Thread Rating:
  • 65 Vote(s) - 3.34 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance শেষের পাতায় শুরু (Completed)
পর্ব ছয় – (#5-28)

 
রক্ত নেওয়া আর হল না, যেভাবে বাচ্চাদের মতন রাগারাগি শুরু করে দিয়েছে সেই দেখে রিশু হাসি থামাতে পারে না। আধা ভেজান দরজার দিকে তাকিয়ে রিশু হেসে ফেলে, ঝিনুকের আচার আচরন গুলো অনেক কচি মনোবৃত্তির, হয়ত চঞ্চলমতি, উচ্ছল রমণী কিন্তু ভেতর থেকে এখন একটা শিশু। এখন আগছলা থাকে, ঘরের বেশির ভাগ জিনিসপত্র ওকেই গুছাতে হয়, কিন্তু তাও ঝিনুকে কে কিছুই বলে না। অগত্যা সিরিঞ্জ রেখ দিয়ে ঝিনুককে বেড়িয়ে আসার অনুরোধ করে। দরজার আড়াল থেকে উঁকি মেরে আগে যাচাই করে রিশুকে, তারপরে যখন দেখে যে ওর হাতে সিরিঞ্জ নেই তখন বীরদর্পে মুচকি হেসে বেড়িয়ে আসে ঘর থেকে, যেন যুদ্ধ জয় করে ফেলেছে। সারা সকাল দুই জোড়া চোখের মিষ্টি মধুর বারতালাপেই কেটে যায়, কাল সকালে দেখব কি করে ব্লাড দেবে না, হ্যাঁ দেখে নিও, কোন কথা শুনবো না, দরজা খুললে তবে না নেবে ইত্যাদি।
 
কাজের লোক ঘরের কাজ, রান্না বান্না সেরে যাওয়ার পরে তাড়াতাড়ি স্নান সেরে নেয় দুজনেই। কথা ছিল খাওয়ার পরেই বেড়িয়ে যাবে বাজার করতে। শীতের দিন ছোট হয়, তার ওপর ঝিনুকের জন্য এটা প্রথম দিল্লীর শীত, বেশিক্ষন বাইরে থাকলে যদি আবার ঠান্ডা লাগে তখন সবাই রিশুকেই দোষারোপ করবে।
 
কাজের লোক নিরামিষ রান্না করে গিয়েছিল তাই রিশু দুটো ডিমের অমলেট বানিয়ে নেয় খাওয়ার আগে। ঝিনুক স্নান সেরে বেড়িয়ে দেখে অমলেট তৈরি হয়ে গেছে, একটু আহত হয়ে ঝিনুক, একটু অপেক্ষা করলে আমি বানিয়ে দিতে পারতাম। মাথায় তোয়ালে জড়ানো, পরনে একটা ঢিলে গোল গলার টপ আর একটা ঢিলে প্যান্ট, প্রসাধন হীন সদ্য স্নাত ঝিনুককে দেখে বিভোর হয়ে তাকিয়ে থাকে। এক গুচ্ছ ভিজে চুল তোয়ালে থেকে উঁকি মেরে বেড়িয়ে ওর লালচে গালের ওপরে লেপটে গেছে, এক ফোঁটা জলের বিন্দু নাকের ডগায় হীরের মতন চকচক করছে। মরালী গরদনের দিকে চোখ পড়তেই বুকের রক্তে হিল্লোল উঠে যায়। মসৃণ ঘাড় বেয়ে জলের এক সরু ধারা বয়ে পরনের টপের মধ্যে কোথাও লুকিয়ে গেছে। বারান্দার এক চিলতে শীতের আলোর নরম রেখা ঝিনুকের মসৃণ ত্বকের ওপরে পিছলে গিয়ে ঝলসে দেয় রিশুর হৃদয়।
 
রান্না ঘর থেকে রিশুকে ওইভাবে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভীষণ লজ্জা পেয়ে যায় ঝিনুক। ওর মুখের দিকে তাকাতে গিয়েও তাকাতে পারে না। সর্বাঙ্গে কাঁটা দিয়ে ওঠে ওর, জীবনে প্রথম বার এইভাবে লজ্জা পেয়েছে ঝিনুক, এ এক নতুন ঝিনুকের আবির্ভাব। কলেজে থাকাকালীন কত ছেলেরা ওর দিকে তাকিয়েছে, এইভাবে লজ্জা কোনদিন পায়নি, শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এই তড়িৎ প্রবাহ, এই শিহরণ ওর কাছে একদম নতুন। এমন কি সেই ছেলেটা যে ওর সাথে প্রেমের ছলনা করে গেছে তার চোখের ভাষা ওর শরীরে এক আন্দোলনের সৃষ্টি করত সত্যি কিন্তু তাতে শুধু মাত্র কামনা বাসনার লিপ্সা জড়িয়ে থাকত। রান্না ঘরের দরজায় দাঁড়ানো সুঠাম ডাক্তারের চোখের ভাষার চুম্বকীয় আকর্ষণে হারিয়ে যায় ঝিনুক। লজ্জিত ত্রস্ত পায়ে নিজের ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে সেই আগুনে দৃষ্টি থেকে নিজেকে বাঁচাতে।
 
ছোট খাওয়ার টেবিলের ওপরে ডিমের অমলেট দুটো রেখে ডাক পারে রিশু, “হল তোমার?”

গলার স্বর কানে যেতেই লুকিয়ে যেতে পারলে যেন বেঁচে যায় ঝিনুক, “এই আসছি।”
 
খাওয়াটা জরুরি ছিল না রিশুর কাছে, এই ক্ষণিকের জন্য যে চোখের আড়াল হয়েছে সেটাই সইতে পারছিল না রিশুর হৃদয়, যেন ওর একমাত্র উদ্ভিন্ন যৌবনা স্ত্রী কোথাও হারিয়ে গেছে। চঞ্চল কোনদিন ছিল না রিশু তবে ঝিনুকের এই আচরন দেখে একবার মনে হয় যেন আবার করে ফিরে যায় পুরানো দিনে, এই মেয়েটার হাত ধরেই সুপ্ত স্বপ্ন গুলো পূর্ণ করতে। ঠিক মায়ের ভয়ে নয়, কোন কিছুতে মায়ের যদি খারাপ লাগে যদি মা দুঃখ পায় সেই চিন্তায় অনেক কিছুই করেনি রিশু। চুপচাপ শান্ত হয়ে থাকতে থাকতে বয়সের আগেই গম্ভির স্বভাবের হয়ে গেছে। এখন মেয়েটা সেই ভাবে কথা বলে না, এই সকালেই এদের মধ্যে যা কথাবার্তা হয়েছে সেটা এই পাঁচ দিনের মধ্যে সব থেকে বেশি। কি করনীয় ওর? পুরুষ শাসিত সমাজ, হয়ত ঝিনুক ওর অপেক্ষায় আছে কখন ওর দিকে এক পা বাড়াবে।
 
ছটফট করে ওঠে রিশুর বুকের ভেতরটা, “তাড়াতাড়ি খেয়ে নিলে ভালো হয়।”
 
উফফ ডাক্তারের যেন আর তর সয়না, এমনি সময়ে সাত চড়ে রা কাড়ে না এখন আবার ডেকে খাওয়াতে বসাতে চায়। ভিজে চুল আরো একবার তোয়ালে দিয়ে মুছে উত্তর দেয়, “বললাম ত আসছি।”
 
রিশু টিভি চালিয়ে দেয়, কারণ চুপচাপ খাওয়ার চেয়ে টিভি চলা বশি ভালো, নিস্তব্ধতা ভীষণ ভাবেই জোরে বাজে সেটা এই কয়দিনে রাতের খাওয়ার সময়ে বুঝে গেছে রিশু। নুপুরের নিক্কন কানে যেতেই চোখ তুলে তাকায় দরজার দিকে, ভুরু কুঁচকে ঠোঁটে এক চিলতে দুষ্টুমি ভরা হাসি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ঝিনুক, চোখের তারায় লাজুক রঙের আভাস। লাজে রাঙ্গা কাজল কালো নয়নের দিকে চোখ পড়তেই চোয়াল শক্ত হয়ে যায় রিশুর, ভীষণ ভাবে জানতে ইচ্ছে করে কে সেই পার্থ নামের ছেলেটা, যে এই নীল সাগরের ঢেউয়ের ফেনায় স্নাত ঝিনুকের চোখে জল এনেছিল। যে চঞ্চলা উচ্ছল ললনার ছবি ওর বোন সেদিন গাড়ির মধ্যে দেখিয়েছিল, সেই হারিয়ে যাওয়া উচ্ছল ললনাকে ফিরে পেতে চায়। চোখ কিছুতেই ফেরাতে পারে না ঝিনুকের সদ্যস্নাত মুখবয়াবের ওপর থেকে। লালচে নাকের ডগায় এক ফোঁটা জল হীরের টুকরোর মতন চিকচিক করে ঝিনুকের চেহারার দ্যুতি সহস্র গুন বাড়িয়ে তোলে, সেই সাথে রিশুর হৃদয়ের তুমুল ঝঞ্ঝার বান ডেকে আনে।
 
চোখ নামিয়ে চেয়ারে বসে পরে ঝিনুক। দুইজনের মুখেই কোন কথা নেই, চুপচাপ খাওয়া সারে দুজনে। ঝিনুক পারলে থালা নিয়ে উঠে পালিয়ে যেতে পারলে বেঁচে যায়। কেন মরতে রবিবার আসে? কোন সপ্তাহে রবিবার একদম থাকা উচিত নয় অথবা ডাক্তারের ছুটি হওয়া উচিত নয়। থাকুক না হসপিটালে সুন্দরী নার্সদের সাথে, সুন্দরী মহিলা ডাক্তারদের সাথে, ও কি জানে না যে ডাক্তারদের কথা? ওর বান্ধবী বন্দনার বয়ফ্রেন্ড নীলরতন মেডিকেল কলেজে পড়ত, বন্দনার মুখেই শুনেছে ওর বয়ফ্রেন্ডের হস্টেলের চারপাশে ছড়িয়ে থাকত বীর্যে ভরা কন্ডমের প্যাকেট। শুধু মাত্র কি চন্দ্রিকা, আর কি কেউ সত্যি ছিল না এই ডাক্তারের হৃদয়ের কোন এক গোপন কোনায়? ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে ঝিনুকের।
 
খাওয়া শেষে ঝিনুক ঢুকে পরে নিজের ঘরের, প্রথম বার ডাক্তারের সাথে বেড়াতে বের হবে, বেড়াতে ঠিক নয় কাজের জিনিস কিনতেই বের হবে। অনেক কিছু কেনার আছে, ডাক্তারের সাথে ছোট পোশাক অথবা জিন্স পরে বের হতে কেমন যেন মনে হয় ওর যেটা এর আগে কোনদিন ওর মনে হয়নি, খানিকটা বিব্রতবোধ খানিকটা লজ্জা খানিকটা আশঙ্কা কি পোশাক ওর ভালো লাগে সেটা জানা নেই। এই বিব্রতবোধটা ওর মধ্যে আগে কোনদিন ছিল না। কোলকাতায় থাকতে যা খুশি ইচ্ছে জামা কাপড় পড়তে পারত, জেদ ছিল বিয়ের পরেও সেই এক ভাবেই খোলামেলা জীবন যাপন করবে, যেরকম ওর ভালো লাগবে সেই মতন পোশাক আশাক পড়বে, যখন যেখানে যাওয়ার ইচ্ছে হবে সেখানে বেড়িয়ে যাবে। কিন্তু ওর সেই সব আশা অধরা স্বপ্ন হিসাবেই রয়ে গেল। বাইরে বেড়াতে যাওয়ার মতন সালোয়ার কামিজ নেই বলতে গেলেই চলে, তিনটে সালোয়ার কামিজ নিয়ে এসেছিল, তার মধ্যে দুটো ওর আর একটা ডাক্তার বিয়েতে দিয়েছিল। অগত্যা সেটাই পরে নিল, ওপরে রিশুর দেওয়া সেই গাড় নীল রঙের ওভারকোট, পায়ে মোজা পড়তে ভীষণ বাধে তাও ডাক্তারের আদেশ, মোজা পড়তেই হবে, গলায় শাল নিতেই হবে, ধ্যাত এইভাবে সাজা যায় নাকি? কিন্তু না, ডাক্তার কি আর সাজার ব্যাপারে কিছু বোঝে নাকি, ওর কথা শরীর খারাপ করবে, কতবার বুঝাতে চেষ্টা করে যে মেয়েদের ঠান্ডা কম লাগে বিশেষ করে বেড়াতে বের হলে অথবা শপিং করতে বের হলে তখন ওদের রক্তে নতুন শক্তির জাগরণ হয়।
 
সঠিক অর্থে ঝিনুকের ব্যাপারে কিছুই জানা হয়নি রিশুর, সেইভাবে জানা শোনার সময় হাতেই ছিল না। প্লেন থেকে নেমেই ওর মা ধরে বেঁধে বলে দিল এর সাথেই বিয়ে এই মেয়েকেই বোউমা করতে চায়। যদিও সুন্দরী বেশ মিষ্টি দেখতে তবে কথায় আছে বিষ কুম্ভ পয়োমুখম, জেদি চঞ্চলমতি বলেই পরিচয় ওর কাছে, সেটা অবশ্য এই কয়দিনে একবারের জন্য মনে হয়নি রিশুর। বরং ওর মনে হয়েছিল খুব নরম স্বভাবের, একটু লাজুক প্রকৃতির মিষ্টি মেয়ে। প্রথম দুই তিন দিনে ওর চোখে ছিল ভীষণ আর আশঙ্কা আর ভীতির ছবি, যদিও সেটা এই তারপরে অনেকটা কেটে গেছে তাও মেয়েটা এখন পর্যন্ত যেন স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারেনি। সর্বদা এত চুপচাপ কেন থাকে? কি এত চিন্তা করে, কার কথা চিন্তা করে? কই যখন বাড়ির সাথে নিজের মায়ের সাথে অথবা ওর মায়ের সাথে কথা বলে তখন ত এইসব কিছুই দেখা যায় না, তখন বেশ হাসি খুশি হয়েই কথাবার্তা গল্প গুজব চলে। ঝিনুকের বাবা মা যতবার ওর সাথে কথা বলেছে ততবার ওর মনে হয়েছে যে তাদের কন্ঠে এক অপরাধীবোধ ভাব, যেন ওর ওপরে এক পাপের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছেন তারা। বেশি কথাবার্তা কোনদিন হয় না তাদের সাথে, “কেমন আছো? হসপিটাল কেমন চলছে? ভালো থেকো।” ব্যাস এই কয়টা বাক্য ঘুরে ফিরে আসে প্রত্যেক বার।
 
প্রত্যেক দিনের এক ব্যাপার, রিশু জামা কাপড় পরে তৈরি আর সেই ললনার দেখা নেই। পায়ে মোজা কিছুতেই পড়তে চায় না, জোর করেই পড়তে বললে তাও মুখ বেঁকিয়ে এমন একটা ভাব দেখাবে যেন নিম পাতা খাইয়ে দিয়েছে, তবে কোনদিন মুখের ওপরে এটা বলেনি যে যাও পড়ব না, অনিচ্ছা সত্ত্বেও পরে নিত মোজা। সেই প্রথম রাতে সেই যে একবার ওর সামনে উঁচু গলায় কথা বলেছিল তারপর এই কয়দিনে কোনদিন উঁচু গলায় কথা বলেনি মেয়েটা। সেই রাতের ঝিনুকের মনের অবস্থা বুঝতে অসুবিধে হয়নি রিশুর। সকাল থেকে রক্ত দেওয়া নিয়ে যেমন ভাবে ছনছন করে একটানা বেজে চলেছে, হেসে ফেলে রিশু।
 
“ঠিক আছে?” কথাটা কানে যেতেই এক অদ্ভুত শিহরন খেলে যায় রিশুর সর্বাঙ্গে।
 
ওই ঠিক আছের শব্দের শ্রোতের দিকে ঘুরে তাকায়, ওর দেওয়া সেই তুঁতে রঙের সালোয়ার পড়েছে, গাড় নীল রঙের কোট গায়ে দেওয়া, বোতাম লাগায়নি তখন। মুখমন্ডলের দিকে তাকিয়ে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে রিশুর, চোখের পাতায় মনে হয় আইল্যাস লাগিয়েছে নাকি ওর চোখের পাতা এতটাই লম্বা। হাতের মধ্যে ভাঁজ করা শাল আর কাঁধে একটা ব্যাগ। মাথার চুল একপাশে করে আঁচড়ানো, সিঁথিতে এক চিলতে সিঁদুরের ছোঁয়া। ওর ওইভাবে তাকাতে দেখে লাজুক ঝিনুক মাথা নিচু করে দরজার দিকে এগিয়ে যায় জুতো পড়ার জন্য। পায়ের দিকে তাকায় ওর, এবারে আর বলতে হয়নি মোজা পরেই নিয়েছে আর তার ওপরে নুপুর। জুতো পড়তে পড়তে রিশুর দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে চোখের প্রশ্ন বাণ ছুঁড়ে মারে, এবারে দেরি হচ্ছে না, বসে বসে হ্যাংলার মতন তাকিয়ে আছো? বাইকের চাবি নিয়ে সোফা ছেড়ে উঠে পরে রিশু, সুন্দরীকে এরপর অপেক্ষা করালে আবার রেগে যাবে।
 
বরাবরের মতন, বাইকে বসে ঘাড় ঘুরিয়ে ঝিনুককে জিজ্ঞেস করে, “ঠিক করে বসেছ?”
 
বাইকের পেছনে বহুবার বসেছে ঝিনুক, তবে কোনদিন সালোয়ার কামিজ পরে একপাশে পা ঝুলিয়ে বসেনি। এই দিল্লী এসে ডাক্তারের সাথে বাইকে একপাশে পা ঝুলিয়ে বসা। এর আগে পার্থের সাথে যখন বের হত তখন ওর পরনে হাফ প্যান্ট অথবা জিন্সের প্যান্ট পরা থাকত, সিটের দুপাশে পা দিয়ে পেছন থেকে পার্থকে জাপ্টে ধরে বসতে পারত, কিন্তু এখন ডাক্তারের কাঁধে আলতো হাত রেখে নিজের ভার সামলে এক সৌজন্যমূলক ব্যাবধান রেখেই বসে। শারীরিক ব্যাবধানটা ইঞ্চি খানেক হলেও মানসিক দিক থেকে সেটা শত যোজনের। রিশুও বুঝতে পারে ওদের এই সম্পর্ক ভীষণ ভাবেই মার্জিত সৌজন্য মূলক হয়ে চলেছে।
 
মার্কেট পৌঁছাতে বেশি সময় লাগে না ওদের। কয়েকদিন পরেই ক্রিস্টমাস তায় আবার রবিবারের বিকেল, দক্ষিণ দিল্লী যেন সেদিন ওইখানেই চলে এসেছে সারা মাসের শপিং করতে। ভিড় দেখে দমে যাওয়ার পাত্রী নয় ঝিনুক, ভিড়ের মধ্যে খুব ইচ্ছে করছিল হারিয়ে যেতে, ইচ্ছে করছিল রিশুর সাথে লুকোচুরি খেলে একটু, খুব জানতে ইচ্ছে করছিল যদি ছেড়ে যায় তাহলে ওকি ওকে খুঁজবে? না, পারেনি সেটা করতে, চুপচাপ রিশুর পেছন পেছন ছিল। গত পাঁচ বছরে, কলেজে আর এমবিএ পড়ার সময়ে, প্রত্যেক বার ক্রিস্টমাসে বন্ধু বান্ধবীদের সাথে কোন না কোন ডিস্কোতে পার্টি করেছে, সারা রাত ধরে নাচানাচি, মদ খাওয়া ইত্যাদি। শুরুর দিকে নিজের বাড়িতে ফিরে আসত কিন্তু পরের দিকে মদের নেশায় এত মত্ত হয়ে থাকত যে কোন বন্ধুর অথবা বান্ধবীর বাড়িতে রাত কাটাতে হত। এবারে সেই ইচ্ছেটা অতটা প্রবল না হলেও জন মানুষের ভিড় দেখে সেই ইচ্ছেটা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, কিন্তু এই কয়দিনে রিশুর চাল চলন দেখে বুঝে গিয়েছিল যে এইবার আর ওর ডিস্কোতে যাওয়া, আনন্দ ফুর্তি করা আর হবে না।
 
পার্টির ইচ্ছেটা চেপে রেখে যার জন্য আসা সেটাই শুরু করল ঝিনুক, কেনাকাটা। একটার পর একটা দোকান ঢুকে খুঁজে তোলপাড় করে আবার নতুন দোকানে ঢুকে পরে, ঝিনুকের আর সালোয়ার কামিজ পছন্দ হয় না। এই জন্যেই মা আর বোনের সাথে কোনদিন বাজার করতে যেত না রিশু, কিন্তু এই সময়ে না গেলেই নয়। অগত্যা মুখ বুজে ঝিনুকের পেছন পেছন এক দোকান থেকে অন্য দোকান করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। এই সালোয়ার কামিজের ডিজাইন পছন্দ হয় ত রঙ পছন্দ হয় না, কখন রঙ পছন্দ হয় তার ডিজাইন পছন্দ হয় না, কখন সব কিছু পছন্দ হলেও ওড়না পছন্দ হয় না। মেয়েদের কিছুই এক বারে পছন্দ হয় না সেটা জানে, কেন যে এরা আগে থেকে ভেবে আসেনা যে এটাই কিনবে সেটাই ভেবে পায় না রিশু। এইভাবে ঘন্টা খানেক এ দোকান সে দোকান ঘোরার পরে পাঁচ খানা সালোয়ার কামিজ কেনে ঝিনুক।
[Image: 20210115-150253.jpg]
Like Reply


Messages In This Thread
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 18-10-2020, 01:30 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 21-10-2020, 04:16 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 22-10-2020, 03:41 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 21-10-2020, 04:13 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 22-10-2020, 02:49 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 27-10-2020, 02:59 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 28-10-2020, 12:21 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 28-10-2020, 10:20 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 29-10-2020, 01:29 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 30-10-2020, 11:22 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 01-11-2020, 01:37 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 02-11-2020, 12:51 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by pinuram - 20-11-2020, 10:51 AM
পর্ব আট – (#2-38) - by pinuram - 08-12-2020, 05:19 PM
RE: পর্ব আট – (#2-38) - by pinuram - 09-12-2020, 06:58 PM
Block Guest Users! - by pinuram - 09-12-2020, 11:47 PM
RE: Block Guest Users! - by dreampriya - 10-12-2020, 09:46 AM
RE: Block Guest Users! - by pinuram - 10-12-2020, 12:18 PM
পর্ব আট – (#6-42) - by pinuram - 14-12-2020, 11:37 PM
পর্ব আট – (#7-43) - by pinuram - 14-12-2020, 11:38 PM
পর্ব আট – (#8-44) - by pinuram - 14-12-2020, 11:38 PM



Users browsing this thread: 5 Guest(s)