18-03-2019, 02:55 PM
সি আর পির পেট্রল, লাল পার্টির হটাত আবির্ভাব আর সামশেরের এই কাজ কর্ম একটা কালো মেঘের মতন যেন এগিয়ে আসছে অবন্তিপুরের ইয়াদব সাম্রাজ্যের ওপর। আজকের রাত টা গা ঢাকা দিতে হবে। অভ্যেস বসত হাত টা কোমরের কাছে চলে গেল চৌবের। ওখানেই চিরকাল গুঁজে রাখে রাম্পুরি চাকু টা। দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে হয়নি, কিন্তু আজকে কেমন যেন মনে হচ্ছে হাতে থাকলে ভাল হবে। ওটা ওঁর সৌভাগ্যের প্রতিক। কিন্তু নেই, এদিক ওদিক এ পকেট সে পকেট অনেক খুঁজল কিন্তু পেলনা। ঘাম বেড়িয়ে গেল চৌবের, “নহি নহি, আজ নহি”, মনে মনে বলতে লাগলো ও। হ্যাঁ, মনে পড়েছে, চেতনা কে চোদার সময় মোবাইল আর রাম্পুরি টা খুলে মেঝে তে রেখেছিল, তারপরে বেরনর সময় নিতে ভুলে গেছে। এখনো ওটা মেঝেতেই পরে আছে। খিলাওন কে আভি বলতে হবে কি চেতনা কে এখান থেকে সরিয়ে নিতে। আর যদি মরে গিয়ে থাকে তাহলে ওই খালে ফেলে দিতে। হাত সাফ করে ফেলতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।
একটা রক্ত জল করা চিৎকারে চৌবের ভাবনার তার ছিঁড়ে গেল। গোডাউনের ভিতর থেকেই এলো শব্দ টা। খিলাওনের গলা। চৌবে স্থির হয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। একটু পরে দরজা খুলে টলতে টলতে বেড়িয়ে এলো খিলাওন। সম্পূর্ণ ন্যাংটো আর রক্তে ভেসে যাচ্ছে কোমর থেকে সারা পা। দরজার ওপরে কাঁপা কাঁপা আলোতে চৌবে দেখতে পেল খিলাওনের বাড়া নেই আর ওখান থেকে ফিনকি দিয়ে বেরচ্ছে লাল রক্তের স্রোত। দশরথ যেখান টাতে শুয়ে ছিল সেখানেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল খিলাওন। চৌবে ছুটে গিয়ে ধরার চেষ্টা করলো। রক্তের ধারা ভিজিয়ে দিল ওঁর সাধের পরিপাটি করা জামা কাপড়।
“কাট দিয়া সালি নে…”, ঘড়ঘড় করে বলল খিলাওন, “ম্যায় ভি সর ফোড় দিয়া রানডি কা”। চৌবে আন্দাজ করলো আর চার পাঁচ মিনিটের মধ্যে জ্ঞান হারাবে খিলাওন। সে জ্ঞান আর ফিরবে না।
“মেরেকো হস্পাতাল লে চল রে বাবা”, চৌবের হাত চেপে ধরে খিলাওন বলল।
হাত ছাড়িয়ে দিয়ে চৌবে উঠে দাঁড়াল। রাম্পুরি টা ওঁর চাই। লাস্ট দশ বছরে এক দিন ওটা ছাড়া রাস্তায় বেরয়নি কখনও। গোডাউনের দরজা দিয়ে আস্তে আস্তে ভিতরে ঢুকল চৌবে। ঘরের ভিতরের কুপি র আলো টা নিবে গেছে। পোড়া তেলের গল্ধ নাকে এলো। অন্ধকারে চোখ একটু সয়ে যেতে পা টিপে টিপে ভিতরে গেল। মেঝে তে রক্তের পুকুর যেন আর তার ওপরে উপুড় হয়ে পড়ে আছে নগ্ন চেতনা। মুখটা কিছু বোঝা যাচ্ছে না। পাছার কাছ টা রক্তাক্ত হয়ে আছে। ওঁর নিজের না খিলাওনের কে জানে। এদিক সেদিক উঁকি মেরে খুজে পেলনা না রাম্পুরি টা। পা দিয়ে চেতনা গায়ে দু তিনবার ঠ্যালা দিল। হয়তো ওঁর গায়ের তলায় পড়ে আছে। পা দিয়ে ওলটাতে পারলো না চৌবে। চেতনার পাশে হাঁটু গেড়ে বসে দুহাত দিয়ে টেনে চিত করে দিল।
চেতনার প্রথম ছোবল টা আনারি ছিল। চৌবের বাঁ চোখ নাক আর ডান গাল টাকে ফালা করে দিয়ে বেড়িয়ে গেল। ভয়ঙ্কর যন্ত্রণায় দুহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরল চৌবে। মনে পড়ে গেল প্রথম বার যখন রাম্পুরি চালিয়েছিল, গলা মিস করে গাল কেটে দিয়েছিল সুলতানের। সুলতান ছেলেবেলার দোস্ত ছিল চৌবের। মেয়েছেলে নিয়ে ঝগড়া হয়েছিল একদিন। দুজনেই রুশনী কে মন দিয়েছিল। পরের টানে নিখুত ভাবে চিরে দিয়েছিল সুলতানের গলা। এক ঝলকে সুলতান আর রুশনীর মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠল চৌবের। অবশ হয়ে এলো গা হাত পা। চেতনার পরের ছোবল কেটে বেড়িয়ে গেল চৌবের কণ্ঠনালি। হিংস্র বাঘিনীর মতন আঘাতের পর আঘাত করে যাচ্ছে চেতনা। ওঁর রক্ত মাখা পাগলিনি নগ্ন শরীরের সামনে মাথা ঝুকিয়ে পড়ে গেল চৌবের নিথর দেহ।
জঙ্গল টা যেখানে শেষ তার একটু নিচ থেকেই কাশ বন টা শুরু হয়ে চলে গেছে রেল লাইনের গা অবধি। মাটি থেকে প্রায় ছয় সাড়ে ছয় ফিট অবধি উঁচু। একবার ওর ভিতরে ঢুকে গেলে বাইরে থেকে বোঝার কোনও উপায় নেই।
অবন্তিপুর একটা মাঝারি মাপের জাংশন। এই জায়গাটা অনেক টা কারশেড টাইপের। রেল লাইন গুলো আঁকিবুঁকি কেটে একে অন্যের সাথে মিশেছে। এদিক ওদিক অনেক ছোটো বড় নানা সাইজের ওয়াগন পড়ে আছে। বেশিরভাগই পরিত্যক্ত। অবন্তিপুর ইস্ট কোল ফিল্ড টাতে কয়লার উৎপাদন এখন কমে এসেছে। যাওয়া বা হয় তার ৪০ % কোল মাফিয়া চুরি করে নেয়। মালগাড়ী এখান থেকে ইদানিং কমই যাতায়াত করে। । ওই পড়ে থাকা ওয়াগন গুলোতে এখন ইয়াদবের ছেলেরা রাত হলে তাশ, জুয়া মদের থেক বসায়। কখনও আশেপাশের এলাকা থেকে মেয়ে তুলে এনে গণ ;., করে। নেশা একটু বেশী হয়ে থাকলে মেয়ে গুলো প্রাণ নিয়ে পালাতে পারে। নাহলে পরের দিন সুরাজপুর খালে তাদের নগ্ন শরীর ভেসে যেতে দেখা যায়।
কাশ বনটার ওপরে একটা হালকা কুয়াশার মেঘ জমেছে। তেমন ঘন হয়নি এখনো। সুরাজপুরের দিক থেকে ধিরে ধিরে এগিয়ে আসছে। বেশ বোঝা যাচ্ছে যে আর একটু পরেই রেল লাইন টাকে পুরো ঢেকে ফেলবে। চাঁদের ফালিটা আকাশের মাঝখান পেড়িয়ে গেছে। পরশু দিন অমাবস্যা, কালীপূজো।
জঙ্গল টা পেড়োতে আমাদের প্রায় দশ মিনিট লেগেছে। আমি করণের কথা মতন ওঁর একটু পিছনে একটু কোনা করে ফলো করছিলাম। প্রায় একশো মিটার এর মতন করে দৌড়ানোর পর করণ হাতের ইশারা করে দাড়াতে বলছিল। তারপর মাটিতে ঝুঁকে বসে ১ মিনিটের মতন দম নেওয়া। তারপরে আবার দৌড়। করণ কি করে পারছিল জানিনা, শেষের দিকে আমি তো প্রায় নিজেকে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে নিয়ে আসছিলাম। এখান থেকে রেল লাইন টা প্রায় শ দুয়েক মিটার এখনো।
-“এবার?”, আমি কোনও মতে দম নিয়ে করণ কে জিগাসা করলাম। আমার যা অবস্থা তাতে এখন চিৎকার করে কুকুর তাড়াতে পারবো না, সামশেরের দলবল তো দুরের কথা।
করণ দেখলাম আশ্চর্য শান্ত। মাটিতে হাটু গেড়ে বসে, শালের ভিতর থেকে কিরকম একটা একনলা ছোটো দুরবিন বের করে চোখে লাগাল।
-“দূর শালা, এই অন্ধকারে দুরবিন দিয়ে কি পাখি দেখছিস নাকি?”, আমার মহা বিরক্তি লাগলো ওঁর রকমসকম দেখে। ওঁর আদৌ কোনও প্ল্যান আছে না নেই সেটাই বুঝতে পারছিনা।
-“চোখে লাগিয়ে দেখ”, করণ হাত বাড়িয়ে আমার দিকে দুরবিন টা এগিয়ে দিল। আমি খুব তাচ্ছিল্য সহকারে ওটা নিয়ে নেড়ে চেরে দেখলাম। ঠিক দুরবিন নয়, দুপাশে বেশ কয়েকটা নব লাগানো আছে। মাঝখান টা সরু হয়ে গেছে আবার শেষদিক টা মোটা মতন। চোখে লাগানোর জায়গা টাতে একটা রাবারের গার্ড রয়েছে। বেশ ভারীই মনে হল। চোখে লাগালাম আর সাথে সাথে আমার আশপাশ টা যেন চেঞ্জ হয়ে গেল। আশেপাশের গাছপালা গুলো সব ছাই ছাই রঙের, তারমাঝে মাঝে চকচকে সাদা সাদা কি সব উড়ে বেড়াচ্ছে। মনে হল জোনাকি। এমনকি কাশ বনে উড়ে বেড়ানো ফড়িং গুলকেও দেখতে পেলাম মনে হল।
-“মনোকুলার থারমাল ইমেজার!!!”, আমি অস্ফুটে বলে উঠলাম। হলিউডের সিনেমাতে অনেক দেখেছি সৈন্য দের বন্দুকে লাগানো থাকে।
-“হুম! দে এবার আমাকে”, করণ আমার হাত থেকে যন্তর টা নিয়ে নিল। আমার চোখের সামনে যেন ঝপ করে লোডশেদিং হয়ে গেল। আবার সব ঘুটঘুটে কালো অন্ধকার। আমি কিছুক্ষণ অবাক হয়ে করণের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। কিছুই যেন তল পাচ্ছিনা আমি। কোনভাবেই মেলাতে পারছিনা আমার ছেলেবেলার প্রিয় বন্ধুর সাথে আজকে আমার পাশে হাঁটু গেড়ে বসে থাকা লোকটার। করণ বিশ্ব বখাটে ছেলে হতে পারে, দেদার পয়সা খরচা করতে পারে সাধারন লোকের কাছে যা আজে বাজে জিনিসের ওপরে। প্রচণ্ড দামি বিদেশি দুরবিন কিনতে পারে এই জঙ্গলে জন্তু জানোয়ার পাখি দেখার জন্যে, কিন্তু থার্মাল ইমেজার? এটা তো মিলিটারি ইকুইপমেন্ট। ওঁর হাতে এলো কি করে? কোনও বদ সঙ্গে পড়ে যায়নি তো?
-“স্নাইপার!”, করণের কথা শুনে চমকে গেলাম। সামশের দের আবার ওই সব জিনিস আছে নাকি? করণ আমার দিকে মনোকুলার আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “২ ও ক্লকে ওই যে একলা ওয়াগন টা আছে ওটার দিকে তাকা”।
আমি ওঁর কথামতন সেই দিকে তাক করতেই পরিস্কার অবয়ব টাকে দেখতে পেলাম। ওয়াগন টার ছাদে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে, সামনে একটা লম্বা লাঠির মতন বেড়িয়ে আছে। ভাগ্য ভাল আমাদের দিকে পিছন করে আছে। রেল লাইনের পাশের যে রাস্তাটা সুরাজপুর থেকে এসেছে সেই দিকেই মুখ করে আছে। করণ ঠিকই বলেছিল, ওই রাস্তা টা ধরে এলে এতক্ষণে আমাদের খুলি উড়ে যেত। আর একটু ভাল করে লোকটার হাতের বন্দুক টাকে নজর করলাম।
-“নাহ স্নাইপার রাইফেল নয়। পাতি .৩০৩, এতো আমাদের পেট মোটা হাবিলদার গুলো নিয়ে ঘুরে বেড়ায়”, আমারও যে এই ব্যাপারে জ্ঞান কম নয় সেটা করণ কে বুঝিয়ে দিলাম।
-“হ্যাঁ, যদি ওটা তোর পেট মোটা হাবিলদারের হাতে থাকে তাহলে একটা লাঠির চেয়ে বেশী কিছুনা। কিন্তু ট্রেনিং পাওয়া হাতে এটা আজকের যেকোনো মডার্ন স্নাইপার রাইফেলের থেকে কম নয়। ছয়শ থেকে হাজার ইয়ার্ড অবধি টার্গেট আরামসে লাগাতে পারবে। আমরা তার অনেক ভিতরে বসে আছি।”, করণ আমার গর্বে ঠেশ দিয়ে বলল, “এটা নির্ঘাত সুরজমল, ইয়াদবের দলে ওই একমাত্র ৩০৩ নিয়ে ঘোরে, আর ওঁর হাতের নিশানাও নাকি দারুণ শুনেছি। কিন্তু…”
-“কিন্তু কি?”, ওঁর কপালে গভীর ভাঁজ টা আমি কোনও যন্ত্র ছাড়াই দেখতে পেলাম।
-“ও জানে যে ওই পথ দিয়ে কেউ আসবে আর তার জন্যেই ওয়েট করছে, ইয়াদবের ছেলেরা নর্মালই এসব করেনা। মেয়ে ছেলে নিয়ে মস্তি করতেই বেশী ব্যস্ত থাকে।”, এক নিশ্বাসে বলে গেল করণ। “…ও আমাদের জন্যে বসে আছে…”, ওঁর গলাটা যেন একটু কেঁপে গেল।
আমার গা হাত থেকে সব জোর চলে গেল মুহূর্তের মধ্যে। হাতের বন্দুক টাকেও অসম্ভব ভারী মনে হতে লাগলো। এসব কি বলছে করণ। আমরা যে মউয়া কে বাঁচানোর জন্যে আসছি সেটা তো আমাদের বাড়ির ওই কটা লোক ছাড়া কেউ জানেনা। ইয়াদবের লোকেরা কি করে এর মধ্যে জেনে যাবে যে আমরা আসছি?
-“করণ, তুই কি করে জানলি যে সামশের মউয়া কে এখানেই আনবে? আমরা হয়তো ভুল জায়গায় এসেছি। এটা হয়তো অন্য কোনও বাওয়াল, কয়লার স্মাগ্লিং তো এখানে হতেই থাকে”, আমি নিজেকে আর করণ কে বোঝানোর চেষ্টা করলাম।
-“হুম…আমি ভুল করতেই পারি, কিন্তু এ জিনিস টা করবে না”, করণ ওঁর পকেট থেকে একটা ছোটো আই ফোন সাইজের একটা জিনিস বের করলো। সেটার কালো স্ক্রিনে দুটো হলুদ ডট মাঝে মাঝে ব্লিঙ্ক করছে। ওদের মধ্যে একটাকে পয়েন্ট করে করণ বলল, “এটা আমরা…আর এইটা মউয়া। এই যন্তর তো বলছে আমরা ওঁর আরাইশ মিটারের মধ্যেই রয়েছি। তাছাড়া মেয়েছেলে তুলে মস্তি করার এটাই পেটেন্ট জায়গা ওদের”।
আমি নড়েচড়ে বসে করণ কে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করবো বলে ভাবলাম কিন্তু করণ আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “সমু, আমি জানি তোর মনে কি চলছে। কিন্তু তোকে সব কিছু বলার মতন সময় এখনো আসেনি। আমি তোকে সব খুলে বলব পরে, আজ নয়, এখন নয়। শুধু একটা কথা মনে রাখ, আমাদের যে করে হোক মউয়া কে বাচাতেই হবে।”
-“মউয়া কে, করণ?”, আমি অস্থির হয়ে জিগাসা করলাম। আমাকে জানতে হবে কার জন্যে আমি এতটা জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছি।
-“মউয়া…মউয়া…আমার কাছে, আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন কেউ, শুধু এটুকুই বলতে পারবো এখন”।
-“আমাদের মানে কাদের করণ?”, আমি হারিয়ে জাচ্ছিলাম একের পর আরেক কথার হেঁয়ালি তে।
করণ কোনও উত্তর দিল না। ফোনের মতন যন্ত্র টার ডান দিকের একটা বোতাম বিভিন্ন অনুপাতে থেমে থেমে টিপতে লাগলো। “টিক টিক…টিক টিক টিক… টিক টিক টিক টিক… টিক টিক…”
“মরস কোড”, আমি বুঝতে পারলাম। কাউকে ও কোনও সঙ্কেত দিচ্ছে। করণ কি এখানে একা? নাকি ওরও কোনও দলবল আছে? কি করে ও এখানে? আমাদের মানে কাদের কথা বলছে? আমার মনের মধ্যে উথাল পাথাল হতে থাকল। কোনও প্রশ্নের উত্তর নেই।
“চলে আয়” আমাকে হাত দিয়ে ইশারা করে করণ গুড়ি মেরে কাশ বনে ঢুকে গেল। আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ওঁর পিছু নিলাম। আমরা ওয়াগন টাকে ডান হাতে রেখে প্রায় গোল করে ঘুরে পিছনের দিক দিয়ে এগোতে লাগলাম খুব সাবধানে। আমি বার বার ডান দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছিলাম ওয়াগন এর ওপরের লোকটা এখনো আমাদের দিকে পিছন করে আছে কিনা। কুয়াশার জন্যে বিশেষ কিছু দেখতে পারছিলাম না। মনে মনে আস্বস্ত হলাম এই ভেবে যে এই কুয়াশার মেঘ নিশ্চয়ই আমাদেরকেও একই ভাবে ঢেকে রাখছে। সানি আর উদিতার মুখ বার বার মনে পড়তে লাগলো। খুব মিস করতে শুরু করলাম মা আর বাবা কে। নিজেকে এতদিন ঘোর নাস্তিক বলে ভাবতাম কিন্তু দেখলাম মনেপ্রানে ডেকে চলেছি যতরকম ভগবানের নাম জানি।
লাইনের পাশের ওয়াগন গুলোর কাছাকাছি যেতে শুনতে পেলাম একটা মেয়ের গলার চাপা কান্না আর কিছু পুরুষ কণ্ঠ। কোনও শব্দ না করে আওয়াজ লক্ষ্য করে এগিয়ে গেলাম লাইন বরাবর। একটু পিছিয়ে যেতেই একটা পরিত্যক্ত ভাঙ্গাচোরা কামড়ার পিছনে লাইনের ওপরে শব্দের আর আলোর উৎস খুঁজে পেলাম। আমরা কামড়ার পাশ টাতে নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। করণ ইশারায় আমার কাছ থেকে বন্দুক টা চেয়ে নিল। খুব সাবধানে ওপরের রেলে মনুকুলার টা ফিট করে আমাকে ফেরত দিল। খুট করে একটা শব্দ হল শুধু । বেশ একটা মেড ইজি স্নাইপারের কাজ করবে এটা এখন।
-“তুই কামড়া টার ডান পাশ টাতে লাইনের ধারে থাক, ওখান থেকে সামনের ওই ওয়াগন টার খোলা ভিউ পাবি। আমি বাঁ দিক দিয়ে যাচ্ছি। তুই আমার কথা ভুলে যা, আমি ঠিক মউয়া কে বের করে আনব। তুই শুধু ওপরে সুরজমলের দিকে নজর রাখবি। এখানে কোনও আওয়াজ হলেই কিন্তু ও ওখান থেকে নেমে আসবে। ওটুকুই তোর হাতে সময়। ওঁর মধ্যে তুই ওঁকে না ফেলতে পারলে, ও আমাকে ফেলে দেবে অনেক দূর থেকেই।”, করণ প্রায় শুনতে না পাওয়ার মতন করে বলল।
আমি করনের হাত টা একবার শক্ত করে ধরলাম। কে জানে এরপরে আবার দেখা হবে কিনা। আমার ব্রেন এখন ভাবনা চিন্তা করা বন্ধ করে দিয়েছে। যন্ত্রের মতন করণের কথা শুনে পা টিপে টিপে কামড়া টার ডান দিকের সাইডে মাটির ওপরে এক হাঁটু ভাঁজ করে বসলাম। মনকুলারের ভিউ তে চোখ লাগিয়ে দেখলাম, ওয়াগনের ওপরে সুরজমলের কাঁধের কিছুটা দেখা যাচ্ছে। এখনো শুয়ে আছে। আমি কামড়ার তলা দিয়ে চাকার মাঝখান দিয়ে আলোর উৎসর দিকে তাকালাম।
লাইনের ওপরে একটা হ্যাজাক রাখা আছে। সেখান থেকেই যা আলো আসার আসছে। দুটো রেলের মাঝখানে কিছুটা ঘেসো জমি আছে সেখানেই তিনটে লোকের সাথে ধ্বস্তাধস্তি করে যাচ্ছে মউয়া। মুখ দিয়ে একটা চাপা বোবা কান্নার মতন আওয়াজ করছে কিন্তু বাঘিনীর মতন লড়ে যাচ্ছে সমানে। বাঁ দিকের ধুমসো মতন জিন্স পড়া লোকটা ওঁর হাত দুটোকে বাগে পেয়ে খুব জোরে পিছনে মুচড়ে ধরল। মনে হল যেন ভেঙ্গেই গেল ও দুটো। মউয়া চোখ বুজে ককিয়ে উঠে চিত হয়ে পড়ে গেল। ওঁর গায়ের শাড়ি অনেকক্ষণ আগেই কোমরের কাছ থেকে খুলে পড়ে সায়ার সাথে জড়িয়ে ছিল। মাঝখানের খাকি প্যান্ট পড়া লোকটা এই মুহূর্তের অপেক্ষা করছিল। মউয়ার গায়ের কালো ব্লাউস টা বুকের মাঝখান থেকে এক টানে ছিঁড়ে দিল। হ্যাজাকের আলোতে মউয়ার নিটোল সুডৌল স্তন যুগল ছেড়া ব্লাউসের ভিতর থেকে উপচে বেড়িয়ে পড়লো। খাকি প্যান্ট দ্রুত হাতে পুরো জামা টাই ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলল। জিন্স পড়া ধুমসো টা মুখ দিয়ে একটা হালকা শিষ দিয়ে উঠল।
“জব্বর মাল হ্যাঁয় সালি, বহত চোদেঙ্গে আজ ইস্কো”।
আমি দেখতে পেলাম মউয়ার নগ্ন ভারী পেট। মনে পড়লো বিকেলে স্টেশনের পাশে বিড়ির দোকানে এই শরীর দেখার কতো কল্পনা করেছিলাম। আর এখন কি অবসথায় দেখছি ওকে। নাভির অনেক নিচে সায়া পড়েছে মউয়া অথবা টানা হেঁচড়ায় কোমর থেকে নেমে গেছে অনেক টা। পায়ের কাছের লোকটা একটা ধুতি পড়ে ছিল। ওঁর এতক্ষণ মউয়ার দুটো পা চেপে ধরে রেখেছিল। এখন হটাত করে ওঁর কোমরের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে নাভির কাছটায় কামরাতে চুস্তে শুরু করলো।
“আবে মাদারচোদ, নাংগা করনে তো দে লউন্দি কো, সালে পেটুয়া খাইকে গির জায়েগা তেরা সব”, খাকি প্যান্ট ধুতি পরা কে টেনে মউয়ার কোমর থেকে সরিয়ে দিল।
“অব তক তেরি বিবি কা পেটুয়া মে ঘুসাইয়া থা ক্যা? ইসি লিয়ে লউন্দে নাহি হুয়ে তেরা…বহেনচোদ”, জিন্স প্যান্ট খ্যাক খ্যাক করে হেসে উঠে বলল।
মউয়া দেখলাম বাধা দেওয়া ছেড়ে দিয়েছে। চোখ বন্ধ করে নিশ্চল হয়ে পড়ে আছে। আমি আড়চোখে একবার ওয়াগনের ছাদের দিকে তাকালাম। হ্যাঁ সুরজমল এখনো ওপরেই শুয়ে আছে। আবার মউয়ার দিকে ঘাড় ঘোরালাম।
একটা রক্ত জল করা চিৎকারে চৌবের ভাবনার তার ছিঁড়ে গেল। গোডাউনের ভিতর থেকেই এলো শব্দ টা। খিলাওনের গলা। চৌবে স্থির হয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। একটু পরে দরজা খুলে টলতে টলতে বেড়িয়ে এলো খিলাওন। সম্পূর্ণ ন্যাংটো আর রক্তে ভেসে যাচ্ছে কোমর থেকে সারা পা। দরজার ওপরে কাঁপা কাঁপা আলোতে চৌবে দেখতে পেল খিলাওনের বাড়া নেই আর ওখান থেকে ফিনকি দিয়ে বেরচ্ছে লাল রক্তের স্রোত। দশরথ যেখান টাতে শুয়ে ছিল সেখানেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল খিলাওন। চৌবে ছুটে গিয়ে ধরার চেষ্টা করলো। রক্তের ধারা ভিজিয়ে দিল ওঁর সাধের পরিপাটি করা জামা কাপড়।
“কাট দিয়া সালি নে…”, ঘড়ঘড় করে বলল খিলাওন, “ম্যায় ভি সর ফোড় দিয়া রানডি কা”। চৌবে আন্দাজ করলো আর চার পাঁচ মিনিটের মধ্যে জ্ঞান হারাবে খিলাওন। সে জ্ঞান আর ফিরবে না।
“মেরেকো হস্পাতাল লে চল রে বাবা”, চৌবের হাত চেপে ধরে খিলাওন বলল।
হাত ছাড়িয়ে দিয়ে চৌবে উঠে দাঁড়াল। রাম্পুরি টা ওঁর চাই। লাস্ট দশ বছরে এক দিন ওটা ছাড়া রাস্তায় বেরয়নি কখনও। গোডাউনের দরজা দিয়ে আস্তে আস্তে ভিতরে ঢুকল চৌবে। ঘরের ভিতরের কুপি র আলো টা নিবে গেছে। পোড়া তেলের গল্ধ নাকে এলো। অন্ধকারে চোখ একটু সয়ে যেতে পা টিপে টিপে ভিতরে গেল। মেঝে তে রক্তের পুকুর যেন আর তার ওপরে উপুড় হয়ে পড়ে আছে নগ্ন চেতনা। মুখটা কিছু বোঝা যাচ্ছে না। পাছার কাছ টা রক্তাক্ত হয়ে আছে। ওঁর নিজের না খিলাওনের কে জানে। এদিক সেদিক উঁকি মেরে খুজে পেলনা না রাম্পুরি টা। পা দিয়ে চেতনা গায়ে দু তিনবার ঠ্যালা দিল। হয়তো ওঁর গায়ের তলায় পড়ে আছে। পা দিয়ে ওলটাতে পারলো না চৌবে। চেতনার পাশে হাঁটু গেড়ে বসে দুহাত দিয়ে টেনে চিত করে দিল।
চেতনার প্রথম ছোবল টা আনারি ছিল। চৌবের বাঁ চোখ নাক আর ডান গাল টাকে ফালা করে দিয়ে বেড়িয়ে গেল। ভয়ঙ্কর যন্ত্রণায় দুহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরল চৌবে। মনে পড়ে গেল প্রথম বার যখন রাম্পুরি চালিয়েছিল, গলা মিস করে গাল কেটে দিয়েছিল সুলতানের। সুলতান ছেলেবেলার দোস্ত ছিল চৌবের। মেয়েছেলে নিয়ে ঝগড়া হয়েছিল একদিন। দুজনেই রুশনী কে মন দিয়েছিল। পরের টানে নিখুত ভাবে চিরে দিয়েছিল সুলতানের গলা। এক ঝলকে সুলতান আর রুশনীর মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠল চৌবের। অবশ হয়ে এলো গা হাত পা। চেতনার পরের ছোবল কেটে বেড়িয়ে গেল চৌবের কণ্ঠনালি। হিংস্র বাঘিনীর মতন আঘাতের পর আঘাত করে যাচ্ছে চেতনা। ওঁর রক্ত মাখা পাগলিনি নগ্ন শরীরের সামনে মাথা ঝুকিয়ে পড়ে গেল চৌবের নিথর দেহ।
জঙ্গল টা যেখানে শেষ তার একটু নিচ থেকেই কাশ বন টা শুরু হয়ে চলে গেছে রেল লাইনের গা অবধি। মাটি থেকে প্রায় ছয় সাড়ে ছয় ফিট অবধি উঁচু। একবার ওর ভিতরে ঢুকে গেলে বাইরে থেকে বোঝার কোনও উপায় নেই।
অবন্তিপুর একটা মাঝারি মাপের জাংশন। এই জায়গাটা অনেক টা কারশেড টাইপের। রেল লাইন গুলো আঁকিবুঁকি কেটে একে অন্যের সাথে মিশেছে। এদিক ওদিক অনেক ছোটো বড় নানা সাইজের ওয়াগন পড়ে আছে। বেশিরভাগই পরিত্যক্ত। অবন্তিপুর ইস্ট কোল ফিল্ড টাতে কয়লার উৎপাদন এখন কমে এসেছে। যাওয়া বা হয় তার ৪০ % কোল মাফিয়া চুরি করে নেয়। মালগাড়ী এখান থেকে ইদানিং কমই যাতায়াত করে। । ওই পড়ে থাকা ওয়াগন গুলোতে এখন ইয়াদবের ছেলেরা রাত হলে তাশ, জুয়া মদের থেক বসায়। কখনও আশেপাশের এলাকা থেকে মেয়ে তুলে এনে গণ ;., করে। নেশা একটু বেশী হয়ে থাকলে মেয়ে গুলো প্রাণ নিয়ে পালাতে পারে। নাহলে পরের দিন সুরাজপুর খালে তাদের নগ্ন শরীর ভেসে যেতে দেখা যায়।
কাশ বনটার ওপরে একটা হালকা কুয়াশার মেঘ জমেছে। তেমন ঘন হয়নি এখনো। সুরাজপুরের দিক থেকে ধিরে ধিরে এগিয়ে আসছে। বেশ বোঝা যাচ্ছে যে আর একটু পরেই রেল লাইন টাকে পুরো ঢেকে ফেলবে। চাঁদের ফালিটা আকাশের মাঝখান পেড়িয়ে গেছে। পরশু দিন অমাবস্যা, কালীপূজো।
জঙ্গল টা পেড়োতে আমাদের প্রায় দশ মিনিট লেগেছে। আমি করণের কথা মতন ওঁর একটু পিছনে একটু কোনা করে ফলো করছিলাম। প্রায় একশো মিটার এর মতন করে দৌড়ানোর পর করণ হাতের ইশারা করে দাড়াতে বলছিল। তারপর মাটিতে ঝুঁকে বসে ১ মিনিটের মতন দম নেওয়া। তারপরে আবার দৌড়। করণ কি করে পারছিল জানিনা, শেষের দিকে আমি তো প্রায় নিজেকে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে নিয়ে আসছিলাম। এখান থেকে রেল লাইন টা প্রায় শ দুয়েক মিটার এখনো।
-“এবার?”, আমি কোনও মতে দম নিয়ে করণ কে জিগাসা করলাম। আমার যা অবস্থা তাতে এখন চিৎকার করে কুকুর তাড়াতে পারবো না, সামশেরের দলবল তো দুরের কথা।
করণ দেখলাম আশ্চর্য শান্ত। মাটিতে হাটু গেড়ে বসে, শালের ভিতর থেকে কিরকম একটা একনলা ছোটো দুরবিন বের করে চোখে লাগাল।
-“দূর শালা, এই অন্ধকারে দুরবিন দিয়ে কি পাখি দেখছিস নাকি?”, আমার মহা বিরক্তি লাগলো ওঁর রকমসকম দেখে। ওঁর আদৌ কোনও প্ল্যান আছে না নেই সেটাই বুঝতে পারছিনা।
-“চোখে লাগিয়ে দেখ”, করণ হাত বাড়িয়ে আমার দিকে দুরবিন টা এগিয়ে দিল। আমি খুব তাচ্ছিল্য সহকারে ওটা নিয়ে নেড়ে চেরে দেখলাম। ঠিক দুরবিন নয়, দুপাশে বেশ কয়েকটা নব লাগানো আছে। মাঝখান টা সরু হয়ে গেছে আবার শেষদিক টা মোটা মতন। চোখে লাগানোর জায়গা টাতে একটা রাবারের গার্ড রয়েছে। বেশ ভারীই মনে হল। চোখে লাগালাম আর সাথে সাথে আমার আশপাশ টা যেন চেঞ্জ হয়ে গেল। আশেপাশের গাছপালা গুলো সব ছাই ছাই রঙের, তারমাঝে মাঝে চকচকে সাদা সাদা কি সব উড়ে বেড়াচ্ছে। মনে হল জোনাকি। এমনকি কাশ বনে উড়ে বেড়ানো ফড়িং গুলকেও দেখতে পেলাম মনে হল।
-“মনোকুলার থারমাল ইমেজার!!!”, আমি অস্ফুটে বলে উঠলাম। হলিউডের সিনেমাতে অনেক দেখেছি সৈন্য দের বন্দুকে লাগানো থাকে।
-“হুম! দে এবার আমাকে”, করণ আমার হাত থেকে যন্তর টা নিয়ে নিল। আমার চোখের সামনে যেন ঝপ করে লোডশেদিং হয়ে গেল। আবার সব ঘুটঘুটে কালো অন্ধকার। আমি কিছুক্ষণ অবাক হয়ে করণের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। কিছুই যেন তল পাচ্ছিনা আমি। কোনভাবেই মেলাতে পারছিনা আমার ছেলেবেলার প্রিয় বন্ধুর সাথে আজকে আমার পাশে হাঁটু গেড়ে বসে থাকা লোকটার। করণ বিশ্ব বখাটে ছেলে হতে পারে, দেদার পয়সা খরচা করতে পারে সাধারন লোকের কাছে যা আজে বাজে জিনিসের ওপরে। প্রচণ্ড দামি বিদেশি দুরবিন কিনতে পারে এই জঙ্গলে জন্তু জানোয়ার পাখি দেখার জন্যে, কিন্তু থার্মাল ইমেজার? এটা তো মিলিটারি ইকুইপমেন্ট। ওঁর হাতে এলো কি করে? কোনও বদ সঙ্গে পড়ে যায়নি তো?
-“স্নাইপার!”, করণের কথা শুনে চমকে গেলাম। সামশের দের আবার ওই সব জিনিস আছে নাকি? করণ আমার দিকে মনোকুলার আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “২ ও ক্লকে ওই যে একলা ওয়াগন টা আছে ওটার দিকে তাকা”।
আমি ওঁর কথামতন সেই দিকে তাক করতেই পরিস্কার অবয়ব টাকে দেখতে পেলাম। ওয়াগন টার ছাদে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে, সামনে একটা লম্বা লাঠির মতন বেড়িয়ে আছে। ভাগ্য ভাল আমাদের দিকে পিছন করে আছে। রেল লাইনের পাশের যে রাস্তাটা সুরাজপুর থেকে এসেছে সেই দিকেই মুখ করে আছে। করণ ঠিকই বলেছিল, ওই রাস্তা টা ধরে এলে এতক্ষণে আমাদের খুলি উড়ে যেত। আর একটু ভাল করে লোকটার হাতের বন্দুক টাকে নজর করলাম।
-“নাহ স্নাইপার রাইফেল নয়। পাতি .৩০৩, এতো আমাদের পেট মোটা হাবিলদার গুলো নিয়ে ঘুরে বেড়ায়”, আমারও যে এই ব্যাপারে জ্ঞান কম নয় সেটা করণ কে বুঝিয়ে দিলাম।
-“হ্যাঁ, যদি ওটা তোর পেট মোটা হাবিলদারের হাতে থাকে তাহলে একটা লাঠির চেয়ে বেশী কিছুনা। কিন্তু ট্রেনিং পাওয়া হাতে এটা আজকের যেকোনো মডার্ন স্নাইপার রাইফেলের থেকে কম নয়। ছয়শ থেকে হাজার ইয়ার্ড অবধি টার্গেট আরামসে লাগাতে পারবে। আমরা তার অনেক ভিতরে বসে আছি।”, করণ আমার গর্বে ঠেশ দিয়ে বলল, “এটা নির্ঘাত সুরজমল, ইয়াদবের দলে ওই একমাত্র ৩০৩ নিয়ে ঘোরে, আর ওঁর হাতের নিশানাও নাকি দারুণ শুনেছি। কিন্তু…”
-“কিন্তু কি?”, ওঁর কপালে গভীর ভাঁজ টা আমি কোনও যন্ত্র ছাড়াই দেখতে পেলাম।
-“ও জানে যে ওই পথ দিয়ে কেউ আসবে আর তার জন্যেই ওয়েট করছে, ইয়াদবের ছেলেরা নর্মালই এসব করেনা। মেয়ে ছেলে নিয়ে মস্তি করতেই বেশী ব্যস্ত থাকে।”, এক নিশ্বাসে বলে গেল করণ। “…ও আমাদের জন্যে বসে আছে…”, ওঁর গলাটা যেন একটু কেঁপে গেল।
আমার গা হাত থেকে সব জোর চলে গেল মুহূর্তের মধ্যে। হাতের বন্দুক টাকেও অসম্ভব ভারী মনে হতে লাগলো। এসব কি বলছে করণ। আমরা যে মউয়া কে বাঁচানোর জন্যে আসছি সেটা তো আমাদের বাড়ির ওই কটা লোক ছাড়া কেউ জানেনা। ইয়াদবের লোকেরা কি করে এর মধ্যে জেনে যাবে যে আমরা আসছি?
-“করণ, তুই কি করে জানলি যে সামশের মউয়া কে এখানেই আনবে? আমরা হয়তো ভুল জায়গায় এসেছি। এটা হয়তো অন্য কোনও বাওয়াল, কয়লার স্মাগ্লিং তো এখানে হতেই থাকে”, আমি নিজেকে আর করণ কে বোঝানোর চেষ্টা করলাম।
-“হুম…আমি ভুল করতেই পারি, কিন্তু এ জিনিস টা করবে না”, করণ ওঁর পকেট থেকে একটা ছোটো আই ফোন সাইজের একটা জিনিস বের করলো। সেটার কালো স্ক্রিনে দুটো হলুদ ডট মাঝে মাঝে ব্লিঙ্ক করছে। ওদের মধ্যে একটাকে পয়েন্ট করে করণ বলল, “এটা আমরা…আর এইটা মউয়া। এই যন্তর তো বলছে আমরা ওঁর আরাইশ মিটারের মধ্যেই রয়েছি। তাছাড়া মেয়েছেলে তুলে মস্তি করার এটাই পেটেন্ট জায়গা ওদের”।
আমি নড়েচড়ে বসে করণ কে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করবো বলে ভাবলাম কিন্তু করণ আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “সমু, আমি জানি তোর মনে কি চলছে। কিন্তু তোকে সব কিছু বলার মতন সময় এখনো আসেনি। আমি তোকে সব খুলে বলব পরে, আজ নয়, এখন নয়। শুধু একটা কথা মনে রাখ, আমাদের যে করে হোক মউয়া কে বাচাতেই হবে।”
-“মউয়া কে, করণ?”, আমি অস্থির হয়ে জিগাসা করলাম। আমাকে জানতে হবে কার জন্যে আমি এতটা জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছি।
-“মউয়া…মউয়া…আমার কাছে, আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন কেউ, শুধু এটুকুই বলতে পারবো এখন”।
-“আমাদের মানে কাদের করণ?”, আমি হারিয়ে জাচ্ছিলাম একের পর আরেক কথার হেঁয়ালি তে।
করণ কোনও উত্তর দিল না। ফোনের মতন যন্ত্র টার ডান দিকের একটা বোতাম বিভিন্ন অনুপাতে থেমে থেমে টিপতে লাগলো। “টিক টিক…টিক টিক টিক… টিক টিক টিক টিক… টিক টিক…”
“মরস কোড”, আমি বুঝতে পারলাম। কাউকে ও কোনও সঙ্কেত দিচ্ছে। করণ কি এখানে একা? নাকি ওরও কোনও দলবল আছে? কি করে ও এখানে? আমাদের মানে কাদের কথা বলছে? আমার মনের মধ্যে উথাল পাথাল হতে থাকল। কোনও প্রশ্নের উত্তর নেই।
“চলে আয়” আমাকে হাত দিয়ে ইশারা করে করণ গুড়ি মেরে কাশ বনে ঢুকে গেল। আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ওঁর পিছু নিলাম। আমরা ওয়াগন টাকে ডান হাতে রেখে প্রায় গোল করে ঘুরে পিছনের দিক দিয়ে এগোতে লাগলাম খুব সাবধানে। আমি বার বার ডান দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছিলাম ওয়াগন এর ওপরের লোকটা এখনো আমাদের দিকে পিছন করে আছে কিনা। কুয়াশার জন্যে বিশেষ কিছু দেখতে পারছিলাম না। মনে মনে আস্বস্ত হলাম এই ভেবে যে এই কুয়াশার মেঘ নিশ্চয়ই আমাদেরকেও একই ভাবে ঢেকে রাখছে। সানি আর উদিতার মুখ বার বার মনে পড়তে লাগলো। খুব মিস করতে শুরু করলাম মা আর বাবা কে। নিজেকে এতদিন ঘোর নাস্তিক বলে ভাবতাম কিন্তু দেখলাম মনেপ্রানে ডেকে চলেছি যতরকম ভগবানের নাম জানি।
লাইনের পাশের ওয়াগন গুলোর কাছাকাছি যেতে শুনতে পেলাম একটা মেয়ের গলার চাপা কান্না আর কিছু পুরুষ কণ্ঠ। কোনও শব্দ না করে আওয়াজ লক্ষ্য করে এগিয়ে গেলাম লাইন বরাবর। একটু পিছিয়ে যেতেই একটা পরিত্যক্ত ভাঙ্গাচোরা কামড়ার পিছনে লাইনের ওপরে শব্দের আর আলোর উৎস খুঁজে পেলাম। আমরা কামড়ার পাশ টাতে নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। করণ ইশারায় আমার কাছ থেকে বন্দুক টা চেয়ে নিল। খুব সাবধানে ওপরের রেলে মনুকুলার টা ফিট করে আমাকে ফেরত দিল। খুট করে একটা শব্দ হল শুধু । বেশ একটা মেড ইজি স্নাইপারের কাজ করবে এটা এখন।
-“তুই কামড়া টার ডান পাশ টাতে লাইনের ধারে থাক, ওখান থেকে সামনের ওই ওয়াগন টার খোলা ভিউ পাবি। আমি বাঁ দিক দিয়ে যাচ্ছি। তুই আমার কথা ভুলে যা, আমি ঠিক মউয়া কে বের করে আনব। তুই শুধু ওপরে সুরজমলের দিকে নজর রাখবি। এখানে কোনও আওয়াজ হলেই কিন্তু ও ওখান থেকে নেমে আসবে। ওটুকুই তোর হাতে সময়। ওঁর মধ্যে তুই ওঁকে না ফেলতে পারলে, ও আমাকে ফেলে দেবে অনেক দূর থেকেই।”, করণ প্রায় শুনতে না পাওয়ার মতন করে বলল।
আমি করনের হাত টা একবার শক্ত করে ধরলাম। কে জানে এরপরে আবার দেখা হবে কিনা। আমার ব্রেন এখন ভাবনা চিন্তা করা বন্ধ করে দিয়েছে। যন্ত্রের মতন করণের কথা শুনে পা টিপে টিপে কামড়া টার ডান দিকের সাইডে মাটির ওপরে এক হাঁটু ভাঁজ করে বসলাম। মনকুলারের ভিউ তে চোখ লাগিয়ে দেখলাম, ওয়াগনের ওপরে সুরজমলের কাঁধের কিছুটা দেখা যাচ্ছে। এখনো শুয়ে আছে। আমি কামড়ার তলা দিয়ে চাকার মাঝখান দিয়ে আলোর উৎসর দিকে তাকালাম।
লাইনের ওপরে একটা হ্যাজাক রাখা আছে। সেখান থেকেই যা আলো আসার আসছে। দুটো রেলের মাঝখানে কিছুটা ঘেসো জমি আছে সেখানেই তিনটে লোকের সাথে ধ্বস্তাধস্তি করে যাচ্ছে মউয়া। মুখ দিয়ে একটা চাপা বোবা কান্নার মতন আওয়াজ করছে কিন্তু বাঘিনীর মতন লড়ে যাচ্ছে সমানে। বাঁ দিকের ধুমসো মতন জিন্স পড়া লোকটা ওঁর হাত দুটোকে বাগে পেয়ে খুব জোরে পিছনে মুচড়ে ধরল। মনে হল যেন ভেঙ্গেই গেল ও দুটো। মউয়া চোখ বুজে ককিয়ে উঠে চিত হয়ে পড়ে গেল। ওঁর গায়ের শাড়ি অনেকক্ষণ আগেই কোমরের কাছ থেকে খুলে পড়ে সায়ার সাথে জড়িয়ে ছিল। মাঝখানের খাকি প্যান্ট পড়া লোকটা এই মুহূর্তের অপেক্ষা করছিল। মউয়ার গায়ের কালো ব্লাউস টা বুকের মাঝখান থেকে এক টানে ছিঁড়ে দিল। হ্যাজাকের আলোতে মউয়ার নিটোল সুডৌল স্তন যুগল ছেড়া ব্লাউসের ভিতর থেকে উপচে বেড়িয়ে পড়লো। খাকি প্যান্ট দ্রুত হাতে পুরো জামা টাই ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলল। জিন্স পড়া ধুমসো টা মুখ দিয়ে একটা হালকা শিষ দিয়ে উঠল।
“জব্বর মাল হ্যাঁয় সালি, বহত চোদেঙ্গে আজ ইস্কো”।
আমি দেখতে পেলাম মউয়ার নগ্ন ভারী পেট। মনে পড়লো বিকেলে স্টেশনের পাশে বিড়ির দোকানে এই শরীর দেখার কতো কল্পনা করেছিলাম। আর এখন কি অবসথায় দেখছি ওকে। নাভির অনেক নিচে সায়া পড়েছে মউয়া অথবা টানা হেঁচড়ায় কোমর থেকে নেমে গেছে অনেক টা। পায়ের কাছের লোকটা একটা ধুতি পড়ে ছিল। ওঁর এতক্ষণ মউয়ার দুটো পা চেপে ধরে রেখেছিল। এখন হটাত করে ওঁর কোমরের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে নাভির কাছটায় কামরাতে চুস্তে শুরু করলো।
“আবে মাদারচোদ, নাংগা করনে তো দে লউন্দি কো, সালে পেটুয়া খাইকে গির জায়েগা তেরা সব”, খাকি প্যান্ট ধুতি পরা কে টেনে মউয়ার কোমর থেকে সরিয়ে দিল।
“অব তক তেরি বিবি কা পেটুয়া মে ঘুসাইয়া থা ক্যা? ইসি লিয়ে লউন্দে নাহি হুয়ে তেরা…বহেনচোদ”, জিন্স প্যান্ট খ্যাক খ্যাক করে হেসে উঠে বলল।
মউয়া দেখলাম বাধা দেওয়া ছেড়ে দিয়েছে। চোখ বন্ধ করে নিশ্চল হয়ে পড়ে আছে। আমি আড়চোখে একবার ওয়াগনের ছাদের দিকে তাকালাম। হ্যাঁ সুরজমল এখনো ওপরেই শুয়ে আছে। আবার মউয়ার দিকে ঘাড় ঘোরালাম।