21-11-2020, 10:40 AM
#অনুগল্প
ছুটির দিন। অনেকদিন পরে আজ মাংস এনেছেন অসীম বাবু। যা দাম এখন সবকিছুর, বাপরে বাপ!
বাজারের ব্যাগ টা রান্নাঘরের মাটিতে রেখে তাকে রাখা জলের বোতল টা নিয়ে ঢকঢক করে জল খেলেন অসীম বাবু।
নভেম্বরের মাঝামাঝি হয়ে গেছে, তাও গরম কমেনি তেমন। আর, জিনিসপত্রের যা দাম, তাতে তো এমনিতেই ঘাম শুধু না, কালঘাম ছুটে যাচ্ছে।
জল খেয়ে ঘরের চৌকিতে বসতে যাবেন, হঠাৎ ফোনের আওয়াজ। প্লাস্টিকের খাবারের টেবিলের ওপর রাখা মোবাইল হাতে নিয়ে অসীম দেখে, বসের ফোন! রবিবারেও মুক্তি নেই!
'হ্যালো, স্যার?'
''অসীম বাবু, আপনাকে দিয়ে কি একটা কাজ ও ঠিকভাবে হয় না? ডিসগাস্টিং! আজ আমাদের সাইট অফিসে ইন্সপেকশন হচ্ছে, আর আপনি এখানো পৌঁছান নি?'
'কিন্তু, স্যার, আমার তো থাকার কথা ছিল না...মানে আমাকে তো কেউ বলে নি...' আমতা আমতা করে বলেন অসীম।
'বলেনি মানে? আপনি নিজে খবর রাখেন নি কেন? এখনই বেরোন...আর পৌঁছে যান।' খটাং করে ফোন নামিয়ে রাখেন বস।
হতাশ হয়ে বসে পড়েন অসীম বাবু। এখন আবার সেই সাঁতরাগাছি ছুটতে হবে। একটা ছুটির দিন ও রেহাই নেই। সবদিন তো জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ চলছেই!
শালার চাকরি!
আর ভাল লাগে না!
ছেড়ে দিলে বস বুঝবে কত ধানে কত চাল!
এই অপমান নিয়ে আর পোষাচ্ছে না...।
ভাবতে ভাবতেই বাজারের ব্যাগটার দিকে তাকান অসীম বাবু।
ছেড়ে তো দেওয়াই যায়... তারপর... খাবেন কি...?
দরজার পেছনে ঝোলানো হুক থেকে জামা প্যান্ট হাতে নেন উনি।
বেরোতেই হবে। কিচ্ছু করার নেই।
'কিগো, এখন বেরোচ্ছো?' চায়ের কাপ নিয়ে ঘরে ঢুকে বলেন গিন্নি।
চুলে এলো খোঁপা, ডুরে শাড়ি আর কপালে এত্ত বড় একটা সিঁদুরের টিপ।
নাহ্, এই মানুষ গুলোর মুখের দিকে তাকিয়ে....হঠকারি হওয়া যাবে না...।
কান্না চেপে অসীম বাবু বলেন 'অফিসের বস ফোন করেছিলেন...রিকোয়েস্ট করলেন খুব করে একবার সাইট অফিসে যেতে...তাই...। তুমি রান্নাটা করো, আমি রাতে এসে খাব...'। বলে, এক নিঃশ্বাসে চা শেষ করে বেরিয়ে পড়েন উনি। হতাশায়, অপমানে আসা চোখের জল আড়াল করে...।
দেওয়ালে ঝোলানো নীলকন্ঠ মহাদেবের ছবি দেওয়া ক্যালেন্ডার উড়ছে পতপত করে।
আজ উনিশে নভেম্বর, বিশ্ব পুরুষ দিবস।
----------------------------------------
নারী দিবসের মতো উৎসবের আবহ নেই, দিনটির অস্তিত্ব সম্পর্কেই কজন জানেন সন্দেহ। তবু, দিনটি ঘুরে ফিরে আসে...এই প্রত্যাশা নিয়ে যে 'মর্দ কো দর্দ নেহি হোতা' র বাইরে, নিজের মনের কথা মন খুলে বলার, অনুভূতিকে প্রকাশ করার স্বাধীনতা, এবং, 'ভাল নেই', 'ভাল লাগছে না' এই কথাগুলো স্বীকার না করার পলকা ইগোকে কাটানোর ইচ্ছা পুরুষ একদিন পাবেন। পাবেন ই।
ছুটির দিন। অনেকদিন পরে আজ মাংস এনেছেন অসীম বাবু। যা দাম এখন সবকিছুর, বাপরে বাপ!
বাজারের ব্যাগ টা রান্নাঘরের মাটিতে রেখে তাকে রাখা জলের বোতল টা নিয়ে ঢকঢক করে জল খেলেন অসীম বাবু।
নভেম্বরের মাঝামাঝি হয়ে গেছে, তাও গরম কমেনি তেমন। আর, জিনিসপত্রের যা দাম, তাতে তো এমনিতেই ঘাম শুধু না, কালঘাম ছুটে যাচ্ছে।
জল খেয়ে ঘরের চৌকিতে বসতে যাবেন, হঠাৎ ফোনের আওয়াজ। প্লাস্টিকের খাবারের টেবিলের ওপর রাখা মোবাইল হাতে নিয়ে অসীম দেখে, বসের ফোন! রবিবারেও মুক্তি নেই!
'হ্যালো, স্যার?'
''অসীম বাবু, আপনাকে দিয়ে কি একটা কাজ ও ঠিকভাবে হয় না? ডিসগাস্টিং! আজ আমাদের সাইট অফিসে ইন্সপেকশন হচ্ছে, আর আপনি এখানো পৌঁছান নি?'
'কিন্তু, স্যার, আমার তো থাকার কথা ছিল না...মানে আমাকে তো কেউ বলে নি...' আমতা আমতা করে বলেন অসীম।
'বলেনি মানে? আপনি নিজে খবর রাখেন নি কেন? এখনই বেরোন...আর পৌঁছে যান।' খটাং করে ফোন নামিয়ে রাখেন বস।
হতাশ হয়ে বসে পড়েন অসীম বাবু। এখন আবার সেই সাঁতরাগাছি ছুটতে হবে। একটা ছুটির দিন ও রেহাই নেই। সবদিন তো জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ চলছেই!
শালার চাকরি!
আর ভাল লাগে না!
ছেড়ে দিলে বস বুঝবে কত ধানে কত চাল!
এই অপমান নিয়ে আর পোষাচ্ছে না...।
ভাবতে ভাবতেই বাজারের ব্যাগটার দিকে তাকান অসীম বাবু।
ছেড়ে তো দেওয়াই যায়... তারপর... খাবেন কি...?
দরজার পেছনে ঝোলানো হুক থেকে জামা প্যান্ট হাতে নেন উনি।
বেরোতেই হবে। কিচ্ছু করার নেই।
'কিগো, এখন বেরোচ্ছো?' চায়ের কাপ নিয়ে ঘরে ঢুকে বলেন গিন্নি।
চুলে এলো খোঁপা, ডুরে শাড়ি আর কপালে এত্ত বড় একটা সিঁদুরের টিপ।
নাহ্, এই মানুষ গুলোর মুখের দিকে তাকিয়ে....হঠকারি হওয়া যাবে না...।
কান্না চেপে অসীম বাবু বলেন 'অফিসের বস ফোন করেছিলেন...রিকোয়েস্ট করলেন খুব করে একবার সাইট অফিসে যেতে...তাই...। তুমি রান্নাটা করো, আমি রাতে এসে খাব...'। বলে, এক নিঃশ্বাসে চা শেষ করে বেরিয়ে পড়েন উনি। হতাশায়, অপমানে আসা চোখের জল আড়াল করে...।
দেওয়ালে ঝোলানো নীলকন্ঠ মহাদেবের ছবি দেওয়া ক্যালেন্ডার উড়ছে পতপত করে।
আজ উনিশে নভেম্বর, বিশ্ব পুরুষ দিবস।
----------------------------------------
নারী দিবসের মতো উৎসবের আবহ নেই, দিনটির অস্তিত্ব সম্পর্কেই কজন জানেন সন্দেহ। তবু, দিনটি ঘুরে ফিরে আসে...এই প্রত্যাশা নিয়ে যে 'মর্দ কো দর্দ নেহি হোতা' র বাইরে, নিজের মনের কথা মন খুলে বলার, অনুভূতিকে প্রকাশ করার স্বাধীনতা, এবং, 'ভাল নেই', 'ভাল লাগছে না' এই কথাগুলো স্বীকার না করার পলকা ইগোকে কাটানোর ইচ্ছা পুরুষ একদিন পাবেন। পাবেন ই।