Thread Rating:
  • 24 Vote(s) - 3.29 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery ঝর্ণা The Untold story ! সমাপ্ত
সমস্ত কাজকর্ম মিটিয়ে তিনদিন পরে আমরা প্লেনে কলকাতা ফিরলাম ! কমলদার পরনে সাদা ধুতি ! সারা মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি ! চোখদুটো উদাস ! এয়ারপোর্ট থেকে ভাড়ার গাড়িতে সবাই চলে এলাম কমলদার বাড়ি ! পুরো বাড়িটা যেন খাঁ  খাঁ  করে আমাদের গিলতে চাইছে ! আমার চোখ কিছুতেই মানছেনা ! জলের ধারা অবিরাম ঝরে যাচ্ছে ! বাড়ির সামনে এসে কমলদা ধপ করে মাটিতে বসে পড়লো ! " কি করে আমি তৃপ্তিকে ছাড়া এই বাড়িতে ঢুকবো ?" বলেই হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো ! তৃপ্তিদির দাদা আর লাহিড়ীদা অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে কমলদাকে  বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেলেন ! আমার পা কিছুতেই ওই বাড়ির ভিতর ঢুকতে চাইছিলনা ! না আর ঢুকিনি ! লাহিড়ীদাকে বলে আমি একটা রিক্সা  নিয়ে সোজা পিসির বাড়ির দিকে রওনা দিলাম !
পিসির বাড়িতেও সেই একই রকম অবস্থা ! মঞ্জু কেঁদে কেঁদে মুখচোখ সব ফুলিয়ে রেখেছে ! আমাকে দেখে মঞ্জু আর থাকতে পারলো না ! আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পরে কাঁদতে শুরু করে দিল ! সাথে আমিও বাচ্চা  ছেলের মতো কাঁদতে থাকলাম ! পিসেমশাই আমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে আমাদেরকে শান্ত করার বৃথা চেষ্টা করতে থাকলেন !
কোথা  দিয়ে যে দিনটা চলে গেলো সেটা বুঝতে পারলাম না ! বিকালবেলা বাবা এসে আমাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এলেন ! দিন পাঁচেক খুব খারাপ অবস্থায় কাটিয়েছি ! কিছুই ভালো লাগছে না ! কোনো বন্ধুদের সাথে দেখা করিনি ! খেলতেও যাইনি  ! দিন পনেরোর মধ্যেই আমার রেজাল্ট বেরুবে ! সেটাও ভুলে গেছি ! সারাদিন নিজের ঘরে ঢুকে বসে থাকি ! শুধু মাত্র ঝর্ণা মাঝে মাঝে এসে আমাকে বিরক্ত করে আমাকে হাসতে চেষ্টা করে ! যদিও ওর ও বুকেতে তৃপ্তিদিকে হারানোর গভীর যন্ত্রনা আছে ! কোনো কিছুতেই আমার সার নেই ! বাড়িতে বলে দিয়েছিলাম যে যতদিন না তৃপ্তিদির কাজ হচ্ছে ততদিন আমি শুধুই আতপচাল সেদ্ধ আর ঘি দিয়ে খাবো ! কেন জানিনা আমার মা সেটা মেনে নিয়েছিলেন ! প্রতিদিন আমাকে সেই ভাবেই খেতে দিতেন !  
সন্ধ্যে বেলায় বাবা বললেন তোকে কাল কমলদের  বাড়ি যেতে হবে সকালে !
- না আমি যাবোনা ! গিয়ে কি হবে ?
- যে কাজটা তুই শুরু করছিলিস সেটাকে শেষ করতে তোকেই যেতে হবে !
এই কদিনে বাবা আমার খুব কাছে চলে এসেছেন ! নানা ছুতোয় আমার সাথে কথা বলেন আমাকে উৎসাহ দেন ! আর এই কদিনে আমাকে অনেক বড়ো  আর পরিণত করে দিয়েছে ! এখন আমি সমস্ত কথা বেশ মেপে মেপে বলতে শিখে গেছি ! একটা মৃত্যু যে কত কিছু বদলে দিতে পারে সেটা এখন বুঝতে পারছি ! জীবন মানেই যে শুধু উপভোগ করা নয় সেটা আমাকে তৃপ্তিদি মোর গিয়ে শিখিয়ে দিয়ে গেলো !
পরেরদিন সকাল বেলাতেই আমি কমলদার বাড়ি যাবার জন্য তৈরী হতেই বাবা আমার হাতে একটা নতুন ধুতি,একটা নতুন গেঞ্জি, জাঙ্গিয়া আর একটা নতুন পৈতে দিয়ে দিলেন ! বললেন "স্নান করে আগে এই ধুতি পরে নিও ! তারপর কাজ মিটে   গেলে স্নান করার সময় পুরানো পৈতে পা দিয়ে গলিয়ে নামিয়ে দিয়ে নতুন পৈতে পরে নিও আর নতুন গেঞ্জি জাঙ্গিয়া পরে জামা কাপড় পরে নিও ! আর গঙ্গার ঘটে যখন স্নান করবে তখন যে ধুতি তুমি পরে থাকবে সেটা ওখানেই ছেড়ে এসো !"  বাবার কথা মন দিয়ে শুনে সব নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ! দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি মা আর ঝর্ণা দাঁড়িয়ে আছে দুজনের চোখেই জল !
যখন কমলদার বাড়ি পৌঁছলাম তখন প্রায় ১১টা  বাজে ! আমাকে দেখেই লাহিড়ীদা বলে উঠলেন ! ওই তো সুনন্দ এসে গেছে ! ঠাকুর মশাই আপনার কাজ শুরু করে দিন ! ঠাকুর মশাইয়ের নির্দেশ অনুযায়ী আমি কমলদা দুজনেই স্নান সেরে ধুতি পরে নিলাম ! প্রায় ২ ঘন্টার উপর মন্ত্রোচ্চারণের পর এবং সমস্ত বিধি পূর্ন  করার পর পুরোহিতমশাই বললেন "যান এবার গঙ্গার ঘাটে এই পিন্ড দান করে সমস্ত বস্ত্র ছেড়ে নতুন বস্ত্র ধারণ করুন ! আমার দিকে তাকিয়ে বললেন "তোমার কাছে নতুন পৈতে আছে তো বাবা ?" পিসেমশাই বললেন "হা আছে ! কিন্তু নাপিত কোথায় ? গঙ্গায় গিয়ে যে চুল দাড়ি কামাবে সেই যদি না থাকে তাহলে কি করে কি হবে ?"
ঘোষদা বললেন ও আগেই গঙ্গায় চলে গেছে ! আমরা গেলেই ও নিজের কাজ শুরু করে দেবে !
লাহিড়ীদার গাড়িতে বসে সবাই গঙ্গার ঘটে পৌঁছলাম ! নাপিত আগেই ঘাটে  অপেখ্যা করছিলো ! সে আগে আমার নোখ  কেটে আমাকে বললো "যাও  স্নান করে এসো  ! পৈতে গঙ্গায় বিসর্জন দেবে পিন্ড বিসর্জনের পর আর ধুতিটা সাইডে খুলে রাখবে ! কিছু না বলে আমি ঘাটের দিকে এগিয়ে গেলাম ! নাপিত মহাশয় কমলদাকে  ন্যাড়া করতে শুরু করে দিলেন ! আমার সাথে পিসেমশাই আমার নতুন কাপড় নিয়ে পিছনে পিছনে চললেন ! পুরোহিত মশাই কি কি মন্ত্র তখন বলছিলেন সেগুলো কিছুই মাথায় ঢুকছিলনা ! পিন্ড দান করে স্নান সেরে নিজের পৈতে বিসর্জন দিয়ে একটা গামছা পরে ধুতিটাকে ঘাটের পাশে ছেড়ে দিলাম ! নতুন পৈতে ধারণ করলাম ! গঙ্গার প্রবাহিত জলের ধারার সাথে আমার চোখের জল যে কোথায় বয়ে গেলো বুঝতে পারলাম না ! হটাৎ কেন জানিনা নিজেকে খুব হালকা মনে হতে লাগলো ! যে পাষান ভার আমার বুকে এই কদিন চেপে ছিল সেটা আর নেই ! এখন আমার বুকটা খুব হালকা লাগছে ! কিন্তু চোখ কিছুতেই হালকা হতে চাইছেনা  ! সমস্ত কান্না চেপে কাপড় পরে আমি গঙ্গার ধরেই দাঁড়িয়ে রইলাম ! কমলদাও  একই রকম ভাবে পিন্ডদান করে স্নান করে কাপড় বদলে উঠে এলেন ! আমার পাশে এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলেন " আমার যে আর কেউ রইলোনা রে সুনন্দ ! কি ভাবে বাঁচবো আমি !"

গুরুগম্ভীর গলাতে লাহিড়ীদা বলে উঠলেন "“ জম্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে? চিরস্থির কবে নীর হায়রে জীবন নদে? ”!
সত্যিই তো কে কবে অমর  হয়েছে ?
সমস্ত কাজ মিটিয়ে আমি পিসির বাড়ি চলে এলাম ! মঞ্জু সবাইকার সামনেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো ! গম্ভীর গলায় বললাম " যে যাবার সে গেছে ! এখন কেঁদে কোনো লাভ নেই ! ছাড় আমাকে আর নিজেকে শক্ত কর ! এখনো অনেক ঝড় আসা বাকি ! এখনই যদি কেঁদে সব চোখের জল বের করে দিস  তখন তো আর কাঁদতে পারবি না !" মঞ্জু ধীরে ধীরে আমাকে ছেড়ে দিয়ে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো ! আমি পিসি আর পিশেমশাইকে প্রণাম করে বললাম "এবার আমি যাই ! " দুজনের কেউই কোনো কথা বললেন না ! আমি মঞ্জুর ঘরে ঢুকে মঞ্জুর কপালে একটা ছোটো  চুমু দিয়ে বললাম " আমি যাচ্ছি !পরীক্ষার রেজাল্ট বেরুলে আমাকে ফোন কোরো  !" মঞ্জু কোনো কথা না বলে শুধু একটু ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি জানালো !
দেখতে দেখতে ১৫ দিন কথা দিয়ে বেরিয়ে গেলো বুঝতে পারলাম না ! কিছুটা বিষণ্ণতা কিছুটা লেখাপড়া করা কারণ আমাকে জয়েন্ট এ বসতে হবে। . একদিন সকাল বেলায় টিভি খুলে দেখি মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরিয়েছে ! ( আমি যখনকার কথা বলছি তখন অনলাইন বলে কিছুই ছিলোনা !প্রতিটি বইয়ের দোকানে গেজেট পাওয়া যেতো আর নিজের নাম্বার বলে রেজাল্ট জানতে পারা যেতো ! ) আমি তাড়াতাড়ি জামা প্যান্ট পরে তৈরী হয়ে নিলাম ! মঞ্জুর নাম্বার আমার কাছে আছেই তাই। .....
বেরুতে যাবো ঠিক তখনি ফোনের ঘন্টি। ... বাবা ফোন তুললেন " হাল্লো হ্যা ! আচ্ছা ! খুব ভালো খবর ! কোন ডিভিশন ? সেকেন্ড ? বা ! কত পেয়েছে ? " বুঝলাম পিসির বাড়ি থেকে ফোন এসেছে ! তাই আমি আর বেরুলাম না ! আরো কিছুক্ষন কথা বলে বাবা বেশ আনন্দের সাথেই আমাকে খবর দিলেন ! "মঞ্জুর রেজাল্ট বেরিয়ে গেছে ! সেকেন্ড ডিভিশনে পাস্ করেছে ! তোকে এখুনি পিসির বাড়ি যেতে বলেছে !"
মনটা বেশ উৎফুল্ল হয়ে গেলো ! তড়াক  করে দু পাক লাফিয়ে ঘুরে নিলাম ! মাকে জড়িয়ে ধরলাম ! পাশে ঝর্ণা ছিল ! ওর গাল দুটো ধরে আদর করে দিলাম ! বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম ! " উফফ ! এতদিন পর কোনো ভালো খবর পেলাম !" আমি এখুনি পিসির বাড়ি যাবো !"
- কিছু খেয়ে যা ! মা বললেন !
- যা দেবার তাড়াতাড়ি দাও ! আজ আমি মঞ্জুকে একটা বিরাট ট্রিট  দেব !
বলার সাথে সাথেই ঝর্ণা আমার সামনে লুচির প্লেট ধরিয়ে দিলো ! কোনো কথা না বলে আমি গোগ্রাসে সব খেয়ে নিলাম ! মা গম্ভীর হয়ে বললেন মঞ্জুকে নিয়ে আগে তৃপ্তিদির বাড়িতে গিয়ে ওনার ছবিকে প্রণাম করিস !"
একটা ঠান্ডা বাতাস আমার সারা শরীরে ছড়িয়ে গেলো ! একটু শিউরে উঠলাম ! মনেই ছিলোনা তৃপ্তিদির কথা ! শুধু ঘাড় নাড়িয়ে বাইক বের করে স্টার্ট দিলাম ! ঘাড়  ঘুরিয়ে দেখি ঝর্ণার ভাষা ভাষা চোখ হয়তো কিছু বলতে চাইছে কিন্তু বলতে পারছে না ! সামনের বছর ঝর্ণাও মাধ্যমিক দেবে ! তখন কি হবে কে জানে ! যদিও ঝর্ণা খুব ভালো ছাত্রী !
[+] 6 users Like ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ঝর্ণা The Untold story ! - by dada_of_india - 20-11-2020, 07:40 PM



Users browsing this thread: 18 Guest(s)