা কে ওর হাতে ছুড়ে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল সামশের।
চৌবে, খিলাওন, সামশের বা সুরজমল কাউকেই রাম্লালজি ডেকে ডেকে সাড়া পেলেন না। দোতলায় ওনাকে লক্ষ্য করে একের পরে গুলি ছুটে এসে আশেপাশের দেওয়ালের চলটা উঠিয়ে মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ছে। পায়ে পায়ে পিছিয়ে এসে দেওয়ালে ঠেশ দিয়ে দাঁড়ালেন ইয়াদব। মাথা ঠাণ্ডা করে ভাবার চেষ্টা করলেন এরপরে কি করা উচিত ওনার। সাম্রাজ্যের একছত্র অধিপতি উনি পালিয়ে যাবেন আজ পূর্বপুরুষের ভিটে ছেড়ে? এক কালের দোর্দণ্ড প্রতাপ রনবির সেনা আজকে রাতে এভাবে ইঁদুরের গর্তে কিভাবে শেষ হতে পারে? ইয়াদব ঠিক করলেন নিচ তলার টেলিফোন থেকে মিনিস্টার কে কল করে পুলিশ পাঠাতে বলবেন। ততক্ষণ যদি ধরে রাখা যায়। ঘরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একবার ভিতরে তাকালেন রাম্লালজি, কমলা কে দেখার জন্যে। শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠাণ্ডা স্রোত নেমে গেল যেন। দেখলেন নগ্ন কমলা ওনার স্ত্রি পূর্বার ছবির ঠিক নিচে দাঁড়িয়ে আছে দেয়াল ঘেঁসে। কেমন একটা বিহ্বল ভয়ারত মুখ। রাম্লালজি কে দেখে অদ্ভুত ভাবে হাতছানি দিয়ে ডাকতে লাগলো। ঠিক যেন পূর্বার মতই লাগছেনা? ওঁর স্বপ্নেও তো এরকম ভাবেই ডেকেছিল। রাম্লালজি টলতে টলতে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেলেন। মনের ভিতরে কে যেন বলে চলেছে, ভোরের সূর্য আর হয়তো দেখা হবে না।